প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-১৬+১৭

0
19

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 16
writer : Mohona
(do not copy please)

.

মেরিন : আপুর বেডরুম খুজতে হবে।
নীড় : মামনিকে কি ইচ্ছা করে ধাক্কা মারলো? ফেলে দেয়ার ইচ্ছা ছিলো? উফফ… কি করতে চাইছে ও? কিছুতো খুজছে। কিন্তু কি? কোন দিকে গেলো? ওই তো ওখানে। কি রাখলো ও এটা? বোম্ব নয় তো? ওহ নো… পিটার বাসায় চলো।
নীড়ের গাড়ি বাসার পাশেই ছিলো। তাই ২মিনিটের মধ্যেই পৌছেই গেলো।
নীলিমা : তুমি এতো দ্রুত?
নীড় কিছু না বলে ছুটে ওপরে গেলো।
নীলিমা : কি হলো নীড়?

নীড় গিয়ে দেখে মেরিন ওই একই রকমের ব্যাগ অন্য জায়গায় রাখছে। নীড় সাথে সাথে গিয়ে মেরিনের হাত ধরলো।
নীড় : আমার বাসাটাকে উড়ানোর ধান্দা হচ্ছে ? হামম? তুমি ভাবলে কিভাবে যে আমি এমনটা হতে দিবো? হামম? তুম…
নীড় ব্যাগটা খুলল। ছোট্ট একটি ছন্দ লেখা পেলো। রেগে মেরিনের দিকে তাকালো। এরপর ছুটে অন্য জায়গায় গেলো। যেখানে প্রথম ব্যাগটা মেরিন রেখেছিলো। সেটাতেও ছোট্ট একটি ছন্দ পেলো।
মেরিন : এমন ব্যাগ আরো আছে। এই যে…
মেরিন বাকি ২টা নীড়ের হাতে দিলো। নীড় সেগুলোও খুলে দেখলো। ওগুলোতেও ছোটছোট ছন্দ আছে।
নীড় : এসবের মানে কি? হামম?
মেরিন : প্রানের জন্য ট্রেজান হান্ট গেইমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ছোটছোট ছন্দগুলো হলো ক্লু। খেলাটা বাচ্চাদের জন্য ভালো। তুমি ভেবেছিলে আমি বোম্ব রাখছি হামম? হাহাহা… প্রথম কোনো সিংহকে দেখলাম নিজের গুহায় ভয় পেতে। হাহাহা…. ভালো ভালো। এই ভয়টাই আমার খুব পছন্দের।
মেরিন হাহা করে হাসতে হাসতে চলে যেতে নিলো নীড় ওর হাত ধরে দেয়ালে ঠেকালো। এক পাশে হাত রাখলো।
নীড় : ফাজলামো করছো আমার সাথে? হামম?
মেরিন দুই হাত দিয়ে নীড়ের গলা জরিয়ে ধরে
বলল : আমি তো কিছু করিইনি। যা হওয়ার একাএকাই হচ্ছে হানি। তাইনা?
বলেই ও চলে গেলো। নীড় দেয়ালে ঘুষি মারলো। মেরিন পেছন ফিরে দেখলো।
মেরিন মনেমনে : আতঙ্ককে কাধে করে বাসায় নিয়ে এসেছো। থাকো এখন সবসময় ভয়ে। গা ছমছম কি হয় কি হয়।
নীড় নিচে নেমে গেলো।
নীলিমা : কি হয়েছিলো নীড়?
নীড় : কিছুনা।
মেরিন : এই… শুনছো… প্রানের স্কুল ছুটির সময় হয়ে গিয়েছে। তুমি যাবে না আমি যাবো?
নীড় কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো। নীলিমা কয়েক সেকেন্ড মেরিনের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলো।
মেরিন : আজকের জন্য এতোটুকু বিনোদন যথেষ্ট মনেহচ্ছেনা। দেখি কখন কি করা যায়। এই নীলিমা-নিহালকে নিয়েও খেলা যেতে পারে। তবে আজকে প্রথমদিনই খেলা ঠিক হবেনা। প্রানের জন্য ট্রেজার হান্টের ব্যবস্থা করি।
কিছুক্ষন পর নীড় প্রান্তিককে স্কুল থেকে নিয়ে ফিরে এলো।
প্রান্তিক : মামমাম…
মেরিন : বাচ্চা…
নীড় : আমি অফিস গেলাম।
প্রান্তিক : বাই বাই চাচ্চু…
নীড় : বাই লাভ।
নীড় চলে গেলো।
প্রান্তিক : তুমি আজকে অফিস যাওনি মামমাম?
মেরিন : আহা। কালকে থেকে যাবো। আজকে আমি আমার কলিজার সাথে থাকবো। সারাদিন।
প্রান্তিক : আগে জানলে আমিও স্কুলে যেতামনা।
মেরিন : দুষ্টু ছেলে।

.

