প্রতিশোধের অঙ্গীকার ২ পর্ব-১০+১১

0
66

#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#Season_2
#পর্ব_১০

মাঝরাতে ঘরের দরজায় দুমদাম বারির আওয়াজে আবরার-স্পর্শ দু’জনেরই ঘুম ভেঙে যায়। আশিয়ানও কিছুটা নড়েচড়ে উঠে। স্পর্শ ছেলের পিঠে আলতো হাতে চাপর দিতে থাকে যেন তার ঘুম না ভাঙে,,আর আবরার যায় কে এসেছে তা দেখতে। আবরার দরজা খুলে অস্থির ও উদ্বিগ্ন হানিয়ার চেহারা দেখে কিছুটা অবাকই হয়। এতো রাতে এমন অস্থির হয়ে আছে কেন? প্রশ্নটা করার আগেই হানিয়া হড়বড়িয়ে বল–

—ভাই,, একটু আমার সাথে হসপিটালে চলো না। ইমার্জেন্সি ভীষণ।

এতরাতে হসপিটালে যাওয়ার কথা শুনে আবরারের বুকে চাপ দেয়। কার কি হলো আবার? আবরার চিন্তিত হয়ে বলে–

—কার কি হয়েছে বনু? তুই অসুস্থ ? নাকি বাবা-মা?

—আমাদের কিছু হয় নি ভাই। জাভিয়ান নিজের হাত পুড়িয়ে ফেলেছে বিশ্রী ভাবে। একটু চলো না ভাই।

কথাটা বলতে বলতে হানিয়ার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসে। তার একটা ছোট্ট ভুলের জন্য জাভিয়ান নিজের কতটা ক্ষতি করে দিলো আজ,, কথাটা মনে পরতেই কান্না ঠেলে বের হয়ে আসতে চাইছে।

আবরার বোনের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে–

—কাঁদিস না। তুই জাভিয়ানের কাছে যা। আমি দুই মিনিটের মধ্যে আসছি।

—আচ্ছা ভাই।

কথাটা বলে হানিয়া দৌড়ে নিচে চলে যায়৷ আবরার একটা হতাশা মিশ্রিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজাটা অল্প করে লাগিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা দেয়। এদিকে স্পর্শ তাঁদের কথোপকথন সবটাই শুনেছে। ঘুমন্ত ছেলের দুই পাশে দু’টো বালিশ দিয়ে স্পর্শ শোয়া থেকে উঠে পরে। কাবার্ড থেকে স্বামীর জন্য বাহিরে পরে যাওয়ার একটা শার্ট বের করে সে-ও নিচে চলে আসে।

নিচে এসে দেখতে পায় হানিয়া হাপুস নয়নে কাঁদছে। এমন দৃশ্য দেখে স্পর্শের মাঝে মধ্যে বুঝে উঠতে পারে না জাভিয়ান হানিয়ার মধ্যে কে কাকে বেশি ভালোবাসে। একবার জাভিয়ানের পাগলামি আর উন্মাদ হওয়ার কথা ভাবলে মন হয় জাভিয়ানই হানিয়াকে বেশি ভালোবাসে। কিন্তু পরক্ষণেই হানিয়ার সব কষ্ট,,ত্যাগের কথা মনে পরলেই ধারনাটা পাল্টে যেতে বাধ্য হয়। তাঁদের দু’জনের মধ্যে কে তার পার্টনারকে বেশি ভালোবাসে এটার চেয়ে বড় কথা হলো–দুইজনই তার পার্টনারকে অসম্ভব ও অস্বাভাবিক রকমের ভালোবাসে ।

স্পর্শ হেঁটে তাদের কাছে এসে দাঁড়ায়। জাভিয়ানের হাতের দিকে নজর পরলে তার রুহ কেঁপে উঠে। খুবই খারাপ অবস্থা হাতটার। স্পর্শ ভাইয়ের পাশে বসে ধরা গলায় বলে–

—কিভাবে হলো এমন অবস্থা?

জাভিয়ান- হানিয়া দুইজনই নিজেদের ধ্যানে মগ্ন ছিলো তাই স্পর্শের আগমন টের পায়নি। কিন্তু স্পর্শের গলার আওয়াজে তারা তার দিকে ফিরে তাকায়। জাভিয়ান তার প্রশ্নের জবাবে বলে–

—ভুলে হয়ে গেছে একটু।

স্পর্শ পুড়ে যাওয়া হাতটার দিকে তাকিয়ে বলে–

—ভুল করে মানুষের হাত এমন ভাবে পুড়ে? নাকি নিজে পুড়িয়েছো?

