প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-১৪+১৫

0
22

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 14
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নীড় হাসলো।
নীড় : জীবনে ২বার ধোকার খেলা খেলেছি। প্রথমটা প্রকাশিত হয়েছে। দ্বিতীয়টা প্রকাশ হতে চলেছে। প্রথমটাতেও তান্ডব হয়েছে ফলাফলে আমি জিতেছি দ্বিতীয়টাতেও সেইম ঘটনা ঘটবে আশা করি। এখানে আমি সত্যের জন্য এসেছিলাম। ফরেনসিক ল্যাবেও সেকারনেই যাবো।
মেরিন : যা হচ্ছে সত্যিই হচ্ছে। ধোকা আমিও দেইনা। এসিপি আবির , আই ট্রাস্ট ইউ।
আবির : এখন আপনারা দুজনই ফিরে যান।
মেরিন : অফকোর্স।
মেরিন জনকে নিয়ে চলে গেলো।
নীড় : এসিপি আবির, আপনি কি রিলেশনে আছেন?
আবির : সেটা আপনার জানার বিষয় না।
নীড় : প্লিজ বলুন না।।
আবির : নো।
নীড় : ম্যারিড?
আবির : নো।
নীড় : ওহ… তাহলে বউয়ের দুঃখ আপনি বুঝবেননা। বউয়ের বিরহ বড় বিরহ। বিয়ে করলে বুঝতে।
আবির : আপনি কি পাগল?
নীড় : পাগল মনে হওয়ার কারন?
আবির : যান এখন।
নীড় : একটু সুন্দর করে বলুন না।
আবির : লিভ মিস্টার চৌধুরী। আপনি কিন্তু কালপ্রিট। পরশুই দেখবেন। যেতেযেতে একটা কথা বলে যাই শুনুন। বিয়ের পর বউকে বেশিদিন বাবার বাড়ি থাকতে দিবেন না। অভিমান বেরে যায়। বুঝলেন? বুঝতে পারেননি সেটা আমি বুঝেছি। থাক আর বোঝার চেষ্টা করতে হবেনা। মাথার ওপর এতো জোর দিলে কিভাবে হবে বলুন? আসছি আজকের মতো। দেখাতো হতেই থাকবে। বাই। চলো পিটার ডার্লিং।
নীড় পিটারকে নিয়ে চলে গেলো।
আবির : আজব পাগল তো! কিসের মধ্যে কি বলে চলে গেলো।
এসিপি আবির হ্যান্ডরাইটিং এক্সপার্টের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

ফরেনিক রিপোর্টেও এলো যে লেখাটা ৫বছর আগের। নীড় ভয় দেখিয়েও লাভ হলোনা। আবির সেখানেও উপস্থিত ছিলো। রিপোর্ট নিজের কাছে রাখলো।

.

নিহাল : কালকে শুনানি। সবটা মেরিনের পক্ষেই আছে।
নীড় : শেষ পর্যন্ত জয় আমারই হবে।
বলেই নীড় বেরিয়ে গেলো।
নিহাল : নীড় ওদের সাথে যে খেলাটা খেলেছিলো সেটা এখন ওর ওপরই পরছে।
নীলিমা : তুমি সবসময় এই কথাটাই বলো। অথচ ওই নীলা যে প্রনয়ের হত্যাকারী সেটা বলোনা।
নিহাল : নীলি তুমি…
নীলিমা : তোমার সাথে আমি কোনো তর্কে যেতে চাইনা। কোনো কথা শুনতে চাইনা। কেউ মরে যাওয়া মানে এটা নয় যে তার পাপ শেষ। নিজে ভালোবাসার ছলনা করে আমার ছেলেটাকে মেরেছিলো। হত্যা করেছিলো। নীড় ওর সাথে যা করেছে ঠিক করেছে। ও এমনটাই ডিজার্ভ করে। ওর হত্যার কোনো প্রমান ছিলোনা বলে বেঁচে গিয়েছিলো। তাই জীবীত থাকতে বদনাম ওর হয়নি। কিন্তু মরে যাওয়ার পরে হয়েছে। যেভাবেই হোক হয়েছে। তাই ওর নামের সাথে কালি লাগাতে আমার কোনো আফসোস নেই।

.

■ : কি মনেহয় তোমার? কে জয়ী হবে?
□ : মেরিন বন্যা খানের প্ল্যানটা তো সলিড। কিন্তু…
■ : কিন্তু কি?
□ : নীড় সবসময় প্ল্যান নি রেডি রাখে।
■ : তোমার কি মনেহয় যে প্ল্যান বি কি হতে পারে?
□ : সেটা যদি বুঝতে পারতাম তাহলে তো ভালোই হতো। তবে নীড় প্ল্যান বি অ্যাপ্লাই করলে মেরিন বন্যা খানও প্ল্যান সি অ্যাপ্লাই করবে।
■ : প্ল্যান সি! তাহলে এটা কোন প্ল্যান চলছে?
□ : জানিনা। বুঝতে পারছিনা। শেষ পর্যন্ত কি হবে সেটা ভাবতেও পারছিনা। এদের দুজনের ভাবনাই অনেক বেশি ভয়ংকর। কালকে পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।
■ : এটা ছারা আর কি করার আছে আমাদের?
□ : আমাদের প্রধান কাজ হলো ধরা না পরা। না মেরিন বন্যা খানের হাতে আর না নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষনের হাতে।
■ : উদ্দেশ্য হাসিল হলেও নয়? ইচ্ছা পূরন হলেও নয়!
□ : তখন তো বিজয়ী বেশে সামনে আসবো।

.

