প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-২০+২১+২২+২৩

0
51

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 20
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নীড় : এসব কি নাটক? ছেলেটার ঘুম ভেঙে যাবে তো।
মেরিন : ভাঙবেনা।
নীড় : এই রাত দুপুরে চিৎকার করে উঠলে কেনো?
মেরিন : কারন আমি প্রানকে নিয়ে খারাপ স…
মেরিন থেমে গেলো।
নীড় : কি হলো? থেমে গেলে কেনো?
মেরিন : তোমাকে বলা বেকার। আর আমার কথা আমি তোমাকে কেনো বলতে যাবো?
মেরিন লাইট নিভিয়ে শুয়ে পরলো।
নীড় মনেমনে : প্রানকে নিয়ে হয়তো খারাপ স্বপ্ন দেখেছে। ভালোই হয়েছে যে ওকে জানাবোও না আর নিবোও না। ও নিজেই তো একটি দুঃস্বপ্ন। ভয়ংকর এক স্বপ্ন।
ভাবতে ভাবতে মেরিনের দিকে তাকালো। প্রান্তিকের ওপর এক হাত দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। নীড় চোখ ঘুরিয়ে নিলো। উঠে বারান্দায় গেলো। সিগারেট ধরালো। মেরিনকে প্রথম দেখার কথা ভাবছে। প্রথম দেখার প্রথম প্রেম। নাম দিয়েছিলো ড্রিমগার্ল। বুকের বা পাশে হাত বুলাচ্ছে। চিনচিন ব্যথা হচ্ছে । বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে। বারান্দার দরজা খোলা থাকাতে ঠান্ডা বাতাস ভেতরে ঢুকছে। মেরিনের ঘুম ভেঙে গেলো। উঠে বসলো। বারান্দায় গেলো।
মেরিন : সমস্যাটা কি? বাচ্চাটা মাত্র জ্বর থেকে উঠেছে। বারান্দায় এসেছে ভালো কথা। দরজাটা লাগালে অসুবিধা কোথায়।
নীড় মেরিনকে কাচে ঠেকালাে। পা দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। মেরিনের মুখের সামনে গিয়ে ধোয়া ছারলো। মেরিন কয়েক সেকেন্ড রেগে তাকিয়ে থেকে হুট করে ওর হাত থেকে জ্বলন্ত সিগারেটটা নিয়ে নীড় বাহুতে লাগিয়ে নিভিয়ে দিলো। নীড় পিছিয়ে গেলো।
নীড় : আর ইউ ম্যাড?
মেরিন : মেয়েদের কাছাকাছি যাওয়ার ক্ষুধা মেটাতে হলে কোনো পতিতালয়ে যাও। কিন্তু আমার থেকে দূরে থাকো।
মেরিন চলে যেতে নিলে নীড় ওর কোমড় জরিয়ে ধরে কাছে টেনে ওর কানেকানে
বলল : বউ থাকতে পতিতালয়ে কেনো যাবো? বউটা তাদের চেয়ে কম কোন দিক দিয়ে?
মেরিন : বউ বানাতে বলেছিলো কে? সাধু পুুরুষদের ভাগ্যে পূন্যবতী স্ত্রীই জোটে। তোমার মতো চরিত্রহীন পুরুষ তো আমার মতো প্রোস্টিটিউট পাবেই। নয় কি?
বলেই মেরিন চলে গেলো।
নীড় নিচে গেলো পোড়া অংশে বরফ ধরতে।
নীড় : কি করছি এসব? কেনো করছি? মেরিনের কাছাকাছি থাকার প্রবল বাসনা কেনো জাগছে? একে তো এই বাসনাটাই নিন্দনীয়। নারীর থেকে দূরে থাকা ভালো। যদি জাগেও তাহলে ওর লিভ ইন রিলেশীপের কথা কেনো মাথায় আসে? এই ভাবনাটা মাথায় আসা তো আমার কাছে অবৈধ। এই ভাবনা আমি আসতে দিতে পারিনা। যেটা ভাবা আমার জন্য নিষিদ্ধ আমি সেখানেই বারবার আটকে যাচ্ছি। ওহ আল্লাহ… ও মেয়েটা থেকে বাঁচাও আমাকে। উফফ… এক মিনিট… আমাকে আঘাত দিলো? আমি কেনো বাকি রাখবো? নিজের রূপ নিয়ে খুব গর্ব তাইনা?
নীড় সিগারেট ধরিয়ে রুমে গেলো। মেরিনের সামনে গেলো। উদ্দেশ্য ওর গালে ক্ষত করবে। কিন্তু পারলোনা। জ্বলন্ত সিগারেটটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিভিয়ে ফেলল।

.

পরদিন নাস্তার টেবিলে…
মেরিন : সবাইকে আমার একটা কথা বলার আছে। ডক্টর প্রানকে নিয়ো কোথাও বেরাতে যেতে বলেছে। ওর মনটা ভালো করার জন্য।
নীড় : ডক্টরের সব কথা যে শুনতে হবে সেটার কোনো মানে নেই। আমরা কোথাও যাচ্ছিনা।
মেরিন : থাইল্যান্ডের টিকিট কেটেছো পিটারসহ তোমাদের ৫জনের। বিষয়টা আমার কাছে আড়াল করার চেষ্টা চালিয়েছিলে। আমার থেকে লুকিয়ে যাবে বলে এই ড্রামাটা করছিলে।
নীড় কোনো কথা না বলে জুসের গ্লাসে চুমুক দিলো।
মেরিন : প্রানকে নিয়ে যাও অসুবিধা নেই। আমি তুমি একসাথে যেখানেই যাচ্ছি সেখানেই কিছু না কিছু ঘটছে। দেখা যাবে বেরাতে গেলেও কোনো ঘটনা ঘটবে। পরে ওর ভালোর জন্য গিয়ে আরো খারাপ হয়ে যাবে।
নীড়ের কপালে ভাঁজ পরলো।
নীলিমা : তুমি ভালো কথা ভাবতে পারো?
মেরিন : ওহ সাসুমম… আমি যে কি কি ভাবতে পারি তুমি জানোনা।
নীড় মনেমনে : ইন্টরেস্টিং… এই মেয়ে কোনো কারন ছারা এমন তো করবেনা।
নীলিমা : তোমার সম্পর্কে আমি জানতে চাইও না।
নীড় : ব্যাগ প্যাক তুমিও করে নাও। কারন তুমিও যাবে।
মেরিন : আমি যাচ্ছিনা।
নীড় মেরিনের হাত ধরলো।
নীড় : ওহ বেগম সাহেবা… তোমাকে রেখে কিভাবে যাবো বলো তো? একটাই তো বেগম আমার চিন্তা হবে তো।
মেরিন নিজের হাত ছারিয়ে নিলো।
নীড় : তোমাকে রেখে যাই আর তুমি আমার পেছনে কিছু করে বসো। তোমাকে তো সেই সুযোগ আমি দিবোনা।আমরা সবাই যাচ্ছি। ইনক্লুডিং দাদুভাই এবং আমার পেয়ারের জন।
প্রান্তিক : কোথায় যাবো আমরা?
নিহাল : বেরাতে যাবো দাদুভাই।
মেরিনকে কোলে বসালো।
মেরিন : জানতে চাইবেনা কোথায় যাবো সবাই মিলে বেরাতে?
প্রান্তিক : কোথায় যাবো?
মেরিন : যেখানে আমার কলিজাটা বলবে। কোথায় যাবে বলো বলো…
প্রান্তিক চুপ করে রইলো।
নীড় : আমি জানি আমার লাভ কোথায় যাবে। আমার লাভ যাবে…
প্রান্তিক : মাবাবার কাছে যা…
মেরিন প্রান্তিকের মুখ চেপে ধরলো।
মেরিন : আমরা যাবো সেখানে যেখানে অনেক অনেক কার্টুন ক্যারেক্টার আছে। কেমন?
প্রান্তিক মাথা নেরে হ্যা বলল।

নিহাল : নীলি…
নীলিমা : বলো।
নিহাল : একটা কথা বলবো। রাগ করোনা প্লিজ।
নীলিমা : রাগ করার মতো হলে করবো।
নিহাল : রাগ করার মতো কথা নয়। দেখো জন্ম , মৃত্যু এবং বিয়ে কারো হাতে থাকেনা। এটা ভাগ্যের বিষয়। যে যতো যাই বলুক না কেনো নিজের ইচ্ছা মরতেও পারেনা , নিজের ইচ্ছায় জন্মাতেও পারেনা , নিজের ইচ্ছায় বিয়েও করতে পারেনা যদিনা ভাগ্যে থাকে।
নীলিমা : নাস্তিক না আমি। জানি এসব। মূলকথায় এসো।
নিহাল : এটাও মূল কথাই। যেভাবেই হোক নীড়-মেরিনের বিয়েটা হয়েছে।
নীলিমা : ডিভোর্সও হয়ে যাবে। নীড় তো বলেছেই।
নিহাল : নীলি… বিয়ে ভাঙা মুখের কথা নয়। চাইলেই বিয়ে ভাঙা যায়না। আর বিয়ে ভাঙা কোনো ভালো কথাও নয়। তুমি হয়তো একটা কথা জানোনা। নীড় ওর ইউনিভার্সিটি লাইফে মেরিনকে ভালোবাসতো।
নীলিমা : কি?
নিহাল : হ্যা।
নীলিমা : মিথ্যা কথা।
নিহাল : সত্যি কথা। আমি খোঁজ নিয়েছি। মেরিন নীড়কে রিজেক্ট করে দিয়েছিলো। মেরিনের প্রতি ভালোবাসা থাকার জন্যই বিয়ে , প্রেম এবং মেয়ে থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলো। এই যে বিয়ে এই যে এসব ঘটনা এগুলোতে নীড়ের সায় আছে। ও নিজেও এসব চাইছিলো। আর ভাগ্য তো আছেই।
নীলিমা : না না না। এটা হতে পারেনা। আমি এখনই গিয়ে নীড়ের সাথে কথা বলবো। জিজ্ঞেস করবো ওকে।
নিহাল : ওকে জিজ্ঞেস করে কি হবে? ও কি কোনো উত্তর দিবে? কখনো কি কোনো উত্তর দেয়?
নীলিমা বিছানার ওপর বসলো।
নীলিমা : আমার দুই ছেলে একই ভুল করলো।
নিহাল মনেমনে : হ্যা ভুল দুজনই করেছো। কিন্তু সেটা কোন ভুল ওটা বোঝাতে পারবোনা। দুজনের দুরকমের ভুল।
নীলিমা : এখন কি হবে?
নিহাল : জানিনা নীড় প্রনয়ের মতো ভুল করবে কিনা। কিন্তু যেভাবেই হোক ও নিজের ভালোবাসাকে পেয়েছে। এই ঘৃণার খেলায় , প্রতিশোধের খেলায় ও নিজের ভালোবাসাকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তারওপর প্রানের দায়িত্ব। ওদের সম্পর্কটা ঠিক করার জন্য সময়তো দিতে হবে ওদেরকে।
নীলিমা : আমি চাইনা ওদের সম্পর্ক ঠিক হোক।
নিহাল : নীলি… স্বার্থপরের মতো কথা বলো না। মায়েরা স্বার্থপর হয়না। ওদের একান্ত কিছু মুহূর্তের প্রয়োজন। কতোদিন ওরা প্রতিশোধের নেশায় মত্ত থাকবে? জীবনটা গোছাতে হবে। স্বাভাবিকভাবে বাঁচার অধিকার সবার আছে।

.

লিও : কোথায় যাচ্ছে সকলে?
○ : শুনেছিলাম থাইল্যান্ড যাবে। কিন্তু এখন হয়তো পরিবর্তন করা হবে। খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করছি।
লিও : প্রয়োজন নেই।
○ : প্রয়োজন নেই!
লিও : না।
○ : কিন্তু কেনো?
লিও : তোমাকে প্রশ্ন করতে বলেছি? নয় রাইট? সো গেট লস্ট।
সে চলে গেলো। লিও নিজের অতীত কল্পনা করতে লাগলো।
লিও : মেরে দিবো। সকলকে মেরে দিবো। কাউকে বাঁচতে দিবোনা। সব ধ্বংস করে দিবো।

.

