প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-৩৯+৪০+৪১

0
507

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 39
writer : Mohona
(do not copy please)

.

মেরিন : চলো জন।
মেরিন জনকে নিয়ে হসপিটালে পৌছালো।
মেরিন : আপনারা যা নয় তা গল্প বলে আমাকে এখানে কেনো ডেকে এনেছেন?
ডক্টর : যা তা বলে আনিনি। সে নীলা খানই।
মেরিন : আপনারা বলবেন আর আমি বিশ্বাস করবো সেটা ভাবলেন কিভাবে?
তখন নীড়-পিটার পৌছালো।
ডক্টর : আমাদের কথায় বিশ্বাস করতে হবেনা। আপনি নিজের চোখে দেখে নিন।
মেরিন : সবসময় যে চোখে দেখা সত্য হবে সেটা কিন্তু নয়। তবুও যখন বলছেন তখন চলুন দেখা যাক।
মেরিন ঘুরে নীড়কে দেখতে পেলো। চোখ ঘুরিয়ে নিলো।
ডক্টর : মিস্টার চৌধুরী ভালোই হয়েছে যা আপনিও এসেছেন। আপনিও দেখে নিবেন। আসুন।
জিনিয়া ঘুমিয়ে আছে। নীড়-মেরিন গিয়ে দেখলো।
ডক্টর : দেখলেন?
মেরিন : হ্যা দেখলাম। নাম ধাম কিছু বলেছে?
ডক্টর : চেহারাই তো আছে।
মেরিন : নাম বলেছে কিনা?
ডক্টর : বলেছে। নীলা। জ্ঞান ফেরার পর বাঁচাও বাঁচাও বলছে। কিছু বিরবির করে জ্ঞান হারাচ্ছে। বারবার এমন হচ্ছে ।
নীড়-মেরিন : কে এনেছে এনাকে?
বলেই দুজন একে অপরের দিকে তাকালো।
ডক্টর : নেহারিকা খন্দকার।
মেরিন : তাকে আসতে বলুন। দেখি এই জন আবার কোন জন?
ডক্টর : জী আমি তাকে কল করে আসতে বলছি।
মেরিন : তারাতারি আসতে বলুন।
ওরা বের হলো।
জন : ম্যাম… মিডিয়া…
মেরিন : মিডিয়া আবার কোথায় থেকে এলো?
জন : হয়তো খবর পেয়ে।
মেরিন : আমিই মাত্র খবর পেলাম। আর মিডিয়া পৌছেও গেলো।
জন : ম্যাম এমন সব খবর বাতাসের আগে ছরায়।
মেরিন : চলো দেখি মিডিয়া কি বলে।
মেরিন জনের সাথে গেলো।
নীড় : কি বুঝছো পিটার?
পিটার : ধরতে পারছিনা।
নীড় মনেমনে : মেরিন কি নাটক করছে? গেইম কোনো? এটা কি ওর প্ল্যান?চারদিকে এতো শত্রু যে সরাসরি মেরিনের দিকে তীর ছুরতেও পারছিনা।

মেরিন গিয়ে সাংবাদিকদের সামনে দারালো। তাদের এতোএতো প্রশ্ন।
মেরিন : আপনারা এতোজন । এতোগুলো মুখ আপনাদের। আমার তো একটিই। একজন একজন করে প্রশ্ন করুন। মাছের বাজার নয় এটা।
○ : ম্যাম আপনার বড়বোন কি সত্যিই ফিরে এসেছে? আপনার অনুভূতি কেমন?
মেরিন : এই বিষয় নিয়ে কোনো অনুভূতি নেই। কারন আমি মনে করিনা যে ওটা আমার বোন।
● : কেনো ম্যাম? আমরা তো জানতে পেরেছি যে তার চেহারা হুবহু নীলা চৌধুরীর মতো।
মেরিন : চোখের দেখাকে কেনো সত্য মনে করবো?
♤ : আপনার কথাও ঠিক। কিন্তু ডিএনএ টেস্ট করলেই তো সত্যিটা জানা যাবে।
মেরিন : হ্যা নিশ্চয়ই জানা যাবে। কিন্তু যেসব সিচ্যুয়েশন ফেইস করেছি সেসবের জন্য ডিএনএ টেস্টের ওপর থেকেও ভরসা উঠে গিয়েছে। কোনদিক দিয়ে কে কি অদল বদল করে দেয়?
♡ : তো ম্যাম আপনি বলতে চাইছেন যে ডিএনএ টেস্ট পজিটিভ এলেও আপনি বিশ্বাস করবেন না?
মেরিন : না। কারন সবাই শত্রু।
◇ : খুব সহজেই শত্রুদের ওপর দোষ দিয়ে দিলেন ম্যাম। যদি টেস্ট পজিটিভ হয় তাহলেও আপনি বললেন যে আপনি মেনে নিবেন না যে সেটা আপনার বোন। তো এটার পেছনে আপনার উচ্চাকাঙ্খা নেই তো? পুরো খান সাম্রাজ্য নিজে ভোগ করার জন্য আপনি নিজের বোনকে অস্বীকার করছেন না তো?
মেরিন : হাউ…
নীড় : কিপ ইউর মাউথ শাট। কার সাথে কথা বলছেন আপনারা সেটা মাথায় রাখবেন। সাহস দেখে অবাক হচ্ছি আপনাদের। আমার ওয়াইফকে এমন প্রশ্ন করার সাহস কিভাবে হলো আপনাদের?
♧ : স্যার , আমরা সাংবাদিক। আমাদের সাহস এবং শক্তি সম্পর্কে আপনার ধারনা নেই।
নীড় : হয়তো আমার ক্ষমতা এবং শক্তি নিয়ে আপনার কোনো ধারনা নেই। জেনে নিবেন। এখন আপনারা আসতে পারেন। মেরিন চলো।
নীড় মেরিনের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো ভেতরের দিকে।
নীড় : তোমার শরীর দেখি জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।
মেরিন মুখটা নীড়ের কানের সামনে নিলো।
মেরিন : সিনক্রিয়েট করতে চাইছিনা। হাত ছারো।
নীড় : ডক্টর… ডক্টর।
ডক্টর : ইয়েস মিস্টার চৌধুরী?
নীড় : দে…
শমসের : দিদিভাই…
মেরিন : দাদুভাই তুমি এখানে?
শমসের : এসব কি শুনছি? কিসব নিউজ?
মেরিন : রিল্যাক্স দাদুভাই… রিল্যাক্স…
শমসের : কিভাবে রিল্যাক্স থাকবো? সত্যিই কি নীলা দিদিভাই ফিরে এসেছে?
মেরিন : হতেই পারেনা। এটা একটা ষড়যন্ত্র ভিন্ন আর কিছুইনা।
শমসের : কোথায় ওই মেয়েটি?
মেরিন : কাম।
মেরিন শমসেরকে নিয়ে গেলো।
শমসের : এতো দেখি একেবারে নীলা দিদিভাইয়ের মতো দেখতে।
মেরিন : হামম।
শমসের : তাহলে কি…
মেরিন : না দাদুভাই। এটা সত্যি হতে পারেনা।
জন : ম্যাম… নেহারিকা খন্দকার চলে এসেছে।
মেরিন : চলো দাদুভাই। নাটকের পরের পর্ব দেখা যাক।
নীড়-মেরিন নেহারিকাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগলো।
মেরিন : জন… তুলে নাও।

.

☆ : তুই তো আমার কাছে। তাহলে ওইটা কে?
নীলা : কোনটা কে?
☆ : তুই কে?
নীলা : আমি তো আমি। আমি বিশ্ব সুন্দরী। মালিকা-ই-হুসন।
নীলাকে মারা হলো।
নীলা : তুমি আমাকে মারো কেনো? হামম? আমি প্রনয়ের কাছে বিচার দিবো কিন্তু।
☆ : প্রনয় নেই। বুঝলি? প্রনয় নেই। মরে গিয়েছে ও। তুই নিজেই মেরেছিস ওকে।
নীলা : না না না। প্রনয় মরেনি। সত্যি বলছি। আমি জানি প্রনয় বেঁচে আছে।
☆ : চুপ। একেবারে চুপ। না হলে তোকে মেরেই দিবো।
নীলা : আহাহা… আমাকে তুমি মারতেই পারোনা। তুমি তো আমাকে ভালোবাসো।
☆ : চুপ। একেবারে চুপ।
নীলা : আচ্ছা আমি চুপ রইলাম। কিন্তু প্রনয় বেঁচে আছে। আমি দেখেছি। দেখেছিলাম হ্যা। কালো পোশাকে। আমি বলতেই যাচ্ছিলাম কিন্তু কিন্তু কিন্তু… তারপরে কি হলো? কি হলো তারপর? বলোনা… তুমি কে? তুমি কি মেরিন?
☆ : বন্ধ কর তোর পাগলামি।কেইসটা কি? কার খেলা? নীড়ের? মেরিনের? নাকি লিওর? উফফ…

.

