প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-৫৪+৫৫+৫৬

0
36

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 54
writer : Mohona
(do not copy please)

.

মেরিন : যাইহোক , এটা আমার ধারনা।
নীড় : হামম। আজই গিয়ে তবে কবির ফয়সাল খানকে নিয়ে আসবো।
মেরিন : তুমি একা যাবে?
নীড় : তোমাকে এই অবস্থায় আমি নিয়ে যেতে পারবোনা।
মেরিন : কেনো? আমি কি রোগী?
নীড় : মেরিন… নিজের কথা না ভাবো বেবিটার কথা তো ভাবো।
মেরিন : ওও… তো বেবির জন্য চিন্তা? বেবির জন্য তো তোমার চিন্তা হবেই । বেবিটা তো তোমার। তোমার রক্ত। আমার সাথে তো তোমার কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই। তাই আমার জন্য কোনো চিন্তাও নেই।
নীড় মনেমনে : আল্লাহ… যা খেলা দেখালে তুমি। গত ২০-২৫দিন ধরে যা সব ফেইস করলাম তা আমি ২৫-৩০বছর ধরেও ফেইস করিনি। জীবনে কমেডির অভাব ছিলো। সেটাও পূরন হয়ে গিয়েছে।
মেরিন : কি হলো? কথা বলছোনা কেনো?
নীড় : আমি তোমার বাবাকে সুরক্ষিত নিয়ে আসবো ।কথা দিলাম।
মেরিন : শোনো , ওইটা চৌধুরী বাড়ি নয়। ওইটা খান বাড়ি। শমসের খানের বাবা আলিবর্দী খান ওই বাড়ি বানিয়েছিলেন। রাজ পরিবার। এক মাস ধরে খুজলেও ওই গ্যরেজ তুমি খুজে পাবেনা।
নীড় : বাড়িটা কি এতোই বড়? আমি তো দেখেছি।
মেরিন : আমি কি একটিবারের জন্যেও আকৃতির কথা বলেছি? রহস্যের কথা বলেছি। গোপন দরজা , গোপন দেয়ালের কথা বলেছি।
নীড় : কিবরিয়া তবে কিভাবে জানলো? কিভাবে ভেদ করলো?
মেরিন : ও একটিমাত্র পথ জানে হয়তো। অথবা দুটি। কিন্তু খানবাড়ির কোনাকোনা সম্পর্কে কিবরিয়ার জানা এক কথায় অসম্ভব। খান বাড়ির কোন পথ কোথায় যাবে সেটা খানেরা ভিন্ন কেউ জানেনা। অতএব , তুমি একা কবির ফয়সাল খানকে উদ্ধার করতে গেলে উদ্ধার তো করতে পারবে। কিন্তু সেই পথে যাবে যেটা দৃশ্যমান। অথবা সেই পথে যাবে যেটা আংশিক দৃশ্যমান।
নীড় : আর তুমি গেলে?
মেরিন : খান বাড়িতে প্রবেশ করার একটি গোপন পথ আছে। সুড়ঙ্গ বলতে পারো। সেটা ধরে ভেতরে ঢুকে তুমি বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারো। ওই পরিত্যক্ত গ্যারেজেও যেতে পারো।
নীড় : চলো তবে।
মেরিন : জনকে আসতে বলছি।

.

প্রনয় : বলো তো কে আমি?
নীলা : তুমি প্রনয়।
প্রনয় : তুমি কে?
নীলা : আমি নীলা।
প্রনয় : তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে?
নীলা : মায়ের কাছে।
প্রনয় মনেমনে : মায়ের কাছে! মানে কনিকা খান। অর্থাৎ কবির ফয়সাল খান এবং কনিকা খান মিলেই ওকে বন্দি করে রেখেছিলো।
নীলা : শোনো… আমাকে একটা আইসক্রীম দিবে? একটা না একটা না। ২টা। একটা আমার আর আরেকটা মেরিনের। ওকে না দিলে খুব রাগ করবে। ও যা রাগী…
প্রনয় : মেরিনের কথা তোমার মনে আছে?
নীলা : কেনো থাকবেনা? ও তো মাত্রই স্কুলে গেলো। ওর সাথে বাবার সাথে খালি যুদ্ধ হয়। বাবার এবং ওর মতের মিল হয়ইনা। সাপে নেউলের সম্পর্ক। দুজনের চক্করে আমার অবস্থা খারাপ হয়। আম্মু তো বাবার ওপর কথা বলেনা। তবে জানো বাবা না নিজের বন্ধুর ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিতো। কিন্তু আমি তো তোমাকে ভালোবাসি। কিভাবে বিয়ে করতাম? আমি তো বাবার বিরোধিতা করতে পারিনা। মেরিন বন্ধ করে দিয়েছে ওই বিয়ে। তারিয়ে দিয়েছে পাত্রপক্ষকে।হিহিহি…
প্রনয় : আই লাভ ইউ।
নীলা : হিহিহি…

.

কবির : তুই আমাকে এখানে এনে ভুল করেছিস কিবরিয়া।
কিবরিয়া : ভুল করার মানুষ আমি নই।
কবির : মানুষ মাত্রই ভুল। শয়তানের কোনো ভুল নেই।
কিবরিয়া : বেশ তবে আমি শয়তানই। লিও তোর শত্রু। তোর মৃত্যু তো আমি মরবোনা। তুইই মরবি। অতঃপর আমি কোনো ভুল করিনি।
কবির : বনের যেকোনো জায়গায় হরিণ সিংহের সামনে এলে বাঁচার একটু হলেও সম্ভাবনা থাকে। দৌড়ে পালালেও পালাতে পারে। কিন্তু হরিণ যদি ভুলেও সিংহের গুহায় আসে তাহলে বাঁচার সম্ভাবনা একটুও থাকেনা।
কিবরিয়া : ধ্বংসের মুখে দারিয়ে থেকেও তোর তেজ কমেনি।
কবির : এই তেজ নিয়েই জন্ম নিয়েছি। কারো কাছ থেকে ধার করা তেজ নয় এটা।
কিবরিয়া কবিরকে আঘাত করলো।
কিবরিয়া : তেজ সব শেষ। তোদের সাহসের পরিসর জানা শেষ। দুমাস হতে চলল তবুও তোর মেয়ে গর্ত থেকে বের হওয়ার সাহস পেলোনা।
কবির : মেরিন যতোদিন গর্তে আছে ততোদিনই তোর জন্য মঙ্গলময়।

.

মেরিন : বিপি কেনো মাপতে হবে এখন?
নীড় : ডক্টর বলেছে প্রতিদিন একবার করে মেপে লিখে রাখতে।
মেরিন : উফফ… আর একটু পর বের হবো তো।
নীড় : বের হওয়ার সাথে বিপি মাপা না মাপার কিসের সম্পর্ক? বসো।
মেরিন : হুহ।
নীড় : হুহ না বলে শালাও বলতে পারো।
মেরিন : তুমি একদম বেশি কথা বলবেনা বলে দিলাম।
নীড় : ওকে।
তখন নীড়ের ফোনে একটা ম্যাসেজ এলো। বর্ষা পাঠিয়েছে। বর্ষার নাম দেখে নীড় মোবাইল রেখে দিতে নিলো।
মেরিন : আমি চলে যাচ্ছি। বর্ষার সাথে কথা বলে নাও। ওর ম্যাসেজটা দেখে নাও। প্রিভেসি নষ্ট হবেনা তোমার।
মেরিন উঠে যেতে নিলে বসিয়ে দিলো।
নীড় : বর্ষার সাথে কথা বলতে হলে তোমাকে যেতে হবে কেনো? প্রিভেসির কি আছে?
মেরিন : আমি আছি বলে তুমি তোমার প্রানপ্রিয় বর্ষা ম্যাসেজ দেখলেনা। তাই আমার চলে যাওয়াই ভালো।
নীড় : বর্ষা তোমার থেকে জরুরী নয়। তাই ম্যাসেজ দেখিনি। দেখলেও তো বলতে আমাদের মাঝে বর্ষাকে কেনো আনলে?
মেরিন : তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারো। আমার কোনো বাধা নেই। কে তুমি আমার?
নীড় মনেমনে : ম্যাডাম এবার জেলাসি থেকে বলছে। ম্যাসেজ ওপেন না করলে সন্দেহ আরো বেরেই যাবে।
নীড় ম্যাসেজটা ওপেন করলো। বর্ষা নিজের বাজে একটি ভিডিও পাঠিয়েছে। নীড় সাথে সাথে বেরিয়ে এলো। মেরিনের দিকে তাকালো। মেরিন ওর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখজোরা রাগে লাল হয়ে আছে।
মেরিন : একারনেই ম্যাসেজ ওপেন করছিলেনা। তাইনা? ওপেন করে এমন ভাব করলে যেনো তুমি জানতেই না।
নীড় : ট্রাস্ট মি আমি জানতাম না। ও যে এমন ভিডিও পাঠাতে পারে আমি কখনো সেটা ভাবিইনি।
মেরিন কোনো কথা না বলে উঠে চলে গেলো।
নীড় : মেরিন শোনো আমার কথা। মেরিন…
মেরিন : হ্যালো জন…
জন : ম্যাম আমি আসছি। ১০টা মিনিট লাগবে।
মেরিন : আসতে হবেনা। কোর্ট যাও।
জন : কোর্টে যাবো!
মেরিন : হ্যা কোর্টে যাবে। ভিভোর্স ফাইল করবে। যদি তোমার মাধ্যমে না হয় তবে যেসব কাগজ লাগবে সেগুলোর সব নিয়ে আসবে।
জন : কার ডিভোর্স ম্যাম?
মেরিন : তোমার বিয়ে হয়েছে? হয়নি রাইট? আমি আমার কথাই বলবো তাইনা? আমার অধিকার তো আমার প্রতি আছে। নাকি নেই?
জন : সরি ম্যাম। আমি সেটা বলতে চাইনি। আমি যাচ্ছি কোর্ট।
মেরিন : যাও।
মেরিন রেখে দিলো।
নীড় : মেরিন আমি…
মেরিন : আমি তোমার সাথে কোনো কথা বলতে চাইছিনা।
নীড় : না বললে… শোনো আমার কথা।
মেরিন ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বসে রইলো।
নীড় : বর্ষা…
নীড় রেগে বের হলো। পৌছালো বাড়িতে। ছুটে বর্ষার ঘরে গেলো। ঘরটা ফুল দিয়ে সাজানো। বর্ষা শর্ট ড্রেস পরে বিছানার মাঝখানে বসে আছে। নীড় ওকে টেনে দার করিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পর মারলো। বর্ষা নিচে পরে গেলো।
নীড় : কি মনে করিস তুই আমাকে? কোনো ব্রোথেলের ক্লাইন্ট আমি? হামম?
বর্ষা : সেটা তুই নস। কিন্তু আমি তোর জন্য তোর কাছে প্রোস্টিটিউট হতেও রাজি।
নীড় আরো একটা থাপ্পর মারলো।
নীড় : আমাকে আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য করিস না। জানে মেরে দিবো।
বর্ষা : এতো কেনো রিয়্যাক্ট করছিস তুই? বল… তুই কি আমাকে বিয়ে করবিনা? তোর মনে কি এখনো মেরিন আছে? মেরিন তোর মনে না থাকলে তুই এতোটা রিয়্যাক্ট কখনোই করতিনা। তুই এভাবে আমার মনে আশা জাগিয়ে আমার মন ভেঙে দিতে পারিসনা। আমি যাইনি তোর কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। কেনো দিয়েছিলি? বল…
নীড় : আমি নীড় আহমেদ চৌধুরী কখনো কাউকে কোনো কৈফিয়ত দেইনা।
বর্ষা : তোর নিজেকে নিয়ে যে গর্ব সেটা তোর মেরিন খর্ব করেছে। ঘৃণা করে তোকে তোর মেরিন। ওর কাছে ভালোবাসা না পেয়েই তুই আমার কাছে এসেছিলি। জানি আমি সেটা। আমি তো কেবল তোর তৃষ্ণা মেটানোর জন্যই কাজটা করেছি। তুই যে ভালোবাসা মেরিনের থেকে পাসনি সেটাই তো আমার কাছে পেতে চেয়েছিস। আমি তো তোর ইচ্ছাই পূরন করতে চেয়েছি। তাহলে তোর কিসের ইগো? বউ বর্তমান থাকাকালীন বিয়ের প্রস্তাব দেয়া বা কোনো মেয়েকে আশা দেয়াটাও পরকিয়া। আমার কাজ ভুল হলে তোরটাও ভুল। মারাত্মক ভুল।
নীড় : তুই যেটাকে ভুল ভাবছিস সেটা ভুল নয়। তবে ভুলের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে।
বলেই নীড় বেরিয়ে গেলো। বর্ষা কাঁদতে লাগলো।

