প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-১৮+১৯

0
19

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 18
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নীড় : হামম।
তিথির যে কি পরিমানের আনন্দ হচ্ছে সেটা বলার মতো না।
নীড় : খুব খুশি হয়েছো মনেহচ্ছে?
তিথি চুপ করে রইলো।
নীড় : আমার অপ্রিয় মানুষদের আনন্দ আমার ভালো লাগেনা। এর আগে আমি আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করি চোখের সামনে থেকে চলে যাও।
তিথি আর এক মুহূর্তও দেরি না করে বেরিয়ে গেলো।
নীড় : রাবিশ আচরণ করছি।
পিটার : স্যার আসবো?
নীড় : এসো।
পিটার : তিথিকে বাদ করে দিলেন?
নীড় : হ্যা।
পিটার : হঠাৎ করে এমনটা করলেন যে?
নীড় : ইচ্ছা হয়েছে তাই।
পিটার : সরি স্যার প্রশ্ন করার জন্য।
নীড় চেয়ারে বসলো।
পিটার : স্যার , আপনি কি ডিস্টার্বড?
নীড় : জানিনা।
পিটার বুঝতে পারলো যে নীড় বিরক্ত হয়ে আছে। এই অবস্থায় ওকে প্রশ্ন করলে আরো রেগে যাবে তাই চুপ করে রইলো।

.

নীড় কোটটা কাধে ঝুলিয়ে বাসায় পৌছালো।
নীলিমা : তিথি নাকি আর আসবেনা?
নীড় : হামম।
বলেই নীড় ওপরে চলে গেলো নীলিমাকে কথা বলার দ্বিতীয় সুযোগ দিলোনা।
নীলিমা : আবার কি হলো কে জানে?
নীড় ঘরে ঢুকলো। মেরিন এখনো চোখে চশমা পরে আছে। ল্যাপটপে কিছু করছে।
নীড় : চোখে চশমা পরার কারন?
মেরিন : দিনের বেলা তারা দেখা।
মেরিনের উত্তরে নীড় আরো বিরক্ত হলো।
নীড় মনেমনে : এর সাথে কথা কেনো বলতে যাই আমি?
মেরিন : কে বলে আমার সাথে কথা বলতে?
নীড়ের কপালে ভাঁজ পরলো।
নীড় : তুমি কি মনের কথাও শুনতে পারো নাকি?
মেরিন : হয়তো…
নীড় : পরশু বিজনেস অ্যাওয়ার্ড শো আছে। আমি জানি আমাদের কোম্পানিই পাবে।
মেরিন : সেটা সময়ই বলে দিবে।
নীড় : তুমি কিন্তু আমার মিসেস হয়ে যাচ্ছো।
মেরিন : তোমার মিসেস হয়ে তোমার সাথে যাবো। কিন্তু খান জাহানের এমডি হয়েই যাবো এবং ওই চেয়ারেই বসবো।
প্রান্তিক : চাচ্চু… চাচ্চু… জানো? মামমামেল চোখে না ইনফেকশন হয়েছে।
নীড় : তাই?
প্রান্তিক : হামম হামম।
নীড় : আমাকে বললেনা কেনো?
মেরিন : তুমি চিন্তা করবে তো তাই বলিনি ডিয়ার।
প্রান্তিক : চাচ্চু তুমি অফিস থেকে এসেছো?
নীড় : হামম।
প্রান্তিক : তাহলে হাতমুখ না ধুয়ে বেডে বসেছো কেনো? মামমাম বলে বাহিরে থেকে এলেই আগে হাতমুখ ধুয়ে নিতে হয়। কারন বাহিরে অনেক জীবানু থাকে।
নীড় : তুমি ‘র’ বলতে পারছো!
প্রান্তিক : হামম হামম। মামমাম শিখিয়েছে। ফ্রেশ হয়ে এসো।
নীড় : শাওয়ারই নিবো। হ্যাপি?
প্রান্তিক : হিহি…