জাভিয়ান এই প্রশ্নের জবাবে কিছুই বলতে পারে না। কেননা সে জানে স্পর্শ তার উন্মাদ কাজকর্ম সম্পর্কে সবটাই জানে। এর আগেও জাভিয়ান এমন বহু কান্ড ঘটিয়েছে। জাভিয়ান থেকে কোন উত্তর না পেয়ে স্পর্শ বুঝে যায় এটা ইচ্ছাকৃত হয়েছে৷ সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তারপর হানিয়ার দিকে তাকায়। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে অলরেডি।

স্পর্শ জাভিয়ানের পাশ থেকে উঠে হানিয়ার পাশে গিয়ে বসে। তাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে–

—এত কেঁদো না। পরে তো তোমার শরীরও খারাপ করবে। তোমার ভাই এসে এখনি ভাইয়াকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে,,ডাক্তার ট্রিটমেন্ট করে দিলে ভালো হয়ে যাবে।

হানিয়া হেঁচকি পেরে বলতে থাকে–

—আমি তাকে বিকালে বল..লাম আমার হাতে এক্সিডেন্টলি চা পরে গেছে। সে শুনলো না আমার কথা। মাঝরাতে এসে নিজের হাত পুড়িয়ে নিজেকে শাস্তি দিলো। আমি যদি আরেকটু লেট করে আসতাম তাহলে ডান হাত টাও পুড়িয়ে ফেলতো। আমার একটা কথাও শুনে না তোমার ভাই। আগেও শুনতো না,, এখনো শুনে না। আমার কথার কোন ভ্যালুউ নেই তার কাছে কোন কালেই।

জাভিয়ান হানিয়ার কথা শুনে করুণ গলায় ডেকে উঠে–

—হানি…..

হানিয়া তার ডাকে সাড়া দেয় না। এর মধ্যে আবরার এসে পরে। সে এসে বলে–

—তোরা আয়, আমি গাড়ি বের করছি।

কথাটা বলে সে স্পর্শর দিকে একবার তাকিয়ে চলে যায় বাহিরে। স্পর্শ হানিয়াকে ধরে বসা থেকে দাঁড় করায়। হানিয়া নিজেই নিজের চোখ মুখে নেয়। তারপর চোখ মুখ শক্ত করে জাভিয়ানের কাছে এসে তার ভালো হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বলে–

—চলুন।

কথাটা বলে সে জাভিয়ানকে নিয়ে হাঁটা দেয়। স্পর্শ তাদের বিদায় দিয়ে পুনরায় নিজের ঘরে এসে পরে। ভাইয়ের কথা ভেবে আর ঘুম আসে না। ওয়াশরুমে চলে যায় অজু করে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তে।

______________________

জাভিয়ানকে হসপিটালে আনা হলে ডাক্তার তার হাতের এমন অবস্থা দেখে অবাক হয়ে যায়। একটু বকাঝকা করে তার চিকিৎসা শুরু করে দেয়। পুরোটা সময় হানিয়া জাভিয়ানের সাথে ছিলো। জাভিয়ান হানিয়ার সাথে কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও হানিয়া কোন রেসপন্স করছে না দেখে সেও একসময় চুপ হয়ে যায়।

প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্ট ও ঔষধ সাজেস্ট করে ডাক্তার তাঁকে বেলা এগারো টার দিকে ছেড়ে দেয়। হানিয়াকে ট্রেনিংয়ের জন্য সপ্তাহে তিনদিন যেতে হয়। আজ ট্রেনিং না থাকায় তেমন কোন সমস্যা হয়নি। হানিয়া জাভিয়ান পুনরায় মির্জা বাড়িতেই আসে। জাভিয়ানের হাতের এমন অবস্থা দেখে মি. এন্ড মিসেস মির্জা দুঃখ প্রকাশ করে। জাভিয়ানকে খাবার খাইয়ে ঔষধ খাওয়াতে হবে– এটা বলে হানিয়া জাভিয়ানকে নিয়ে নিজের রুমে এসে পরে।

হানিয়া রুমে এসে নিজের বোরকা খুলে ওয়াশরুমে চলে যায়। মিনিট দুয়েক পর একটা বালতি তে পানি নিয়ে আসে। একটা নরম কাপড় ভিজিয়ে জাভিয়ানের পুরো শরীর মুছিয়ে দেয়। তারপর তাঁকে ওয়াশরুম নিয়ে যায় কাপড় পাল্টাতে। কাপড় পাল্টে বের হয়ে জাভিয়ানকে বসিয়ে নিজে হাত মুখ ধুয়ে আসে। এর মধ্যে স্পর্শ এসে তাদের নাস্তা দিয়ে যায়।

হানিয়া ফ্রেশ হয়ে এসে জাভিয়ানের সামনে বসে পরে খাবারের প্লেট নিয়ে। তার মুখে এক লোকমা দেওয়ার পর হানিয়া নিজে খাচ্ছে না দেখে জাভিয়ান বলে উঠে–

—তুমিও খাও হানি। বেলা তো অনেক হয়ে গেলো।

হানিয়া বিনাবাক্য ব্যয়ে নিজেও খেতে থাকে। খাওয়াদাওয়া শেষ হলে হানিয়া জাভিয়ানকে ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ গুলো খাইয়ে দেয়। ঔষধ খাইয়ে সে নিচে চলে যায় এঁটো প্লেটগুলো রাখতে। যাওয়ার আগে সংক্ষেপে বলে যায়–

