প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-৫১+৫২+৫৩

0
7

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 51
writer : Mohona
(do not copy please)

.

কবির : তোর ধ্বংস নিশ্চিত।
কিবরিয়া : তুই নিজের কথা ভাবতে থাক। চাইলেই তোকে শেষ করতে পারি।
কবির : আমাকে শেষ করার হলে তুই আরো আগেই করে দিতি। তুই অপারগ তাই করবিনা।
কিবরিয়া লাঠি দিয়ে বারি দিলো কবিরকে। কবির হাসলো।
কবির : প্রতিটা হিসাব তোলা রইলো। সব তোকে ফিরিয়ে দেবে আমার মেয়ে। মেয়ে আমার তাই চিনি ওকে। ওর রাগ ঠান্ডা হতে আমি কোনোদিনো দেখিনি।
কিবরিয়া : হেরে যেতেও তো দেখিসনি। সেটা দেখবি।
কবির : দেখি কিভাবে হারাতে পারিস আমার মেয়েকে। আমি অপেক্ষায় রইলাম।
কিবরিয়া : শীঘ্রই তোর অপেক্ষা শেষ হবে। তোর মেয়ের প্রথম হারতো হয়েই গিয়েছে। দ্বিতীয় হার হবে স্বামীকে অন্যকারো হতে দেখে।
কবির : কিবরিয়া… প্রতিশোধের নেশায় নিজের সন্তানদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিওনা।
কিবরিয়া : ভালোবাসা এবং যুদ্ধে সব জায়েজ।
কবির : ভুল। শতভাগ হয়না। তাই ভালোবাসা এবং যুদ্ধেও সব জায়েজ হতে পারেনা। সবটা জায়েজ হলে ভালোবাসা এবং যুদ্ধের নাম নিয়ে কথায় কথায় অন্যায় হতো।।

.

নীড় : তুমিও না মেরিন… এই একমিনিট তোমার এই দুষ্টুমির জন্যই কি তবে সেদিন লিও হসপিটালে এসেছিলো?
মেরিন মাথা নেরে হ্যা বলল। নীড় আরো এক দফা হেসে নিলো। মেরিন ওকে দেখছে।
নীড় : তোমার এই মাথা থেকে ভয়ংকর সব বুদ্ধি বের হয়।
মেরিন চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল জানি আমি। নীড় ওর চিবুক ধরে নিজের ঘুরালো।
নীড় : আমার দিকে তাকিয়েই যা বলার বলোনা।
মেরিন ওর হাত সরালো।
নীড় উঠে দারালো।
নীড় : তুমি রেস্ট করো।
মেরিন : রেস্ট করার সময় এটা নয়। অনেক কাজ বাকি আছে।
নীড় : কোনোকাজই তোমার থেকে বেশি জরুরী নয় আমার কাছে।
মেরিন : এই মিশনটা তোমার একার নয়। মিশনটা আমারও। আর আমার কাছে আমার কাজ আমার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ন।
নীড় : তুম…
মেরিন : আমি আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।
নীড় চুপ করে রইলো।
মেরিন : কিবরিয়া মিস্টার খানকে কোথায় রেখেছে সেটা জানার সময় এসে গিয়েছে।
নীড় : লিও এবং কবির ফয়সাল খানের মধ্যকার শত্রুতা বারাতে হবে।
মেরিন : কিভাবে করবে সেটা?
নীড় : তুমি মনে করো লিওই আমার ভাইয়া। তাইনা?
মেরিন : আমি মনে করাতে কি আসে যায়? তুমি তো বিশ্বাস করোনা।
নীড় : আই ডু… করি আমি বিশ্বাস তোমাকে। মামনির মতো মানুষ যদি তোমার বোনকে বন্দি বানিয়ে রাখতে পারে , তাহমিদের সার্জারি করিয়ে যদি ভাইয়া সাজিয়ে রাখা যেতে পারে , কিবরিয়া যদি কবির ফয়সাল খান হয়ে বাঁচতে পারে , নিজেদেরকে মৃত সাজিয়ে রাখতে পারে তাহলে লিও ভাইয়া কেনো হবেনা? হতেই পারে লিওই ভাইয়া। যদিও আমি নিজের চোখে দেখার পরেই সম্পুর্ন নিশ্চিত হবো।
মেরিন : আমার আপু যে খারাপ নয় সেটা বিশ্বাস করোনা?
নীড় চুপ করে রইলো।
মেরিন : এটার কি কোনো উত্তর নেই?
নীড় : মেরিন… আমি এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইনা। যতোবার এই বিষয়ে কথা হয়েছো ততোবার তোমাকে একটুএকটু করে হারিয়েছি। আজকে আবারো বলে আরো একটু হারাতে চাইনা। আমি আমাদের মধ্যকার দূরত্ব শূন্য করতে চাই অধিক নয়।
মেরিন : তীর কখনো ধনুকে ফিরে আসেনা নীড়। আপু সম্পর্কে তোমার বিশ্বাস কি এখনো আগের মতো।
নীড় : ক্যালকুলেশন প্রতিনিয়ত পাল্টাচ্ছে মেরিন। এতোটুকু বলতে চাই যে, তোমার আপুর নামে যে কথাগুলো উঠেছিলো সেগুলো তাহমিদ আসার আগে উঠেছিলো এবং তোমার আপুকে আমার ভাইয়া অনেক ভালোবাসতো।
মেরিন : মানে আমার আপুর চরিত্র খারাপ। তাইতো?
নীড় চুপ করে রইলো। মেরিনও আর কোনো কথা বলল না। দুজন কয়েক মিনিট চুপ করে রইলো।
নীড় : মেরিন… আমরা প্রত্যেকে নিজের স্থানে সঠিক। কারোই ভুল নেই হয়তো। হয়তো ভুল সময়ের। আমাদের চারদিকের সত্যঅসত্যের পক্ষেবিপক্ষে গিয়ে আমি তোমাকে ভালোবাসি। অভিমান-অপমান-অবহেলা করো , শাস্তি দাও , প্রতিশোধ নাও কিন্তু কখনো আমাকে ছেরে যেওনা।
মেরিন : আমার চেনা মানুষদের ভীরে থাকার অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা দুইটাই বড় বিষাক্ত। বরাবরই বিষাক্ত। তোমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রানের মাবাবা যদি দুজনই বেঁচে থাকে তবে ওদের হাতে দিয়ে অচেনাদের ভীরে চলে যাবো আমি। এবার আমি জীবনে একটু স্বস্তি চাই নীড়।
নীড় : তুমি তোমার প্রানকে ফেলে চলে যাবে?
মেরিন : প্রানের মাবাবা থাকবে , তুমি থাকবে। ওর খেয়াল রাখতে পারবে। প্রান বড় হয়ে যখন জানবে ওর মাবাবা আছে তখন আমাকে নিজের অপরাধী মনে করবে। ঠিক চলে আসবে মাবাবার কাছে। রক্তের বন্ধন ফেলা যায়না। যে মাবাবার সাথে আমার এতো দ্বন্দ ছিলো সে মাবাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে দেশে আসি আমি। তাহলে প্রান নিজের মাবাবার খোঁজ পেলে কেনো আসবেনা?
নীড় : তোমার দাদুভাইকেও নিবেনা এবার সাথে?
মেরিন : না। কিবরিয়া তার ছেলে সেজে ছিলো , মৃত্যুর নাটকও ছিলো কিবরিয়ার। কিন্তু দাদুভাই কিবরিয়াকে নিজের ছেলে ভেবেছে। নিজের ছেলেভেবে তার সাথে মিলে আমাকে ঠকিয়েছে। যাকে আমি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেছি সেই সবচেয়ে বড় ধোকা দিয়েছে। তাই তারসাথে সন্ধির তো প্রশ্নই ওঠেনা।
নীড় : আমি কি একটা সুযোগ পেতে পারি?
মেরিন : আমি কি তোমাকে ভালোবাসি?
নীড় মেরিনের চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
মেরিন : যাইহোক, লিও এবং কিবরিয়ার দুশমনি কিভাবে করাবে?
নীড় : নীলা খানের সাথে তোমার ডিএনএ টেস্ট করিয়ে।
মেরিন : সেটাতো করা হয়েছে।
নীড় : কিন্তু সেটা কেউ জানেনা। জিনিয়াকে লিও কিডন্যাপ করেছে কিন্তু কোনো স্টেপ নেয়নি। তোমার প্ল্যান হাফ ফ্লপ। স্টেপ নেয়নি কারন হয়তো সে দ্বিতীয় নীলার খবর পেয়েছে।
মেরিন : সেটা তুমি কিভাবে জানলে?
নীড় : আমার কয়েকটি গোপন গোডাইনে সে খোঁজ করেছে এবং এখনো করে যাচ্ছে। হয়তো এখনো বুঝে উঠতে পারছেনা যে কোনটা আসল নীলা বা আদৌ আসল নীলা কিনা? এখন যদি তুমি ডিএনএ টেস্ট করাও তাহলে বুঝে যাবে যে আসল নীলা বেঁচে আছে। লিওর লোক সবজায়গাতে আছে। তাই কোনো না কোনোভাবে ওর পর্যন্ত খবর চলে যাবে যে তুমি ডিএনএ টেস্ট করিয়েছো এবং সেটা পজিটিভ এসেছে।
মেরিন : হামম। সেই সাথে আরো একটা খবর ওর পর্যন্ত পৌছাতে হবে যে নীলা খানকে কিবরিয়া বন্দি করে রেখেছে বা রেখেছিলো। বাকিটা লিওই করে দিবে।
নীড় : ইয়েস। লিওর হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কিবরিয়া নিজের জায়গায় আসল কবির ফয়সাল খানকে রাখবে। পারফেক্ট প্ল্যানিং। কিন্তু…
মেরিন : কিন্তু কি?
নীড় : এটা তখনই সাকসেসফুল হবে যখন লিওই প্রনয় চৌধুরী হবে।
মেরিন : মাত্রই তো বললে বিশ্বাস করো আমাকে।
নীড় : হ্যা বিশ্বাস করি তোমাকে। তবে আমাদের নষ্ট নিয়তিকে নয়।
মেরিন : নিয়তি আর কতোবার ধোকা দিবে? একবার তো সফল করবে আমাদের।
নীড় : হামম। একটা কথা বলি ?
মেরিন : বলো।
নীড় : চেষ্টা তো করে যাবো সাকসেসফুল হওয়ার। কিন্তু সাকসেসফুল না হলেই আমি বেশি খুশি হবো।
মেরিন : কেনো?
নীড় : বলা যাবেনা। যাইহোক… তুমি কোনো চাপ নিবেনা। তুমি অসুস্থ।
মেরিন : আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবেনা।
নীড় : আমাকে তুমি ফেরাতে পারবেনা।
নীড় বেরিয়ে গেলো।
নীড় : মিশনটা সাকসেসফুল হয়ে গেলে তুমি আমাকে ছেরে চলে যেতে পারো মেরিন। যতোদিন সাকসেসফুল না হবো ততোদিন তুমি এমন করেই আমার হয়ে থাকবে। গত একটিমাস আমার জীবনের সেরা সময়। এর পরিসর আরো অনেক হোক।

.