মেরিন প্রান্তিককে পড়াচ্ছে। তখন নীড় গোসল করে টাওয়াল পরে বেরিয়ে এলো। মেরিনের কপালে ভাঁজ পরলো।
মেরিন মনেমনে : বডি দেখাচ্ছে… আহাহা…
নীড় : লাভ…
প্রান্তিক : হ্যা চাচ্চু?
নীড় : কোনো কিছুই লুকিয়ে করা উচিত নয়।
প্রান্তিক : আমি তো কিছু লুকিয়ে করিইনি।
নীড় : তুমি তো গুড বয়।
প্রান্তিক : মামমাম ওয়াশরুমে যাবো।
মেরিন : যাও।
প্রান্তিক ওয়াশরুমে গেলো। নীড় মেরিনের দিকে এগিয়ে এসে একটু ঝুকলো। মেরিন পিছিয়ে গিয়ে নীড়ের বুকে ধাক্কা মেরে সরালো।
মেরিন : লিমিটে থাকো।
নীড় : আমি লিমিটেই আছি। আমি এগিয়ে এলাম তোমার হেল্প করতে। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলে আমাকে। তাই এগিয়ে এলাম যেনো লুকিয়ে না দেখতে হয়।
নীড় আবারো ঝুকলো মেরিনের দিকে। মেরিন আবারো ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে দারালো।
মেরিন : তোমাকে দেখেছিলাম সে দৃষ্টি দেখেছো। কিন্তু দৃষ্টিতে যে বিরক্তি ছিলো সেটা দেখোনি? হামম।
নীড় মেরিনের কোমড় ধরে কাছে টেনে নিলো।
নীড় : সদ্য বিবাহিত তো। তাই বউয়ের চোখই নজরে পরে। সাথে আরো অনেক কিছুই পরে। ঠোঁট , নাক , গাল , কপাল…
মেরিন নীড়ের হাটুতে লাথি দিলো। নীড় পিছিয়ে গেলো।
মেরিন : কিকটা মনে রেখো। তুম…
মেরিন থেমে গেলো। কারন নীড়ের বুকের বা পাশে নীড়-মেরিন নামের ট্যাটু আছে। দেখে বাকা হাসলো।
মেরিন : আসলে সবাইযে নিজের আচরণ সামনের জনের ওপর চাপায়।
নীড় : কিসের মধ্যে কি?
মেরিন এক হাত নীড়ের গলা জরিয়ে ধরে অন্য হাতো বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে ট্যাটুতে স্লাইড করতে করতে
বলল : ট্যাটুটা খুব সুন্দর। মেরিন মানেই সুন্দর। তাইনা হানি?
বলেই মেরিন সরে এলো। নীড়ের তো এই ট্যাটুর কথা মনেই ছিলোনা।
নীড় : খুশি হওয়ার কারন নেই। এটা ভুলের সময় করানো। এটাকে মিটিয়ে দেইনি। কেনো জানো? কারন এটা বারবার আমাকে মনে করিয়ে দেয় যে ভুল করেছিলাম আমি। এই ভুল যেনো দ্বিতীয়বার না করি তাই এটাকে স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি।
মেরিন : নাইস এক্সকিউজ!
নীড় : এক্সকিউজ!
মেরিন : ইয়াহ। সরাসরি বলে দাওনা কেনো মেরিন বন্যা তোমার ক্রাশ। এখনো ভুলতে পারোনি। তাই আজও বিয়ে করোনি। আমার তো মনেহয় এসব কিছু তোমার প্ল্যান ছিলো। তুম…
প্রান্তিক বেরিয়ে এলো।
প্রান্তিক : মামমাম আমার ক্ষুধা লেগেছে। আমি দীদুর কাছে গেলাম। দীদু পুডিং বানিয়ে রেখেছে।
মেরিন : যাও।
প্রান্তিক দৌড়ে চলে গেলো।
মেরিন : কি যেনো বলছিলাম? মনে পরেছে। তোমার প্ল্যানি ছিলো সব। প্রানের কাস্টডি নেয়া থেকে খান এবং মিসেস খানের অ্যাক্সিডেন্ট করানো , আমাকে এখানে আনা , আমার রেপ করা , আমার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে ম্যারেজ রেজিস্ট্রি পেপারে আমার সিগনেচার নেয়া। এন্ড ফাইনালি বউ বানিয়ে এখানে আনা। নাইস প্ল্যানিং।
বলেই মেরিন দরজা পর্যন্ত গেলো। দরজা খুলতেই নীড় ধপাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো। ওকে দরজার সাথে চেপে ধরলো।
নীড় : নিজেকে খুব বেশি সুন্দরী এবং গুরুত্বপূর্ন মনে করো তাইনা?
মেরিন : আমি কি সেটি তুমিই ভালো জানো। সরো। নিচে যাবো আমি।
নীড় : নট নাউ। রেপ… রেপ… রেপ… এটা তুমিও জানো আর আমিও জানি যে আমি তোমার সাথে কিছু করিইনি। যাকে স্পর্শ করতে আমার ঘৃণা হয় তার সাথে আমি এমন কিছু করবো? নট অ্যাট অল। যে নারী লিভইনে থাকে তাকে স্পর্শ করার কথা আমি কল্পনাও করতে পারিনা।
মেরিন : জেলাসি এন্ড রিগ্রেট ইজ ক্লিয়ার। ভালো লাগলো এটা দেখে।
নীড় : রিগ্রেট তো হয় এই চেহারাটাকে একদিন পছন্দ করেছিলাম বলে। চেহারার আড়ালে যে কুৎসিত মন ছিলো সরি… কুৎসিত মন আছে সেটা কে জানতো?
মেরিন : ভালো ভালোর দিকে যায় এবং খারাপ খারাপের দিকে যায়। তাই তুমি আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছো। তুমিও খারাপ আমিও খারাপ। রতনে রতন চেনে । বিগ ডিল।
নীড় রেগে তাকিয়ে আছে। ও নীড়কে সরিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।

.