—শুয়ে ঘুমান।

জাভিয়ান বলতে চেয়েছিলো “তুমিও আসো,, তোমারও তো ঘুম হয়নি রাতে” কিন্তু তার আগেই হানিয়া চলে যায়। জাভিয়ান আধশোয়া হয়ে বসে বসে অপেক্ষা করতে থাকে হানিয়া আসার।

_________________

হানিয়া এঁটো প্লেটগুলো নিয়ে কিচেনে চলে আসে। নিজেই সেগুলো ধুয়ে রাখে। তারপর কিচেন থেকে বের হয়ে আসার জন্য পা বাড়ালে স্পর্শ পেছন ডেকে উঠে।

—হানিয়া শুনো।

হানিয়া পেছন ফিরে তার দিকে তাকিয়ে বলে–

—বলো ভাবী।

—কিছু কথা ছিলো তোমার সাথে। এখন শুনবে নাকি পরে? তেমন জরুরি কিছু না।

— বলো ভাবী।

তারা দু’জন কিচেন থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে বসে। তারপর স্পর্শ হানিয়ার একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কিছুটা করুণ গলায় বলতে শুরু করে–

—একটা অনুরোধ করবো আশা করি রাখবে বোন।

হানিয়া কিছুটা ভরকে যায় স্পর্শের কথায়। পরক্ষণে সে নিজেকে সামলে বলে–

—অনুরোধ বলছো কেনো ভাবী,, আদেশ করো। সাধ্যের মধ্যে থাকলে অবশ্যই করবো।

—আমার ভাইটাকে পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে আসো। তোমার ভাই আমায় সবই বলেছে তোমাদের কথা। তুমি তো ভাইয়ার মানসিক বিপর্যয়ের কথা শুনেছো। কিন্তু আরো অনেক কিছু আছে যেটা তুমি জানো না। তুমি চলে যাওয়ার পর ভাইয়া উন্মাদ না পাগল হয়ে গিয়েছিলো। শুরুতে আমরা তার এতটা মানসিক বিপর্য়ের কথা বুঝতে পারি নি। তোমার রেখে যাওয়া ঐ চিঠি পড়ে তোমার ভাই নিজেও একপ্রকার পাগল হয়ে গিয়েছিলো। হন্য হয়ে তোমায় সব জায়গায় খুজেছে লোকটা। থানা পুলিশ কিচ্ছু বাদ রাখে নি। আমার বাবাও তার পাওয়ার খাঁটিয়ে তোমায় অনেক খোঁজার চেষ্টা করে কিন্তু ফলাফল ছিলো শূন্য। এর মধ্যে শ্বশুর বাবা তোমায় হারানোর কষ্ট হার্টঅ্যাটাক করে বসেন। আমি যেহেতু তখন এই বাড়ির বউ আমি বাড়ির দিকটা দেখছিলাম। সবাই তখন অনেক ভেঙে পরেছিলো। আমরা যখন তোমায় হারিয়ে পরিবার,,বিজনেস আর তোমায় খোজায় ব্যস্ত তখনই ভাইয়ার মানসিক অবনতি ঘটতে শুরু করে। সারাদিন নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে বসে থাকত। নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করতো না, অফিসে যেতো না। আমরা আমাদের জীবন নিয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পরেছিলাম যে ভাইয়ার কথা একপ্রকার ভুলেই বসেছিলাম। ছ’মাস জোড়ালো ভাবে তোমায় খোঁজার পরও যখন আমরা পাই না তখন বুঝে যাই, যে হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া গেলেও যে লুকিয়ে থাকে তাকে খুজে পাওয়া যায় না। আমরা সবাই কমবেশি তোমায় খুঁজলেও ভাইয়া খুঁজে নি তোমায়। সে নিজেকে চার দেওয়ালের মাঝে বন্দি করে নেয়। একদিন সকালে আম্মু ভাইয়ার রুমে যায় তাঁকে ডাকতে। কিন্তু ভাইয়া অস্বাভাবিক ভাবে গভীর ঘুমে ছিলো। আম্মু জোরে জোরে ভাইয়াকে ডাকতে থাকে।আম্মুর ডাক শুনে কুলসুম,, বাবাও ভাইয়ার রুমে এসে উপস্থিত হয়। তারা সকলে ডাকার পরও যখন ভাইয়া চোখ খুলে না তখন সকলে বুঝে যায় ভাইয়ার কিছু একটা হয়েছে। বাবা দারোয়ান চাচার সাহায্যে ভাইয়াকে গাড়িতে উঠিয়ে হসপিটালে নিয়ে যায়। হসপিটালে ডাক্তার জানায় ভাইয়া হার্ট অ্যাটাক করেছে আর প্রয়োজনের অতিরিক্ত স্লিপিং পিলও নিয়েছে। বলতে গেলে ভাইয়া সুইসাইড এটেম্পট করেছে।

কথা বলতে বলতে স্পর্শের চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে। হানিয়া হতভম্ব হয়ে শুনতে থাকে স্পর্শের কথা। লোকটা এতো কিছু ঘটিয়ে ফেলেছে। স্পর্শ আবার বলতে শুরু করে–