রাতে…
নীড় : আমার কাবার্ডে তোমার পোশাক কেনো?
মেরিন : কোথায় থাকবে তাহলে?
নীড় : তোমার পোশাক থাকবে নতুন কাবার্ডে। কালকেই চলে আসবে।
মেরিন : আমি তো মুগ্ধ।
মেরিন শাড়ি পাল্টে এলো।
মেরিন মনেমনে : লুজারের ল্যাপটপ এবং মোবাইল কানেক্টেড। ফেইস লক দেয়া না যে ও ঘুমালে নিতে পারবো। কি করা যায়? না না না। শুরুর ২-৩টা দিন কিছুই করবোনা। ও ভয়েভয়েই থাকুক। ওর নার্ভসটা বোঝা প্রয়োজন। ওর গতি ওর বেগ সবটা বুঝতে হবে। ওর দুর্বলতাটাও জানতে হবে।
নীড় মনেমনে : তুমি আমাকে আতঙ্কে রাখার ছলে কোনো একদিন কিছু একটা ঘটিয়ে ফেলবে। কেবল একটি সুযোগের অপেক্ষায় আছো। কিন্তু আমি তোমাকে সুযোগ দিবোনা।
মেরিন : প্রান… ব্রাশ করেছো?
প্রান্তিক না করলো।
মেরিন : ব্রাশ করে নাও।
প্রান্তিক : হামম হামম।
প্রান্তিক ব্রাশ করতে গেলো।
নীড় : ওয়াইফি… তোমার নেক্সট মুভ কি হতে চলেছে?
মেরিন : তোমাকে ডিসট্র্যাক্ট করা।
নীড় ল্যাপটপটা বন্ধ করলো।
নীড় : ওয়াট?
মেরিন : ইয়াহ। তোমার দৃষ্টিটা ওই ল্যাপটপ থেকে নিজের দিকে আনাটাই আপাদত আমার পরবর্তী পদক্ষেপ।
নীড় : তোমার দিকে আমার নজর পরতে পারেনা।
মেরিন : এভাবে বলতে পারলে বলো? পুরো ইউনিভার্সিটি তোমার ভালোবাসার স্বাক্ষী আছে। ভার্সিটি বললে ভুল হবে। আমার তো মনেহয় আকাশ বাতাস সবই তোমার ভালোবাসার স্বাক্ষী।
নীড় : তুমি কি চাইছো? আমার স্পর্শ নাকি আমার মনোযোগ?
মেরিন : আমার আপুর ঘর দেখতে চাইছি। যেখানে আমার আপুর স্মৃতি জরিয়ে আছে।
নীড় : তোমার আপু আমার ভাইয়ার হত্যাকারী। তাই তার কোনো স্মৃতিচিহ্ন এখানে পাবেনা।
জবাবে মেরিন কিছুই বললনা।
প্রান্তিক : মামমাম… আমি ব্লাশ কলেছি। ইইই।
মেরিন : গুড বয়।
প্রান্তিক : মামমাম… তুমি কি জানো আমাল মাবাবা কোথায়?
মেরিন চুপ হয়ে গেলো। কি বলবে ও এখন!
প্রান্তিক : চলো দেখাই তোমাকে আমাল মাবাবাকে।
প্রান্তিক মেরিনকে বারান্দায় নিয়ে গেলো।
প্রান্তিক : ওই যে ওই ওখানে দেখো দুইটা স্টাল আছেনা। ওই দুইটাই আমাল মাবাবা। চাচ্চু বলেছে। কিউট না বলো?
মেরিন : হামম।
প্রান্তিক : জানো? বাবা আল চাচ্চু হলো ভাই।
মেরিন : তুমি কি জানো তোমার আম্মু আমার আপু।
প্রান্তিক : সত্যি?
মেরিন : সত্যি সত্যি সত্যি। মাবাবার ছবি দেখেছো?
প্রান্তিক : হ্যা।
মেরিন : মাবাবার রুম?
প্রান্তিক : হ্যা। তুমি দেখবে?
মেরিন : আমাকে কে দেখাবে বলো?
প্রান্তিক : আমি দেখাবো। চলো আমাল সাথে।
প্রান্তিক মেরিনকে নিয়ে যাচ্ছে।
নীড় : কোথায় নিয়ে যাচ্ছো মামমামকে?
প্রান্তিক : বাবা-মাল লুমে। চলো মামমাম।
নীড় : কিন্তু কেনো?
প্রান্তিক : মামমামকে তো ওই লুম দেখানোই হয়নি। তাই নিয়ে যাচ্ছি।
নীড় : তুম…
প্রান্তিক : ওফফো চাচ্চু… শুধুশুধু এতো প্লশ্ন। চলো তো তুমিও চলো।
নীড় মনেমনে : এতোটুকু বাচ্চাটাকে ইউজ করছো। ঠিকনা…
মেরিন : চলোনা। প্রান এতো করে বলছে।
প্রান্তিক নীড়-মেরিনকে নিয়ে প্রনয়-নীলার বেডরুমে গেলো।
প্রান্তিক : এতা বাবামাল লুম। ওই যে ওদেল ছবি।
মেরিন : হামম।
মনেমনে : কিছু তো আছে এই রুমে। আর সেকারনেই লুজারটা আমাকে এখানে আসতে দেয়নি।
নীড় মনেমনে : এই ঘরটা আমার কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে ছিলো। আমার ভাইয়া এবং ভাইয়ার খুনীর রুম ছিলো। আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। এখন এটাকেও পরিবর্তন করতে হবে। এই রুমে চলে তো এসেছো বিশেষ কোনো লাভ হবেনা।

.

পরদিন…
মেরিন অফিস বসে প্রনয়-নীলার ঘরের তোলা ছবি গুলো দেখছে। ওর গলার লকেটটা একটা বিশেষ লকেট। যেটা দিয়ে ছবি তোলা যায়। রাতে যখন ওই ঘরে ঢুকেছিলো তখন বিভিন্ন দিক থেকে ছবি তুলে এনেছে। মনোযোগ দিয়ে দেখছে।
জন : ম্যাম…
মেরিন ইশারা দিয়ে চুপ করতে বলল। জন চুপ হয়ে গেলো। ও গভীরভাবে কিছু দেখছে। দেখা শেষ করলো।
মেরিন : জন… প্রনয় আহমেদ চৌধুরী সম্পর্কে সকল তথ্য চাই। তথ্যের মধ্যে যেনো অভ্যাস থেকে শুরু করে বাধ্যতা মোটকথা সবটা চাই।
জন : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন : স্টুডেন্ট লাইফ থেকে শুরু করে দাফন-কাফন পর্যন্ত সব তথ্য চাই। চাই মানে চাই-ই।
জন : হামম।
মেরিন : তুমি যেটা বলতে এসেছিলে সেটা বলে ফেলো।
জন : গতকালকের মিটিং ক্যানসিল হওয়াতে কিছু বোর্ড মেম্বাররা রেগে গিয়েছে।
মেরিন : ওদের শেয়ার কতো পার্সেন্ট?
জন : ছোটছোট শেয়ার।
মেরিন : সবারটা মিলিয়ে কতো?
জন : ২৭%।
মেরিন : কিনে নাও। বিদ্রোহের সুর উঠেছে। হোক না হোক নীড় এদেরকে ব্যবহার করে খান জাহান দখল করতে চাইবে। শেয়ার কিনে নেয়ার পর নতুন শেয়ার হোল্ডারদের ব্যবস্থা করবে। যাদেরকে মারাত্মক লেভেলের ভরসা করা যায় তাদের ব্যবস্থা করবে।
জন : শেয়ার কিনে আবার দিয়ে দিবেন?
মেরিন : প্রশ্নই ওঠেনা। নতুনদেরকে দেয়া হবেনা। তারা আমার আন্ডারে কাজ করার লোকই হবে। বোর্ড মেম্বারের অভিনয় করবে। নতুন নতুন আসার দরুন এদেরকে লুজার চৌধুরী নিজের দিকে টানার চেষ্টা করবে। ওরা যাবেও ওর দিকে। বাকিটা তুমি বুঝে গিয়েছো নিশ্চয়ই?
জন : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন : শেয়ার নিয়ে নেয়ার কাজটা আজকের মধ্যেই শেষ করতে হবে।
জন : জী ম্যাম হয়ে যাবে।
মেরিন : তিথিকে চৌধুরী বাড়িতে দেখলামনা দুদিন ধরে। কারন কি?
জন : জ্বর এসেছে। নীড় চৌধুরী বলেছিলো সব টেস্ট করিয়ে নিতে। সব টেস্ট কমপ্লিট হলে , সব রিপোর্ট পজিটিভ এলেই যেনো ও জয়েন করে।
মেরিন : হামম।

