প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-১২+১৩

0
28

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 12
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নীড় : এখানে কেনো?
পাশের জনের কোনো হেলদোল নেই। নরলোও না , কোনো কথাও বললনা নীড় উঠে বসলো। মেয়েটির কপালে ভ্রুর জাস্ট ওপরের দাগটা ওর চেনা। চুলের রঙ এবং চুলের ধরনও ওর চেনা। মেয়েটির হাত এমন ভাবে লুটিয়ে আছে দেখে মনেহচ্ছে নিথর পাথর হয়ে আছে। হয় জ্ঞান নেই নাহয় মরে গিয়েছে। হাতের মধ্যে দাগ। কালো স্পট। পাঁচ আঙ্গুলের দাগ। হাত জোরাও ও চেনে। তবুও মুখ থেকে চুলগুলো তো সরাতে হবে। সরাতে গিয়েও থেমে গেলো। দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরলো।
নীড় : কি হচ্ছে? কি হলো?
পাশ ফিরে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর টিশার্ট পরে আছে। লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে মেয়েটির মুখ থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিলো। মুখে বিভিন্ন দাগ। কালচে দাগ পরে গিয়েছে।
নীড় : মমেরিন…
মেরিনের গালে ধীরেধীরে আঘাত করতে করতে বলল : মেরিন… এই মেরিন… মেরিন… চোখ খোলো। মেরিন… মেরিন… ওঠো। ওয়েক আপ। মেরিন…
মেরিনের কোনো হেলদোল নেই। নীড় পানি ছিটিয়ে দিলো ওর মুখে। তবুও মেরিনের জ্ঞান ফিরলোনা। নীড় বিছানা থেকে নেমে শার্টটা গায়ে পরে নিয়ে নিজের মোবাইল খুজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও পেলোনা।
নীড় : ড্যাম ইট।
বেডে লাথি মারলো।
নীড় : এখন ওকে এখানে ফেলে গেলে আরেক ঘটনা ঘটবে। ওকে নিয়ে যেতে হবে। ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এসব কি হলো? কেনো হলো? উফফ… সবই এই মেরিন বন্যার প্ল্যান। নোংরা প্ল্যান। মরে যাক। আই ডোন্ট কেয়ার।
নীড় বের হবার জন্য পা বারিয়েও ফিরে এলো। গাড়ির চাবিও পেয়ে গেলো।
নীড় : মিথ্যা কেইসে ফেসে যাবো।
নীড় মেরিনকে কোলে তুলে নিলো। দরজা খুলে বের হলো। নিচে নামতেই দেখে মিডিয়া দারিয়ে আছে , মানুষের ভীর। নীড় সেটা নিয়ে না ভেবে মেরিনকে গাড়িতে তুলল।

☆ : যেমনটা আমাদের কাছে খবর ছিলো তেমনটা সত্যিই হয়। আপনারা সবাই দেখতে পেলেন যে মিস্টার নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন মেরিন বন্যা খানকে নিয়ে হোটেল রুম থেকে বেরিয়ে কোথাও গেলেন। মেরিন বন্যা খানের জ্ঞান ছিলোনা। তবে কি লেইট কবির ফয়সাল খানের মেয়ে মেরিন বন্যা খান সমাজের এক বড় অসুখের শিকার হয়েছেন? অত্যাচারিত হয়েছেন? নাকি এর পেছনে আছে অন্য কোনো গল্প? জানতে হলে চোখ রাখুন আমাদের টেলিভিশনের পর্দায়।

নিহাল : মাইগুডনেস… কি দেখাচ্ছে এসব? নীলি… নীলি…
নীলিমা ছুটে এলো।
নীলিমা : কি হলো?
নিহাল : দেখো নিউজে কি দেখাচ্ছে।
নিহাল ওকে খবর দেখালো।
নীলিমা : অসম্ভব… এটা হতেই পারেনা।
নিহাল : আমি পিটারকে কল করছি।
নিহাল পিটারকে কল করলো।
নিহাল : পিটার… নিউজে এসব কি দেখাচ্ছে? কেনো দেখাচ্ছে?
পিটার : আমার কোনো ধারনা নেই স্যার। আমি যাচ্ছি এখন স্যারের ওখানে।
নিহাল : প্লিজ গো। কোথায় আছে নীড় সেটা ইনফর্ম করো। আমিও আসছি।
নীলিমা : আমিও যাবো।
পিটার : স্যার আমি টেক্সট করছি।
পিটার রেখে দিলো।

শমসের : এসব কি হলো? এমন তো কথা ছিলোনা। তিথিকে দিয়ে খেলছিলো মেরিন। এই জায়গায় তিথির থাকার কথা ছিলো। তাও নাটক করার কথা ছিলো।এখানে দিদিভাই কেনো? আল্লাহ… আমি কি তবে ভুল করলাম! হ্যা হ্যা ভুল। ভুল না অপরাধ। হ্যালো জন…
জন : আমি ম্যামের কাছে যাচ্ছি স্যার।
শমসের : এসব কি হলো? কেনো হলো? তুমি ছিলেনা ওর কাছে?
জন : না স্যার। ম্যাম আমাকে একটি কাজে পাঠিয়েছিলেন।
শমসের : মেরিনকে এখন কোথায় নিয়ে গিয়েছে ওই নীড়?
জন : আমি জেনে টেক্সট করছি।

■ : কি হলো? তুমি এমন ধপ করে বসে পরলে কেনো?
□ : নিউজ দেখো।
সে দেখলো।
■ : আল্লাহ… এসব কি হয়ে গেলো? এতোবড় সর্বনাশ কিভাবে হলো? এখন কি হবে?
□ : হলেও হতে পারে এটা নাটক। মেরিনের নাটক…
■ : নাটক… এমন নাটক কেউ করে? প্রতিটি খবরের চ্যানেলে দেখানো হচ্ছে। দেশ জুরে বদনাম।
□ : আহ… চুপ থাকো। ভাবতে দাও।

.