—সে যাত্রায় তিনদিন আইসিইউতে রাখার পর ভাইয়াকে বাঁচানো সম্ভব হয়। কিন্তু জ্ঞান ফেরার পরই শুরু হয় তার পাগলামি। তোমায় খুঁজতে থাকে,, তোমার কাছে যেতে চায়। তুমি যে হারিয়ে গেছো এটা সে যেন ভুলেই গিয়েছিলো। ডাক্তার তার চেক-আপ করে জানায় সে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছে কাছের কাউকে হারিয়ে। তাকে মেন্টাল অ্যাসাইলামে রেখে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেয়। কিন্তু বাবা মায়ের কথায় ভাইয়াকে বাসায় রেখেই চিকিৎসা করাতে শুরু করে। দেড় বছরের মতো ভাইয়া এমন উন্মাদ ছিলো। খাঁটি ভাষায় বলতে চাইলে এটা হবে পাগল ছিলো। এর আগে পর অনেক বির্পযয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাদের ভাইয়ার পাগলামির জন্য। তোমার কাছে ভাবী না তোমার ননদ হয়ে একটা অনুরোধ করছি,,প্লিজ তুমি ভাইয়াকে আগের মতো সুস্থ করে তুলো। আমি বুঝতে পেরেছি কাল ভাইয়া ইচ্ছে করে নিজের হাত পুড়িয়েছে। তুমি প্লিজ ভাইয়াকে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনো। আমি তোমার কাছে অনেক ঋণী। এই একটা ইচ্ছে পূরণ করে আমায় ঋণের বোঝা না হয় আরেকটু বাড়িয়ে দিলে। কিন্তু এটাই আমার তোমার কাছে শেষ চাওয়া।

কথাটা বলতে বলতে স্পর্শ হানিয়ার হাত ধরে হুহু করে কেঁদে দেয়। হানিয়ার চোখেও পানি ছলছল করছে। হানিয়া বহু কষ্টে নিজের কান্না সংবরণ করে স্পর্শকে জড়িয়ে ধরে আশ্বাস দিয়ে বলে–

—তুমি চিন্তা করো না আপু। ইনশা আল্লাহ আমি তাঁকে সুস্থ করে তুলবো। তোমার ভাই আগের মতো সুস্থ স্বাভাবিক লাইফ লিড করবে।

তারা যখন কথা বলছিলো তখনই উপর থেকে জাভিয়ান “হানি, কোথায় তুমি? রুমে আসো তো” বলে ডেকে উঠে। হানিয়া স্পর্শকে শান্ত করে হাঁটা দেয় রুমের উদ্দেশ্য।

~চলবে?

#প্রতিশোধের_অঙ্গীকার
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#Season_2
#পর্ব_১১

[পর্বটা একটা রোমান্টিক। যাদের রোমান্টিক পর্ব পছন্দ না তারা প্লিজ স্কিপ করবেন]

হানিয়া রুমে এসে দেখে জাভিয়ান না ঘুমিয়ে রুমের মধ্যে পায়চারী করছে। হানিয়া চোখমুখ স্বাভাবিক করে বলে–

—কি হয়েছে? ডাকলেন কেনো?

হানিয়ার কণ্ঠ শুনল জাভিয়ান তার দিকে তাকায়। হানিয়াকে দেখতে পেয়ে নিমিষেই জাভিয়ানের সব অস্থিরতা গায়েব হয়ে যায়। জাভিয়ান হেঁটে হানিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। নিজের ভালো হাতটা দিয়ে আলতো হাতে হানিয়ার মুখ স্পর্শ করে বলে–

—কারণ ছাড়া কি তোমায় ডাকা যাবে না? কোথায় ছিলে এতক্ষণ? আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।

—নিচে ভাবীর সাথে ছিলাম। এখন এসেছি যান গিয়ে শুয়ে পরুন। রুমেই থাকবো আমি।

হানিয়ার কথা শুনে জাভিয়ানের কপালে ভাজ পরে। সে জিজ্ঞেস করে–

—আমি ঘুমাবো আর তুমি কি আমার হয়ে চোর পাহারা দিবে? নিজেও যে রাতে না ঘুমিয়ে ছিলে এটা কি ভুলে গেছো?

—আমার অভ্যাস আছে রাত জাগার।

—তা তো আমারও আছে।

—কিন্তু আপনি এখন অসুস্থ। তাই কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পরুন।

কথাটা বলে হানিয়া জাভিয়ানের হাত নিজের গাল থেকে সরিয়ে তার সামনে থেকে চলে যায়। জাভিয়ান হানিয়ার এমন শীতলতা সহ্য করতে পারে না। হানিয়া যে তার এমন কাজের জন্য চরম বিরক্ত সেটা সে টের পায়। এবং হানিয়া যে তার সাথে অভিমানও করেছে তাও বুঝতে পারে।

জাভিয়ান ভাবে,,এবার জাভিয়ানের অবাধ্যতা দেখে যদি হানিয়া অভিমান করে আবার চলে যায়? কথাটা ভাবতেই তার পিলে চমকে উঠে। না, সে কিছুতেই হানিয়াকে আর হারাতে পারবে না। জাভিয়ান গিয়ে রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর নজর দেয় হানিয়ার উপর যে কিনা এখন ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুলে চিরুনি করছে।