পরদিন…
নীলিমা : তুমি রান্নাঘরে কি করছো?
মেরিন : রান্না করছি।
নীলিমা : বের হও রান্নাঘর থেকে।
মেরিন : মাম্মিজি… আমি তোমার ছোটছেলের বউ। তোমর ছোট্ট বউমা। ছোট বউরানী। এই সবকিছুর ওপর আমার অধিকার আছে। বাসার ওপর , তোমাদের সকল প্রোপার্টির ওপর। তো সবকিছুতে যখন অধিকার আছে তখন কিচেনের ওপরেও আছে।
নীলিমা : তোমাকে বউ হিসেবে মানিনা। মানা না মানার চেয়েও বড় কথা হলো এই যে , তুমি নীড়ের বউ নও। তুমি নীড়ের সাথে খেলা খেলেছো তাই নীড়ও খেলার বিপরীতে অন্য খেলা খেলেছে।
মেরিন : নীড়ের খেলার ছলে যে আমি বাড়ির বউ হয়ে গিয়েছি সেটার কিছু করার নেই। তাই রাজত্ব তো আমি করবো। কারো ক্ষমতা নেই এই কিচেন থেকে আমাকে বের করার। বিরক্ত করবেন না। আমাকে কেউ বিরক্ত করলে সেটা আমার মোটেও পছন্দ হয়না। তুমি আমার সাসুমম বলেই কিছু বললাম না।
বলেই মেরিন রান্নায় মন দিলো।
নীড় : তুমি আমার বাসায় দারিয়ে আমার মায়ের সাথে এভাবে কথা বলছো? তোমার সাহস হয় কিভাবে?
মেরিন : জানু… যা তোমার সেটাই আমার। আজকে ইচ্ছা হয়েছে রান্না করার এবং সবাইকে খাওয়ানোর।
নীড় : তুমি ভাবলে কি করে যে তোমার হাতের রান্না আমি এবং আমরা খাবো?
মেরিন : প্রান… প্রান…
নীড় : প্রানকে কেনো ডাকছো? এখন ওর কাছে বিচার দিবে? হামম?
প্রান্তিক ছুটে এলো।
প্রান্তিক : রান্না শেষ মামমাম?
মেরিন : প্রায় বাচ্চা।
প্রান্তিক : ইয়াম্মি ইয়াম্মি স্মেল।
মেরিন : থ্যাংক ইউ। খাওয়ার আগে কি করতে হয় সবাইকে?
প্রান্তিক : সবাইকে হাত ধুয়ে নিতে হয়।
মেরিন : তাহলে কি করবে তুমি?
প্রান্তিক : বুঝতে পেরেছি। চাচ্চু , দীদু চলো হাত ধুয়ে নিবে। দাদুভাই… ও দাদুভাই।
নিহাল ছুটে এলো।
নিহাল : কি হলো?
প্রান্তিক : চলো আমাদের সাথে।
নিহাল : কোথায়?
প্রান্তিক : হাত ধুতে।
নিহাল : হাত ধুতে মানে?
প্রান্তিক : মানে আমরা সবাই এখন একসাথে খাবার খাবো। মামমাম রান্না করেছে।
নিহাল মেরিনের দিকে তাকালো। সকলের মুখে আতঙ্ক দেখে মেরিনের খুব আনন্দ হচ্ছে।
মেরিন : বাচ্চা… তুমিই হাত ধুয়ে এসো। বাকিরা কেউ মামমামের রান্না হয়তো খাবেনা। মামমামের হাতের রান্না মজা নয় তো। তাই হয়তো খাবেনা।
প্রান্তিক : মামমামের রান্না খুব মজা। সত্যি বলছি। চলো চলো চলো । হাত ধুবে চলো।
প্রান্তিক সবাইকে টেনে নিয়ে গেলো। এরপর টেনে টেবিলে বসালো।
নীড় মনেমনে : আবারো প্রানকেই ইউজ করলে। তোমাকে বিশ্বাস করে তোমার হাতের খাবার তো খাওয়া সম্ভব না।
মেরিন খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে। নীড় মেরিনের হাত ধরে টেনে পাশের চেয়ার বসালো।
মেরিন : কি হলো?
নীড় : তোমাকে রেখে খাই কিভাবে বলো? একসাথে খাবো। একই প্লেটে খাবো। চুপটি করে বসো।
নীড় খাবার মেরিনের মুখের সামনে ধরলো। নীড়ের চোখ যেনো মেরিনকে বলছে যে তোমার বিষ তুমিই আগে খাও।
নীড় : কি হলো? হা করো।
মুচকি হেসে মেরিন খাবারটা মুখে নিলো। প্রান্তিক তালি দিলো। এরপর মেরিন নীড়ের মুখের সামনে খাবার তুলে ধরলো।
মেরিন : হানি… হা করো।
নীড় তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
মেরিন : কি হলো? হা করো।
নীড় হা করলো মেরিন খাইয়ে দিলো। প্রান্তিক তালি দিলো।
মেরিন : মামনি-বাবা… খেয়ে নাও।
সবাই খাবার খেতে শুরু করলো।
প্রান্তিক : মামমাম… খুব মজা হয়েছে।
মেরিন : থ্যাংকস বাচ্চা।
প্রান্তিক : দাদুভাই , দীদু… খাবার কেমন?
নিহাল : খুব মজা।
প্রান্তিক : বলেছিলামনা মামমাম মজা করে রান্না করে।
নীড় মনেমনে : কিছু করছেনা নাকি করতে চাইছেনা?
মেরিন মনেমনে : করবো করবো। এতো তারাতারি কিসের? প্রথমবার তারাহুড়ো করে ভুল করেছি। আর নয় এক ভুল।

.

লিও : কালকে অ্যাওয়ার্ড ফাংশন। কালকেই হবে ওর জীবনের শেষ দিন। শ্যুট করা হবে।
○ : কাকে শ্যুট করা হবে?
লিও : যে অ্যাওয়ার্ড পাবে তাকেই শ্যুট করা হবে।
○ : মানে?
লিও : মানে জিজ্ঞেস করার কারনটা কি? যে অ্যাওয়ার্ড পাবে তাকেই শ্যুট করা হবে।
○ : কালকে তো যে কেউ অ্যাওয়ার্ড পেতে পারে। তবে নীড় আহমেদ চৌধুরী বা মেরিন বন্যা খানের অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।
লিও : মূর্খ… এই দুজনের থেকেই একজন পাবে।
○ : কে পাবে আর কাকে শ্যুট করা হবে?
লিও : আর এই নাটস? বললামই তো যে অ্যাওয়ার্ড পাবে সেই মরবে।
○ : আপনি কি এটা জানেন না যে কে অ্যাওয়ার্ড পাবে?
লিও : চাইলেই জানতে পারি। কিন্তু জানবোনা।
○ : কেনো? জানতে পারলেই তো ভালো। কাকে শেষ করবেন বুঝে যাবেন।
লিও : এই অ্যাওয়ার্ডটা আমার কাছে লটারির মতো। যে পাবে সেইই মরবে। এটাই একটা ফান।

.

