#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 2
writer : Mohona
(do not copy please)
.
শমসের : খানেদের জয় নিশ্চিত। এক মাঘে শীত যায়না। ওদের জন্য একটা জয়ের মাস এসেছিলো এক মাঘের শীতের মতো। এখন ওদের সর্বনাশের সময়।
মেরিন : দাদুভাই।
শমসের : হামম।
মেরিন এগিয়ে গেলো।
মেরিন : চারদিনে মিলাদ পরাবে নাকি পাঁচদিনে?
শমসের : ৫দিনের দিন শুক্রবার পরে। তাই সেদিনই করাবো।
মেরিন : এই মিলাদে ওই পরিবারকে ইনভাইট করতে কিন্তু ভুলোনা।
শমসের : কি বলছো কি দিদিভাই?
মেরিন : সেটাই বললাম যেটা শুনলে।
শমসের : ওরা এখানে এলে আমার কবির-কনিকার আত্মা কষ্ট পাবে।
মেরিন : দাদুভাই… কখনো কখনো বড় খুশির জন্য ছোটখাটো কষ্ট মেনে নিতে হয়। বিগ ডিল। ট্রাস্ট মি। যা হবে ভালো হবে।আমি যখন পা রেখেছি ভালো তো হবেই।
শমসের : ভালো চাইনা। ধামাকা চাই।
মেরিন : হবে হবে। সব হবে। মিস্টার রহমান বললেন ওই পরিবার থেকে নাকি জানাজাতেও এসেছিলো। জানাজায় এলে মিলাদে ডাক না দিলে ভালো দেখায়না।
শমসের : দিদিভাই…
মেরিন : দাদুভাই… কালকে প্রানের স্কুলে যাবো। প্রথম কাজটা আমার এটাই।
.
পরদিন…
রিমি : প্রান্তিক বেবি…
প্রান্তিক : ইয়েস মিস?
রিমি : তোমার সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে।
প্রান্তিক : কে মিস?
রিমি : সারপ্রাইজ।এসো আমার সাথে।
রিমি প্রান্তিককে নিয়ে গেলো। মেরিনকে দেখতে পেলো।
প্রান্তিক : মাম…
প্রান্তিক উচ্ছ্বসিত হয়েও থেমে গেলো । ওর মনে পরলো যে ওকে জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছিলো মেরিন। মনটা খারাপ হয়ে গেলো। মেরিন এগিয়ে গেলো প্রান্তিকের কাছে। ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো । ওর সারামুখে চুমু দিলো।
মেরিন : আমার প্রান বাচ্চাটা… কেমন আছো বাচ্চা?
প্রান্তিক : আমি তোমাল সাথে আলি। তাই আমি বলবোনা যে আমি ভালো আছি।
মেরিন : মামমামের সাথে আরি! এটা কেমন কথা?এটাতো ঠিক নয়। তাইনা তাইনা…
মেরিন প্রান্তিককে সুরসুরি দিতে লাগলো। প্রান্তিক হেসেও দিলো।
মেরিন : আমার সোনা বাচ্চাটা।
প্রান্তিক : আমি এখনো আলি। কথা বলবোনা।তুমি আমাকে ছেলেছো। নানাভাই ছেলেছে। চাচ্চু বলেছে চাচ্চু , দাদুভাই , দীদু কখনো আমাকে কোথাও যেতে দিবেনা। বিশেষ কলে চাচ্চু…
প্রান্তিকের মুখে চাচ্চুর কথা শুনে মেরিনের রাগ উঠলো।
মেরিন : বাচ্চা… মামমাম কানে ধরে সরি। উঠবস করবো!
প্রান্তিক চুপ করে রইলো।
রিমি : সরি টু ডিস্টার্ব ইউ ম্যাম। আসলে ক্লাস রিং বেজে গিয়েছে।এটা লাস্ট ক্লাস। ক্যান আই?
মেরিন : সিওর সিওর।
রিমি প্রান্তিককে নিয়ে গেলো। ও যাওয়ার সময় একবার মেরিনের দিকে তাকালো।
মেরিন : চাচ্চু… চাচ্চু ছোটমাথাটাকে ভালোই নষ্ট করেছে। চাচ্চু… নামটা যেনো কি? নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন। দেখতে হয় লোকটাকে। চেহারাটা তো দেখতেই হয়। আজকেই গিয়ে দেখবো। অফিস পান্থপথে। প্রানের ছুটির পর বের হবো।
.