জাভিয়ান গুটিগুটি পায় হেঁটে হানিয়ার পেছনে গিয়ে উপস্থিত হয়। হানিয়া আয়নার মাধ্যমে জাভিয়ানকে নিজের পেছনে দেখে চিরুনী করা থামিয়ে বলে–

—না ঘুমিয়ে আমার পেছন পেছন ঘুর ঘুর করছেন কেন? নাকি এই কথাটাও শোনার প্রয়োজন বোধ করছেন না? আপনি তো আবার নিজের মর্জির মালিক।

শেষের কথাটা বেশ তাচ্ছিল্য করে বলে হানিয়া। জাভিয়ান আয়নার মাধ্যমে হানিয়ার অভিমানী মুখটা সন্তপর্ণে দেখে নেয়। ভীষণ অভিমান জমেছে ডাগরডাগর আঁখি জোড়ায়। জাভিয়ান হানিয়ার আরো কাছে এসে দাঁড়ায়,, বলতে গেলে একদম লেগে দাঁড়ায়। নিজের ভালো হাতটা দিয়ে পেছন থেকে হানিয়ার পেটের উপর রাখে তারপর তাঁকে চাপ দিয়ে একদম নিজের সাথে লাগিয়ে নেয়।

পোড়া হাতটা দিয়ে ঘাড়ের পাশ থেকে চুল সরাতে লাগলে হানিয়া আঁতকে বলে উঠে–

—কি করছেন কি? হাতে ব্যথা পাবেন।

জাভিয়ান বুঝি কথা শোনার পাবলিক। সে হানিয়ার ঘাড়ের পাশ থেকে চুল সরিয়ে সেখানে মুখ গুঁজে দেয়। হানিয়ার শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ নাক দিয়ে টেনে নিজের ভেতরে প্রবেশ করায়। নাক দিয়ে স্লাইড করে ঘাড় আর গলার মাঝামাঝি জায়গাটায়। হানিয়া চোখ বন্ধ করে এই মুহূর্ত আর স্পর্শ গুলো অনুভব করতে থাকে।

জাভিয়ান কিছু খুচরো আদর দিতে থাকে হানিয়ার ঘাড়ে গলায়। মান ভাঙানোর একটা ক্ষুদ্র প্রয়াস। জাভিয়ান আস্তে ধীরে হানিয়াকে নিজের আয়ত্তে আনে। হানিয়া শান্ত দেখে তাঁকে নিজের দিকে ঘুরায়। হানিয়ার বন্ধ চোখজোড়াসহ তার পুরো মুখে বেশ কয়েকবার চোখ বুলায়। হানিয়াকে দেখলেই তার আদর পায়। মন চায় বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখতে। অনেক কষ্টের পর পেয়েছে কিনা সে এই মেয়েটাকে। বড্ড ভয় পায় হানিয়াকে হারিয়ে ফেলার।

হুট করে জাভিয়ান হানিয়াকে কোলে তুলে নেয়। হানিয়া ঝট করে চোখ খুলে জাভিয়ানের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকায়। অস্থির হয়ে বলতে শুরু করে–

—পাগল হয়ে গেছেন আপনি? কোলে তুললেন কেন এই ব্যথা হাত নিয়ে? নামিয়ে দিন আমায়। হাতে ব্যথা পাবেন।

জাভিয়ান হানিয়াকে নিয়ে বেডের দিকে যেতে যেতে বলে–

—কোনো ব্যথা পাবো না আমি। বরং তুমি আমার কাছাকাছি থাকলে আমি সব ব্যথা ভুলে যাই।

হানিয়াকে জাভিয়ান বেডের দিকে নিয়ে যাচ্ছে দেখে হানিয়া রাগান্বিত স্বরে বলে–

—আমার পা নেই? আমি কি বেডে যেতে পারতাম না? নিজেকে কি নায়ক মনে করেন? হাত পুড়িয়ে যাতা অবস্থা করে রেখেছেন,, তারপরও আমার একটা কথা শুনছেন না। আমার কথার কি কোন মূল্য নেই আপনার কাছে?

কথা গুলো বলতে বলতে হানিয়ার চোখের কোন বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে। জাভিয়ান তার সবটা কথা শুনে এবং তার চোখের অশ্রুও লক্ষ্য করে। কিন্তু কোন জবাব দেয় না। হানিয়াকে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিলে হানিয়া গড়িয়ে অন্যপাশে গিয়ে বালিশে মুখ গুঁজে পরে থাকে। জাভিয়ান তাঁকে একবার দেখে ফুশ করে একটা শ্বাস ফেলে জানালার কাছে চলে যায়। জানালার থাইগুলো খুলে দিয়ে পর্দাগুলো মেলে দেয়। তারপর নিজেও বেডে এসে শুইয়ে পরে।

হানিয়ার নাক টানার আওয়াজ শুনে বুঝতে পারে সে আবারও কাঁদছে। জাভিয়ান এগিয়ে এসে পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে পুনরায় হানিয়ার ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়। ফিসফিসিয়ে বলে–