□ : কি হচ্ছে কি না হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা।
■ : লিওর খোঁজ পেলে?
□ : লিওকে কেউ কখনো দেখেনি। আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ কখনো লিওর চেহারা দেখেনি। তবে বড্ড ভয়ংকর ওই লিও। হার্টলেস।পাখির মতো মানুষ মারে।
■ : ওর সাথে খান-চৌধুরীদের কিসের দুশমনি?
□ : জানিনা। সেটা কেবল ওই জানে। আমার কয়েক মাসের প্ল্যানিং ব্যর্থ হলে আমি লিও হয়ে যাবো। খুন করে ফেলবো সবাইকে। আমি আর ধৈর্য্য ধরতে পারছিনা।

.

৩দিনপর…
বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের মিটিং এ পৌছালো নীড়-মেরিন। অন্যান্য কোম্পানি থেকেও লোক এসেছে। মিটিং শেষ হলো।
দিপ্তী : হ্যালো হ্যান্ডসাম চৌধুরী।
যেতে যেতে কথাটা মেরিনের কানে এলো। ও দারালো। নীড়ের দিকে তাকালে। এম.এস. দিপ্তী নীড়ের সামনে গিয়ে দারালো।
নীড় : ওহ হ্যালো মিস দিপ্তী।
দিপ্তী : হ্যান্ডসাম লুক বয়সের সাথে হ্রাস পায়। তোমারটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নট ডান।
নীড় দেখলো মেরিন দেখছে।
নীড় : বিউটিফুলদের সামনে আসার জন্য হ্যান্ডসাম লুকের প্রয়োজন।তাহলে তো রূপের আগুনে টিকতে পারবোনা।
জবাবে দিপ্তী হাসলো।
নীড় : তোমার বয়সও তো দিনদিন কমছে মনেহচ্ছে।
মেরিন : লেটস গো জন।
মেরিন জনকে নিয়ে চলে গেলো। দিপ্তী-নীড় দেখলো।
দিপ্তী : তোমার ওয়াইফ নিজের বডিগার্ড নিয়ে চলে গেলো। জেলাস হলো নাকি?
নীড় : হলেও কি সেটা স্বাভাবিক নয়? হাজবেন্ড আমি ওর।
দিপ্তী : হাজবেন্ড… ওয়াইফ… ওহ কামন হ্যান্ডসাম। সবাই তোমাদের বিয়ের সত্যিটা জানে। ওপেন সিক্রেট এটা।
নীড় : ওপেন সিক্রেট হোক অথবা ক্লোজ সেটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
দিপ্তী : তাও ঠিক। তো কাবুতে এলো মেরিন বন্যা খান?
নীড় : মেরিন বন্যা চৌধুরী।
দিপ্তী : ফাইন। লাগাম ধরা গেলো মেরিন বন্যা চৌধুরীর?
নীড় : ও রক্তেমাংস করা গড়া মানুষ। ঘোড়া নয় যে লাগাম ধরা হবে। আর যাকে কনট্রোল করা যায় সে কি নীড় আহমেদ চৌধুরীর ওয়াইফ হতে পারে?
দিপ্তী : ঘৃণাটা হয়তো ভালোবাসায় পরিনত হয়েছে মনেহচ্ছে।
নীড় : ঘৃণা থাকলে কি আর বউ বানানো যায়? ভালোবাসা ছিলো আছে থাকবে।
দিপ্তী : ওহ প্লিজ নীড়… এটা বলোনা। তোমাদের সম্পর্কের সত্যিটা সবাই জানে। বিয়েটা যে…
নীড় : বিয়েটা কয়েক বছর আগেই হয়েছে। সামনে আসেনি মানে এটা নয় যে সেটা সত্যি নয়। বাই… এক মিনিট। যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাই শোনো। আমার ম্যারিড লাইফ , আমার পার্সোনাল লাইফ নিয়ে আমি কোনো কথা শুনবোনা। কারো রাইট নেই। কথাটা যেনো মনে থাকে।
দিপ্তী : দুদিন পর সাজানো বিয়ের নাটকটা শেষ হলেই স…
নীড় পিস্তলটা বের করে ওর কপালে ঠেকালো।
নীড় : বললাম তো যে আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কোনো কথা নয়। শি ইজ মাই ওয়াইফ। শি ইজ মাইন।
বলেই নীড় চলে গেলো।

মেরিন মনেমনে : বেচারা লুজার… জেলাস ফিল করানোর ট্রাই করছিলো স্টুপিড। যার দিকে আমি তাকাইনা তার জন্য নাকি আমি জেলাস হবো।
তানজিম : হাই বিউটি…
মেরিন : হ্যালো এন্ড বাই।
তানজিম : বাই! কতোদিন পর দেখা।
মেরিন : নো টাইম ফর ইউ। তুম…
তখন নীড় এসে ওর পাশে দারিয়ে ওর কোমড়ে হাত রাখলো।
নীড় : উই আর গেটিং লেইট হানি। কিছুটা প্যাকিং এখনো বাকি। লেটস গো।
তানজিম : কোথাও যাচ্ছো নাকি দুজন?
নীড় : ইয়েস। সিক্সথ হানিমুনে।
তানজিম : সিক্সথ হানিমুন!
নীড় : হামম। বছরে দুবার করে হানিমুনে যাই আমরা। চলো বেবি।
নীড় মেরিনকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
মেরিন : এগুলো কি ড্রামা?
নীড় : লাভ ড্রামা।

.

পরদিন সকলে পৌছালো সিঙ্গাপুর।
মেরিন : বাচ্চা… দেখো দেখো টম এন্ড জেরি।
প্রান্তিক : ওরা কি সত্যিসত্যি টম এন্ড জেরি মামমাম? ওদের কি টাচ করা যাবে?
শমসের : এগিয়ে গিয়ে দেখো চ্যাম্প। টাচ করতে পারবে। এসো এসো আমার সাথে এসো। চলো দিদিভাই।
শমসের খান প্রান্তিককে এবং নীড়ের পাশে দারানো মেরিনকে নিয়ে গেলো।
নিহাল মনেমনে : ঘটনাটা কি? নীড়-মেরিন এমনিতেও একে অপরের থেকে দূরেদূরে থাকে। তারওপর এই শমসের খান ওদের দুজনকে আরো দূরে রাখার মতো কাজ করছে। ফ্লাইটেও দাদু-নাতনি একসাথে ছিলো। তিনি এমন ভাব করছেন যেনো এখানে এসে ওদেরকে দূরে রেখে পৃথিবী উল্টিয়ে ফেলবে। ওরা হাজবেন্ড-ওয়াইফ। এই বুড়ো লোকটাকে আগে ঠান্ডা করতে হবে। ওদিকে নীড়টা পিটারের সাথে কথা বলছে। যেনো মেরিন না পিটার ওর বউ। তওবা তওবা কি ভাবছি এসব।
নীড় : পিটার… নিরাপত্তার যেনো কোনো ঘাটতি না থাকে।
পিটার : থাকবেনা স্যার।
জন : ম্যাম… গাড়ি চলে এসেছে। সবাই উঠে বসুন।
পিটার : এটা কি সুরক্ষিত?
জন : চেক করে দেখো।
ওরা সবাই গাড়িতে উঠলো। পৌছালো হোটেলে। সবাই রেস্ট নিলো। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে নিলো। সব প্রানের পছন্দের খাবার।

নিহাল : দাদুভাই জানো আমরা অনেক অনেক ঘুরবো আর অনেক অনেক ইনজয় করবো। এতোএতো প্ল্যানিং করেছি। আমি এতোএতো গল্প শিখেছি। তোমাকে শোনাবো বলে।
শমসের : আর বড়বাবার কি সারপ্রাইজ আছে জানো? বড় বাবা তোমার সাথে ম্যাচিং ম্যাচিং শর্ট পরবো , টি শার্ট পরবো।
নিহাল : দাদুভাইও পরবো।
প্রান্তিক : সত্যি!
নিহাল : একদম সত্যি।
টি শার্ট ব্লু আর শর্টস হলো ব্রাউন কালার। আবার আরেকটা কম্বো হলো রেড এন্ড ব্ল্যাক।
প্রান্তিক : হিহি… আমার তো ভেবেই হাসি পাচ্ছে।
অনেকদিন পর প্রান্তিক হাসলো। প্রান্তিকের হাসি সকলের মনে আনন্দ দিলো। ও ছোট মানুষ। জার্নি করে এসেছে। তাই সেদিন আর বেশি দূরে গেলোনা। কাছে পিঠেই রইলো। প্রান্তিকের মন ভালো করার জন্য সবাই প্রানপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। নতুন গল্প শোনানোর কথা টথা বলে নিহাল প্রান্তিককে নিজেদের ঘরে ঘুমানোর জন্য রাজি করালো। প্রান্তিকও জেদ ধরলো।

.

মেরিন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে নীড় একা সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।
মেরিন : প্রান কোথায়? তুমি না ওকে নিয়ে আসতে গেলে।
নীড় : প্রান মামনিবাবার ঘরে ঘুমাবে।
মেরিন : কেনো?
নীড় : কেনো মানে কি? ওর ইচ্ছা হয়েছে তাই ঘুমাবে।
মেরিন : হঠাৎ করে ইচ্ছা কেনো হলো?
নীড় : তুমি ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস করো। আমাকে আমার কাজ করতে দাও।
মেরিন : লুজার কোথাকার।
মেরিন বিছানার দিকে পা বারালো।
নীড় : বেডের দিকে যাচ্ছো কেনো?
মেরিন : তো কি চাঁদের দেশের দিকে পা বারাবো?
নীড় : আজকে প্রান নেই তাই ওই বেডেও তোমার জায়গা নেই। আই কান্ট শেয়ার।
মেরিন : প্রথমত এটা হোটেলরুম , তোমার বাসা নয়। তাই এই বেডটাকে তুমি নিজের বলতে পারোনা। দ্বিতীয়ত , ম্যারেজ রেজিস্ট্রি পেপারে সিগনেচার নিয়ে আমাকে নিজের বউ বানিয়েছো। সো চৌধুরী বাড়ি হলেও আমাকে বেড থেকে নামাতে পারতেনা।
নীড় : ওয়াইফ কেবল রেজিস্ট্রি পেপারে সিগনেচার করেনা। রোম্যান্সও করে।
মেরিন : রোম্যান্স করবে তুমি আমার সাথে?
নীড় : চেহারাটা ভালো হলে ভেবে দেখতাম।
মেরিন সোফার পেছনে গিয়ে নীড়ের গলা জরিয়ে ধরলো।
মেরিন : বেবি… এমন করে তুমি বলতে পারলে? কষ্ট পাই তো আমি…
নীড় ঝটকা খেলো।
নীড় : সরো।
মেরিন নীড়ের ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে
বলল : তুমিই তো বললে যে বউ কেবল রেজিস্ট্রি পেপারে সিগনেচার করেনা। রোম্যান্সও করে।
বলেই নীড়ের ঘাড়ে কামড় দিলো। এরপর হাসতে হাসতে উঠে দারালো।
মেরিন : আমার জীবনের উদ্দেশ্য কেবল রোম্যান্স নয়।
বলতে বলতে মেরিন গিয়ে শুয়ে পরলো। শুয়ে শুয়ে মোবাইল ঘাটছে। ল্যাপটপের কাজ শেষ করে নীড়ও গিয়ে বিছানায় বসলো। ব্ল্যাংকেটে হাত দিলো।
মেরিন : ওখানে আরো একটা ব্ল্যাংকেট আছে। সেটা নাও। এটা আমার।
নীড় এক টানে ব্ল্যাংকেট নিলো।
নীড় : আমি এটাই নিবো। তোমার ইচ্ছা হলে ওই ব্ল্যাংকেট নাও।
মেরিন : আমি এটাই নিবো। কারন আমি আগে নিয়েছি।
মেরিনও ব্ল্যাংকেট নিলো। পুরোটাই নিয়ে নিলো। নীড় অন্য একটা ব্ল্যাংকেট নিয়ে শুয়ে পরলো।

.