একটুপর…
মেরিন ফোনে কথা বলছে। তখন প্রান্তিকের ছুটি হলো। প্রান্তিক ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে দেখে নীড় দারিয়ে আছে।
প্রান্তিক চাচ্চু বলে দৌড়ে গেলো। ওর ডাক শুনে মেরিন পেছনে ঘুরলো। নীড়ের কোলে প্রান্তিককে দেখতে পেলো।
মেরিন : মিস্টার লুজার! এই ছোটলোক লুজারটা আপুর দেবর? মাইগড। এই লুজারটা এমন গেইম খেলতে পারলো? এমন জঘন্য প্ল্যান ও কিভাবে করতে পারে? লুজারের এতো বুদ্ধি হতে পারেনা।
বের হয়ে প্রান্তিক মেরিনকে দেখতে পায়নি।
নীড় : কি দেখছো পেছনে!
প্রান্তিক : ম…
নীড় : আচ্ছা বাদ দাও। চাচ্চু আজকে নিজের লাভের জন্য সারপ্রাইজ রেডি করে রেখেছে।
প্রান্তিক : কি সালপ্লাইজ?
নীড় : বলে দিলে সারপ্রাইজ কিভাবে থাকবে হামম? বলো বলো…
নীড় প্রান্তিককে সুরসুরি দিতে লাগলো। ও খিলখিল করে হাসছে। ওকে কোলে নিয়ে গাড়ি পর্যন্ত পৌছালো।
পিটার : হ্যালো ডিয়ার।
প্রান্তিক : হ্যালো আংকেল।
পিটার গাড়ির দরজা খুলে দিলো। নীড় প্রান্তিককে বসালো। নিজে বসার আগে একবার পেছনে তাকালো। না কেউ নেই। ও গাড়িতে বসলো।
নীড় মনেমনে : পারফিউমটা চেনা। সে এখানে কেনো হবে? হয়তো অন্যকারো? কিন্তু স্কুলে তো আমি রোজই প্রানকে নিতে আসি। কখনো পাইনা।
পিটার : অল ওকে স্যার?
নীড় : ইয়াহ।
পিটার : কিছু ভাবছেন মনেহচ্ছে। ভেতরে কোনো সমস্যা?
নীড় : সমস্যার কি সাহস আছে আমার সম্মুখীন হওয়ার?
প্রান্তিক : চাচ্চু… সমতথিন কি?
নীড় : সমতথিন না কলিজা । সম্মুখীন।
প্রান্তিক : ওই তো ওইটা মানে কি?
নীড় : এই যে তুমি আমি মুখোমুখি বসে আছি , সামনাসামনি বসে আছি। এটাই সম্মুখীন হওয়া। বুঝলে লাভ?
প্রান্তিক : ইততু ইততু…
নীড় ছোট করে হেসে চশমাটা চোখে দিলো।
প্রান্তিক : চাচ্চু…
নীড় : ইয়েস লাভ?
প্রান্তিক : তুমিও নানাভাই , মামমামেল মতো আমাকে দূলে সলাবেনা তো? সলালে আমাকে মামমামেল কাছেই পাঠিও…
নীড় প্রান্তিককে কোলে বসালো।
নীড় : আমি আমার জানটাকে আমার কাছে থেকে কোথাও যেতেই দিবোনা। এভাবে বুকের মধ্যে রাখবো।
প্রান্তিক : মামমামও বলতো।
নীড় : আমি তোমাকে বলেছি তো। মামমাম পচা এবং বোকা। তাই এমনটা করেছে।
প্রান্তিক : মামমাম পচা না। আমাকে খুব আদল কলে।
নীড় : হয়তো করে। কিন্তু তুমি চাচ্চুর বেশি প্রিয়।
বলেই নীড় ওর কপালে চুমু দিলো।
নীড় মনেমনে : তুমি চাচ্চুর অনেক প্রিয় প্রান। তুমি সত্যিই আমার প্রান। তোমার মনমস্তিষ্ক থেকে মুছে দিবো ওই খান পরিবারের সবার নাম। এটা হলো তাদের শাস্তি। তিনটা বছর তোমাকে আমাদের থেকে দুরে রাখার। আর বাকি আছে কে ওই পরিবারে। খান এবং খানম তো সৌভাগ্যবশত ও দুর্ভাগ্যবশত মারা গিয়েছে। আর আছে ওল্ডম্যান। আর আছে ওই মামমাম… হয়তো মাবাবাকে হারিয়ে শোক পালন করছে। কার সাধ্য যে নীড়ের কাছ থেকে ওর প্রানকে কেরে নিবে। না আইন-কানুনের দিক দিয়ে পারবে আর না শক্তির দিক দিয়ে পারবে।
.