লিও : না না না… কোনো তো খেলা চলছে।
প্যান্থার : ঠিক বলেছেন বস। সামনে মেরিন বন্যা খানই আনবে। ওই নেহারিকাকে জন তুলে নিয়ে গিয়েছে।
লিও : মেরিনের আন্ডারে নয়। নেহারিকা আমাদের আন্ডারে থাকবে। মেরিনের ওই অদৃশ্য বন্দিশালায় প্রবেশের আগেই ওই নেহারিকাকে তুলে নাও। পিছু নেয়া হোক জনের। শোনো , মেরিনের বন্দিশালা পর্যন্ত পৌছাতে দেবে। বুঝলে? এতে মেরিনের বন্দিশালাও চেনে হয়ে যাবে। আমি যাদেরকে চাই তাদেরকেও পেয়ে যাবো।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
প্যান্থার বেরিয়ে গেলো।
লিও : কার পরিকল্পনা? কে এটা? নীলা? নীলা কেনো হবে? নীলা তো মৃত। কি হচ্ছে এসব? মেরিন অথবা নীড়ের পরিকল্পনা নয় তো? কিন্তু ওরা তো আজমল কিবরিয়াকে নিয়ে হয়তো পরে আছে। এর আগে গিয়ে আজমল কিবরিয়ার বাসায় গিয়ে হাঙ্গামা করেছে। যে কিনা ৯বছর ধরে কোমায় আছে তাকে সন্দেহ করছে না না না এখন আজমল কিবরিয়াকে নিয়ে ভাবার সময় না। এটা নীলা নামের নতুন গুটিকে নিয়ে ভাবার সময়। কে এই মহাশয়া? কোথা থেকেই বা এলো? নেহারিকাকে তুলে নিবো। প্রশ্নউত্তর খেলা খেলবো। এরপর তুলে নেয়া হবে ওই নীলাকে। কে জানে আসলেই নীলা নাকি কোনো বহুরূপী। সব তো সামনে চলেই আসবে। এক মিনিট , এই নীলার খেলার আড়ালে অন্য কোনো পরিকল্পনা নয় তো? আমাকে এই টপিকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা নয় তো? না না না হতে পারে এমন। আমাকে চোখ কান খোলা রাখতে হবে। একটু অসাবধানতা আমার এতোদিনর পরিকল্পনা শেষ করে দিতে পারে।

.

কিবরিয়া : লাবিব… ওই নেহারিকা কোথাও যাবেনা। আসবে কেবল আমার কাছে। বুঝলে? যাকে আমি নিজে মেরেছি সে বাঁচতে পারেনা।
লাবিব : তাহলে তো নীলাকেই তুলে নিলে ভালো হয়। আসল না নকল বোঝা যেতো।
কিবরিয়া : মূর্খ। তোমার বুদ্ধি নিয়ে চললে আমি আর সফল হতাম না। নীলাকে কিডন্যাপ করা অসম্ভব। নীড়মেরিন মিলে ওকে প্রটেক্ট করছে। মানে খানচৌধুরী শক্তি একসাথে কাজ করছে। ওখান থেকে এখন নীলাকে আজরাইল ছারা কেউ নিতে পারবেনা। তাই নেহারিকাকে তুলে নাও।
লাবিব : নেহারিকা আমাদের বন্দিই হবে বস। আমার গ্যারান্টি। আমাদের ছেলেরা নেমে পরেছে।
কিবরিয়া : ভরসা আছে তোমার ওপর।

.

মেরিন : আমার কিছু হয়নি।
নীড় : জানি কিছু হয়নি। তবুও…
মেরিন : ডোন্ট টাচ মি।
নীড় : যদি তোমার সুস্থতার বিষয় হয় তাহলে আমি তোমার কথাও শুনবোনা। প্রচন্ড জ্বর তোমার। ডক্টর বলেছে মাথায় পানি দেয়ার চেয়ে ভালো হবে যদি গোসল করা হয়। তোমার অসুবিধা হবে। এক কাজ করি , আগে মাথায় পানি দেই। পরে হাতপা মুছে দিচ্ছি।
মেরিন কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। শাওয়ার অন করে দারিয়ে রইলো।
নীড় : মেরিন… দরজা খোলো। মেরিন… শাওয়ারের শব্দ পাচ্ছি। না মেয়েটা কোনো কথা শোনেনা।
প্রান্তিক : চাচ্চু…
নীড় : ইয়েস লাভ।
প্রান্তিক : মামমাম কোথায়?
নীড় : ওয়াশরুমে।
প্রান্তিক : ওহ। প্রজেক্ট বানানোতে আমার হেল্প করবে চাচ্চু?
নীড় : অবশ্যই করবো। চলো।
প্রান্তিকের প্রজেক্ট কমপ্লিট করতে নীড় সাহায্য করতে লাগলো। প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেলো।
প্রান্তিক : ওয়াও! খুব সুন্দর হয়েছে চাচ্চু। থ্যাংক ইউ।
নীড় : ওয়েলকাম। এখন এটা নিয়ে রেখে দাও।
প্রনয় : ওকে।
প্রনয় নিয়ে গেলো।
নীড় : মেরিন… মেরিন তো বের হয়নি। এক ঘন্টা হয়ে গেলো। মেরিন… মেরিন।
মেরিনের কোনো সাড়াশব্দ নেই। এবার নীড় চিন্তায় পরে গেলো।
নীড় : মেরিন… মেরিন।
নীড় আর না ভেবে দরজা ভেঙে ফেলল। দেখে মেরিন অজ্ঞান হয়ে পরে আছে।
নীড় : মেরিন… মেরিন…
নীড় মেরিনকে ঘরে নিয়ে গেলো। ডক্টরকে কল করলো। মেরিনের ভেজা পোশাক পাল্টে দিলো।

নিহাল : আরে মোশারফ তুমি? কেমন আছো?
মোশারফ : ভালো। কি হয়েছে মেরিনের?
নিহাল : মেরিনের কি হয়েছে মানে?
নীড় : ডক্টর… কাম ফাস্ট। মেরিনের শরীর ঠান্ডা বরফ হয়ে আছে। নিশ্বাসের গতিও কম।
নিহাল : সে কি? কিভাবে কি হলো? কি হয়েছে মেরিনের?
নীড় : ডক্টর আসুন।
নীড় ডক্টরকে রুমে নিয়ে গেলো। মেরিনকে দেখলো।
মোশারফ : কি হয়েছিলো?
নীড় : খুব জ্বর ছিলো। জ্বর মাথায় উঠে যেতে পারে।তাই ডক্টর বলেছে গোসল করালে ভালো হয়। ও একাএকা ওয়াশরুমে চলে যায়। অনেকক্ষন হয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু বের হচ্ছিলোনা সাড়াশব্দ ছিলোনা। দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকি।
মোশারফ : আমি কিছু ঔষধ এবং ইনজেকশন লিখে দিয়ে যাচ্ছি। ইনজেকশনটা এখনই আনিয়ে নাও। এক্ষনি দিতে হবে।
নিহাল : দিন আমি ড্রাইভারকে পাঠাচ্ছি।
প্রান্তিক : চাচ্চু মামমাম চোখ খুলছেনা কেনো?
নীড় : জ্বর এসেছে মামমামের। ঠিক হয়ে যাবে। ডক্টর দাদু এসেছে তো।
মেরিনকে ইনজেকশন দেয়া হলো। ওর ফোনটা বেজে উঠলো। নীড় নামটা দেখলো। জন কল করেছে। নীড় কেটে দিয়ে নিজের মোবাইল দিয়ে জনকে কল করলো।
জন : হ্যালো স্যার।
নীড় : মেরিন ঘুমিয়ে আছে। উঠলে আমি বলবো যে তুমি কল করেছিলে।
জন : ম্যাম তো এই অসময়ে ঘুমান না। কি হয়েছে? ম্যাম ঠিক আছেন তো?
নীড় : ঠিক আছে।
জন : ম্যামের তো জ্বর এসেছিলো। এখন কি অবস্থা?
নীড় : ভালোই। রাখছি।
নীড় রেখে দিলো ।
জন : কিছু তো হয়েছে। ম্যামের তো জ্বর ছিলো। কিন্তু ম্যামকে জানানোর প্রয়োজন যে প্ল্যান সাকসেসফুল হয়েছে নেহারিকাকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

.

লিও : কি বলছো কি?
টাইগার : ইয়েস বস। আমরা পৌছানোর আগেই জনের কাছ থেকে কেউ নেহারিকাকে ছিনিয়ে নিয়েছে।
লিও : এটা কিভাবে সম্ভব? কার এমন দাপট আছে যে জনের হাত থেকে কাউকে ছিনিয়ে নিলো? নীড়ের পিটার নয়তো?
প্যান্থার : জানিনা বস।
লিও : জানো টা কি তোমরা? তোমরা কোনো কাজের নও। এখন আমি সম্পুর্ন সুস্থ। আমি নিজেই যা করার করবো।
প্যান্থার : কিন্তু বস…
লিও : কোনো কথা নয়। দেখি নেহারিকার সন্ধান পাই কিনা? যদি না পাই তাহলে নীলার চেহারার মেয়েটিকেই তুলে নিবো।
প্যান্থার : কিন্তু নীড়-মেরিন মিলে সুরক্ষার বলয়ে আচ্ছাদন করে রেখেছে।
লিও : তো?
প্যান্থার : সসরি স্যার।
লিও : এমন কাজ করো কেনো , এমন কথা বলো কেনো যেটার জন্য সরি বলতে হয়।
প্যান্থার চুপ করে রইলো।
লিও : আমার পোশাক নিয়ে এসো। আন্ডারওয়ার্ল্ডের প্রত্যেক মাফিয়া-ডনদের কে দাওয়াত দাও। জরুরী মিটিং আছে।

.

লাবিব : বল তুই কে? বল বল…
নেহারিকা : আমি নেহারিকা খন্দকার।
লাবিব চাবুক দিয়ে আঘাত করলো।
নেহারিকা : আহ… তুমি একটা মেয়ের গায়ে হাত তুলছো?
লাবিব : হ্যা তুললাম। বল নিজের আসল পরিচয়।
নেহারিকা : বললামই তো আমি আমার নাম পরিচয়।
লাবিব : আসলটা বল।
নেহারিকা : আসলটাই তো বললাম।
আবারো নেহারিকাকে চাবুক দিয়ে আঘাত করা হলো।
নেহারিকা : আহ… আমি সত্যিই বলছি এটাই আমার আসল নাম। বিশ্বাস না হলে খোঁজ নিয়ে দেখো।
লাবিব : সেটা তো আমি নিয়েই নিবো। নীলা চৌধুরীর সাথে তোর কি সম্পর্ক?
নেহারিকা : নীলা চৌধুরী! মানে হসপিটালের ওই মেয়েটা? ওর সাথে আমার কি সম্পর্ক থাকবে? আমি বাসায় ফিরছিলাম। তখন ও আমার গাড়ির সামনে এসে পরে। কিছু বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে যায়। আমি ওকে হসপিটালে নিয়ে যাই । ওর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
লাবিব : সত্যি কথা বল।
নেহারিকা : সত্যি কথাই বলছি বাবা। বিশ্বাস করো।
লাবিব নেহারিকাকে আঘাত করতে লাগলো। একটা সময় ও জ্ঞান হারালো।
লাবিব : বস… কিছুই তো স্বীকার করলোনা।
কিবরিয়া : করেনি তো কি হয়েছে? করবে। আজকে তো কেবল একদিন।কোনো বড়কিছু পেতে হলে ধৈর্য্য ধারন করতে হয়। অধৈর্য্য হলে চলেনা।

.