শমসের : কালকের শুনানীতে কি হবে বলে তোমার মনেহয়?
মেরিন : প্রমান সব আমার পক্ষে। কোনো সুযোগ নেই লুজারের জিতে যাওয়ার।
শমসের : হামম। ভয় পেয়ে যদি ফরেনসিক থেকে বলে দেয়া হতো যে লেখাটা ৫বছর আগের নয়।
মেরিন : কোনো সুযোগই নেই দাদুভাই। ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের অতো সাধ্য নেই। অন্তত এই দেশে তো অতো বেশি অ্যাডভান্সড ডিভাইস নেই। পেনটা হলো বোকা বানানোর পেন। কালকের কেইসে জয়ী হওয়ার পর আমি প্রানের কেইস রিওপেন করাবো। ছিনিয়ে নিবো আমাদের প্রানকে।
শমসের : অনেক বড় ঝুকি নিয়েছো দিদিভাই। সফল হওয়া ছারা কোনো অপশন নেই।
মেরিন : জানি আমি। জয় তো হবেই। হারের কোনো সম্ভাবনা তো নেই।
জন এলো।
মেরিন : বলো জন। কালকে আমি তুমি চলে আসার পর লুজার এসিপির সাথে কি কথা বলছিলো?
জন : তেমন কিছু নয় ম্যাম।
মেরিন : কি বলছিলো?
জন বলল।
মেরিন : বিয়ে , বউ নিয়ে কথা বলছিলো… কেনো মনেহচ্ছে যে কোনো ক্লু দিচ্ছিলো?
শমসের : কিসের ক্লু হবে? আর এটাতো নরমাল কনভার্সেশন।
মেরিন : নরমাল কনভার্সেশন হলে বিয়ে, বউয়ের কথা তুলবে?
শমসের : বেশি ভাবছো দিদিভাই। লেট ইট বি। জন… বোঝাও তোমার ম্যামকে।
জন : কি বোঝাবো স্যার? ম্যামের ধারনা ৯৯% সঠিক তো হয়।
শমসের : তোমরাই বলো এই কেইসের সাথে নীড়ের বিয়ে বা বউ এর কানেকশন?
মেরিন : জন… দেখো তো কোথাও নীড়ের কোনো বউ আছে কিনা? দেশ-বিদেশ যেকোনো জায়গায়।
জন : ওকে ম্যাম।
জন বেরিয়ে গেলো।
শমসের : নীড়ের বউ থাকলেই কি আর না থাকলেই কি?
মেরিন : ও বউয়ের কথা বলবে কেনো? এটা প্রমান করবেনাতো যে নেশার অবস্থায় নিজের বউকে কল্পনা করছিলো?
শমসের : আমি তো এটা ভেবেই দেখিনি। এমনটা হতেই পারে। এতে কি শাস্তি কম হবে?
মেরিন : না।

.