.

নীলা : শসস…
প্রনয় : শসস কেনো?
নীলা : সিক্রেট তো।
প্রনয় : কিসের সিক্রেট?
নীলা : লম্বা সিক্রেট। বলা যাবেনা।
প্রনয় : আমাকেও বলা যাবেনা?
নীলা : তুমি বলে দিলে? মেরে দিবে আমাকেও আর তোমাকেও।
প্রনয় : কে মেরে দিবে?
নীলা : কিবরিয়া কিবরিয়া।
প্রনয় : কিবরিয়া!
নীলা : হ্যা। আজমল কিবরিয়া। ওই তো বাবা সেজে আছে । বাবা তো বাবা নয়। বাবা তো বন্দি। ওই টা তো কিবরিয়া।
প্রনয় : কি বলছো কি তুমি?
নীলা : কি বলছি আমি!
প্রনয় : ওটা কবির ফয়সাল খান নয়? আজমল কিবরিয়া?
নীলা : কে কবির ফয়সাল খান? কে আজমল কিবরিয়া?
প্রনয় মনেমনে : নীলার কাছ থেকে তথ্য বের করা সম্ভব নয়। ও এই ভালো এই খারাপ। এক মিনিট , প্যান্থাররা সেদিন খান বাড়িতে গিয়ে ডিএনএ স্যাম্পল এনেছিলো। টেস্ট করে দেখতে হবে।

.

প্রান্তিক : আর খাবোনা মামমাম।
মেরিন : লাস্ট বাইট বাচ্চা। দেখো। এবারই লাস্ট।
প্রান্তিক : তুমি খুব পচা মামমাম।
নীড় এসে পৌছালো। মেরিন ওর দিকে তাকালোনা।
প্রান্তিক : চাচ্চু… কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
নীড় : কাজ ছিলো লাভ। তাই অফিসে গিয়েছিলাম।
প্রান্তিক : তুমি দেরি করে ফেলেছো। মামমাম এটা ওটা বলে আমাকে কতোগুলো খাবার খাইয়ে দিলো।
নীড় : তোমার মামমাম তোমার জন্য যা করে ভালোই করে বাচ্চা।
মেরিন খালি প্লেট নিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো। নীড় মাথা চেপে ধরে বসলো।
প্রান্তিক : চাচ্চু তোমার কি মাথাব্যথা করছে?
নীড় প্রান্তিককে কোলে নিলো।
নীড় : না লাভ মাথাব্যথা করছেনা।
প্রান্তিক : মিথ্যা কথা। তুমি মাথা চেপে ধরে বসে আছো। আমি মাথা টিপে দিবো?
নীড় প্রান্তিকের গালে চুমু দিলো।
নীড় : তুমি বলেছো এতেই আমার ব্যথা চলে গিয়েছে।
নীড় প্রান্তিককে শক্ত করে বুকে জরিয়ে ধরলো।
নীড় মনেমনে : মেরিন তোমাকে হারানোর যে ভয় পাচ্ছে একদম সঠিক ভয় পাচ্ছে। তোমার ওপর সব অধিকার কিভাবে ছেরে দিবো? তুমি যে আমাদের ভুবন। তোমাকে নিয়ে যে আমরা দূরে কোথাও চলে যাবো সেটারও উপায় নেই। ভবিষ্যতে যখন জানতে পারবে যে তোমার মাবাবা জীবীত আছে তখন আমাদের প্রশ্ন করবে। সেই প্রশ্ন যে মৃত্যুর যন্ত্রণা দেবে।
প্রান্তিক নীড়ের কোলে ঘুমিয়ে পরেছে। নীড় ওকে ঘরে নিয়ে বিছানায় রাখলো।
নীড় মনেমনে : তোমার মাধ্যমেই আমি মেরিনকে পেয়েছি লাভ। কিন্তু অশান্তি পিছুই ছারছেনা। একটা সিদ্ধান্ত একবার সঠিক মনে হলে পরবর্তিতে সেটা ভুল মনে হয়। শুরুতে একটা ভুল মনে হলে পরে সঠিক মনে হয়। কেনো এতো সংঘর্ষ? আমার প্রতিশোধ আমি প্রনয় পেয়েছি। তাই আমি আমার প্রতিশোধ নিয়ে গর্বিত। যন্ত্রণা একটু কম কবে হবে? একটু শান্তি চাই।
মেরিন ঘরে এসে প্রান্তিকের পাশে বসলো।
নীড় : খাবার খেয়েছো?
মেরিন : নিজের খেয়াল আমি রাখতে জানি।
নীড় : তুমি খাওনি আমি জানি। আমি সত্যি বলছি জান যে আমি জানতামনা ওই ম্যাসেজে কি আছে?
মেরিন : আমি ওই প্রসঙ্গ ভুলে গিয়েছি।
নীড় : আমি জানি তুমি কিছু ভুলে যাওনা।
নীড় এসে মেরিনের পাশে বসলো।
নীড় : যে প্রতিশোধের খেলা তোমার সাথে আমার শুরু হয়েছিলাে সেই প্রতিশোধ এবং প্রতিশোধের খেলার কাছে আমি কৃতজ্ঞ॥ এই প্রতিশোধের জন্যই হয়তো তুমি আমার স্ত্রী। এই জঘন্য ঘটনাগুলো না ঘটলে হয়তো তুমি আমার হতেনা।
মেরিন : আমি কি তোমার হয়েছি?
নীড় : প্রিয়জনকে নিজের করার ব্যাখ্যা কি সেটা আমার জানা নেই জান। কিন্তু আমার কাছে নিজের করে পাওয়ার ব্যাখ্যা কি সেটা আমি জানি। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে তোমাকে দেখাই তোমাকে পাওয়া। ঘুম থেকে উঠে তোমাকে দেখাই তোমাকে পাওয়া। তোমাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকার অধিকারই তোমাকে পাওয়া। শত লড়াই শত ঝগড়ার পরেও তোমার মুখের হাসি দেখতে পাওয়ার নামই তোমাকে পাওয়া। তোমার সাথে খুনসুটি করাই তোমাকে পাওয়া। তোমার সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করাটাও তোমাকে পাওয়া। তোমার হাত ধরতে পারাটাই তোমাকে পাওয়া। তোমাকে আদর করতে পাওয়াই তোমাকে পাওয়া। তোমাকে ভালোবাসাই তোমাকে পাওয়া।
মেরিন : না আমি কাব্যপ্রেমী আর না তুমি প্রেমের কবি।
নীড় : প্রেমের কবি হওয়ার আমার কোনো ইচ্ছাই নেই মেরিন। কবিতের প্রেম কেবল কলমে থাকে জীবনে নয়। কলমে প্রেম লিখতে লিখতে তারা বহুবার বহু নারীর প্রেমে পরে। বেশিরভাগ কবিই নিজের মন একাধিক নারীকে দেয়। তাই আমি কবি হতে চাইনা। আমি বারেবারে একটি নারীর প্রেমেই পরি এবং ভবিষ্যতেও পরতে চাই। জানি তুমি বর্ষার ম্যাসেজের কথা বিশ্বাস করবেনা। কারন আমিও তোমাকে বিশ্বাস করিনি।
মেরিন : তুমি ভাবছো যে তোমাকে অবিশ্বাস করে আমি পাল্লা সমান করছি।
নীড় : আমি সেটা বলতে চাইনি।
মেরিন : কিন্তু অর্থ সেটাই দারায়। আমি এটা ভাবিইনি যে তুমি আমাকে বিশ্বাস করোনি। ইভেন আমি জানি এবং মানি যে তুমি আমাকে বিশ্বাস করেছো। যেটা তোমাকে বিশ্বাস করাতে চেয়েছি সেটাই বিশ্বাস করেছো। তবে একটু ভিন্নভাবে। আমি নিজের লিভইনে থাকার মিথ্যা সাজিয়ে ছিলাম তোমার কাছে নিজেকে চরিত্রহীনা প্রমান করতে নয়। কাজটা করেছিলাম তোমাকে কষ্ট দিতে। কারন আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো তোমার মনে আজও আমি আছি। তোমার জেদ তোমার মাথাচওরা দিলো। সাথে মিশ্রিত হলো কিঞ্চিত অহংকার। তুমি ভাবছিলে ওই হ্যারিকে মেরিন গ্রহন করলো কিন্তু আমাকে নয়। আমি তো সব দিক দিয়েই হ্যারির চেয়ে সেরা। তাই নিজের জেদ এবং অহংকারের মিশ্রণে তুমি আমাকে চরিত্রহীনা ভেবে নিয়েছিলে। তুমি বারেবারে যখন আমাকে ক্যারেক্টারলেস বলতে তখন আমার খুব আনন্দ হতো। আমি অনুভব করতাম যে আমি সফল। কারন তুমি নিজের কষ্ট থেকে বারবার আমাকে ওসব বলতে।
নীড় : তােমার কথায় এটা বোঝা যাচ্ছে যে তুমি আমার ভালোবাসায় বিশ্বাস করো।
মেরিন : নারী নিজের প্রতি থাকা ভালোবাসা এবং ঘৃণা অনুভব করতে পারে। আর আমার প্রতি তো দুইটাই কাজ করেছে। প্রথম দর্শনে প্রেম পরে ঘৃণা।
নীড় : তুমি কি মনে করো আমি এখনো তোমাকে ঘৃণা করি?
মেরিন : আমার মনে করাতে কিছু হয়না।
নীড় : হামম। সব তো আজকে স্বীকার করলে। তাহলে এটাও মেনে নাও যে তুমি আমাকে ভালোবাসো। আর তাই বর্ষার ভিডিও এতো প্রভাব ফেলেছে।
মেরিন : আমি কি বর্ষার ভিডিও নিয়ে তোমার দিকে আঙ্গুল তুলে বলেছি যে তুমি ক্যারেক্টারলেস।
নীড় : সেটা বললেও স্বস্তি পেতাম। সেটা না বলে কথাটাকে নিজের মধ্যে রেখে দিয়ে নিজেকেই কষ্ট দিচ্ছো। তাই এটা আমার যন্ত্রণার। তোমার কষ্টের কারন ওই বর্ষা। মিশন শেষ হওয়ার অপেক্ষা আমি করবোনা। ওই বর্ষাকে এখন এই মুহূর্তে গিয়ে শেষ করে আসবো।
নীড় গান লোড করে বের হলো। গাড়ি স্টার্ট দিলো। সামনে তাকিয়ে দেখে মেরিন ব্যাট হাতে দারিয়ে আছে। নীড় : কি হলো?
মেরিন কিছু বললনা। নীড় গাড়ি থেকে নেমে এলো।
নীড় : কি হলো?
মেরিন হাতের ব্যাট দিয়ে গাড়ির ওয়াইন্ডশীল্ডে আঘাত করলো। চূর্নবিচুর্ন হয়ে গেলো কাঁচ। এরপর ভেতরে চলে গেলো।
নীড় : মেরিন না হয়ে তোমার নাম মায়া হওয়া উচিত ছিলো।