রাতে মেরিনের ঘুম ভাঙলো। চোখ মেলেই নীড়কে দেখতে পেলো। নীড় ওর কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কিনা।
নীড় : কেমন লাগছে এখন?
মেরিন নীড়কে দেখছে। নীড় ওর গালে হাত রাখলো।
নীড় : খারাপ লাগছে? মাথাব্যথা করছে?
মেরিন নীড়ের হাত সরিয়ে উঠে বসতে নিলে নীড় ওর সাহায্য করলো। ও অনুভব করলো যে শরীরে যথেষ্ট শক্তি পাচ্ছেনা। কাঁপছে সারা শরীর।
নীড় : ভালো লাগছেনা তাইনা? আমি ডক্টরকে আবার কল করছি।
মেরিন : প্লিজ স্টপ। ঠিক আছি আমি।
নীড় : তোমাকে দেখে মনেহচ্ছে না।
মেরিন : আমার কথা ভাবতে হবেনা।
নীড় : সেই এক কথা।
মেরিন নিজেকে দেখলো।
মেরিন : আমার ড্রেস কে চেইঞ্জ করিয়েছে?
নীড় : এটা আমাদের বেডরুম , কোনো হসপিটাল নয়। তুমি আমার ওয়াইফ… তাই আমিই চেইঞ্জ করেছি।
মেরিন : তুমি নি…
নীড় : তোমার ভাষ্যমতে লিমিট ক্রস করেছি তাইতো?
নীড় মেরিনের ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে
বলল : কাম অন ডিয়ার… লিমিট ক্রস তো কালকেই করেছি। যেটা বারেবারে করতে চাই।
নীড় মেরিনের হাত সরিয়ে দিলো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে জনকে কল করলো।
জন : হ্যালো ম্যাম।ঠিক আছেন আপনি?
মেরিন : হ্যা ঠিক আছি। নেহারিকা মুখ খুলল?
জন : ম্যাম ও কিডন্যাপড। প্ল্যান সাকসেসফুল।
মেরিন : কে করলো?
জন : বুঝতে পারলাম না ম্যাম। তবে লিও নয়।
মেরিন : কথাটা বলার সময় তোমার লজ্জা পাওয়ার দরকার ছিলো।
বলেই মেরিন মোবাইলটা আছার মারলো।
মেরিন মনেমনে : নেহারিকা এবং ওই জিনিয়ার লিওর হাতে পরা জরুরী। না হলে আমার এই প্ল্যানটাও নষ্ট হবে।
নীড় : রিল্যাক্স জান। কি হলো?
মেরিন : একদম আমাকে জান বলে ডাকবেনা।
মেরিন দারালো। কিন্তু দারানোর শক্তি পাচ্ছেনা। বসে পরলো।
নীড় : মাথা ঘুরছে। তাইনা?
মেরিন : ঠিক আছি আমি।
মেরিন দারালো। নীড় ওকে ধরেধরে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো এরপর জোর করে খাইয়ে দিতে লাগলো। কারন ঔষধ খেতে হবে।
মেরিন : নীড় আমার বমি হয়ে যাবে।
নীড় : হবেনা। জ্বর এলে এমনটা লাগেই। শুরু থেকেই এটা বলছো। দেখি হা করো।
নীড় আরো একবার ওর মুখে খাবার দিলো। সাথেসাথে মেরিনের বমি হয়ে গেলো। নীড়ের ওপর কিছুটা পরলো। নীড় ওকে পরিষ্কার করে দিলো। ঘর পরিষ্কার করালো।

.

পরদিন মেরিন হসপিটালে পৌছালো। নীড় ওকে যেতে দিতে চায়নি। মেরিন জোর করে গেলো সাথে নীড়ও গেলো। জিনিয়ার মুখোমুখি হলোনা। মেরিন জিনিয়াকে দেখছে।
নীড় : তোমার সন্দেহর সাথে আমিও একমত। এটা তোমার বোন হতে পারেনা।
মেরিন : আমার না হয় বোন বলে আমি নিশ্চিত যে এটা আমার বোন নয়। তোমার এতো নিশ্চয়তা কিভাবে আর কেনো? আমার আপুর শরীরটা ভোগ করেছিলে বলে?
নীড় : মেরিন…📢
নীড়ের চোখ লাল হয়ে গেলো। মেরিন ওর ঠোঁটের ওপর হাত রাখলো।
মেরিন : শসস… এটা বেডরুম নয়। এটা পাবলিক প্লেস। আমরা হ্যাপি কাপল।
নীড় : আমাকে রাগিয়ে দিয়ে চাইছো যেনো আমি তোমার গায়ে হাত তুলি । আর এই পবলিক প্লেসে তোমার গায়ে হাত তুললে সেটাকে তুুমি আস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে আমার থেকে দুরে যাওয়ার। তোমার এই ফাঁদে আমি পা দিবোনা। ছারতে পারবোনা তোমাকে। কারন ভালোবাসি।
মেরিন : আমি এতোকিছু ভেবে কথা বলিইনি। তুমি যে আমাকে এমন মহান বুদ্ধিজীবী ভাবোব তার জন্য ধন্যবাদ। তবে আমি তো কেবল সত্যিই বলেছি। তুমিই তো আদালতে প্রমান করেছো যে প্রান তোমার প্রনয়ের সন্তান। তুমি প্রানের বায়োলজিক্যাল ফাদার। এখানে আমার দোষ কোথায়?

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 40
writer : Mohona
(do not copy please)

.

মেরিন : এখানে আমার দোষ কোথায়?
নীড় : আমাকে এতোটা কষ্ট দিওনা মেরিন যেটা আমি সহ্য করতে না পারি।
মেরিন : লিমিট তো ক্রস করেছোই। আর কি করা বাকি আছে? ডক্টর… ডক্টর…
ডক্টর এলো।
ডক্টর : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন : কিছু বলেছে কি এই মহাশয়া?
ডক্টর : না ম্যাম।
মেরিন : যাই একটু কথা বলে আসি। মে আই ডক্টর?
ডক্টর : অফকোর্স।
মেরিন ভেতরে ঢুকলো। জিনিয়া চোখ মেলল।
মেরিন : হু আর ইউ?
জিনিয়া : আমি… আমি নীলা।
মেরিন : নীলা? নীলা কি?
জিনিয়া : নীলা চৌধুরী।
মেরিন : মারা গিয়েছে সে।
জিনিয়া : না মেরিন।আমিই নীলা। বেঁচে আছি আমি।
মেরিন : রিয়েলি?
জিনিয়া : বিশ্বাস কর মেরিন।
মেরিন : এতোদিন কোথায় ছিলে তুমি?
জিনিয়া : আমাকে বন্দি করে রেখেছিলো। একটা বন্দি অন্ধকার ঘর। কি অন্ধকার…
মেরিন : হয়েছে হয়েছে।
জিনিয়া : অন্ধকার… বাঁচাও বাঁচাও। অন্ধকার।
জিনিয়া উত্তেজিত হয়ে জ্ঞান হারালো।
মেরিন মনেমনে : মস্তিষ্ক নিয়ে খেলার অভিজ্ঞতা হচ্ছে । ভালোই লাগছে।
ডক্টর নার্স ছুটে এলো।
মেরিন : ডিএনএ টেস্ট করলে ফলাফল চলে আসবে। আগেই আমি ওই পর্যন্ত যাবোনা। একটু সুস্থ করি। এনার হয়েছে কি ডক্টর?
ডক্টর : অনেকগুলো দিন ধরে অন্ধকার স্থানে বন্দি থাকার কারনে আতঙ্কে পরে গিয়েছে। ভয় ঢুকে গিয়েছে।
মেরিন : সুস্থ হতে কতোদিন লাগবে?
ডক্টর : এক্ষনি বলতে পারছিনা।
মেরিন : সবচেয়ে বড় কথা। মেয়েটা আসলেই অসুস্থ তো?নাকি নাটক করছে?
ডক্টর : মনেহচ্ছে না যে নাটক। সত্যিই হয়তো অসুস্থ।
মেরিন : আর আমি আপনাকেও বা কেনো বিশ্বাস করবো?
ডক্টর : ম্যাম… এভাবে বললে কিভাবে হবে? আপনি কিন্তু অপমান করছেন।
মেরিন : অপমান না। অবিশ্বাস করছি। দেখুন সুস্থ করতে পারেন কিনা?
নীড় মনেমনে : মেরিন অদ্ভুত নাকি বাস্তববাদী?
মেরিন বেরিয়ে এলো।
মেরিন : পথ ছারবে নাকি দারিয়ে থাকবে?
নীড় : সাথে চলবো। হাতো হাত দিয়ে। চলো।
নীড় মেরিনের হাত ধরে হাটতে লাগলো।
মেরিন : লুতুপুতু প্রেম দেখলে আমার জাস্ট অসহ্য লাগে।
নীড় : আমারও তাই লাগে। আমি তো ওয়াইল্ড লাভে বিশ্বাসী। একবার ভালোবাসাটা মেনে নাও।
মেরিন : ভালোবাসিনা।
তখন জন এলো।
জন : ম্যাম ঠিক আছেন আপনি?
মেরিন : আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু টক টু ইউ জন। হতাশ করেছো তুমি আমাকে।
জন : সরি ম্যাম।
মেরিন : তোমার কাছ থেকে কেউ নেহারিকাকে তুলে নিয়ে গেলো আর তুমি দর্শকের মতো দেখলে।
জন : সরি ম্যাম। আমি খবর লাগাবো এবং নেহারিকাকে খুজে নিবো।
মেরিন : দ্যাটস বেটার ফর ইউ। আর শোনো… এই মেয়েটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করো। আজরাইল ভিন্ন যেনো কেউ এসে ওকে না নিয়ে যেতে পারে।
জন : ওকে ম্যাম।
মেরিন : এদিকটা দেখে এসো। অফিসে দেখা হচ্ছে।
নীড় : কোনো অফিস না। তুমি এখন বাসায় যাবে। সুস্থ হওনি। জ্বরটা কেবল ছেরেছে।
জন : ম্যাম আপনি বাসায় চলে যান।
মেরিন : আমি কারো অ্যাডভাইস চাইনি।
নীড় মেরিনের কোনো কথা না শুনে মেরিনকে নিয়ে বাসায় চলে গেলো।

.