—ডোন্ট ক্রাই হানি। ইট হার্ট’স মি ভেরি ব্যাডলি।

হানিয়া কান্নামাখা গলায় বলে–

—ঘুমাতে দিন আমায় আর নিজেও ঘুমান।

—ঘুম আসছে না তো।

—নিজের বালিশে গিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকুন। একটুও নাটক করতে আসবেন না আমার সাথে।

—নাটক না পাখি রোমান্স করতে এসেছি। দেখি এদিক ফিরো। আদর দেওয়া বাকি এখনো।

জাভিয়ান অনেক কষ্টে ঠেলেঠুলে হানিয়াকে সোজা করো শোয়ায়। তারপর সে নিজে হানিয়ার বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে পরে।হানিয়া তাকে নিজের উপর থেকে সরানোর জন্য অনেক চেষ্টা করে কিন্তু পারে না৷ তারপর একসময় নিজেই শান্ত হয়ে চোখের উপর হাত রেখে শুয়ে থাকে৷ ভীষণ রাগ হচ্ছে তার জাভিয়ানের উপর। কোন দিন তার একটা কথাও শুনে না। আগেও না এখনও না। কেন হাত পুড়ালো নিজের? আবার কোলেও তুললো? নিজেকে মনে করে কি সে? কোন সুপার হিরো? শত আঘাত পাওয়ার পরও অটল থাকতে পারার মতো হিরো মনে করে নিজেকে?

কথাগুলো মনে হতেই রাগে তার নাকের পাটা ফুলে উঠে,, ঠোঁট গুলো তিরতির করে কাঁপতে থাকে। কান্নারা ঠেলে বের হয়ে আসতে চায়। হঠাৎই রাগে কাঁপতে থাকা ঠোঁটে আরেকজনের ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে হানিয়া থমকে যায়। স্পর্শ দাতা যে তার কথা না শুনা স্বামী এটা সে ভালো করেই বুঝতে পারে। তাই সে না করে কোন রেসপন্স আর না চোখের উপর থেকে হাত সরায়। জাভিয়ান নিজেই নিজের মতো যা করার করছে।

হানিয়া রেসপন্স করছে না দেখে জাভিয়ান তার ঠোঁটে হালকা করে বাইট করতে থাকে আর নিজেই হানিয়ার চোখের উপর থেকে তার হাত সরিয়ে নিজের ঘাড়ের পেছনে রাখে। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হয় না। হানিয়া এতেও রেসপন্স করছে না দেখে জাভিয়ান বিচলিত হয়ে পরে। সে হানিয়ার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে তার গালে এক হাত রেখে অস্থির কণ্ঠে সুধায়–

—এই হানি,,রেসপন্স করছো না কেন? বেশি রাগ করেছো? আই এম সরি জান,,রিয়েলি ভেরি সরি। এখন থেকে আমি তোমার সব কথা শুনবো। তাও রাগ করে থেকো না। কথা বলো আমার সাথে হানি।

হানিয়া ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলল–

—কি বলবো? আর কি-ই বা শুনবেন আপনি আমার? আমার কিছু বলার নেই। আপনি আপনার মতো আদর করে নিজের জায়গায় গিয়ে শুয়ে পরুন। (নিজের গলা থেকে ওরনা সরিয়ে দিয়ে বলে) নেন শুরু করুন।

হানিয়ার এমন কাজ আর কথায় জাভিয়ানের বুক জ্বলে উঠে। মেয়েটা তাঁকে এমন স্বার্থবাদী মনে করে? নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সে হানিয়ার কাছে আসে? ভালোবাসে না বুঝি সে হানিয়াকে?

জাভিয়ান ছটফটিয়ে বলে–

—এমন ভাবো তুমি আমায়? আমি শুধু নিজের চাহিদার জন্য আসি তোমার কাছে? ভালোবাসা পাও না তুমি আমার ছোঁয়ায়?

—ভালোবাসলে নিজের ভালোবাসার মানুষটির কথার দাম দিতে হয়৷ আপনিই বলেন আপনি আমার কোন কথার দাম দিয়েছেন আজ অব্দি। হাত কেন পুড়ালেন ওমন করে? বলেছিলাম না আমি আমার হাতে এক্সিডেন্টলি চা পরেছিলো? কেন আপনি এমন করলেন? আমার কষ্টে আপনার বুক পুড়ে তাহলে আপনার কষ্টে আমার বুকে আনন্দ হয়? একটা কথা মনে রাখবেন,, আপনি আমায় ভালোবাসার আগে আমি আপনাকে ভালোবেসেছি। শত মার,, তুচ্ছতাচ্ছিল্য,, অপমান সহ্য করেও আপনার পায়ের কাছে পরেছিলাম। আমার চরিত্রে আঙুল না তুললে হয়ত আপনাকে ছাড়ার কথা তুলতাম না। আপনার সুখের কথা ভেবে আমি নিজের জায়গা বিনা বাক্যে ছেড়ে দিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম। পাঁচটা বছর নিজের পরিবার ছেড়ে থেকেছি। জেনে এসেছি আপনি ভালো আছেন,, সুখে আছেন অন্য কাউকে নিয়ে। আপনার সুখেই নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছি। সেই আমাকে আপনি ভালোবাসা শিখাতে আসেন?