পরদিন…
মেরিন আয়নার সামনে বসে রেডি হচ্ছে। বিছানার ওপর পোশাকটা রাখা। নীড় রুমে ঢুকলো। কাবার্ডের দিকে যাওয়ার সময় বিছানার ওপক পরে থাকা কালো গাউনটা চোখে পরলো। স্লিভলেস। কল্পনা করলো মেরিনকে। মেজাজটা বিগরে গেলো।
নীড় : এই ব্ল্যাক গাউনটা যেনো না পরা হয়। উইনারের ওয়াইফ হয়ে যাচ্ছো। রেড অথবা ওয়াইট পরো।
মেরিন : উইনারের ওয়াইফ নয়। উইনারই হবো।
নীড় : গ্রেট। তাহলে তো কালো রঙ আরো আগে পরিত্যাগ করা উচিত।
মেরিন : ব্ল্যাক ইজ লাকি ফর মি।
নীড় : প্রানকে তুমি একা ইউজ করতে পারোনা। আমিও পারি। আজকের ফাংশনে ও যাচ্ছে আমাদের সাথে। ওকে বলা হয়ে গিয়েছে যে আমরা তিনজন সেইম রঙের পোশাক পরে যাবো। অর্থাৎ সাদা রঙের।
মেরিন : আমি এটাই পরবো।
নীড় ড্রেসটা হাতে নিলো।
নীড় : এটাই পরবে?
মেরিন : অফকোর্স।
নীড় লাইটার বের করে সেটাতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হলো।
মেরিন : কি করলে তুমি এটা?
নীড় : দেখতে পাওনি?
মেরিন : জ্বলছো নাকি? তোমার বউকে স্লিভলেস পোশাকে বাকিরা দেখবে সেটা তোমার সহ্য হবেনা।
নীড় : বউ মাই ফুট। কিছুক্ষনের মধ্যেই সাদা শাড়ি হাতে পেয়ে যাবে। আমারটাও আসছে। প্রানেরটাও আসছে।
বলেই নীড় বেরিয়ে গেলো। মেরিন বাঁকা হাসলো।
মেরিন : আমি এমনিতেও এই গাউনটা পরতাম না লুজার চৌধুরী। এটা রাখা তো অন্য কারনে। এটা ছিলো তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য। আমি যেমনটা চেয়েছিলাম তুমি তেমনটাই পরীক্ষা দিয়েছো। থ্যাংক ইউ সো মাচ হানি।
ও জনকে কল করলো।
জন : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন : অ্যাওয়ার্ড নিয়ে যাওয়ার স্টেজ থেকে নামার সময় আমাকে শ্যুট করাবে। মানে যে প্ল্যানটা হয়েছে সেটাই লক করা হোক।
জন : ম্যাম… আপনি আহত হবেন।
মেরিন : জন… গুলিটা নকল হবে।
জন : রাবার বুলেটে ব্যথা তো পাওয়া যায় ম্যাম।
মেরিন : ব্যাপার না। রাখছি।
মেরিন রেখে দিলো।

নীড়-প্রান্তিক নিচে দারিয়ে মেরিনের অপেক্ষা করছে।
নীলিমা : দেখি নীড়… মিষ্টি মুখে দিয়ে যাও। তুমিই জয়ী হবে।
নীড় : আমি এসব মানিনা। ভুলে যাওয়ার তো কথা নয়।
মেরিন নিচে নেমে এলো। নীড় ওর দিকে তাকালো। কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে চোখ ঘুরিয়ে নিলো। নীড় প্রান্তিকের পাশে দারালো। নিহাল তিনজনকে দেখছে।
নিহাল মনেমনে : কি চমৎকার লাগছে তিনজনকে! পারফেক্ট ফ্যামিলি। মেরিনতো নীড়ের যোগ্য স্ত্রী। না না… কি সব ভাবছি আমি? মেরিন যে মিথ্যা নাটকটা সাজিয়েছিলো সেটাতো মারাত্মক। কিন্তু সেটা নিয়েও তো ধোয়াশা রয়েছে।নীড়ের তো সেই রাতের কথা কিছু মনেই নেই। নীড়ের দোষ থাকলে থাকতেও পারে।
প্রান্তিক : বাই বাই দাদুভাই , দীদু।
মেরিন : আসছি মামনি। আসছি বাবা।
তিনজন বের হলো। জন ড্রাইভ করছে পাশে আছে পিটার। পেছনে নীড়-মেরিন-প্রান্তিক বসে আছে। দুজনের মাঝখানে আছে প্রান্তিক। নীড় অবাধ্য মনটা চাইছে মেরিনকে অপলক দেখার। কিন্তু মনের কথা শোনা যাবেনা। তাই তাকাচ্ছেনা। না তাকানোর ফলে ভীষন অস্বস্তি হচ্ছে। প্রান্তিক-মেরিন টুকটাক কথা বলছে। কিছুক্ষনের মধ্যের ওরা ভেন্যুতে পৌছালো। অনুষ্ঠান শুরু হলো। ওদের তিনজন এক সাথে বসে আছে। অবশেষে বিজয়ী কোম্পানির নাম ঘোষনা করা হলো। জয়ী হলো মেরিনদের কোম্পানি। মেরিন নীড়ের দিকে তাকালো। নীড়ও মেরিনের দিকে তাকালো।
মেরিন : নো বলে ছক্কা।
প্রান্তিক : ইয়ে… কংগ্রাচ্যুলেশন মামমাম।
মেরিন : থ্যাংকস কলিজা।
মেরিন স্টেজের দিকে পা বারালো।

লিও : হ্যালো…
● : ইয়েস বস।
লিও : মেরিন বন্যা খান পেয়েছে অ্যাওয়ার্ড?
● : ইয়েস বস।
লিও : শ্যুট করে দিবে।ঠিক তিন মিনিট পর।
● : ইয়েস বস। আমি রেডি হয়েই ছিলাম। আপনার কলের অপেক্ষায় ছিলাম।
লিও রেখে দিলো।
লিও : একজন শত্রুর সমাপ্তি উঠে হতে যাচ্ছে।

জন মনেমনে : এই শ্যুটার এখনই কেনো বন্দুক তাক করেছে? কারো চোখে পরে যাবে তো। ম্যাম তো মাত্রই স্টেজে উঠলেন।
জন ওর হায়ার করা শ্যুটারকে কল করলো।
জন : হ্যালো…
শ্যুটার : ইয়েস।
জন : এখনই কেনো বন্দুক তাক করেছো? ম্যাম স্টেজ থেকে নামার সময় শ্যুট করবে। ম্যামের স্পিচ শেষ হলে রেডি হবে।
শ্যুটার : সেটাই তো করবো। মনে আছে তো আমার। তাই আমি এখনও কিছুই করিনি।
জন : আছো কোথায় তুমি?
শ্যুটার : আপনার লেফ্ট দিকে। ওপরে দেখুন।
জন বাম দিকে ঘুরলো। ঘুরে শ্যুটারকে দেখলো।
জন : ওহ নো… ম্যাম।
জন এক পা বারাতেই গুলি চলার শব্দ পাওয়া গেলো।
প্রান্তিক : মামমাম…

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 19
writer : Mohona
(do not copy please)

.