প্রান্তিক ঘুমিয়ে পরেছে।
নীলিমা : তুমি ইচ্ছা করে কাজটা করলে। তাইনা? প্রানকে ইচ্ছা করে নিয়ে এলে।
নিহাল : বুঝতে যখন পেরেছো তখন জিজ্ঞেস করছো কেনো?
নীলিমা : তুমি কেনো এমন করছো?
নিহাল : যে কাজটা তোমার করার কথা সেটা আমি করছি। আমি নীড়ের একটি স্বাভাবিক জীবন চাই। আমি আর কোনো প্রান চাইনা।
নীলিমা : মেরিনও নীলার মতো ওই খান বাড়ির মেয়ে। নীলা প্রনয়কে হত্যা করেছে। মেরিনও যদি তেমনটা করে! না না না।
নিহাল : নীলি… প্রনয়-নীলা একে অপরের বিপরীত ছিলো। কিন্তু নীড়-মেরিন একবারে এক। প্রনয়-নীলার পরিনয়ে প্রানকে পেয়েছি। ওকে হাজার ভালোবাসা দিচ্ছি আমরা। কিন্তু মাবাবা মাবাবাই হয়।যেটা প্রনয়-নীলারর সমাপ্তি হয়েছে সেটা যেনো নীড়-মেরিনের না হয়। দ্বিতীয় কোনো প্রান আমি চাইনা। আর কোনো অশান্তি চাইনা। শুভ পরিনয় চাই। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো। একটু ভাবো নীলি।
নীলিমা জানে যে নিহাল ঠিক বলছে। কিন্তু ওর মন মানছেনা।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 21
writer : Mohona
(do not copy please)

.

সকালে প্রান্তিকের ঘুম ভাঙলো। তাকিয়ে দেখে যে শমসের খান এবং নিহাল একই রকম পোশাক পরে দারিয়ে আছে। নীলিমা মিকি মাউস ক্যাপ পরে আছে। মেরিন বেলুন ও নীড় চকোলেট নিয়ে দারিয়ে আছে।
সবাই : গুড মর্নিং প্রান…
প্রান্তিক একটা হাসি দিয়ে গুড মর্নিং বলল সবাইকে।
মেরিন : উঠে পরো বাচ্চা। একটা চমৎকার সকাল এবং দিন তোমার অপেক্ষা করছে। ওঠো ওঠো ওঠো…
প্রান্তিক হাতমুখ ধুয়ে নিলো। মেরিন ওর পোশাক পাল্টে দিলো। দাদুভাই , বড়বাবার মতো পোশাক পরেছে। দীদুর মতো টুপি পরেছে। সকালের নাস্তা করে সকলে বেরাতে বের হলো। খুব আনন্দ করলো। প্রান্তিকের মনটাও কিছুটা ফুরফুরে হয়ে উঠলো।
নীড় খেয়াল করলো যে মেরিন হাতটা টেবিলের নিচে নিয়ে গান লোড করলো।
নীড় মনেমনে : এই মেয়েটা কি পাগল? গান কেনো বের করলো?
নীড় উঠে দারালো।
নীড় : মেরিন…
মেরিন : হামম।
নীড় : একটু শোনো তো।
মেরিন : বলো।
নীড় : পার্সোনাল কথা আছে। সবার সামনে বলা যাবেনা। প্লিজ প্রিয় বেগম…
মেরিন গানটা ব্যাগে ঢুকিয়ে দারালো। নীড় আলতো করে মেরিনের হাত ধরে নিয়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দারালো।
মেরিন : এখানে নিয়ে এলে কেনো?
নীড় : যা বলবে মুখে মিষ্টি হাসি রেখে বলবে।
মেরিন মুচকি হেসে বলল : মিস্টার রেসপেক্টিভ লুজার চৌধুরী… এখানে টেনে নিয়ে এলে কেনো?
নীড় : মাই ক্যারেক্টারলেস প্রিয় বেগম তুমি কি পাগল হয়ে গিয়েছো? গান কেনো বের করেছো? লোড কেনো করলে? প্রান দেখলে কি হবে ভেবে দেখেছো?
মেরিন : প্রানকে দেখাতাম না। আওয়াজও শুনাতাম না। সাইলেন্সার লাগিয়েছি।
নীড় : তো গানটা কেনো বের করেছো? নুডুলস খেতে?
মেরিন : তোমার দৃষ্টিতো কেবল মেয়েদের ওপর থাকে। তাই আশেপাশে থাকেনা রেসপেক্টিভ লুজার। যদি থাকতো তাহলে এই রেস্টুরেন্টের ওই লেভেলের সাথের ওই লোকটা অস্বাভাবিক। ওই ফুলগুলোর সাথের লোকটাও তাই। আরো দুই একজনও হতে পারে। ওদের মুভমেন্ট দেখলেই শ্যুট করে দিতাম।
নীড় : জনপিটার কি করে?
মেরিন : লুজার চৌধুরী কিপ স্মাইলিং। তোমার বোকামির জন্য হলে হতে পারি আমরা সবাই বিপদে। তোমার মাথায় কি একটুখানিও বুদ্ধি নেই? সবসময় তো আমার পেছনেই লেগে থাকো। তুম…
নীড় মেরিনের ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রাখলো।
নীড় : শসস… কতো কথা বলো তুমি? চিল… আই উইল হ্যান্ডেল।
এই দৃশ্য দেখে শমসের খান রেগে গ্লাসটা শক্ত করে ধরলো।
নীড় : যাও গিয়ে বসো। আমি দেখছি। পিটারের সাথে কথা বলছি।
মেরিন : জন… এসো এখানে।
নীড় : পিটারকে তো বলেছি আসতে।
মেরিন : তো?
নীড় : এক কাজ করো… প্রানকে একটু অন্যদিকে ডাইভার্ট করো। আমি এদের ব্যবস্থা করছি।
মেরিন : কি করবে?
নীড় : প্রয়োজন পরলে শ্যুট করে দিবো।
পিটার : কাকে শ্যুট করবেন স্যার?
জন : কি হয়েছে ম্যাম?
মেরিন : আজকাল তোমার কি হয়েছে? কাজ ঠিক ভাবে করছোনা। শত্রুপক্ষ উপস্থিত।
নীড় : এক্ষনি ওদের ব্যবস্থা করো।
পিটার : কোথায় তারা?
নীড়-মেরিন একেএকে দেখিয়ে দিলো।
জন : ম্যাম এরা আমাদেরই লোক। আমাদের সেফটির জন্যই আছে। চারদিক নজরে রাখছে।
নীড় : কি বলছে ও জন?
পিটার : ঠিকই বলছে ও।
নীড় : জন… এরপর নিজের ম্যামকে নিজেদের লোক সম্পর্কে সকল তথ্য দিয়ে রেখো। মেয়ে মানুষ তো তাই হুটহাট করে সিদ্ধান্ত নেয়ার অভ্যাস আছে। মাত্রই শ্যুট করে দিতো।
মেরিন : তোমার কি কানে সমস্যা? আমি বলেছি যে কোনো মুভমেন্ট দেখলে শ্যুট করে দিবো।
নীড় : ইয়াহ ইয়াহ… কাম উইথ মি বেবি।
নীড় মেরিনের কোমড় ধরে নিয়ে হাটতে হাটতে সবার সাথে গিয়ে বসলো।
নিহাল : অল ওকে নীড়?
নীড় : হামম। লাভ… বলো তো আমরা এখন কোথায় যাবো?
প্রান্তিক : কোথায় চাচ্চু?
নীড় : অ্যামিউজমেন্ট পার্ক।
প্রান্তিক : ইয়ে…

.

মেরিন ওভারকোট টা খুলে হাতে নিলো। নীড় তাকিয়ে দেখলো । মেরিন মাথায় হ্যাট দিলো। নীড় মেরিনের হাত ধরে দারিয়ে গেলো। সবাই এগিয়ে গেলো।
মেরিন : সমস্যাটা কি?
নীড় : তুমি। এমন ইমম্যাচিওরিটির মানে কি?
মেরিন : কিসের ইমম্যাচিওরিটি দেখলে।
নীড় : তুমি তো এমন পোশাক পরোনা।
মেরিন : লিসেন… আমি বেরাতে এসেছি। এখানে কি আমি ফরমাল পোশাকে ঘুরবো নাকি?
নীড় : পেছনের গলা এতো বড় কেনো?
মেরিন : তোমার সমস্যা কি?
নীড় : ওরনা কোথায়?
মেরিন : কোনো মিডিল ক্লাস পরিবারে যাও। দেখবে কাবার্ড টাবার্ড সব জায়গাতে ওরনাই ওরনা পাবে।
নীড় : আমরা সবার সাথে বেরাতে এসেছি। এখানে আমার মামনি-বাবাও আছে।
মেরিন : তো আমি কি করতে পারি? ওয়েট ওয়েট ওয়েট… তুমি কি এটা বোঝাতে চাইছো যে আমি তোমার ওয়াইফ। তোমার মাবাবার বউমা তাই আমাকে বউমাগিরি করতে হবে। সবসময় কার্পেট জরিয়ে ঘুরতে হবে।
নীড় : তুমি কি কখনো শাড়ি পরোনা? আর তোমাকে কি বলেছি শাড়ি পরতে। বলেছি তোমাকে তোমার মতোই পোশাক পরতে।
মেরিন : আমি আমার মতোই পোশাক পরেছি। আমি তো এটা বুঝতে পারছিনা যে তোমার সমস্যাটা কি?
শমসের : দিদিভাই…
মেরিন : বলো।
মেরিন চলে গেলো।
নীড় : কি বলছি ওকে এসব? কেনো বলছি?

মেরিন : আলাদা ডেকে নিয়ে এলে যে?
শমসের : জরুরী কথা আছে তোমার সাথে।
মেরিন : বলো।
শমসের : নীড়ের সাথে তোমার সম্পর্কটা কোন পর্যায়ে আছে?
মেরিন : যে পর্যায়ে ছিলো।
শমসের : এখনো সেই ঘৃণার সম্পর্কই আছে?
মেরিন : কেবল ঘৃণার নয়। প্রতিশোধেরও সম্পর্ক। হঠাৎ এই প্রশ্নের করার কারন জানতে পারি?
শমসের : না কিছুনা। এমনি।
মেরিন : এমনি তো নয়। কি হয়েছে?
শমসের : তোমরা এখন হাজবেন্ড-ওয়াইফ। তুমি চাইলে নীড়ের সাথে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করতে পারো।
মেরিন : সেটা কেয়ামতের নিশান হয়ে যাবে।
নিহাল দুজনের কথা শুনলো লুকিয়ে।
নিহাল : এই খান সাহেব চায় টা কি? এনার শুরুর দিকের কথায় মনে হলো যে নীলিমার রোগে তিনিও আক্রান্ত। কিন্তু পরের কথায় আবার না।

.

