#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 1
writer : Mohona
(do not copy please)
.
‘কবির ফয়সাল খান এবং তার স্ত্রী কনিকা খান সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন।’ -খবরটা দেখেই মেরিনের মাথাটা ঘুরে গেলো। দ্রুত কল করলো নিজের বাবার ম্যানেজার সাদিকুর রহমানকে।
মেরিন : হ্যালো মিস্টার রহমান , নিউজ চ্যানেলে এসব কি দেখাচ্ছে? কেনো দেখাচ্ছে?
সাদিকুর : ছোট ম্যাডাম… নিউজে যা দেখাচ্ছে সেটা সত্যি। স্যার এন্ড ম্যাডাম আর নেই।
মেরিনের হাত থেকে মোবাইল পরে গেলো। চোখে পানি ভাসছে।
মেরিন : নো মেরিন… ইউ কান্ট ক্রাই… তুই কান্না করতে পারিসনা। দাদুভাই আছে।আর কান্না করে দুর্বলেরা। ডোন্ট ক্রাই… মেরিন…
চোখের কোণে পানি জমে গিয়েছে। ও জোরেজোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। নিজেকে শান্ত করছে। চোখের সামনে মাবাবার স্মৃতি ভাসছে। নিজেরই হাত খামছে ধরলো। ঘেমে অস্থির হয়ে গিয়েছে। জোরেজোরে নিশ্বাস নিচ্ছে।
শমসের : দিদিভাই… খাবার খেয়ে নিবে এ… তোমার ফোন নিচে পরে আছে কেনো? তুম…
তার নজরও গেলো টেলিভিশনের দিকে। শিরোনামটা তিনিও দেখলেন। ধপাস করে বসে পরলেন। মেরিন ছুটে গেলো দাদুভাইয়ের কাছে।
মেরিন : দাদুভাই… দাদুভাই… রিস্যাক্স… এই নাও পানি খাও।
শমসের খান চুপ করে বসে আছেন। মেরিন দাদুভাইয়ের মাথায় , পিঠে হাত বুলাতে লাগলো।
মেরিন : দাদুভাই… এই খবর কতোটা সত্যি , আর কতোটা মিথ্যা সেটাতো আমরা জানিনা।খবরে তো যা তা দেখায়। সেটাতো গিয়েই জানতে পারবো। ধরো পানি খেয়ে নাও।
শমসের খানের চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো।
মেরিন : দাদুভাই… দদাদুভাই… কান্না করেনা। আমি তোমার চোখের পানি সহ্য করতে পারিনা। স্টপ ক্রাইয়িং। কিচ্ছু হয়নি। ঠিক আছে দুজন…
শমসের : কয়েকদিন ধরে আমি ভালো স্বপ্ন দেখছিলাম না। খারাপ স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি। এটা সত্যিই হবে।
শমসের ঠান্ডা গলায় কথাগুলো বলল।
মেরিন : দাদুভাই… বললাম তো কিছু হয়নি।
শনসের : দিদিভাই… আমি ঠিক আছি। আমি দুর্বল নই। কষ্ট করে আমার জন্য টিকিট বুক করে দাও।
মেরিন : টিকিট তো বুক করবো। তবে তোমার একার না। আমিও যাবো তোমার সাথে।
শমসের খান দারালেন। মেরিনের গালে হাত রাখলেন।
শমসের : দিদিভাই… আমার বয়স হয়েছে সেটা সত্য। আমার ছেলে , বউমা মারা গিয়েছে এটা সত্য। তোমার মাবাবা মারা গিয়েছে সেটাও সত্য। কিন্তু আমার কথা ভেবে তোমাকে নিজের কাছে করা নিজের ওয়াদা ভেঙে বাংলাদেশে ফিরতে হবেনা। আমি নিজেকে সামলে নিবো।
মেরিন : দাদুভাই… আম্মু বাবার সাথে আমার হাজারটা ইস্যু ছিলো। আমি তাদের এবং তারা আমার অপ্রিয় ছিলো। কিন্তু আমারই তো মাবাবা। আর আমার মাবাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমি কিভাবে ছেরে দিবো?