পরদিন…
কিবরিয়া : কি?

কিবরিয়া : কিন্তু লিওর সাথে আমরা কি করেছি?

কিবরিয়া : রাখছি।
শমসের : কি হলো কবির?
কিবরিয়া : দেখোনা বাবা ওই মাফিয়া লিও আমাদের আশুলিয়ার প্রোপার্টি নিজের করে নিয়েছে। কি শত্রুতা ওর সাথে আমাদের?
শমসের : দুইটা বছর ধরেই তো আমাদের পেছনে পরে আছে। এ আর নতুন কি?
কিবরিয়া : হ্যা তাও ঠিক।
মনেমনে : উফফ… সাবধানে কথা বল কিবরিয়া। এই বুড়ো তো আগেই বলেছিলো যে লিও খানেদের শত্রু।
শমসের : প্রোপার্টি যাক সেটার চিন্তা আমি করিনা। এক নাতনিকে হারিয়েছি আরেকজনকে হারাতে পারবোনা। খুজে আনো আমার নাতনিকে।
কিবরিয়া : আমি তো চেষ্টা করছি বাবা।
শমসের : সফলতা এলেই চেষ্টা সার্থক। ওকে খুজে আনো।
কিবরিয়া : ওকে তো খুজে বের করবোই আমি।
শমসেরের কপালে ভাঁজ পরলো। কিবরিয়া খেয়াল করলো। সুর পরিবর্তন করে
বলল : অন্ধের যষ্ঠি যে ও আমার।

.

প্যান্থার : বস…
প্রনয় : বলো।
প্যান্থার : সাংঘাতিক একটি খবর এসেছে।
প্রনয় : কি?
প্যান্থার : জন দুটো ডিএনএ স্যাম্পল টেস্ট করাতে এনেছে।
প্রনয় : ডিএনএ টেস্ট? কার ডিএনএ টেস্ট?
প্যান্থার : বলতে পারিনা বস।
প্রনয় ভাবতে লাগলো।
প্রনয় : জন যখন এসেছে তখন মেরিনের কাজেই এসেছে। মেরিন নিজে যেহেতু আসতে পারবেনা সেহেতু জনকে পাঠিয়েছে।
প্যান্থার : তুলে নিবো জনকে?
প্রনয় : না। খেলাটা বুঝতে হবে। তারআগে জানতে হবে যে কিসের ডিএনএ টেস্ট?
প্যান্থার : আমাদের লোক ওখানে আছে। নজর রাখছে। প্রতিটা কথা ওর বাটনে থাকা ক্যামেরায় রেকর্ড হচ্ছে।

মেরিন : হ্যালো জন…
জন : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন : দিয়েছো স্যাম্পল?
জন : ইয়েস ম্যাম।
মেরিন : লিও গ্যাং কি আছে? মানে বোঝা যাচ্ছে?
জন : নো ম্যাম।
মেরিন : এখন এমন করে কথা বলো যেনো বোঝা যায় যে তুমি আমার এবং আপুরই ডিএনএ টেস্ট করাতে গিয়েছো।
জন : নো ওয়ারি ম্যাম ২৪ঘন্টার মধ্যে জানতে পেরে যাবো সত্যিটা। সেই নীলা কিনা জানা হয়ে যাবে।
মেরিন : ভেরি গুড।
জন : জী ম্যাম আপনি কেবল অর্ডার করবেন। ২৪টা ঘন্টারই তো ব্যাপার। কিন্তু ম্যাম যদি পজিটিভ আসে?

জন : আপনি মিস্টার খানকে! আআপনাদের বাবা তো।

জন : সরি ম্যাম। আর বলবোনা।

জন : জী ম্যাম মনে থাকবে যে অপরাধীদের কোনো পরিচয় থাকেনা।

জন : চিন্তা করবেন না ম্যাম। টপিকটা পাবলিক হবেনা। আমি খেয়াল রাখবো।

জন : রাখছি ম্যাম।
জনের সকল কথা একজনের ক্যামেরায় বন্দি হয়ে গেলো। জন চলে যাওয়ার পর সে সব ফুটেজ প্রনয়ের কাছে পাঠালো। প্রনয় ফুটেজটা কয়েকবার দেখলো।

প্রনয় : কি বিষয়ে কথা বলছে জন? নীলার বিষয়ে…
প্যান্থার : বস… আরো একটি নীলার যে খবর পেয়েছি সেটার ডিএনএ টেস্ট করাচ্ছেনা তো মেরিন?
প্রনয় : যদি সেটাই হয় তাহলে মিস্টার খান মানে কবির ফয়সাল খানকে কিছু করতে চাইবে কেনো?
প্যান্থার : জানিনা স্যার।
প্রনয় : আমি একটু একা থাকতে চাই।
প্যান্থার বেরিয়ে গেলো। প্রনয় ভাবছে। গভীরভাবে ভাবছে।
প্রনয় : দেখতে হবে ডিএনএটা মিলে কিনা। জনের কথায় মনেহচ্ছে যে কবিরের বন্দি ছিলো। তাহলে কি ওটা সত্যি আমার নীলা! তবে কি আমার নীলা বেঁচে আছে? না না না এটা কিভাবে সম্ভব? আমার নীলা তো অভিমান করে চলে গিয়েছে। ওই চৌধুরীরা খুন করেছে। না না না আমি ভাবতে পারছিনা। এটা কোন পরিকল্পনা নয়তো? কি করি? কবির খানকে একটু বাজিয়ে দেখতে হবে। হ্যা এটাই সঠিক। ওকে কল করবো। এখন করবোনা কল। রাত ২টা অথবা ৩টা বাজে কল করবো। দেখি ওর রিয়্যাকশনটা কি হয়? তবে এই টেস্ট সম্পর্কে বলা যাবেনা। দেখতে হবে যে পজিটিভ আসে না নেগেটিভ আসে? আর তাছারাও পজিটিভ এলে কবির , কনিকা এবং শমসেরের সাথে মিলিয়ে তো দেখবোই।

.

প্রান্তিক ঘুমিয়ে পরেছে।
মেরিন : সত্যিই মুখে দেয়া সম্ভব না নীড়।
নীড় : সারাদিনে তেমন কিছুই খাওনি।
মেরিন : খেয়েছি । বিরক্ত করোনা। ঘুম পাচ্ছে আমার।
নীড় : ঘুম পেলে এখানে কি করছো?
মেরিন : আমি কি একটু এখানেও দারাতে পারবোনা?
নীড় : অবশ্যই পারো। আমি তো এম…
মেরিন : থাক আর ঢং করতে হবেনা।
বলেই মেরিন চলে যেতে নিলো। নীড় ওর হাত ধরে নিজের কাছে টেনে নিলো। পেছন থেকে জরিয়ে ধরে ওর ঘাড়ে মাথা রাখলো।
নীড় : না খেয়ে থাকলে এমনই খিটখিটে মেজাজ থাকে জান।
মেরিন : আমি মোটেও খিটখিটে মেজাজে নেই।
মনেমনে : নীড় তো ঠিকই বলছে। আমার মেজাজ বিগরে কেনো আছে? সবকিছুতে আমার রাগ কেনো হচ্ছে?
মেরিনের জবাবে নীড় হাসলো।
নীড় : বুঝেছি মুড সুইং হচ্ছে।
মেরিন : আমার ওসব হয়না।
নীড় : হয়না জানি । কিন্তু হচ্ছে আজকাল।
মেরিন : তোমার কানেকানে।
নীড় ওর ঘাড়ে চুমু দিয়ে বলল : হ্যা আমার কানেকানে।
মেরিন : তুমি যে ২-৩দিন ধরে বাসায় যাচ্ছোনা তোমার প্রানপ্রিয় বর্ষা মরে না যায়।
নীড় : এখানে আবার বর্ষা কোথায় থেকে এলো?
মেরিন : বর্ষা তো সব জায়গাতেই আছে।
নীড় ওর কানে ফিসফিস করে বলল : তুমি কি জেলাস।
মেরিন : আআমি মমোটেও জজেলাস নই।
নীড় ওর ঘাড়ে নাক ঘষতেঘষতে বলল : তুমি অনেক বেশি জেলাস।
মেরিন : না। আর হলে তোমার কি?
নীড় : আমারই তো সব। তোমার জেলাসি যে আমার জন্য সুখকর।
বলেই নীড় মেরিনেক কানে কামড় দিলো। তখন ভেতর থেকে প্রান্তিকের কান্নার শব্দ পাওয়া গেলো। দুজন ছুটে ভেতরে গেলো। গিয়ে দেখে প্রান্তিক কান্না করছে। একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে ওর ঘুম ভেঙে গিয়েছে তাই কান্না করে উঠেছে। দুজন মিলে বহু কষ্টে ওর কান্না থামালো। প্রান্তিক মেরিনকে ছারছেই না। ওকে শক্ত করে ধরে রেখেছে।
মেরিন : কি হয়েছে বাচ্চা? ভয় পেয়েছো কিছু দেখে?
প্রান্তিক : স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছি।
নীড় : কি এমন স্বপ্নে দেখলে? কোন দুষ্টু লোকের সাহস হলো আমার লাভের স্বপ্নে গিয়ে ভয় দেখায়?
প্রান্তিক : কোনো দুষ্টুলোক স্বপ্নে এসে ভয় দেখায়নি।
নীড় : তাহলে?
প্রান্তিক : আমি দেখলাম মামমাম আমাকে ফেলে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। তাই আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি তো মামমামকে ছারা থাকতেই পারবোনা।
মেরিন শক্ত করে প্রান্তিককে জরিয়ে ধরলো।
মেরিন : মামমাম তোমার কাছেই আছি বাবা। মামমামেরও যে তোমাকে ছারা থাকতে কষ্ট হবে।
প্রান্তিকের স্বপ্ন নীড়ের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিলো।

.