.

পরদিন…
কিবরিয়ার ডিএনএ টেস্ট রিপোর্ট প্রনয়ের হাতে।
প্রনয় : ইন্টরেস্টিং। ভেরি ভেরি ইন্টরেস্টিং। নীলার ডিএনএ কনিকা খানের সাথে মিলল। কিন্তু কবির ফয়সাল খানের সাথে নয়। নীলা বলছে যে কবির ফয়সাল খান কবির ফয়সাল খান নয়। এটা কিবরিয়া। কিবরিয়া… আজমল কিবরিয়া।
প্যান্থার : বস… ম্যাম তো অসুস্থ। ম্যামের কথা কি মেনে নেয়া ঠিক হবে?
প্রনয় রেগে প্যান্থারের দিকে তাকালো।
প্যান্থার : সসরি বস।
প্রনয় : নীলার কথা আমার কাছে চিরন্তন সত্যের মতো সত্য। বুঝলে?
প্যান্থার মাথা নেরে হ্যা বলল।
প্রনয় : যদি ওটা কবির ফয়সাল খান না হয় তবে অন্য কোথাও আছে কবির ফয়সাল খান। খোজো তাকে। পাতালে হোক অথবা মহাশূন্যে সন্ধান আমি চাই।
প্যান্থার : যদি মরে গিয়ে থাকে?
প্রনয় : কঙ্কাল চাই। বুঝলে?
প্যান্থার : ইয়েস বস। আমি কবির ফয়সাল খানের ধ্বংসাবশেষ হলেও খুজে নিয়ে আসবো।
প্যান্থার বেরিয়ে গেলো।
প্রনয় : রহস্য মনেহচ্ছে সবটা। নতুন করে ধোয়াশায় ডুবে গেলাম। উফফ… আজমল কিবরিয়া। খান-চৌধুরী উভয়ের শত্রু।

.

কবির : কে? কে ওখানে?
মেরিন : আপনার প্রিয় শত্রু মিস্টার খান।
কবির : মেরিন!
মেরিন দৃশ্যমান হলো। কবিরের মুখে হাসি ফুটলো।
কবির : মামনি…
কবিরের চোখে আনন্দের অশ্রু।
কবির : জানতাম তুমি আসবে মা।
মেরিন : মা ডাকার প্রয়োজন নেই। আমাকে মা বা মামনি কেবল নিহাল আহমেদ চৌধুরী ডাকে। আপনি তো কেবল আপনার বড় মেয়েকেই মা বলে ডাকতেন।
কবির হাসলো।
কবির : সব অসম্ভবই সম্ভব। কিন্তু আমার ছোট মেয়ের অভিমান হ্রাস পাওয়া এবং তেজ কমে যাওয়া সম্ভব নয়।
মেরিন : লজ্জা থাকা উচিত আপনার। নিজের শত্রুর হাতে বন্দি হয়ে আছেন। আমার কথা তো কানে তোলেননি। পাওয়ার থাকলে সেটাকে প্রয়োগ করতে হয়।
কবির : হামম। সেটা হয়তো আমার ভুল। কিন্তু শত্রুর হাতে বন্দি হয়ে পরে যদি সন্তানের হাতে মুক্তি পাই তবে সেটা গর্বের।
মেরিন : আর ঢং করতে হবেনা।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 55
writer : Mohona
(do not copy please)

.

