প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-৫৭+৫৮+৫৯

0
31

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 57
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নীড় : কি বলছো কি পিটার?
পিটার : ইয়েস বস। লিও কিবরিয়াকে তুলে নিয়ে গিয়েছে।
নীড় : এরমানে সময় এসে গিয়েছে। চলো পিটার। ভেতরে চলো। সবাইকে জানাতে হবে।
ওরা দুজন ভেতরে গেলো।
নীড় : দারুন একটা খবর আছে। মেরিন… মেরিন…
কবির : মেরিন বাসায় নেই।
নীড় : বাসায় নেই? কোথায় গিয়েছে?
পিটার : স্যার… জনের ম্যাসেজ এসেছে। ম্যাম ওর সাথেই আছে। একটা লোকেশন শেয়ার করেছে। সেখানে যেনো পৌছে যাই সেটা বলেছে। অবশ্যই প্রানকে নিয়ে যেতে বলেছে।
নীড় : লোকেশন?
পিটার : ইয়েস স্যার।
নীড়ের মনে পরলো যে মেরিন একদিন বলেছিলো নীলার লকেটে ট্র্যাকার লাগিয়ে দিয়েছিলো।
নীড় মনেমনে : মেরিন চলে যায়নিতো আমাকে ছেরে!
পিটার : স্যার… চলুন। জন বলল যে ম্যাম বলেছে যে ৩টার মধ্যে ম্যামও ওখানে পৌছাবেন।। তাই ওই সময়ের মধ্যে যেনো আপনিও পৌছে যান প্রানকে নিয়ে।
নীড় একটু স্বস্তি পেলেও মনের মধ্যে ভয়টা রয়েই গিয়েছে।
নীলিমা : তুমি কি সত্যিসত্যি প্রানকে নিয়ে যাবে নাকি?
নীড় : হ্যা অবশ্যই।
নীলিমা : তুমি কি পাগল হয়েছো? লিওর ওখানে প্রানকে নিয়ে যাবে? ও সবার শত্রু। প্রানের কিছু করে ফেলবে।
নীড় : শতভাগ সুরক্ষিত না হলে মেরিন কোনোদিনো প্রানকে নিয়ে যেতে বলতোনা।
নীলিমা : তুমি বিশ্বাস করতে পারো মেরিনকে। কিন্তু আমি না।
নিহাল : বিষয়টা মেরিনকে বিশ্বাস করা না করা নিয়ে নয়। বিষয়ট মাফিয়া কিং লিওকে নিয়ে।
নীড় : মেরিনের ধারনা… ধারনা বললে ভুল হবে ওর কাছে প্রমান আছে যে মাফিয়া কিং লিও আর কেউ নয় ভাইয়া। অর্থাৎ…প্রনয় আহমেদ চৌধুরী।
সকলের মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।
কবির : কি বলছো কি তুমি নীড়…
নীড় : আমার সন্দেহ ছিলো। হয়তো এখনো আছে। তাই আমাকে দেখানোর জন্যই লোকেশন শেয়ার করেছে। লিও কিবরিয়াকে তুলে নিয়েছে। তাই সব ওখানেই সমাপ্ত হবে।
কারো মাথা কাজ করছেনা।
শমসের : লিও প্রনয় হলেও ও প্রানের ক্ষতি করতে পারে।
নীড় : একজন বাবা কখনো সন্তানের ক্ষতি করতে পারেনা।
শমসের : লিও প্রানকে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো।
নীড় : বাবা নিজের সন্তানকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। প্রানের কোনো ক্ষতি করতে চায়নি। ইনফ্যাক্ট প্রানের কোনো ক্ষতি করেওনি। ওর গায়ে একটি আচরও দেয়নি। প্রান কোথায়? ওকে নিয়ে যেতে হবে।
নিহাল : আমিও যাবো।
নীলিমা : আমিও যাবো।
সকলেই নীড়ের সাথে যাওয়ার জেদ ধরলো।
নীড় : সবাই কি পাগল হয়ে গিয়েছো? রিস্ক হতে পারে।
কবির : প্রান এবং তোমাকে কিভাবে একা যেতে দিতে পারি?
নীড় : আশ্চর্য্য তো!
নিহাল : তুমি যতো যাই বলোনা কেনো তোমাকে একা যেতে দিবোনা।
পিটার : স্যার… ৩টার মধ্যে পৌছাতে হবে। তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
নিহাল : সিদ্ধান্ত নেয়া শেষ। আমরা যাবো সকলে।

.