.

মেরিন প্রান্তিকের স্কুলে পৌছালো। ছুটির সময় হয়ে গিয়েছে। নীড়ও পৌছালো।
প্রান্তিক : তোমলা দুজনই এসেছো!
নীড় : ইয়েস লাভ।
প্রান্তিক : দেখো তোমলা… আমাল চাচ্চুকে তো তোমলা চেনোই। এটা হলো আমাল মামমাম। সেই সাথে আমাল কাকিমা।
নীড় : চলো বাসায় চলো।
মেরিন : মামমামেল গাড়িতে বসবে এসো।
নীড় : চাচ্চুর গাড়িতে
মেরিন : ও হাজবেন্ড… রোজ তো তোমার গাড়িতেই যায়। আজকে না হয় আমার গাড়িতেই ফিরি।
প্রান্তিক : আজকে গালিতেই যাবোনা। আজকে লিকশাতে যাবো।
নীড়-মেরিন : রিকশা!
প্রান্তিক : হ্যা।
নীড় : নাে লাভ।
মেরিন : অনেক জ্যাম পরবে রোডে। ধোয়ায় অসুস্থ হয়ে পরবে।
প্রান্তিক : উহু…
নীড় : আচ্ছা চলো।
মেরিন : আরে বাবা ও অসুস্থ হয়ে পরবে তো।
নীড় : পরবেনা। হি ইজ অ্যা ফাইটার। তোমার হয়তো অসুবিধা থাকতে পারে আমার সাথে রিকশাতে বসতে। মনেমনে রোম্যান্টিক গানের সুর বাজতে পারে।
মেরিন : রাইট। চলো প্রান রিকশা দেখি।
নীড় মনেমনে : রিয়্যাক্ট করছেনা কেনো কিছুতে?
ওরা রিকশাতে বসলো।
প্রান্তিক : ওয়াও… লিকশাতে কতো মজা! তাইনা মামমাম?
মেরিন : হ্যা বাচ্চা।
নীড় : চুলগুলো একটু বাধবেন কি বেগম? উড়েউড়ে নাক-কান পর্যন্ত এসে বিরক্ত করছে।
মেরিন নীড়ের কথাটা আমলে নিলোনা। চুল খোলাই রাখলো।
নীড় : বেগম…
প্রান্তিক : চাচ্চু… মামমামেল চুল থেকে তো সুন্দল স্মেল আসছে শ্যাম্পুল। আমাল খুব প্লিয়। আমম… কি সুন্দল ঘ্লান…
নীড় মনেমনে : এই ঘ্রাণটাই তো আমার সহ্য হচ্ছে না।
প্রান্তিক : মামমাম… তুমি চুপ করে আছো কেনো?
মেরিন : একটা বাইক ফলো করছে আমাদের।
নীড় : কি?
মেরিন : হ্যা। নরমাল থাকো।
নীড় : এতোক্ষন বলোনি কেনো?
মেরিন : তুমি আমার চুল নিয়ে ব্যস্ত ছিলে।
প্রান্তিক : কি হলো? তোমলা কি নিয়ে কথা বলছো?
নীড় রিকশার হুড তুলে দিলো।
প্রান্তিক : কি হলো?
নীড় : অনেক রোদ তো বাচ্চা তাই। মামমামের কোলে বসো। আমার কোলে বসলে মাথায় বারি খেতে পারো।
প্রান্তিককে মেরিন কোলে নিলো। নীড় একটু এগিয়ে বসলো । মেরিন প্রান্তিককে নিয়ে পিছিয়ে বসলো। নীড় গানে সাইলেন্সার লাগিয়ে নিলো। মেরিন প্রানকে কথার ছলে ব্যস্ত রাখলো। বাইকটা একবার এগিয়ে যাচ্ছে , একবার ওদের পাশেপাশে থাকছে। নীড় অপেক্ষায় আছে বাইকের এগিয়ে যাওয়ার।
নীড় : রিকশামামা… সামনে গিয়ে বামে যাবেন।
রিকশাওয়ালা : আচ্ছা বাবা।
বাইকওয়ালা এগিয়ে যেতেই নীড় বাইকের চাকা বরাবর গুলি করলো। বাইকটা বেসামাল হয়ে গেলো। বাইকওয়ালা পরে গেলো বাইকসহ।
নীড়-মেরিন : বামে যাবেন।
কিছুক্ষনের মধ্যে রিকশা বাম দিকে ঢুকে গেলো।
নীড় : শপিং মলটার সামনে রাখবেন।
প্রান্তিক : আমলা এখন শপিং কলবো?
নীড় : হ্যা লাভ শপিং করবো।
নীড় পিটারকে এবং মেরিন জনকে ম্যাসেজ করে দিলো।
রিকশাভাড়া দিয়ে ওরা দ্রুত শপিংমলে ঢুকে গেলো।