রাত আড়াইটা। কিবরিয়ার ফোনটা বেজে উঠলো। যে ফোন কবির সেজে চালাচ্ছে সেটা বেজে উঠলো। রাত কল আসাতে একটু ভয় পেয়ে গেলো। তারওপর অচেনা নাম্বার।
কিবরিয়া : হ্যালো… কে বলছেন?
প্রনয় : তোর মৃত্যু লিও বলছি।
কিবরিয়া : লিও!
প্রনয় : হ্যা লিও।
কিবরিয়া : তোমাকে আমি শত্রু ভাবিনা। আমাদের মধ্যে কোনো শত্রুতাও নেই। তবে তুমি কেনো নিজেকে আমার মৃত্যু বলে পরিচয় দিচ্ছো বাবা?
প্রনয় : খবরদার আমাকে বাবা বলে ডাকবিনা। তোর মৃত্যু আমার হাতেই।
কিবরিয়া : আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি?
প্রনয় : আমার কোনো ক্ষতি করেছিস কি করিসনি সেটা ভাবার প্রয়োজন নেই। নিজের জীবনের পাপের হিসাবগুলো কর কবির ফয়সাল খান। তুই যা যা অপকর্ম করেছিস সেগুলোর শাস্তি আমি দিবো।
কিবরিয়া : কার শাস্তি কি হবে সেটাতো আল্লাহই জানে।
প্রনয় : তোর মতো শয়তানের কাছে ধর্মকথা শুনতে চাইনা। তুই নিজের পাপের কথা ভেবে নিজের ধ্বংসের অপেক্ষা করতে থাক।
বলেই প্রনয় রেখে দিলো। কিবরিয়া হ্যালো হ্যালো করতে লাগলো।
কিবরিয়া : কে এই লিও? কি চায়? কালকে কবিরকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবো।

.

সকালে মেরিন হসপিটালে এসেছে নিজের রিপোর্ট নিতে। ও নিশ্চিত যে ওর বড়কোনো রোগ হলে নীড় আড়াল করে রাখবে। তাই নিজেই এসেছে। ও পা রাখতে না রাখতেই নীড়ও পৌছালো।দুজনই ছদ্মবেশে আছে। নার্স নীড়ের হাতের রিপোর্ট দিতে গেলে মেরিন নিয়ে নিলো। রিপোর্ট খুলে দেখলো। দেখে ওর হাত থেকে কাগজগুলো পরে গেলো। নীড় রিপোর্টগুলো হাতে নিলো। মেরিন কনসিভ করেছে। নীড়ের মুখে হাসি ফুটলো। ততোক্ষনে মেরিন ছুটে বেরিয়ে গেলো।
নীড় : জান… ডোন্ট রান।
মেরিন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে।
নীড় : এই মেয়েটা না… এই সময়ে এমন করা কি ঠিক? ও কি খুশি নয় এই খবরে? ও আমাদের বাচ্চাটাকে মেরে দেবে নাতো? না না কি সব ভাবছি আমি? ও শকড। ওসব রিপোর্টে থাকা সত্ত্বেও যে রিপোর্টে এলো ও কনসিভ করেছে সেটা ও নিতে পারেনি। ডক্টরের সাথে কথা বলে যেতে হবে।
নীড় ডক্টরের কাছে গেলো।
ডক্টর : অভিনন্দন আপনাকে। আপনার স্ত্রী কোথায়?
নীড় : আসলে ওকে নিয়ে আসিনি। কি না কি আসে রিপোর্টে ! ও যদি সহ্য করতে না পারে?
ডক্টর : এখন তো চমৎকার সংবাদ নিয়ে বাসায় ফিরবেন।
নীড় হাসলো।
নীড় : জী অবশ্যই। কিন্তু ওকে জানানোর আগে আমি নিজে নিশ্চিত হতে চাই যে সংবাদটা সত্যি কিনা?
ডক্টর : সন্দেহ কিসের? রিপোর্টে এসেছে , আমিও নিশ্চিত করলাম।
নীড় : জী। তাহলে আগের রিপোর্ট?
ডক্টর : সৃষ্টিকর্তা ডক্টরের ওপরে ডক্টর , আবার বৈজ্ঞানিকের ওপরে বৈজ্ঞানিক। সে চাইলে সব হয়। আর যদি মেডিকেলের লজিক চান তাহলে আমি বলবো যে তার শরীরে একটি বিষক্রিয়া হয়েছিলো। সেটার অ্যান্টিডোটের ডাবল রিয়্যাকশন হয়েছে। অ্যান্টিডোটটা অত্যন্ত স্ট্রং ছিলো। তার এই সমস্যাটা ছিলো বলে রিয়্যাকশনটা পজিটিভ হয়েছে। তা না হলে তার একটি হাত অথবা বা অকেজো হয়ে যেতো। কথায় আছেনা আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন। সেটাই হয়েছে। নিশ্চিত হয়ে বাসায় যান।
নীড় : থ্যাংকস ডক্টর।
নীড়ের আনন্দের যেনো আর সীমা নেই।

.

প্রনয় নিজে হসপিটালে গিয়েছে ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট কালেক্ট করতে। সেটা জনের হাতে যাওয়ার আগেই নিয়েছে। রিপোর্ট পজিটিভ। সিবলিং। মেরিন এবং নীলার নামও লেখা আছে।
প্রনয় মনেমনে : আমার নীলা বেঁচে আছে? সত্যিই বেঁচে আছে? না না না আবেগী হওয়া যাবেনা। প্রমান চাই।
প্রনয় : প্যান্থার।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
প্রনয় : টেস্ট করার পর অবশিষ্ট স্যাম্পল আছে কিনা দেখো। টেস্ট টিউব বা স্লাইড তো অবশ্যই আছে সেগুলো নিয়ে নাও।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
প্যান্থার সেগুলো নিয়ে এলো।
প্রনয় : চলো এখন। খানেদের ডিএনএ স্যাম্পল কালেক্ট করে আনবে।
প্যান্থার : ইয়েস বস।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 52
writer : Mohona
(do not copy please)

.

প্যান্থার : ইয়েস বস।
প্রনয় : তবে খুব সাবধান। ওরা ভাববে ওদেরকে খুন করতে গিয়েছো। আসলে যাবে ডিএনএ স্যাম্পল নিতে।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
প্রনয় : গো।
প্যান্থার বেরিয়ে গেলো।
প্রনয় : নীলা যদি সত্যি বেঁচে থাকে তাহলে? তাহলে আমি আমার প্রান এবং নীলাকে নিয়ে অনেক অনেক দূরে চলে যাবো। কারো ধরাছোয়ার মধ্যে থাকবোনা। সবাইকে বরবাদ করে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যাবো। আমার আবেগকে নিয়ন্ত্রন রাখতে হবে। যদিই নীলা না হয় তবে কষ্ট পাওয়া যাবেনা। এক মিনিট… নীলাকেও তো খুজতে হবে। নীলাকে খুজে বের করতে হবে। এতোদিন তো নাবিলের চক্করে নীলাকে খোঁজার দিকে বেশি নজরই দেয়া হয়নি। এখন তো আকাশ পাতাল এক করে খুজবো।
প্রনয় বেরিয়ে গেলো। প্রনয় মুখ ঢেকেই এসেছিলো। কিন্তু পোশাকে লোগো দেখে সবাই বুঝে গিয়েছে যে এটা লিও। জনও ছদ্মবেশে ছিলো।
জন মনেমনে : ইয়েস… প্ল্যান সাকসেসফুল। ম্যামকে জানাতে হবে। কিন্তু এখান থেকে সরে গিয়ে কল করতে হবে।
জন সরে গিয়ে কল করলো মেরিনকে। কিন্তু মেরিনতো কল রিসিভ করছেনা। কয়েকবার কল করলো। কিন্তু ধরলোনা। কেটে দিচ্ছে মেরিন। ও নীড়কে কল করলো।
নীড় : হ্যা জন বলো।
জন : স্যার , প্ল্যান সাকসেসফুল।
নীড় : জন কালেক্ট করেছে টেস্ট রিপোর্ট?
জন : ইয়েস স্যার।
নীড় : গুড। আমি পিটারকে বলছি নীলা খানের নিরাপত্তা এক ধাপ কমিয়ে দিতে।
জন : ওকে স্যার। স্যার , ম্যাম কোথায়? ম্যাম ঠিক আছে?
নীড় : ঠিক আছে। তুমি মামা হতে চলেছো। আর পিটার চাচ্চু।
জন : কি বলছেন কি স্যার! সত্যি!
নীড় : ইয়েস।
জন : অভিনন্দন স্যার।
নীড় : ধন্যবাদ। রাখছি।
জন রেখে দিলো।
নীড় : এখন ম্যাডামকে খুজতে হবে। আমি জানি কোথায় যেতে হবে।
জন : ম্যামকে এখন বেশি প্রেসার দেয়া যাবেনা। পিটারকে জানিয়ে দিচ্ছি যে লিওর প্ল্যান সাকসেসফুল হয়েছে।
জন পিটারকে জানালো।

.