মেরিন : কিডন্যাপ শব্দটা ব্যবহার করা ঠিক নয়। প্রান আমাদের। তাই আমাদের কাছেই নিয়ে আসবো। ছিনিয়ে নিয়ে আসবো।
জন : বিষয়টা সহজ হবেনা ম্যাম।
মেরিন : না শব্দটাকে আমি ঘৃণা করি। জানো তো সেটা? নাকি ভুলে গিয়েছো?
জন : ভুলিনি ম্যাম। বাট ওই নীড় আহমেদ চৌধুরী অনেক পাওয়ারফুল। এমপিমন্ত্রীদের সাথে কানেকশন। নিজের নিরাপত্তার জন্য আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথেও সম্পর্ক রেখেছে।
মেরিন : ক্রিমিন্যাল নাকি?
জন : নো ম্যাম। নিজের এবং পরিবারের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য এই সম্পর্ক। যেনো কেউ কোনোভাবেই চোখ তুলে না তাকাতে পারে তার পরিবারের দিকে।
মেরিন : কিন্তু বাজের নজর তো পরে গিয়েছে। এন্ড বাই দ্যা ওয়ে… তুমি কি এটা বোঝাতে চাইছো যে ওই লুজাররা আমাদের সাথে অনেক শক্তিশালী?
জন : নো ম্যাম। নাথিং লাইক দ্যাট। বাট ম্যাম… কবির স্যারের সাথে ওপরের দিকে সম্পর্ক ছিলো। আপনিতো এতো বছর পর এলেন।
মেরিন : ও ন্যাশনাল খেললে আমি ইন্টারন্যাশনাল খেলবো।
জন : অনেক ঝামেলা হবে ম্যাম। অনেক দাঙ্গাহাঙ্গামা হবে।
মেরিন : আই ডোন্ট কেয়ার।
জন : ম্যাম… প্রান অনেক ছোট। ছোট্ট একটা জান। লড়াই আপনার হবে না হয় তাদের হবে। কিন্তু সেটার প্রভাব সরাসরি গিয়ে পরবে প্রান্তিকের ওপর। ভয়ভীতি ঢুকে যাবে।
মেরিন ভেবে দেখলো কথাটা ঠিকই।
জন : নীড় আহমেদ চৌধুরীর আইকিউ অনেক বেশি। সব জায়গায় গুটি সাজিয়ে রেখেছে।
মেরিন : ওই লুজারের আইকিউ লেভেল হাই কিভাবে হতে পারে?
জন : এটাতো আল্লাহর দান। প্রানকে নেয়ার জন্য যে খেলাটা খেলেছে সেটা সকলের কল্পনারও বাহিরে।
মেরিন : ওই জঘন্য পরিকল্পনাটা ওই লুজারের মাথা থেকে বেরিয়েছিলো নাকি ল’ইয়ারের?
জন : নীড় আহমেদ চৌধুরীর মাথা থেকেই বের হয়েছিলো। ডিএনএ পর্যন্ত সেই পাল্টে দিয়েছিলেন। ইনফ্যাক্ট কবির স্যারের বিপদ কেটে যাওয়ার ভাবনাটাও নীড় চৌধুরীরই ছিলো। সে জানতে পেরেছিলো যে প্রান বাংলাদেশ থেকে দূরে কোথাও আছে। কোথায় আছে সেটা জানতোনা । সে পরিবেশটা শান্ত করে। ফাঁদ পাতেন । আর কবির স্যার সেটাতে পা দেয়ার ভুল করেন।
মেরিন : হামম বুঝতে পারলাম। ধোকা দেয়ার অভ্যাস আছে। ধোকার খেলা চৌধুরীরা শুরু করেছে। তাহলে ধোকার খেলায় আমাকেও প্রবেশ করতে হবে। শেষ তো করতে হবে। তাইনা?