কিবরিয়া : আপনি আমাকে কেনো তুলে নিয়ে এসছেন লিও? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি?
প্রনয় : সেটাই তো জানতে চাইছি যে তুমি আমার কি ক্ষতি করেছো এবং কিভাবে করেছো।
কিবরিয়া : আমি সত্যি বলছি। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করিনি।
প্রনয় নিজের মুখ খুলল। নিজের চেহারা দেখালো কিবরিয়াকে। কিবরিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।
কিবরিয়া : পপ্রনয়!
প্রনয় : হ্যা আমি। বিশ্বাস হচ্ছে না নিজের চোখের ওপর?
কিবরিয়া : বাবা আমি খুব আনন্দিত । আজকে যদি আমার মেয়েটাও বেঁচে থাকতো…
প্রনয় : মেয়ে…. ওও… আপনি তো আবার কবির ফয়সাল খান। চলুন চলুন আরো একটু আনন্দ দেই আপনাকে।
প্রনয় নীলাকে নিয়ে এলো। কিবরিয়ার চোখ ছানাবরা হয়ে গেলো।
প্রনয় : শ্বশুরআব্বা… কেমন লাগলো জামাইর সাথে মেয়েকেও জীবীত দেখে?
কিবরিয়া মনেমনে : মাই গুডনেস… নীলাও বেঁচে আছে! নীলা তো জেনে ফেলেছিলো যে আমি সার্জারি করিয়ে কবিরের চেহারা নিয়েছি। একটুএকটু করে কবিরের স্বভাব রপ্ত করছিলাম। নীলা সেটা জেনে ফেলাতে ওকে মেরে ফেলেছিলাম।
নীলা : বাবা… এটা আসল বাবা নাকি নকল বাবা!
কিবরিয়া : মা… আমার মা টা বেঁচে আছে! আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে… প্রনয় বাবা আমাকে একটু সময়ের জন্য মুক্ত করবে? আমি আমার মেয়েটাকে একটু জরিয়ে ধরবো। প্লিজ একটুখানি সময়ের জন্য মুক্ত করোনা…
প্রনয় : কবির ফয়সাল খান হলে আমি অবশ্যই একটুখানির জন্য মুক্ত করতাম।
কিবরিয়া : ককবির ফয়সাল খান হলে মমানে কি বাবা? আমিই তো কবির ফয়সাল খান।
প্রনয় হাহা করে হাসতে লাগলো। কিবরিয়া ভয়ে ঢোক গিলল।
প্রনয় : নীলা… চলো তোমার ঔষধ খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে।
হাসতে হাসতে প্রনয় নীলাকে নিয়ে গেলো।
কিবরিয়া : প্রনয় হয়তো জানে আমি কিবরিয়া। কিন্তু এই প্রনয়নীলা বেঁচে কিভাবে এলো?

.

ঘড়ির কাটাতে তিনটা বাজে। জন তো আছে। কিন্তু মেরিন নেই।
নীড় : মেরিন কোথায় জন?
জন : আমি জানিনা স্যার।
কবির : জানিনা মানে কি? তোমার সাথেই ওর আসার কথা ছিলো।
জন : ম্যাম আমাকে অর্ডার দিয়েছে আসার । আপনাদেরকে আসতে বলতেও ম্যামই বলেছিলেন।তাই আমি পিটারকে ইনফর্ম করি।
নিহাল : তুমি মেরিনকে ছারা কেনো এলে?
জন : আমি তো জানিইনা ম্যাম কোথায়। ম্যাম আমাকে কমান্ড দিয়েছেন এবং আমি সেটা ফলো করেছি মাত্র।
নীড় চুপটি করে রইলো। ওর ভয় সত্যি হলো। মেরিন ওকে লিও পর্যন্ত পৌছে দিয়ে ওকে ছেরে চলে গিয়েছে। নীড় লম্বা একটা নিশ্বাস নিলো।
নীড় : চলো আগে যাওয়া যাক।
প্রান্তিক : চাচ্চু এটা কোন জায়গা?
নীড় : এখানে তোমার জন্য চমৎকার একটি সারপ্রাইজ আছে।