মেরিন : এটা কি করে হতে পারে? নিশ্চয়ই কোনো ভুল আছে। হতেই পারেনা এমনটা।
নীড় : খুশির বিষয়টাকে আনন্দের সাথে গ্রহন করে নেয়া উচিত।
নীড়ের কন্ঠে মেরিন অবাক হলো। ও এখানে কিভাবে পৌছালো? নীড় গিয়ে মেরিনের পাশে বসলো। মেরিন ওর দিকে তাকালোনা।
নীড় : মেরিন… কিছু আনন্দ সৃষ্টিকর্তার বিশেষ নিয়ামত হয়। আজকে আমরা যে আনন্দের সংবাদ পেয়েছি সেটাও একটি বিশেষ নিয়ানত। জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এটা আমাদের। আমি এতো আনন্দিত কখনো হইনি।
মেরিন : প্রান হওয়ার পরও নয়?
নীড় : না…
মেরিন : তাহলে প্রানের প্রতি কিসের ভালোবাসা হামম?
নীড় : অশেষ ভালোবাসা রয়েছে , সীমাহীন স্নেহ রয়েছে। যা কখনো শেষ হবেনা। আমার স্নেহের তালিকায় সবার প্রথমে সর্বদা প্রানের নামটাই থাকবে। আমার নিজের সন্তানেরও ওপরে থাকবে। কিন্তু…
মেরিন নীড়ের দিকে তাকালো।
মেরিন : কিন্তু…
নীড় : কিন্তু পৃথিবীর সব খুশি একদিকে এবং বাবা হওয়ার খুশি একদিকে। এই সুখের সাথে মোকাবিলা করার সাধ্য অন্যকোনো সুখের নেই। শতবার ধন্যবাদ দিলেও কম পরবে।
মেরিন চোখ ঘুরিয়ে নিলো। নীড় ওর মুখটা নিজের দিকে ঘুরালো।
নীড় : আজকের এই খুশিটাকে আর দমিয়ে রেখোনা মেরিন।
মেরিন নীড়ের হাত সরিয়ে দিলো। নীড় একটু হতাশ হলো।
নীড় : তুমি কি খুশি হওনি মেরিন?
মেরিন : আমি খুশি না হলে কি রাতের আধার কাটিয়ে সূর্য ওঠেনা? আমি খুশি না হলে কি দিনের ক্লান্তি মিটিয়ে সূর্য ডোবেনা? আমি খুশি না হলে কি আকাশে চাঁদ হাসেনা? আমি খুশি না হলে কি বায়ু প্রবাহিত হয়না? আমি খুশি না হলে কি নদী বয়ে যায়না?
নীড় : আমি স্বস্তি পাইনা। তোমার খুশি না হলে আমার জন্য দিনরাতের পার্থক্য হয়না। তুমি খুশি না হলে দিনের সূর্য এবং রাতের চাঁদ আমাকে প্রভাবিত করেনা। তুমি যদি খুশি না হও এবং তুমি যদি চাও বেবিটাকে অ্যাবর্ট করতে তাহলে আমি তোমাকে বাধা দিবোনা।
মেরিন অবাক হয়ে নীড়ের দিকে তাকালো।
মেরিন : তুমি কি বললে?
নীড় : অবাক করার মতে কিছু ছিলোনা। তুমি আমার স্পর্শ ঘৃণা করো। অবশ্যই তবে আমার চিহ্নকেও ঘৃণা করছো। তাই তুমি খুশি নও। ওকে সরাতে চাইছো। ভাবছো আমি বাধা দিবো। তাই খুশি হতে পারছোনা।
মেরিনের চোখে পানি ভাসছে। বহুদিন পর ও অনুভব করছে যে ও কষ্ট পেয়েছে। মারাত্মক কষ্ট পেয়েছে।
নীড় : তোমাকে অপমান করার ইচ্ছা নেই। বেবিটার সাথে আমার জীবনের সবথেকে সুখ জরিয়ে আছে। কিন্তু আমার কাছে আমার জীবনের সুখের চেয়েও তোমার আনন্দ বেশি গুরুত্বপূর্ন। তুমি যখন , যেদিন অ্যাবর্ট করতে চাইবে আমাকে বলে দিও। আমি সকল পরিস্থিতিতে তোমার পাশে থাকবো।
মেরিন নীড়কে দেখছে। অনেক কষ্ট চোখের পানিগুলোকে আটকে রেখেছে।
নীড় : চলো বাসায় চলো। তোমার শরীর ভালোনা।
মেরিনের ইচ্ছা করছে নীড়কে একটা থাপ্পর দিতে। নীড় ওর হাত ধরলো মেরিন ঠাস করে একটা থাপ্পর মেরে উঠে দারালো। এরপর হনহন করে চলে গেলো। নীড় ওর চলে যাওয়া দেখলো।
নীড় : আমি জানি কথাগুলো তোমাকে কষ্ট দিয়েছে। তুমি যতোটা কষ্ট পেয়েছো তারথেকে বেশি কষ্ট আমি পেয়েছি। কিন্তু তোমার রিয়্যাক্ট করা প্রয়োজন মেরিন। মিশন শেষ হলে থাকবে কি থাকবেনা আমি জানিনা। আমি তোমাকে ছেরে থাকার কথা ভাবতেও পারিনা।

.

লিও গ্যাং এর সদস্যরা পৌছালো খান বাড়িতে।
শমসের : তোমরা কারা? বাসার ভেতরে কিভাবে এলে? গার্ডস…
টাইগার : এই বুড়ো চুপ। এল টা দেখতে পাচ্ছিস? এল… কেয়ার অফ লিও গ্যাং।
শমসের : তোমরা লিও গ্যাং এর সদস্য?
টাইগার: হ্যা।
কনিকা : ততোমরা এখানে কি করছো?
প্যান্থার : ডান্স করছি।
কিবরিয়া : তোমরা কি চাও?
প্যান্থার : তোর জান কবজ করতে চাই।
কিবরিয়া নিজের পিস্তলে হাত দিতে নিলে ওর হাতের দিকে গুলি করলো প্যান্থার।
কনিকা : কবির…
শমসের : কবির…
প্যান্থার : গুলি চালানোতে আমাদের থেকে নিজেকে বেশি এক্সপার্ট ভাবিস? হ্যা? শেষ করে দিবো একেবারে।
কিবরিয়া তো ভয়ে শেষ।
কিবরিয়া মনেমনে : এখন কি হবে? কবিরের মৃত্যু কি তবে আমি মরবো? সকলের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য কবিররে রূপ নিয়েছি। আমি ভেবেছিলাম কবিরে সবচেয়ে বড় শত্রু ওই নিহাল। এখন দেখছি এই লিও আরো বড় শত্রু। এই লিওর সাথে শত্রুতার জন্য আমি মরবো কবিরের মৃত্যু। কোনোরকমে বাঁচতে হবে।
ভয়ভীতি দেখিয়ে , হালকা পাতলা টর্চার করে থেমে গেলো। ডিএনএ স্যাম্পল নেয়া শেষ।
প্যান্থার : আজকে যা হলো সেটা কেবল একটি ঝলক ছিলো। ইচ্ছা ছিলো তোকে জানে মেরে এরপর যাবো। কিন্তু পরে মনে পরলো বসের কথা। বস নিজের হাতে তোকে মারবে। এমন নৃশংস মৃত্যু দেবে যে সারা দুনিয়া দেখবে। প্রস্তুত থাকিস। যেকোনো মুহূর্তে লিও বস আসবে তোকে শেষ করতে। চলো সকলে।
সকলে বেরিয়ে গেলো।
কনিকা : ঠিক আছো তুমি?
কবির : হ্যা ঠিক আছি।
শমসের : কি করেছিলে তুমি লিওর সাথে? লিও কেনো এতো রেগে আছে তোমার সাথে? কেনো ও তোমাকে শত্রু ভাবে?
কিবরিয়া : জানিনা বাবা। আমি তো কখনো ওকে দেখিওনি। কখনো ওর কাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটিয়েছি বলেও মনে পরছেনা।
কনিকা : তুমি কোথাও চলে যাও। যদি ও তোমাকে কিছু করে ফেলে?
কিবরিয়া : কিচ্ছু করতে পারবেনা ও আমার। আর আমি কোথাও পালাবোনা।
মনেমনে : কবিরকে এ বাড়িতে এনে রাখতে হবে নিচের খালি গ্যারেজে রাখতে হবে। লিও গ্যাং এর আসার তথ্য পেলে ওই গোপন দরজা দিয়ে গ্যারেজে চলে যাবো। কবিরকে বসিয়ে রাখবো। মুক্ত করে দিবো। লিও আমাকে খুজতে খুজতে যাবে। আসল কবিরকেই পেয়ে যাবে।

.