☆ : আজকে রাঘব বোয়াল একসাথে। সাথে কোনো গার্ড তো দূরের কথা জনপিটারও নেই। গাড়িও নেই। প্রান্তিকের সামনে গুলিও চালাবেনা। মারমারিও করবেনা। এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে। প্রান্তিককে তুলে নিবে। ওদের দুজনকে মেরে ফেলতে হলে মারবে। আই ডোন্ট কেয়ার। আমি কেবল প্রান্তিককে চাই।
○ : কিন্তু বস… শপিং মলে ঢুকেছে তিনজন। রাইডার বাইকে শ্যুট করে দিয়েছে।
☆ : ঢুকে পরো মলে। জনপিটার ওদের পর্যন্ত পৌছানোর আগে তোমরা পৌছে যাও। তুলে নাও দুই পরিবারের প্রান ভ্রোমরাকে।
○ : আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

প্রান্তিক দারিয়ে আইসক্রীম খাচ্ছে। নীড়-মেরিন মিলে প্রান্তিক এবং চারদিক দেখছে।
নীড় : চালটা চেলে ঠিক করোনি। প্রানকে নিয়ে যেতে পারবেনা।
মেরিন : বাজে কথা একদম বলবেনা। প্রানকে এভাবে আমি না কখনো নিতে চেয়েছি আর না চাইবো।
নীড় : তোমার কথা বিশ্বাস করার মতো বোকা আমি নই।
মেরিন : কার মনে কি আছে সেটা কেবল সেই জানে।
নীড় : কি বলতে চাইছো তুম… মাই গুডনেস… লিও গ্যাং।
মেরিন : লিও গ্যাং!
নীড় : ইয়েস। ওই দেখো দুজনের গালে মোলস।
মেরিন : হ্যা। এটা তো লিও গ্যাং এর চিহ্ন। ওঠো আরো রিকশাতে।
নীড় : শাট আপ। প্রানকে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যাও। আমি হ্যান্ডেল করে নিবো।
মেরিন : নিজেকে বেশি স্মার্ট ভেবোনা। ওয়াশরুমে আগে থেকেই ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে নিশ্চয়ই।
নীড় : পিটার আসছে না কেনো?
মেরিন : ওই রোডে মারাত্মক জ্যাম। না হলে জনও চলে আসতো। বাচ্চা… খাওয়া হলো আইসক্রীম?
প্রান্তিক : হামম। আমার ভীষন ঘুম পাচ্ছে।
নীড় প্রান্তিককে কোলে তুলে নিলো।
নীড় : চাচ্চুর কোলে ঘুমিয়ে পরো।
প্রান্তিক : বাসায় যাবোনা?
নীড় : যেতে যেতে চাচ্চুর কাধে মাথা রাখো। ভালো লাগবে।
প্রান্তিকের মাথা নিজের কাধে ফেলে ওকে কোলে নিয়ে হেটে যাচ্ছে। দৃষ্টি রেখেছে চারদিকে। সামনে থেকে এগিয়ে আসছে লিও গ্যাং এর সদস্যরা দারিয়ে আছে। প্রত্যেকে পেটের দিক থেকে কোটটা একটু সরিয়ে নিজেদের কাছে থাকা গান দেখিয়ে নিলো।
মেরিন : প্রান ঘুমিয়ে পরেছে। লেটস অ্যাটাক।
নীড় : মাথা খারাপ? ওরাও শ্যুট করবে। প্রান আমার কোলে।
মেরিন : লং ব্যানারটা দেখতে পাচ্ছো? গ্রাউন্ড পর্যন্ত যাচ্ছে।
নীড় : তো?
মেরিন : আই ক্যান স্লাইড উইথ প্রান।
নীড় : চাইছো যেনো এদের হাতে আমি শেষ হয়ে যাই।
মেরিন : ফাইন তুমি প্রানকে নিয়ে যাও। আমি হ্যান্ডেল করে নিচ্ছি।
নীড় : হাত ফসকে গেলে প্রান ব্যাথা পাবে। আমাকে সামলাতে দাও। তুম….
○ : নিজেদের মধ্যে কথা বলা বন্ধ হলে বাচ্চাটাকে দিয়ে দাও আমাদের কাছে।
নীড় : যদি না দেই?
○ : বুঝতেই তো পারছো কি করতে পারি আমরা?
নীড় পা দিয়ে মেঝেতে টোকা দিলো। মেরিন সেটা লক্ষ্য করলো। বুঝতে পারলো গান লোড করার কথা বলল নীড়। মেরিন প্রানকে ধরলো।
মেরিন : প্রান কি ক্ষতি করেছে? ওর পেছনে কেনো পরলে?
○ : হাহাহা…প্রান তো প্রান। প্রানতো সবাই চাই। মোরে আরো আরো আরো দাও প্রান।
প্রানকে ছোয়ার ছলে মেরিন গান লোড করে নিলো। নীড় পা দিয়ে মেঝেতে আরেকটা বারি দিতে মেরিন গুলি করতে লাগলো। নীড়ও করছে। সামনের দিকের ৫জন বুঝে ওঠার আগেই দুজন গুলিবর্ষন শুরু করেছে। ওদের দুজনের গানেই সাইলেন্সার লাগানো। তবুও চারদিকে ছুটাছুটি শুরু হয়েছে। সামনে থেকে একটা গুলি ছোরা হলো। শব্দে প্রানের ঘুম ভেঙে গেলো। নীড় প্রানকে মেরিনের কোলে দিলো। ওকে চলে যেতে বলল। জন-পিটার চলে এসেছে। প্রান-মেরিনের দিকে গুলি যেতে দিচ্ছেনা নীড়-জন-পিটার। মেরিন প্রানকে শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে। মেরিন কিছুতেই প্রানকে পেছনের দৃশ্য দেখতে দিচ্ছেনা। গুলির শব্দে ভয়ে প্রান কেপেকেপে উঠছে। একটি গুলি নীড়ের হাত ছুয়ে গেলো।
পিটার : স্যার…
নীড় : ঠিক আছি আমি। তুলে নাও ৫জনকে।
ওরা ৫জন প্রান বাঁচিয়ে পালালো।
পিটার : স্যার হসপিটালে চলুন।
নীড় : শসস… প্রানের সামনে হসপিটাল শব্দটা তুলোনা। ভয় পেয়ে যাবে। আমার ক্ষতে এটা বেধে দাও।
পিটার বেধে দিলো।
নীড় : তোমার ব্ল্যাক কোটটা দাও।
পিটার দিলো। নীড় ব্ল্যাক কোটটা গায়ে জরিয়ে নিলো। প্রান্তিক মেরিনের কোলে ভয়ে চুপসে আছে।
নীড় : প্রান পাখি…