ঔষধ খেয়ে নীলা ঘুমিয়ে পরলো। প্রনয় কিবরিয়ার কাছে যাচ্ছে। তখন প্যান্থার ছুটে এলো।
প্যান্থার : বস…
প্রনয় : তোমাকে এমন কেনো দেখাচ্ছে প্যান্থার? কি হয়েছে?
প্যান্থার : বস… খানচৌধুরী সকলে দরজার ওপারে। নীড়ের কোলে প্রান্তিক।
প্রনয় : ওরা এই ঠিকানা পেলো কোথায়?
প্যান্থার : জানিনা বস। কি করবো?
প্রনয় : কোনো ঝামেলা করবে না। আমার প্রান আছে। ওর সামনে কোনো সংঘাত নয়। সকলকে অস্ত্র ত্যাগ করিয়ে সাবধানে নিয়ে এসো। প্রান যেনো কোনো অস্ত্র না দেখে।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
প্রনয় : আর শোনো , কিবরিয়া যেনো খানচৌধুরীদের না দেখে।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
প্যান্থার চলে গেলো।
প্রনয় : বেশ মজাদার তো… সকলে এখনে একসাথে মিছিল করতে করতে চলে এসেছে। আবার প্রানকেও সাথে এনেছে নিজেদের সুরক্ষা কবজ বানিয়ে। ভেবেছে প্রানকে এনেছে বলে বেঁচে যাবে। আমি চাইলে এক্ষনি প্রানকে আলাদা সরিয়ে নিয়ে সবাইকে শেষ করে দিতে পারি। কিন্তু এই কিবরিয়া আমার মনে অনেকগুলো প্রশ্ন তুলেছে। সে প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত আমি কাউকে মারতেও পারবোনা।

প্যান্থার সকলকে ভেতরে ঢুকিয়ে নিলো। সকলের অস্ত্র নিতে গিয়ে দেখলো কারো কাছে অস্ত্র নেই। এমন কি নীড় , জন এবং পিটারের কাছেও নেই। প্রনয় নিজের জায়গায় বসে স্ক্রিনে সবটা দেখলো।
প্রনয় : বেশ মজাদার তো এই তিনজন অস্ত্র আনেনি। হাহাহা… আত্মসমর্পন করতে এসেছে কি? এক মিনিট… মেরিন কোথায়? মেরিন নেই কেনো?
প্রনয় টাইগারকে কল করলো।
টাইগার : ইয়েস বস…
প্রনয় : ফোর্স নিয়ে খোঁজ নাও যে মেরিন কোথায় আছে। আমি ওকে আমার চোখের সামনে চাই। চাই মানে চাই।
টাইগার : ইয়েস বস।
প্রনয় রেখে দিলো।

প্রান্তিক : ওয়াও চাচ্চু… এই জায়গাটা কতো সুন্দর! এই সারপ্রাইজ দিতে নিয়ে এসেছো?
নীড় : না। এরচেয়ে অনেক বড় সারপ্রাইজ আছে।
প্রান্তিক : তাই!
নীড় : মনে আছে তোমাকে বলেছিলাম যে তোমার মামনিবাবা স্টার হয়ে তোমাকে দেখছে?
প্রান্তিক : হামম হামম।
নীড় : তারা দুজন স্কাই থেকে নিচে এসেছে তোমার সাথে দেখা করতে। আর কখনোই তোমাকে ছেরে যাবেনা অতোদূরে।
প্রান্তিক : সত্যি বলছো চাচ্চু!
নীড় : ইয়েস লাভ।
প্রান্তিক : কোথায় মামনিবাবা?
নীড় : একটুখানি সময় অপেক্ষা করো।
প্রনয় এগুলোও ফুটেজে দেখলো দেখলো।
প্রনয় : ও আমার ছেলেকে এসব বলে দিলো? বেশ… বলেই যখন দিলো তখন আমি উপস্থিত হবো আমার ছেলের সামনে। প্যান্থার।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
প্রনয় : প্রানের জন্য একটুএকটু করে যে ঘরটা আমি সাজিয়েছি সে ঘরটা পরিষ্কার করাও।
প্যান্থার : বস ,পরিষ্কারই আছে। তবুও আমি নিজে গিয়ে দেখে নিচ্ছি।
প্রনয় : হামম।
প্যান্থার : কিন্তু বস প্রান তো নীলা ম্যামকেও দেখতে চাইবে।
প্রনয় : নীলার ঘুম সম্পুর্ন হতে হবে। ওকে বিরক্ত করা যাবেনা। ও অসুস্থ।
প্যান্থার : ওকে বস।
প্যান্থার চলে গেলো। প্রনয় ওয়াশরুমে গেলো।