রাত ১টা…
মেরিন ঘুমের নামে ব্ল্যাংকে গায়ে জরিয়ে অন্ধকার ঘরে নিরবে চোখের পানি ফেলছে। আজকে প্রথমবার ওর নিজেকে স্বার্থপর মনেহচ্ছে। ওর এবং নীড়ের মাঝখানে ঘুমিয়ে আছে প্রান্তিক। নীড়ও জেগে আছে। একটু পরপর দেখছে মেরিনকে দেখছে।
নীড় : মেরিন… জানি তুমি জেগে আছো। খারাপ লাগছে?
মেরিন চুপ করেই রইলো।
নীড় : মাথায় হাত বুলিয়ে দিবো!
মেরিন চুপ।
নীড় : মেরিন… আর চুপ করে থেকোনা।
নীড় উঠে এসে মেরিনে মুখোমুখি বসলো। ওর কপালে চুমু দিলো। ওর চোখের পানি মুছে দিলো।
নীড় : এভাবে কান্না করলে হবে? মাথাব্যথা করবেনা? আমাদের বেবির ওপরও তো খারাপ প্রভাব পরবে। তুমি সবসময় হাসবে , আনন্দে থাকবে তবেই তো আমাদের বেবির বিকাশ ভালো হবে।
মেরিন চুপ।
নীড় : তোমার কি খারাপ লাগছে?
মেরিন উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। নীড়ও ওর পিছুপিছু বের হলো। মেরিন নিজের জন্য শরবত বানাতে লাগলো।
নীড় : আমি বানিয়ে দিচ্ছি।
মেরিন নিজেই নিজের জন্য শরবত বানাতে লাগলো।
নীড় : এই… করে কি? লেবু কাটতে হবেনা। আমি কেটে দিচ্ছি। বাই চান্স হাত কেটে গেলে? আমি কেটে দিচ্ছি।
নীড় মেরিনের হাত থেকে লেবু এবং ছুরি নিয়ে নিলো। শরবত বানিয়ে দিলো। মেরিন সেটা না নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। নীড় ছোট করে হাসি দিলো। শরবত নিয়ে মেরিনের সামনে দারালো।
নীড় : অভিমান হয়েছে। আর সেটাই প্রকাশ করছে। অভিমান করা তোমার সৌন্দর্য্য আর সেটাকে সুন্দর করে দূর করা আমার অধিকার।
মেরিন : একদম ঢং করবানা। কি প্রমান করতে চাও তুমি? নিজেকে মহান এবং আমাকে স্বার্থপর প্রমান করতে চাও?
নীড় : না। কেবল নিজের ভালোবাসা ব্যক্ত করতে চাই। তোমার মনে কেবল আর কেবল এই ভরসাটুকু জাগাতে চাই যে আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি।। একটু ভরসা করো আমায়।
মেরিন : কিভাবে এবং কিসের ভিত্তিতে আমি তোমাকে ভালোবাসবো এবং বিশ্বাস করবো নীড়? তোমার ভাইয়াকে বিশ্বাস করে আমার আপু ঘরপরিবার সব ত্যাগ করে এসেছিলো। একবারের জন্য যদি তোমার এই কথা মেনেও নেই আমার আপু চরিত্রহীনা ছিলো তারপরও কিন্তু তোমার ভাইয়ার ধোকাকে অস্বীকার করা যায়না। তোমার বাবাও এই কথাটা স্বীকার করেছেন যে প্রনয় আহমেদ চৌধুরী নীলা খানকে ভালোবাসার জ্বালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছিলো কেবল আর কেবল প্রতিশোধের জন্য। সেই প্রনয় আহমেদ চৌধুরীর ছোটভাই তুমি। খানেদের চিরশত্রু চৌধুরী বাড়ির ছেলে তুমি। কিভাবে বিশ্বাস করবো তোমাকে আমি? একটা কারন দাও তোমাকে বিশ্বাস করার।
নীড় : নিজেকে প্রশ্ন করে দেখো। আমি অনেকগুলো অন্যায় করেছি। কিন্তু ভালোওবেসেছি। আমি কি বিশ্বাস পাওয়ার জন্য কোনো কাজই করিনি?
মেরিন : এরকোনো উত্তর নেই আমার কাছে। সবাই ধোকাবাজ।। যেখানে শমসের খান আমাকে ধোকা দিয়েছে সেখানে তুমি কে? তোমার হৃদয় চিরেও আমি ভালোবাসা দেখতে পারবোনা। কারন ভালোবাসা দেখা যায়না , শোনা যায়না , স্পর্শও করা যায়না।
নীড় : কিন্তু অনুভব তো করা যায়।
নীড় মেরিনের দুই গালে হাত রাখলো।
নীড় : আমার ভালোবাসা কি এতোটাই দুর্বল যে অনুভবও করা যায়না? হামম?
মেরিন : জানিনা জানিনা জানিনা। আমি কিচ্ছু জানিনা।
বলেই মেরিন কাঁদতে লাগলো। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। নীড় ওকে ধরতে গেলে সরিয়ে দিলো। নীড় আবারো ওর কাছে গেলে ও ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো। নীড় এবার জোর করে ওর ঠোঁটজোরা দখল করে নিলো। ও কিলঘুষি দিতে লাগলো। তবে নীড়কে সরাতে পারলোনা। একটা সময় মেরিন স্থির হয়ে গেলো। নীড় এবার মেরিনকে বুকে জরিয়ে নিলো। মেরিনও শান্ত বাচ্চার মতো রইলো। নীড় ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। নীড় আর কোনো কথা বললনা। কখনো কখনো কিছু না বলেও শান্ত্বনা দেয়া যায়। মেরিনেরও ইচ্ছা করলোনা বাকযুদ্ধে জরানোর। স্বস্তি পাচ্ছে ও।
নীড় :
🎶🎵🎶
আমার ভেতরও বাহিরে
অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুরে..এ…
🎶🎵🎶
তুমি আমাকে অবিশ্বাস করো তাতে আমার আফসোস নেই। অবিশ্বাসেও ভালোবাসা আছে। জানি আমি সেটা। কিন্তু ছেরে যেওনা আমাকে।

.

ভোর ৫টা…
প্যান্থার এবং প্রনয় পৌছালো সেখানে যেখানে নীলা আছে। যারা পাহারায় ছিলো তাদেরকে অজ্ঞান করা হলো।
প্রনয় : তুমি ভেতরে থাকো। আমি ভেতরে যাচ্ছি।
প্যান্থার : আমিও আসছি স্যার।
প্রনয় : না। আমি একাই যাবো। তুমি বাহিরে থাকো।
প্রনয় ভেতরে ঢুকলো।
নীলা : ওহ টমেটো খুব মিষ্টি
আহ টমেটো খুব মিষ্টি…
প্রনয় : কেউ বাচ্চাদের গান গাইছে। ওই দিক থেকে। নীলার কন্ঠস্বর।
প্রনয় দ্রুত গেলো। নীলা লাফাচ্ছে আর টমেটোর গান গাইছে। প্রনয় নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে নীলার দিকে এগিয়ে গেলো। এতোদিন ধরে ভয় হয়নি। আজকে ওর ভয় হচ্ছে। হাতপা কাপছে , কপালে বিন্দুবিন্দু ঘাম। কাঁপাকাঁপা হাত তুলল নীলার কাধে রাখার জন্য।
নীলা : প্রনয়…
বলেই নীলা পেছনে ঘুরলো। প্রনয়ের চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। ওর উপস্থিতির আভাস নীলা পেতো। নীলার হাতে একটি ছোট্ট পুতুল।
নীলা : তুমি এসেছো? আরেকটু আগে আসতে পারলেনা? প্রান মাত্র ঘুমিয়ে পরেছে।
প্রনয় দেখছে। কেনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই॥ ওর অনুভূতি বলে দিচ্ছে যে এটাই নীলা।
নীলা : দারাও… ওকে বিছানায় রেখে আসি। সাবধানের রাখতে হবে। ওর ঘুম যা হালকা হয়েছে যে কি বলবো? এক মিনিট দাও।
নীলা পুতুলটাকে রেখে এসে নিজের মনে যা এলো বলতে লাগলো।।
নীলা : বড্ড দেরি করলে আসতে। তোমার কাছ থেকে আমি এটা আশা করিনি। আম…
প্রনয় নীলাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। কাঁদতে লাগলো।
নীলা : আরে কি হলো? কি করছো তুমি? তুমি কাঁদছো কেনো? কি হলো?
প্রনয় নীলার সারামুখে চুমু দিতে লাগলো উন্মাদের মতো।
নীলা : আরে কি করছো কি তুমি?
প্রনয় : আমি তোমাকে ভালোবাসি নীলা। অনেক অনেক অনেক…
নীলা : জানিতো আমি।
প্রনয় নীলাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। পিটার দূর থেকে দেখলো। নীড়কে ম্যাসেজ করলো।

.

মেরিন ঘুমিয়ে আছে নীড়ের বুকের মধ্যে। নীড়ের ঘুম ভেঙে গেলো। বুকের বা পাশে মেরিন আর ডান পাশে প্রান্তিক। দুজনের কপালে চুমু দিলো। প্রান্তিকেরও ঘুম ভেঙে গেলো।
প্রান্তিক : গুড মর্নিং চাচ্চু।
নীড় : গুড মর্নিং।
প্রান্তিক উঠে বসলো।
প্রান্তিক : মামমাম কেমন ছোটদের মতো ঘুমিয়ে আছে। নীড় মেরিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো।
নীড় : লাভ… ছোট্ট একটু কষ্ট করো। ব্রাশটা করে ফেলো।
প্রান্তিক : ওকে চাচ্চু।
প্রান্তিক ওয়াশরুমে গেলো। নীড় মেরিনের ঠোঁটে চুমু দিলো। আস্তে করে মেরিনের মাথা বালিশে রাখতে নিলো। তখন মেরিনের ঘুম ভেঙে গেলো। উঠতে নিলো।
নীড় : ঘুমিয়ে থাকো।
মেরিন উঠে বসলো। প্রান্তিককে না দেখে ভয় পেয়ে গেলো।
মেরিন : প্রান কোথায়?
প্রান্তিক : আমি এখানে?
মেরিন স্বস্তি পেলো।
নীড় : তুমি মামমামের চোখের একটু আড়াল হলেই মামমাম অস্থির হয়ে ওঠে।
প্রান্তিক : হবেনা কেনো? আমি হলাম মামমামের সবচেয়ে প্রিয়।

.

নীলা ঘুমিয়ে আছে বাচ্চাদের মতো। প্রনয় বিগত কয়েকঘন্টা ধরে নীলাকে দেখছে।
প্রনয় : আমি ভাবতেও পারিনি যে আমি তোমাকে দেখতে পাবো। জীবনে আমাকে আরো একটা সুযোগ দিয়েছে ভালো থাকার। আমি তোমাকে তোমার অতীত তো ফিরিয়ে দিতে পারবোনা। কিন্তু কথা দিচ্ছি যে তোমাকে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দেয়ার সম্পুর্ন চেষ্টা করবো। জান তুমি আমার। তোমাকে এবং প্রানকে নিয়ে আমি এই অস্থির পরিবেশ থেকে অনেক অনেক দূরে চলে যাবো।
প্রনয় নীলার কপালে চুমু দিলো। চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরায় নীলার ঘুম ভেঙে গেলো। দ্রুত উঠে বসলো।
নীলা : আ আ আ… বাঁচাও বাঁচাও।
প্রনয় : কি হলো নীলা? দেখো আমি। আমি প্রনয়। তোমার প্রনয়।
নীলা : প্রনয়… বাবা বাঁচাও আমাকে। প্রনয় আমাকে মেরে ফেলবে। বাবা বাবা…
প্রনয় : না না না। আমি তোমার কিছু করবোনা নীলা।
নীলা : বাবা বাবা… আমি বাবাকে কেনো ডাকছি? বাবা তো বাবাই নয়। হাহাহাহা।
নীলার কথায় প্রনয় অবাক হলো। হাসতে হাসতে নীলা কাঁদতে লাগলো।
প্রনয় : তুমি কাঁদছো কেনো? নীলা… এই নীলা…
নীলা : আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছে। জানো… এগিয়ে যাওয়ার পথ নেই। পেছনের দুয়ার বন্ধ। প্রনয় আমাকে ভালোবাসেনা। বাবার কাছে যাওয়ার মুখ নেই।
নীলা কাঁদতে লাগলো। কাঁদতে কাঁদতে আবার হাসতে লাগলো। নীলার এই করুন পরিনতি দেখে প্রনয়ের চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো।
প্রনয় : কি অবস্থা হয়ে গিয়েছে আমার নীলার…কাউকে ছারবোনা। যারাযারা আমার নীলার এমন অবস্থার জন্য দায়ী তাদের কাউকেই ছারবোনা। গুনে গুনে শেষ করবো। ধ্বংস করবো। নীলা এতোদিন কোথায় ছিলো? কার কাছে ছিলো? জন কবিরের কথাই তো বলছিলো। কবিরের কাছে বন্দি ছিলো? নীলা এটা কেনো বলল যে বাবা তো বাবাই নয়! উফফ মাথা কাজ করছেনা।

.