কথাগুলো বলতে বলতে হানিয়া শব্দ করে কেঁদে দেয়। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার জাভিয়ানের হাতের ওমন অবস্থা দেখে। জাভিয়ান চুপ করে তার প্রেয়সীর কথা শুনে। হানিয়ার বলা প্রতিটি কথা সত্য। তার আর হানিয়ার ভালোবাসা মাপ করলে হানিয়ার ভালোবাসাই বেশি হবে বোধহয়। জাভিয়ান হাত বাড়িয়ে হানিয়ার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বলে–

—হুঁশ। আর কাঁদে না। শরীর খারাপ করবে তো।

—করুক আপনার কি?

—আমারই তো সব। তুমি ঠিক তো আমি বেঁচে আছি। তোমার কিছু হলে আমি নিজেকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে নিবো।

হানিয়া জাভিয়ানের মুখ চেপে ধরে এমন কথায়। রেগেমেগে বলে–

—চুপ করুন খারাপ লোক। আর একটা বাজে কথা বলবেন তারপর আপনার খবর আমি বারোটা না বাজিয়েছি তাহলে আমার নামও হানিয়া তালুকদার না।

জাভিয়ান হেঁসে দেয় হানিয়ার কথায়। মুখ বাড়িয়ে হানিয়ার কপালের মধ্যিখানে নিজের ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দেয়। হানিয়ার নিজের দু’হাত দিয়ে জাভিয়ানের ঘাড় জড়িয়ে ধরে। জাভিয়ান নিজের ওষ্ঠ সেখানে ঠেকিয়ে রাখা অবস্থাতেই বলে–

—প্রমিস করলাম আর কোনদিন এমন কাজ করবো না। তোমার সব কথা শুনবো। তারপরও তুমি রেগে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখো না। বড্ড কষ্ট হয় তোমার থেকে অবহেলা পেলে।

—নিজের দোষে অবহেলা পান। আর কোনদিন এমন করে দেখুন না,,আবারও হারিয়ে….

কথাটা শেষ করতে পারে না হানিয়া। তার আগেই জাভিয়ান তার মুখ বন্ধ করে দেয় নিজের ঠোঁট দিয়ে। হানিয়া থতমত খেয়ে যায় হুট করে এমনটা হওয়ায়। তারপর যখন বিষয়টা বুঝতে পারে তখন সে নিজেও রেসপন্স করতে থাকে।

হানিয়া চোখ বন্ধ করে যখন স্বামীর ভালোবাসা নিতে ব্যস্ত তখনই সে নিজের গালে গরম পানির আভাস পায়।বন্ধ চোখজোড়া খুলে জাভিয়ানের দিকে তাকালে দেখতে পায়,, জাভিয়ান বন্ধ চোখের কোন বেয়ে এই গরম পানি পরছে। নিমিষেই হানিয়ার চিত্ত বিচলিত হয়ে যায়। মনে পরে যায় কিছুক্ষণ আগে জাভিয়ানকে কষ্ট দেওয়ার কথা। রাগের মাথায় কি বলতে কি বলে ফেলেছে তার জন্য আফসোস হয় হানিয়ার। লোকটা নিশ্চয়ই তখনকার ওমন নিচু ব্যবহারের জন্য কষ্ট পেয়েছ। জাভিয়ানের কষ্ট দূর করতে সে একহাত দিয়ে জাভিয়ানের টি-শার্ট খামচে ধরে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে। আরেক হাত রাখে জাভিয়ানের চোয়ালে। আগের থেকেও গভীরভাবে আদর দিতে থাকে জাভিয়ানকে।

জাভিয়ানও যেন পাল্লা দিয়ে হানিয়াকে আদর দিতে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ হওয়ার পরও তারা যখন একে অপর থেকে নিজেদের মুক্তি দেয় তখন জাভিয়ান নিজ উদ্যোগে মুক্তি নেয়। জাভিয়ানের সরে যাওয়া দেখে হানিয়া তার দু’গালে হাত রেখে বিচলিত হয়ে বলে–

—আই এম সরি জামাই। তখন রাগের মাথায় কি বলতে কি বলে ফেলেছি আমার খেয়াল নেই। প্লিজ আপনি কষ্ট পাবেন না। আমি জানি তো আপনি আমায় কতটা ভালোবাসেন। কিন্তু তখন রাগের মাথায় উল্টা পাল্টা বলে ফেলেছি।

জাভিয়ান হানিয়ার ঠোঁটের মাঝ বরাবর নিজের একটা আঙুল রেখে তাকে চুপ করিয়ে দেয়। শান্ত গলায় বলে–

—হুশশশ,, আমি জানি তো আমার পাখি আমায় কতটা ভালোবাসে। আর এটাও জানি তার রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে না। আপনি কষ্ট পায় নি জান।

—তাহলে কাঁদছিলেন কেনো? আর সরেই বা আসলেই কেনো?