নীড় মেরিনকে নিয়ে হসপিটালে পৌছালো।
নীড় : ডক্টর… নার্স…
ডক্টর-নার্সরা ছুটে এলেন।
নীড় : দেখুন ওকে। ওর কি হয়েছে জ্ঞান ফিরছেনা। স্ট্রেচার প্লিজ।
মেরিনকে স্ট্রেচারে রাখলো নীড়। ডক্টররা দারিয়ে আছে।
নীড় : কি বললাম কানে ঢুকেনি? ওর চিকিৎসা করুন।
ডক্টর মতিন : স্যার… ইটস অ্যা রেইপ কেইস। পুলিশ কেইস। থানায় রিপোর্ট না হলে আমরা তার ট্রিটমেন্ট করতে পারবোনা।
নীড় ডক্টরের কলার ধরলো।
নীড় : আমি নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন। আমি যখন বলেছি ট্রিটমেন্ট করতে হবে তখন হবে। পুলিশ কেইস আমি বুঝে নিবো।যেটা বলেছি সেটা করুন।
ডক্টরের কলার ছেরে দিলো। মেরিনকে ভেতরে নেয়া হলো। জন-পিটার একসাথে পৌছালো।
জন : আমার ম্যাম কোথায়? কি করেছেন তার সাথে?
পিটার : স্যার এসব কি হলো? আপনি ওখানে কিভাবে গেলেন? মেরিন বন্যা খানকে নিয়ে কখন গেলেন?
প্রেসমিডিয়া হাজির হলো। প্রশ্ন তো চলছেই। পুলিশ উপস্থিত হলো। বিধ্বস্ত অবস্থায় শমসের খানও হাজির হলো।
শমসের : আমার দিদিভাই কোথায়?
জন : ডক্টর দেখছে ম্যামকে।
শমসের নীড়ের সামনে গেলো।
শমসের : কি করেছো তুমি আমার নাতনির সাথে? হামম? আমার মৃত নাতনিকে তো বদনাম করেছোই। এখন আমার নাতনির সাথেও এমন করলে? কেনো কেনো কেনো?
পিটার : স্যারের থেকে দূর সরে দারান শমসের খান স্যার।
শমসের : শাট আপ। আমার নাতনির যদি কিছু হয় তাহলে আমি সব ধ্বংস করে দিবো।
নিহাল-নীলিমা উপস্থিত হলো।
নিহাল : নীড় এসব কি?

রিপোর্টাররা এগিয়ে এলো।
○ : শমসের খান স্যার , কি মনেহয় আপনার? কি হয়েছে মেরিন বন্যা খানের সাথে?
শমসের : জানিনা আমি। কিছু জানিনা। ডক্টর এখনো বের হয়নি। আমি কেবল এটা জানি যে মেরিন আমার জীবনের একমাত্র অবলম্বন। ওর সাথে ভয়ংকর কিছু করেছে এই নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন। ছারবোনা আমি ওকে। কোনোক্রমেই নয়।
উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে বলতে শমসের খান জ্ঞান হারালেন।
জন : স্যার… স্যার… ডক্টর।
শমসের খানকেও ডক্টর নিয়ে গেলো।

নিহাল : কি করেছো তুমি মেরিনের সাথে?
নীড় : কিছু করিনি আমি।
নিহাল : এটা এখন বলোনা।
এসিপি আবির : মিস্টার চৌধুরী আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করার ছিলো।
নীড় : আমি কোনো উত্তর দিতে বাধ্য নই।
আবির : ইউ আর। আপনি কোনো সাধারন মেয়ের ক্ষতি করেননি যে আপনার ভয়ে চুপ হয়ে যাবে। শি ইজ মেরিন বন্যা খান।
নীড় : আমি কিছুই করিনি। ডক্টর এখনো বের হয়নি। আপ…
তখন ডক্টর বেরিয়ে এলো।
আবির : এখন তো ডক্টরও চলে এলেন।
জন : ডক্টর… ম্যাম কেমন আছেন?
মতিন : বেঁচে আছেন।ইটস অ্যা রেইপ কেইস। তার নখে কারো স্কিন আছে। সেগুলোর ডিএনএ টেস্ট করতে হবে।
আবির নীড়ের দিকে তাকালো। নীড় চেহারায় নখের আচড় আছে।
আবির : ডিএনএ টেস্ট নিছক একটি ফরমালিটি। মিস্টার নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষনের চেহারায় নখের আচর দেখা যাচ্ছে। সাধারনত মেয়েরা নিজেকে বাঁচাতে কাজটা করে। আম সিওর যে এনার বুকেও নখের আচড় আছে। তবুও করুন। মেরিন বন্যা খানের স্টেটমেন্ট প্রয়োজন। তার জ্ঞান কখন ফিরবে?
মতিন : অনেকক্ষন যাবৎ অজ্ঞান হয়ে ছিলেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে। এক্সকিউজ মি।
বলেই ডক্টর মতিন চলে গেলেন।
আবির : মিস্টার চৌধুরী দোয়া করুন যেনো কিছুক্ষনের মধ্যে যেনো কিয়ামত হয়ে যায়। তাহলে আপনাকে জেইলে যেতে হবেনা। জীবনের সকল শাস্তি পরকালেই পাবেন।
নীড় বাকা হাসি দিয়ে বলল : আপনি নিজের কথা ভাবুন।
আবির : ভাবিনা আমি নিজের কথা। এই ইউনিফর্ম পরার সময় নিজের কথা ভাবা বন্ধ করে দেই। অন্যকোনো মেয়ের ক্ষেত্রেও আমি এভাবেই কথা বলতাম আপনার সাথে। তবে হয়তো তখন আপনি দাপট দেখিয়ে আমাকে সিনিয়র দিয়ে , মিনিস্টার দিয়ে চুপ করাতেন অথবা ভিক্টিমের মুখ বন্ধ করাতেন। কিন্তু এখন সেটা পারবেননা।

.