প্রান্তিক : মামমাম…
মেরিন ঘটনা বুঝে ওঠার আগে সব ঘটে গেলো। ও কেবল এক হাতে টান অনুভব করেছিলো। গুলি ওর দিকে চালানো হয়েছিলো। কিন্তু সবাই যে গুলির শব্দ সবাই শুনেছে সেটা নীড় করেছে। নীড় লিও গ্যাং এর সদস্যকে শ্যুট করেছে। শ্যুটারের বন্দুকে তো সাইলেন্সার লাগানো ছিলো। নীড় মেরিনকে এক হাত দিয়ে আগলে রেখে অন্য হাত দিয়ে গুলি করেছে। মেরিন এখনো নীড়ের বাহুডোরেই আছে।
মেরিন মনেমনে : জন কোন স্টুপিডকে হায়ার করেছিলো? আমি স্টেজ থেকে নামার সময় শ্যুট করার কথা ছিলো। আগে কেনো করতে গেলো? পুরো প্ল্যানটা ফ্লপ হলো।
প্রান্তিক ভয়ে ওদের দুজনের দিকে দৌড় দিলো। নীড় পিস্তলটা পেছনে রেখে ওই হাত দিয়ে প্রান্তিককে কোলে নিলো। অন্য হাত দিয়ে মেরিনকে ধরে রেখেছে।
জন : ম্যাম আপনি ঠিক আছেন?
নীড় : কেমন বডিগার্ড তুমি?
মেরিন : শাট আপ।
জন : সরি ম্যাম।
মেরিন : কি ভেবে কি করো কে জানে? চেহারাটা তোলো। দেখি মুখের আকৃতি।
এগিয়ে যেতে নিলে বুঝতে পারলো যে ওর হাতটা নীড়ের হাতে বন্দি।
মেরিন : হাত ছারো।
নীড় : পিটার… লোকটার চেহারা দেখো তো। আই থিংক স্টিল অ্যালাইভ।
পিটার শ্যুটারের চেহারাটা দেখালো।
নীড় : হামম। হসপিটালে নিয়ে যাও। অরগ্যানাইজরকে তো স্যু করা উচিত। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থার্ড লেভেলের ছিলো।
প্রান্তিক নীড়কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে রেখেছে। নীড় দুজনকে নিয়ে স্টেজ থেকে নেমে গাড়ির দিকে যাচ্ছে। সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলো। শতশত প্রশ্ন করতে লাগলো। কে হতে পারে , কেনো হতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি।
মেরিন : একটা বাচ্চা ভয় পেয়ে আছে। আতঙ্কে আছে সেটা চোখে পরছেনা আপনাদের? সরুন।
ওরা গাড়ির কাছে যেতে না যেতেই নিহাল-নীলিমা গাড়ি নিয়ে পৌছালো। শমসের খানও পৌছালো। শমসের খান তো মনে করছে এটা নকল শ্যুটার। তবুও অভিনয়টা সুন্দর করার জন্য সে এসেছে।
শমসের : দিদিভাই তুমি ঠিক আছো তো?
মেরিন : হামম।
শমসের : জন… আজকাল তোমার খেয়াল কোথায় থাকে?
জন : সরি স্যার।
নীলিমা : প্রান ঠিক আছে?
নীড় : হামম। একটু ভয় পেয়ে আছে।
নিহাল : দেখি প্রানকে দাও। দাদুভাই… এসো তো দেখি।
প্রান্তিক নীড়কে শক্ত করে ধরে রাখলো।
নীড় : থাক আমার কাছে থাক।
শমসের : নীড়… এটার পেছনে যদি তুম…
নীড় : আমার প্ল্যান এতো দুর্বল হয়না। আর কাউকে হায়ার করারও প্রয়োজন পরেনা। আমার এইম খুব ভালো। তুমি কি আমাদের সাথে বাসায় যাবে নাকি খান বাড়িতে যাবে?
শমসের খান প্রান্তিকের মাথায় চুমু দিয়ে গিয়ে নিজের গাড়িতো বসলো। ওরাও গাড়িতে বসলো। এবার ড্রাইভিং সিটে বসলো পিটার। পাশে বসে আছে জন।
মেরিন : প্রান… কলিজা… দেখিতো বাচ্চা। কাঁদছো কেনো?
মেরিন প্রান্তিককে কোলে নিলো। ও মেরিনকে আকড়ে ধরলো।
প্রান্তিক : আমার ভয় করছে মামমাম…
নীড় : ভয় পেলে হবে? হামম?
মেরিন : চাচ্চু তোমাকে ক্যারাটে শিখাচ্ছে। কতোটা শিখে গিয়েছো তুমি! এটা দেখে ভয় পেলে হবে!
প্রান্তিক কান্না করতে লাগলো। নীড়-মেরিন ওকে সামলাতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে প্রান্তিক ঘুমিয়ে পরলো।
মেরিন : প্রানকে আর সচরাচর বের করা যাবেনা।
নীড় : সিংহ কখনো ভয়ে লুকিয়ে থাকেনা।
মেরিন : ও একটা বাচ্চা।
নীড় : এখন থেকে যদি ওর ভয় দূর না করা হয় তাহলে ভয় কাটবেনা। ভীতু হয়ে যাবে।
মেরিন : মাছের পোনাকে সাতার , পাখির ছানাকে উড়া এবং সিংহের বাচ্চাকে শিকার শেখাতে হয়না। সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নীড় : আমি ওর অফিশিয়াল গার্ডিয়ান। তাই ডিসিশন আমিই নিবো। তুমি নও।
মেরিন : প্রানকে নিয়ে কোনো রিস্ক আমি নিতে দিবোনা।
নীড় : প্রানের বিষয়ে আমি কারো মাথা ঘামানো সহ্য করবোনা।
ওরা বাসায় পৌছালো।

.