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 17
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নীড় : প্রান পাখি…
প্রান্তিক মেরিনকে শক্ত করে ধরলো। নীড় প্রান্তিকের মাথায় হাত রাখলো।
নীড় : লাভ… চাচ্চু তো…
প্রান্তিক ভয়ভয় চোখে তাকালো। চোখ লাল হয়ে আছে ওর। কান্না করে এমনটা হয়েছে। নীড় ওকে কোলে নিতে চাইলেও ও মেরিনকে আকড়ে ধরে আছে। নীড় ওর গালে হাত রাখলো। ওর কপালে চুমু দিলো। প্রান্তিকের হিচকি উঠে গিয়েছে।
মেরিন : কলিজা… কি হয়েছে? এতো ঘাবরে আছো কেনো? চুপ করে আছো কেনো?
প্রান্তিক আবারো মেরিনের কাধে মুখ লুকিয়ে রইলো।
নীড় : চলো বাসায় চলো।
ওরা গিয়ে গাড়িতে বসলো। নীড় মেরিন প্রান্তিকের সাথে পেছনে বসলো। সামনে জনপিটার। প্রান্তিক ঘুমিয়ে পরেছে।
মেরিন : জন… ডক্টরকে কল করো। আসতে বলো। প্রান ভয় পেয়েছে। ওর জ্বর চলে আসতে পারে।।
জন : ইয়েস ম্যাম।
নীড় : স্টপ জন। ডক্টরকে কল করার প্রয়োজন নেই। ওর পার্সোনাল ডক্টর আছে। ডক্টর তিথি।
মেরিন : যাকে বন্দি বানিয়ে রেখেছো। জবরদস্তি করে প্রানের চিকিৎসা করাচ্ছো।
নীড় : কিপ ইউর মাউথ শাট।
মেরিন : নো আই ওন্ট। এখন তোমার সাথে তর্কে জরাতে চাইনা।
পিটার : স্যার… আপনার হসপিটালে যাওয়া উচিত।
নীড় : এতোটুকু ক্ষতে আমি মরে যাবোনা। বাসায় চলো। দেখো তিথি আজকে এসেছে কিনা?
পিটার : এসেছে স্যার। রিপোর্ট সব পজিটিভ।
নীড় : হামম।
ওরা বাসায় পৌছালো। নীলিমা ছুটে গেলো।
নীলিমা : কি হয়েছিলো শপিংমলে? তুমি প্রান ঠিক আছো তো?
নীড় : হ্যা ঠিক আছি।
নীলিমা : সব এই মেয়েটা করিয়েছে । ছারো আমার নাতিকে। দাও আমাকে।
নীলিমা প্রান্তিককে স্পর্শ করতে নিলে মেরিন তার হাত ধরলো।
মেরিন : প্রান ঘুমিয়ে আছে। আমি কোনো তামাশা চাইনা।
নীড় : তিথি… ডক্টর তিথি।
তিথি এগিয়ে এলো।
তিথি : কি হয়েছে?
নীড় : প্রানের চেকআপ করো।
তিথি এগিয়ে গেলো মেরিনের দিকে।
মেরিন : ওকে বেডে রাখতে তো দাও। এরপর যা করার করো । আনপ্রফেশনাল পার্সোন।
মেরিন প্রান্তিককে রুমে নিয়ে গেলো। বেডে শুইয়ে রাখতে গেলে ওর ঘুম ভেঙে গেলো। কান্না করে উঠলো।
মেরিন : বাচ্চা… এই যে দেখো তাকিয়ে। মামমাম আছি তো। দেখো দেখো দেখো। আমরা বাসায় চলে এসেছি।
তিথি : প্রান… তুমি না ব্রেইভ বয়।
মেরিন : তিথি আন্টিকে বলো তো আজকে ক্লাসে কি কি করেছো? দেখি বাচ্চা দেখি।
তিথি : কোল থেকে নামান না ওকে।
মেরিন : আর ইউ ব্লাইন্ড অর ওয়াট? দেখতে পাচ্ছোনা যে ও ভয়ে পেয়ে চুপসে আছে? হামম? আবার অর্ডার দিচ্ছো আমাকে?
তিথি : আমি অর্ডার কখন দিলাম?
মেরিন : তোমাকে বলা হয়েছে প্রানকে দেখার জন্য। সো সেটা করো। বাচ্চা… দেখি একটু ঘুরে বসো।
প্রান্তিক : আমার ভয় কলছে।
মেরিন : কোল থেকে নামতে হবেনা । তুমি একটু ঘুরে বসো যেনো ডক্টর আন্টি তোমাকে দেখতে পারে।
প্রান্তিক ঘুরে বসলো।

.

নিহাল : বলেছিলাম তোমাকে । সাবধান করেছিলাম। কিন্তু তুমি শুনলেনা আমার কথা। মেরিনকে বউ বানিয়ে বাসায় নিয়ে এলে।
নীড় : এমনভাবে বলছো যেনো ভালোবেসে বিয়ে করে এনেছি ওকে।
নিহাল : ভালোবেসে না আনলেও জেদ করে তো এনেছো। ওকে এনেছো সেটাই বড় কথা।
নীলিমা : ও আসতেই হামলা হলো। ওই সব করিয়েছে।
নীড় : সম্ভাবনা নেই ওর করানোর। প্রানকে রিস্কে ফেলবেনা।
নীলিমা : ওরা খান। ওরা সব করতে পারে। সব মানে সব।
নীড় : আমি বললামনা সম্ভাবনা নেই। এক কথা একবার বললে বোঝার চেষ্টা করো।
পিটার : স্যার…
নীড় : লিওকে পেলে?
পিটার : না স্যার। সরি স্যার।
নীড় : লিও কে খোজো। ওকে আমি নিজের হাতে শেষ করবো। ওর জন্য প্রানের এই অবস্থা।
পিটার : আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
নীড় : চেষ্টা বুঝিনা। ফলাফল চাই । সো… ডু ইট।

.