শমসের : হত্যা করা হয়েছে মানে?
মেরিন : সহজ হিসাব দাদুভাই। প্রানের কাস্টডির জন্যই সব হয়েছে। ওই পরিবারের জন্যই সব হয়েছে। আম ড্যাম সিওর অ্যাবাউট দ্যাট। কাস্টডি ওরা পেয়ে গিয়েছে। এটা দুজন সহ্য করতে পারেনি। যন্ত্রণা নিয়ে ড্রাইভ করছিলো। আর দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে। ছারবোনা আমি কাউকে। মেরিন বন্যা খান ছারবেনা কাউকে।
শমসের : দিদিভাই… শান্ত হও।
মেরিন : শান্ত… কিসের জন্য হবো? কিভাবে হবো? ওই পরিবারের জন্য আমার আম্মুবাবাকে আমি হারিয়েছি। আমাদের মধ্যে হাজারটা ইস্যু থাকুক। কিন্তু পরিবারটা আমার। বলেছিলাম প্রান থাকুক আমার কাছে। বাবা জেদ করে নিয়ে গেলো। ৩টা বছর ছিলো আমার কাছে। সব ঠিক ছিলো। অযথা নিয়ে গেলো। আমার কাছ থাকলে নাকি আমার মতো হয়ে যাবে।
শমসের : দিদিভাই… টিকিট বুক করো। দাফনকাফন বাকি নিশ্চয়ই…
মেরিন : তুমি কি করে জানলে?
শমসের : আমরা ওদের পরিবার। আমি বাবা , তুমি মেয়ে। আমাদের ছারা কিভাবে শেষকাজ শেষ হবে?
মেরিন : হামম…
মেরিন টিকিট কনফার্ম করলো।
মেরিন : হ্যালো মিস্টার রহমান…
সাদিকুর : জী ছোটম্যাডাম।
মেরিন : কালকে বিকাল ৫টায় আমরা ঢাকা এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করবো।
সাদিকুর : ওকে ম্যাম। ততোক্ষন স্যার-ম্যামের ডেডবডি সংরক্ষন করা হবে। নিশ্চিত থাকুন।
মেরিন : সেটাতো থাকবোই। সেটা না হলে আপনারা সংরক্ষিত থাকবেন না।
সাদিকুর রহমান চুপ করে রইলো।
মেরিন : আরো একটি কাজ আছে আপনার জন্য। কালকের মধ্যে ওই পরিবারের সম্পুর্ন হিস্ট্রি চাই। সেই সাথে এই কাস্টডি কেইসের হিস্ট্রিও চাই। আমার মাবাবার দাফন কাফনের সাথেসাথেই আমি সব পেপারস নিজের হাতে চাই।
সাদিকুর : জী ম্যাডাম।
মেরিন : রাখছি। এখন এয়ারপোর্ট যাচ্ছি।
বলেই মেরিন রেখে দিলো।
মেরিন : আমার মাবাবার মৃত্যুর বদলা আমি নিবো। আমার আপুর প্রতিটা যন্ত্রণার হিসাব আমি নিবো। দুশমন পরিবার… মেরিন বন্যা খান আসছে। দাদুভাই হলো তোমার?
শমসের : হ্যা দিদিভাই। চলো।
দুজন এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বের হলো।
.
সাদিকুর রহমান মেহরাব নামের একজনকে বলল সব তথ্য জোগাড় করতে।
মেহরাব : কেমন মেয়ে স্যার? মাবাবা মারা গিয়েছে অথচ দৃঢ় কন্ঠে কথা বলছে আবার এসব তথ্য চাইছে। হৃদয় নেই নাকি?
সাদিকুর : শি ইজ হার্টলেস। হার্টলেস সাইকো…
মেহরাব : এই কারনেই তাকে পরিবারের থেকে দূরে রাখা হয়েছে?
সাদিকুর : তাকে দূরে রাখা হয়নি। সে দূরে রয়েছে। তার ইচ্ছা না থাকলে কার সাধ্য তাকে দূরে রাখে।
মেহরাব : শমসের খান স্যার কি করছেন কে জানে? ইনি কি তাকে সামলাতে পারবেন?