.

কিছুক্ষনপর…
প্রান্তিক : ও চাচ্চু… বাবা এখনো আসছেনা কেনো?
নীড় : আসবে বাবা।
প্রান্তিক : তখন থেকে বলে যাচ্ছো যে আসবে আসবে। কিন্তু আসছেইনা।
নীড় : চাচ্চু কি এভাবে মিথ্যা কথা বলবো তোমাকে কখনো?
প্রান্তিক : উহু।
নীড় : তাহলে?
প্রান্তিক : আমি আর ওয়েট করতে পারছিনা।
প্রনয় : আর ওয়েট করতে হবেনা বাবা।
সকলে সামনে তাকালো। দেখে প্রনয় এবং নীলা দারিয়ে আছে।
নীলিমা : প্রনয়…
কনিকা : নীলা…
নীড় সকলের দিকে তাকালো। এরপর একটু এগিয়ে গেলো।
জন : আপনাদেরকে বলা হয়েছিলো যে প্লিজ কোনো রিয়্যাক্ট করবেননা। প্রান আছে।
পিটার : একটু ভুল সবকিছু নষ্ট করে দিতে পারে। তাই প্লিজ নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রনে রাখুন।

নীলা সকলকে দেখে প্রনয়ের পেছনে গিয়ে দারালো। ঘাড় বাকিয়ে সকলকে দেখছে। নীড় প্রনয়কে দেখছে। চোখ ছলছল করছে। প্রান্তিক নীড়ের দিকে তাকালো।
নীড় : গো মাই লাভ।
নীড় প্রান্তিককে কোল থেকে নামিয়ে দিলো। ছোট্টছোট্ট পায়ে প্রান্তিক নিজের মাবাবার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
নীলা : সবাই কেনো এখানে? আমাকে কি মেরে ফেলবে?
প্রনয় : কেউ কিচ্ছুটি করবেনা। দেখো তোমার ছোট্ট বীরপুরুষ এগিয়ে আসছে।
নীলা : আমার ছোট্ট বীরপুরুষ!
প্রনয় : হ্যা। ওই যে এগিয়ে আসছে ও হলো আমাদের প্রান। প্রান্তিক আহমেদ চৌ… চৌধুরী।
নীলা : সত্যি?
প্রনয় : সত্যি। এসো আমার সাথে।
প্রনয় নীলাকে সাথে নিয়ে প্রান্তিকের দিকে এগিয়ে গেলো। প্রনয় হাটু গেরে বসলো। প্রান্তিকের গালে হাত রাখলো। ওর কপালে চুমু দিলো।
প্রান্তিক : বাবা…
বলেই প্রান্তিক প্রনয়কে জরিয়ে ধরলো। আজকে প্রথমবারের মতো প্রনয় ‘বাবা’ ডাকটা শুনতে পেলো। ও স্থির হয়ে গেলো। পলকের জন্য সময়টা স্থির হয়ে গেলো। বুকের ভেতরটা একেবারে শূন্য হয়ে গিয়ে পরক্ষনেই কানায় কানায় ভরে গেলো।
প্রনয় : ততুমি আমাকে কি বলে ডাকলে!
প্রান্তিক : বাবা…
প্রনয় : আবার ডাকো…
প্রান্তিক : বাবা…
প্রনয় : আবার…
প্রান্তিক : উফফ… শোনো তবে। বাবা বাবা বাবা বাবা বাবা বাবা বাবা…
প্রনয় প্রান্তিককে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। নীলা চোখ পিটপিট করে দেখছে। বুঝতে পারলো চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো।