রাতে…
পিটার : আন্ডারওয়ার্ল্ডে মিটিং চলছে স্যার। লিও ডেকেছে মিটিং।
নীড় : মিটিং এর মধ্যেও নিশ্চয়ই লিও মুখ ঢেকে আসে?
পিটার : ইয়েস স্যার। মাস্ক পরে আসে।
নীড় : হামম। নেহারিকাকে কে কিডন্যাপ করেছে? লিও?
পিটার : না স্যার। আপনার নির্দেশ মতো আমি জনকে ফলো করছিলাম নেহারিকাকে নিয়ে যাওয়ার সময়। যে গাড়িবহর নেহারিকাকে নিয়ে গিয়েছে সেগুলোতে লিওর লোগো ছিলোনা। আর লিও নিজের সকল ট্রান্সপোর্টে নিজের লোগো ব্যবহার করে। তবে কে নিয়েছে সেটা জানতে পারিনি।
নীড় : কিবরিয়া। আজমল কিবরিয়া।
পিটার : সন্দেহ করছেন ওই কিবরিয়াকে?
নীড় : সন্দেহ নয়। আমি নিশ্চিত। সেই কোমায় থাকা কিবরিয়ার সাথে ছেলের ডিএনএ ম্যাচ খায়নি।
পিটার : স্যার আপনাকে আরো একটা খবর দেয়ার ছিলো।
নীড় : আবার কি?
পিটার : যে ছেলেকে কিবরিয়ার আসল ছেলে হিসেবে সবাই চেনে সেটা কিবরিয়ার অ্যাডপ্ট করা ছেলে।
নীড় : কি?
পিটার : ইয়েস স্যার।
নীড় : কিবরিয়ার কোনো সন্তান নেই?
পিটার : আছে।জমজ সন্তান। তারা দেশের বাহিরে থাকে।
নীড় : উফফ… এই কিবরিয়া তো আমাদের চেয়ে কয়েক ধাপ এগিয়ে। আচ্ছা পিটার… জনজ ছেলে নাকি মেয়ে?
পিটার : একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে।
নীড় : টোপ ফেলতে হবে। ওই কিবরিয়াকে ধরবোই আমি। এটা আমার নিজেকে নিজের কাছে ওয়াদা। ওকে পাতাল থেকে হলেও আমি তুলবো। আর যে মেয়েটা নীলা খানের চেহারা নিয়ে হসপিটালে আছে তাকে কিডন্যাপ করা হতে পারে। ও যেনো সুরক্ষিত থাকে সেই দায়িত্ব আমি তোমাকে দিলাম। তবে দেখবে চেষ্টা করে তার ডিএনএ স্যাম্পল জোগাড় করতে পারো কিনা? ডিএনও টেস্ট করিয়ে দেখতে চাই যে ওটা সত্যিই নীলা কিনা। ধীর গতিতে চলা আর সম্ভব নয়। চারিদিকে কেবল রহস্য আর রহস্য। একটা রহস্যের তো দ্রুত সমাধান হোক।
পিটার : ওকে স্যার।
নীড় : কিবরিয়া বিষয়টা যেনো মেরিনও না জানে।
পিটার : ইয়েস স্যার।

.

নীড় ঘরে এসে দেখে যে মেরিন ঔষধ খাচ্ছে।
নীড় : ভালো লাগলো তোমাকে মেডিসিন নিতে দেখে।
মেরিন : আমি আমার নিজের খেয়াল রাখতে জানি ।
নীড় : প্রানকে নাকি দূরে থাকতে বলেছো?
মেরিন : হ্যা। জ্বর এসেছে। ভাইরাস জনিত হলে?
নীড় : প্রানতো বলছে ওর জ্বর হলে হবে।
মেরিন : ও ছোট মানুষ।
নীড় : খুব ভালোবাসো প্রানকে। তাইনা?
মেরিন : তুমি বুঝি বাসোনা?
নীড় : আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়েই অভ্যস্ত। তুমি সেই প্রথা ভেঙেছো।
মেরিন : থ্যাংকস।
নীড় : একটা প্রশ্নের উত্তর দিবে? তুমি আমির বাহিরের প্রশ্ন।
মেরিন : প্রশ্নের ওপর নির্ভর করবে আমার উত্তর দেয়ার। কি প্রশ্ন?
নীড় : খারাপ মানুষ বন্ধুকে কোথায় রাখে এবং শত্রুকে কোথায় রাখে?
মেরিন : খারাপ মানুষের বন্ধু থাকেনা। সে কাউকে বন্ধু ভাবেনা। সবাইকেই শত্রু ভাবে।
নীড় : ওকে। তাহলে সবচেয়ে বড় শত্রুর কোথায় থাকবে? বা সবচেয়ে বড় শত্রুকে কোথায় রাখবে?
মেরিন : হয় মেরে ফেলবে নাহয় সবচেয়ে নিকটে রাখবে তিলে তিলে মেরে ফেলার জন্য। অথবা এতোটা স্বাভাবিক জায়গায় রাখবে যেখানে কেউ ভাবতেও পারবেনা যে সেখানে সে আছে। বহুরূপীও হতে পারে। এমন জায়গায় থাকবে এমন রূপে থাকবে যেখান থেকে সহজেই সবাইকে দেখা যাবে।
নীড় : হামম। আমি আমল করবো।
মেরিন : আমিও কি একটি প্রশ্ন করতে পারি?
নীড় : তুমি তো আমাকে হত্যাও করতে পারো। আর তো স্বাভাবিক প্রশ্ন।
মেরিন : ধরো , তুমি কোনো গভীর অনুসন্ধানে আছো। কিছুর খোজ করছো বা কোনো উত্তরের খোজ পেলে। আর একটু চেষ্টাতে উত্তর পেয়েও গেলে। তবে একটি উত্তর নয় । একের অধিক উত্তর পেলে। লাইক অপশন। তখন তুমি কি করবে?
নীড় : আমি কোনো উত্তর তথা অপশনেই বিশ্বাস করবোনা।
মেরিন : কেনো?
নীড় : অনুসন্ধান যদি গভীর হয় তাহলে সহজেই সমাধান বা উত্তর পাওয়া যাবেনা। আর যদি অপশনের মতো পাওয়া যায় তাহলে তো বিশ্বাস করার প্রশ্নই ওঠেনা। মনে রেখো গভীর রহস্যে রহস্যেও উত্তর থাকতে পারে আবার সমাধানেও উত্তর থাকতে পারে আবার ২টা মিলিয়েও উত্তর থাকতে পারে।
মেরিন : হামম।
মেরিন ভাবছে। ভাবতে ভাবতে খোপা করলো। নীড়ের নজর পরলো মেরিনের কাধের ওপর।
নীড় : তোমার ডান কাধে তিলসহ এর আশেপাশের স্থানে আমার চিহ্ন এখনো জ্বলজ্বল করছে।
মেরিন আয়নার দিকে ঘুরলো। দেখলো। খোপাটা খুলে ফেলল।
নীড় : অত্যন্ত লোভনীয় তিল এবং চিহ্ন।
মেরিন : চিহ্নর ধর্মই মুছে যাওয়া।
নীড় : সব চিহ্ন মোছা যায়না।
মেরিন : আমি তো মুছেই ফেলবো।
নীড় : তুমি যতোবার মুছে ফেলবে আমি ততোবার চিহ্ন বসাবো। কোনো একবার তো আর ওঠানো হবেনা।
মেরিন : তোমার দিকে তাকাতেও আমার রুচিতে বাধে।
নীড় : বাধবেই তো। ভালো লাগা ছিলাম তোমার। রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছিলে নিজেকে বিপদে ফেলে। পরে অভিমানের কবরে ভালো লাগাকে দাফন করেছো। তাই রুচিতে বাধা জায়েজ আছে।
মেরিন : পাগলের সুখ আসলেই মনেমনে।

.