সাদিকুর : শমসের খান স্যারের কাছে তার সবচেয়ে প্রিয় হলো তার ছোট নাতনি মেরিন। মেরিন বন্যা খান। তাই স্যার ঠিক সামলে যাবেন। সেজন্য স্যারের চিন্তা আমি করছিনা। আমার চিন্তা অন্য জায়গায়।
মেহরাব : কোথায় স্যার?
সাদিকুর : মেরিন বন্যা খানে। প্রান্তিকের জন্য তুফান আসতে চলেছে। ঘূর্নিঝড় বলতে পারো। এই ঘূর্নিঝড় সবকিছু তছনছ করে দিবে। তুফান আসছে ফিনল্যান্ড থেকে।
.
মেরিন ফ্লাইটে বসে আছে। ভাবছে মা বাবার কথা। তাদের রাগের কথা ভাবছে। ওকে নিয়ে বিরক্তির কথা ভাবছে। ওর প্রতিটা কাজে তারা বাধা দিতো। আজকে তাদের শাসনের কথাই মনে পরছে।
মেরিন : সেদিন যদি প্রানকে আমার কাছ থেকে না নিয়ে যেতে তাহলে এই দিন দেখতে হতোনা বাবা। জেদী আমি নই। প্রকৃতপক্ষে জেদী তো তুমি। এই প্রানের জন্য সব হয়েছে। প্রানকে আমি আমার কাছে নিয়ে আসবো। যেভাবেই হোক।
[
৬মাস আগে…
মেরিন : কেনো অযথা জেদ করছো বলো তো?
কবির : জেদ কি তুমি একা করতে পারো?
মেরিন : জেদ তো আমি এখনো শুরুই করিনি বাবা… যদি প্রানকে এখানে রাখার জেদ আমি করি তাহলে কার সাধ্য আছে ওকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার?
কবির : কেনো ওকে যেতে দিতে চাইছোনা? মায়া জমে গিয়েছি কি ওর জন্য? তুমি তো হার্টলেস। তাহলে তোমার মনে মায়া কিভাবে থাকতে পারে?
মেরিন : নেই আমার মনে কোনো মায়া। তুমিই তিনবছর আগে ওকে আমার কাছে নিয়ে এসেছিলে।
কবির : তখন বিপদ ছিলো তাই ওকে নিয়ে এসেছিলাম। কারন বিপদই পারে বিপদ সামলাতে। এখন বিপদ নেই। তাই ওকে
মেরিন : ওহ ,তো বিপদ ছিলো বলেই আমি নামক বিপদের কাছে প্রানকে রেখে গিয়েছিলো?
কবির : হ্যা। কারন তোমার চেয়ে বড় বিপদের নাম আমি কবির ফয়সাল খান কখনো শুনিনি। মৃত্যু আলাদা ব্যাপার। মৃত্যুকে সাইডে রাখলে তুমিই সবচেয়ে বড় বিপদ। লোহাকে লােহা কাটার মতো করে বিপদই বিপদকে দূরে করে। তাই তোমার কাছে আমানত হিসেবে রেখে গিয়েছিলাম। আমানত ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। আসলে এক বিপদ কাটাতে গিয়ে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে তোমার কাছেও ও সুরক্ষিত নয়। তোমার তো অগনিত শত্রু রয়েছে। আর তাছারাও… প্রানকে দিয়ে তোমার কি? খারাপ লাগবে বুঝি?
মেরিন : তোমাদের থেকে দূরে হয়ে খারাপ লাগেনি , লাগেনা… সেখানে ওই দুইদিনের জানের জন্য কেনো খারাপ লাগতে যাবে আমার? আমার কোনো খারাপ টারাপ লাগেনা।
কবির : জানি সেটা। আমি এবং তোমার আম্মু মরে গেলেও তোমার কিছু যাবে আসবেনা।
মেরিন : হ্যা। একদম ঠিক। আমার কিছুই যাবে আসবেনা। ওয়েট করো আমি প্রানকে নিয়ে আসছি। ওর ব্যাগ গোছাতে হবে।
কবির : তুমি কবে থেকে এসব কাজ করো? তুমি তো মারামারি , রাগারাগি করেই ক্লান্ত হওনা।
মেরিন : কিভাবে ক্লান্ত হবো বলো? আমার অনেক অ্যানার্জী। তবে এটাও তো জানো যে আমি বড্ড খুতখুতে। তাই আমার কাবার্ডে অন্য কেউ হাত দিবে সেটা আমি সহ্য করতে পারবোনা।
.