একটুপর মেরিনের জ্ঞান ফিরলো। এসিপি আবির ভেতরে ঢুকলো।
আবির : মিস মেরিন বন্যা খান…
মেরিন চোখ মেলল।
আবির : এই অবস্থায় আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। জানি আপনি অসুস্থ তবুও আপনার স্টেটমেন্ট নেয়া জরুরী। কি হয়েছে আপনার সাথে? কিভাবে হয়েছে?
মেরিন : আমি গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। নীড় রাস্তার মাঝখানে আড়াআড়িভাবে গাড়ি থামিয়ে বিয়ারের কেস নিয়ে গাড়ি হেলান দিয়ে বসেবসে ড্রিংকস করছিলো। গাড়ি আড়াআড়িভাবে ছিলো। আমার গাড়ি যাওয়ার জায়গা ছিলোনা। তাই বাধ্য হয়ে আমাকে গাড়ি থেকে নামতে হয়। আমি ওকে সরতে বলি। নীড় ড্রাংক ছিলো। প্রচুর নেশা চরেছিলো। যেমনটা সবাই জানেন যে আমাদের মধ্যে তথা দুই পরিবারের মধ্যে ইস্যু আছে। তো স্বভাবতই আমাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একটা পর্যায়ে ও রেগে যায়। আমাকে থাপ্পর মেরে দেয়। আমিও থাপ্পর মারি। এরপর ও হিংস্র হয়ে যায়। আমি ওকে থামানোর জন্য নিজের গান বের করি। নীড়ও নিজের গান বের করে। আমার গান বরাবর শ্যুট করে। এতে করে আমার গান আমার হাত থেকে পরে যায়। ও জোর করে আমাকে নিজের গাড়িতে তোলে। ওই হোটেলে নিয়ে যায়। আমার সাথে…
বলেই মেরিন কাঁদতে লাগলো।
আবির : কেইস লেখা হয়ে গিয়েছে। আপনার একটি সিগনেচার লাগবে। কষ্ট হলেও কাইন্ডলি করে দিন।
মেরিন করে দিলো।

সাংবাদিকরা নিহাল-নীলিমাকে বিভিন্ন রকমের প্রশ্ন করতে লাগলো। কি বলবে কি বলবেনা এটা নিয়ে দুজন অনেক ঘাবরে আছে। তবুও কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলো । তবের প্রশ্নের তিক্ততা এবং তীব্রতা এতোটাই ছিলো যে ওদের দুজনের পক্ষে উত্তর দেয়া অনেক কঠিন হয়ে গেলো। নিহাল ঠিক করলো যে , যেভাবেই হোক বিষয়টার মোড় অন্যদিকে ঘোরাতে হবে।
সাংবাদিক তানিয়া : কি হলো? কিছু বলছেন না কেনো?
নিহাল : কি বলবো আপনাদের? এটা একটি ম্যারিটাল হ্যারজেমেন্ট ইস্যু।
নীলিমা নিহালের দিকে তাকালো।
তানিয়া : কি? কি বললেন আপনি?
নিহাল : সেটাই… যেটা শুনলেন।
তানিয়া : আপনার মতে মিস্টার চৌধুরী এবং মিস খান বিবাহিত?
নিহাল : হ্যা-ও বলতে পারেন আবার না-ও বলতে পারেন। বিয়ে হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটা সফল হয়নি। ওরা এখন সেপারেটেড। এখন বললে ভুল হবে। বরং অনেকদিন ধরেই সেপারেটেড। এখন আপনারা প্লিজ দূরে থাকুন। মেরিন কথা বলার অবস্থায় এলে বাকি ঘটনা ওর কাছ থেকে শুনে নিবেন।
যেভাবেই হোক সকল রিপোর্টারদের সরানো হলো।

নীড় দারিয়ে দারিয়ে মনে করার চেষ্টা করছে যে গতরাতে কি কি হয়েছিলো। ওর কিছুতেই কিছু মনে পরছেনা।
নীড় : এমনটা তো হয়না আমার সাথে। নেশা তো আমার সব ভুলিয়ে দেয়না কখনো। তাহলে কালকে এমন কি হলো? আমি যেখানে ছিলাম সেখানে তো মেরিন কোথাও ছিলোনা। পিটার পর্যন্ত জানতোনা যে আমি কোথায় যাচ্ছি। পিটার তো পিটার আমিও জানতাম না যে আমি কোথায় যাচ্ছি। আমার মেজাজ বিগরালো তাই আমি বের হয়ে বিয়ার নিয়ে গেলাম। ওখানে গাড়ি এমনিই থামাই। এরপর কি হলো?
আবির : মিস্টার নীড় আহমেদ চৌধুরী ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট।
নীড় : রিয়েলি?
আবির : ইয়াহ । রিয়েলি। বলেছিলাম না দোয়া করুন যেনো কিয়ামত হয়ে যায়। তা না হলে আপনাকে অ্যারেস্ট হওয়ার হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবেনা।
নীড় হাসলো।
নীড় : পিটার…
পিটার এসিপি আবিরের দিকে একটি কাগজ এগিয়ে দিলো।
আবির : কি এটা? আমার ট্রান্সফার লেটার নাকি?
নীড় : ন্যাহ… পড়তে পারেন তো। পড়ুন।
আবির পরলো।
আবির : অ্যান্টিসিপেটেড বেইল।
নীড় : ইয়েস ডিয়ার। আমাকে আর অ্যারেস্ট করা হলোনা। অগ্রিম জামিন আছে তো।
আবির : পাওয়ার কতোক্ষন কাজে লাগে সেটাও আমি দেখবো। যাইহোক , অ্যারেস্টের হাত থেকে তো বেঁচে গেলেন। কিন্তু ইনভেস্টিগেশনের হাত থেকে বাঁচবেন না। মেরিন বন্যা খানের নখে থাকা স্কিনের সাথে আপনার ডিএনএ ম্যাচ করা হবে। হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ চেক করা হবে , হোটেল স্টাফদের স্বাক্ষী নেয়া হবে। কতোক্ষন বাঁচবেন? আপনাদের মতো মানুষের জন্য মেয়েরা ন্যয় পায়না। আপনাদের জন্য পুরুষজাতিকে ঘৃণার পাত্র হতে হয়। আপনাকে আমি বরবাদ করে দিবো
নীড় : যা করার করো। যা পারবে করো। এখন কি আমি যেতে পারি?
আবির : যাবেন যাবেন।ডিএনএ স্যাম্পল তো দিয়ে যান। সিস্টার।
নার্স নীড়ের ডিএনএ স্যাম্পল রেখে নিলো।
আবির : এখন কেইসটা সরাসরি আদালতে উঠবে।
নীড় : জাহান্নামে তুলেন। হু কেয়ারস। তবে নিজেরও খেয়াল রাখবেন। চলো পিটার।
নীড় চলে গেলো।

.