পরদিন…
রাব্বি : ইউর অনার… ডাইরীর ফরেনসিক রিপোর্ট আপনার টেবিলে আছে। হ্যান্ডরাইটিং এক্সপার্টের রিপোর্টও আছে। যেখান থেকে এটা প্রমানিত যে লেখাটা নীলা আহমেদ চৌধুরীরই।
হাবিব : ইউর অনার সেই লেখার ওপর ভিত্তি করে আমার মক্কেলকে তো আর শাস্তি দেয়া যায়না। সে জীবীত থাকলে অন্য কথা ছিলো। তবে নীলা চৌধুরী যদি সেই ঘটনায় মারা যেতো তাহলে একটা কথা ছিলো।
রাব্বি : ইউর অনার আমি বলিনি যে এই লেখার ওপর ভিত্তি করে আসামীকে শাস্তি দেয়া হোক। আমি এটা প্রমান করেছি তথা সামনে এনেছি কেবল এটা বলার জন্য যে নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন চরিত্রহীন একটি পুরুষ। এমন পুরুষ সমাজের জন্য ক্ষতিকারক। নারীদের জন্য ভয়ংকর। তাই তাকে এমন শাস্তি দেয়া হোক যেনো সেটা উদাহরণ হয়ে থাকে।
জজ : হামম। ডিফেন্সের কিছু বলার আছে?
হাবিব : ইউর অনার…
নীড় : ইউর অনার… গত শুনানিতে আমি আত্মপক্ষে কিছুই বলিনি। আমাকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি। আমার জানামতে আসামীদেরও অধিকার থাকে আত্মপক্ষে কিছু বলার।
রাব্বি : বলার মতো আছে কি? ইটস অ্যান ওপেন এন্ড শাট কেইস।
হাবিব : অবজেকশন ইউর অনার। আরোপী আত্মপক্ষে কিছু বলার অনুমতি পাবে কি পাবেনা সেটার সিদ্ধান্ত আদালত নিবে।
জজ : অবজেকশন সাসটেইনড। মিস্টার নীড় বলো কি বলবে।
নীড় : ইউর অনার আমি মানুষটা ভালো নাকি খারাপ সেটা আমি জানিনা। তবে আমি এটা জানি যে বিয়ের বন্ধন অনেক বড় এবং পবিত্র বন্ধ। হাজবেন্ড-ওয়াইফের সম্পর্ক খুবই সুন্দর একটি সম্পর্ক।
রাব্বি : ইউর অনার… কিসের মধ্যে কি বলছে নীড় চৌধুরী?
জজ : তোমার যা বলার সেটা সরাসরি বলো।
নীড় : ইউর অনার… কিছু কথা সরাসরি বলা যায়না। চক্ষু লজ্জা থাকে। সামনে আমার মাবাবাও বসে আছে। এতো মানুষের উপস্থিত আছে।
রাব্বি : এতো যখন লজ্জা তখন বোরকা পরে ঘুরতে পারেন।
ফজলে রাব্বির কথা শুনে আদালতে উপস্থিত অনেকে হেসে দিলো।
জজ : অর্ডার অর্ডার। আদালতে মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা হোক। নীড় যা বলার স্পষ্ট বলো।
নীড় : ইউর অনার মেরিন বন্যা খান আমার স্ত্রী। এখন ও মেরিন বন্যা চৌধুরী। আজকে থেকে প্রায় সাড়ে চার বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। আমরা একই ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম। শুরুতে আমরা একে অপরের পরিবার সম্পর্কে জানতামনা। যখন ও জানতে পারলো যে আমি নিহাল আহমেদ চৌধুরীর ছেলে এবং প্রনয় আহমেদ চৌধুরীর ছোটভাই তখন ওর ব্যবহারে পরিবর্তন আসে। ওর বড় বোন মানে নীলা চৌধুরী মারা যাওয়ার পর থেকে আমাদের সম্পর্কের প্রকৃত টানাপরেন শুরু হয়।
মেরিন : ইউর অনার এসব মিথ্যা।ইউ লায়ার। ছারবোনা আমি তোমাকে।
জজ : অর্ডার অর্ডার… মেরিন বন্যা খান আপনার যা বলার কাঠগড়ায় এসে বলুন।
মেরিন কাঠগড়ায় এসে দারালো।
মেরিন : ইউর অনার… এই লোকটা মিথ্যা কথা বলছে। একেবারে মিথ্যা কথা। যা বলছে নিজেকে বাঁচানোর জন্য বলছে। ওর সাথে আমার বিয়ে হয়ইনি।
নীড় : কেনো মিথ্যা বলছো বলো তো?
মেরিন : মিথ্যা আমি না । মিথ্যা তুমি বলছো। তুমি তো আমার মৃত বোনকেও ছারোনি।
নীড় : ভাবির মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী নই। ইউর অনার… ও নিজের বোনের মৃত্যুর জন্য আমাকে দায়ী মনে করে। আমার থেকে আলাদা থাকা শুরু করে।দেখা করেনা , কথা বলেনা। আবার আমাকে ডিভোর্সও দেয়না। আমিও ওকে ডিভাের্স দিতে চাইনা। আমি যে ওকে ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি।
মেরিন : এই নীড় চৌধুরী একদম মিথ্যা কথা বলবেনা বলে দিচ্ছি।
নীড় : এটা তুমিও জানো যে আমি মিথ্যা কথা বলছিনা। তুমি আমার ভালোবাসা ছিলে , আছো এবং থাকবে। পুরো ভার্সিটি জানতো আমার ভালোবাসার কথা। ইউর অনার সেদিন রাতে হয়তো আমি ভুল করেছি। কিন্তু সেদিন যা করেছি সেটা ভালোবাসা এবং বিরহের সংমিশ্রন। আর নেশা তো ছিলোই।
রাব্বি : ইউর অনার, আসামী নীড় হয়তো ভুলে গিয়েছেন যে এটা আদালত। ভুলে গিয়েই রূপকথার গল্প শোনাচ্ছে।
হাবিব : আমার মক্কেল যা বলছে সত্যি বলছে। এই হলো তাদের ম্যারিজ রেজিস্ট্রি পেপার এবং ভার্সিটির কিছু রিপোর্ট।
জজের কাছে কাগজগুলো দেয়া হলো।
মেরিন : এসব কিছু মিথ্যা। একেবারে।
জজ : কিন্তু মেরিন… এটাতে তো তোমার সিগনেচার রয়েছে।
মেরিন : এটা জাল সাইন হবে। ওই পেপারটাও নকল।
জজ : এই পেপারটা একদম আসল মেরিন।
মেরিন : তাহলে সাইন নকল।
রাব্বি : আমার ক্লায়েন্ট একদম সত্যি কথা বলছেন ইউর অনার।
হাবিব : টেস্ট করানো হোক ইউর অনার। তাহলেই বেরিয়ে আসবে যে কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা।
জজ : হামম। এই পেপারের সিগনেচার টা যে আসল সেটা টেস্ট করার অনুমতি দেয়া হলো। এই আদালত দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবী করা হলো।
জজ সাহেব বেরিয়ে গেলেন। মেরিন রেগে নীড়ের দিকে এগিয়ে গেলো। ওর কলার চেপে ধরলো।
মেরিন : আমি তোমাকে ছারবোনা লুজার চৌধুরী। শেষ করে দিবো। এতোবড় মিথ্যা কথা বলার সাহস তোমার কিভাবে হলো?
নীড় মেরিনের কোমড় জরিয়ে নিলো।
নীড় : কি মিথ্যা জান? হামম? আমার ভালোবাসার কথা কি মিথ্যা? এই চেহারাটা যে আমার প্রিয় সেটা তো তুমি নিজের মুখেই কতোবার বলেছো যেটার স্বাক্ষী তোমার জন এবং আমার পিটার। তাইনা জমজ ভাইয়েরা?
নীড় হাহা করে হাসতে লাগলো। মেরিন নিজেকে ছারিয়ে নিলো।
মেরিন : এবার আর টাকা দিয়ে মিথ্যা রিপোর্ট বানাতে পারবেনা।
নীড় : মিথ্যা রিপোর্ট বানাবোনা। তোমার কসম জান।
মেরিন : আই উইল কিল ইউ।
মেরিন কোর্টরুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আবির মনেমনে : কি হচ্ছে এসব?
নীড় আবিরের সামনে গিয়ে দারালো।
নীড় : আমি পাগল নই। এটার ইঙ্গিতই দিচ্ছিলাম আপনাকে। যান গিয় গার্ড দিন যেনো মেরিন বন্যা খান রিপোর্ট না পাল্টাতে পারে।

.

আবির দারিয়ে আছে। সাথে আছে নীড়-মেরিন। দুজনের হাতেই গান।
আবির : আপনারা গান সরিয়ে রাখুন। আপনারা হয়তো ভুল যাচ্ছেন যে আমি দারিয়ে আছি।
নীড় : আপনি আমার জানকে চিনেননা এসিপি। অনেক ফাস্ট ও গুলি চালাতে। এই বেচারার দিকে অথবা পেপারের দিকে যেকোনো সময় শ্যুট করে দিতে পারে। আপনার চোখের পলকে ঘটে যাবে। তাই আমিও প্রস্তুত আছি।
আবির : আমাকে কি গুড ফর নাথিং মনেহয়?
নীড় : নট অ্যাট অল। বাট আমার ওয়াইফি একটু বেশি স্মার্ট। সেই সাথে ফাস্টও।
মেরিন : আর মাত্র ১০মিনিট লুজার চৌধুরী। সত্যিটা সামনে চলে আসবে।
নীড় : সত্যিই সত্যিটা সামনে আসবে। সিগনেচারটা তোমারই । নিজের হাত দিয়ে করেছো। এক বিন্দুও মিথ্যা বলছিনা।
আবির : আপনারা দুজনই স্থান ত্যাগ করুন। না হলে আমি জজ সাহেবের কাছে অভিযোগ করবো। যা রিপোর্ট আসবে সত্যিটাই আসবে। আমি কোনো অনিয়ম হতে দিবোনা।
নীড়-মেরিন চলে যেতে বাধ্য হলো।

.