২দিনপর…
মেরিন : নীড়ের কথায় যুক্তি তো ছিলো। প্রনয় চৌধুরীর সার্জারি করানোর ঠিকানা একটু দ্রুতই পাওয়া গিয়েছিলো । রহস্যের মধ্যে তো সমাধান নেই । অপশনগুলোতেও নেই। তাহলে কোথায় হতে পারে? ভাবে দেখ মেরিন। সিম্পল উত্তরই হবে। কলোম্বিয়া , অস্ট্রেলিয়া , নেদারল্যান্ড , আয়ারল্যান্ড , ডেনমার্ক , আর্জেন্টিনা। এই ৬টি দেশের নামই কেনো উঠে এলো? অন্য কোনো দেশের নাম কেনো বলা হলো না? এগুলো কোনো কোড নয়তো? কিন্তু কিসের কোড হবে?
মেরিন ভাবছে ভাবছে আর ভাবছে।
মেরিন : এক মিনিট… কলোম্বিয়ার ‘সি’ , অস্ট্রেলিয়ার ‘এ’ , নেদারল্যান্ডের ‘এন’ , ডেনমার্কের ‘ডি’ , আর্জেন্টিনার ‘এ’ । C A N A D A… কানাডা। ইউরেকা। কানাডা। মানে তাহমিদের সার্জারি কানাডাতে হয়েছিলো।
মেরিন জনকে কল করলো।
জন : হ্যালো ম্যাম।
মেরিন : তাহমিদের সার্জারি কানাডাতে হয়েছিলো?
জন : কি বলছেন কি ম্যাম?
মেরিন : হ্যা।
জন : সার্জারিতো ওই ৬দেশের একটিতে হয়েছিলো।
মেরিন : না। কানাডাতেই হয়েছে। খোজ নাও। না হলে নিজে যাও।
জন : ইয়েস ম্যাম।

.

পিটার : স্যার , আপাদের বাসার সকল সার্ভেন্ট এবং অফিসের ম্যানেজারের ডিএনএ স্যাম্পল কালেক্ট করা শেষ। তাদের পরিবারে ডিএনএ স্যাম্পলও আজকের মধ্যে চলে আসবে। কিন্তু স্যার , এদের মাধ্যমে কিবরিয়াকে কিভাবে চিহ্নিত করবেন?
নীড় : কিবরিয়া খুব সাধারন জায়গাতেই আছে যেটার কথা আমরা ভাবতে পর্যন্ত পারছিনা। কিবরিয়া লুকিয়ে আছে। ছেলেটাও পালক। কিন্তু কিবরিয়ার স্ত্রী এবং কোনো না কোনো কাজিন তো আছে। তাদের ডিএনএ স্যাম্পল নিয়ে দেখা হবে আমার বাসার কোনো সার্ভেন্টের সাথে মিলে কিনা। বোঝা যাবে কিবরিয়া বা ওর সন্তানেরা আমার আশেপাশে আছে কিনা।
পিটার : বাপরে স্যার… আপনার ভাবনা তো অনেক দূরে গিয়েছে।
নীড় : থ্যাংকস টু তোমাদের ম্যাম। তবে পিটার তোমার জন্য আরো একটি কঠিন কাজ আছে।
পিটার : অর্ডার করুন স্যার।
নীড় : খান বাড়ির সার্ভেন্টদেরও ডিএনএ স্যাম্পল লাগবে। ওই দিক দিয়েও চেক করতে হবে।
পিটার : সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো স্যার। কিন্তু স্যার , ম্যাম অসাবধানতায় তো কোনো সার্ভেন্ট রাখবেননা।
নীড় : জানি। সকল রকমের পরিচয় জেনেই খান বাড়িতে সার্ভেন্ট রাখা হয়েছে। কিন্তু ডিএনএ টেস্ট করেতো রাখা হয়নি।
পিটার : এটা অনেক দীর্ঘ পরিসরের কাজ।
নীড় : হোক।
পিটার : স্যার… আপনার সন্দেহ এবং ভাবনার জবাব নেই।
নীড় : যেখানে দারিয়ে আছি সেটার পরিপ্রেক্ষিতে যদি জানতে পারি যে আজমল কিবরিয়া বাবার রূপ নিয়ে আমাদের বাসায় আছে তাহলেও অবাক হবোনা।
পিটার : স্যার আপনিও না।
নীড় : মামনি , বাবা এবং শমসের খানের ডিএনএ টেস্ট করাও।
পিটার : স্যার…
নীড় : হ্যা।
পিটার : ওকে স্যার।
নীড় মনেমনে : পিটার তোমার এবং জনের ডিএনএ টেস্টও আমি করবো। সরি ফর দ্যাট। কিন্তু আমি নিরুপায়। বিশ্বাস করতে পারছিনা কাউকে।

.

নীড় বাসায় ফিরলো। বাসা পায়েসের ঘ্রাণে মো মো করছে।
নীড় : মামনি… পায়েস রান্না করেছো নাকি?
বর্ষা : তোর বউ রান্না করছে। মানে মেরিন।
নীড় : তুই! তুই যাসনি?
বর্ষা : না। আমি এখানেই থাকবো। আমার বন্ধুর বাসা। বন্ধু রাগ করে কোনো কথা বললে সেটা ভেবে অভিমান করার মেয়ে আমি নই।
নীড় : আমি রাগ করে কথা বলিনি। সিরিয়াসলি বলেছিলাম।
বলেই নীড় রান্নাঘরে গেলো। দেখে মেরিন পায়েস রান্না করছে। নীড় গিয়ে পেছন থেকে ওকে জরিয়ে ধরলো। আচমকা এমনটা হওয়াতে মেরিন চমকে উঠলো।
নীড় : ইটস মি জান। তাছারা আর কার সাহস আছে আমার জানকে স্পর্শ করার?
মেরিন চুপ করে রইলো।
নীড় : মাত্র জ্বর থেকে উঠলে। এখনই রান্নাঘরে কেনো?
মেরিন চুপ। নীড় মেরিনের ঘাড়ে একের পর এক চুমু দিচ্ছে। মেরিন লম্বা একটা নিশ্বাস নিয়ে
বলল : নীড়… আমি ভালো একটা মুডে আছি। প্লিজ স্পয়েল করোনা। সরো।
নীড় : ভালো মুডে তো আমিও আছি। আমার তো ভালো মুডে থাকলেও তোমাকে চাই আর খারাপ মুডে থাকলেও।
মেরিন : হয়ে গিয়েছে পায়েস।
নীড় সরে দারালো।
নীড় : কিসের খুশিতো আজকে পায়েস?
মেরিন : আমি আমার খুশির কারন কারো সাথে শেয়ার করিনা। হেল্প করো আমার। চামচ টামচ আনো।
নীড় : আমাকে তুমি কিচেনের কাজ করার অর্ডার দিচ্ছো?
মেরিন : কি এমন ক্ষতি হবে এইটুকু কাজ করলে? কেনো করা যাবেনা?
নীড় : আরে বাবা… আমি না কখন করলাম।
মেরিন : না করা উচিতও নয়।
নীড় : ওয়হোয়… আমার বউ আজকে বউয়ের মতো অর্ডার দিচ্ছে। বউয়ের আদেশ শীরধার্য।
মেরিন : ড্রামা না করলেই খুশি হবো।
নীড় : একমাত্র তুমিই তো আছো যার সামনে ড্রামা করি। বাই দ্যা ওয়ে বর্ষাকে আমি চলে যেতে বলেছিলাম। আজকে জানলাম যে ও যায়নি। ওকে আমি আরো কঠোরভাবে যেতে বলবো।
মেরিন : ও তোমার বন্ধু। ওকে চলে যেতে বলবে না রয়ে যেতে বলবে সেটা একান্তই তোমার ব্যাপার।
নীড় : আমি চাইনা ওকে নিয়ে তুমি ইনসিকিওর ফিল করো।
মেরিন : এক্সকিউজ মি… ওকে নিয়ে কেনো ইনসিকিওর হবো?
নীড় : আমাকে ভালোবাসো তাই জেলাসি থেকে।
মেরিন : নীড়… তুমি কবে বুঝবে যে তুমি বিন্দুমাত্র গুরুত্বপূর্ন নও।
নীড় : সেদিন জেলাসি থেকেই থাপ্পর মেরেছিলো।
মেরিন : রং। ইচ্ছা হয়েছিলো তাই মেরেছিলাম।
নীড় : তোমার ইচ্ছা কি তুমি নিজেই জানোনা। তুমি সেদিন রাতের কথার জবাব দাওনি। তোমার ভালো লাগা আমিই তো ছিলাম?
মেরিন : বারবার কেনো তিরস্কার কেনো করাও নিজের?
নীড় : তোমার তিরস্কারই আমার পুরষ্কার জান।
মেরিন : তুলি… সবাই নিচে আছে তো?
তুলি : জী ম্যাম।
মেরিন : নীড় নিয়ে এসো। কিছু তুমি নাও। কিছু আমি নিবো।

.

লিও : কার প্রবেশ হলো গল্পে যে আমাকে মাত দেয়ার চেষ্টা করছে? কে আমার শিকার কেরে নিলো? কে এই ব্যক্তি? উদ্দেশ্য কি? লিও… হসপিটালে চল। জন নেই। মেরিনের শক্তি কম আছে। আমি নিজে তুলে নিয়ে আসবো ওই মেয়েটিকে। কার প্ল্যানিং দেখতে হবে তো।
লিও রূপ বদলে হসপিটালে গেলো।
লিও মনেমনে : নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক কঠোর। নীড়-মেরিন তো সাংঘাতিক ব্যবস্থা করেছে। না না না কাঁচা কাজ করা যাবেনা। ডক্টর হয়ে জয়েন করতে হবে এই হসপিটালে। বের হতে হবে।
সামনে দিয়ে বের হওয়ার সময় দেখলো বাহিরে নীড়ের গাড়ি দার করানো।
লিও : না না এখান দিয়ে যাওয়া যাবেনা। পেছন দিয়ে যেতে হবে
লিও পেছনের দিকে গেলো।
নীড় : হাই মিস্টার লিও।
মেরিন : হ্যালো জিজু।
নীড় : ডোন্ট কল হিম জিজু। এটা আমার ভাইয়া নয়। আমার ভাইয়া মরে গিয়েছে।
মেরিন : এটাই আমার জিজু। তাইতো নেহারিকাকে জনের কাছ থেকে নিয়েছে। আবার আপুর চেহারার মেয়েটিকেও নিতে এসেছে।
নীড় : ওটা তোমার আপু হলেও হতে পারে।
মেরিন : অসম্ভব। হতেই পারেনা। আমার আপু নেই। তোমার সাথে তর্ক করতে চাইনা। ক্যাচ হিম।
লিও : তোমরা নিজেকে স্মার্ট মনে করো তাইনা? কথার জালে ফেলার চেষ্টা ভালোই ছিলো।
নীড় : চেষ্টা সফল হবে এখন।
লিও : আমাকে ধরা এতো সহজ নয়।
মুহূর্তের মধ্যেই চারদিক ধোয়ায় ভরে গেলো। ওরা দুজন নাক ধরে নিলো। লিওকে ধরার চেষ্টা করলো। কিন্তু লিও চলে গেলো।
নীড় : মেরিন তুমি ঠিক আছো?
মেরিন : না আমি ঠিক নেই। মোটেও ঠিক নেই।
নীড় : চিল। আমরা ধরে ফেলবো লিও কে।
মেরিন : কোনোদিনো পারবোনা। ও সবসময় এক ধাপ এগিয়ে থাকছে।
নীড় : চেষ্টার একটা বড় গুন আছে। সেটা কি জানো? চেষ্টা কখনো আমাদেরকে হতাশ করেনা। চেষ্টা সফলতা ঠিক এনে দিবে। আজ নাহয় কাল আসবেই।
মেরিন কিছু না বলে চলে গেলো।

.