মেরিন : আর ঢং করতে হবেনা।
বলেই মেরিন কবিরকে মুক্ত করে দিলো। কবির মেয়েকে বুকে জরিয়ে নিলো। চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো।
মেরিন : আমার প্রতি এতো ভালোবাসা দেখানোর কারন আমি জানি। আপনি মনে করেছেন যে আপনার বড় মেয়ে মরে গিয়েছে। শুনুন… বেঁচে আছে আপনার আদরের বড় মেয়ে।
কবির ছোট করে হাসলো।
মেরিন : আপনার তো বড় করে হাসি দেয়া উচিত ছিলো।
কবির : আমার দুইটা মেয়েই আমার চোখের মনি।
মেরিন : এখন আসুন। চলুন আমার সাথে।
কবির : কেনো?
মেরিন : তো এখানে কি কিবরিয়ার জন্য অপেক্ষা করবে?
কবির : তুমি কিবরিয়াকে ভয় পাচ্ছো? পালাতে চাইছো? তুমি ভয় পেয়ে পালাতে পারো এটা ভেবেই তো আমি অবাক। আমি কিবরিয়াকে কতোশত কথা শোনালাম।
মেরিন : আপনি কি দারিয়ে থাকবেন নাকি যাবেন আমার সাথে?
কবির অবাক চোখে দেখছে মেরিনকে। মেরিন তাকে টেনে নিয়ে গেলো।
মেরিন : বসুন গাড়িতে।
কবির বসলো। মেরিন ড্রাইভ করতে লাগলো।
কবির : তুমি পালাচ্ছো কেনো?
মেরিন : ওই কিবরিয়া অনেকগুলো বছর ধরে লেজে খেলিয়েছে আমাদেরকে। এখন ওর পালা।
কবির : বুঝতে পারলাম না।
মেরিন : আপনার মাথায় কি বুদ্ধি নেই?
কবির : না।
মেরিন : শুনুন… আপনাকে কে উদ্ধার করলো , কিভাবে উদ্ধার করলো সেটা আজমল কিবরিয়া তো অনেক দূরের কথা ওর বাবা কবর থেকে উঠে আসলেও জানতে পারবেনা। আতঙ্কে পরে যাবে। বিভিন্ন রকমের আতঙ্ক উৎপন্ন হবে ওর মনে। লিও তথা প্রনয়ের হাতে মরে যাওয়ার আতঙ্ক, কে নিয়ে গেলো সেই আতঙ্ক , ছেলে কোথায় সেই আতঙ্ক , মেয়ের কি হবে সেই আতঙ্ক।
কবির : এক মিনিট… কি বললে তুমি? লিও তথা প্রনয়। মানে কি এটার?
মেরিন : মানে হলো মাফিয়া কিং লিওই প্রনয়।
কবির : মাই গুডনেস। উফফ… সেদিন যদি আমি নীলার কথা বিশ্বাস করে নিতাম।
মেরিন : কি কথা?
কবির : নীলা আমাকে বলেছিলো যে কেউ আমার রূপ নিয়েছে। অভিমানে ওর কথা কানেই তুলিনি।
মেরিন : আপনি আসলে মানুষই নন। আপনি আসলে একটা…
কবির : গাধা… বোকা… গরু!
মেরিন : আপনি আসলে একটা কবির ফয়সাল খান।
কবির হেসে দিলো।
মেরিন : শাট আপ।
কবির : ওকে।
মেরিন কবিরকে নিয়ে মিরর ওয়ার্ল্ডে পৌছালো।
প্রান্তিক : নানাভাই…
প্রান্তিক দৌড়ে কবিরের কাছে গেলো। ওকে জরিয়ে ধরলো। কবির খানিকটা অসুস্থ। তাই প্রান্তিকের ধাক্কাটা নিতে পারলোনা। পরে যেতে নিলো। তখন নীড় চলে এসে ধরে ফেলল। কবির এক হাত দিয়ে প্রান্তিককে আগলে নিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে নীড়।
কবির : ধন্যবাদ বাবা নীড়।
নীড় কিছু বললনা। প্রান্তিক কবিরের সাথে গল্প জুরে দিলো।
জন : প্রান বাবা নানাভাই ফ্রেশ হবে তো?
প্রান্তিক : হামম হামম। চলো নানাভাই আমি তোমাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাচ্ছি।
প্রান্তিক কবিরকে নিয়ে গেলো। জনও সরে গেলো।
নীড় : তুমি তোমার বাবাকে আনতে যাচ্ছো আমাকে জানাও নি কেনো? একা কেনো গেলে? কি প্রয়োজন ছিলো রিস্ক নেয়ার?
মেরিন : কোথাও কোনো রিস্ক নেই। রিস্ক শেষ। মিশনও প্রায় শেষ। লিও তো কিছুই করলো। গুড ফর নাথিং। তাই আমাকেই উদ্ধার করতে হলো নিজের বাবাকে। ধন্যবাদ তোমাকে।
নীড় : উদ্ধার তো করলে তুমি। আমাকে কেনো ধন্যবাদ দিচ্ছো? আমার প্ল্যান তো সাকসেসফুল হয়নি।
মেরিন :ফ্লপও হয়নি। তোমার ক্যালকুলেশন অনুযায়ী লিও কিবরিয়ার ওপর হামলা না করলেও কিবরিয়া লিওর ভয়ে কবির ফয়সাল খানকে নাগালের মধ্যে তো এনেছে।
নীড় : তারিফ হচ্ছে আমার…
মেরিন : আমরা ক্রেডিট দিতে জানি। এখন কেবল একটি কাজ বাকি রইলো । লিও কোথায় আছে সেখানে গিয়ে তাকে তোমার সামনে দার করানো। ব্যস এরপর সব সমাপ্ত। তুমি তোমার পথে আর আমি আমার পথে।
মেরিনের কথাটা নীড়ের হৃদয়টাকে চুরমার করার জন্য যথেষ্ট। নীড় কিচ্ছুটি বললনা।

.

কিবরিয়া গ্যারেজে গিয়ে কবিরকে না পেয়ে অস্থির হয়ে পরলো। খুজতে লাগলো।
কিবরিয়া : লাবিব… কোথায় কবির ফয়সাল খান?
লাবিব : স্যার তাকে তো আপনি গত ১২দিন আগে নিজের সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন।
কিবরিয়া : তাহলে নেই কেনো কবির?
লাবিব : আমি কিভাবে বলবো স্যার?
কিবরিয়া : শাট আপ। জাস্ট শাট আপ। আমি কবিরকে চাই জাস্ট কবিরকে চাই। খুজে বের করো ওকে।
কিবরিয়া রেখে দিলো।
কিবরিয়া : কে নিয়ে গেলো কবিরকে? নীড় নাকি মেরিন? কিন্তু ওরা তো এই বিষয়ে কিছু জানেই না। উফফ… নাকি কবির নিজেই কোনো রকমে মুক্তি পেয়ে পালিয়েছে। কিন্তু এই শেকল ওর পক্ষে ভাঙা সম্ভব নয়। গুলি করা হয়েছে। কবির পালালে তো সবার সামনে যেতো। কার হাতে আছে কবির? কে নিয়ে যেতে পারে কবিরকে? এমন কে আছে যে কবিরকে সামনে না এনে আড়ালে রাখলো? কে সে? কে বুঝতে পারলো যে ওটা আমি কবির নই? নাকি না বুঝেই নিয়ে গিয়েছে? উফফ মাথা কাজ করছেনা। কি হবে এখন? বর্ষা… বর্ষাকে কল করি।
কিবরিয়া বর্ষাকে কল করলো। কবিরের কথাটা বলল।
বর্ষা : কিহ?
কিবরিয়া : হ্যা।
বর্ষা : এটা কিভাবে সম্ভব? কবির ফয়সাল খানের কথা জানতে কিভাবে পারলো?
কিবরিয়া : আমার নিজেরই তো কোনো ধারনা নেই।
বর্ষা : লাবিবকে জানিয়েছো?
কিবরিয়া : হ্যা। নীড়ের খোঁজ নাও তো। ও তুলে নেয়নি তো?
বর্ষা : ও কিভাবে তুলে নিবে?
কিবরিয়া : জানিনা। কাউকে বিশ্বাস হয়না আমার। নীড়ের খোঁজ নাও।
বর্ষা : দেখছি আমি। তুমি রিল্যাক্স হও।
কিবরিয়া : হতে পারবোনা আমি রিল্যাক্স।
কিবরিয়া প্রায় পাগলের মতো হয়ে গেলো আতঙ্ক এবং ভয়ে।
বর্ষা : কোথায় গেলো কবির? কে নিয়ে যেতে পারে কবিরকে? নীড়কে কল করি। কিন্তু নীড় তো আমার ওপর রেগে আছে। কল করে দেখি।
বর্ষা নীড়কে কল করলো। ব্যস্ত বলছে।
বর্ষা : ড্যাম ইট। নীড়ের আপডেট বাবাকে দিবো কিভাবে?

.

লাবিব কবিরের খোঁছে ছুটাছুটি করছে। টাইগার লাবিবকে তুলে নিলো।
লাবিব : ককারা তোমরা?
টাইগার : তোর বাপ…
টাইগার লাবিবকে অজ্ঞান করে ফেলল। নিয়ে গেলো প্রনয়ের কাছে।
টাইগার : বস… এই যে লাবিব। এটা কিবরিয়ার ডান হাত।
প্রনয় : ওকে। এটাই সেটা। থ্যাংকস টাইগার। একেই বলে টাইগারের শিকার। সন্তুষ্ট আমি।
টাইগার : থ্যাংকস বস।
প্রনয় : লিভ।
টাইগার চলে গেলো।
লাবিব : কে তুমি?
প্রনয় : লিও।
লাবিব : তোমার সাথে আমার কি শত্রুতা?
প্রনয় : সেটা আমিও জানিনা যে কিবরিয়ার সাথে আমার কিসের শত্রুতা।
লাবিব : ককে কিবরিয়া?
প্রনয় : তোর বস কিবরিয়া।
লাবিব : আমি কোনো কিবরিয়াকে চিনিনা।
প্রনয় লাবিবকে শক দিলো। লাবিব ছটফট করতে লাগলো।
প্রনয় : আমাকে মিথ্যা কথা বলা? আমাকে? কিবরিয়াকে চিনিস তুই? হ্যা কি না?
লাবিব : হ্যা হ্যা চিনি চিনি।
প্রনয়: শুরুতে নাটক করলি কেনো?
বলেই আবারও শক দিলো।
প্রনয় : এখন বল যে তোর বসের কাহিনি কি? কিসের শত্রুতা?
লাবিব : বিশ্বাস করুন লিও স্যার আপনার সাথে বসের কোনো শত্রুতা নেই ।
প্রনয় : খান এবং চৌধুরীদের সাথে আছে। ওর বাবার বিরুদ্ধে কবির এবং নিহাল স্বাক্ষী দিয়েছিলো। যার ফলে ওর খুনী বাবার ফাঁসি হয়।
লাবিব : আপনি কি করে জানলেন স্যার?
প্রনয় : সেটা তোর জানার বিষয় না। কিবরিয়া কবিরের রূপে কেনো আছে?
লাবিব : আআপনি এটাও জানেন? এর মানে আপনিই কিবরিয়া বসের কাছ থেকে কবির ফয়সাল খানকে তুলে নিয়েছেন?
লাবিবের কথায় প্রনয়ের কপালে ভাঁজ পরলো।
প্রনয় : কবিরকে কে তুলেছে সেই প্রসঙ্গে পরে যাবো। আগে তুই এটা বল যে আজমল কিবরিয়া কেনো কবির ফয়সাল খানের রূপ নিয়েছে?
লাবিব : আমি জজানিনা।
প্রনয় : আবার জানিনা?
প্রনয় লাবিবকে শক দিতে লাগলো। তখন প্যান্থার এলো।
প্যান্থার : বস…
প্রনয় : বলো…
প্যান্থার : গুপ্ত ভবনে যান।
প্রনয় : হামম। এর মুখ থেকে বের করো যে কিবরিয়া কেনো কবিরের রূপে?
প্যান্থার : ইয়েস বস।
প্রনয় নীলার কাছে গেলো।

.