আদালতের কার্যক্রম শুরু হলো।
জজ : আদালতের কার্যক্রম শুরু করা হোক।
হাবিব : ইউর অনার… রিপোর্ট চলে এসেছে। এই রেজিস্ট্রি পেপার এবং সিগনেচার একদম আসল। রিপোর্ট আপনার কাছে দেয়া হলো।
মেরিন : অসম্ভব। এটা হতেই পারেনা।
জজ : অর্ডার অর্ডার। এই রিপোর্টের মাধ্যমে এটা প্রমানিত যে নীড় আহমেদ চৌধুরী এবং মেরিন বন্যা খান স্বামী-স্ত্রী। এই কেইসটার ভিত্তি হলো পারিবারিক কলহ , ভুল বুঝাবুঝি এবং প্রতিশোধ। যদিও আদালত কোনো অবস্থাতেই নারীর ওপর জবরদস্তির বিপক্ষে। কিন্তু এখানেও অবস্থাটা ভিন্ন। আদালত দুজনকে নির্দেশ দিচ্ছে যে , নিজেদের মধ্যে সকল বিবাদ মিটমাট করে নিক। সেই সাথে নিজেদের পারিবারিক কলহর কারনে আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য নিন্দা জানানো হচ্ছে। নীড় আহমেদ চৌধুরীকে এই মামলা থেকে নিষ্পত্তি দেয়া হলো।
জজ সাহেব চলে গেলেন। মেরিন পিস্তল বের করলো।
মেরিন : আমি তোমাকে খুন করে ফেলবো লুজার চৌধুরী।
শমসের এসে মেরিনের পিস্তল ধরলো।
শমসের : শান্ত হও দিদিভাই। শান্ত হও।
মেরিন : শান্ত হবোনা। ওকে শেষ করে দিবো।
শমসের : দিদিভাই… চলো তুমি। জন…
জন মেরিনকে নিয়ে চলে গেলো।
শমসের : কাজটা তুমি ঠিক করোনি নীড়।
নীড় : দাদুভাই… আমি কেবল বিয়ে করেছি। ভালোবেসে বিয়ে।
শমসের : শাট আপ।
শমসের খান চলে গেলো। নীড় হাহা করে হাসছে। সারা কোর্টরুমে নীড়ের হাসি প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
নীড় : বাবা… বলেছিলাম না জয় তো হবেই।
নীলিমা : কিন্তু ওই মেয়ে বাসায় এসে ঢুকবে সেটাই তো আমার সহ্য হচ্ছেনা।
নীড় : ওকে বাসায় আনা হবে কেবলমাত্র প্রানকে পাওয়ার ইচ্ছা চিরতরে শেষ করার জন্য। ওর অহংকার চিরতরে শেষ করার জন্য। অপমানের বদলাও তো নিতে হবে।
নিহাল : কিসের অপমান?
নীড় : আছে কিছুর।

.

মেরিনের হাত থেকে রক্ত বের হচ্ছে।
শমসের : এগুলো কেমন পাগলামি দিদিভাই? নিজেকে কেনো আঘাত করছো? এটাতো নিতান্তই বোকামো। অন্যের রাগ নিজের ওপর কেনো ঝারছো?
মেরিন : আমি আমার রাগ নিজের ওপর ঝারছি। বিয়ের টপিকে কথা শুনেই আমার বোঝা উচিত ছিলো । কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি।
তখন ওরা তিনজন আবারো ব্যান্ডপার্টির আওয়াজ পেলো।
জন : মনেহয় আবারো নীড় চৌধুরীই এসেছে।
মেরিন : আজকে এই বাড়ি থেকে ওর লাশ বের হবে।
মেরিন গান লোড করে বের হলো। দেখে নীড়ের কোলে প্রান্তিক। গানটা লুকিয়ে নিলো। প্রান্তিক মামমাম বলে নীড়ের কোল থেকে নেমে মেরিনের দিকে ছুটে গেলো। মেরিন ওকে কোলে তুলে নিলো। হাতের তালু থেকে রক্ত বের হওয়ার কারনে ওকে কোলে রাখতে একটু কষ্টই হচ্ছে। প্রান্তিক মেরিনের গালে চুমু দিলো। মেরিনও ওর সারামুখে চুমু দিলো।
প্রান্তিক : জানো মামমাম… আমি তোমাকে এতোবেশি মিস কলছিলাম।
মেরিন : আর আমিও।
প্রান্তিক : কিন্তু আজকেল পল থেকে আমলা একজন আলেকজনকে মিস কলবোনা। কেনো জিজ্ঞেস কলো।
মেরিন : কেনো বাচ্চা?
প্রান্তিক : কালন আজকে থেকে তুমি আমাল কাকিমা। তাই আমি তুমি চাচ্চু একসাথে থাকবো।
মেরিন রেগে নীড়ের দিকে তাকালো। ওর ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি লেগে আছে। দাঁত কিটমিট করছে।
প্রান্তিক : মামমাম… তু… একি? তোমাল হাত থেকে দেখি লক্ত পলছে।
মেরিন : কিছুনা বাচ্চা।
প্রান্তিক : কততো লক্ত পলছে। ও চাচ্চু… দাদু , দীদু , বলবাবা… দেখোনা।
প্রান্তিক মেরিনের কোল থেকে নেমে গেলো।
নীড় : হাত কাটলো কিভাবে তোমার?
মেরিন চুপ করে রইলো।
নীড় : পিটার… গাড়িতে ফার্স্ট এইড বক্স আছে।
মেরিন হাত ছারিয়ে নিলো। নীড় আবারো হাত ধরলো।
নীড় : অভিমান করা স্ত্রীর সৌন্দর্য্য। কিন্তু স্ত্রীর মান ভাঙানো স্বামী কর্তব্য। তাইনা জান?