বর্ষা : এতোদিন বাসায় ফিরিসনি কেনো?
নীড় : জরুরী কাজ ছিলো।
বর্ষা : যতো জরুরী কাজই থাকুকনা কেনো তুই কি আমার থেকে দূরে থাকবি? বল…
নীড় : কাছে থাকার জন্যই তো এই দূরত্ব।
বর্ষা : আমি তোর থেকে দূরে থাকতে চাইনা। দূরে থাকতে পারবোনা। তুই জানিসনা যে তুই আমার কাছে কি?
নীড় : তুইও ভাবতে পারবিনা যে তুই আমার কাছে কি? দারা ফ্রেশ হয়ে আসছি আমি।
নীড় নিজের ঘরে চলে গেলো।
বর্ষা : তোকে আর আমি নিজের কাছ থেকে দূরে যেতে দিবোনা।
বর্ষা ওপরে গেলো।
নিহাল মনেমনে : নীড়ের চেহারায় আমি প্রসন্নতা দেখতে পাচ্ছি। মেরিন ভিন্ন কাউকে আমি দেখিনি যে কিনা নীড়ের প্রসন্নতার কারন হতে পারে। কোথায় ছিলো তবে নীড়?
নীলিমা : শুনছো…

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 53
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নীলিমা : শুনছো…
নিহাল : বলো।
নীলিমা : জিজ্ঞেস করোনা নীড় কোথায় ছিলো?
নিহাল : তুমি জিজ্ঞেস করো।
নীলিমা : আমাকে তো বলবেনা। আমার সাথে তো কথা বলেনা।
নিহাল : একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? তুমি কি নিজেকে নির্দোষ ভাবো?
নীলিমা চুপ করে রইলো।
নিহাল : যে মারা গিয়েছিলো সে আমাদের প্রনয় ছিলোনা। নীলা বারেবারে বলেছিলো যে ওট আমাদের প্রনয় না। মেরিন তো প্রমানও করে দিয়েছে। তবুও তোমার মনে কোন অনুশোচনা নেই।
নীলিমা চুপটি করে রইলো।
নিহাল : নিজের মমতাকে প্রশ্ন করো নীলি…
নীলিমা : আমার মমতা আমাকে বলে যে আমি ঠিক করেছি। যে মারা গিয়েছে সে যদি প্রনয় না হয় তবে কোথায় আমার প্রনয়?
নিহাল : প্রনয় যেখানেই থাকুক সেটা বড় কথা নয়। প্রনয়ের মৃত্যু নীলার হাতে হয়নি সেটা হলো কথা। তবুও তোমার মমতা কিভাবে তোমাকে বলে যে তুমি সঠিক?
নীলিমা : যেভাবে নীড়ের মনুষত্ব্য ওকে বলেছে যে মৃত নীলাকে চরিত্রহীনা বানানোও সঠিক কারন প্রানকে পেতে হবে।
নিহাল : অপরাধ করার পরও কিছু সুযোগ থাকে নিজেকে সংশোধন করার।
নীলিমা : নীড় নিজেকে সংশোধন করছেনা। আর না নিজের ভুলটাকে ভুল মনে করে। যে নিজে নির্ভুল হয় তারই অধিকার থাকে অন্যের ভুলের বিচার করার।
নিহাল : যাক , যেভাবেই হোক তুমি স্বীকার করলে যে তুমি ভুল করেছো।
নীলিমা : মানুষ হিসেবে ভুল করেছি মা হিসেবে ভুল করিনি।

.

নীড় কাবার্ড থেকে শার্ট বের করলো পরবে বলে।
নীড় : তুই এই ঘরে কি করছিস?
বর্ষা : তোর এই ঘর কি আমার ঘর নয়?
বর্ষা ওকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলো। ঘাড় কাত করে আয়নায় দেখলো নিজেদেরকে।
নীড় : ছার… শার্ট পরবো।
বর্ষা : তোর এই উন্মুক্ত বুকটা আমাকে আকর্ষিত করছে।
বর্ষা নীড়ের উন্মুক্ত পিঠে চুমু দিলো। নীড় বর্ষাকে সরিয়ে দিলো।
নীড় : সবকিছুর সঠিক সময় থাকে বর্ষা।
বর্ষা : কতোদিন পর তোকে দেখলাম।
নীড় : মাসের পর মাস আমাকে না দেখেই থাকতি।
বর্ষা : দূরে থেকে দূরত্ব বজায় রাখা যায়। কিন্তু কাছে থেকে দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন নীড়।
বর্ষা নীড়ের বুকে মাথা রাখলো। হাত গিয়ে পরলো সেখানে যেখানে মেরিনের নাম লেখা। বর্ষা মাথা তুলে দেখলো।
বর্ষা : আজও তোর বুকে মেরিনের নাম লেখা।
নীড় : দৃশ্যমান লেখা নাম তো দেখে নিলি। অদৃশ্য লেখা নাম কিভাবে দেখবি বল?
বর্ষা : ভেতরে কি আমার নাম লেখা তবে?
নীড় : তুই জানিসনা কাকে ভালোবাসি আমি?
বর্ষা : তবুও যে এই নামটা আমাকে কষ্ট দিচ্ছে।
নীড় : সারাজীবনই তাহলে কষ্ট পেতে হবে।
বর্ষা : এই কারনে নামটা লেখানোর আগে ভাবনাচিন্তা করা উচিত ছিলো।
নীড় : হামম।
নীড় শার্টটা পরে নিলো।
বর্ষা : বিয়ে কবে করবি আমাকে? হামম?
নীড় : ডিভোর্স কিভাবে হবে বল?
বর্ষা : মেরিন তো পলাতক। তাই বিয়েতে কোনো বাধা নেই।
নীড় : কাজটা শেষ হোক। খুজে পাই। এরপর হবে।
বর্ষা : কাজ কাজ আর কাজ?
নীড় : বিষয়টা প্রানে বর্ষা।
নিহাল দরজায় নক করলো।
নীড় : হ্যা বাবা এসো।
নিহাল ভেতরে ঢুকলো।
নিহাল : কাজ শেষ করে একটু ঘরে এসো। কথা আছে।
বলেই নিহাল বেরিয়ে গেলো। নীড় রেডি হয়ে বেরিয়ে নিহালের ঘরে গেলো।
নীড় : কি কথা আছে বাবা?
নিহাল : প্রান এবং মেরিন কেমন আছে?
নীড় : রিভার্স সাইকোলজি খেলার চেষ্টা করছো কি? ওরা কেমন আছে সেটা আমি কিভাবে জানবো?
নিহাল : ছোট থেকে তোমাদেরকে খানেদের ঘৃণা করতে শিখিয়েছি। কবির হয়তো মেয়েদেরকে ভালোবাসতেই শিখিয়েছে। তাইতো ওর দুই মেয়ে আমার দুই ছেলের মনে ভালোবাসা জাগিয়েছে। প্রান এবং মেরিন এতোদিন ধরে চোখের আড়াল হলে তুমি প্রলয় ঘটাতে। তুমি স্থির আছো। বাসায় ঢোকার সময় তোমার চেহারায় প্রসন্নতা ছিলো। তোমার মতো বুদ্ধিমান হয়তো আমি নই কিন্তু নিজের ছেলের চেহারার প্রসন্নতা বোঝার মতো বুদ্ধি আমার আছে। ভালো আছে তো ওরা?
নীড় : তুমি আরো একবার দাদু হতে চলেছো বাবা। আর আমি বাবা।
নিহাল : সত্যি?
নীড় : ইয়েস।
নিহাল : দুই বোন আমার আঙিনা ভরিয়ে দিলো। আমার কিন্তু এবার নাতনি চাই। মেয়েরা না থাকলে কি ঘর ভরা ভরা লাগে?
নীড় : এটার কথা তো বলতে পারিনা। তবে দাদু হবা সেটা নিশ্চিত।
নিহাল : আলহামদুলিল্লাহ। দ্রুত ফিরিয়ে নিয়ে এসো। সবটা স্বাভাবিক করে ফেলো।
নীড় : সেই চেষ্টাইতো করছি বাবা। সব স্বাভাবিক করার চেষ্টাই চলছে। কিন্তু…
নিহাল : কিন্তু কি?
নীড় : কিছুনা। বাদ দাও।
নিহাল : বেশ দিলাম বাদ। কিন্তু আমি দ্বিতীয় প্রান চাইনা।
নীড় : মানে?
নিহাল : মানেটা কি খুব সহজ নয়? প্রান যেমন ঘটনার স্বাক্ষী হয়েছে বা হচ্ছে তেমন ঘটনা যেনো আমার অপর নাতি-নাতনিকেও যেনো না হতে হয়। এটার গ্যারান্টি তোমাকে দিতে হবে। আর কোনো প্রতিশোধ আমি চাইনা।
নীড় : স্বাভাবিক তো সব আমিও চাই। যদি চাওয়ার মতো সব হতো তাহলে তো ভালোই হতো।
নিহাল : হেরে যাওয়ার সুর নীড়ের কন্ঠে মানায় না। নীড় তো সেটা হাসিল করে নেয়। তাহলে আজকে কেনো সংকোচ আছে?
নীড় : জানিনা বাবা। একটু ভয়ে আছি। যাইহোক , অনেক বড় একটি চমক পেতে চলেছো।
নিহাল : চমক?
নীড় : হ্যা। আসছি।
নীড় বেরিয়ে গেলো।
নীড় : সব হয়তো স্বাভাবিক হবে বাবা। কিন্তু আমার জীবনের কি হবে জানিনা। সিদ্ধান্ত মেরিনের।

.