কিবরিয়া : মুখ খুলল নেহারিকা?
লাবিব : ও তো সেই একই কথা বলে যাচ্ছে।
কিবরিয়া : বাহিরে থেকে কি তথ্য পেলে?
লাবিব : ও যা বলছে সব তথ্য বাহিরের সাথে মিলেছে।
কিবরিয়া : এই প্রথম ধন্ধে পরে গেলাম। দেখো আরো দুই একদিন চেষ্টা করে। যদিই কিছু তথ্য বের করতে পারো।
লাবিব : তবুও যদি বের করতে না পারি? তাহলে কি মেরে দিবো?
কিবরিয়া : লাশের গন্ধ খুব খারাপ। লাশের গন্ধে নীড়মেরিন পৌছে যেতে পারে আমি পর্যন্ত। তাই ছেরে দিবে। তোমার নাম বলোনি তো? চেহারা দেখাওনি তো?
লাবিব : না।
কিবরিয়া : তাহলে ছেরে দাও। একটু কনফিউটশনে ফেলা যাক নীড়মেরিনকে। বেচারা দুজন খোঁজ করছে আমার । আরো একদিন চেষ্টা করে মুক্ত করে দিও।

.

পরদিন…
বর্ষা মেরিনের ঘরে নক করলো।
মেরিন : কাম।
বর্ষা ভেতরে ঢুকলো। মেরিন প্রানকে তৈরি করছে ক্যারাটে ক্লাসের জন্য।
বর্ষা : ক্যারাটে ক্লাসে যাওয়া হবে বুঝি?
প্রান্তিক : হ্যা আন্টি।
মেরিন : বসো তুমি বর্ষা।
বর্ষা বসলো।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 41
writer : Mohona
(do not copy please)

.

বর্ষা বসলো।
মেরিন : বাচ্চা… চাচ্চু নিচে গাড়িতে ওয়েট করছে। গো।
মেরিন প্রান্তিকের কপালে চুমু দিলো। প্রান্তিকও ওর গালে চুমু দিলো। এরপর নিচে চলে গেলো।
বর্ষা : তুমি আমার সাথে কথা বলছো দেখে অবাক হচ্ছি।
মেরিন : কেনো কথা বলবোনা কেনো? তুমি আমার দোস্ত না দুশমন?
বর্ষা : হয়তো দুশমন। সেদিন আমার জন্য নীড়কে থাপ্পর মারলে যে।
মেরিন : কে তুমি?
বর্ষা : সরি…
মেরিন : কে তুমি?
বর্ষা : তোমার এই প্রশ্নের মানে বুঝতে পারলাম না। কে আমি মানে কি?
মেরিন : কে তুমি?
বর্ষা : আমি বর্ষা।
মেরিন : তুমি বর্ষা হও গ্রীষ্ম হও হেমন্ত হও শরৎ হও বসন্ত হও তাতে আমার কিছুই যায় আসেনা। তাই তোমার জন্য আমি নীড়কে থাপ্পর মেরেছি সেই ভাবনা ভুলে যাও। তুমি তো আমােদের মধ্যে কোনো কমা , ঊর্ধ্বকমাও নও যে তোমার জন্য নীড়কে থাপ্পর মারবো।
বর্ষা : আমার সাথে কথা বলার জন্য জেলাসি থেকেই তুমি নীড়কে থাপ্পর মেরেছো।
মেরিন : ওয়েট অ্যা মিনিট… কি বললে? জেলাসি? হাহাহা। সরি। বাট আই কান্ট স্টপ লাফিং। হাহাহা।
মেরিন হাহা করে হাসতে লাগলো।
বর্ষা : আমি কোনো কৌতুক বলিনি যে তুমি হাসছো।
মেরিন : কৌতুকের চেয়েও হাস্যকর কিছু বলেছো প্রিয়। জেলাসি হবো তোমাকে নিয়ে? কে তুমি? কি তুমি? লুক অ্যাট ইউ দেন লুক অ্যাট মি। আমি মেরিন বন্যা খান। পর্বত টিলাকে দেখে হিংসা করেনা। টিলা পর্বতকে দেখে হিংসা করে। আমি মেরিন বন্যা খান হলাম পর্বত। তোমাকে তো আমি টিলাও মনে করিনা যে হিংসা করবো।
বর্ষা : তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।
মেরিন : ট্রাস্ট মি আমার কোনো ইচ্ছা ছিলোনা তোমাকে অপমান করার। তুমি যেচে অপমানিত হলে।
বর্ষা : রূপ নিয়ে এতো অহংকার , এতো দম্ভ ভালো নয়।
মেরিন : দম্ভ আমার রূপ নিয়ে নয়। দম্ভ আমার জন্ম নিয়ে।
বর্ষা : পজিশন সবসময় থাকেনা। আজকে টাকা আছে কালকে টাকা নাও থাকতে পারে।
মেরিন : তোমার কানে আসলেই সমস্যা আছে। আমি পজিশনের কথা বলিনি। জন্মের কথা বলেছি। জন্মের ওপর আমাদের কারো নিয়ন্ত্রন থাকেনা। সেটা নিয়তি। নিয়তি আমাকে খান বাড়িতে পাঠিয়েছে। জমিদার পরিবার। আভিজাত্য আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে। ব্লুব্লাড আমাদের। আর রাজা যেখানেই যায় মন থেকে রাজাই থাকে। আমি সেটাই বলেছি।
বর্ষা : এতো দম্ভ ভালো নয়।
মেরিন : কি করবো বলো? ডিএনএ গত সমস্যা। আমার পূর্বপুরুষদের মনে করানো উচিত ছিলো।
বর্ষা : আমি নিশ্চিত যে নীড়ের সাথে আমার বন্ধুত্বের কারনে ইনসিকিওরিটি থেকেই তুমি আমাকে এসব বলছো।
মেরিন : আবার সেই এক কথা। তোমরা একসাথে লেখাপড়া করেছো। কতো বছরের বন্ধুত্ব তোমাদের। তাইনা?
বর্ষা : ইয়েস।
মেরিন বর্ষার দুই গালে হাত রাখলো।
মেরিন : এতোবছরের সম্পর্ক তোমাদের। তবুও নীড় তোমাকে কেবল বন্ধুই ভেবে গেলো। ভালোবাসা ভাবতে পারেনি। প্রেমে পরেছিলো আমার এই চেহারার। আমার এমন অপমানের পরেও আমার চেহারার প্রেম ছারতে পারেনি। তুমি নিজের জন্য জায়গা করতে পারোনি। সেই তোমাকে নিয়ে ইনসিকিওর হবো? ন্যাহ…
মেরিন বর্ষার গাল ছেরে দিলো।
বর্ষা : আমিও ওকে কেবল বন্ধুই ভেবেছি। ভালোবেসে ডাক দিলে সাড়া দিতো।
মেরিন আরো এক দফা হেসে নিলো।
মেরিন : উফফ… তোমার কথায়না আমি হাসতে হাসতে পাগল হয়ে যাবো। ক্লাস এইট থেকে ক্লাস এসএসসি পর্যন্ত তুমি কেবল ব্লু কালার ড্রেস পরতে নীড়ের পছন্দের রঙ ব্লু বলে। নীড়ের মারকুটে মেয়ে পছন্দ । কিউটডল টাইপ মেয়ে না। তাই ইন্টারমিডিয়েটে বক্সিং শিখলে । জার্মানির স্কলারশিপ মিস দিয়ে ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটিতে গিয়েছিলে। কারন নীড় , ইমান , আকাশ ওখানে অ্যাডমিট হয়েছিলো। দীর্ঘ ১৫বছর ধরে চেষ্টা করছো নীড়কে নিজের দিকে আকর্ষণ করার। কিন্ত নীড় পছন্দ করলো আমাকে। যাকে তুমি চাইতে চাইতে ক্লান্ত তাকে না চাইতেও আমি পেয়ে গিয়েছি। আমাকে পছন্দ করে এটা জানার পর নীড়ের কোল্ডড্রিংকে ড্রাগ অ্যাড করে দাও যেনো ও মাতাল হয় , উত্তেজিত হয় । এবং উত্তেজিত হয়ে ও কোনো মেয়ের সাথে ইন্টিমেট হয়। কাছে ছিলে তুমি।তাই নিজের সাথে নীড়কে বাধার জন্য কাজটা করো । নীড় সেদিন সোমবারের রোজা ছিলো। তাই সেটা পান করেনি আর তোমার প্ল্যান ফ্লপ।
বর্ষা : সব তথ্যই আছে দেখছি। তো ইন্ডিয়া থেকে বিদায় নিয়ে বাংলাদেশে ফেরা পর্যন্ত ৬-৭বছরের ঘটনা জানো কি?
মেরিন : প্রয়োজন নেই। এটা বলোনা যে মাঝের এই বছরগুলোতে তোমাদের এমন কিছু ঝাকানাকা হয়েছে যেটার কারনে তোমাদের একটা বেবি আছে। চিপ সিরিয়াল হয়ে যাবে।
বর্ষা : ওগুলো আমিও বলিনা। তবে বলার সরি সরি না বলার মতো অনেক কিছু হয়েছে। জানিনা নীড় বলেছে কিনা তোমাকে। মাঝের ওই সে ঘটনাগুলো ভেবেই ভাবলাম তুমি জেলাস হয়েছো।
মেরিন : আল্লাহ করুক তোমাকে নিয়ে আমার জেলাস হওয়ার দিন না আসুক। কারন যদি সেদিন আসে তাহলে তুমি এই পৃথিবীতে নয়। পরলোকবাসী হবে।
বর্ষা : এখনো তুমি জেলাস নও এরমানে এটাই যে তুমি আজও নীড়কে ভালোবাসোনা।
মেরিন : আমি নীড়কে ভালোবাসি কি ঘৃণা করি সেটা আমাদের ব্যাপার। দূরে থাকো।
বর্ষা : তোমাদের সম্পর্ক ওপেন সিক্রেট।
মেরিন : ওপেন সিক্রেট বেডরুমের বাহিরে পর্যন্ত। ভেতরের খবর কেউ জানেনা।
বর্ষা : আমাকে তুমি যাইই ভাবোনা কেনো আমি নীড়কে ভালোবাসি সত্যি তবে বন্ধুও ভাবি। তাই চাই যে ও ভালো থাকুক। ও তোমাকে খুব ভালোবাসে । ওর পাশে থেকো , ওর হয়ে থেকো।
মেরিনের কপালে ভাঁজ পরলো। ও দেখলো বাহিরে কেউ আছে কিনা যাকে বর্ষা এগুলো শোনাচ্ছে।
বর্ষা : কেউ নেই বাহিরে। কাউকে শুনিয়ে কথাগুলো বলিনি। মন থেকে বললাম। বন্ধু তো নীড়ের তাই চিনি ওকে। ও কিন্তু হিংস্র নেকড়ে , আহত সিংহের চেয়েও বেশি ভয়ংকর।
মেরিন : তোমার সিংহ আমার কাছে তো বিড়াল। আর সিংহ হলে আমিও তো সিংহী। ওয়াইল্ড লাভ স্টোরি আমাদের। তাই আমি ভয় পাইনা। কি করার বলো? তুমি কি আরো বাকযুদ্ধ করবে?
বর্ষা বেরিয়ে গেলো।
মেরিন : মাথাব্যথা দিয়ে গেলো। কফি লাগবে।