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 15
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নীড় : তাইনা জান?
মেরিন : শাট…
নীড় : প্রান আছে।
পিটার ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলো।
নীড় : থ্যাংকস।
শমসের : সবাই ভেতরে এসে বসো না।
প্রান্তিক : হ্যা হ্যা চলো চলো।
সবাই ভেতরে গেলো। নীড় পরম যত্নে মেরিনের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিলো। সবার জন্য চা-নাস্তা আনা হলো। প্রান্তিকের সামনে সবাই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে।
প্রান্তিক : মামমাম… চলো লেডি হয়ে নাও। তুমি তো আমাদেল সাথে যাবে। আমলা সবাই একসাথে থাকবো।
শমসের , মেরিন , জন অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
শমসের : মামমাম কেনো যাবে? ওটা তো চাচ্চুর বাসা এবং এটা মামমামের বাসা।
প্রান্তিক : চাচ্চু তো বলল যে তুমিই আমাল কাকিমা। যাবেনা তুমি?
মেরিন : মামমাম যদি চলে যাই তাহলে বলবাবার কি হবে? বড়বাবা তো অসুস্থ থাকে। একাএকা কিভাবে থাকবে?
প্রান্তিক : একাএকা কেনো থাকবে? আমাদেল সাথে যাবে।
মেরিন : বাবাই…
প্রান্তিক : তুমি যাবেনা! আমি এতোগুলো খুশি হয়েছিলাম। কালন তুমি আমাল সাথে থাকবে। চাচ্চু আমাল সব কথা শোনে। তুমি আগেও আমাল কথা শোনোনি। আজকেও শুনছো না।
প্রানের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। মেরিন নীড়ের দিকে তাকালো।
নীড় মনেমনে : দুই দিক থেকেই আমার লাভ। মেরিন খাঁচায় যাবে। নাহলে প্রানের মন থেকে চিরতরে উঠে যাবে।
মেরিন নীড়ের দুইগালে হাত রেখে ওর কপালে চুমু দিলো।
মেরিন : তুমি কি চাও মামমাম তোমার সাথে থাকুক?
প্রান্তিক মাথা নেরে হ্যা বলল।
মেরিন : বেশ… তাহলে সেটাই হবে। মামমাম তোমার সাথে থাকবে।
প্রান্তিক : সত্যি?
মেরিন : সত্যি।
প্রান্তিক : সবসময় থাকবে?
মেরিন : হামম।
প্রান্তিক : ইয়ে ইয়ে… বলবাবা লেডি হও।
শমসের : আজকে মামমামকে নিয়ে যাও। বড়বাবা পরে আসবো।
প্রান্তিক : কিন্তু কেনো?
শমসের : বাসাটা কান্না করবে তো। দিদিভাই… কি কি নেবে গুছিয়ে নাও।
মেরিন : হামম। বাচ্চা… তুমি একটু বসো। আমি আসছি। জন… তুমি এখানেই থাকো। সময় দাও সবাইকে।
জন : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন ঘরে গেলো। শমসের খানও গেলো।

শমসের : কি থেকে কি হয়ে গেলো দিদিভাই? তোমার এমন কঠিন পরিকল্পনা ব্যর্থ হলো। নিজের নামে এমন বদনাম রটালে শেষে গিয়ে সফল হলো নীড়। আরো একটা পরিকল্পনা ওর সফল হলো। তুমি ওর সাথে ওই বাসায় যাচ্ছো। না গেলেও প্রানের মনে তোমাকে নিয়ে নেগেটিভ ভাবনা হতো।
মেরিন : হায়নার শিকার করতে কখনো কখনো সিংহকে হায়নার এলাকায় যেতে হয়। সেটাই যেতে হবে।
শমসের : তোমার সিগনেচার কে নকল করলো?
মেরিন : কেউ নকল করেনি। ওটা আমারই সিগনেচার ছিলো।
শমসের : মানে?
মেরিন : মানেটা এখন আমার কাছে স্পষ্ট। সেদিন যখন হসপিটাল এসিপি আবির আমাকে পেপারগুলো দিয়েছিলেন তখন সেগুলো পড়া শেষ হতে না হতেই সিস্টার ভেতরে আসে। সে যাওয়ার পর আমি সিগনেচার করি। দেন এক ঘন্টা পর আবারো সিস্টার আসে। কেউ একজন রুমে ছিলো। প্রথমবার সিস্টার আসার পর কেউ ওই রেজিস্ট্রি পেপারটা ওই ফাইলে রাখে এবং দ্বিতীয়বার আসার পর সরিয়ে নেয়। আর আমি স্টুপিড জাস্ট এটা বুঝতেই পারিনি। ড্যাম ইট।
শমসের : এখন ওদের বাসায় যাচ্ছো। হারের ওপর হার।
মেরিন : জয়ী নিজে এসেছে হারকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এবার যা হবে ধীরেধীরে হবে। টাকার অনেক অহংকার তো। আগে টাকা হারাবে।
শমসের : এরপর?
মেরিন : এরপর জানিনা। পূর্ব পরিকল্পনা এবার আর করবোনা। এবার যা হবে অপরিকল্পিত ভাবে হবে এবং ঘটনা অনুযায়ী হবে। আমি তোমার এবং এই বাসার সিকিউরিটি আরো বারিয়ে দিবো। তুমি ওখানে গেলে কেমন হয়?
শমসের : যখন সময় হবে তখন যাবো।
মেরিন : হামম।
মেরিন একটা ব্যাগ সাথে নিয়ে নিচে নামলো। জন-পিটার দুজনই ওর ব্যাগ নেয়ার জন্য এগিয়ে গেলো।
মেরিন : আই ক্যান ক্যারি।
নীড় এগিয়ে গেলো।
নীড় : তা ঠিক। তবুও… স্ত্রীর বোঝা তো ওঠাতেই হয়। তোমাদেরকে কষ্ট করতে হবে না। আমিই নিচ্ছে আমার ম্যাডামের ব্যাগ।
নীড় মেরিনের ব্যাগটা নিলো।
নিহাল : আংকেল… আপনি একাএকা কিভাবে থাকবেন বলুন তো? চলুন আমাদের সাথে।
শমসের : আমি এখানেই ঠিক আছি। যাবো , গিয়ে দেখে আসবো আমার দিদিভাইকে। আমার প্রানকে।
নীড় : আজকে তোমার কথা শুনলাম দাদুভাই। কিন্তু এরপরে তোমাকে আমাদের সাথে যেতে হবে। আমার কথা শুনতে হবে।
শমসের : পরেরটা পরে দেখা যাবে।
নিহাল : আজকে তাহলে আসছি।
মেরিন : আসছি দাদুভাই।
প্রান্তিক : বাই বাই বলবাবা।
শমসের : বাই প্রানসোনা।
পিটার ড্রাইভ করছে। পাশে নীড় বসেছে। মেরিন প্রানকে নিয়ে পেছনে বসেছে।