নীড় ঘরে গিয়ে দেখে প্রান্তিক ঘুমিয়ে আছে। মেরিন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
নীড় : ঘুমিয়েছে?
মেরিন : হামম।
নীড় প্রান্তিকের কপালে চুমু দিলো।
নীড় : ভাগ্যিস জ্বর আসেনি। কথা আছে তোমার সাথে।
মেরিন : চোখটা তুলে দেখো। কোটটা ও ধরে রেখেছে শক্ত করে যেনো আমি এখান থেকে না উঠতে পারি।
নীড় : ছারিয়ে নাও।
মেরিন কিছু না বলে মোবাইল নিয়ে বসলো।
নীড় : কিছু বললাম তো নাকি?
মেরিন নীড়ের কথা কানেই তুলল না। নীড় প্রান্তিকের হাত থেকে কোটটা সরাতেই ও জেগে গেলো।
প্রান্তিক : মামমাম…
মেরিন : আমি এখানেই আছি বাবা। চাচ্চুও আছে।
ও কিছুক্ষনের মধ্যেই আবার ঘুমিয়ে পরলো। নীড় মেরিনকে টেনে বারান্দায় নিয়ে গেলো।
নীড় : খুল স্মার্ট ভাবো নিজেকে। তাইনা?
মেরিন : ভাবার কি প্রয়োজন? সবাই জানে।
নীড় : সব আজকে তোমার জন্য হয়েছে। তুমি করিয়েছো সব।
মেরিন : এক্সকিউজ মি! সব হয়েছে তোমার জন্য। দায়ী তুমি। লিও গ্যাং তোমার মানে চৌধুরীদের শত্রু। আর সে কারনেই ওরা হামলা করেছিলো।
নীড় : তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো যে লিং গ্যাং তথা লিও খানদেরও শত্রু। এমনটা নয় তো যে লিও গ্যাংকে দিয়ে তুমি কাজটা করিয়েছো।
মেরিন : এই মাত্রই তুমি বললে যে লিও গ্যাং আমারও শত্রু। তাহলে ওকে দিয়ে আমি এমনটা কেনো করাবো? কিভাবে করাবো?
নীড় : শত্রুর শত্রু বন্ধু হয় থিওরি অ্যাপ্লাই করে।
মেরিন : মেরিন বন্যা খান কখনো শত্রুকে বন্ধু ভাবেনা। শত্রু যদি নিজের জীবনও দিয়ে দেয় তাহলেও মেরিন বন্যা খান শত্রুকে বিশ্বাস করেনা। কারন আমার জন্য শত্রুর জীবন বিসর্জন দেয়ার পেছনেও বড় কোনো কারন অবশ্যই থাকবে।
বলেই মেরিন রুমে ঢুকলো। রাতে প্রান্তিকের জ্বর এলো। নীড়-মেরিন মিলে ওর যত্ন নিলো। দুজনের একজনেরও ঘুম হলোনা। জ্বর ছারার পর নীড় প্রান্তিককে বুকে নিয়ে ঘুম পারালাম।

.

লিও : একটা কাজ দিয়েছিলাম তোদেরকে। কিন্তু তোরা সেটাও করতে পারলিনা। তোদেরকে মেরেই দিবো।
○ : বস… আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই ধা ধা করে গুলি ছুরতে শুরু করলো দুজন। গুলি করতে অত্যন্ত দক্ষ ওরা।
লিও : আন্ডারওয়ার্ল্ডের অংশ তোরা। তোদের চেয়ে ওদের বেগ বেশি এই কথা বলার আগে তোদের মরে যাওয়া উচিত ছিলো। মরিসনি যখন তখন এখন মরবি।।
লিও ওদেরকে গুলি করে ফেলল।
লিও : ছারবোনা। কাউকে ছারবোনা। সবাইকে শেষ করে দিবো। এক হয়েছে সকলে। খান , চৌধুরী কাউকে ছারবোনা। ওই বুড়ো শমসের খানকেও না। নিহাল চৌধুরীকেও না , নীলিমা চৌধুরীকেও না। ওই নীড়-মেরিনকেও না। আমি ভালো থাকতে পারিনি তাই কাউকে ভালো থাকতে দিবোনা। না মানে না।
বলেই নিজের মেশিন গানটা আয়নাতে ছুরে মারলো।

.

শমসের খান এলো প্রান্তিককে দেখতে। কারন ওর জ্বর এসেছে।
নিহাল : নীলি… রান্নার ব্যবস্থা করো।
নীলিমা : আমি আমার ছেলের খুনীর পরিবারকে ভুরিভোজ করাতে পারবোনা।
নিহাল : নীলি… বাসার একটা সম্মান আছে।
মেরিন : সম্মান কি আছে সেটা তো দেখা শেষই। আমার দাদুভাই রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে এখানে আসেনি। প্রানকে দেখতে এসেছে। তাই তার খাওয়া দাওয়ার টেনশন নেয়ার প্রয়োজন নেই।
নীড় : এই রুবি।
রুবি : ইয়েস স্যার।
নীড় : এই খাবার গুলো রাখো। শমসের খান এসেছে। আমরা তো আর অতিথিকে গুলি করে বিদায় দিতে পারিনা।
মেরিন : ভেরি স্মার্ট।
বলেই শমসের-প্রানের দিকে পা বারালো।
নীলিমা : নীড়… তোর মধ্যে আমি বিস্তর পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। বউ , শ্বশুরবাড়ির প্রতি মারাত্মক দুর্বল হয়ে পরছো।
নীড় : বউয়ের প্রতি দুর্বল হওয়া তো স্বামী সম্প্রদায়ের বাধ্যতা।
নীলিমা : তোর এমন আচরণ অবাক করছে আমাকে।
যেতেযেতে মেরিন কথাটা শুনলো। নীড়ের দিকে তাকালো। নীড় চোখ মারলো। মেরিন রেগে চলে গেলো। নীড় বাঁকা হাসলো।