রাতে…
মেরিন খুব চেষ্টা করলো প্রান্তিককে নিজের সাথে নিয়ে যেতে। কিন্তু ওর জেদ যে আজকে বড়বাবার সাথে ঘুমাবে। মেরিন একাই ফিরে গেলো রুমে। দেখে নীড় বিছানায় হেলান দিয়ে বসে টেলিভিশন দেখছে। মেরিন দরজা লাগিয়ে দিলো।
নীড় : আমার কাছাকাছি থাকার উদ্দেশ্যে প্রানকে নিজের দাদুর কাছে রেখে আসা হলো বুঝি?
মেরিন : হ্যা অবশ্যই। মরে যাচ্ছি তোমার সাথে রোম্যান্স করার জন্য।
বলতে বলতে মেরিন আয়নার সামনে গিয়ে দারালো। মুখে ক্রিম দিতে লাগলো। নীড় গিয়ে ওর পেছনে দারালো।
নীড় : আমাকে লুজার বলো কিন্তু তোমার হাফ হাজবেন্ড কিন্তু আমার মতো হ্যান্ডসাম ছিলোনা। মিস করো ওকে?
মেরিন : সেটা তোমার জানার বিষয় না।
নীড় : এটা বলতে পারলে? আমি না তোমার হাজবেন্ড হই।
মেরিন : শাট আপ…
মেরিন কথা তো বলছে কিন্তু ওর প্রচন্ড মাথা ঘুরছে। দারিয়ে থাকা মুশকিল হচ্ছে। তাই বিছানার দিকে পা বারালো। নীড় ওর হাত ধরলো।
নীড় : কথা শেষ তো করো।
মেরিন : যার সাথে কথাই নেই তার সাথে আবার কথা শেষ কিভাবে করবো?
মেরিন হাত ছারিয়ে নিলো। নীড় ড্রেসিং টেবিল থেকে চিরুনী তুলতে তুলতে কিছু শব্দ পেলো। পেছন ফিরে দেখে মেরিন নিচে পরে আছে।
নীড় : মেরিন…
নীড় ছুটে গেলো।
নীড় : মেরিন… মেরিন… ওঠো… চোখ খোলো মেরিন…
নীড় পানি ছিটিয়ে দিলো। মেরিন চোখ মেলল না।
নীড় : হঠাৎ করে কি হলো?
নীড় ওর হাতেপায়ে মাসাজ করে দিলো। এরপরেও ওর জ্ঞান ফিরলো না। নীড় আর কোনো কথা না ভেবে মেরিনকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে গেলো। এরপর গাড়িতে করে হসপিটালে পৌছালো। ডক্টর দেখছে মেরিনকে।

নীড় : কি হয়েছে ডক্টর?
ডক্টর : দেখাতো যাচ্ছে স্যুগার ফল করেছে। তবুও কিছু টেস্ট করাতে হবে। পেশেন্ট আপনার কি হয়?
নীড় : আমার ওয়াইফ।
ডক্টর : কিছু টেস্ট দিচ্ছি। এর মধ্যে প্রেগনেন্সি টেস্টও দিলাম। দ্রুত করিয়ে নিতে হবে।
নীড় : হামম।
প্রেগনেন্সি টেস্টের কথা নীড়ের মেজাজ বিগরে গেলো।
নার্স : এক্সকিউজ মি…
নীড় : ইয়েস।
নার্স : আপনাকে একটু ভেতরে আসতে হবে।
নীড় : কেনো?
নার্স : আপনার ওয়াইফের ব্লাড নেয়া হবে টেস্ট করানোর জন্য। জ্ঞান ফেরা হলে বাকি টেস্ট করানোর জন্য।
নীড় : প্রেগনেন্সি টেস্ট কেনো দেয়া হয়েছে?
নার্স : এটা তো কমন স্যার। সিমট্রম তো প্রেগনেন্সির সাথেও যাচ্ছে।
নীড় : স্যুগার ফল বলল তো।
নার্স : সেটাতো আছেই। তবুও এই টেস্টগুলো করাতে হবে।
নীড় : হামম। সব রিপোর্ট কি একসাথে দেয়া হবে?
নার্স : হ্যা। কালকে সব দেয়া হয়ে যাবে। আসুন।
নীড় ভেতরে ঢুকলো। নার্স ব্লাড নিয়ে চলে গেলো। নীড় বসে আছে মেরিনের বরাবর।
নীড় : এমন সব মেয়ের জন্যই মেয়েদের এতো বদনাম। ছিঃ… কে জানে কার সাথে কি করেছে আর সেটা আমার ঘাড়ে ফেলবে। আমার ঘাড়ে.. ওহ মাই গড! এমনটা নয়তো এটা আমারই বেবি! সেদিন কি তাহলে আমি আসলেই লিমিট ক্রস করেছিলাম? নাকি অন্য কারো বেবি আমার কাধে চাপানোর জন্য সেদিনের সেই নাটক ছিলো? কিছুই মাথায় ঢুকছেনা। আসুক একবার প্রেগনেন্সির রিপোর্ট। এরপর ডিএনএ টেস্ট করাবো।আমাকে ফাঁসানো এতো সহজ নয়।
কিছুক্ষনের মধ্যে নীড়ের জ্ঞান ফিরলো। চোখ মেলে নীড়কে দেখতে পেলো। মাথাটা ব্যথা করছে। উঠে বসতে নিলে নীড় গিয়ে সাহায্য করলো। সাহায্য করলেও নীড়ে চোখে-মুখে রাগ স্পষ্ট।
মেরিন : আই ক্যান ম্যানেজ। তোমার সাহায্যের প্রয়োজন নেই।
নীড় : আমার দায়িত্বে এখানে এনেছি। তাই জোর করে হলেও সাহায্য করবো। সিস্টার… সিস্টার…
জ্ঞান ফেরার পর মেরিনর বাকি টেস্ট করানো হলো। এরপর নীড় মেরিনকে নিয়ে হোটেলে পৌছালো। নীড় ভয়ংকর ভাবে রেগে আছে।
মেরিন : এমন ব্যবহার আমার সাথে করবেনা। একদম না। আমি বলিনি আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাও। কারো দয়ায় বাঁচিনা আমি।
নীড় : দয়া করে নেইওনি আমি।তুমি মরে গেলে তোমার মৃত্যুকে হাতিয়ার বানিয়ে প্রানকে নেয়ার চেষ্টা করতো শমসের খান।
মেরিন : বয়স্ক শমসের খানে এতো ভয় তোমার? হাহাহা। ভালো ভালো ভালো। আই লাইক ইট।
নীড় : একদম আমার সাথে মাইন্ড গেইম খেলবেনা। যে খেলা শুরু করেছো সেটাতে আমি তোমাকে সফল হতে দিবোনা।
বলেই নীড় ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।
মেরিন : আশ্চর্য্য মানুষ। গার্লফ্রেন্ড হয়তো কারো কাছে চলে গিয়েছে। তাই এতো কষ্ট।
মেরিন ঘুমিয়ে পরলো।

.

সকাল গরিয়ে দুপুর হয়ে এলো কিন্তু নীড়ের দেখা নেই।
প্রান্তিক : মামমাম… চাচ্চু কোথায়?
মেরিন তো নিজেই জানেনা যে নীড় কোথায় গিয়েছে।
প্রান্তিক : ও মামমাম… বলোনা।
মেরিন : চাচ্চু একটা কাজে গিয়েছে বাচ্চা।
প্রান্তিক : কি কাজ!
মেরিন : সেটা তো বলে যায়নি মামমামকে।
পিটার তখন থেকে নীড়কে কল করে যাচ্ছে। কিন্তু বন্ধ বলে যাচ্ছে। যে কারনে পিটার চিন্তায় পরে গিয়েছে।
পিটার : এক্সকিউজ মি ম্যাম…
মেরিন : বলো।
পিটার : একটু কথা ছিলো। গুরুত্বপূর্ন। প্লিজ একটু আসবেন।
মেরিন এগিয়ে গেলো।
মেরিন : কি হয়েছে?
পিটার : স্যার কোথায়?
মেরিন : তোমার স্যার কোথায় সেটা আমি কিভাবে জানবো? সারাক্ষন লেজের মতো তুমি থাকো তোমার স্যারের সাথে।
পিটার : লাস্ট আপনার সাথে ছিলো।
মেরিন : তো? আমি কি তোমার স্যারের বডিগার্ড নাকি? হামম?

.

দুপুর গরিয়ে রাত হয়ে গেলো। নীড় মেরিনের রিপোর্ট নিলো হসপিটাল থেকে। ও এক প্রকার নিশ্চিৎ যে প্রেগনেন্সি রিপোর্টও পজিটিভ আসবে। নেশাও করে আছে একটু। রিপোর্ট ডক্টরকে না দেখিয়ে হোটেলে পৌছালো। মেরিন বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ম্যাগাজিন পড়ছে। তখন প্রচন্ড রেগে নীড় রুমে ঢুকলো। টেনে মেরিনকে দাড় করালো।
মেরিন : এগিয়ে কি অসভ্যতামো? কি মনে করো তুমি নিজেকে?
নীড় রিপোর্টগুলো মেরিন ওপর ছুরে মারলো।
মেরিন : হাউ ডেয়ার ইউ?
নীড় মেরিনকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলল। ওকে বিছানার সাথে চেপে ধরলো।
নীড় : নোংরা খেলা শুরু করেছো। আজকে শেষ করবো। তোমার মিথ্যা অভিযোগও সত্য করবো। কিন্তু… সম্মান দিয়ে নয় ঘৃণা দিয়ে করবো।
মেরিন : নীড় ছারো…
নীড়ের চোখ থেকে এক ফোটা পানি মেরিনের গালের ওপর পরলো। মেরিন কিছুই বুঝতে পারছেনা।
মেরিন : নীড় সরো।
নীড় ওর হাত আরো শক্ত করে ধরলো।
নীড় : অন্য কারো সন্তান আমার নামে চালানোর জন্য এসব খেলা তো। আমি ভাবতাম খেলাটা কেবল আমাকে বদনাম করার জন্য। এখন বুঝতে পারছি যে কেনো এসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আই ডাউট প্রানও আমাদের বাড়ির ছেলে নাকি অন্য কারো? লিভ ইনে তো ছিলেই তুমি। সো কলড লাভার মারা যাওয়ার পর আবার কার সাথে মেলামেশা করেছো কে জানে? তুম..
মেরিন নীড়কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ওকে একটা থাপ্পর মারলো। মেরিন উঠে দারালো। প্রেগনেন্সি রিপোর্ট খুজে সেটাতে চোখ না বুলিয়ে নীড়ের চেহারার দিকে ছুরে মারলো।
মেরিন : পড়তে তো জানো। সো পড়ে দেখো কি লেখা আছে।
বলেই মেরিন ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য দরজা খুলল। আবার দারালো।
মেরিন : প্রানের শরীরে যদি তোমাদের রক্ত না থাকে তাহলে সবচেয়ে বেশি খুশি আমি হবো। আমার আপু যেনো ক্যারেক্টারলেস হয়ে থাকে।
মেরিন বেরিয়ে গেলো।নীড় রিপোর্টটাতে তাকিয়ে দেখে নেগেটিভ লেখা। সেটাতে আগুন লাগিয়ে দিলো। বিছানায় লাথি মারলো। নিজের বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলো। বসে মাথা চেপে ধরলো। অনুভব করছে যে আজকে বারাবারি করে ফেলেছে। বেশি বলে ফেলেছে।
নীড় : ওভার হয়ে গিয়েছে। ঠিক হয়নি এভাবে কথা বলা। এই কথাগুলো তো একদমই বলা ঠিক হয়নি। কে জানে এই বিষয়টা আমাকে এতো কেনো রাগিয়ে দিলো?উফফ… যা বলার বলেছি। ও তো আর কষ্ট পাওয়ার মতো মেয়ে নয়। মানলাম ও প্রেগন্যান্ট না। ক্যারেক্টার তো অমনই। এতো রাতে কোথায় বেরিয়ে গেলো?
নীড় বের হলো মেরিনকে খুজতে। না পেয়ে কয়েকঘন্টা পর ফিরে এলো। ফিরে এসে দেখে মেরিন শুয়ে আছে। কাধ থেকে কোটটা নামিয়ে রাখলো। মেরিনের সামনে গিয়ে দারালো। ওকে ডাক দিতে গিয়েও থেমে গেলো। অপরাধবোধ হচ্ছে।
নীড় মনেমনে : নীড়…রিল্যাক্স। বাদ দে মেরিনের ভাবনা।

.