.

ওরা চৌধুরী বাড়িতে পৌছালো। প্রান্তিক গাড়িতে ঘুমিয়ে পরেছে। নীড় ওকে কোলে তুলে নামাতেই ওর ঘুম ভেঙে গেলো। তিনজন একসাথে বাসায় ঢুকলো।
মেরিন মনেমনে : এই সেই বাড়ি যেখানে আপুকে জীবীত লাশ বানিয়ে রাখা হয়েছিলো। এই বাড়ির প্রতিটি স্তম্ভ স্বাক্ষী হয়ে আছে আপুর যন্ত্রণার।
প্রান্তিক : মামমাম…
মেরিন : হ্যা বাচ্চা?
প্রান্তিক : এটা আমাদেল বাসা। চলো তোমাকে পুলো বাসা দেখাচ্ছি। চলো চলো চলো।
প্রান্তিক মেরিনকে পুরো বাসাটা দেখাতে নিয়ে গেলো।

নিহাল : কি ভেবে কি কাজটা করলে সেটা আমি জানিনা নীড়। তবে আমার মনেহচ্ছে যে তুমি মারাত্মক ভুল করেছো। আহত বাঘ বেশি ভয়ংকর হয়।
নীড় : মানুষ বাঘকে সার্কাসে খেলা করায়। চিড়িয়াখানায় বন্দি করে। মেরিনও বন্দি হলো।
নিহাল : আমার ভয় হচ্ছে।
নীলিমা : নীড়… প্রনয়কে হারিয়েছি। তোকে হারাতে পারবোনা।
নীড় : মামনি… আমি প্রনয় নই।
নিহাল : মেরিন যে ভারতে তোমার ইউনিভার্সিটিতে পড়তো সেটাতো বলোনি।
নীড় : এটাতো বলার মতো কোনো কথাই নয়। প্রয়োজনবোধ করিনি তাই বলিনি।
নীলিমা : মেরিনের থাকার ব্যবস্থা কোন ঘরে করবো?
নীড় : আমার ঘরেই থাকবে ও।
নীলিমা : তুমি কি পাগল হলে নীড়?
নীড় : আমি যেটা বলে দিয়েছি সেটাই হবে।
প্রান্তিক কিছুক্ষনপর মেরিনকে নিয়ে ফিরে এলো।
নীড় : মামমামকে বাসা দেখানো হলো?
প্রান্তিক : হামম হামম।
নীড় : আজকে চাচ্চু তোমার প্রিয় খাবার অর্ডার করেছি। সবাই মজা করে ডিনার করবো।
প্রান্তিক : ইয়ে… ইয়ে…
নীড় : কিছুক্ষনের মধ্যেই খাবার চলে আসবে। কিন্তু বাহিরে থেকে আসা হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে নিতে হবে তো।
প্রান্তিক : হামম।
নীড় : যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। বেগম…তুমিও যাও। হাতমুখ ধুয়ে নাও।
প্রান্তিক : চলো মামমাম….
প্রান্তিক মেরিনকে নিয়ে ওপরে গেলো। দুজন ফ্রেশ হয়ে নিলো।

.

খাবার টেবিলে…
প্রান্তিক : আজকে মামমামেল হাতে খাবো।
নীড় : চাচ্চু খাইয়ে দিবো তো।
প্রান্তিক : না না না। আমি মামমামেল হাতেই খাবো। মামমাম খাইয়ে দিবেনা বলো?
মেরিন : অবশ্যই দিবো বাচ্চা। তুমি তো আমার জানা বাচ্চা।
ও প্রান্তিককে খাইয়ে দিতে লাগলো।
মেরিন মনেমনে : লুজার চৌধুরী… তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো ভালো করেছো। প্রান কখন কিভাবে তোমার থেকে মন থেকে দূরে হয়ে যাবে বুঝতেই পারবেনা। প্রান আমার কাছে ছিলো তিন বছর। তোমার কাছে আছে কয়েকমাস ধরে। অল্প কিছু সময় লাগবে তোমাকে ওর মন থেকে সরাতে।
নিহাল : মেরিন তুমিও খেয়ে নাও।
মেরিন : হামম খাচ্ছি।
প্রান্তিক : মামমাম লাতে ঘুমানোল সময় তুমি আমাকে স্টোলি শোনাবে কিন্তু।
মেরিন : অনেক সুন্দর একটি গল্প শিখেছি।
প্রান্তিক : আজকে আমাল সব উইশ পূরন হচ্ছে। কি যে মজা হচ্ছে!

.