শমসের : লিও গ্যাং এমনটা কেনো করতে গেলো?
মেরিন : ডোন্ট নো। আমার মনেহয় নীড়ের উদ্দেশ্য ছিলো আমাকে উড়িয়ে দেয়ার তাই হয়তো এই প্ল্যান করেছিলো।
শমসের : হতে প…
নীড় : জানের সাথে বাজি খেলে বউকে রক্ষা করলাম আর বউ বলছে বউকে উড়ানোর জন্য আমি এসব করেছি। এই দুঃখ আমি কোথায় রাখি?
মেরিন রেগে গেলো। শমসের খান চোখের ইশারায় ঠান্ডা হতে বলল।
নীড় : দাদুভাই… লিও এবং ওর গ্যাংকে তো আমি ছারবোনা। আমার পরিবারের ওপর হামলা করেছে।
শমসের : এখানে প্রান নেই। ঘুমিয়ে আছে। তাই অভিনয়ের প্রয়োজন নেই।
নীড় : তুমি আসলেই মেরিন বন্যা খানের দাদু।
রুবি চানাস্তা নিয়ে এলো।
শমসের : চানাস্তার জন্য ধন্যবাদ। আসছি দিদিভাই।
নীড় : কিন্তু দাদুভাই…
শমসের : আসছি নীড়।
মেরিন : জন…জন…
জন এগিয়ে এলো।
জন : ইয়েস ম্যাম?
মেরিন : দাদুভাইকে তুমি নিজে বাসায় পৌছে দিবে।
জন : ইয়েস ম্যাম। চলুন স্যার।
জন শমসের খানকে নিয়ে বের হলো। প্রান্তিক চোখ ডলতে ডলতে মামমাম বলতে বলতে নিচে নেমে এলো।
মেরিন : বাচ্চা… তুমি নিচে এলে কেনো?
প্রান্তিক : ঘুম ভাঙাল পল দেখলাম তোমলা কেউ নেই। তাই ভয় পাই।
নিহাল : এই তো আমরা সবাই আছি।
নীলিমা : দীদু তোমার জন্য কেক বানিয়েছি।
প্রান্তিক : বলবাবা চলে গিয়েছে?
মেরিন : হামম। আবার কালকে আসবে তোমাকে দেখতে।
প্রান্তিক : বলবাবা চলে গেলো কেনো? কালকে আসলে আমি আল যেতেই দিবোনা। আমলা সবাই একসাথে থাকবো। কোনো দুষ্টুলোক আসতে পারবেনা।
নীড় : দুষ্টুলোক তো এমনিতেও সামনে আসতে পারবেনা। প্রান দি ব্রেইভ বয়কে দেখলেই সবাই পালাবে।
প্রান্তিক : কালকে শপিংমলে তাহলে ওই দুষ্টুলোকগুলো এসেছিলো কেনো?
মেরিন : দুষ্টুলোক! দুষ্টুলোক কোথায় এসেছিলো? কখন এসেছিলো?
প্রান্তিক : কালকে শপিং মলে। গান ছিলো।। ঢিচক্যাও ঢিচক্যাও সাউন্ড করছিলো।
নীড় : ওগুলো গান ছিলোনা। আর ওগুলো দুষ্টুলোকও ছিলোনা। ওরা সবাই মিলে ফিল্মের শ্যুটিং করছিলো।
প্রান্তির : শ্যুটিং কি?
নীড় : অভিনয়। আমরা টেলিভিশনে যেসকল প্রোগ্র্যাম দেখি সেগুলো ভিডিও করা হয়না। ভিডিও করার জন্য অভিনয় করতে হয়। যেমন করে তোমার স্কুলে ড্রামা হয় তেমন করেই শপিংমলে ওরা শ্যুটিং করছিলো।
প্রান্তিক : ড্লামা ছিলো?
মেরিন : হ্যা ড্রামা ছিলো।
প্রান্তিক : আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এই এততোগুলো ভয় পেয়েছিলাম।
নীড় : সেটা আগে বলবেনা? বললে তো আগেই ভয়কে ভাগিয়ে দিতাম। ভয় নিজেই ভয়ে পালাতো।
প্রান্তিক খিলখিল করে হাসতে লাগলো।

.

৫দিনপর…
জন : প্রনয় চৌধুরী অনেক ঠান্ডা মেজাজের মানুষ ছিলো।
মেরিন : ঠান্ডা মেজাজের মানুষ হলে এসব ঘটতোনা।
জন : ম্যাম… আপনার ধারনা একদম ঠিক। ঠান্ডা মেজাজের ঠিকই ছিলো। কিন্তু অত্যন্ত ধূর্ত। হাসতে হাসতে খুন করে দিবে। কেউ বুঝতেও পারবেনা যে সে খুনী।
মেরিন : আপুর প্রেমকাহিনির কাহিনি কি ছিলো?
জন : ম্যাম… আপনার আপু ভালোবাসার জালে ঠিকই পরেছিলো। কিন্তু প্রনয় চৌধুরী আপনার আপুকে ভালোবাসেনি। সবটাই ছিলো একটা নাটক মাত্র। খানদেরকে সে মনেপ্রানে ঘৃণা করতো। সময় নিয়ে আপনার আপুর মন জয় করে।এমন গভীর নাটক করে যে যেকেউ সেই ফাঁদে পা দিয়ে দিতো। তাই নীলা ম্যামও ভুলটা করে বসে। প্রনয় চৌধুরীর মিথ্যা ভালোবাসাকে তিনি সত্যি ভেবে বসেন। পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে করে।
মেরিন : আর বিয়ের পরই বের হয় আসল রূপ।
জন : হামম। বাকি সব এই পেনড্রাইভে আছে স্লাইডসহ।
মেরিন : হামম। লুজারের নতুন অভিযোগ কি শুনবে?
জন : কি?
মেরিন : প্রনয় চৌধুরীকে নাকি আপু হত্যা করেছিলো।
জন : এই নিয়ে চৌধুরীরা কেইসও করেছিলো।
মেরিন : কি?
জন : হ্যা। তারা কেইস করেছিলো যে, প্রনয় আহমেদ চৌধুরী কোমায় যাওয়ার পর নীলা খান চৌধুরী তাকে হত্যা করে। বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলে।
মেরিন : কি?
জন : জী ম্যাম।
মেরিন : এই প্রনয় চৌধুরী আবার কোমায় গেলো কবে?
জন : নীলা ম্যাম তখন প্রেগন্যান্ট ছিলেন।
মেরিন : সব তথ্য পেনড্রাইভে আছে তো?
জন : হ্যা ম্যাম।
মেরিন : হামম।
জন : আসছি ম্যাম।
জন রুম থেকে বের হলো।
মেরিন : এই অতীত তো ক্রমশও জটিল হয়ে যাচ্ছে। আপু তো এমন রকমের কোনো কাজ কখনো করতে পারেনা। এগুলো সব ওদের মিথ্যাচার। আগে এই পেনড্রাইভটা দেখতে হবে।

.