পরদিন…
প্রান্তিক : চাচ্চু… তুমি কালকে কোথায় ছিলে সারাদিন?
নীড় : একটা জরুরী কাজ ছিলো বাচ্চা। মামমাম কোথায়?
শমসের : ওই তো মামমাম চলে এসেছে।
মেরিন একটা ফ্লোরাল গাউন পরে এসেছে। শমসের খানের পাশে বসলো। বিষয়টা নিহালের ভালো লাগলোনা।
নিহাল মনেমনে : এই শমসের খানের প্রধান উদ্দেশ্য হয়তো নীড়-মেরিনকে আলাদা করার। নীলির মতো…
প্রান্তিক : মামমাম… তোমার মন কি খারাপ?
মেরিন : একদম না বাচ্চা।
প্রান্তিক : হামম। মামমাম… চাচ্চু… কালকে বড়বাবার সাথে না আমি একটা মুভি দেখছিলাম। সবাই কি সুন্দর ট্রাকে যায়।
নীড়-মেরিন : ট্রাক!
শমসের : ট্রেকিং।
প্রান্তিক : হ্যা হ্যা ট্রাকিং।
মেরিন : ট্রাকিং না। ট্রেকিং।
প্রান্তিক : ট্রেকিং ট্রেকিং ট্রেকিং। চলো না আমরা সবাই ট্রেকিং এ যাই।
নীড় : কেনো?
প্রান্তিক : আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই।
মেরিন : বাচ্চা আমরা দেশে ফিরে ট্রেকিং যাবো। কেমন?
প্রান্তিক : না না না… আমি এখানেই যাবো। নিয়ে যাবে বলো। আমি যাবো। টেন্টে থাকবো। আমি স্পাইডারম্যান টেন্টে থাকবো। ও চাচ্চু…
নীড় : ওকে বেবি…
মেরিন আর কিছু বলল না।
নীড় : পিটার ব্যবস্থা করো।কালই যাবো সকলে।
মেরিন : জন… এমন জায়গা যেনো হয় যেখানে ক্যাবল কার আছে। দাদুভাই হেটে উঠতে পারবেনা।
জন : ওকে ম্যাম।
মেরিন টুকিটাকি কথা বলছে সবার সাথে। নীড় একটু পরপর দেখছে মেরিনকে। মেরিন নীড়কে ইগনোর করছে।
নীড় : মে…
মেরিন : জন…
জন : ইয়েস ম্যাম।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 22
writer : Mohona
(do not copy please)

.

জন : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন : কেভি গ্রুপের কনফার্মেশন মেইল এসেছে?
জন : নো ম্যাম।
মেরিন : ডিল ক্যানসিল করে দাও। কনফার্মেশন মেইলের জন্য কি আমি অনন্তকাল অপেক্ষা করবো নাকি? ডিল ক্যানসিল করো।
জন : ওকে ম্যাম।
শমসের : দিদিভাই… গুরুত্বপূর্ন ছিলো ডিলটা।
মেরিন : হু কেয়ারস?
প্রান্তিক : আজকে আমরা কোথায় যাবো?
নিহাল : আজকে আমরা বোট দিয়ে ঘুরবো।
প্রান্তিক : ডলফিন দেখা যাবে!
নিহাল : যেতেও পারে।
মেরিন : চলো বাবা তোমাকে রেডি করে দেই। আসো আসো।
মেরিন প্রান্তিককে নিয়ে রুমের দিকে গেলো। নীড়ও পেছনপেছন গেলো।
নীলিমা মনেমনে : নিহাল কি তবে ঠিক বলছে? নীড় কি সত্যিই মেরিনের দিকে ঝুকছে! আমি কি ওর ভালোবাসার পথে বাঁধা হয়ে দারাচ্ছি?
শমসের মনেমনে : এই নীড় কিসের সুযোগে আছে কে জানে?

.

প্রান্তিক : মামমাম আজকে আমি ব্ল্যাক পরবো।
মেরিন : ওকে।
নীড় এসে মেরিনের পেছনে দারালো। মেরিন ঘুরে ওকে দেখে ওকে ক্রস করে কাবার্ডের কাছে গেলো। প্রান্তিকের পোশাক বের করে আনলো।
মেরিন : এটা কেমন?
প্রান্তিক : সুন্দর সুন্দর।
মেরিন ওকে রেডি করাচ্ছে। নীড় ওকে দেখছে।
প্রান্তিক : চাচ্চু… তুমি মোবাইলে কি দেখছো?
নীড় : ম্যাসেজ চেক করছি।
প্রান্তিক : মামমাম… চাচ্চুও ব্ল্যাক পরেছে। আমি ব্ল্যাক পরলাম। তুমিও এটা চেইঞ্জ করে ব্ল্যাক ড্রেস পরো না।
মেরিন : মামমাম তো কোনো ব্ল্যাক ড্রেস আমিইনি।
প্রান্তিক : চাচ্চু… মামমামের গিফ্ট…
নীড় : গিফ্টটা মামমামকে দিয়ে দাও। ওই যে ব্যাগ।
প্রান্তিক : তুমিই দাওনা।
মেরিন : কিসের গিফ্ট প্রান?
প্রান্তিক : চাচ্চু তোমার আমার জন্য গিফ্ট এনেছে।
নীড় ব্যাগটা এনে মেরিনের সামনে ধরলো।
নীড় : ফর ইউ ডিয়ার।
মেরিন নীড়ের দিকে তাকালোনা।
প্রান্তিক : নাও না মামমাম। ড্রেসটা এততোগুলো সুন্দর। এটা পরলে তোমাকে ফেইরির মতো লাগবে। চলো চলো চলো… চেইঞ্জ করে নিবে। বের হতে হবে তো।
মেরিন : বেবি… মামমাম তো রেডি। এই ড্রেসের মতো রেডি হতে গেলে আরো সময় লাগবে। লেইট হয়ে যাবে।
নীড় : বোট পর্যন্ত পৌছানোর সময় ১২টা। এখনো ২ঘন্টা বাকি।
প্রান্তিক : কতো সময় বাকি। যাও মামমাম।
মেরিন ওয়াশরুমে গেলো। নীড়ের দেয়া ড্রেসটা পরে এলো। বেরিয়ে দেখে প্রান্তিক নেই। নীড় পকেটে হাত দিয়ে দারিয়ে আছে। মেরিন আয়নার সামনে দারিয়ে কানের দুল এবং লকেটটা খুলে অন্যগুলো পরে নিলো।
নীড় : সরি…
মেরিন যেনো শুনতেই পায়নি।
নীড় : অভিমান করে আছো কি ওয়াইফের মতো?
মেরিন : সমান লেভেলের মানুষ ছারা কথা বলাটাও বোকামো।
নীড় : এর মানে রাগ নেই। থাকার কথাও না। তোমার মতো মেয়ের তো এই টাইপের কথায় কষ্ট পাওয়ার কথাও না।
মেরিন : আমার লিভইনে থাকার বিষয়টা হয়তো তোমার হার্টে তীর চালিয়েছে। তাইনা?
কথাটা শুনেই নীড়ের মেজাজ বিগরে গিয়েছে।
মেরিন : লুজার চৌধুরী… কোথায় পুরুষত্ব দেখাতে হয় কেনো দেখাতে হয় এবং কোথায় পুরুষত্ব দেখাতে হয়না কেনো দেখাতে হয়না সেটাই সবচেয়ে বড় পুরুষত্ব। সেই সাথে মনুষত্ব্যও। চরিত্রের কথা আমিও কথায় কথায় তুলতে পারি। কিন্তু সেটা আমার ব্যক্তিত্ব নয়। আসলে কি… তোমার উচিত স্বীকার করে নেয়া যে তুমি আমাকে ভালোবাসো।এখনো ভালোবাসো।
নীড় : আই জাস্ট হেইট ইউ।
মেরিন : নো। ইউ ডোন্ট। ইউ লাভ মি। ইউ লাভ মেরিন।
নীড় : আই হেইট ইউ মেরিন…
মেরিন : থ্যাংক ইউ।
বলেই মেরিন চলে গেলো।
নীড় : স্টুপিড গার্ল।
নীড় নিচে গেলো। সবাই মিলে বেরাতে বের হলো।

.

পরদিন…
আজকে সবাই ট্রেকিং এ যাবে। শমসের খানকে ক্যাবল কারে পাঠানো হলো। সাথে গেলো দুজন গার্ড।
মেরিন : তুমি উঠতে পারবে?
নীলিমা : কেনো পারবোনা? আমি কি বুড়ি নাকি?
মেরিন : না না। তোমার বয়স তো ৩৫ এর ওপর যাবেইনা।
নীলিমা : টন্ট মারবেনা বলে দিচ্ছি।
সকলে ওপরে উঠছে।
মেরিন : বাচ্চা… পায়ে ব্যথা করছে?
প্রান্তিক: না মামমাম।
নীড় : টিম… আমরা এখানে একটু ব্রেক নিবো।
নিহাল : দাদুভাই অ্যাপল জুস।
প্রান্তিক নিয়ে খেতে লাগলো।
নীলিমা : মাশরুম… ফ্রেশ মাশরুম। নিয়ে নেই। রাতে গ্রিল করা যাবে।
নীলিমা এগিয়ে গেলো মাশরুম তুলতে। মেরিন এসে হাত ধরলো।
নীলিমা : তুমি আমার হাত ধরলে কেনো?
মেরিন : আমি এসে তোমার হাত না ধরলে তুমি এই বিষাক্ত মাশরুমগুলো ধরতে।
নীলিমা : কে বলেছে যে এগুলো বিষাক্ত?
মেরিন : ওই দেখো স্পটগুলো। এগুলো বিষাক্ত মাশরুমেই থাকে।
নীলিমা : তোমার কথা কেনো বিশ্বাস করবো? আমি আমার ছেলেকে বিশ্বাস করবো। ওর কাছে নিয়ে গিয়ে দেখাবো।
মেরিন : এগুলো ধরলেই হাতে বিষ চলে আসে। স্কিনের মাধ্যমে ছরাবে। তাই এগুলো নেয়া তো দূরের কথা তোমাকে টাচও করতে দিবোনা। সো… চলো এখান থেকে।
নীলিমা : হাত ছারো আমার।
মেরিন : এখান থেকে সরলেই তোমার হাত ছারবো।
নীলিমা : আমি তোমার কথা শুনবো কেনো?
মেরিন নীলিমাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।।
নীলিমা : কি করছো কি তুমি?
মেরিন : চোখে কি সমস্যা?
নীড় : কি হচ্ছে কি এখানে?
নীলিমা : দেখোনা… ও আমাকে গরুর মতো টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
নীড় : মামনির হাত ছারো মেরিন…
নীলিমার হাত ছেরে দিতেই ও পরে যেতে নিলো। নীড় ওর হাত ধরলো।
নীড় : মামনি পরে যেতো তো। এভাবে ছারলে কেনো?
মেরিন : ছারতে বলেছো তাই ছেরেছি।তোমার কথা অমান্য করতে পারি কি?
নীড় : টেনে নিয়ে যাচ্ছিলে কেনো মামনিকে?
মেরিন : সাসুমমকে জিজ্ঞেস করো।
নীড় : তোমাকে প্রশ্ন করেছি।
মেরিন চলে গেলো।
নীড় : কি হয়েছে মামনি?
নীলিমা : আমি ওই মাশরুমগুলো তুলতে গিয়েছিল…
নীড় : ওগুলো তুলতে গিয়েছিলে কেনো? ওগুলো তো বিষাক্ত। টাচ করার মাধ্যমেই ইফেক্টেড হয়ে যাবে।
নীলিমা : এর মানে মেরিন সত্যি বলছিলো।
নীড় : ও না করেছিলো?
নীলিমা : হ্যা। আমি শুনিনি। তাই টেনে নিয়ে আসছিলো।
নীড় : হামম। কোনো অচেনা গাছে হাত দিবেনা।
নীলিমা : ওকে।
নীড় : হামম চলো।
মেরিন : মিস্টার হাজবেন্ড… আর কতোক্ষন ব্রেক নিবেন? যাবেন না?
নীড় : তোমার কথা কি অমান্য করতে পারি? টিম… চলো যাওয়া যাক।
ওরা আবারো ওপরে যেতে লাগলো। কিছুক্ষন যাওয়ার পর নীড় প্রান্তিককে কাধে তুলে নিলো। ওরা পৌছালো যেখানে পৌছানোর।
প্রান্তিক : ওয়াও… কি সুন্দর!
নীড় : চলো পিক তুলে দেই তোমার।
প্রান্তিক ছবি তুলতে লাগলো।
মেরিন : জন… এখানে আরো কয়েকটা গ্রুপ আছে। বি কেয়ারফুল।
জন : হামম।
নীড়ের চোখ গেলো মেরিন ও জনের দিকে। দুজন কথা বলছে।
নীড় মনেমনে : এই জনটা সবসময় মেরিনের সাথে চিপকে থাকে। অসহ্যকর।
প্রান্তিক : মামমাম…
মেরিন : হ্যা বাচ্চা?
প্রান্তিক : আসো আসো… ছবি তুলল।
প্রান্তিক সবার সাথে ছবি তুলল। সেই সাথে সকলের ছবিও তুলে নিলো।
প্রান্তিক : মামমাম… চাচ্চু… এবার তোমরা দারাও। তোমাদের দুজনের ছবি তুলে দেই।
নীড় : সবাই এখন একটু রেস্ট নিয়ে নেই।
প্রান্তিক : নিবো তো। সবার ছবি তুলেছি। এখন কেবল তোমাদের দুজনের বাকি। দারাও দারাও… একসাথে দারাও।
নীড়মেরিন পাশাপাশি দারালো।
প্রান্তিক : উফফ… তোমরা তো ছবি তুলতেই জানোনা। চাচ্চু চাচ্চু শাহরুখ খানের মতো পোজ দাও। মামমাম… তুমি হিরোইন হয়ে যাও।
নীড় মেরিনের কোমড়ে হাত রেখে দারালো।
নীড় : প্রিয় বেগম… তাকাও আমার দিকে। আমি তোমার দিকে তাকাবো। লাভ তখন ছবি তুলবে।
প্রান্তিক : ওকে ওকে।
নীড়-মেরিন একে অপরের দিকে তাকালো। প্রান্তিক ছবি তুলল।
নীড় : হ্যাপি লাভ?
প্রান্তিক : হামম হামম।
নীড়-মেরিন সরে দারালো। প্রান্তিক একটু ঘুরে ফিরে দেখে ঘুমিয়ে পরলো। ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে।