জন : আপনি তো পেছন থেকে ছুরি মারাতে বিশ্বাসী নন ম্যাম।
মেরিন : আই নো দ্যাট। কিন্তু নতুন নতুন খেলা খেলতে হয়। নতুন অভিজ্ঞতা রাখতে হয়। প্রানকে সুরক্ষিত ভাবে নিজেদের কাছে আনার জন্য গেইমটা খেলতে হবে। লেটস প্লে দ্যাট গেইম। দেখি কতোটা মজা আছে এই খেলায়। নীড় আহমেদ চৌধুরী নিজের নামে বদনাম রটিয়েছে তো। আমি আরো একটু বদনাম করি। কি বলো?
জন : আপনার কথা বুঝতে পারছিনা ম্যাম।
মেরিন : রেপ কেইস হবে লুজার চৌধুরীর নামে। যেহেতু নিজের মিথ্যা নিজেই রটিয়েছে তাই কাজটা করতে আমার অসুবিধা হবেনা।
জন : বাট ম্যাম… কার সাধ্য হবে মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেয়ার? শেষ করে দিবে নীড় চৌধুরী। দু মিনিটে সত্য সবার সামনে আসবে। আর তারচেয়েও বড় কথা তার নামে কে কি বলল সেটার সে কেয়ার করেনা।
মেরিন : করবে করবে। আর জন ডার্লিং… তোমার কেনো মনেহচ্ছে যে আমি কাউকে হায়ার করবো কাজটার জন্য?
জন : তাহলে কি করবেন ম্যাম?
মেরিন : অনেক কিছু। শুরুটা হবে অভিনয় দিয়ে
জন : অভিনয়!
মেরিন : ইয়েস। আমি জীবনে অনেক কিছু করেছি। কিন্তু অভিনয় করিনি। অভিনয় তথা মুখোশ পরে থাকা আমার পছন্দ নয়। পেছন থেকে ছুরি মারার চেয়ে বুকে গুলি করার আনন্দটা অনেক বেশি। কিন্তু… এখন তো সময় অভিনয় করার… যে ধোকার ভাষা বোঝে তার সাথে ধোকার ভাষাতেই কথা বলবো।
.
প্রান্তিক : ওয়াও চাচ্চু… এটা আমাল জিপ?
নীড় : ইয়েস লাভ। এটা তোমার জিপ। এটা দিয়ে তুমি পুরো গার্ডেন ঘুরে বেরাবে।
প্রান্তিক : এটা চালাবো কিভাবে?
নীড় : চাচ্চু দেখিয়ে দিচ্ছি। খুব ইজি।
নিহাল : নীড়…
নীড় : বলো।
নিহাল : জরুরী কথা ছিলো।
নীড় : ওয়েট করো। প্রানের সাথে জরুরী কাজ করছি।
নীড় প্রান্তিককে দেখিয়ে দিলো। আর প্রান্তিকও শিখে গেলো। ও চালাতে লাগলো।
নীড় : পিটার খেয়াল রেখো।
পিটার : ইয়েস স্যার।
নীড় ভেতরে গেলো।
নিহাল : ২টা নিউজ আছে।
নীড় : আরকে মির্জা নিজের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো। রাইট?
নীলিমা : হ্যা।
নীড় : না করে দাও।
নিহাল : নীড়… বিয়ের জন্য না কেনো?
নীড় : না তো বিয়েতে বিশ্বাস করি। আর না তো ভালোবাসায়। সবচেয়ে বড় কথা মেয়েদেরকে একদমই বিশ্বাস করিনা।
নীলিমা : আশ্চর্য্য তো। সারাজীবন বিয়ে না করে থাকবে?
নীড় : প্রবাবলি ইয়েস।
নিহাল : কেনো মেয়ে , প্রেম , বিয়েতে এতো অরুচি?