নীলা : পানি! পানি এলো কোথায় থেকে! ছাদ ছিদ্র হয়ে গিয়েছে! আল্লাহ… পালাও পালাও… সবাই পালাও… ঝড় আসবে ঝড়…
নীলা ছুটে চলে যেতে নিলো। প্রান্তিক ওর হাতের আঙ্গুল ধরলো।
প্রান্তিক : মামনি কোথায় যাচ্ছো?
নীলা দারিয়ে গেলো।
নীলা : মামনি… আমি মামনি…
প্রনয় : নীলা… আমাদের প্রান…
প্রান্তিক নীলাকে জরিয়ে ধরলো মামনি বলে। নীলা স্থির হয়ে রইলো। জ্ঞান হারালো।
প্রান্তিক : মামনি…
প্রনয় : নীলা…
কবির-কনিকা : নীলা…
শমসের : দিদিভাই…
তারা এগিয়ে আসতে নিলে প্রনয় রেগে তাদের দিকে তাকালো। নীড় তাদেরকে বাধা দিলো।
প্রান্তিক : মামনির কি হলো বাবা? মামনি এভাবে পরে গেলো কেনো? মামনি চোখ মেলছেনা কেনো?
প্রনয় : কিছু হয়নি মামনির।
নীড় এগিয়ে গেলো।
প্রান্তিক : চাচ্চু মামনির কি হলো?
নীড় : কিচ্ছু হয়নি। তুমি বেশি হ্যাপি হলে অনেক হাসো অমন মামনি বেশি হ্যাপি হলে ঘুমিয়ে পরে।
প্রান্তিক : ঘুমিয়ে পরে! এটা আমার কেমন কথা?
নীড় : মামনি তো অনেকদিন স্টার হয়েছিলো তাই অনেকদিন ঘুমায়নি। তাই এটা মামনির অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। একদিন না ঘুমালে আমরা অসুস্থ হয়ে পরিনা বলো? মামনি কতোদিন ধরে ঘুম আসেনা। একটু তো অসুস্থ হবেই।
প্রনয় নীলাকে কোলে তুলে নিয়ে গেলো। প্রান্তিক এখানেই রইলো সবার সাথে। প্যান্থার ডক্টরকে নিয়ে গেলো। ডক্টর বলল যে নীলার মস্তিষ্কে গভীর চাপ পরেছে। ঘুমানোর ইনজেকশন দেয়া হলো নীলাকে।

.

কিবরিয়া : অনেকক্ষন হয়ে গেলো প্রনয়ের খবর নেই। আর কারো দর্শন নেই। যদি কোনোরকমে এখান থেকে মুক্তি পেতাম… কিন্তু সেটা অসম্ভব। এক মিনিট লিও তথা প্রনয় খান এবং চৌধুরী উভয় পরিবারকেই ঘৃণা করে। আমি প্রনয়ের মনটা আরো বিষিয়ে দিবো এই দুই পরিবারের নামে। আমার প্রতিশোধ এই প্রনয় নিবে। আত্মবিশ্বাসের সাথে মিথ্যা বলতে হবে যেনো মিথ্যাটাকে সত্য মনে হয়। ভাবতে হবে কিভাবে কি বলতে হবে ভাবতে হবে। প্রনয় আমাকে এখানে এনেছে। এর মানে বর্ষা ভিন্ন সবাইকে এই প্রনয়ই কিডন্যাপ করেছে। কবিরও ওর কাছে আছে তাই জানে যে আমি কবির নই। যাইহোক , প্রনয়ের মাধ্যমে বর্ষাকে উদ্ধার করতে হবে। কিন্তু প্রনয় জীবীত কিভাবে আছে? আমি নিজে ওর মৃতদেহ মাটিচাপা দিয়েছিলাম। ও মাফিয়া কিং কিভাবে হলো? এই পর্যন্ত আসা কোনো সাধারন বিষয় না। মিত্রর চেয়ে শত্রুর সংখ্যাই বেশি। একবার মুক্তি পাই এরপর এই প্রনয়েরও ধ্বংস আমি করাবো।

.