মেরিন পায়চারি করছে।
প্রান্তিক : কি হলো মামমাম? তুমি ওভাবে হাটছো কেনো? আর চাচ্চু এখনো এলোনা কেনো?
মেরিন : তোমার চাচ্চু আজকে আর আসবেনা।
প্রান্তিক : কেনো আসবেনা কেনো?
মেরিন : আসবেনা কারন আজকে তোমার চাচ্চু বর্ষা আন্টির কাছে গিয়েছে। তারসাথে ঘুরবে , বেরাবে , খাবার খাবে। আর রো…
প্রান্তিক : আর কি মামমাম?
মেরিন : কিছুনা। তোমার চাচ্চু আস্ত একটা ড্রাকুলা। অপদার্থ একটা।
প্রান্তিক : চাচ্চু কি কোনো দুষ্টুমি করেছে?
মেরিন : নাম নেবেনা তোমার চাচ্চুর।
মেরিন রাগ করে সোফার ওপরে বসলো।
প্রান্তিক : মামমাম মনেহয় একটু রেগে আছে। চাচ্চু যাওয়ার আগে বলেছি মামমামের খেয়াল রাখতে। দাদুভাই বলে রাগ হলে পানি খেতে হয়। পানি খেলে রাগ কমে।
তখন নীড় এলো। দুজনই নীড়ের দিকে তাকালো। নীড়ের হাতে ফুলের তোরা এবং চকোলেট। প্রান্তিক ছুটে গেলেও মেরিন রেগে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
নীড় মনেমনে : এতো দেখি রেগে আছে। ৯টা মাসু মুড সুইং এর চক্করে আমি মিষ্টি যন্ত্রণা পেতে চলেছে।
প্রান্তিক : থ্যাংক ইউ চাচ্চু।
নীড় প্রান্তিকের কানে ফিসফিস করে বলল : মামমাম রেগে আছে কেনো? দুষ্টুমি করেছো?
প্রান্তিক : না না। আমি কোনো দুষ্টুমি করিনি। আমি তো ভেবেছি যে তুমি দুষ্টুমি করেছো তাই মামমাম রাগ করেছে। তোমাকে তো বকছিলোও।
নীড় : কি কি বলছিলো মামমাম?
প্রান্তিক বলল। নীড় ছোট করে হাসি দিলো।
নীড় : চকোলেট গুলো নিয়ে গিয়ে খাও আর খেলা করো। পিটার আংকেল খেলবে তোমার সাথে।
প্রান্তিক : ওকে।
প্রান্তিক দৌড়ে গেলো। নীড় ফুলগুলো নিয়ে মেরিনের দিকে গেলো।
নীড় : ফর ইউ মাই রোজ।
মেরিন : কল মি থ্রোন।
নীড় : তওবা তওবা। তুমি কাঁটা কেনো হবা?
মেরিন : অবশ্যই আমি কাঁটা। তোমার এবং তোমার প্রেমের পথে।
নীড় : তা ঠিক। যখন আমি তোমার সাথে রোম্যান্স করতে যাই তখনই তুমি ছেরে দাও ছেরে দাও বলো। তখন তোমার কথাগুলো শুনলে নিজেকে ভিলেন ভিলেন মনেহয়। আমার মনেহয় যে ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে ছেরে দে শয়তান , পাষন্ড। তুই আমার দেহ পাবি কিন্তু মন পাবিনা।
মেরিন রেগে নীড়ের দিকে তাকালো।
নীড় : নাও জান।
মেরিন : একদম আমাকে জান বলে ডাকবেনা। আর এই ফুলগুলো আমার জন্য কেনো এনেছো? যাও এগুলো তোমার ওই বর্ষাকে গিয়ে দাও।
নীড় : আইডিয়াটা অবশ্য খারাপ না। তবে ফুল দিতে গেলে আরো অনেক কিছু ঘটতে পারে। রিটার্ন গিফ্ট হিসেবে ও আমাকে একটি চুমু দিতে পারে। একটা পরনারীর চুুমুতো নিজের রাখা অপরাধ। তাই আমাকে সেই চুমু ফিরিয়ে দিতে হবে। ব্যাক টু ব্যাক দুটো চুমুর জন্য পরিবেশ রোম্যান্টিক হয়ে যেতে পারে। যার ফলে আরো একটা চুমুর আবশ্যকতা পরবে। যেটা হবে গভীর চুমু। এই চুমুর চক্করে আরো কতো কিছুই না হতে পারে। এ বাবা… ভেবেই আমার লজ্জা করছে। ইশ কি রোম্যান্টিক রোম্যান্টিক! আমি তো এখন এক বাচ্চার বাবা হতে চলেছি। আমাকে কি আর এসব করা সাজে? তুমি যদি অ্যালাউ করো তাহলে আবার অসুবিধা নেই।
মেরিন পানির জগটা নীড়ের মাথায় ঢেলে দিলো।
মেরিন : তোমার এই ফালতু কথাগুলো শুনলে না আমার শরীরে কাঁটা দিয়ে দেয়। অসহ্যকর।
বলেই মেরিন ঘরে চলে গেলো। নীড় হাসলো।

.

নীলা : না না না। আমি আর খাবোনা।
প্রনয় : আরো একটু খেতে হবে ভালোবাসা।
নীলা : আমার আর খেতে ইচ্ছা করছেনা।
প্রহর : বেশি না। আর মাত্র দুবার।
নীলা : তাহলে গান গাও।
প্রহর : গান!
নীলা : হ্যা হ্যা গান। গান না গাইলে আমি খাবোইনা।
প্রহর : কিন্তু আমি তো গান গাইতে জানিনা।
নীলা : তাহলে আমিও খাবোইনা। হুহ।
প্রহর : এই না না। গাইছি আমি গান। কি গান গাইবো বলো?
নীলা : হারেরে আমায় ছেরে দেরে দেরে।
প্রনয় মনেমনে : এই গান তো আমি ভুলেও পারিনা। এখন কি করবো?
নীলা : কি হলো?
প্রনয় : কিছুনা। এক মিনিট দাও আমাকে।
নীলা : না না না।আমি গান শুনবো।
প্রনয় : হ্যা শোনাবো তো।
নীলা : না গান শোনাবেনা। তুমি নাচবে।
প্রনয় : নাচবো!
নীলা : হ্যা হ্যা নাচবে। ছারো গান।
গান ছারলো প্রনয়। নাচছেও প্রনয়। একটুএকটু করে খাবারও খাইয়ে দিচ্ছে।

প্যান্থার কয়েকবার প্রনয়ের ভবন থেকে ফিরে এলো। কথা বলার ছিলো বলে। দরজা বন্ধ। দরজার বাহিরে প্যান্থার অপেক্ষা করছে। হঠাৎ গান শুনতে পেলো।
প্যান্থার : গানের শব্দ! ভেতর থেকে আসছে। ভেতরে গান বাজছে! এটাতো অসম্ভব। দেখতে হয় তো।
প্যান্থার দেখার চেষ্টা করলো।
প্যান্থার : মাইগুডনেস বস নাচছে! এটাতো অবাস্তব। কিভাবে বাস্তব হলো? বস হাসছে। এই দৃশ্য কারো সামনে আসতে দেয়া যাবেনা। কেউ তো জানেইনা যে লিও রূপে যে আছে সেই প্রনয় আহমেদ চৌধুরী। হয়তো এটা সত্যিই নীলা ম্যাম। তাই বস নিজের হারানো হাসি খুজে পেয়েছে। না না না। বসকে আর বিরক্ত করা যাবেনা। এখানে আর কাউকে আসতে দেয়া যাবেনা।
প্যান্থার বেরিয়ে গেলো।

নীলার খাবার খাওয়া শেষ হলো। ঔষধও খাইয়ে দিলো।
প্রনয় : গুড গার্ল।
নীলা : বাবাও আমাকে গুডগার্ল বলতো জানো। কিন্তু আমি গুড গার্ল নই। আমি বাবাকে কষ্ট দিয়েছি। অনেকটা কষ্ট দিয়েছি। তোমার জন্য… তোমার জন্য কষ্ট দিয়েছি। তুমি আমাকে কষ্ট দিয়েছো। কেনো দিয়েছো? আমি কি করেছি বলো? আমি তো তোমাকে ভালোইবেসেছিলাম।
নীলা কাঁদতে লাগলো। পরক্ষনেই আবার হাসতে লাগলো। ঘুমিয়ে পরলো নীলা।

.