নীলিমা : ওই মেয়েটাকে কেনো বাঁচাতে গেলে তুমি? মরতে দিতে।
নিহাল : কি যা তা বলছো তুমি?
নীলিমা : কোনো যাতা বলছিনা। যা বলছি ঠিক বলছি। কেনো বাঁচালে? মরতে দিতে ওকে।
নীড় : ওকে মারলে আমি মারবো। অন্য কেউ না। ওকে শ্যুট করা হলেও আমিই করবো। অন্য কেউ নয়।
নীলিমা : আমার তো মনেহচ্ছে অন্য কিছু। বিয়ের পর বউকে ভালোবেসে ফেলেছো। সেই কারনেই তুমি ওর প্রতি দু্র্বল হয়ে পরেছো।
নীড় : যা ভাবার ভাবো। আই ডোন্ট কেয়ার।
বলেই নীড় ওপরে উঠলো।

মেরিন : কি বলছো কি জন?
জন : ইয়েস ম্যাম। আমাদের শ্যুটার তো তখন পজিশনও নেয়নি। ও তো লেফ্ট সাইডে ছিলো।
মেরিন : হামম। খোঁজ লাগাও যে ওটা কে?
জন : জী ম্যাম।
মেরিন : আমার সিক্সথ সেন্স বলছে যে শ্যুটারটা লিও গ্যাং এর সদস্য।
জন : এটা মনে হওয়ার কারন?
মেরিন : এটাই হবে। লুজার চৌধুরী এমনটা করতে পারেনা। আমার চোখে সে হিরো হওয়ার চেষ্টা করবেনা। কারন সেটাতেও ফলাফল শূন্য হবে। শ্যুটারটা বেঁচে আছে। লিও হয়তো ওকে মেরে ফেলবে না হয় ওকে তুলে নিবে। তবে এর আগে লিও ওকে তুলে নিক বা মেরে ফেলুক তুমি ওকে তুলে নাও। অনেক তথ্য আছে ওর পেটে।
জন : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন রেখে দিলো। প্রান্তিক ঘুমিয়ে আছে।
মেরিন : একটু পোক করে আসি লুজার চৌধুরীকে।

নীড় বসেবসে ড্রিংকস করছে। কারো আভাস পেলো।
নীড় : এটা আমার পার্সোনাল স্পেস। আমার অনুমতি ছারা কেউ এখানে আসেনা।
মেরিন : আমি কারো অনুমতির পরোয়া করিনা। আমাকে মারার চেষ্টা করে ফের বাঁচানোর সাইন্সটা বুঝলাম না।
মনেমনে : নেশা করছে। কোনোভাবে যদি রাগিয়ে এর ফোনের পাসওয়ার্ডটা নেয়া যায় তাহলে ভালো হবে।
নীড় : তোমাকে শ্যুট করার হলে বা মেরে ফেলার হলে এখনো পারি।
বলেই মেরিন পায়ের দিকে ফাঁকা গুলি করলো। মেরিন নিজের জায়গা থেকে এক চুলও নরলোনা।
নীড় : তোমাকে শেষ করার চেয়ে তোমাকে হারানোর আনন্দ বেশি।
মেরিন : হলেও হতে পারে আমার চোখে হিরো সাজার জন্য এমনটা করেছো। কারন এতোদিন তো লুজার হয়েই আছো আমার কাছে।
নীড় হাহা করে হাসতে লাগলো।
নীড় : ইন ইউর ড্রিম।
মেরিন : এই হাসি তোমার আসল অনুভূতি আড়াল করতে পারবেনা।
নীড় হাসি বন্ধ হয়ে গেলো।
নীড় : তুমি নিজেকে খুব সুন্দরি ভাবো। তাইনা?
মেরিন : নট অ্যাট অল। সেটা আমি ভাবিনা। আমি সেটাই । আর এটা আমার চেয়ে ভালো তুমি জানো।
নীড় গ্লাসে চুমুক দিতে নিলে মেরিন এসে গ্লাসটা ধরলো।
নীড় : ছারো।
মেরিন : আমার হাত ছেরেছিলে? বলার পরও ছারোনি। কতো ভালোবেসে ধরেছিলে আমার হাত… উফফ…
নীড় মেরিনের ডানহাত ধরলো।
নীড় : চোখে কি ছানি পরেছে? হামম? হাতটা লাল হয়ে আছে। দাগ পরে গিয়েছে।
মেরিন : এটাই তো লাভ ল্যাংগুয়েজ। ওয়াইল্ড লাভ। তোমার আমার তো আর রোম্যান্টিক লাভ হবেনা।
নীড় মেরিনের হাত ছেরে ওর গাল চেপে ধরলো।
নীড় : মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে? পাগলের প্রলাপ কেনো করছো?
মেরিন নীড়ের হাত সরিয়ে অন্য একটা গ্লাস নিলো।
মেরিন : কি করবো বলো? আমি এলাম এখানে। কিন্তু তুমি আমাকে ওয়াইন , হুইসকি , ভডকা , রাম কিছুই অফার করলেনা। তাই একটা পাগলের প্রলাপ করলাম।
নীড় ওর চুলের পেছনে ধরে খানিকটা সামনে আনলো।
নীড় : গেট লস্ট।
মেরিনের চোখ নীড়ের মোবাইলের ওপর।
মেরিন : তোমার একটা সিক্রেট জানি আমি।
নীড় : ততোমার কিছু জানাতে আমার কিছু যযায় আসেনা…
মেরিন : আমাকে কাছে টেনেই তোমার কথা আটকে যাচ্ছে… প্রথম ভালোবাসা ভোলা যায়না। হাজার হলেও মানুষ তো…
নীড় : আই হেইট ইউ মেরিন…
মেরিন দেখলো যে নীড়ের ফোনটা জ্বলে উঠলো।
মেরিন মনেমনে : আরে আরে আরে… কি হলো এটা? ফোনটা জ্বলে উঠলো। আনলক হলো মনেহচ্ছে। এরমানে ফোনে ভয়েস কোড দেয়া। চেয়েছিলাম পাসওয়ার্ড পেয়ে গেলাম ভয়েস কোড। নাইস।
নীড় : শুনেছো আমার কথা ?
মেরিন নীড়ের আরো একটু কাছে গেলো।
মেরিন : শুনেছি। আমাকে ঘৃণা করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
মেরিন এতো কাছে আসাতে এবার সত্যিই নীড়ের সবটা গুলিয়ে যাচ্ছে। মেরিন এবার সরে আসতে চাইলেও লাভ হলোনা। নীড় ওকে ধরে রেখেছে।
মেরিন : তুম…
নীড় মেরিনের ঠোঁটজোরা দখল করে নিলো। মেরিন নিজেকে সরাতে চাইলেও লাভ হলোনা। নীড়কে লাথি দিয়ে সরাতে পারছেনা। নীড় মেরিনের কাধে হাত রাখলো। আঁচলে হাত দিলো। মেরিন হাত সরানোর চেষ্টা করলো তবুও লাভ হলোনা। একটু পর নীড় নিজেই ওকে ছেরে দিলো। মেরিন থাপ্পর দিতে নিলে নীড় ওর হাত ধরে ফেলে ওকে উল্টো ঘুরিয়ে নিজের কাছে টেনে নিলো।
নীড় : আমায় নিয়ে খেলতে এসোনা। আমার কাছে তুমি শূন্য। তোমার ভাগ্য ভালো যে আমি তোমাকে ঘৃণা করি , তোমার উপস্থিতি ঘৃণা করি , তোমাকে স্পর্শ করতে ঘৃণা করি। না হলে যে মিথ্যা অপবাদ লাগিয়েছো সেটা সত্য করে দিতাম। কিন্তু করিনি। কারন তুমি অপবিত্র একটি মেয়ে। নাউ গেইট লস্ট।
বলেই মেরিনকে ধাক্কা দিয়ে সরালো।
মেরিন : ধন্যবাদ হাবি আমাকে ঘৃণা করার জন্য।
বলেই মেরিন হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেলো।
নীড় : শেইমলেস গার্ল।
মেরিন গিয়ে প্রান্তিকের পাশে শুয়ে পরলো।
মেরিন মনেমনে : লুজার চৌধুরীর মুখ থেকে আই হেইট ইউ মেরিন বের করে রেকর্ড করতে হবে। এরপর রাতে ঘুমানোর সুযোগ নিয়ে ফোন আনলক করে। আপুর বেডরুমে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট কালেক্ট করতে হবে। সেটার ফুটেজ ফোন থেকে ডিলিট করতে হবে। স্টুপিড চৌধুরী।