মেরিন : জন…
জন : ম্যাম…
মেরিন : এখান থেকে গিয়ে সবার কাজ হবে আপুর বেডরুমে থাকা ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া।
জন : ম্যাম… কিভাবে নিবেন?
মেরিন : ভয়েসকোড রেকর্ড হয়ে গিয়েছে।
জন : ওকে ম্যাম।
মেরিন : আমি রেকর্ডিংটা তোমার কাছেও দিয়ে রাখবো।
জন : ওকে ম্যাম। সব রেডি থাকবে।

.

রাতে…
প্রচন্ড ঠান্ডা পরেছ।
প্রান্তিক : মামমাম… খুব ঠান্ডা লাগছে।
নীড় : বলেছিলাম তোমাকে।
নীলিমা : দাদু… তোমার জন্য হট চকোলেট।
প্রান্তিক : থ্যাংক ইউ।
মেরিন সকলের জন্য চা নিয়ে এলো।
জন : ম্যাম আমি দিয়ে দিচ্ছি।
মেরিন : ইটস ওকে জন। এটা আমার পরিবার তো। বাবার বাড়ি , শ্বশুরবাড়ি। তাইনা সাসুমম?
নীলিমা চুপ করে রইলো। পিটার এগিয়ে এলো।
পিটার : এটা আমি আগে চেক করবো।
নীড় : জন…লেট ইট বি। আমার বেগম এনেছে। বেগমটা বড্ড ভালো এবং বুদ্ধিমতি। বেগম আমি তোমার সাহাস্য করতে পারি?
মেরিন : অবশ্যই…
সবাই গরম গরম চা খেয়ে নিলো। খাবার তো আরো আগেই খাওয়া শেষ।
শমসের : চলো সবাই গানে কলি খেলি?
নিহাল : দারুন আইডিয়া।শুরু করা যাক।
সবাই মিলে খেলল , আনন্দ করলো। প্রান্তিকের ঘুম পাচ্ছে। তাই সবাই ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। মেরিন প্রান্তিককে নিজেদের টেন্টে নিয়ে গেলো।
প্রান্তিক : ওয়াও মামমাম… টেন্টের ওপর দিয়ে কি সুন্দর আকাশ দেখা যাচ্ছে!
মেরিন : হামম। তোমার জন্যই আমি এই টেন্টটা খুজেখুজে বের করেছি।
প্রান্তিক : থ্যাংক ইউ।
মেরিনের গালে চুমু দিলো। গল্প শুনতে শুনতে প্রান্তিক ঘুমিয়ে পরলো। নীড় বাহিরে।
মেরিন : তুমি কি বাহিরেই থাকবে?
নীড় : আপত্তি না থাকলে ভেতরে এসে রোম্যান্সও করতে পারি।
মেরিন : বাহিরে থাকলে বলে দাও । আমি টেন্টের চেইন লাগিয়ে দিবো। বাতাস আসছে। প্রচন্ড ঠান্ডা।
নীড় : শান্তি আর দিলেনা তুমি।
নীড় ভেতরে ঢুকলো টেন্টের। এরপর চেইন টেনে দিলো।
নীড় : খুশি এবার?
মেরিন কোনো জবাব দিলোনা।
নীড় : আমি কোথায় ঘুমাবো?
মেরিন : ওখান দিয়ে অতোগুলো জায়গা পরে আছে চোখে পরছেনা?
নীড় : পিলো?
মেরিন : ব্যাগ মাথায় দাও।
সকলে ঘুমিয়ে পরলো। গভীর রাতে নীড়ের ঘুম ভেঙে গেলো দাঁতেদাঁত বারি খাওয়ার শব্দে। নীড় চোখ মেলে উঠে দেখে মেরিন শীতে কাঁপছে। ওরই দাঁতেদাঁত বারি খাচ্ছে। প্রান্তিক ঘুমের ঘোরে ব্ল্যাংকেট ফেলে দেয়াতে মেরিনের ওপর থেকেও ব্ল্যাংকেট সরে গিয়েছে।
নীড় মনেমনে : স্ট্রং লেডি… হ্যাহ…
নীড় প্রান্তিক ও মেরিনের ওপর ব্ল্যাংকেট দিয়ে দিলো। মেরিন নীড়ের হাত শক্ত করে ধরলো। নীড় দেখছে মেরিনকে। ঠান্ডার জন্য গাল দুটো লাল হয়ে আছে। অন্য হাত দিয়ে ওর গালে হাত বুলাতে লাগলো। এরপর হাতটা সরিয়ে নিলো। অপর হাতটাও শক্তভাবে সরিয়ে নিলো। মেরিনের ঘুম ভেঙে গেলো।
মেরিন : প্রান…
প্রান্তিক তো ঘুমিয়েই আছে।
মেরিন : কি হয়েছে?
নীড় : স্বপ্নে আমার সাথে রোম্যান্স করছিলে। তাই আমার হাত ধরে নিয়ে আমাকে সিডিউস করছিলে।
মেরিন : বাহিরে দারিয়ে কি নেশা করছিলে? স্টুপিড।
নীড় : ব্ল্যাংকেট ভালোভাবে গায়ে জরিয়ে রাখো।
মেরিন : তোমাকে কেয়ার করতে হবেনা।
নীড় : কেয়ার তোমার জন্য নয়। তুমি এবং প্রান্তিক সেইম ব্ল্যাংকেট নিয়েছো। ওর চিন্তা করছি।
মেরিন : তোমার উদ্দেশ্য এবং দৃষ্টি আমি হারেহারে চিনি।
নীড় : রিয়েলি?
মেরিন : রিয়েলি। তোমাদের ছেলেদের উদ্দেশ্য একটাই থাকে। সেটা হলো…
নীড় : সেটা কি?
মেরিন : মেয়েদের শরীর।
নীড় : রাইট। কিছু মেয়েরা ভালোবাসার উপযোগ্য হয়না। ব্যবহারের যোগ্যই হয়। সেই কাতারে তুমিও আছো।
মেরিন : কার ঘাড়ে কটা মাথা আছে যে মেরিন বন্যা খানকে ব্যবহার করবে? আর মিস্টার লুজার চৌধুরী… তোমাকে আমি সাবধান করেছিলাম। বলেছিলাম যে আমার বিষয়ে তুমি কোনো কথা বলবেনা।
নীড় : বলার শখও নেই। তোমার চেহারাটা দেখলে মুখে এই কথাগুলোই আসে।

পরদিনই সবাই হিল স্টেশন থেকে ফিরে এলো। আসার সময় সবাই ক্যাবল কার ব্যবহার করলো।

.

নিহাল : শমসের কাকা…
শমসের : হ্যা বলো।
নিহাল : কথা ছিলো আপনার সাথে।
শমসের : বলো।
নিহাল : কাকা… যেভাবেই হোক নীড়-মেরিনের বিয়েটা হয়েছে।
শমসের : নীড় যেটা করেছে সেটার জন্য আমি কখনো ওকে ক্ষমা করবোনা।
নিহাল : আমিও করবোনা। কিন্তু ওদের বিয়েটা তো হয়েছে। আমার ছেলে নিজের ভুলটা সংশোধন করে নিয়েছে।
শমসের : কিছু ভুল ভুলই হয়।
নিহাল : আমি সব মেনে নিলাম। কিন্তু আপনিও মেরিনের ভালো চান আর আমিও। চাই ওরা ভালো থাকুক। ওদের সম্পর্ক এই কদিনে কেবল প্রান পর্যন্তই আছে । আমি চাই এই সম্পর্কটা কেবল প্রান পর্যন্তই সীমাবদ্ধ না থাকুক। ওরা একে অপরের সাথে ভালো থাকুক। ভালোবাসার একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হোক। আপনি কি সেটা চান না।
শমসের : আমি চাই আমার নাতনিটা ভালো থাকুক। যদি নীড় সেই ভালো থাকার কারন হয় তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই।
নিহাল : অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমার একটি পরিকল্পনা আছে। আশা করি আপনি আমার সাথে থাকবেন।

.

২দিনপর…
নীড়-মেরিন ভিন্ন সবাই দেশে ফিরে গেলো। ওদের ভিসা নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে। তাই অ্যাম্বাসি থেকে ঠিক করতে হবে। আসলে এটা নিহালের প্ল্যান। ওকে সাপোর্ট করেছে শমসের।
মেরিন : কি একটা অবস্থা? ভিসাতে কি সমস্যা হলো কে জানে?
নীড় : চলো… রাত বেশি হয়ে গেলে হোটেল রুম পাবোনা। চলো।
মেরিন : ভিসার ঝামেলা মিটাতে হবে তো।
নীড় : তোমার জন্য এতো রাতে অ্যাম্বাসি খুলে বসে আছে তো। চলো।
মেরিন : দুটো রুম বুক করবে।
নীড় : কেনো ব্রেকিং নিউজ করতে চাও বলো তো? রুম শেয়ার করার ইচ্ছা আমারও নেই । বাধ্যতা বলতে পারো।
ওরা হোটেলে পৌছালো। রুম বুক করলো।
নীড় : আরো একটু দেরি করলে এই হোটেলেও রুম পাওয়া যেতো না।

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 23
writer : Mohona
(do not copy please)

.