নীড়ের চোখের সামনে ভেসে উঠলো পুরো ক্যাম্পাসের সামনে মেরিনের থাপ্পরটা। ভেবেই রাগ উঠে গেলো। হাতে মোবাইল ছিলো সেটা ছুরে মারলো।
নীড় : প্রেম , বিয়ে এবং মেয়ে নিয়ে আমি কোনো কথা শুনতে চাইনা। দ্যাটস ইট।
নীড় চলে যেতে নিলে নিহাল
বলল : দ্বিতীয় খবর সম্পর্কে জানোনা?
নীড় দারালো।
নীড় : মির্জারা এলো সেটা জানি আর খান বাড়ি থেকে আসার কথাটা জানবোনা? মির্জা বাড়ির সাথে কোনো দুশমনি নেই। খানেরা তো জন্মগত শত্রু। বন্ধুর চেয়ে শত্রুের খোঁজ বেশি রাখতে হয়।
নিহাল : মিলাদের জন্য বলে গেলো। কেনো বলে গেলো?
নীলিমা : সবকিছু নেগেটিভলি নেয়া কি জরুরী? তোমরা দুজন গিয়েছিলে জানাজায়। সেটার পেছনে কি কারন ছিলো?
নিহাল : মানবিকতা।
নীলিমা : সে কারনেই হয়তো তারাও মিলাদে যেতে বলেছে।
নিহাল : তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো যে খানেরা মোটেও মানবিক নয়।
নীলিমা : জানি আমি সেটা। আমি যেতেও বলিনি। আমি বললাম যে…
নীড় : আমরা যাচ্ছি ওখানে…
নিহাল-নীলিমা : কি বলছো কি?
নীড় : যেটা শুনলে।
নিহাল : এটা একটা ট্র্যাপ হতে পারে।
নীড় : তুমি বলছো ট্র্যাপ হতে পারে। অথচ আমি জানি যে এটা একটা ট্র্যাপ। মারাত্মক ট্র্যাপ।
নীলিমা : ট্র্যাপ হলে যাবো কেনো?
নীড় : সেটা ভাঙতে।
নিহাল : তোমার কথাটা বুঝতে পারছিনা। আমি যদি ভুল না হই তাহলে এগুলো মেরিন বন্যা খানের প্ল্যান।
নীলিমা : মানে নীলার ছোটবোন?
নীড় : ইয়েস।
নিহাল : চেনো ওকে?
নীড় : চেনা না চেনার মাঝামাঝিতে আছি । অথবা ছিলাম।
নিহাল : নীড়… ক্লিয়ারলি বলো।
নীড় : কবির ফয়সাল খান এবং কনিকা খানের ছোট মেয়েও দেশে ফিরেছে শমসের খানের সাথে। তার দর্শনেই জানাজাতে গিয়েছিলাম। পেলাম না।
নীলিমা : ওর জন্য তুমি গিয়েছিলে?
নীড় : হামম।
নীলিমা : আগে ওকে দেখোনি?
নীড় : নীলা খানের বোন তথা ভাইয়ার শালিকার চেহারাটা দেখা হয়নি আগে। প্রয়োজনবোধ করিনি। তাই দেখা হয়ে ওঠেনি। আজকে প্রানের স্কুলে সন্দেহ হয়। পেয়ে যাই চেহারাটা। আসলে খান পরিবারের প্রতিটি সদস্যই ঘৃণার যোগ্য। মিলাদে যেতে বলার পেছনে অবশ্যই কোনো পরিকল্পনা আছে। দাদু-নাতনি মিলেই করেছে। যাবো এবং ভেঙে চুরচুর করে দিবো সবটা।
নিহাল : প্রানকে কি করবো?
নীড় : নিয়ে যাবো।
নীলিমা : কি বলছো কি? এতো কষ্ট করে আমরা প্রানকে পেলাম। তুমি আবার ওদের মুখোমুখি যাওয়ার কথা বলছো?
নীড় : হ্যা বলছি।
নিহাল : তোমার কথা আমার মাথাতে ঢুকছেনা।
নীড় : ঢোকাতে হবেনা। প্রান শেষবারের মতো যাবে। রুমে গেলাম আমি।
.