■ : কি থেকে কি হয়ে গেলো?
□ : মেরিন এতো সহজে হার কিভাবে মেনে নিতে পারে?
■ : নীড়ের বুদ্ধি অনেক বেশি। অনেক চালাক ও।
□ : সেটাই তো দেখছি। কিন্তু মেরিন এভাবে চুপ হয়ে যাওয়ার মেয়ে তো নয়। নীড়কে কাউন্টার অ্যাটাক তো করবেই।
■ : আমার মনেহয়না যে মেরিন কিছু করতে পারবে। চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হবে।
□ : কোনোকিছুই এতো সহজ হয়না। দেখি কি হয়? যদি আমাদের কাজ স্বাভাবিকভাবে না হয় তাহলে প্রতিশোধ নিবো হত্যা করে। একেবারে জানে মেরে দিবো।
■ : জান নেয়া কি এতো সহজ? ওদের স্পর্শই তো করা যাবেনা। অনেক পাওয়ারফুল।
□ :আমি কিছু বুঝিনা। কিছু বুঝতে চাইনা। আমার মাথায় আছে কেবল আমার প্রতিশোধ। আর আমি এটা নিবোই।
■ : মাথা ঠান্ডা করো…
□ : পারবোনা মাথা ঠান্ডা করতে। আমি একমাস দেখবো। এরপর আমি সরাসরিই খেলবো।

.

প্রান্তিক খিলখিল করে হাসছে।
মেরিন : এভাবে হাসলে আমি কিন্তু আর গল্প বলবোনা।
প্রান্তিক : কেনো?
মেরিন : কারন আমি তোমাকে গল্প শোনাচ্ছি ঘুমানোর জন্য। কিন্তু তুমি ঘুম না এসে হাসছো।
প্রান্তিক : গল্পটা এততো মজাল যে আমাল খুব কলে হাসি পাচ্ছে। হাহা…
মেরিন : তবেরে দুষ্টু ছেলে। দারাও দেখাচ্ছি।
প্রান্তিক : চাচ্চু চাচ্চু… বাঁচাও বাঁচাও…
নীড় : আরে আরে আরে… কি হলো?
প্রান্তিক : মামমাম আমাকে সুলসুলি দিবে। বাঁচাও বাঁচাও…
নীড় : এতো সাহস ? আমার প্রিন্সকে হুমকি দেয়া? সাবধান… প্রিন্স পর্যন্ত যেতে হলে বডিগার্ডকে হারাতে হবে। হা হা হা।
প্রান্তিক আবারো হাহা করে হাসতে লাগলো।
মেরিন : অনেক হয়েছে। এখন ঘুমোতে হবে। ১২টা বেজে আসছে।
নীড় : মামমাম একদম ঠিক বলছে পাখি।
প্রান্তিক : আচ্ছা। তাহলে একদিকে মামমাম থাকবে আল অন্যদিকে চাচ্চু থাকবে।
নীড় : দুজন তো দুদিকেই থাকবো। ঘুমাতে হবে। আর দুষ্টুমি করা যাবেনা।
প্রান্তিকের দুদিকে দুজন। ও ঘুমিয়ে পরেছে।
নীড় : ওয়াইফি… প্রান তো ঘুমিয়ে পরলো। রোম্যান্স হয়ে যাক তাহলে? হামম?
নীড় মেরিনের হাতে হাত রাখতে নিলে মেরিন ছোট ছুরি দিয়ে ওর হাতে আঘাত করলো। নীড় কোনো আওয়াজ না করে হাতটা সরিয়ে নিলো।
মেরিন : ভালো লাগলো রোম্যান্সের স্বাদ?
নীড় : ঠিক যেমনটা ভেবেছিলাম তেমনটাই লেগেছে। এ ওয়ান।
মেরিন : লিভ দ্যা রুম।
নীড় : কেনো?
মেরিন : সত্যিটা তুমিও জানো আমিও জানি।
নীড় : কোন সত্যের কথা বলছো? তোমার সত্য নাকি আমার সত্য?
মেরিন: লিভ।
নীড় : আমার সত্য মিথ্যা হলেও বেড শেয়ারে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারন… তোমার ভাষ্যমতে রাত্রিযাপন করেছি তোমার সাথে। নয় কি? কি যেনো বলে? রেপ হয়েছে তোমার?
মেরিন নীড়ের দিকে তাকিয়ে আছে।
নীড় মনেমনে : একটিবার নিজের মুখে স্বীকার করো যে তোমার সাথে ওসব কিছুই হয়নি। ভিডিও রেকর্ড হচ্ছে।
মেরিন : তুমি কোনো মানুষের কাতারেই পরোনা। অন্যায় করেও বিন্দুমাত্র আফসোস নেই তোমার।
মনেমনে : কি ভেবেছিলে লুজার চৌধুরী?আমি আমার মুখে বলে দিবো? নট অ্যাট অল।
নীড় : কিসের অন্যায়ের কোন আফসোস? বউ তুমি আমার। বউ দ্যা ওয়াইফ।
মনেমনে : ড্যাম ইট বললনা কিছু। ব্যাপার না। আজকে কেবল প্রথমদিন। সময় তো অনেক বাকি।
মেরিন : কথা বলা কি শেষ? নাকি আরো কিছু বলার আছে?
নীড় : বলার নেই করার আছে। রোম্যান্স…
মেরিন : ননসেন্স…
বলেই মেরিন লাইট নিভিয়ে শুয়ে পরলো। নীড় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো। কিছুক্ষন পর উঠে গেলো। বিয়ারের ক্যান হাতে নিলো।
নীড় : যাকে ঘৃণা করি তাকে নিজের হাতে নিজের বাসায় নিয়ে এসেছি। বিষাক্ত করে দিবো তোমার জীবনটা।

.