সকালে…
নীড়ের ঘুম ভেঙে গেলো। উঠে দেখে পাশে মেরিন নেই।
নীড় : মেরিন নেই। মেরিন কোথায় গেলো?
ওয়াশরুমে দেখলো। সেখানেও মেরিন নেই।
নীড় : মেরিন কবির ফয়সাল খানকে উদ্ধার করে ফেলেছে। চলে যায়নি তো মেরিন? মেরিন…
নীড় ঘর থেকে বের হয়ে অস্থির হয়ে মেরিনকে ডাকতে লাগলো।
মেরিন : কি হলো?
পেছন ফিরে মেরিনকে দেখে স্বস্তি পেলো নীড়।
মেরিন : কি হয়েছে? ওভাবে ডাকছিলে কেনো?
নীড় এগিয়ে এসে ওকে জরিয়ে ধরলো।
নীড় : কোথায় ছিলে? আমি ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম …
মেরিন নীড়কে সরিয়ে দিলো।
মেরিন : ভেবেছিলে আমি তোমাকে ছেরে চলে গিয়েছি।
নীড় চুপ করে রইলো।
মেরিন : আমার যাওয়ার হলে আমি চলেই যাবো। সময় এলে চাইলেও আমাকে আটকে রাখতে পারবেনা।
নীড় চুপটি করে রইলো। কবির জানালা দিয়ে এই দৃশ্যটি দেখছিলো। চলে গেলো ওখান থেকে। নিজের ঘরে গিয়ে বসলো।

কবির : নীড় এভাবে কেনো বলছিলো? মেরিনই বা ওগুলো বলছিলো কেনো? তবে কি ওদের মধ্যে কোনো সমস্যা চলছে? ওদের বিয়ে , সমসারও কি প্রতিশোধের ফলাফল? হ্যা হ্যা কিবরিয়া তো একবার বলেছিলো যে ছলনার বিয়ে। নীড় ধোকা দিয়ে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করিয়েছিলো। যেভাবেই হোক বিয়ে তো হয়েছে। কেনো ওরা আলাদা হবে? প্রনয়ের সাথে যখন নীলার বিয়ে হলো তখন শুরুতে আমি বিরোধি ছিলাম। নীলা পালিয়ে যাওয়াতে ওর ওপর রেগেও ছিলাম। কিন্তু কখনো এটা চাইনি যে ওর বিয়ে ভেঙে যাক। প্রনয় মারা যাওয়ার পর চৌধুরীরা নীলার ওপর টর্চার শুরু করলে , ওকে মেরে ফেললে আমি প্রানকে মেরিনের কাছে রেখে আসি। মেরিন বলল যে নীলা বেঁচে আছে।। কিবরিয়া বলেছিলো যে ওই নীলাকে মেরেছিলো। উফফ… এতোএতো ক্যালকুলেশন। আমার পারিবারিক দ্বন্দের জন্য আমার দুই মেয়ের জীবনে ঝড় নেমে এসেছে। কিন্তু আমি তো দ্বন্দ চাইনি। আমি তো বহুবার নিহালোর দিকে বন্ধুত্বের হাত বারিয়ে দিয়েছিলাম। ও প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রনয়ের ভালোবাসাটা ভালোবাসা ছিলোনা ভেবেই নীলাকে বাধা দিয়েছিলাম। আমি কখনো কারো খারাপ চাইনি। তবুও আমার সন্তানদের সাথেই অন্যায় হলো। কেনো আল্লাহ? কেনো কেনো কেনো?
প্রান্তিকের ঘুম ভেঙে গেলো। কবির থেমে গেলো।
প্রান্তিক : গুড মর্নিং নানাভাই।
কবির : গুড মর্নিং। কেমন ঘুম হলো?
প্রান্তিক : খুব ভালো।
কবির : চলো ফ্রেশ হয়ে নিবে চলো। ব্রেকফাস্ট করতে হবে। মামমাম কয়েকবার এসে ডেকে গিয়েছে।
প্রান্তিক : মামমাম ডেকে গিয়েছে?
কবির : হ্যা।
প্রান্তিক : তাহলে তো লেকচার শুনতে হবে মামমামের।
কবির : দুষ্টু ছেলে। চলো চলো চলো।
প্রান্তিকের হাতমুখ ধোয়ার পর নানানাতি বের হলো। সবাই একসাথে খাবার খেতে বসলো।
নীড় মনেমনে : এই কবির ফয়সাল খান তো আমার শ্বশুর লাগে। মানুষ শ্বশুরের সাথে কি কথা বলো? শ্বশুরও তো । প্রথমে ভেবেছি শ্বশুর মরে গিয়েছে। পরে জিন্দা হয়ে গেলো। এরপর শ্বশুর ভিলেন হয়ে গেলো। দেন আসল শ্বশুর এলো। কি কমপ্লিকেটেড রে বাবা! বাট আমার শ্বাশুরি কিনা অন্য কাউকে আমার শ্বশুর ভেবে আছে। আমিও কি সব ভাবছি। মেরিনের মুড সুইং আমাকে পাগল বানিয়ে দিয়েছে। আচ্ছা আমি এনাকে কি বলে ডাকবো? বাবা , আংকেল , স্যার , আব্বা নাকি শ্বশুরআব্বা!
প্রান্তিক ব্রেকফাস্ট করে খেলতে চলে গেলো।
কবির : তোমাদের দুজনকে আমার দুটি কথা বলার ছিলো। আমার মনে হয় নিহাল ও ওর স্ত্রী এবং বাবা ও কনাকে সুরক্ষিত অবস্থানে নেয়া প্রয়োজন।
নীড় : সহমত। কিবরিয়াকে ভরসা করা যায়না।
মেরিন : হামম। আপনার অন্য কথা কি মিস্টার খান?
কবির : লিও কে?
নীড় মেরিনের দিকে তাকালো।
মেরিন : নীড়ের প্ল্যান অনুযায়ী যদি কাজ হয় তবে লিও নিজেই প্রকাশিত হবে।
কবির : হামম। কিন্তু তোমাদের কি মনেহয়? কে লিও?
নীড় : আমার কোনো ধারনা নেই। তবে মেরিন সন্দেহ করছে যে লিও হলো আমার ভাইয়া প্রনয়। যদিও আমি এটা ভেবে পাচ্ছিনা যে আমার ভাইয়া আমাদের দুশমন কেনো হবে? আমার , বাবার এবং মামনির জানের দুশমন কেনো হবে?
কবির : তোমার ভাবনা সঠিক। লিওই প্রনয় হলে কেবল খানেদের সাথে শত্রুতাই বৈধ। তোমাদের তথা চৌধুরীদের দুশমনির কোনো কারন দেখছি না। কিন্তু আমি আমার মেয়েকেও চিনি। ও যখন আন্দাজ করেছে তখন হয়তো ঠিকই আন্দাজ করেছে। কিবরিয়াকে চিনে আমাকে যখন উদ্ধার করেছে তখন এই ধারনাও সত্যি হতে পারে।
মেরিন : আপনার সম্পর্কে আমার কোনো ধারনাই ছিলোনা। ওটা যে আপনি নন আজমল কিবরিয়া সেটা নীড়ই খুজে বের করে। ইনফ্যাক্ট আপনাকে কিবরিয়ার গুপ্ত জায়গা থেকে গ্যারেজে শিফ্ট করার পেছনেও নীড়ের প্ল্যান রয়েছে। আমি কেবল গ্যারেজ থেকে আপনাকে এখানে এনেছি।

.

কিবরিয়া : লাবিবের ফোন এখনো বন্ধ। কোনো খোঁজও পাওয়া যাচ্ছেনা। কি করি কি করি? ওর বাসায় যাবো? না না ওর বাসায় যাওয়া যাবেনা। কেউ আমাকে ধরার প্ল্যান করলে? না না যাওয়া যাবেনা। যে কবিরকে তুলে নিয়েছে সেই লাবিবকে তুলে নিয়েছে। খোঁজ নিতে হবে যে লাবিবের বাসার আশেপাশে নীড়-মেরিন বা জন-পিটারকে দেখা গিয়েছিলো কিনা? আর লিও গ্যাং হলেও জানা যাবে। লিও তো কোনো কাজ গোপনে করেনা।
তখন বর্ষা কল করলো।
কিবরিয়া : হ্যা বর্ষা… কিছু জানতে পারলে? নীড় কিছু বলল?
বর্ষা : নীড়ের ফোন বন্ধ।
কিবরিয়া : তারমানে নীড়ই কবির এবং লাবিবকে তুলে নিয়েছে।
বর্ষা : বাবা… পাগলের প্রলাপ বকোনা। সিওর হওয়ার প্রয়োজন নেই। আর লাবিবের কি কাহিনি? ওর আবার কি হলো?
কিবরিয়া : লাবিবও নিখোজ।
বর্ষা : ড্যাম ইট। আচ্ছা শোনো , নীড় আসলেই কবিরকে তুলে নিয়েছে কি নেইনি সেটা জানার জন্য আমার একটি প্ল্যান আছে।
কিবরিয়া : কি প্ল্যান?

.