প্রান্তিক : মামমাম মামমাম…
মেরিন কোনো কথা না বলে প্রান্তিকের ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে।
প্রান্তিক : ও মামমাম… তথা বলছোনা তেনো?
মেরিন উঠে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
প্রান্তিক : দলজা লাগালে তেনো মামমাম?
মেরিন : তোমার সাথে কথা আছে তাই।
প্রান্তিক : তথা বলাল জন্য দলজা লাগালে তেনো?
মেরিন : কারন… প্রান এখন বিগ বয় হয়ে গিয়েছে।
প্রান্তিক : সুত্যি সুত্যি!
মেরিন : সত্যি সত্যি।
প্রান্তিক : ইয়ে… ইয়ে… আমি এখন বিগবয়…
মেরিন : বিগবয়রা কি করে জানো?
প্রান্তিক : তি তলে?
মেরিন : ট্রাভেল করে।
প্রান্তিক : তেনো তেনো?
মেরিন : কারন তারা বিগবয় হয়। কিছুদিন এখানে , কিছুদিন ওখানে ঘুরেঘুরে বেরায়। তাই তুমিও এখন ঘুরতে যাবে।
প্রান্তিক : ওয়াও…. তি মজা তি মজা… তুমি আমি আল বলবাবা যাবো। তাইনা?
মেরিন : বিগবয়রা কি কখনো মামমামের সাথে ট্রাভেল করে? বিগবয়রা বন্ধুদের সাথে ট্রাভেল করে।
প্রান্তিক : ওয়াও… তাহলে কি আমি তেভিনের সাথে ট্লাভেল কলবো?
মেরিন : তেভিন তো তোমার ফ্রেন্ড। তোমার বেস্টফ্রেন্ডের নামটা যেনো কি?
প্রান্তিক : বেস্টফ্লেন্ড… নানাভাই। নানাভাইয়েল সাথে ট্লাভেল তলবো?
মেরিন : ইয়েস বেবি।
প্রান্তিক : নানাভাই তাইজন্য এসেছে!
মেরিন : ইয়েস ইয়েস।
প্রান্তিক : তিন্তু তুমি তেনো যাবেনা। আমি তোমাকে ছালা যাবোনা যাবোনা যাবোনা…
মেরিন : তুমি গুডবয়ের মতো যাবে। মামমামের একটি মিটিং আছে। সেটা শেষ করেই মামমাম চলে আসবো।
প্রান্তিক : আমি তোমাতে ছালা থাততেই পালবোনা।না না না…
মেরিন : প্রান… গুডবয়রা জেদ করেনা।
প্রান্তিক : প্লান্তিত ব্যাড বয়।
মেরিন : এবার কিন্তু আমি খুব রাগ করবো।
প্রান্তিক : তাও আমি যাবোনা।
কবির জোর করে প্রান্তিককে নিয়ে যাচ্ছে। মেরিনও বাধা দিচ্ছেনা। স্থির হয়ে দারিয়ে আছে।
প্রান্তিক : মামমাম আমি যাবোনা। তোমাতে ছেলে যাবোনা মামমাম… আমি ঘুমাতে পালবোনা মামমাম… আমাল ভয় তলবে। মামমাম…
মেরিন কোনো শব্দ করলোনা।
প্রান্তিক : আমি তোমাল সাথে আলি হয়ে যাবো মামমাম। তখনো তথা বলবোনা।
মেরিন চুপ করে প্রান্তিকের চলে যাওয়া দেখলো।
]
.