শমসের : দিদিভাই… ও দিদিভাই… কেমন লাগছে এখন?
মেরিন : ভালো।
শমসের : এসব কি হয়ে গেলো? এখানে তো তিথির থাকার কথা ছিলো। তাও নাটক করে। কিন্তু…
মেরিন : দাদুভাই… যেটা হবার হয় সেটাকে আটকানোর আমরা কে বলো তো? এতোকিছুর মধ্যেও কিছু তো ভালো হয়েছে বলো… প্রানের কাস্টডি পাওয়ার কেইসটা আরো শক্তিশালী হবে।
শমসের : প্রানকে চাই… কিন্তু তোমার ক্ষতি করেনা।
শমসের চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো।
মেরিন : দাদুভাই…
মেরিন জনের দিকে তাকালো।
জন : স্যার… চলুন… বাসায় চলুন। এখানে থাকলে আপনি অসুস্থ হয়ে পরবেন।
শমসের : আমি আমার নাতনিকে রেখে কোথাও যাবোনা।
জন : স্যার… ম্যাম ঠিক হয়ে যাবেন। চলুন…
শমসের : আমি কোথাও যাবোনা।
মেরিন : দাদুভাই… মরে যাইনি আমি।
জন জোর করে শমসের খানকে নিয়ে গেলো।

.

নীলিমা : এমনটা কেনো করতে গেলে?
নীড় : আমি কিছু করিনি। ড্রামা করছে ওই মেয়েটা।
নীলিমা : এই ঘটনা নিয়ে কোন মেয়ে মিথ্যা বলবে বলো তো? এতোবড় মিথ্যা কে বলে? তোমার এই কাজে তোমার বাবা মিডিয়াকে এটা বলে দিয়েছে তুমি এবং মেরিন বিবাহিত। এটা ম্যারিটাল ইস্যু।
নীড় : কি?
নীলিমা : হ্যা।
নীড় : বাবা তুমি এমনটা বলেছো?
নিহাল : তাছারা কি করতাম আমি? কি সত্যি আর কি মিথ্যা সেটাতো আমি জানিনা। ওই মুহূর্তে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য কথাটা বলেছি।
নীড় হাহা করে হাসতে লাগলো।
নীড় : বাবা… নিজের অজান্তেই তুমি দারুন একটা কাজ করেছো। এখন ওই মেরিন বন্যা খানকে ওর নিজের জালে নিজেকেই আটকাবো।
নিহাল : কি করবে তুমি?
নীড় : বউ বানাবো মেরিনকে।
নীলিমা : কি যা তা বলছো তুমি?
নীড় : হামম ঠিক বলছি। ম্যারিজ রেজিস্ট্রি পেপারে মেরিন বন্যা খানের সিগনেচার নেয়া হবে। আমিও করবো। রেজিস্ট্রিটা হবে ব্যাকডেটে। মিথ্যা দিয়ে মিথ্যা দূর করবো , সত্য বের করবো।
নিহাল : জানিনা কতোটা সফল হবে। কিন্তু তুমি হয়তো ভুলে গিয়েছো যে রেজিস্ট্রি পেপারে সিগনেচার হয়ে গেলে ও তোমার স্ত্রী হয়ে যাবে। বিয়ে হয়ে যাবে তোমাদের।
নীড় : বিয়ে টিয়ে মানিনা।
নিহাল : তুমি না মানতে পারো। কিন্তু দুনিয়া মানে।
নীড় : বিয়ে যদি হয় তাহলে ডিভোর্সও হবে। জিততে আমি দিবোনা ওই মেয়েকে।
নিহাল : নীড়… বিয়ে বিষয়টা অতোটা সহজ নয়। চাইলেই যেমন বিয়ে করা যায়মা তেমন চাইলেই বিয়ে ভাঙাও যায়না। এটা ভাগ্যের বিষয়।
নীড় : ওই ভাবনার দিকে আমি যাবোও না। তুমি কি চাও আমি ওই মেরিনকে জিততে দেই? নিজের গায়ে মিথ্যা কলঙ্ক লাগতে দেই? হামম?
নিহাল : মিথ্যা কলঙ্ক তুমি নিজেই নিজের গায়ে লাগিয়েছো। মৃত মানুষের ওপরেও লাগিয়েছো।
নীড় : যা করেছি প্রানের জন্য করেছি।

.

২দিনপর…
আবির : মিস মেরিন…
মেরিন : ইয়েস এসিপি।
আবির : সব প্রমান নীড় আহমেদ চৌধুরী বিরুদ্ধে। আপনার কথা সত্য। ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। কিন্তু আইন আমরা হাতে তুলে নিতে পারিনা ।অগ্রিম জামিন নিয়ে রাখার কারনে তাকে গ্রেফতারও করা সম্ভব নয়। তাই কেইসটা সরাসরি আদালতে উঠবে।
মেরিন : হামম।
আবির : আইনত ভাবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকটা পেপার আপনার সিগনেচার লাগবে। করে দিতে হবে আপনাকে। পড়ে দেখে নিবেন। এরপর সিগনেচার করবেন। রেখে গেলাম। ২ঘন্টা পর আমি নিজে এসে নিয়ে যাবো। অন্য কারো ওপর আমি ভরসা করতে পারবোনা । তাই আমিই এসে নিয়ে যাবো।
মেরিন : হামম।
আবির বেরিয়ে গেলো।
মেরিন : এই কাগজগুলো তোমার হারের দলিল লুজার চৌধুরী। তুমি আমার আপুকে ভরা আদালতে ক্যারেক্টারলেস প্রমান করেছিলে। প্রানকে তোমার ভাতিজা। কিন্তু ওকে নিজের ছেলে প্রমানিত করে সর্বোচ্চ দাগ লাগিয়েছিলো আপুর চরিত্রে। এখন সেই জালে তুমিই ফাঁসবে। ভরা আদালতে অপমানিত হবে। আমি আনন্দিত হবো।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 13
writer : Mohona
(do not copy please)

.