.

লিও : উফফ… বেঁচে গেলো ওই মেরিন বন্যা খান। নীড় কি মেরিনের প্রেমে ট্রেমে পরে গেলো নাকি যে ওকে বাঁচালো। তাও নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে। পজিশন এমন ছিলো যে ওর গায়েও লাগতে পারতো মেরিনকে বাঁচাতে যেয়ে। হঠাৎ করে প্রেম জাগ্রত হলো। ডিজগাস্টিং।
○ : এখন কি হবে বস?ও তো বেঁচে গিয়েছে।
লিও : নীড় অমন করেই শ্যুট করেছে যেনো না মরে। হসপিটালে অ্যাডমিট করেছে।
○ : ও যদি সব বলে দেয়?
লিও : কি বলবে বলো? বড়োজোর এটা জানবে যে লিও করিয়েছে কাজটা। লিওকে তো ওই শ্যুটারও কখনো দেখেনি। যাইহোক , ওই শ্যুটারকে মরতে হবে। আমি চাইনা কেউ দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলুক। শেষ করার ব্যবস্থা করো। ও যেনো সকালের মুখ দেখুক।
○ : ইয়েস বস।
সে চলে গেলো।
লিও : কি করি? মরলোনা একটাও শত্রু। এতোদিনই কাজটা করা উচিত ছিলো। এখন তো ওদের প্রানকে কেড়ে নেয়া আরো কষ্টের হবে।

.

সকালে…
মেরিন প্রান্তিকের কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর। জ্বর মেপে দেখলো ১০৩° জ্বর।
মেরিন : ওহ নো… ওর দেখি অনেক জ্বর… বাচ্চা… বাচ্চা… লুজারটা মাতাল হয়ে পরে আছে। হ্যালো জন…
জন : ইয়েস ম্যাম…
মেরিন : ডক্টর নিয়ে এসো। প্রানের ভীষন জ্বর।
জন : ইয়েস ম্যাম।
কিছুক্ষনের মধ্যেই জন ডক্টর নিয়ে চলে এলো। কিন্তু নিহাল যেতে দিবে না। মেরিন নিচে নেমে এলো।
মেরিন : ডক্টরকে ওপরে যেতে দিচ্ছেন না কেনো? প্রানের জ্বর এসেছে।
নিহাল : নীড়ের অনুমতি ছারা আমি কোনোক্রমেই কোনো ডক্টরকে প্রানের কাছে যেতে দিবোনা।
মেরিন : আপনার ছেলে ড্রাংক হয়ে পরে আছে। ঘুম… ডেকে তোলাল হলেও হ্যাংওভার চলে যাবে অনেকটা সময়। আমি এতোটা সময় প্রানকে অসুস্থ অবস্থায় থাকতে দিবোনা। জন… এনাদের হ্যান্ডেল করো। ডক্টর রবি আসুন।
মেরিন ডক্টর রবিকে নিয়ে গেলো। রবি প্রান্তিককে দেখলো।
রবি : বৃষ্টিতে ভিজেছিলো?
মেরিন : না। আসলে একটু ভয় পেয়েছিলো।
রবি : মনেহচ্ছে ভয়ের পরিমানটা অনেক বেশিই ছিলো।
মেরিন : হামম।
রবি : মেডিকেল হিস্ট্রি দেখতে পারি?
মেরিন বের করে দিলো। রবি দেখলো।
রবি : কয়েকদিন আগেও দেখি জ্বর এসেছিলো।
মেরিন : সেটাও ভয় পেয়ে হয়েছিলো।
রবি : আচ্ছা আমি তিনদিনের ঔষধ দিয়ে গেলাম। প্রতি ৩ঘন্টা পরপর জ্বর মেপে নিবেন।যদি কমে গেলো তাহলে তো ভালোই। না হলে কিছু টেস্ট করতে হবে। যদিও আমার মনেহচ্ছে যে ভয়টা অনেক গভীর। তাই এমন হয়েছে।
মেরিন : কি করা যায় বলুন তো?
রবি : চেষ্টা করবেন যেনো এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আর না হয়।
মেরিন : হামম।
রবি : ঔষধগুলো সময়মতো খাওয়াবেন।
মেরিন : অবশ্যই।
ডক্টর রবি চলে গেলো।
নীলিমা : দেখি কোন ঔষধ দিয়েছে? কোনো খারাপ ঔষধ কিনা?
মেরিন : একেবারে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিবো বলে দিচ্ছি। প্রানের কথা না হলে না এতোক্ষনে শেষ করে দিতাম। দেখি সরুন ওকে জ্বরের পোশাক ছারাতে দিন।
নীলিমা : আমি হেল্প করছি।
মেরিন : তুমি তোমার ছেলেকে তোলো। তেতুল গুলে নিয়ে যাও।