পরদিন…
মেরিন এবং শমসের খান দেশে পৌছালো। কবির-কনিকার দাফনকাফন সম্পন্ন হলো।
মেরিন দুজনের কবরের সামনে দারিয়ে আছে। কবির ফয়সাল খানের ম্যানেজার সাদিকুর রহমান সকল কাগজপত্র নিয়ে এলো।
সাদিকুর : ম্যাম… আপনি যেসকল তথ্য চেয়েছিলেন সব এই ফাইলগুলোতে আছে।
মেরিন : ভেতরে রেখে আসুন।
সাদিকুর : ইয়েস ম্যাম।
তিনি নিয়ে গেলেন।
মেরিন : তোমরা আমাকে বাজ পাখি বলতে । বিপদও বলতে। ঠিক বলতে। এই বাজ পাখি বিপদ ঘটাবে। কথা দিলাম… প্রান আমার হবে।
মেরিন বাসার ভেতরে ঢুকলো। অনেক দিনপর এই বাড়িতে ঢুকলো ও। প্রায় ১০বছর। ১০বছর পর বাংলাদেশে এসেছে। পাল্টে গিয়েছে সবটা। এখানে সেখানে প্রানের খেলনাগুলো আছে। বাসাটা থেকে ওকে নির্বাসনে পাঠানোর দিনটার কথা মনে পরলো।
[১০ বছর আগে…
মেরিন : বিয়ে যখন করতে চাওনা তখন না করে দাও।
নীলা : আম্মুবাবাকে না কিভাবে বলবো?
মেরিন : হ্যা হ্যা… না কিভাবে বলবে? তুমি তো আদর্শাদী সন্তান।
নীলা : টন্ট মারিস না তো। তুই যে আমার বিপরীত তোর বিয়ের ক্ষেত্রে তথা পাত্রপক্ষ দেখতে আসার ক্ষেত্রেও সেইম ঘটনা ঘটবে। এই দিক দিয়ে সব মেয়েরাই এক।
মেরিন : এক্সকিউজ মি… আমাকে নিজের সাথে কারো সাথে মিলাবেনা। না আমার লজ্জা আছে , না আমার এমন উইয়ার্ড ফিলিংস আছে।
নীলা : সময় এলে তুইও বুঝতে পারবি।
মেরিন : নেভার এভার মিস নীলা খান। যাইহোক , তুমি কি বিয়েটা করতে চাওনা?
নীলা : আরে পাত্রপক্ষ দেখতে আসছে।
মেরিন : যাইহোক… পাত্রপক্ষের সামনে যেতে চাওনা?
নীলা : না যেতে চাইনা।
মেরিন : খান সাহেবকে নাও করতে পারবেনা । তাইতো?
নীলা : বাবাকে কিভাবে না করবো বল?
মেরিন: ওকে ফাইন।ক্যানসিল হয়ে যাবে।
নীলা : মানে? কিভাবে?
মেরিন : কিভাবে হবে সেটা আমার ওপর ছেরে দাও।
মেরিন নিচে নামলো।
মেরিন : বাবা… বাবা…
কবির : কি হলো?
মেরিন : শুক্রবারে আপুকে দেখার জন্য যে পাত্রপক্ষদের আসার কথা রয়েছে তাদেরকে না করে দাও।
কবির : না করে দিবো মানে?
মেরিন : না করে দিবে মানে না করে দিবে। সিম্পল।
কনিকা : বুঝেছি… আপুর বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা শুনে খারাপ লাগছে…
মেরিন : আম্মু… আমার কোনো খারাপ টারাপ লাগেনা। বাবা , তাদের আসতে না করে দাও।
কবির : কিন্তু কেনো না করবো?
মেরিন : আমি না করেছি তাই।
কবির : তুমি না করলেই সেটা শুনতে হবে কেনো?