মেরিনের মাথা প্রচন্ড ঘুরছে। দারিয়েও বসে পরলো।
নীড় : কি হলো?
মেরিন : কিছুনা।
নীড় : মিথ্যা কথা। কিছু না হলে তুমি এভাবে বসে পরতে না। মাথা ঘুরছে?
মেরিন : জানিনা।
নীড় : আরে আমার বউটারে… আচ্ছা কি লাগবে বলো আমি নিয়ে আসছি?
মেরিন : কিছু লাগবেনা।
পিটার কল করলো নীড়কে।
নীড় : হ্যালো… চলে এসেছো?
পিটার : ইয়েস স্যার।
নীড় : আসছি।
নীড় রেখে দিলো।
মেরিন : পিটার এসেছে?
নীড় নিজের পিস্তলে বুলেট ঢোকাতে ঢোকাতে বলল হ্যা।
মেরিন : কোথায় যাচ্ছো?
নীড় : জরুরী একটা কাজ আছে।
মেরিন : কি কাজ?
নীড় : সারপ্রাইজ।
বলেই নীড় বেরিয়ে গেলো। নীড় যাওয়ার পর মেরিন দেখলো যে নীড় নিজের মোবাইল রেখে গিয়েছে।
মেরিন : নীড় দেখি নিজের মোবাইল ফেলে গিয়েছে। পিটারকে কল করে বলি। কিন্তু বলল তো গুরুত্বপূর্ন কাজে গিয়েছে। বিরক্ত করা ঠিক হবেনা। এই ফোনে কি আছে? বর্ষা নিয়ে কিছু যদি থাকে তাহলে ওকে বলা যাবে।
মেরিন হেইট ইউ পাসওয়ার্ড দিলো। কিন্তু ফোন আনলক হলোনা।
মেরিন : কি ব্যাপার? এই ভয়েস কোড দিয়ে আনলক হলোনা কেনো? পাসওয়ার্ড কি চেইঞ্জ করে দিয়েছে? কি হতে পারে ভয়েস কোড? উফফ অসহ্যকর।
তখন নীড়ের ফোন কল এলো। অচেনা নাম্বার।
মেরিন : কার কল? রিসিভ করবো?
বেজে বন্ধ হয়ে গেলো। আবার বাজতে লাগলো।
মেরিন : রিসিভ করি। শুরুতেই কথা বলবোনা। দেখি ওপাশ থেকে কি কথা আসে।
মেরিন রিসিভ করে চুপ করে রইলো।
☆ : হ্যালো মিস্টার নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন। আপনাকে একটি গুরুত্বপূর্ন কথা জানাতে কল করেছি। আপনার মা , বাবা এবং হবু স্ত্রী আমার কাছে বন্দি। তাও আবার আপনারই বাড়িতে। যতো তারাতারি চলে আসুন। পারলে বাঁচিয়ে নিন।
বলেই রেখে দিলো।
মেরিন : ওহ নো… বাবার কথা তো সঠিক হয়ে গেলো। এক মিনিট নিহাল-নীলিমাকে বন্দি করতে পারে কিবরিয়া। কিন্তু বর্ষা… বর্ষাকে তো কিবরিয়া বন্দি করবেনা। লিও তো এমনভাবে কাজ করবেনা। তাহলে? নীড়কে জানাতে হবে। পিটারকে কল করি।
মেরিন পিটারকে কল করলো। কিন্তু কল ঢুকছেইনা।
মেরিন : কল ঢুকছেনা কেনো? নট রিচ্যাবল কেনো বলছে? এতোটুকু সময়ে এমন কোন জায়গায় গেলো যে নট রিচ্যাবল বলছে? বর্ষা যেহেতু বন্দি তাহলে হলেও হতে পারে এটা কিবরিয়ার পরিকল্পনা। যাই একটু বিনোদন নিয়ে আসি।

.

বর্ষা নিহাল-নীলিমার সাথে বন্দি হয়ে আছে। যে লোকগুলো ওদেরকে বন্দি করে রেখেছে তারা কিবরিয়ার লোক। পরিকল্পনাটা বর্ষার।
বর্ষা মনেমনে : নীড়… তোকে তো এবার আসতেই হবে। এসে তুই আমার প্রতি ইমপ্রেসও হবি। কারন তোর মাবাবা তোকে বলবে যে তাদেরকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হয়েছি। আমি কতো মহান।
নিহাল : তোমরা ভয় পাও। আমার ছেলেকে তোমরা চেনোনা। সুনামি হয়ে আসবে।
☆ : সুনামিকেও শান্ত হতে হয়। আর মাবাবা এবং ভালোবাসা সবটাই আমাদের কাছে বন্দি। সুনামি তো যেমন তেমন মহাশূন্যের ঝড়কেও শান্ত হতে হবে।
বর্ষা : বয়স্ক লোকদের সাথে এমন করতে তোমাদের হৃদয় কাপেনা?
☆ : এই যে হিরোইন ডায়লগবাজি করোনা। হিরোইনগিরি এবং ডায়লগবাজি আমার মোটেও পছন্দ নয়।
বর্ষা : আশ্চর্য্য তো…
তখন সব আলো নিভে গেলো।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 56
writer : Mohona
(do not copy please)

.

তখন সব আলো নিভে গেলো।
☆ : কি হলো? আলো নিভে কিভাবে গেলো?
সব আলো আবারো জ্বলে উঠলো।
নিহাল : অন্ধকারে এতো ভয় কেনো? আমরা তোমার দখলে। তবুও ভয়?
☆ : তোর ছেলে ভয় পাচ্ছে কেনো বুড়ো? আলো নিভিয়ে কিসের সংকেত দিলো?
নিহাল : সংকেতটা আমারও অজানা।
আবারো আলো নিভে গেলো।
☆ : নীড়… তুই যদি সামনে না আসিস তবে তোর মাবাবা এবং হবু বউকে গুলি করে মেরে দিবো।
বর্ষা লোকটার পায়ে লাথি মারলো। লোকটা বুঝতে পারলো যে বর্ষা ওকে ফাঁকা গুলি করতে বলল। কারন এটাই ফাঁকা গুলির সংকেত ছিলো।
☆ : আমার কথা যদি না শুনিস তবে এদের মৃত্যুর জন্য তুই দায়ী থাকবি। নমুনা দেখ।
ফাঁকা গুলি ছোরা হলো। আলো এখনো আসেনি।
☆ : এখন তোর প্রিয়দের মৃত্যু অনুভব কর।
তখনই আলো জ্বলে উঠলো। কিন্তু নিহাল-নীলিমা-বর্ষা নেই।
☆ : কোথায় গেলো তিনজন? খোঁজো তিনজনকে। আর ওই শয়তান নীড়কেও।
মেরিন : খুজলেই যদি সবাইকে পাওয়া যেতো তাহলে আড়াল হওয়ার লাভ?
☆ : মেরিন বন্যা খান?
মেরিন : হ্যা আমি।
লোকটি হা করে মেরিনকে দেখছে। মেরিন লালশাড়ি , লালচুরি , লাল টিপ , লাল লিপস্টিক , আলতা পরে রুবির গহনা পরে এসেছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে। দুই হাতে দুটি পিস্তল। উপস্থিত সকলে হা করে দেখছে।
মেরিন : সুন্দর লাগছে বুঝি খুব আমাকে? হামম? কেউ একজন আমাকে একবার বলেছিলো যে শাড়ি পরে বধূবেশে দুই হাতে পিস্তল চালানো অবস্থায় আমাকে নাকি ভয়ংকর সুন্দর লাগে। সকলের রিয়্যাকশন দেখে মনেহচ্ছে যে সে ঠিকই বলেছিলো।
বর্ষা : মেরিন কোথায় থেকে প্রকট হলো!
নীলিমা : আমাদের বাঁচাতে এসেছে না মারতে?
বর্ষা : বাঁচাতে এলে ওদের কাছ থেকে সরিয়ে এখানে এনে বেধে রেখেছে কেনো? মারতেই এসেছে।
নীলিমা : মারতে আসুক বা বাঁচাতে গুন্ডাগুলোর সামনে অমন সাঁজ দিয়ে যেতে হবে কেনো?
নিহাল : এমন ভাবে বলছো যেনো এখন সেজে গেলো। ও তো আগেই সেজে এসেছে।
নীলিমা : তো সেজে এসেছে এসেছে। গুন্ডাদের সামনে যেতে হবে কেনো? ও বাড়ির বউ না। ড্যাপ ড্যাপ করে দেখতে থাকবে ওকে।
নিহাল : তুমি তো ওকে ছেলের বউ হিসেবে মানোই না। তাহলে খারাপ লাগছে কেনো?
নীলিমা : আমার মানা না মানাতে সত্যি বদলে যাবেনা। তাই চিন্তা আমার হবেই।
নিহাল : ভালো লাগলো তোমার চিন্তা। তবে আমার চিন্তা অন্য কারনে।
নীলিমা : কি কারনে?
নিহাল : বলা যাবেনা।
মনেমনে : আমার নাতিনাতনি আসতে চলেছে। কিন্তু আমার গুন্ডি বউমা গিয়েছে গুন্ডাদের হ্যান্ডেল করতে।
বর্ষা মনেমনে : এই বুড়োবুড়ি কি শুরু করেছে? মেরিন কোথায় থেকে প্রকট হলো?
জন : আপনারা চুপ চুপ উঠে আসুন। চলুন…
নীলিমা : বেধে রেখেছো আমাদের। কিভাবে যাবো?
জন : পা বেধে রাখিনি। আসুন।
নিহাল : মেরিন ওখানে একা। তোমার ওর ওখানে থাকা উচিত।
জন : ম্যামের চিন্তা না করে ওই লোকগুলোর চিন্তা করুন। ম্যাডাম দুই হাতে পিস্তল তুলে নিলে না কারো ক্ষমতা নেই ম্যাডামের মুখোমুখি দারানোর।
নীলিমা : তোমার ম্যামের হাত দুইটা। প্রতিপক্ষের কতোগুলো হাত।
জন : ভরসা রাখুন ম্যামের বেগে।
বর্ষা : মেরিন এখানে কেনো এসেছে?
জন : সেটা ম্যামকে জিজ্ঞেস করে নিবেন। এখন উঠুন।
জন ওদেরকে নিয়ে গাড়ির দিকে পা বারালো তখন গুলি চলার শব্দ শুরু হলো।
নীলিমা : মেরিন…
জন মুচকি হেসে বলল : আপনি নিজের জানের চিন্তা করুন।
নিহালও মুচকিমুচকি হাসছে। জন তিনজনকে গাড়িতে নিয়ে বসালো। ফ্রন্ট সিটে বসে তিনজনের দিকে পিস্তল তাক করে রাখলো।
জন : কেউ বেশি চালাকির চেষ্টা করবেননা।
নিহাল : জন… হাতের মধ্যে যেমন গ্লাভস পরিয়ে হাত জোরা বেধেছো প্রত্যেকের যে হাত দিয়ে কিছু করার উপায় নেই। তাই আমাদের জন্য তুমি ভয় পেওনা।
জন : আমার জন্য ভয় নেই। ভয় আপনাদের জন্য। আমি মুখটা মাস্ক দিয়ে ঢেকে নিবো বেঁচে যাবো। ভয় আপনাদের নিয়ে। অজ্ঞান হয়ে পরে থাকবেন।
বাড়ির ভেতর থেকে লোকগুলো ছুটে বের হলো। ভয় দৌড়ে পালালো। মেরিন এসে গাড়িতে বসলো।
মেরিন : জন… সিট বেল্ট বেধেছো?
জন : ইয়েস ম্যাম। কিন্তু ম্যাম পালিয়েই তো গেলো।
মেরিন : অনেকে অনেক ধূর্ত হয়। যাত্রীবৃন্দ শক্ত হয়ে বসবেন।
মেরিন গাড়ি নিয়ে বের হলো। দুই মিনিটের মাথায় ২টা গাড়ি ওর পিছু নিলো।
জন : ম্যাম ২টা গাড়ি পিছু নিয়েছে।
মেরিন : সামনে থেকেও ২টা গাড়ি আসছে।
জন : পেছনে আমি গুলো করছি।
মেরিন : প্রয়োজন নেই। ওগুলোর সাথে রেস হবে।
জন : তাহলে সামনের গাড়িতে গুলি করবো।
মেরিন : সেটারও প্রয়োজন নেই। তুমি পেছনের তিন যাত্রীর চেহারা দেখতে থাকো।
মেরিন গাড়ি কাচ নামিয়ে পিস্তল বের সামনে থেকে আসা দুই গাড়ির চালকের দিকে গুলি করলো। গাড়ি দুটি বেসামাল হয়ে গেলো। মেরিন হাসলো। ও ভালো মতোই জানে এগুলো কিবরিয়ার লোক। তাই ওরা কখন এই গাড়িকে উড়ানোর চেষ্টা করবেনা। থামানোর চেষ্টা করবে। কারন গাড়িতে বর্ষা আছে। এবার মেরিন গাড়ির বেগ দিলো বারিয়ে।
নিহাল-নীলিমা : আআ…📢
মেরিনের প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে।
নিহাল : এই মেয়ে আস্তে চালাও। নিজের কথা তো ভাবো। তুম…
জন : এই যে চৌধুরী… চুপ।
নীলিমা : এই মেয়ে গাড়ি না চালিয়ে উড়াচ্ছে কেনো? কি ভয়ংকর মেয়েরে বাবা…
মেরিন জনের দিকে তাকালো। জন মাথা নারলো। জন অন্য একটা পিস্তল বের করে বর্ষার দিকে তাক করে ট্রিগার চাপ দিলো।
বর্ষা : না…
ওই পিস্তলটা থেকে ছোট একটি সিরিঞ্জ বের হয়ে বর্ষার শরীরে গিয়ে লাগলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই ও জ্ঞান হারালো। মেরিন হাসলো।
নীলিমা : বর্ষা…
নিহাল : চুপ থাকো তো।