—কাঁদছিলাম এটা শুনে তোমার আবার চলে যাওয়ার কথা শুনে। একটা অনুরোধ করছি,,যদি আবার চলে যাও তাহলে আমায় নিজ হাতে শেষ করে তারপর যেও। দ্বিতীয় বার আমার তোমায় ছেড়ে থাকার ক্ষমতা নেই।

হানিয়া জাভিয়ানের গালে,, কপালে,, চোখে এলোপাতাড়ি চুমু দিতে দিতে বলে–

—কই যাবো আমি আপনাকে ছেড়ে? আমার মনে হয়ে অনেক ক্ষমতা আছে আপনাকে ছেড়ে থাকার? আর আমি যেতে চাইলে আপনি যেতে দিবেন কেন? আগে তো জোরজবরদস্তি করে নিজের কাছে রাখতে চাইতেন আর এখন এত সহজেই ছেড়ে দিতে চাইছেন? ভালোবাসা পাওয়ার পর কমে গিয়েছে বুঝি?

—তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা কখনোই কমবে না হানি। বরং দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। তোমার মতো হয়ত না কিন্তু অনেক বেশি ভালোবাসি তোমায় হানি।

জাভিয়ানের চোখে চোখ রেখে জাভিয়ান কথাগুলো বলে। জাভিয়ানের কথা গুলোর সত্যতা যেন তার চোখের দৃঢ়তাই বলে দিচ্ছে। হানিয়া জাভিয়ানের চোখে চোখ রেখে নিজেকে হারিয়ে ফেলে। মোহাচ্ছন্ন হয়ে যায়। ঘোরের মাঝে সেও বলে দেয়–

—আমিও ভীষণ ভালোবাসি আমার বউ পেটানো জামাইকে।

—অ্যাঁ…

হানিয়ার এমন সম্বোধনে জাভিয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। জাভিয়ানের এমন রিয়াকশন দেখে হানিয়া উচ্চস্বরে হেঁসে দেয়। বিষয়টা বুঝতে পেরে জাভিয়ানও তার সাথে তাল মিলিয়ে হেঁসে। তারপর তার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। হানিয়াও জাভিয়ানকে নিজের সাথে আগলে নিয়ে চোখ বন্ধ করে। সময়ের ব্যবধানে এই পাগল দুটো একে অপরের ভালোবাসায় মাখামাখি হয়ে নিদ্রা পরীর কোলে ঢলে পড়ে।

_______________

—হ্যালো! কে বলছিলেন?

—আমি সোহাগ,, হানিয়ার কলিগ বলছিলাম। আপনি কি হানিয়ার খালামনি বলছেন?

—জ্বি। বাবা তুমি কি আমায় হানিয়ার খোজ দিতে পারো? কাল সারাটা দিন আর আজ এত বেলা হয়ে গেলো কিন্তু মেয়েটার কোন খোঁজ নেই। আমরা সবাই ভীষণ চিন্তিত তার জন্য ।

—আসলে আন্টি,, কিভাবে বলবো কথাটা আমি বুঝে উঠতে পারছি না।

ভদ্রমহিলা সোহাগের এমন আমতাআমতা দেখে ভয় পেয়ে যায়। হানিয়ার কলিগ এই প্রথম তাদের কল দিলো তাও এমন একটা সময়ে যখন কিনা হানিয়ার কোন খোঁজ নেই। মহিলাটি বলে–

—কি হয়েছে বাবা? হানিয়ার কিছু হয়েছে? তুমি নির্বিঘ্নে আমায় বলতে পারো সবকিছু।

—আন্টি হানিয়াকে আজ দুইদিন ধরে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গত পরশু দিন বিকেলে তাকে কিডন্যাপ করা হয় আমারই চোখের সামনে। আমি হানিয়ার থেকে একটু দূরে ছিলাম বলে তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে আসতে কিডন্যাপারসরা ততক্ষণে হানিয়াকে নিয়ে চলে গিয়েছে। আমরা পুলিশে খবর দিয়েছি কিন্তু এখনও হানিয়ার কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি।

সোহাগের কথা শুনে ভদ্রমহিলার মাথা ঘুরে যায়। হাত থেকে ফোনটা মেঝেতে পরে গিয়ে কয়েক টুকরো হয়ে যায়। পায়ের শক্তি হারিয়ে পরে যেতে নিলে তখনই একজন যুবক এসে তাঁকে আগলে নেয়। যুবকটি ঘাবড়ে গিয়ে বলে–

—কি হয়েছে মা তোমার? শরীর খারাপ লাগছে?

মহিলাটি যুবকটির কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারে তার ছেলে এসেছে। সে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন–

—হানিয়াকে কিডন্যাপ করা হয়েছে রে ছোটখোকা। আজ দু’টো দিন মেয়েটাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

মায়ের মুখে নিজের প্রেয়সীর নিখোঁজের কথা শুনে ছেলেটির মাথায় আকাশ ভেঙে পারে।

শব্দসংখ্যা~২০০৫
~~চলবে?

[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং মাই লাভিং রিডার্স 🤍🖤]