মেরিন : কারন…
নীলা : মেরিন… আয় তো আমার সাথে।
মেরিন : টানছো কেনো আমাকে? কথা বলছি তো।
নীলা : তুই আয় আমার সাথে।
নীলা মেরিনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ।
মেরিন : যদি তুমি পাত্রপক্ষকে আসতে বারন না করো তাহলে সেদিন যা হবে সেটার দায়ভার তোমার।
নীলা : চল তুই।
নীলা মেরিনকে নিয়ে গেলো।
কনিকা : মেয়েটার জেদ দিনদিন বেরেই চলেছে।
কবির : কি করবো বলো? শাসন করে দেখেছি , আদর করেও বুঝিয়েছি। কিন্তু কিছুই পরিবর্তন হয়নি। ডক্টরও দেখানো হলো। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
শমসের : তোমরা দুজন বিনাকারনে এতো টেনশন করছো। বড় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
কনিকা : বাবা… ১৫বছর হয়ে গিয়েছে।
শমসের : ১৫ বছর কি অনেক বেশি! সব ঠিক হয়ে যাবে। আর রাগ তো কবিরেরও অনেক ছিলো। এখন তো কমে গিয়েছে।
কবির : বাবা… ওর রাগ আমার চেয়ে ১০গুন বেশি। রোজ কিছু না কিছু ঘটায়।
শমসের : ও বিনাকারনে রাগ করেনা।
.
শুক্রবার পাত্রপক্ষ এলে মেরিন তাদেরকে চলে যেতে বাধ্য করলো।
কবির : অনেক হয়েছে। আর না।
শমসের : কবির… মাথা ঠান্ডা করো।
কবির : মাথা ঠান্ডা করা সম্ভব নয়। ওকে বোর্ডিং স্কুলে পাঠাতে হবে।
মেরিন : তোমার কথা আমি শুনবো কেনো?
কবির : শুনতে তুমি বাধ্য। বোর্ডিং স্কুল থাকলে ডিসিপ্লিন শিখবে তুমি।
মেরিন : আমি ডিসিপ্লিন মেনেই চলি।
কবির : বাবা… রাজি করাও তোমার ছোট নাতনিকে। আমি আর সহ্য করবোনা।
মেরিন : যেতে হলে আমি কেবল বাসা ছেরে নয় দেশ ছেরে যাবো।
শমসের : দিদিভাই… মাথা ঠান্ডা করো।
মেরিন : আমি আমার সিদ্ধান্ত শুনিয়েছি।
মেরিনের জেদের জন্য ওকে দেশের বাহিরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলো। বছরের মাঝামাঝি চলছে। তাই ঠিক করা হলো মেরিনকে আপাদত ইন্ডিয়া পাঠানো হবে। আর ঠিক সেটাই হলো। শমসের খান মেরিনের সাথে গেলেন। ৫বছরের মতো মেরিন সেখানেই ছিলো দাদুর সাথে। পরে ফিনল্যান্ডে শিফ্ট হয়।
]
.
মেরিন : ছিঃ… এভাবে আমার আপুকে বদনাম করেছে? লোকটা কি মানুষ নাকি অন্যকিছু? জন্মগত ধনী এবং হুট করে ধনী হওয়ার মধ্যে হয়তো মানসিকতারই পার্থক্য।এই মানুষটার মুখোমুখি হতে হবে। একি? ছবি কোথায়? কারো ছবিই তো নেই ওই পরিবারের? মিস্টার রহমান… মিস্টার রহমান…
সাদিকুর ছুটে এলেন।
সাদিকুর : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন : সকলের ছবি কোথায়? পরিবারের কারো ছবি নেই কেনো? চিনবো কিভাবে যে কোনটা কে?
সাদিকুর : আপনি কাউকে চেনেন না!
মেরিন : চিনলে কি বলতাম?
সাদিকুর : সরি ম্যাম।আমি এখনই দিচ্ছি।
মেরিন : লাগবেনা। দুবারে করা কাজ আমার পছন্দ না। প্রানকে কি স্কুলে অ্যাডমিট করানো হয়েছে?
সাদিকুর : জী ম্যাম। তুলে আনতে হবে?
মেরিন : ও কোনো স্যুটকেস নয় যে তুলে আনা হবে।
মেরিন সাদিকুর রহমানের সাথে কথা বলছে শমসের খান ওপরে দারিয়ে দেখছেন।
শমসের : দায়িত্বটা এবার সঠিক হাতে পরেছে। খানেদের জয় নিশ্চিত।
.
চলবে!!!