■ : লিও গ্যাং কেনো আবার এসবে জরালো?
□ : জানিনা। এই খেলায় কেনো নতুন নতুন সদস্য যোগ হচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছিনা। এদের কি স্বার্থ আছে?
■ : কি জানি কার কখন কিসে স্বার্থ চলে আসে? এখন কি হবে? লিও গ্যাং এর সদস্যরা কেনো প্রান্তিককে তুলে নিতে চেয়েছিলো?
□ : সেটাই তো কোটি টাকার প্রশ্ন। লিও কে সরতে হবে।
■ : না সরলে?
□ : সরাতে হবে। আমি আর কোনো প্রতিপক্ষ চাইনা।
■ : কিভাবে সরাবে তুমি?
□ : যেভাবেই হোক সরাতে তো হবেই।
■ : চেনোই তো লিওকে।
□ : আমার এক বন্ধু আছে যে কিনা আন্ডারকভার অফিসার। সে আন্ডারওয়ার্ল্ডে আছে তাদের লোক হয়ে। তার মাধ্যমে ওই
লিওর সম্পর্কে খোঁজ নিবো।
■ : যদিই সরাতে অক্ষম হয়ে যাও তাহলে কি হবে?
□ : তুমি সবসময় খারাপ ভাবনাই ভাবো।

.

মেরিন প্রনয়-নীলার ঘরে ঢুকলো। ঘরের মধ্যে সবকিছু পরিবর্তিত। তখন মেরিনের ফোনটা বেজে উঠলো। দেখে নীড়।
মেরিন : হ্যালো…
নীড় : কি হলো? অবাক হলে বুঝি?
মেরিন : কেনো কল করেছো বলো।
নীড় : কি ভেবেছিলে তুমি? হামম? এই ঘর এখনো তেমনই পাবে? প্রানকে ব্যবহার করে ঢুকে তো গিয়েছিলে ওই ঘরে। কিন্তু লাভ হলোনা।
মেরিন : কথাগুলো বলে শান্তি লাগছে? লাগলে এবার রাখো। আমিই রেখে দিচ্ছি।
বলেই মেরিন রেখে দিলো।
মেরিন সারাঘর খুজতে লাগলো। নীড় ফুটেজে দেখছে।
নীড় : কি খুজছে মেরিন?
মেরিন মনেমনে : আমার মন বলছে যে, যে ব্যক্তি কোমায় ছিলো সেটা প্রনয় চৌধুরী ছিলোনা। একটা ক্লু লাগবে। এই ক্লু এই রুম থেকেই পাবো। লুজারটা সব পাল্টে দিয়েছে। কিন্তু ফিঙ্গার প্রিন্ট তো থাকবে। এই সানগ্লাস দিয়ে দেখা যাবে।
নীড় মনেমনে : ঘরের মধ্যে সানগ্লাস কেনো পরে আছে?
মেরিন মনেমনে : ওই তো ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেখা যাচ্ছে। চতুর্দিকেই আছে। এগুলোকে কালেক্ট করার ব্যবস্থা করতে হবে। আজকে নিবোনা। চোখের চশমাটা পরে থাকতে হবে। কারন লুজারটা হয়তো দেখছে। তিথিকে দূর করতে হবে।
মেরিন নীলার ছবিটার সামনে গিয়ে দারালো।
মেরিন : ভালোবেসে ভুল করেছিলে আপু। সে ভুল জীবন দিয়েও সংশোধন করতে পারলেনা।
মেরিন ঘর থেকে বের হলো। বেরিয়ে দেখে তিথিথ দারিয়ে আছে।
মেরিন : তুমি এখানে দারিয়ে আছো কেনো?
তিথি : এতোদিন ধরে এই ঘরটা বন্ধই ছিলো। আজকে খোলা দেখে ভাবলাম কে আছে ভেতরে। তাই দারালাম।
মেরিন : দারালে নাকি গোয়েন্দাগিরি করছিলে।
তিথি : উফফ… আপনিও মিস্টার চৌধুরীর মতো। এতো সন্দেহ কেনো করেন? কিভাবে করেন?
মেরিন : তোমার চোখ বলে দিচ্ছে যে তোমার ওপর সন্দেহ করা ফরজ। কিছু আড়াল করছো। বিপজ্জনক। চলে যাও।
তিথি : এটা ডিসাইড করার আপনি কেউ নন।
মেরিন : টোন ঠিক করো। না হলে পায়ের নিচের মাটিটা থাকবেনা।

.

তিথিকে নীড়ের অফিসে ডাকা হয়েছে।
তিথি : আপনি আমাকে এখানে আসতে বললেন যে? আবার কি হলো?
নীড় : মেরিন বন্যা খানের সাথে আমার শত্রুতা আছে সেটা সবাই জানে। সারা শহর জানে। তাইতো?
তিথি : ইয়েস।
নীড় : তুমি একটি কর্মচারী। প্রানের ডক্টর। রাইট?
তিথি : হামম।
নীড় : মেরিন বন্যা খান এখন আমার স্ত্রী। জানা আছে নিশ্চয়ই?
তিথি : হামম।
নীড় : পিটার… চেকটা দিয়ে দাও।
পিটার চেক দিলো।
নীড় : তোমার কাজের সমাপ্ত হলো।
তিথি : সত্যি!
নীড় : হামম।

.

চলবে…