.

নীড় : আপনি ওকে যেতে কেনো দিলেন?
কবির : ও কি কারো কথা শোনে বলো?
নীড় : প্রানকে দিয়ে বাধা দিতেন। প্রানের কথা ঠিক শুনতো।
কবির : রিল্যাক্স…
নীড় : কিভাবে রিল্যাক্স হবো? কোথায় আছে কোনো খবর নেই। শরীরটাও ভালো নেই।
কবির : শরীর অসুস্থ?
নীড় : হ্যা । নানা হতে চলেছেন আরো একবার।
কবির : এমন খুশির খবর আমি এখন জানলাম!
নীড় : তো কখন জানবেন।
কবির : রিল্যাক্স… মেরিন সহিসলামতে ফিরে আসবে।
নীড় : হতে পারবোনা রিল্যাক্স।
কবির : আমি আমার মেয়েকে চিনি। নিজের শত্রুর গুহায় গেলে হেরে নয় হারিয়েই আসবে।
নীড় : সেটা আমিও জানি। কিন্তু আমার ভয় আপনি জানেন না। প্রতিটা মুহূর্ত আমি কেবল এই ভয় কাটাচ্ছি যে এইবুঝি মেরিন আমাকে ছেরে চলে গেলো। হয়তো আর দেখতে পারবোনা।
নিহাল : নীড়…
নীড় পেছনে ঘুরলো। দেখে নিহাল-নীলিমা দারিয়ে আছে।
নীড় : মামনি… বাবা… তোমরা?
নিহাল : তুমি কল করে বলেছিলেনা নীলিকে নিয়ে যেনো বের হয়ে আসি তখন কিবরিয়ার লোকজন চলে আসে। তাই বের হতে পারিনি। কিবরিয়ার লোক আমাদেরকে বন্দি করেছিলো। মেরিন গিয়ে নিয়ে এসেছে।
নীড় : মেরিন!
মেরিন : হ্যা আমি।
মেরিন এগিয়ে গেলো।
নীড় : তুমি কেনো না বলে গিয়েছিলে? কি প্রয়োজন ছিলো যাওয়ার? পিটারকে কল করতে। তোমার সমস্যাটা কোথায়? কেনো এতো চিন্তা দাও?
মেরিন : কোথাও যাওয়ার সময় সবার আগে নিজের মোবাইল নিতে হয়। তুমি সেটা নাওনি। কোথায় গিয়েছো সেটাও বলে যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করোনি। এমন কোনো মহাকাশে গিয়েছিলে যে পিটারের ফোনটা পর্যন্ত নটরিচ্যাবল ছিলো। কিবরিয়ার প্ল্যানিং ছিলো কিছু একটা ভয়ংকর। তোমাকে ইনফর্ম করার সুযোগ ছিলোনা। বাধ্য হয়ে গিয়েছি। আর তুমি আমাকেই বড়বড় কথা শোনাচ্ছো?
কবির : মেরিন তুম…
মেরিন : আপনি তো চুপই থাকুন। এই যে তুমি , যেখানে তুমি কোনো কাজ আমাকে জানিয়ে করোনা সেখানে তুমি আশা রাখো যে আমি সব কাজ তোমাকে ইনফর্ম করে করবো? পাগল মনেহয় আমাকে?
প্রান্তিক : মামমাম…
মেরিন প্রান্তিকের দিকে তাকালো। দেখে কনিকার কোলে প্রান্তিক। পাশে শমসের খান দারিয়ে আছে। নীড়ের দিকে তাকালো।
নীড় : ব্রেকফাস্টের সময়ের কথাটা মনে ছিলো আমার। তাই বাবাকে বলি মামনিকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে। আমি পিটারকে নিয়ে যাই এই দুজনকে তুলে নিয়ে আসতে। খান বাড়িতে নেটওয়ার্ক রেস্টিক্টেড। তাই পিটারের ফোন নটরিচ্যাবল ছিলো। যাওয়ার আগে বলেই গিয়েছিলাম যে সারপ্রাইজ।
প্রান্তিকের মেরিনের দিকে ছুটে এলো।
প্রান্তিক : মামমাম আমার না ভীষন আনন্দ হচ্ছে। আমরা সবাই মিলে একসাথে থাকবো।
মেরিন জোর করে মুখে হাসি টেনে প্রান্তিকের গাল টেনে দিলো।
মেরিন : মামমাম ফ্রেশ হয়ে আসছি।
মেরিন ঘরে চলে গেলো।

.