মেরিন : ইয়াহ ইয়াহ…
মেরিন খোপা করতে করতে ওয়াশরুমের দিকে পা বারালো। হঠাৎ থেমে গেলো। দ্রুত পেছনে এলো। ব্যাগের দিকে তাকালো। খুলল দেখলো।
মেরিন : ড্যাম ইট।
নীড় : কি হলো?
মেরিন : তোমাকে কেনো বলবো?
বলেই মেরিন ওয়াশরুমে ঢুকলো। নীড় মেরিনের ব্যাগটা ধরলো।
নীড় : কারো ব্যাগ তো দেখি ঠিক নয়। কিন্তু মেরিন বন্যা খানেরটা দেখতে হয়। ভয়ংকর কিছু থাকতে পারে। যেটা আমার জন্য বিপজ্জনক।
নীড় ব্যাগটা খুলল। দেখলো যে এটাতে প্রান্তিকের পোশাক। আসলে ওর এবং প্রান্তিকের ব্যাগ একইরকম দেখতে।
নীড় : ওহ… তো ম্যাডাম নিজের ব্যাগ দিয়ে দিয়েছে। একটু মজা করা যাক।
নীড় ব্যাগটা রেখে দিলো। মেরিন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোফায় বসলো। নীড় হাতমুখ ধুয়ে বেরিয়ে এলো। পানি নেয়ার বাহানায় পুরো জগটা ওর ওপর ফেলে দিলো। আসলে ওর উদ্দেশ্য ছিলো মেরিনকে অল্প একটু ভেজানো। যেনো ও বিরক্ত হয়। এভাবে পুরোটা যে পরে যাবে সেটা ও ভাবতেও পারেনি।
মেরিন : কি করলে এটা ইডিয়ট?
নীড় : সরি সরি। আসলে আমি ইচ্ছা করে করিনি।
মেরিন : শাট আপ। তুমি যা করেছো ইচ্ছা করে করেছো। তুমি নিশ্চয়ই ব্যাগ খুলে দেখেছো এবং বুঝেছো যে ওটা আমার ব্যাগ নয় প্রানের ব্যাগ। তাই এভাবে ভিজিয়ে দিলে ।
নীড় : তোমাকে আমি কেনো ভেজাতে যাবো? আমার কোনো ইচ্ছাই ছিলোনা তোমাকে ভেজানোর।
মেরিন : একদম মিথ্যা কথা বলবেনা। আমি তোমার উদ্দেশ্য বেশ ভালো ভাবে বুঝতে পেরেছি।
নীড় : এক্সকিউজ মি! কি উদ্দেশ্য আমার?
মেরিন : সেটা তুমিই ভালো মতো জানো।
মেরিন ব্ল্যাংকেটটা হাতে নিলো।
নীড় : ব্ল্যাংকেটটা কি করবে?
মেরিন : গায়ে জরিয়ে বসে থাকবো।
নীড় : ভিজে যাবে তো ব্ল্যাংকেটটা।
মেরিন : তো? তুমি কি চাও আমি এই ঠান্ডার মধ্যে ভেজা কাপরে বসে থাকি?
নীড় নিজের ব্যাগ থেকে ট্রাউজার এবং টিশার্ট বের করে নিয়ে এলো।
নীড় : চেঞ্জ করে এসো।
মেরিন : নট অ্যাট অল।
নীড় : মেরিন… এটাতে ইগোর কিছু নেই। রাগেরও কিছু নেই। এখানে জেদ দেখানো বোকামো। যাও পাল্টে এসো।
মেরিন : না… আমি এই ভেজা পোশাকেই থাকবো।
নীড় মেরিনের কোমড় ধরে কাছে টেনে অন্যহাত ওর পোশাকের পিঠের দিকের কিছু অংশ এক ঝটকায় ছিরে ফেলল। মেরিন দেয়ালে পিঠ দিয়ে দারালো।
নীড় : বাহিরে যাচ্ছি। ডিনারও নিয়ে আসবো। চেইঞ্জ করে নিও।
নীড় বেরিয়ে গেলো। ফিরে এসে দেখে মেরিন ওর টিশার্ট-ট্রাউজার পরে বসেবসে টেলিভিশন দেখছে।
নীড় : প্রানের অনুপস্থিতিতে এমন করে কথা প্রথমবার মানলে। এসো ডিনার করে নাও।
মেরিন : এতো গরম খাবার আমি খাইনা।
নীড় : ভয় নেই। বিষ মিশাইনি। এমন বোকার মতো খেলা আমি খেলবোনা। কারন কিছু হলে আমিই ফাঁসবো।
মেরিন : মরে যাওয়া নিয়ে আমি ইগো রাখিনা।
নীড় : মৃত্যুতে এতো ভয়?
মেরিন : ভয় মৃত্যুতে নয়। হেরে যাওয়াতে।
নীড় : হেরে তো বসেই আছো আমার কাছে।
মেরিন : তোমার কাছে হারের বদলে যদি প্রানের আশেপাশে থাকা যায় তাহলে সেই হার আমার মঞ্জুর আছে।
নীড় : ডোন্ট সে যে প্রানের কাছে থাকার জন্য ইচ্ছা করে আমার কাছে হেরেছো।
মেরিন : মিথ্যা বলা তোমার অভ্যাস। আমার না। ইচ্ছা করে তোমার কাছে হারিনি। কিন্তু জিতে যেটা অর্জন করতে চেয়েছিলাম হেরে গিয়েও সেটা অর্জন করেছি। তাই আনন্দিত।
নীড় : ইন্টরেস্টিং। যে নিজের মাবাবাকে ভালোবাসেনা সে বোনের ছেলেকে এতোটা ভালোবাসে! তোমার সত্য তোমার কাছে। সেটা নিয়ে আমার ভাবনা নেই। এসো খেয়ে নাও।
মেরিন : ক্ষুধা নেই আমার।
মেরিন শুয়ে পরলো। নীড় গিয়ে ওকে টেনে বসালো।
মেরিন : সমস্যাট কি?
নীড় : খেয়ে নিবে।
মেরিন : কেয়ার করার ড্রামা কেনো করছো?
নীড় : আমার স্যুগার লো হয়ে গেলে আমাকেই হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে।
মেরিন : আমি অতোটা দুর্বল নই।
নীড় : অসুস্থতার ওপর নিয়ন্ত্রন থাকেনা।

.

সকালে…
মেরিন দেখছে ওর ড্রেসটা শুকিয়েছে কিনা।
মেরিন : কাধের এখানে এখনো ভেজা। অনলাইনে অর্ডার করে ফেলি।
নীড় : প্রয়োজনে নেই। ধরো।
নীড় ব্যাগ এগিয়ে দিলো।
মেরিন : কি এগুলো?
নীড় : ড্রেস বলে এগুলোকে।
মেরিন ব্যাগ থেকে টাকা বের করে নীড় হাতে দিলো।
মেরিন : থ্যাংকস লুজার চৌধুরী।
নীড় : তুমি কাকে টাকা দেখাচ্ছো?
মেরিন : টাকা দেখাচ্ছিনা। পে করছি।
মেরিন একটা পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বারালো। নীড় ওর বাহু টেনে সামনে নিয়ে এলো।
নীড় : টাকার গরম আমাকে দেখাবেনা। একদম না। ড্রেস এনেছি তুমি পরবে।
মেরিন : বউ বলে ভাবতে শুরু করেছো কি আমাকে? হামম?
বলেই নীড়ের ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসলো। কাজটাতে নীড় একটু অবাক হলো।
নীড় : এটা কি ফাজলামো?
মেরিন : ফাজলামো কি কেবল তুমি একাই করতে পারো? হামম? অসভ্যতামীর ওপর কেবল তোমার অধিকার?
মেরিন ওয়াশরুমে চলে গেলো। ব্রেকফাস্ট করে অ্যাম্বাসিতে গেলো। ভিসার বিষয়ে কথা বলল। ঠিক হতে দুদিন সময় লাগবে।
মেরিন : ড্যাম ইট। আরো দুদিন থাকতে হবে এখানে। কতো কাজ পরে আছে।
নীড় : আমাদের হানিমুন হয়ে যাবে।
মেরিন : শাট আপ।
ওরা কফিশপে ঢুকলো।
সায়ান : হাই মিস খান…
মেরিন : ওহ হাই… কেমন আছো?
সায়ান : ভালো? হু ইজ দিস হ্যান্ডসাম গাই? হাজবেন্ড?
মেরিন : ইয়াহ। নীড় আহমেদ চৌধুরী।
সায়ান : হ্যালো মিস্টার চৌধুরী।
নীড় : হাই।
সায়ান : অবশেষে সাইকো মেরিনের মন কারো ওপর আটকেই গেলো। প্রথম পুরুষ… লাকি ম্যান। আমরা ফ্রেন্ডশীপ করতে সাহস পাইনি আর আপনি বউ বানিয়ে নিলেন। লাভ ম্যারেজ?
নীড় : হামম। ওয়াইল্ড লাভ। রাইট বেবি?
সায়ান : নাইস…নো ওয়ান্ডার তুম…
মেরিন সায়ানকে টেনে নিয়ে গেলো।
সায়ান : এখানে টেনে নিয়ে এলে কেনো?
মেরিন : তুমি নীড়ের সাথে আমার পাস্ট নিয়ে কেনো কথা বলছো?
সায়ান : আরে পাস্ট নিয়ে কি বললাম? আমি বলিনি যে তোমার বয়ফ্রেন্ড ছিলো। আর বলবো কেনো? কোন ছেলের সাধ্য ছিলো তোমার সাথে রিলেশনে যাওয়ার! থাকলেতো আম…
মেরিন : নীড় জানে হ্যারি আমার ফিওনসে ছিলো। ওর সাথে আমি লিভইনে ছিলাম।
সায়ান : কি?
মেরিন : হ্যা।
সায়ান : হ্যারি তো তোমার বন্ধু ছিলো। তোমার বাসায় ও গিয়েছিলো কিনা সন্দেহ। তাহলে এই মিথ্যা কেনো?
মেরিন : কারন আছে। এই প্রসঙ্গে আর কোনো কথা বলবেনা।
সায়ান : আই অ্যাম স্পিচলেস।
মেরিন : তোমাকে যেটা বলেছি সেটা মনে রাখো।
সায়ান : ফাইন…
নীড় মনেমনে : কি বলছে মেরিন এসব? লিভ ইন এর কথাটা মিথ্যা ছিলো? কিন্তু কেনো? ওরা ফিরছে। আমাকে দ্রুত গিয়ে বসতে হবে।
নীড় গিয়ে টেবিলে বসলো। পিটারকে কল করলো। মেরিন-সায়ান এলো।
সায়ান : আসছি মিস্টার চৌধুরী। বাই।
নীড় : বাই…
সায়ান চলে গেলো।
নীড় : ছেলেদের সাথে তোমার সম্পর্ক বেশ নিবিড় হয়ে থাকে।
মেরিন : তোমার বুঝি আফসোস হচ্ছে?
নীড় : হ্যা। মারাত্মক আফসোস হচ্ছে।
মেরিন কফির বিল পে করে উঠে দারালো।
নীড় : কোথায় যাচ্ছো?
মেরিন : তোমাকে বলার প্রয়োজনবোধ করছিনা।
নীড় : ওহ ডিয়ার বেগম… ডোন্ট বি রুড। আমি তোমার বাদশাহ হই।
মেরিন : বাদশা মাই ফুট।
নীড় : সায়ানের সাথে বুঝি ডেটে যাচ্ছো?
মেরিন : ইয়েস।
নীড় : ওকে তাহলে আমি জুলিকে হোটেল রুমে ইনভাইট করে নিবো।
মেরিন : অ্যাজ ইউর উইশ।
নীড় : জিজ্ঞেস করবেনা জুলি কে?
মেরিন কোনো কথার জবাব না দিয়ে চলে গেলো। নীড় মেরিনের চলে যাওয়া দেখলো কেবল।

.