মেরিন : আমি আনন্দিত হবো।
ও সবগুলো কাগজ পড়ে নিলো। এবার সাইন করার পালা। তখন নার্স এলো ওকে ঔষধ দেয়ার জন্য। নার্স ওর হাতের স্যালাইন খুলে রাখলো। এরপর ঔষধ খাওয়ালো। ব্লাড প্রেসার মেপে বেরিয়ে গেলো। মেরিনও সব কাগজে সাইন করে নিলো। রেখে দিলো নিজের কাছেই। ১ঘন্টা পর আবারো নার্স এলো ইনজেকশন দেয়ার জন্য। দিয়ে চলে গেলো। কিছুক্ষনপর এসিপি আবির এলো কাগজ ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। দেখলো মেরিন সবগুলো কাগজে সিগনেচার করে নিয়েছে।
আবির : থ্যাংকস ম্যাম।
মেরিন : থ্যাংকস তো আপনাকে দেয়া উচিত।কারন আপনি নিজের ডিউটি সুন্দরভাবে পালন করছেন।
আবির : ওয়েলকাম ম্যাম।
এসিপি আবির চলে গেলেন।
মেরিন : এখন দেখো লুজার চৌধুরী কে হয়।
মেরিন জানতেও পারলোনা যে রুমে পিটার ছিলো। নার্সের দুবার করে আসার পেছনেও পিটারের হাত আছে। প্রথমবার যখন নার্স এলো তখন পিটার আবিরের দেয়া কাগজগুলোর সাথে রেজিস্ট্রি পেপারটা রেখে দিয়েছিলো। পরে যখন নার্স এলো তখন পিটার রেজিস্ট্রি পেপারটা বের করে নিয়েছিলো।
পিটার মনেমনে : সরি মেরিন ম্যাম… নীড় স্যার না চাওয়া পর্যন্ত আপনি তাকে হারাতে পারবেন না। যদিও সম্পুর্ন চেষ্টা করেছিলেন তাকে হারানোর। কিন্তু সেটা হয়তো আর সম্ভব হবেনা। স্যারের সাথে আমি আছিতো। স্যার যে রেগে যেতে পারেন তেমন কোনো সম্ভাবনা আছে জানলে আমি তো সেদিন ওখানেই রয়ে যেতাম। কাজ তো হয়ে গিয়েছে। এখন সাবধানে এখান থেকে বের হতে হবে।
মেরিন : ঠান্ডাটা একটু কমেছে মনেহচ্ছে ঔষধ খেয়ে। নাকটা বন্ধ হয়েছিলো। পারফিউম… পারফিউমের স্মেল পাচ্ছি। কোথায় থেকে আসছে?
পিটার মনেমনে : সর্বনাশ… এনার নাক খোলারও আর সময় পেলোনা? কিভাবে বের হবো? এখানে চলে এলে? এই জানালা দিয়েই বের হতে হবে। ১০তলার ওপরে আছি। সাবধানে নামতে হবে।
পিটার নেমে গেলো। একটু কষ্ট হলেও সফল হলো। মেরিন সবজায়গায় দেখলো। কাউকে পেলোনা।

.

নীড় : হাহাহা… তুমি আমার যোগ্য মন্ত্রী পিটার। তুমি আমার শক্তি। রাজার সাথেসাথে মন্ত্রীকেও দুর্ধর্ষ হতে হয়। তুমি আমার দুর্ধর্ষ মন্ত্রী। থ্যাংকস অ্যা লট।
পিটার : স্যার… আপনি এমন করে কেনো বলছেন?
নীড় : তোমার যতো তারিফ করবো ততো কম হবে। পেন…
পিটার কলমটা দিলো। নীড় সিগনেচার করতে গিয়েও থেমে গেলো।
নীড় : কোন পেন দিয়ে সাইন করেছে মেরিন?
পিটার : স্যার , ওই কালারের পেনই দিয়েছি আপনার হাতে।
নীড় : নট জাস্ট কালার। সেইম ব্র্যান্ড , সেইম কালার , সেইম কভার , সেইম মডেল চাই। মেরিন বন্যা খান ও। যে এমন ভয়ংকর প্ল্যান বানাতে সে সব খুটিনাটি মাথাতেই রাখবে। তাই তেমনটাই চাই।
পিটার : জী স্যার। আমি এখনই ব্যবস্থা করছি।
কিছুক্ষনের মধ্যেই পিটার মেরিনের মতো কলম নিয়ে চলে এলো।
পিটার : স্যার… পেন।
নীড় কলমটা নিয়ে সাইন করে দিলো।
নীড় : অ্যানাদার পারফেক্ট ক্রাইম। এখন অপেক্ষা কেবল কোর্টে তারিখ পরার।

.

■ : কি ভাবছো?
□ : এটাই যে মেরিন বন্যা খান আসলেই কি ভিক্টিম? নাকি সবটাই একটি সাজানো নাটক?
■ : এমন সেনসিটিভ বিষয় নিয়ে কোন মেয়ে এমন নাটক সাজাবে বলো তো?
□ : ওর নাম মেরিন বন্যা খান। ও সব করতে পারে। সব মানে সব। কাউকে ফাঁসানোর হলে বা শাস্তি পাওয়ানোর হলে ও নিজেকে নিজে শেষ করে দিবে। যেনো ওকে হত্যা করার দায়ে কেউ ফেঁসে যায়। মানে ওর দুশমন ফেঁসে যায়।
■ : মরে যাওয়া এমন বদনামের চেয়ে অনেক বেশি ভালো।
□ : সেই সেন্স রেখে মেরিন বন্যা খান চললে তো কাজই হতো। ওর মাথায় কখন কি চলে সেটা কেবল ওই জানে।
■ : জানার চেষ্টা তো করতে হবে।
□ : সোর্স লাগিয়ে দিয়েছি। এখন দেখি খবরটা কখন আসে।
■ : যদি এটা নাটক হয়েও থাকে তাহলে কি হবে?
□ : জানিনা। মেরিন বন্যা খান কি ভেবে কি করেছে সেটা ওই জানে।
■ : আর জানবে ওর বিশ্বস্ত জন।
□ : হামম।

.