.

কিবরিয়া : লাবিব… নতুন করে কেউ আমার খোঁজ করছেনা তো?
লাবিব : না স্যার। টেনশন ফ্রি থাকুন।
কিবরিয়া : আমার খোঁজ করছেনা এটাই আমার কাছে বেশি চিন্তার। নীড়-মেরিন যথেষ্ট ভয়ংকর। নিহাল-নীলিমা , কবির-কনিকা , প্রনয়-নীলা সবাইকে শূন্যের সাথে মিশিয়ে রেখেছি। আমি পর্যন্ত তো দূরের কথা আমার নাম পর্যন্ত পৌছাতে দেইনি। কিন্ত এই দুজন আমার টনক নরিয়েছে। আমার খোঁজ বন্ধ করে দিতে পারেনা। গভীর পরিকল্পনা করছে।
লাবিব : স্যার , আপনি যে রূপে আছেন সেখানে পৌছানো অসম্ভব।
কিবরিয়া : হ্যা জানি আমি। তবুও নিশ্চিত থাকতে পারছিনা। ছেরে দাও নেহারিকাকে। দেখো কে তুলে নেয়? নীড় নাকি মেরিন।
লাবিব : ওহ স্যার… জন কানাডা গিয়েছে।
কিবরিয়া : আর এই কথাটা তুমি এখন বলছো? কতো মারাত্মক খবর জানো? তাহমিদের ঘটনা জেনে গেলে?
লাবিব : স্যার , জন যদি সেই উদ্দেশ্য যেতো তাহলে ওই ৬টি দেশে যেতো।
কিবরিয়া : হ্যা সেটাও ঠিক।

.

পিটার : স্যার…ডিএনএ টেস্ট রিপোর্টগুলো ৭দিনের মধ্যে চলে আসবে। অনেকগুলো স্যাম্পল তো।
নীড় : হামম।
পিটার : স্যার আপনাকে চিন্তিত মনেহচ্ছে।
নীড় : হামম। লিও অনেক ধূর্ত পিটার। পরবর্তী প্ল্যান ও করে ফেলেছে। মেরিনকে কিছু করে না ফেলে।
পিটার : স্যার আপনি আছেন তো।
নীড় : হামম।
মনেমনে : কেনো মনেহচ্ছে আমি মেরিনকে হারিয়ে ফেলবো?
পিটার : স্যার আপনার কফি।
নীড় : থ্যাংকস। পিটার…
পিটার : ইয়েস স্যার?
নীড় : আমি একটা কথা ভাবছিলাম।
পিটার : কি কথা স্যার?
নীড় : কবির খান মরে না গেলে কিবরিয়া হয়তো তার রূপও নিয়ে নিতো। কি বলো?
পিটার হেসে দিলো।
পিটার : স্যার আপনি কিন্তু যথেষ্ট দুষ্টু।
নীড় : অমন শ্বশুর তো কিবরিয়াই হবে। জানো কিবরিয়া দুই পরিবারেরই শত্রু। কিন্তু ওর বাবা বিরুদ্ধে বাবা এবং কবির খান স্বাক্ষী দেয়। সেটার ভিত্তিতে ফাঁসি হয়।

.

☆ : হুবহু এই চেহারা। কিভাবে হতে পারে? এই তোর কোনো জমজ বোন আছে নাকিরে?
নীলা : জমজ! জমজ কি?
☆ : একদম নাটক করবিনা। কিছু জিজ্ঞেস করলেই তোর পাগলামি । মাঝেমধ্যে মনেহয় তুই পাগলই না।
নীলা : পাগল! আমি পাগল হতে যাবো কেনো? আমার নাম তো নীলা। নীল নীল নীলাঞ্জনা। আমার চোখ দুটোও টানা টানা। হাহাহা…
☆ : চুপ চুুপ একদম চুপ।
নীলা : না। আমি আজকে চুপ করবোনা। আজকে আমি গাইবো। গান আমি গাইবো এই আসরে। হাহাহা।
☆ : একে আর ভালো লাগছেনা। মাথা নষ্ট করে দিলো।

.

পরদিন…
লিও ডক্টর সেজে হসপিটালে পা রাখলো।
লিও মনেমনে : চলে এলাম হসপিটালে। নীড়-মেরিন পাহারা তো অনেক বসিয়েছো। নিয়ে আমি যাবোই। আমাকে ধরার জন্যই তো পরিকল্পনা। নিয়েও যাবো আর বুঝতেও পারবেনা। আহা আহা আহা আজকে নিবোনা। আজকে তো ডক্টর সেজে হসপিটালে এলাম। এই মেয়েটাকে নিয়েও যাবো আর আমার চিহ্নও ছেরে যাবো। একটু খেলবো একটু হাসবো। দুই শত্রুর হসপিটাল রোম্যান্স দেখবো। মেরিনের রিয়্যাকশন দেখবো। নীড়ের রিয়্যাকশন দেখবো। বোঝার চেষ্টা করবো ওদের প্ল্যান কিনা। এরপর সবটা বুঝে তুলে নিবো।

.

প্রান্তিক : মামমাম… চাচ্চু এলোনা কেনো আমাদের সাথে?
মেরিন : মামমামের সাথে এসে বুঝি ভালো লাগছেনা?
প্রান্তিক : লাগছে তো। কিন্তু চাচ্চু এলে আরো মজা হতো।
মেরিন : চাচ্চু তো কল রিসিভ করলোনা।
প্রান্তিক : চাচ্চু এলে কিন্তু বকে দিবে।
মেরিন : ওকে মাই প্রিন্স। আজকে তুমি আর আমি মনের মতো শপিং করবো।
প্রান্তিক : আমি যা যা বলবো সব কিনে দিতে হবে কিন্তু।
মেরিন : ওকে।
প্রান্তিক : আগে বোবা ড্রিংকস কিনে দাও।
মেরিন : হামম।