প্রান্তিক : মামমাম এখনো আসছেনা কেনো চাচ্চু?
নীড় চুপ করে রইলো।
প্রান্তিক : ও চাচ্চু বলো না। মামমাম কোথায়?
নীড় : মামমাম অনেক প্রয়োজনীয় একটি কাজে গিয়েছে।
প্রান্তিক : সবাই একসাথে অথচ মামমাম নেই। কোনো কাজে থাকা চলবেনা। কল করো তো। আমি কথা বলবো। বলবো চলে আসতে।
নীড় : মামমামের তো ফোনই বন্ধ।
প্রান্তিক : মামমাম তো অনেক দুষ্টু হয়ে গিয়েছে।
নীড় জোর করে ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে নিলো। প্রনয় ভাই এবং ছেলের কথাগুলো শুনতে পেলো।
নীড় মনেমনে : তুমি চলেই গেলে আমাকে ছেরে মেরিন… আমার ভালোবাসা আসলেই তুচ্ছ। হয়তো আমি ভালোবাসতেই পারিনি তাই এমনটা হলো। তুমি এবং আমাদের সন্তান দুজনই ভালো থাকো। যদি আমার থেকে দূরে থেকেও তুমি ভালো থাকো তাহলে সেটাই ভালো। আমার তীব্র দুঃখ তোমার এক চিলতে হাসির কাছে কিছুইনা। তোমার আনন্দে আমি আনন্দিত। না না … তোমাকে ফিরতেই হবে আমার কাছে। তুমি ভিন্ন আমি কিভাবে থাকবো? উফফ…
রাত হয়ে গিয়েছে তাই প্রান্তিক ঘুমিয়ে পরেছে।
প্রনয় : আমার ছেলেকে বরাবর মিথ্যার মধ্যেই রেখেছো তুমি মিস্টার নীড় আহমেদ চৌধুরী। ছোটবাচ্চা বলে মিথ্যার পর মিথ্যা বলে ওকে ভুলিয়ে রাখছো। ও একদিন বড় হবে। তোমার সকল সত্য ওর সামনে আসবে। তখন ওর কাছে তুমি মিথ্যাবাদী হয়ে যাবে। সেটা কি ভেবে দেখেছো?
নীড় চুপ করে রইলো।
প্রনয় : কি হলো? কিছু বলবো।
নীড় : বলবো। বলার মতো অনেক অনেক কথা আছে। কিন্তু বলার আগে আমি শুনতে চাই। অনেকঅনেক প্রশ্ন আছে। সেগুলো শুনতে চাই।
প্রনয় : প্রান এখন ঘুমিয়ে আছে। তোমাদেরকে মেরে মাটির সাথে মিশাতে আমার দুই মিনিটও লাগবেনা।
নীড় : নিজের গুহায় শিয়ালও সিংহ।
প্রনয় : কি বলতে চাইছো আমি শিয়াল? মনে করে দেখো কতোবার হেরেছো আমার কাছে। করো করো মনে করো। তখন অস্ত্র ছিলো হাতে। তবুও আমার সামনে পিপড়ার ন্যায় ছিলে। আর এখন তো নিরস্ত্র।
প্রনয় নিজের হাতে পিস্তলটা ঘুরাতে ঘুরাতে কথাগুলো বলল। নীড় পলকের মাঝে ওর কাছে এসে ওরই কাছ থেকে পিস্তল নিয়ে ওকে ঘুরিয়ে ওর মাথায় পিস্তলটা ঠেকালো।
প্রনয় : তোমার এতো সাহস? তুমি আমার মাথায় পিস্তল ঠেকাও। আমাকে মেরে ফেললে নিজের পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারবে ভেবেছো? আমাকে মারতে পারবেনা। আর যদি মেরেও ফেলো তাহলেও তুমি এবং তোমার পরিবার মরবে।