পরদিন…
প্রান্তিক : ও চাচ্চু… কাকিমাল কথা বলেছিলাম তো।
নীড় : ইয়াহ ইয়াহ মনে আছে আমার।
প্রান্তিক : তাহলে তিথি আন্টিকে কবে কাকিমা বানিয়ে আনবে?
নীড় : তিথি আন্টি বেশি প্রিয় নাকি মামমাম?
প্রনয় : মানে কি?
নীড় : বলো না কে বেশি প্রিয়? তিথি আন্টি কি মামমামের চেয়েও প্রিয়?
প্রান্তিক : না না। তা নয়। মামমাম তো আমাল অনেক বেশি প্লিও।
নীড় : তাহলে কেমন হবে যদি আমি মামমামকে কাকিমা বানিয়ে বাসায় নিয়ে আসি? হামম?
প্রান্তিক : মামমাম হবে কাকিমা! মানে মামমাম এখানে এসে থাকবে? আমি তোমাল সাথে , মামমামেল সাথে মানে দুজনেল সাথেই থাকতে পালবো?
নীড় : ইয়েস ইয়েস ইয়েস।
প্রান্তিক : ইয়ে… কি মজা! ইয়ে… হিপ হিপ হুললে
প্রান্তিকের আনন্দ আর দেখে কে।
প্রান্তিক : এক মিনিট… তুমি সত্যি বলছো তো!
নীড় : চাচ্চু কি কখনো তোমাকে মিথ্যা কথা বলি? হামম? তুমি তো আমার দুনিয়া। তোমাকে মিথ্যা কথা বলতে পারি!
প্রান্তিক মাথা নেরে সায় দিলো।
প্রান্তিক : মামমাম সবসময় আমাদেল সাথে থাকবে?
নীড় : অফকোর্স।
প্রান্তিক : ইয়ে… আমি এক্ষনি দাদুভাই আর দীদুকে বলে আসছি।
নীড় : হ্যা হ্যা যাও।

নিহাল : নীড়… তুমি বুঝেশুনে পা ফেলছো তো?
নীড় : তোমার কি আমাকে নির্বোধ মনেহয়?
নিহাল : নীড়… তুমি এবার যাকে নিয়ে খেলছো সে কিন্তু মেরিন বন্যা খান। যে এতোবড় নাটক সাজাতে পারে সে কিন্তু যা তা করতে পারে।
নীড় : মেরিন বন্যা খান যদি আমাকে নিয়ে খেলতে পারে তাহলে আমি কেনো পারবোনা বলো তো?
নিহাল : তুমি তো আর আমার কথা শুনবেনা। যা করার করো। শেষবারের মতো জিজ্ঞেস করছি। তুমি কি সত্যিই মেরিনের সাথে এমনটা করেছো?
নীড় : না।
নিহাল : তোমার ভাষ্যমতে তোমার কিছুই মনে নেই। তবুও বলছো যে তুমি কিছু করোনি।
নীড় চুপ করে রইলো।
নিহাল : যা ভালো বোঝো করো।
বলেই নিহাল চলে গেলো।
নীড় : না না না… আমি কিছু করিনি। আমি এমনটা করতেই পারিনা। কিন্তু সেদিন হয়েছিলোটা কি? হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজে তো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যে আমিই ওকে টেনে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছি। ভিডিও টা এডিট করাও নয় , এআই-ও নয়। তাহলে কেনো এমন হলো? মেরিন কি এমন করেছিলো যে আমি এমনটা করলাম? সব প্রশ্নের উত্তর তখনই পাবো যখন এটা জানতে পারবো যে মেরিন আমার পর্যন্ত কিভাবে পৌছেছিলো? এটাতেই সব উত্তর আছে।
প্রান্তিক : চাচ্চু…
নীড় : ইয়েস লাভ?
প্রান্তিক : মামমাম কি আমাল সাথে আমাল লুমেই থাকবে?
নীড় : হামম। তুমি যেমনটা চাইবে তেমনটাই হবে।
প্রান্তিক : মামমামেল সাথে কথা বলবো।
নীড় : মামমামকে তো সারপ্রাইজ দিবো। বুঝলে?
প্রান্তিক : হামম হামম।

.

তিথি : অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে… আপনি আমার মাবাবাকে মুক্ত করে দিয়েছেন।
আরিফ : তুমি নিজের কাজটা ভালোভাবে করে চলেছো তাই সময়ের আগে তোমার পরিবারকে ছেরে দেয়া হলো। তবে এর মানে এটা নয় যে তুমি নিজেকে স্বাধীন মনে করবে। নীড় আহমেদ চৌধুরীকে সব বলে দেবে। তোমার ওপর প্রতি মুহূর্তে নজর রাখা হচ্ছে। নীড় আহমেদ চৌধুরী তোমাকে কাজ থেকে ছুটি দিলেই তুমি মুক্তি পেয়ে যাবে সম্পুর্নভাবে। কথাটা মাথায় রেখে কাজকর্ম করো।
তিথি : জী অবশ্যই। কিন্তু আমাকে দিয়ে এসব কেনো করানো হচ্ছে ? এখন নীড় আহমেদ চৌধুরী নিজেই বিপদে আছেন। তাহলে এসব কেনো করতে হবে আমাকে?
আরিফ : তোমাকে প্রশ্ন করার অনুমতি দেয়া হয়নি।
তিথি : সরি।
আরিফ : নীড়ের জীবনে যা হওয়ার হোক। তুমি নিজের কাজ চালিয়ে যাও। সেটার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই।
আরিফ চলে গেলো। তিথি নিজের পরিবারকে পেয়ে চিন্তামুক্ত হলো।
আরিফ : আমি তো নিজেই জানিনা যে মেরিন বন্যা খান কেনো তোমাকে দিয়ে এসব করাচ্ছে?

.