রাতে…
নীড়ের হাতে শ্যাম্পেইনের গ্লাস। চুমুক দিচ্ছে। ভাবছে প্রায় ছয় বছর আগের কথা। তখন ও এতো নিষ্ঠুর ছিলোনা। একটু রাগী ছিলো।
নীড় ট্রিপল ই-এর ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। মেরিন বিবিএ ফার্স্ট ইয়ারে অ্যাডমিট হয়েছে কেবল। ফিনল্যান্ডে আবেদন করে রেখেছে। অ্যাপ্রুভ হলেই চলে যাবে। দুজনে ভারতের একই ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট। নীড় কঠোর ছিলোনা। বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে ওর ভালো লাগতো। মোটামোটি সবার সাথেই ভালো ব্যবহার করতো। মেয়েদেরকেও অপছন্দ করতোনা। মেরিন বরাবরই একই রকম। প্রথম দেখাতেই ভালো লাগে মেরিনকে। ভালো লাগাটা ধীরেধীরে বৃদ্ধি পেয়ে ভালোবাসায় পরিনত হয়। ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতেই মেরিন ওকে চরম অপমান করে। তাও পুরো ক্যাম্পাসের সামনে। ঘটনার কয়েকদিন পরই মেরিন ফিনল্যান্ড চলে যায়। মেরিনের সেই চরম অপমানের পর থেকেই নীড় মেয়ে এবং ভালোবাসায় বিশ্বাস করেনা। প্রনয়-নীলার পরিনতির জন্য বিয়ের ওপর থেকেও ভরসা উঠে যায়।
নীড় : ঘৃণার আরো একটি কারন দেয়ার জন্য থ্যাংকস মিস মেরিন বন্যা খান। শুক্রবারটা আসলেই বিশেষ। লুজার… এই নামে ডাকতে আমাকে। তাইনা? লুজার নীড় কখনোই ছিলোনা।
ও আয়নার সামনে গিয়ে দারালো। শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে
বলল : এখন তো প্রশ্নই ওঠেনা। ইজন্ট ইট মিস্টার চৌধুরী?
নিজেকে নিজেই কথাগুলো বলে হাসতে লাগলো। আয়নাতে দেখলো প্রান্তিক একটু নড়েচড়ে উঠলো। নিজের হাসি থামিয়ে দিলো। প্রান্তিকের পাশে গিয়ে বসলো। ওর কপালে চুমু দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
নীড় : প্রান… নামটা তোকেই স্যুট করে। তুই আসলেই আমার প্রান। আমাদের সকলের প্রান। বুকের ভেতর লুকিয়ে রাখবো তোকে। কেউ কেরে নিতে পারবেনা। তোর ওই মামমাম মেরিন বন্যা খানও নয়। মেরিন বন্যা খান… এই মানুষটিকে আমি পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি। ওকে ক্ষত বিক্ষত করা হয়নি। এবার করবো। হিসাব নিকাশের ফলাফলটা সমান করতে হবে।
.
আজকে শুক্রবার। মেরিন সাদা থ্রীপিছ পরেছে। শমসের খানও সাদা পোশাক পরেছে।
জন : ম্যাম।
মেরিন : হামম?
জন : তারা ব্লক তিনে প্রবেশ করেছে। তিন মিনিটে প্রবেশ করবে।
মেরিন : হামম।
জন : বি কেয়ারফুল ম্যাম। আশেপাশে তাদের লোক আছে।
মেরিন : হামম।
সাদিকুর : স্যার।
শমসের : বলো।
সাদিকুর : চৌধুরীরা চলে এসেছে।
শমসের : ভালো খবর।
সাদিকুর : স্যার, ভয় হচ্ছে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটবেনা তো! মেরিন ম্যাম তো অনেক রেগে আছেন।
শমসের : যেদিন ফিরেছে সেদিনের পর থেকে কি আর রাগ করতে দেখেছো? শান্ত হয়ে গিয়েছে মেয়েটা। উডবিকে হারালো। এরপর জোর করে প্রানকে নিয়ে এলো কবির। এখন তো কবির-কনিকাকেও হারালো। কিভাবে টিকে আছে কে জানে?
সাদিকুর : উডবি! বিয়ে ঠিক হয়েছিলো ম্যামের!
শমসের : হ্যা।
.
চলবে…