পরদিন…
নীড় জগিং করে এসে দেখে মেরিন আয়নার সামনে দারিয়ে রেডি হচ্ছে। কালো রঙের শাড়ি পরে আছে। ওকে দেখে নীড়ের কপালে ভাঁজ পরলো।
নীড় : আমার বউটা কতো সু্ন্দর… চোখ ফেরানে দায়। উফফ… আলোর ঝলকের মতো।
মেরিন : আলোর ঝলকে চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
মেরিন চলে যেতে নিলে নীড় ওর হাত ধরলো।
নীড় : আমার বউ হয়ে আমার অনুমতি ভিন্ন বাহিরে যাওয়ার কথা ভাবা ঠিক নয়। আমার অনুমতি ছারা এই প্রোপার্টির মধ্যে কোনোকিছুই হয়না। না কেউ প্রবেশ করতে পারে না কেউ বের হতে পারে।
মেরিন : আমাকে আটকাবে তুমি? হামম?
নীড় : কি মনেহয়? বের হতে পারবেন তুমি?
মেরিন : আটকাতে পারবে আমাকে?
নীড় : পারলে বের হয়ে দেখাও।
মেরিন বাসার নিচে নামলো। গাড়িতে বসলো। দরজা বন্ধ।
মেরিন : দরজা খোলো।
গার্ড : সরি ম্যাম। স্যার অনুমতি দেয়নি। তাই দরজা খুলতে পারবোনা।
মেরিন : ওকে।
মেরিন গাড়ি পেছনে নিলো। সর্বোচ্চ বেগে দরজার দিকে এগিয়ে এলো। দরজা ভেঙে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। নীড় ওপর থেকে দেখলো।
নীড় : ম্যাডাম এখনো সেই স্টুডেন্ট লাইফের মতো কথায় কথায় রেগে যায় চ্যালেঞ্জ নেয়। নাইস। কিন্তু এতো সকালে কোথায় গেলো? কেনো গেলো?

জন : ম্যাম আপনি ঠিক আছেন?
মেরিন : হামম একদম। আজকে স্টক হোল্ডারদের সাথে মিটিং ছিলো। ক্যানসিল করে দাও।
জন : ওকে ম্যাম।
মেরিন : নিউ ফোন এনেছো?
জন : ইয়েস ম্যাম। এই নিন। কল রেকর্ড হবেনা , ট্রেস হবেনা।
মেরিন : থ্যাংকস।
জন : ম্যাম… আপনার গাড়ির এই অবস্থা কেনো?
মেরিন : সদর দরজা ভেঙে এসেছি।
জন : কেনো ম্যাম? আপনাকে বন্দি করে রেখেছিলো কি?
মেরিন : একদম না। আসা নিয়ে কথা ছিলো।যাইহোক , লুজার চৌধুরীর দুর্বলতা খুজতে হবে। উইক পয়েন্টে চাপ দিতে হবে।
জন : উইক পয়েন্ট হলো প্রান।
মেরিন : ওটা ওপরে ওপরে। এছারা আর কি সেটা খুজে বের করতে হবে।
জন : ওকে ম্যাম হয়ে যাবে।
মেরিন : দাদুভাইয়ের সিকিউরিটি বারিয়ে দেয়া হয়েছে?
জন : হ্যা। ডক্টরও রাখা হয়েছে।
মেরিন : গুড। আসছি এখন।
জন : এখনই ফিরে যাবেন?
মেরিন : প্রান স্কুলে যাওয়ার আগে পৌছাবো। ওর ব্রেকফাস্ট , টিফিন রেডি করতে হবে।
জন : আপনি রেডি করবেন?
মেরিন : হামম। প্রান অভিমান করেছিলো আমার ওপর। সেই অভিমানটা ভেঙে গিয়েছে। অভিমান আর তৈরি হতে দিবোনা। এবার আর তাড়াহুরা করবোনা। এবার যা হবে ধীরেধীরে হবে।
জন : আপনি যেটা করবেন সেটার সাথে সবসময় আছি ম্যাম। চলুন আপনাকে ড্রপ করে দিচ্ছি।
মেরিন : প্রয়োজন নেই। আমি যেতে পারবো। লুজার চৌধুরী আমাকে খুন করবেনা। তার পরিকল্পনা অন্যকিছু। আসছি।

.

নীড় : ওয়েলকাম ওয়াইফি।
মেরিন : থ্যাংকস হাজবেন্ড।
নীড় : এ কি দেখছি আমি? তুমি কিচেনে প্রবেশ করছে? আমার জন্য কিছু রান্না করবে কি?
মেরিন : হ্যা। বিষ। ডু ইউ লাইক ইট?
নীড় : হামম। আমার প্রিয় খাবার।
চোখ কচলাতে কচলাতে প্রান্তিক নিচে এলো।
প্রান্তিক : মামমাম…
মেরিন : গুড মর্নিং বাচ্চা…
প্রান্তিক : গুড মর্নিং… আমি ভেবেছিলাম এটা আমাল ব্যাড মর্নিং হবে।
নীড়-মেরিন : কেনো?
প্রান্তিক : আমি ভেবেছিলাম মামমাম আমাকে ফেলে চলে গিয়েছে।
মেরিন : এখন কি দেখলে এসে?
প্রান্তিক মেরিনকে জরিয়ে ধরলো।
প্রান্তিক : আমাল মামমাম আছে। আমাকে ছেলে যায়নি।
নীড় : মামমাম আসাতে বুঝি চাচ্চুকে ভুলে যাওয়া হয়েছে?
প্রান্তিক : উহু… দুজনই আমাল প্লিয়। এই এতোগুলো।
ব্রেকফাস্ট করে নীড় প্রান্তিককে স্কুলে নিয়ে গেলো। ওখান থেকে অফিসে যাবে। মেরিন আজকে অফিসে যাবেনা। ঘুরেঘুরে দেখছে সবটা। নীড় গাড়িতে বসে বাসার ফুটেজ দেখছে।
নীড় : ম্যাডাম দেখছে চারদিকে। কিছু হয়তো ঘটাবে। বুঝতেও পারবেনা যে কোথায় কোথায় ক্যামেরা আছে।

মেরিন মনেমনে : লুজার অনুমতি ছারা এই বাসায় কিছুই হয়না। মানে সবকিছু ওর নলেজে থাকে। তাই আমাকে এমনিতে ফেলে তো ও যাবেনা। দেখছে… সবটা দেখছে। দেখো দেখো। আমিও তো চারদিক দেখার নাটক করছি। আমার নজর তো অন্যদিকে।
চলতে চলতে মেরিন নীলিমার সাথে ধাক্কা খেলো। নীড় নড়েচড়ে বসলো।
মেরিন : সরি মিসেস চৌধুরী।
নীলিমা কিছু না বলে চলে গেলো।
মেরিন : নাইস মুভ। আপুর বেডরুম খুজতে হবে।

.

চলবে…