৫দিনপর…
আজকে আদালতের প্রথম শুনানী। দুই পক্ষ এসে উপস্থিত হলো। দুই পক্ষের উকিলও আছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই জজসাহেব আসবেন। মেরিনের উকিলের নাম ফজলে রাব্বি এবং নীড়ের উকিলের নাম আহসান হাবিব।
আবির : মিস্টার চৌধুরী আপনাকে কাঠগড়ায় দারাতে হবে।
নীড় : দারাবোনা।
হাবিব : এসিপি আবির… জজ সাহেব এলে আমার ক্লায়েন্ট কাঠগড়ায় দারাবে।
আবির নিজের জায়গায় গিয়ে দারালো। নীড় হাবিবের দিকে তাকাল॥
হাবিব : নীড় স্যার… আপনাকে আসামী করা হয়েছে । দারাতে আপনাকে হবেই।
মেরিন মনেমনে : কতোক্ষন নিজেকে রক্ষা করবে লুজার চৌধুরী? ওই কাঠগড়াতে দারাতে তো তোমাকে হবেই। আমার আপুর নামে তুমি মিথ্যা রটিয়েছো তো। এমন চাল দিবো যে তুমিই সেটার খোলাসা করবে। প্রানও আমার কাছে আসবে।
নীড় মনেমনে : যতো যা পরিকল্পনা করার করে নাও মেরিন বন্যা খান। তুমি অলরেডি মিসেস চৌধুরী হয়ে গিয়েছো কিন্তু তুমি জানতেও পারলেনা। বেচারি।

জজ সাহেব ভেতরে এলেন। নীড় গিয়ে কাঠগড়ায় দারালো।
জজ : আদালতের কার্যক্রম শুরু করা যাক।
ফজলে রাব্বি এগিয়ে এলো।
রাব্বি : ইউর অনার… আমার ক্লায়েন্ট মেরিন বন্যা খান হলেন এই মামলার বাদী। সেই ভিক্টিম। তারসাথেই অন্যায় হয়েছে। আসামী নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন জোর করে তাকে হোটেলে নিয়ে যান। সেখানে নিজের হিংস্ররূপ দেখান। পরদিন সকালে নিজেই অজ্ঞান হয়ে থাকা মেরিন বন্যা খানকে হসপিটালে নিয়ে যান। হোটেলের সিসিটিভ ফুটেজ , হোটেল স্টাফদের স্টেটমেন্ট এবং হসপিটালের রিপোর্ট আপনার টেবিলে রাখা আছে।
জজ দেখলেন।
রাব্বি : ইউর অনার ,আসামী নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন একজন মেয়েবাজ লোক। চরিত্রহীন একটি লোক। সে তো নিজের ভাবির সাথেও… প্রান্তিক আহমেদ চৌধুরীর কাস্টডি কেইসে মিস্টার নীড় আহমেদ চৌধুরী নিজেই মেনে নেন যে তার ভাবির সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিলো। প্রান্তিক আহমেদ চৌধুরী তার ভাইয়ের নয় বরং তারই সন্তান। কিন্তু আসলে এটা ভুল। তিনি মরহুমা নীলা চৌধুরীকেও ধর্ষন করেছিলেন। কিন্তু পুরো চৌধুরী বাড়ির চাপে পরে নীলা চৌধুরী মুখ খুলতে পারেনি। পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করেছিলেন তাই পরিবারের কাছেও সাহায্য পাননি। ন…
হাবিব : অবজেকশন ইউর অনার… এটা প্রান্তিক আহমেদ চৌধুরীর কাস্টডি কেইস নয়। ওটার সাথে এটার কোনো সম্পর্ক নেই।
রাব্বি : অবশ্যই আছে। নীড় আহমেদ চৌধুরী ইজ অ্যা সিরিয়াল রেপিস্ট। এনার অতীত খারাপ , বর্তমান খারাপ। এই লোকটা সর্বোচ্চ শাস্তি পাক ইউর অনার।
নীড় মনেমনে : এতোদিনে বুঝতে পারলাম যে এতোকিছুর পেছনে আসল উদ্দেশ্যটা কি। আসলে এসব কিছু করার একটই কারন , সেটা হলো প্রানের কাস্টডি পাওয়া। ভালো চেষ্টা। খুবই ভালো চেষ্টা।কিন্তু সফল আমি হতে দিবোনা তোমাকে মিস মেরিন বন্যা খান। ওহ সরি। মিসেস নীড় চৌধুরী।
জজ : স্বাক্ষী-প্রমান সবই নীড় আহমেদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেখা যাচ্ছে। ডিফেন্সের কিছু বলার আছে কি?
হাবিব : বলার তো অনেক কিছুই আছে। তবে আগে আমার প্রতিপক্ষের সব কথা শুনে নিতে চাইছিলাম। আমার প্রিয় বন্ধু , আপনার কি আরো কিছু বলার আছে?
রাব্বি : না আপাদত কিছু বলার নেই । আপনার কথা পছন্দ না হলে বলা যাবে কথা।।
হাবিব : কথা বলার সুযোগ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ইউর অনার আমার প্রিয় বন্ধু কে আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা। মরহুমা নীলা আহমেদ চৌধুরীকে নাকি ধর্ষন করেছে আমার ক্লায়েন্ট। তিনি এটা কিসের ভিত্তিতে বললেন সেটা আমি জানিনা। প্রমান আছে কি?
রাব্বি : ইউর অনার… জজ কোর্টে প্রান্তিকের কাস্টডি কেইসের ফাইল আমার হাতে। নীড় আহমেদ চৌধুরী ক্লেইম করেছিলেন যে প্রান্তিক তার ছেলে। ডিএনএ রিপোর্টের মাধ্যমেও প্রমান করা হয়েছিলো। সেটার ভিত্তিতেই প্রানের কাস্টডি চৌধুরীরা পায়।
রাব্বি ফাইল জমা দিলো। জজ সাহেব দেখলেন।
হাবিব : হ্যা তো কি প্রমান হয় এর মাধ্যমে? আমার ক্লায়েন্ট নিজেই স্বীকার করেছিলেন। ধর্ষনের প্রমান কি দিতে পারবেন?
রাব্বি : নীলা চৌধুরীর ডাইরী লেখার অভ্যাস ছিলো। এই ডাইরীটা উদ্ধার করা হয়েছে। এই ডাইরীর একটি পাতা , যেটাতে তারিখ লেখা আছে আজকে থেকে ৫বছর আগের। ১৯/০৯/২০১৯। এখানে তিনি লিখেছিলেন যে তিনি তার দেবরের হাতে ধর্ষিত হয়েছেন। তার স্বামী , তার শ্বশুর-শ্বাশুরী কোনো প্রতিবাদ করেনি। বরং তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখা হয়েছিলো। তিনি বাধ্য হয়ে চুপ করে ছিলেন। বাবার বাড়ি ফিরে যাওয়ার অবস্থা ছিলোনা। কারন পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে এই বিয়ে। এই যে মরহুমা নীলা চৌধুরীর লেখা ডাইরী।
নীড়ের মেজাজ বিগরে গেলো। রেগে মেরিনের দিকে তাকালো। মেরিন নীড়ের থেকে চোখ ঘুরিয়ে নিলো।
মেরিন মনেমনে : রেগে যাও লুজার চৌধুরী। আরো রেগে যাও। রেগে গিয়ে সত্যি কথা নিজের মুখে বলে দাও। আপুকে কলঙ্কমুক্ত করো।
জজ ডাইরীটা দেখলেন।
হাবিব : ইউর অনার ডিফেন্সকে ডাইরীর বিষয়ে জানানো হয়নি।
রাব্বি ; লাস্ট মোমেন্টে আমার সহকারী উদ্ধার করেছে। তাই ইনফর্ম করা সম্ভব হয়নি।
হাবিব : এটা যে সত্যিসত্যি তার ডাইরী এবং এগুলো তারই হাতের লেখা সেটার প্রমান কি?
রাব্বি : প্রমান করান। চেক করান। দেখুন সত্যি নাকি মিথ্যা।
হাবিব নীড়ের দিকে তাকালো। নীড় চোখ বন্ধ করে সায় দিলো।
হাবিব : এই হাতের লেখা যাচাই করার জন্য ডিফেন্স আদালতের কাছে সময় চেয়ে নিচ্ছে।
জজ : আদালত আগামী পরশু পর্যন্ত মূলতবী করা হলো।
জজ বেরিয়ে গেলেন। নীড় মেরিনের দিকে এগিয়ে গেলো।
নীড় : প্রানের জন্য সব করেছো তাইনা?
নীলিমা : কেমন মেয়ে তুমি? নিজেকে তো ধর্ষিতা বানালেই সেই সাথে নিজের মৃত বোনকে ধর্ষিতা বানিয়ে দিলে? আবার আমাদেরকে এতো নিচু মনের বানালে? তোমার বোনকে আমরা কখনো কোনো কটু কথা পর্যন্ত বলিনি। আর তুমি এমন অপবাদ দিলে?
নীড় : জলে থেকে কুমির এবং জঙ্গলে থেকে সিংহের সাথে লড়াই করতে নেই ওয়াইফি।
ওয়াইফি শব্দটা শুনে মেরিনের কপালে ভাঁজ পরলো। নীড় হাহা করে হাসতে লাগলো।
নীড় : এতো সুন্দর শব্দটা তোমার কপালে ভাঁজ ফেলল দেখে ভালো লাগলো। হ্যান্ডরাইটিং এক্সপার্ট এটা প্রমান করে দিবে যে ওই লেখাগুলো তোমার আপুর নয়। ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট এটা প্রমান করে দিবে যে ওই কাগজের লেখাগুলো সদ্য লেখা। ৫বছর আগের লেখা সেগুলো নয়।
মেরিন : চলো দাদুভাই।
শমসের এবং জনের সাথে মেরিন চলে গেলো।
নীলিমা : এই মেয়ে ভয়ংকর একটা মেয়ে। কতোবড় মিথ্যা রটিয়েছে।
নিহাল : নীলি… মিথ্যা রটানোর খেলাটা আমরাই আগে শুরু করেছি।
নীড় : নীড় মাঠে নামে খেলায় জয়ী হওয়ার জন্য । যেকোনো ভাবেই হোক জিততে আমাকে হবেই। আর বিষয়টা যদি প্রানের হয় তাহলে তো হারের ‘হ’ টাও আমি চাইনা। তোমরা বাসায় যাও।
নিহাল : তুমি কোথায় যাচ্ছো?
নীড় : মেরিন আমার খেলাই আমার সাথে খেলতে চাইছে। আমার খেলা আমার চেয়ে ভালো কেউ কিভাবে খেলবে বলো তো? যাও বাসায় যাও।
নিহাল : কাঁদা আমাদের গায়েও আছে নীড়। তাই যা করবে ভালো ভাবে ভেবে করবে।
নীড় : চিন্তামুক্ত থাকো। যাও।