নীড়ও এই একই শপিং মলে এসেছে। ও এসেছে মেরিনের জন্য গিফ্ট নিতে। ডায়মন্ড নিতে। একটা জুয়েলারি শপে ঢুকলো। দেখে বর্ষা আছে শপে। ব্রেসলেট দেখছে। ও বেরিয়ে গেলো।
নীড় : এই মলে আসাই ঠিক হয়নি। অন্য মলে যাবো।
নীড় নিচে নামছে।
প্রান্তিক : মামমাম মামমাম…
মেরিন : হ্যা বাচ্চা।
প্রান্তিক : ওই দেখো নিচে চাচ্চু। হয়তো আমাদের সারপ্রাইজ দিতে এসেছে।
মেরিন : না বাচ্চা। দেখো চাচ্চু চলে যাচ্ছে। হয়তো কোনো কাজে এসেছিলো।
প্রান্তিক : তাহলে চাচ্চুকেই সারপ্রাইজ দেই চলো। যেতে যেতে চাচ্চুকে কল করো।
মেরিন : থাকনা বাচ্চা।
প্রান্তিক : করোনা মামমাম। কল করে জিজ্ঞেস করবাে
মেরিন করলো। নীড় দারালো। স্ক্রিনে মেরিনের নামটা দেখলো।
নীড় : হ্যালো জান।
মেরিন : কোথায় আছো তুমি?
নীড় : কেনো বলো তো?
প্রান্তিক মেরিনের হাত থেকে মোবাইলটা নিলো।
প্রান্তিক : চাচ্চু… তুমি কোথায়?
বর্ষা : নীড়… তুই এখানে?
নীড় পেছনে ঘুরলো।
নীড় : ইউ…
মেরিন-প্রান্তিক ওপর থেকে দেখলো বর্ষাকেও।
মেরিন মনেমনে : এই মেয়ে কি চাইছে? কি এর উদ্দেশ্য?
নীড় : লাভ আমি পরে ক…
প্রান্তিক : চাচ্চু ওপরে দেখো। আমরা এখানে । ডান দিকে ওপরে।
নীড় ওপরে তাকালো। প্রান্তিক হাত নারালো।
নীড় : মাই গুডনেস। হেই লাভ… দারাও দুজন ওখানে। আমি আসছি।
প্রান্তিক : ওকে ওকে।
প্রান্তিক রেখে দিলো।
বর্ষা : তোরা শপিং এ এসেছিস বুঝি?
নীড় : শপিং মলে মানুষ কৃষি কাজ করতে নিশ্চয়ই আসেনা।
বর্ষা : আশ্চর্য্য! তুই এমন বিহেভ করছিল কেনো? তোর বউয়ের সাথে তোর ঝামেলা চলছে সেটার রাগ আমার ওপর তুলবি নাকি?
নীড় : আমার আর মেরিনের বিষয়ে কোনো কথা বলবিনা। চল আয়।
বর্ষা : তোদের ফ্যামিলি টাইমে আমি কাটা হতে চাইনা।
নীড় : চলে গিয়ে মেরিনের মনে সন্দেহ ঢোকাতে চাস? আয়। দেখা করে চলে যাস।
নীড় বর্ষাকে নিয়ে মেরিন-প্রান্তিকের কাছে গেলো।
প্রান্তিক : চাচ্চু তুমি যদি মামমামের কল রিসিভ করতে তাহলে আমরা একসাথেই আসতে পারতাম।
মেরিন : চাচ্চু কাজে এসেছিলো বাচ্চা।
বর্ষা : আমিও তো ওকে মলে দেখে অবাক।
প্রান্তিক : তুমি আর চাচ্চু একসাথে এসেছো?
বর্ষা : নো মাই প্রিন্স চার্মিং। আমি আসছি। তোমরা ইনজয় করো।
বর্ষা যাওয়া জন্য পা বারালো।
মেরিন : ইউ শুড জয়েন।
বর্ষা : আমার কাজ শেষ।
মেরিন : কে জানে কখন কার কি কাজ চলে আসে। আমাদের জয়েন করবে হয়তো এটাই হতে পারে তোমার একটি কাজ।
বর্ষা : এটা কিভাবে কাজ হতে পারে? আসছি আমি। বাই।
বর্ষা চলে গেলো।
নীড় : লাভ, কখন এসেছো তোমরা?
প্রান্তিক : অনেকক্ষন চাচ্চু।
নীড় : কিডজোনে গিয়েছো?
প্রান্তিক : না না। আগে শপিং করবো এরপর কিড জোনে যাবো।
নীড় : হ্যা এটাও ভালো আইডিয়া। চলো।
নীড় এক হাত দিয়ে প্রান্তিকের হাত ধরলো এবং অন্য হাত দিয়ে মেরিনের হাত ধরলো। মেরিন রিয়্যাক্ট করলোনা। নীড় একটু অবাক হলো।

.

রাতে…
নীড় : কিছু বললে বিশ্বাস করবে কি?
মেরিন : বলারই প্রয়োজন নেই।
নীড় : আমারও মনেহয় এটাই ঠিক। আমি ভেবেছিলাম আজকেও একটি থাপ্পর খাবো। যাইহোক , হাতটা দেখি।
মেরিন : কার?
নীড় মেরিনের হাত নিয়ে
বলল : আমার জানের।
মেরিনের আঙ্গুলে আংটি পরিয়ে দিলো।
নীড় : আমি জানিনা আজকে শপিং মলে তোমার প্রান্তিককে নিয়ে যাওয়া কো ইনসিডেন্ট নাকি বর্ষার যাওয়াটা। আমি জানি বর্ষার মনে আমাকে নিয়ে ফিলিংস আছে। কিন্তু ও আমাকে যথেষ্ট ভালো বন্ধু ভাবে এবং আমিও। ও নিজের অনুভূতিকে আমাদের বন্ধুত্বের মাঝে আনেনি। যেদিন ও তোমার এবং আমার মাঝে আসার চেষ্টা করবে সেদিন ওর জীবনের শেষ দিন হবে। আমি বন্ধু্ত্ব ভুলে যাবো।
বলেই মেরিনের হাতে চুমু দিলো।
মেরিন আয়নার সামনে বসে চুল বাধতে লাগলো। নীড় একটু অবাক হলো।
নীড় : আজকে এতো স্থির কেনো? মন খারাপ?
মেরিন : মেরিনের কখনো মন খারাপ হয়না।

.

পরদিন…
মেরিন হসপিটালে গেলো।
মেরিন : ডক্টর… ডিএনএ টেস্ট করবেন। এই যে স্যাম্পল।
ডক্টর : আপনি যে বলেছিলেন সুস্থ হয়ে নিক এরপর।
মেরিন : কোন জনমে সুস্থ হবে সেটার অপেক্ষা আমি করতে পারবোনা। তাই দেখবেন ম্যাচ খায় কিনা?
ডক্টর : ওকে।
মেরিন : সিস্টার, এনার ব্লাড আমাকে দিন।
ডক্টর : আপনি ব্লাড নিয়ে কি করবেন?
মেরিন : ডিএনএ টেস্ট করবো।
ডক্টর : সেটাতো আমরাই করছি।
মেরিন : কেবল আপনাদেরটা আমি বিশ্বাস করবো কেনো? কেউ কিছু অদলবদল করলে?
ডক্টর : সিস্টার… নিয়ে আসুন।
মেরিন : মাথার চুলও নিয়ে আসবেন।
নার্স জিনিয়ার ডিএনএ স্যাম্পল নিয়ে এলো।
মেরিন : থ্যাংকস।
মনেমনে : আমি যে স্যাম্পল দিয়েছি সেটা জিনিয়ার নিজের বোনের। তাই ম্যাচ তো হবেই। ইফ আই অ্যাম নট রং… লিওর নজর আছে চারদিকে। এসবও দেখছে। সন্দেহ তো করবে। তবুও কাজ হবে। কিডন্যাপও করবে। আমি চাই তুমি জিনিয়াকে কিডন্যাপ করো। একটুখানি বাধা না দিলে তো নাটকে বিশ্বাস করবেনা প্রনয় আহমেদ চৌধুরী।
লিও মনেমনে : আচ্ছা… তো ম্যাডাম ডিএনএ টেস্ট করাচ্ছে। ভালো… খুবই ভালো। এই মেয়েটিকে কিডন্যাপ করলে এটা তো জেনেই যাবো যে ও আসল নাকি কারো প্ল্যান? এটাও জেনে যাবো যে এই মেয়েটা কার প্ল্যান।
মেরিন হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেলো। গাড়িতে বসতে না বসতেই আরাফাত কল করলো।
মেরিন : হ্যালো আরাফাত।
আরাফাত : ম্যাম…
মেরিন : হ্যা বলো।
আরাফাত : ম্যাম… পুরো চৌধুরী বাড়ি খালি । কিন্তু…
মেরিন : কিন্তু কি?
আরাফাত : কিন্তু নীড় চৌধুরী দ্রুত বেগে গাড়ি নিয়ে বাসায় ফিরলো। পেছনের দিকে যাচ্ছে। বিষয়টা সন্দেহজনক মনে হলো। তাই কল করলাম আপনাকে।
মেরিন : ওকে । ভালো করেছো। রাখছি।
মেরিন যতোদ্রুত সম্ভব বাসায় পৌছালো। বাড়ির পেছনের দিকে গেলো।। কিন্তু নীড়কে দেখা গেলোনা। ও আরাফাতকে কল করলো।
আরাফাত : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন : নীড় কি বাসার পেছন থেকে ফিরেছে?
আরাফাত : নো ম্যাম।আমি দৃষ্টি সরাইনি। আসতে দেখিনি।
মেরিন রাখলো।
মেরিন মনেমনে : যায়নি এই দিক থেকে। এইখানে কোথাও আছে। গুপ্ত দরজা আছে হয়তো। খুজতে হবে।
মেরিন খুজতে লাগলো। আর পেয়েও গেলো। গান লোড করে ধীরেধীরে যাচ্ছে সেই পথে। এটা আন্ডারগ্রাউন্ডে যায়। দেখে নীড় সব ওলট পালট করে কিছু খুজছে।
মেরিন : কি খুজছো?
নীড় দারিয়ে গেলো। মেরিনের দিকে ঘুরলো।
নীড় : তুমি কখন এলে?
মেরিন : যখন তুমি খুজছিলে কিছু।
তখন নীড়ের কাছে পিটারের এবং মেরিনের কাছে আরাফাতের কল এলো। হসপিটাল থেকে নীলার চেহারার মেয়েটি অর্থাৎ , জিনিয়া কিডন্যাপড। ওরা একে অপরের দিকে তাকালো। দ্রুত হসপিটালে পৌছালো। গিয়ে দেখে নীলা মানে জিনিয়া আছে । পিটার-আরাফাত বলল যে ওরা কলই করেনি।
নীড় মনেমনে : কে করলো এমন? মামনি!
লিও মনেমনে : উফফ কি চমৎকার এই ভয়। ভালো লাগলো।

.

চলবে…