পরদিন ভোরে…
মেরিন : প্রান…
মেরিনর ঘুম ভেঙে গেলাে খারাপ স্বপ্ন দেখে। মেরিনের চিৎকারে নীড়েরও ঘুম ভেঙে গেলো।
নীড় : কি হয়েছে মেরিন? ঠিক আছো?
মেরিন প্রান্তিকের মুখে হাত বুলিয়ে দিলো। এরপর কপালে চুমু দিয়ে উঠে গিয়ে বাহিরে চলে গেলো। সোফায় বসে মাথা চেপে ধরে বসলো। নীড় ওর পাশে গিয়ে বসলো।
নীড় : কি হয়েছে মেরিন?
মেরিন নীড়ের বুকে মাথা রাখলো। এই প্রথম মেরিন এই কাজটা করলো। নীড় ওকে আগলে নিলো।
নীড় : কি হয়েছে?
মেরিন : আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি।
নীড় : খারাপ স্বপ্ন?
মেরিন : হয়তো না। আবার হয়তো হ্যা।
নীড় : কি স্বপ্ন দেখলে?
মেরিন : আআমি দেখলাম যে আপু তোমার ভাইয়ার সাথে ফিরে এসেছে।
নীড় : হামম।
মেরিন : আপু প্রানকে আমার কাছ থেকে জোর করে নিয়ে নিয়েছে। বলেছে যে আমার কোনো অধিকার নেই প্রানের ওপর। বলল যে আর কখনো আমাকে প্রানের মুখ দেখাবেনা। প্রানও চলে যাচ্ছে দুজনের সাথে। আমি ওর হাতটা ধরলাম। ও সরিয়ে দিলো আমার হাত। বলে যে , মামমাম আমি আমার আম্মুকে পেয়ে গিয়েছি। বাবাকে পেয়ে গিয়েছি। তোমাকে আর চাচ্চুকে আর চাইনা। বলল যে ওদের সাথে যাবো। ওদের সাথেই থাকবো। আমি কতো আকুতি মিনতি করলাম কিন্তু আমার কথা ওরা শুনলো না। চলে গেলো প্রানকে নিয়ে। অনেক অনেক দূরে…
বলেই মেরিন কাঁদতে লাগলো।
নীড় : শান্ত হও জান। প্লিজ শান্ত হও। স্বপ্ন তো কেবল স্বপ্নই হয়। সেটা নিয়ে এভাবে ভাবলে কি হবে বলো?
মেরিন : এমনই হবে। এমনটাই হয় আমার সাথে। আমার সব শখ হারিয়ে যায়। এমনটাও হবে। আপু আছে , তোমার ভাইয়া আছে। প্রান তো ওদেরই ভাগ্য। আমার তো কোনো অধিকার নেই প্রানের ওপর। ওরা ওর মাবাবা । আমি প্রানকে ছেরে কিভাবে থাকবো নীড়? কি হবে আমার? আমি যে মরেই যাবো।
নীড় : একদম এভাবে বলেনা। এমনটা কিছুই হবেনা। ভাইয়া এবং তোমার বোন ফিরে এসেছে তো কি হয়েছে? মাবাবা থাকলে কি সন্তান আর কারো স্নেহের হয়না? ও সবসময় তোমার স্নেহের থাকবে। তোমার কাছে থাকবে।
মেরিন : না নীড় থাকবেনা। সত্যি থাকবেনা। ও আমার হাতে খাবেনা , আমার বুকে ঘুমাবেনা। সব করবে আপুর সাথে। ও কেবল আর কেবল আপুর হয়ে থাকবে।
নীড় : আমাদের প্রান যথেষ্ট বু্দ্ধিমান। ও কখনো তোমাকে কষ্ট দিতে পারেনা।
মেরিন : আমি যে ওকে আর আমার বলতে পারবোনা। ও যে নীলা খানের।
নীড় : প্রানকে কেউ তোমার থেকে দূরে করবেনা। আর ‘তোমার’ বলতে পারার যে কথাটা বললে সেটার ক্ষেত্রে আমি একটা কথা বলতে পারি। প্রান তো সকলের। কিন্তু কেউ একজন তো আসছে যাকে তুমি নিজের বলতে পারবে। মানলাম প্রানকে নিজের না বলতে পারলে। কিন্তু নিজের সন্তানকে তো নিজের বলতেই পারবে। কেউ তোমার কাছ থেকে এই অধিকার কেরে নিতে পারবেনা। কারো সেই অধিকার থাকবেনা। প্রানের প্রতি তোমার যে স্নেহের অধিকার আছে সেটাও আমি কাউকে হরন করতে দিবোনা। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আমি।
মেরিন : এই প্রতিশ্রুতি তুমি আমাকে দিতে পারোনা নীড়। প্রকৃতপক্ষে আমার মতো তোমারও প্রানের প্রতি কোনো অধিকার নেই। মাবাবা ছিলোনা। তাই ওর আমাদের প্রয়োজন ছিলো। আমরা তো কেবল আর কেবল ওর প্রয়োজন।
নীড় : হয়তো তুমি ঠিক বলছো। কিন্তু যে নতুন আসছে তার প্রতি তো আমাদের অধিকার আছে।
মেরিন : কি জানি কার প্রতি কিসের অধিকার আছে? আমি তো অধিকারের ব্যাখ্যা , বৈশিষ্ট্য সব ভুলে গিয়েছি। আমি তো কেবল জোর করে নিতেই জানি। অবশ্য যেটার ওপর আমার অধিকার নেই সেটাকেও আমি কেরে নেইনা। আমার যেটা ভালো লাগে সেটা আমার করতে জানি। কিন্তু প্রান তো মানুষ। আর যে…
মেরিন থেমে গেলো।
নীড় : থেমে গেলে কেনো? মেরিন আমি জানি কনসিভ করার খবরে তুমি আমার আমার চেয়ে কয়েকগুন বেশি আনন্দিত। আনন্দটাকে ভাগ করে নিলে সেটা আরো বৃদ্ধি পায়।
মেরিন : তুমি তো ওকে নিজের করে নিবে।
নীড় : ও আমাদের মেরিন। আমার একার নয়।
মেরিন : আজকে তুমি এই কথা বলছো। কিন্তু দুদিন পর ঠিক ওকে নিজের বলে ঔন করবে। আমি যেতে চাইলে যেতে দিবেনা। হয়তো আমাকে যেতে দিলেও ওকে রেখে দিবে।
নীড় : এমনটা মনেহয় আমাকে?
মেরিন চুপ করে রইলো।
নীড় : কিছুতেই তুমি আমাকে ভরসা করতে পারোনা। তোমাকে আমি যেতে দিবোনা। না আমাদের সন্তানকে।
মেরিন : ঠিক জানতাম তুমি এটাই বলবে।
নীড় : তোমার ধারনা সঠিক। কিন্তু তুমি আমার কথাটাকে বাধন হিসেবে নিয়েছো। কিন্তু আমি যা বলেছি ভালোবেসে বলেছি। তুমি যদি আমার ভালোবাসাকে বন্দিদশা মনে করো তাহলে তো আমার কিছু বলার নেই। দোষ তোমার নয় দোষ আমার। আমি হয়তো যথেষ্ট ভালোবাসতে পারিনি , আমার ভালোবাসা হয়তো পর্যাপ্ত নয় তোমাকে নিজের করে রাখতে। মিশন শেষ হওয়া পর্যন্ত আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো তোমার মনের ভয় দূর করার। চেষ্টা করবো আমার ভালোবাসাটাকে বোঝানোর।
মেরিন : ব্যর্থ হবে।
নীড় : আমি আশাবাদী। আর যদি ভাগ্যে ব্যর্থ হওয়া থাকে তাহলে আর কি করার? তুমি বলেই আমি ব্যর্থ হওয়ার কথা বলছি। কারন তোমাকে ভালোবাসি। তা না হলে জোর করে নিজের কাছেই রেখে দিতাম। কিন্তু তুমি তো বন্যা। পানির ন্যায়। সাগরের তীর থাকে। কিন্তু বন্যার নয়। তুমি তো সেটাই। পানিকে কিছুক্ষনের জন্য পাত্রে বন্দি করে রাখা যায়। কিন্তু পানি কখনো দাসত্ব স্বীকার করেনা। হার না মেনে সে শুকিয়ে বাতাসের সাথে মিশে যায়। হার মানেনা। তাই তোমাকে বন্দি করার সারস আমার নেই। আমি তোমাকে আশ্বাস দিচ্ছি। আমার ভালোবাসাকে অস্বীকৃতি দিয়ে তুমি চলে যেতে চাইলে আমি তোমাকে বাধা দিবোনা।
মেরিন : মিশন শেষ হলেই আমি চলে যাবো।
নীড় : যেও।
মেরিন : বেবিকে নিয়ে যাবো।
নীড় : যেও।
মেরিন সোজা হয়ে বসলো।
মেরিন : তুমি কি জানো তুমি পৃথিবীর সবচেয়ে অসহ্যকর পুরুষ।
নীড় : হ্যা হয়তো।
মেরিন : পুরুষজাতি কখনো কাউকে ভালোই বাসতে পারেনা।
নীড় : তা ঠিক।
মেরিন : তোমাকে আমার দুই চোখে দেখতে মনে চায়না।
নীড় দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নিলো।
নীড় : এই আমি মুখ ঢেকে নিলে।
মেরিন নীড়ের মাথায় থাপ্পর দিলো।
মেরিন : শালা…
বলেই মেরিন ঘরে চলে গেলো।
নীড় : একেই হয়তো বলে মুড সুইং। আই অ্যাম লাভিং ইট।

.

১৫দিনপর…
নীলাকে নিয়ে প্রনয় ১৫দিন আনন্দে পার করলো। ও যেনো নিজের জীবন ফিরে পেয়েছে। সকলের প্রতি সকল প্রতিশোধ ভুলে গিয়েছে। সবকিছু ভুলে গিয়েছে। ও হাসতে শিখে গিয়েছে। নীলার অবস্থারও কিছু উন্নতি হয়েছে।

নীড় : বোর্ডে তীর মারার কি কারন?
মেরিন : তুমি ইচ্ছা করে ফ্লপ প্ল্যান বানিয়েছো তাইনা? তোমার জন্য আরো একবার আপুকে হারাতে হলো। যদি আপুর কিছু হয় তাহলে… তাহলে…
নীড় : মেরে দেবে আমাকে? জান নিবে আমার?
মেরিন : তোমার জান নিয়ে আমার কি হবে? জাদুঘরে সাজিয়ে রাখবো?
নীড় : উফফ।
মেরিন : আমি তোমার ভরসায় আর থাকবোনা। আপুর গলায় প্রানের যে লকেট আছে সেটাতে আমি ট্র্যাকার লাগিয়ে দিয়েছিলাম।
নীড় : তো হামলা করো।
মেরিন : লিওর চেহারা তোমাকে আমি দেখাবো। কিন্তু কবির ফয়সাল খানকে আমি খুজে বের করবো। এটাই আমার উদ্দেশ্য।
নীড় : খোজো।
মেরিন : লিওর গ্যাং খান বাড়িতে ঢুকেছিলো। তার দুদিন পর পরিত্যাক্ত গ্যারেজে কবির ফয়সাল খান রূপে থাকা কিবরিয়া ঢুকেছিলো।
নীড় : তুমি কি বলতে চাইছো?
মেরিন : কবির ফয়সাল খানকে ওই গ্যারেজে শিফ্ট করা হয়েছে।
নীড় : নিশ্চিত?
মেরিন : প্রেক্ষাপট দেখে তো নিজের অস্তিত্ব নিয়েই আমি অনিশ্চিত। যাইহোক , এটা আমার ধারনা।

.

চলবে…