.

নীড় পৌছালো হ্যান্ডরাইটিং এক্সপার্টের অফিসে। সাথে আছে পিটার। একই সময় মেরিনও পৌছালো জনকে নিয়ে।
নীড় : ঠিক জানতাম তুমি আসবে রিপোর্ট নিজের পক্ষে নিতে।
মেরিন : ঘুষ নিয়ে তুমি এসেছো। আমি অনিয়ম হতে দিবোনা।
৪জন ওপরে গেলো। হ্যান্ডরাইটিং এক্সপার্ট চেক করছে।
নীড় : মিথ্যা রিপোর্ট বানালে এই মুহূর্তে শ্যুট করে দিবো।
মেরিন : কারো চাপে পরে মিথ্যা রিপোর্ট বানালে পিস্তল কিন্তু আমিও চালাতে পারি।
হ্যান্ডরাইটিং এক্সপার্ট আজিজ বলল : আমাকে আমার কাজ করতে দিন। আমি যা করবো সঠিকই করবো। এসিপি আবির।
এসিপি আবির এলো।
আবির : মেরিন ম্যাম… চিন্তামুক্ত থাকুন। আমি সম্পুর্ন চেষ্টা করবো দূর্নীতি দূরে রাখার।
আজিজ চেক করলো।
আজিজ : এই লেখা মরহুমা নীলা আহমেদ চৌধুরীর-ই।
নীড়ের কপালে ভাঁজ পরলো।
মেরিন মনেমনে : অবাক হলে লুজার চৌধুরী? হবেই তো। আমার লেখা এবং আপুর লেখা প্রায়ই এক। আমি তো সম্পুর্নভাবে আপুর মতো করে লিখতে পারি।
নীড় : কলমের কালির কার্বন টেস্ট বাকি আছে।
মেরিন : জানি আমি। কাল হবে সেটা। সেখানেও তুমি দূর্নীতি করতে পারবেনা। আমিও থাকবো , আইনও থাকবে।
নীড় হাসলো।

.

চলবে…