নীড় : আমি মারতে আসিনি। মারতে এলে এতোগুলো কথা বলার সময় পেতেনা। মেরিন আমাকে ছেরে চলে গিয়েছে। তাই এই পরিবারের কথা আর কি ভাববো? আমি নিজেই তো মৃত। আমি অস্ত্রটা তোমার মাথায় ঠেকিয়ে বোঝালাম যে অস্ত্র সাথে থাকুক না থাকুক তোমাকে হারানো আমার পক্ষে অসম্ভব নয়। আর যেহেতু প্রান আছে সেহেতু আমি রক্তপাত করবোনা। আর তোমার ওপর এতোটুুকু ভরসা আছে যে তুমিও রক্তপাত করবেনা। আর যদি করোও তাহলে প্রানকে তুমি সামলাতে পারবেনা। নীড় না থাকলে মেরিন এবং মেরিন না থাকলে নীড় প্রানকে সামলাতে সক্ষম। কিন্তু দুজনের অনুপস্থিতিতে তোমার পক্ষে প্রানকে সামলাতে পারবেনা। অনেক সময় লাগবে। বুঝলে?
নীড় প্রনয়কে ছেরে দিলো। প্রনয়ের হাতে পিস্তল ফিরিয়ে দিলো।
নীড় : আমার প্রশ্ন আছে। সকলের সামনে করবো। সকলের সামনে উত্তর দিবে। এসো।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 58
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নীড় : এসো।
নীড় প্রনয়কে টেনে বাকিদের সামনে নিয়ে গেলো। নিহাল-নীলিমা প্রনয়ের দিকে এগিয়ে আসতে নিলো। নীড় বাধা দিলো।
নীড় : স্নেহ পরে দেখাও। স্নেহ দেখানোর অনেক সময় আছে। এখন প্রশ্ন উত্তরের পালা। তাই এখন দর্শক হয়ে চুপচাপ বসে থাকো। তুমি বেঁচে আছো তাহলে কেনো কারো সামনে আসোনি? কেনো খান এবং চৌধুরীদের জানের দুশমন হয়ে আছো? খানদের মেয়ের জীবন বরবাদ করে তাদরকে তো শাস্তি দিয়েছোই। তাহলে কিসের শত্রুতা বাকি থাকে? আর আমাদের সাথেই বা কিসের শত্রুতা? তোমার বউকে তুমি যন্ত্রণা দিয়েছো। আমরা কেউ দেইনি । আর দিলেও বা কি? তুমি তো তাকে ভালোবাসোনা।তাহলে কেনো সকলের দুশমন হয়ে আছো? বলো… কেনো এসব করলে? কেনো আড়াল হয়ে রইলে? কেনো কেনো কেনো?
প্রনয় : আমার এবং তোর মনে খানদের প্রতি কে ঘৃণা ধরিয়েছিলো? ওই নিহাল আহমেদ চৌধুরী।
নীড় : তো নিহাল আহমেদ চৌধুরী কি একবারো বলেছিলো যে খানেদের বড় মেয়েকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করাও? বলো। উত্তর দাও।
প্রনয় : ওই পরিবারের প্রতি ঘৃণার সুযোগই নাবিল ওরা নেয়। নীলাকে ফাঁসানোর এবং কষ্ট দেয়ার ভূত আমার মাথায় ঢোকায়। আমি ভালোবাসার নাটক করে বিয়ে করি। কষ্ট দেই যন্ত্রণা দেই। তোদের সকলের কাছে নীলাকে দোষী বানাই। চরিত্রহীন প্রমান করি। কিন্তু একটা সময় নীলার ভালোবাসার কাছে আমি হার মানতে শুরু করি। তখন আবারো নাবিল এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যে নীলা কনসিভ করার পর আমি ডিএনএ টেস্ট পর্যন্ত করাই। এরপর সব ঘৃণা দূর করে ফেলি। সুন্দর করে সংসার করতে চেয়েছিলাম এবং নাবিল ওদের শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম। জানতে পারি যে ওরা আমাকে ব্যবহার করেছে মাত্র। নাবিল আড়াল হয়ে যায়। নাবিলের খোঁজ পেয়ে আমি একটি জায়গায় যাই। সেখানে আমাকে মেরে পানিতে ফেলা হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাই। আন্ডারওয়ার্ল্ডের