একটুপর…
নীড় ঘরে ঢুকলো। মেরিন চুপচাপ বসে আছে। হাতে গল্পের বই। নীড় গিয়ে ওর পাশে বসলো। ওর সেদিকে খেয়াল নেই। নীড় কিভাবে কথা বলতে শুরু করবে সেটা বুঝতে পারছেনা।
মেরিন : শমসের খান এবং কনিকা খান আমার প্রিয় ব্যাক্তি নয় যে তাদের উপস্থিতি আমাকে আনন্দিত করবে অথবা প্রভাবিত করবে। তারা আসার আনন্দ বা দুঃখ কিছুই নেই আমার। তাই সে বিষয়ে কথা না বললেই আমি খুশি হবো।
নীড় মুচকি হাসলো।
মেরিন : আমাকে ইমপ্রেস করার আরো একটি চেষ্টা ব্যর্থ হলো অথচ হাসছো। চালাকি নাকি বোকামি?
নীড় : জানিনা। তবে আমার একটা প্রশ্ন ছিলো। নো নো নো। খানেদের নিয়ে নয়। আমার মামনিবাবাকে বন্দি করেছিলো তাতে তোমার কি? বাঁচলে বাঁচতো বা মরলে মরতো তোমার তো কিছুই যায় আসেনা।
মেরিন : হ্যা আমার কিছু যায় আসেনা। তবে যে কল করেছিলো সে বলেছিলো যে তোমার মাবাবা এবং হবু বউকে বন্দি করা হয়েছে। কিবরিয়া ভিন্ন কেউ কাজটা করাতে পারেনা। কিন্তু বর্ষাকেও বন্দি করেছিলো। কারন অন্যকিছু আছে। তাই আমার যাওয়া।
নীড় : বর্ষাকেও বন্দি করেছিলো?
মেরিন : হ্যা । নাটকটাকে বাস্তব বোঝাতে।
নীড় : বর্ষা কোথায়?
মেরিন : দেখতে ইচ্ছা করছে বুঝি?
নীড় : হ্যা। হবু বউ বলে কথা।
মেরিন : মেরে দিয়েছি।
নীড় : আলহামদুলিল্লাহ। এমন কিলার বিউটি সেজে যাওয়ার কারন কি?
মেরিন : আমার ইচ্ছা।
নীড় : সবাই তোমাকে মুগ্ধ হয়ে দেখছিলো। তাইনা?
মেরিন : শাট আপ।
নীড় : ওগুলোকে জানে মেরে দিবো।
মেরিন : আমার সাথে না আদিক্ষেতা করতে এসোনা।
নীড় : ওকে।
মেরিন : বউটা পড়ছি তাই ঘর থেকে বের হলে খুশি হতাম।
নীড় : সরি খুশি করতে পারলাম না। বাবা যেমন তেমন আমার মামনিকেও রক্ষা করে তুমি উদার মনের পরিচয় দিয়েছো। তুমি চাইলো মামনিকে মরতে ফেলে আসতে পারতে।
মেরিন : খানদের দুশমনি সম্পুর্ন চৌধুরীদের সাথে। কারো সাথে আছে কারো সাথে নেই তেমনটা নয়। সকলেই সমান শত্রু।
নীড় : জানি আমি সেটা। কিন্তু মামনি তোমার আপুকে বন্দি করে রেখেছিলো। তাই মামনির ওপর তোমার অধিক রাগ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।
মেরিন : চৌধুরী হওয়া ভিন্ন তার প্রতি আমার আলাদা কোনো রাগ নেই।
নীড় : মানে? তোমার আপুকে বন্দি করার কারনে আলাদা করে কোনো রাগ নেই?
মেরিন : না। মা হিসেবে যেটা করেছে সেটাতে কোনো ভুল নেই। কিবরিয়ার এমন চরম পরিকল্পনা তার মতো একজন গৃহিণীর দ্বারা বোঝা অসম্ভব ছিলো। তিনি তো তিনি… তোমরাও বোঝোনি। তবে তার দোষ কি? তার জন্যই তো নীলা খান বেঁচে আছে। প্রান নিজের মা কে পাবে। কিবরিয়া তো নীলা খানকে মেরে ফেলারই পরিকল্পনা করেছিলো। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়। নীলিমা খানের হাতে পরে। নীলা খানের ভাগ্যে বেঁচে থাকা ছিলো তাই নীলিমা খানের হাতে পরেছিলো। প্রকাশ্যে এলে কিবরিয়ার হাতে মরেই যেতো।
নীড় : আমি তোমাকে বুঝতে পারিনা মেরিন। নীলা খানের চরিত্রে দাগ লাগানোর জন্য তুমি আমাকে ঘৃণা করো। অথচ নীলা খানের মানসিক ভারসাম্য নেই। এমন অসুস্থ ব্যাক্তিকে বন্দি রেখে টর্চার করেছে ৩-৪বছর ধরে। তার প্রতি তোমার কোনো অভিযোগ নেই।
মেরিন : তুমি কি চাইছো তোমার মাকে মেরে ফেলি?
নীড় : না। কৌতহল মিটাতে চাইছি।
মেরিন : নীলা খানের মানসিক ভারসাম্য হারানোর জন্য নীলিমা চৌধুরী দায়ী নয়। সে নীলা খানকে বন্দি না করে রাখলে কিবরিয়া মেরে ফেলতো। নীলিমা চৌধুরী সুস্থ করার ঔষধও দিচ্ছিলেন। তবে ডক্টর তেমনভাবে দেখাতে পারেননি বলে সুস্থ হচ্ছিলোনা নীলা খান। কারন সবার সামনে চলে এলে তিনি আর শাস্তি দিতে পারতেন না। গায়ে হাত তুলেছে। মেয়েদের গায়ে হাত তোলা অবশ্যই অন্যায়। ক্ষমার অযোগ্য অন্যায়। অসুস্থ তথা দুর্বলকে অত্যাচার করা আরো বড় অন্যায়। কিন্তু এসবের সাথে একটি মায়ের মমতা জরিয়ে আছে। একজন মায়ের সামনে যখন তার মমতা আসে তখন তার সামনে আর কোনোকিছু থাকেনা। অন্ধ হয়ে যায়। কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। ভালোবাসাও নয় , স্নেহও নয়। তবে আজকে যদি দেখি কারো জন্য প্রান ব্যাথা পেয়েছে তবে তাকে আমি শেষ করে দিবো। তার দিকের গল্প জানার চেষ্টা আমি করবোনা। তার দোষ ছিলো কি ছিলোনা সেটাও দেখার চেষ্টা করবোনা। আর নীলিমা চৌধুরী নীলা খানের অপরাধী। নীলা খান বেঁচে আছে। হয়তো আজকে না হয় দুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে। শাস্তি বা স্বস্তি দেয়ার অধিকার তারই আছে। আমার নেই। আমার নেই।
নীড় : কেবল আমাকেই শাস্তি দিতে পারো তুমি। তাইনা?
মেরিন : আমার যা বলার বলে দিয়েছি।
নীড় : থ্যাংকস।
মেরিন : থ্যাংকস!
নীড় : হামম। তুমি মনে করো আমাকে শাস্তি দেয়া যায়। কারন আমার ওপর অধিকার আছে।
মেরিন : ইনিয়ে বিনিয়ে কথাকে ভুলভাবে নিজের মতো সাজিয়ে সুখ প্রাপ্তি করে বোকারা।
নীড় : আমি বোকাই। সেটা নিয়ে কোনো আফসোস নেই। তবে কথা হলো যে তোমার সাজ আজকে আমাকে বেসামাল করে দিচ্ছে। এটার কিছু উপায় করো।
মেরিন : বর্ষার কাছে যাও।
নীড় : ওকে।
মেরিন : আলোটা নিভিয়ে যেও। ঘুম পাচ্ছে।
নীড় : ঘুমাতে তো দিবোনা। রাতে খাবার খাওনি এখনো। লক্ষি মেয়ের মতো খাবে এরপর ঘুমাবে।
মেরিন : আমি লক্ষি মেয়ে নই।
নীড় : তাই তো ভালোবাসি।
মেরিন : আমি এই চিড়িয়াখানায় থাকতে পারবোনা।
নীড় : প্রানের কাছে এখন সবাই আছে। তবুও রেখে যেতে পারিনা। চলো ওকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাই।

.

কিবরিয়া : ড্যাম ইট… কি হচ্ছে এসব? বর্ষা নিজের জ্বালে নিজেই জরিয়ে গেলো। মেরিন এসেছিলো চৌধুরী বাড়িতে। তবে কি নীড়মেরিন একসাথে আছে? কিন্তু নীড়-মেরিন একসাথে থাকলে নীড় কোনোদিনো মেরিনকে পাঠাতো উদ্ধার করতে। এদিকে খানেরা কেউ নেই। ছেলেটা তো আগেই বন্দি। এখন মেয়েটাও গায়েব নিহাল-নীলিমার সাথে। লাবিবের কোনো খোঁজ নেই। সবাইকে কি লিও তুলে নিলো? নাকি নীড়মেরিন মিলো তুলে নিলো? নাকি প্রতিশোধের নেশায় খানেদের নীড় এবং চৌধুরীদের মেরিন তুলে নিলো? হাজার হাজার প্রশ্ন। কিন্তু কোনো উত্তর নেই। পাগল হয়ে যাবো। ছেলেমেয়ে ২টাও কাছে নেই। ওরা যদি থাকতো তবে পালাতাম ওদের নিয়ে। আন্ডারগ্রাউন্ড হয়ে যেতে হবে।
কিবরিয়ার ব্লাড প্রেসার বেরে গেলো। ও ডক্টরের কাছে গেলো। ওর মনেহচ্ছে যে কেউ ওর পিছু নিয়েছে। কিন্তু কাউকে খুজে পেলোনা।
কিবরিয়া মনেমনে : না না না। আর এভাবে থাকা সম্ভব না যা করার গোপনে করবো। অসুস্থতার বাহানায় দেশত্যাগ করতে হবে। বেশি তারাহুরো করলে সকলের আকর্ষণ আমার দিকে চলে আসবে। আপাদত থানায় গিয়ে রিপোর্ট করতে হবে যে আমার স্ত্রী এবং বাবাকে কেউ কিডন্যাপ করেছে। আড়াল হয়ে প্রহার করবো।

.

পরদিন…
লাবিব : অনেক ধূর্ত ওই কিবরিয়া। যতোদূর ওকে চিনি ও নিশ্চয়ই আড়ালে চলে যাবে। কবির ফয়সাল খান যখন আড়াল হয়েছে তখন ও নিজেও আড়াল হয়ে যাবে।
প্রনয় : এই কথাগুলো বলতে এতোঘন্টা সময় কেনো নিলি? এর শাস্তি তোকে পেতে হবে।
লাবিব : আপনি যা যা জিজ্ঞেস করেছিলেন সেগুলোর সব উত্তর আমি দিয়েছি। বিশ্বাস করুন সব সত্যি কথা বলেছি।
প্রনয় : টাইগার আরো এক দফা শক দাও। আরো কিছু কথা আছে ওর ভেতর।
টাইগার : ইয়েস বস।
লাবিব : আমি সব বলেছি।
প্রনয় : কিবরিয়ার প্ল্যান শুরু থেকে বল। সবটা বল। না হলে তোর পরিনতি কি হবে সেটা তুই কল্পনাও করতে পারবিনা। টাইগার…
টাইগার শক দিতে লাগলো। অজ্ঞান হয়ে গেলো। প্রনয় নীলার চিৎকার শুনতে পেলো। প্রনয় ছুটে গেলো নীলার কাছে।
প্রনয় : কি হয়েছে নীলা?
নীলা : প্রান… প্রানকে ও মেরে ফেলবে। আমার প্রান… বাঁচাও আমার প্রানকে।
প্রনয় : শান্ত হও নীলা। প্রান সুস্থ আছে।
নীলা : না আমার প্রান… ওই কিবরিয়া মেরে ফেলবে ওকে। প্রান আমার প্রান…
অজ্ঞান হয়ে গেলো নীলা।
প্রনয় : নীলা… নীলা… প্যান্থার ডক্টর…
নীলাকে ডক্টরের কাছে নেয়া হলো।
প্রনয় : কিবরিয়া কিবরিয়া কিবরিয়া… এই একটা নাম নতুন করে ঝড় এনেছে। না ডান হাত দিয়ে কিছু হবেনা। ওই কিবরিয়াকেই চাই। প্যান্থার… প্যান্থার…
প্যান্থার ছুটে এলো।
প্যান্থার : কি হয়েছে বস?
প্রনয় : কিবরিয়াকে চাই।
প্যান্থার : ওকে বস।

.

বিকালে…
মেরিন : হ্যা জন বলো।
জন : লিও গ্যাং এর সদস্যরা এয়ারপোর্ট রোড থেকে কিবরিয়াকে তুলে নিয়েছে। হয়তো কবির ফয়সাল খান ভেবে।
মেরিন : হামম। থ্যাংকস জন।
জন রেখে দিলো।
মেরিন : লিও লিওর মতোই শিকার করেছে। নিউজটা নিশ্চয়ই নীড়ের কাছেও চলে আসবে। জনকে একটা কাজ দেয়ার আছে। আপুর লকেটে ট্র্যাকার আছে। লিও কোথায় আছে জানি। নীড়কেও জানাতে হবে।

.

চলবে…