নীড় : এটা কি হয়ে গেলো? মেরিন কখনো লিভইনে ছিলোই না! হ্যারি ওর ফিওনসে-ও ছিলোনা। কেবল ভালো বন্ধু ছিলো। হ্যারি তো হ্যারি ওর অন্যকোনো বয়ফ্রেন্ডও কখনো ছিলোনা। তাহলে এসব কেনো সাজানো হয়েছিলো? যেকারনে সাজানো হয়েছিলো সেই প্ল্যানটা ফ্লপ হয়েছে।
নীড় পিটারকে কল করলো।
পিটার : হ্যালো স্যার… অল ওকে স্যার?
নীড় : হামম। ফিনল্যান্ড যাও। হ্যারি সম্পর্কে আবারও তথ্য নাও।
পিটার : কেনো স্যার? কি হয়েছে?
নীড় : আমি এতো প্রশ্ন করা পছন্দ করিনা। যেটা বলেছি সেটা করো।
পিটার : ওকে স্যার। সরি স্যার।
নীড় : সবাই ঠিক আছে? প্রান ঠিক আছে?
পিটার : জী স্যার।
নীড় : হামম। সবার আগে যে ফ্লাইটটা আছে ফিনল্যান্ড যাওয়ার সেটার টিকিট কাটো।
পিটার : ওকে স্যার।
নীড় রেখে দিলো। মেরিন দ্রুত ঘরে ঢুকে নীড়ের পাশে এসে বসলো।
নীড় : কি হলো? এটা কে…
মেরিন : প্রানের ভিডিও কল। চুপটি করে বসে থাকো।
ওরা প্রান্তিকের সাথে কথা বলছে । মেরিনের চুলগুলো উড়েউড়ে নীড়ের মুখের ওপর যাচ্ছে।
নীড় : চুলগুলো বাধা যায়না?
মেরিন নীড়ের দিকে তাকালো।
প্রান্তিক : চাচ্চু… তুমি মামমামকে বকছো কেনো?
নীড় : বকিনি তো। মামমামের চুলগুলো আমাকে বিরক্ত করছে। তোমাকে দেখার সময় বিরক্ত হলে কি ভালো লাগে বলো?
প্রান্তিক : মামমামকে সরি বলো। কানে ধরে সরি বলবে। এরপর গালে আপ্পাও দিবে। যেমন করে আমাকে সরি বলো।
নীড় মেরিনের গালে চুমু দিয়ে বলল সরি। প্রান্তিক তালি দিলো।
মেরিন : ইটস ওকে।
প্রান্তিকের সাথে কথা বলে রাখলো।
নীড় : কোথায় ছিলে সারাদিন?
মেরিন : হু আর ইউ?
নীড় : তোমার রেসপেক্টিভ হাজবেন্ড।
মেরিন : সেটা ভেবেই সন্তুষ্ট থাকো।

.

মেরিন ঘুমিয়ে আছে। নীড় সারা ঘরে পায়চারি করছে। আর একটু পরপর মেরিনকে দেখছে।
নীড় মনেমনে : ও কেনো নিজের নামে এমন মিথ্যা রটালো? ওই টার সাথে আমাকে নিয়ে সাজানো রেপকেইসের কি সম্পর্ক? এই মেয়েটা সব লন্ডভন্ড করে রেখে দিয়েছে। এসব কিছুর পেছনে নিশ্চয় বড় কিছু ছিলো। ওর সাথে হ্যারির তেমন রকমের সম্পর্ক ছিলোনা। না ছিলো লিভইনে। তবুও আমি কি সব বলে এসেছি ওকে। কাজটা হয়তো ঠিক হয়নি। যা করেছি বেশ করেছি। হ্যারির সাথে না থাকুক। অন্যকারো সাথে তো ছিলো। ওরা বোনেরা এমনই। ওর বোন ভালোবাসার নামে ভাইয়াকে ঠকিয়েছে। কে জানে কতো কতো ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়েছিলো। আমার ভাইয়াকে ধোকা দিয়েছে। তার বোন আর কেমন হবে? অমনই হয়েছে। না… ওকে নিয়ে আর ভাববোনা। ওকে নিয়ে ভাবা অর্থহীন। সময় নষ্ট।
নীড় সোফায় বসলো। ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরলো।

.

সকালে…
মেরিন দেখে নীড় সোফায় ঘুমিয়ে আছে।
মেরিন : লুজারটা সোফায় ঘুমিয়ে আছে কেনো? থাকুক আমার কি?
মেরিন গোসল করে বেরিয়ে দেখে নীড় বসে আছে। মেরিন যেনো দেখেও দেখলোনা।
নীড় : বাহিরে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। তাই রেডি হয়ে লাভ নেই। বের হতে পারবেনা।
মেরিন : আমি আজকের আবহাওয়া বার্তা দেখেছি। আজকে ভারী বর্ষন হবে সেটাও আমি জানি।
নীড় : বের হতে পারবেনা যখন জানো তাহলে কেনো এতো সাজসজ্জা? আমাকে দেখানোর জন্য? উদ্দেশ্যটা বড্ড রঙ্গীন। মাথা আমার ঠিকই ঘুরে গিয়েছে। নিয়তও পাল্টাতে পারে।
মেরিন : মেয়েরা কেনো সবসময় অন্যদের জন্য সাজবে? নিজের জন্য সাজতে পারিনা আমরা?
নীড় : নারীর সাজসজ্জা তখন পূর্নতা পায় যখন তার সাথী সেই সাজ দেখে মুগ্ধ হয় এবং তারিফ করে। তারিফে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায়।
মেরিন : কে আমার সাথী? তুমি? তোমরা তীর মেরে আঘাত মারতে পারো। তোমাদের মতো ছেলেরা সাথী হওয়ার যোগ্য নয়। বর্তমানে তোমার কাতারেই সব পুরুষ পরে।
নীড় : ইয়াহ ইয়াহ… আজকে সারাদিন তোমার সাথে এই ঘরেই কাটাতে হবে। এরচেয়ে বেশি যন্ত্রণার আর কি হতে পারে?
মেরিন : তুমি আমার কাছে জড়বস্তুর ন্যায়। যা ইচ্ছা তাই করতে পারো। নজরে আসবেনা।
নীড় : সায়ানের ভাষ্যমতে তোমার কোনো লাভার ছিলোনা।
মেরিন : ও আমার ভালো বন্ধু। তাই ভালো বন্ধুর মতো আচরণই করছিলো। কিন্তু ও জানেনা যে তুমি কেমন হাজবেন্ড আর আমি কেমন ওয়াইফ।
নীড় ওয়াশরুমে ঢুকলো। বেরিয়ে দেখে মেরিন ল্যাপটপে কাজ করছে। খাবার রাখা আছে। মেরিন খাচ্ছে আর কাজ করছে।
নীড় : খাবারও দেখি আনা হয়েছে। এতো মেহেরবানি! কিছু আছে কি?
মেরিন : না খেলে না খাবে। আমি দুপুরে খেয়ে নিবো।
নীড় খাবারটা খেতে লাগলো।
নীড় মনেমনে : আমি কি নরম হচ্ছি ওর প্রতি? নাকি এটা কেবলই অপরাধবোধ। চরিত্র নিয়ে কথা বলেছি… ঠিক হয়নি। যে মেয়ে লিভইনে থাকে , এতোএতো ছেলেদের সাথে মেলামেশা করে সে ভালো কিভাবে হয়?
মেরিন : আমাকে দেখা হয়ে গেলে পিলোটা পাস করো। দখল করে বসে আছো।
নীড় : মুগ্ধ হয়ে তোমাকে দেখছিনা। তোমার পরিবর্তী পরিকল্পনা বোঝার চেষ্টা করছি।
মেরিন উঠে গিয়ে ওর কোলে বসে ওর গলা জরিয়ে ধরলো।
মেরিন : এখন দেখো আমাকে। দেখে বোঝার চেষ্টা করো।
নীড় : তুমি কি আমাকে সিডিউস করছো?
মেরিন : তোমরা ছেলেরা চোখ দিয়ে গিলে খাবে আর আমরা সিডিউস করলেই দোষ? নিজেদের দোষটাও ধরো।
নীড় : তোমার কাজের বিপরীতে কিছু করলে সামলাতে পারবে তো?
মেরিন : রেপিস্টের সাথে দিনরাত থাকছি।রেপিস্ট কি কি করতে পারে সেটাও জানি।
নীড় দাঁতেদাঁত চেপে বলল : ওঠো আমার কোল থেকে।
মেরিন : বসার শখও নেই তোমার কোলে।
মেরিন উঠে গেলো।

পরদিন ভিসা পেয়ে গেলো।এরপর ফ্লাইটের টিকিট কেটে পৌছালো দেশে।

.

রাতে…
নীড়-প্রান্তিক ঘুমিয়ে আছে। গভীর রাত। মেরিন উঠে বসলো। রুমে একটু পায়চারি করলো। দেখলো নীড়ের ঘুম ভেঙে যায় কিনা। ভাঙলোনা নীড়ের ঘুম। নীড় মোবাইল নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো। এরপর নিজের মোবাইলে রেকর্ড করা ‘আই হেইট ইউ মেরিন’ ভয়েস কোড ব্যবহার করে মোবাইল আনলক করলো। আনলক হবার পর ও একটু অবাক হলো। কারন ডিসপ্লেতে ওদের তিনজনের ছবি দেয়া। প্রান্তিক ওদের দুজনকে জরিয়ে ধরে রেখেছে। পরে ভাবলো যে এগুলো নিয়ে ভাবার সময় নেই। দেখতে লাগলো সিসিটিভির সাথে কানেকশনটা। প্রনয়-নীলার রুমের স্ক্রিনও পেয়ে গেলো।
মেরিন মনেমনে : এই পুরো ফুটেজই উড়িয়ে দিবো। ফোনটা আগে সাইলেন্ট করে নেই।
মেরিন নীড়ের মোবাইলটা হাতে নিয়েই প্রনয়-নীলার রুমে ঢুকলো। হাতের ছাপ গুলো নিতে লাগলো। নেয়া শেষে ঘরে ফিরে গেলো। এরপর আবারো ওয়াশরুমে ঢুকলো মোবাইলটা নিয়ে। সব ফুটেজ ডিলিট করে দিলো। বেরিয়ে এসে মোবাইলটা রেখে দিলো জায়গামতো। তবে রাখার আগে মোবাইলটা ওরনা দিয়ে মুছে নিলো যেনো ওর ফিঙ্গারপ্রিন্ট মোবাইলে না থাকে। এরপর নিজের জায়গায় শুয়ে পরলো।
মেরিন মনেমনে : ওহ ডিয়ার হাজবেন্ড… ফার্স্ট স্টেপ ডান। খুব সাবধানো পা ফেলবো। আর নয় তারাহুরো।

.

পরদিন…
মেরিন : জন… কজনের ফিঙ্গার প্রিন্ট আছে , কাদের আছে সবটা জানতে চাই।
জন : চলে আসবে ম্যাম।
মেরিন : কাজটা হবে খুব সাবধানে।
জন : এই কাজটা আমি নিজেই করবো ম্যাম। ওহ ম্যাম… পিটার দেশের বাহিরে গিয়েছে।
মেরিন : ওহ। কোথায় গিয়েছে বলো তো! বাদ দাও। কালকে পেয়ে যাবো তো?
জন : হামম।
মেরিন : বাই…
মেরিন অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো।

নীড় : পিটার…
পিটার : ইয়েস স্যার।
নীড় : কি অবস্থা? কাজ কতোদূর? প্রোগ্রেস কেমন?
পিটার : স্যার… যতোটুকু তথ্য পেয়েছি ততোটুকু কি আপনাকে বলে দিবো?
নীড় : সব তথ্য একসাথে চাই। কতোদিন লাগবে?
পিটার : দুদিন তো লাগবেই।
নীড় : দিলাম সময়।
পিটার : বাই স্যার।
নীড় : বাই।
পিটার রেখে দিলো।
নীড় : আমি জানিনা কেনো আমি এই তথ্যটা জানতে চাইছি? আল্টিমেটলি মেয়েরা তো এমনই হয়।
ইমান : আমাদের নাম কি মনে আছে? নাকি ভুলে গিয়েছিস?
নীড় : একি! তোরা?
আকাশ : হ্যা আমরা। বিয়ে করলি ট্রিটও দিলিনা। আর আসতেও বললিনা।
নীড় : খুন হতে চাস?
ইমান : প্রথমবার ওর সাথে একমত।
নীড় : প্লিজ নীড়…

.

চলবে…