নিহাল নীড়কে ঘুম থেকে তুলল। নীড়ের প্রচন্ড মাথাব্যথা করছে।
নীড় : তুমি এই ঘরে কেনো এসেছো?
নিহাল : আসতাম না তোমার এই ঘরে। বাধ্য হয়েই এসেছি। প্রানের জ্বর এসেছে। মেরিন ডক্টর এনেছে। আমাদের বাধা না শুনে ডক্টর ওপরে নিয়ে গেলো।
নীড় ছুটে ঘরে গেলো। দেখে মেরিন প্রান্তিককে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে। নীলিমা পানির গ্লাস নিয়ে বসে আছে।
নীড় : প্রান…
মেরিন : ইউ আর ড্রাংক। সো ইউ আর স্টিংকিং।ফ্রেশ হয়ে এসো। প্রান আরো অসুস্থ হয়ে যাবে।
নীড় : কেমন আছে এখন ও?
মেরিন : এখনো যথেষ্ট জ্বর। এই মেডিসিনটা খাওয়ালে বোঝা যাবে।
নীড় : কোন ডক্টরকে এনেছিলে?
মেরিন : ডক্টর রবি।

.

রাতে…
প্রানের জ্বর কমেছে। ১০১°। জন কল করলো।
মেরিন : বলো।
জন : ম্যাম… প্রান কেমন আছে এখন?
মেরিন : সকালের চেয়ে ভালো। ওই শ্যুটারের কি খবর? তুলেছো ওকে?
জন : শ্যুটারকে মেরে ফেলা হয়েছে।
মেরিন : আমি জানতাম এমনটাই হবে। বলেছিলাম ওকে তুলে নিতে।
জন : ম্যাম … ও আইসিইউতে ছিলো। পিটারও ছিলো। আম সিওর যে পিটারও এসেছিলো ওকে তুলে নিতে। ভোর রাতে ওকে মেরে ফেলা হয়েছে। সকালেই আপনাকে বলতাম। কিন্তু প্রান অসুস্থ ছিলো বলেই আমি কিছু বলিনি।
মেরিন : আজকাল তুমি কোনো ভালো খবর দাওনা জন। বাই।
মেরিন রেখে দিলো। নীড় এলো।
নীড় : প্রান কেমন আছে এখন?
মেরিন : ভালো…
নীড় : এমন করে উত্তর দেয়ার কিছু হয়নি।
মেরিন চুপ করে রইলো। নীড় মেরিনের চেহারায় স্পষ্ট ক্লান্তি দেখতে পারছে।
নীড় : তোমাকে টায়ার্ড লাগছে। রেস্ট করো। আমি আছি।
মেরিন : কিয়ামত চলে এসেছে নাকি? আমার ভালোর কথা ভাবছো যে?
নীড় : একটা থ্যাংকস আমার প্রাপ্য তোমাকে বাঁচানোর জন্য।
মেরিন : থ্যাংকস মাই ফুট। আমি ৯০% নিশ্চিত যে এই প্ল্যানিংটা তোমার ছিলো।
নীড় : ১০% বাকি তো আছে।
মেরিন : যদি তোমার প্ল্যানিং নাও হয় তবুও তোমার মাধ্যমে বাঁচার চেয়ে মরে যাওয়া গর্বের।
নীড় : আর কোনোদিন বাঁচাবোনা।
মেরিন : বাঁচানোর মালিক আল্লাহ। তুমি নও।

.

এক সপ্তাহ পর…
প্রান্তিক সুস্থ তো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মনমরা হয়ে থাকে। মনেহয় সারাক্ষন ভয়েভয়ে থাকে। ডক্টর বলেছে কোথাও ঘুরে আসতে। হাওয়া বদল করলে ওর মানসিক অবস্থার উন্নতি হবে।
নীড় : একে লিও তারওপর মেরিন। দুই দিকেই বিপদ। সবাইকে নিয়ে বেরাতে যাওয়া কি উচিত হবে? মামনি-বাবাকে নিয়ে গেলে তাদের খেয়াল রাখবো নাকি প্রানের? লিও অ্যাটাক করবে না মেরিন সেটা বোঝার উপায় নেই। মামনি-বাবাকে যে রেখে যাবো সেটারও উপায় নেই। চিন্তায় শেষ হয়ে যাবো। মেরিনকে নেয়া যাবেনা। ইভেন ওকে জানানোও যাবেনা যে কোথায় যাবো। এটাই ভালো বুদ্ধি। পিটার… পিটার…
পিটার ভেতরে এলো।
পিটার : ইয়েস স্যার?
নীড় : থাইল্যান্ডে যাবো প্রান এবং মামনিবাবাকে নিয়ে। বিষয়টা যেনো গোপন থাকে। কেউ যেনো না জানে।
পিটার : ওকে স্যার। স্যার… মেরিন ম্যাম যাবেনা?
নীড় : মেরিনও যেনো না জানে যে আমরা কোথায় যাচ্ছি। সাবধান।
পিটার : জী স্যার। চেষ্টা করবো।
নীড় : আমি বাসায় যাচ্ছি।

.

রাতে…
সবাই ঘুমিয়ে আছে। মেরিন প্রান্তিককে নিয়ে খুবই খারাপ স্বপ্ন দেখলো। প্রান বলে চিৎকার করে উঠলো। প্রান্তিকের ঘুম না ভাঙলেও নীড়ের ঘুম ভেঙে গেলো। ও উঠে আলো জ্বালিয়ে দিলো।
নীড় : হচ্ছেটা কি এসব?
মেরিন প্রান্তিকের সারামুখে চুমু দিলো।
নীড় : এসব কি নাটক?

.

চলবে…