এক সন্ত্রাসীর হাতে পরি। কয়েকমাস মেমোরি ছিলোনা। ওদের সাথে জরিয়ে পরি। তাই মেমোরি ফেরার পরেও আমার কাছে ফিরে যাওয়ার উপায় ছিলোনা। তখন আমি এতো উচ্চতায় পৌছাইনি। এরপর নীলার মৃত্যুর খবর আসে জানতে পারি যে এই মৃত্যুর পেছনে নিহাল আহমেদ চৌধুরী এবং নীলিমা চৌধুরীর হাত আছে। ক্রোধ জন্মায়। আর কবির ফয়সাল খান নিজের মেয়েকে সহায়তা করেনি।তাই তার ওপরও রাগ জন্মায়। চৌধুরী এবং খান উভয়ে শত্রু হয়ে যায়। তবে তুমি সেই শত্রুর তালিকায় ছিলেনা নীড় আহমেদ চৌধুরী। কবির ফয়সাল খান প্রান্তিককে নিয়েয় এলো মেরিনের কাছ থেকে। জানতে পারলাম যে আমার প্রান বেঁচে আছে। আইনী লড়াই শুরু হলো। আমি যাইনি আমার ছেলের কাছে। আমি অপরাধে ডুবে ছিলাম। এই অনিরাপত্তার জীবনে আমি আমার ছেলেকে নিয়ে আসতে চাইনি। ভেবেছিলাম তোমার কাছে আমার ছেলে ভালো থাকবে। কিন্তু তুমি ভরা আদালতে প্রানকে নিজের সন্তান প্রমান করলে। ছিঃ… ধিক্কার তোমার ওপর। সেদিন থেকে তোমাদের দুই পরিবারকে ধ্বংসের শপথ নেই। ২৪টা ঘন্টার মধ্যেই এই শপথ পূরন করবো। কারন আমারও কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর প্রয়োজন কারো কাছে।
নীড় : আজমল কিবরিয়ার কাছে জবাব চাইবে বুঝি?
প্রনয় : সেটা তোমার জানার বিষয় নয়।
নীড় : আমার প্রান , আমার জীবন , আমার মরন , আমার ভালোবাসা , আমার সংসার এবং আমার সন্তান বাজি লেগে আছে । সবটা হারানোর পথ । আর তুমি বলছো আমার জানার বিষয় নয়? শোনো মাফিয়া কিং লিও… এই পুরো ঘটনা চক্রে তোমার ঘৃণা ছিলো কিন্তু আমার ছিলো ভালোবাসা। তোমার ছিলো প্রতিশোধ কিন্তু আমার ছিলো প্রনয়। কবির ফয়সাল খানের চেহারার কিবরিয়া তোমার কাছে আছে সেটা জানি।কিবরিয়ার ছেলে নাবিল তোমার কাছে আছে সেটাও জানি।
এই কথাটা শুনে প্রনয়ের কপালে ভাঁজ পরলো।
নীড় : অবাক হলে? আরো অবাক করবো। ওই আমির কিবরিয়া আজমল কিবরিয়ার পালিত ছেলে। তার তো আসলে জমজ সন্তান আছে। একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে। তোমার বন্ধু নাবিল হলো ওর ছেলে এবং আমার বন্ধু বর্ষা হলো ওর মেয়ে।
প্রনয় আসলেই অবাক হলো।
নীড় : আজমল কিবরিয়া অনেকদিন সময় নিয়ে পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনায় পা দাও তুমি। এই সব সর্বনাশের মূলে তুমি। ভাবি… বহুদিন পর ভাবিকে ভাবি বললাম। ভাবি মায়ের সমান হয় আর আমি সেই ভাবিকে আদালতে কলঙ্কিত প্রমান করেছি সেই পাপের বোঝা আমাকে আমার মৃত্যুর পরেও বহন করতে হবে। খানেদের প্রতি তোমার ঘৃণা এমন পর্যায়ে ছিলো যে তুমি একজন নারীকে ব্যবহার করো। খানদের কষ্ট দেয়ার জন্য ভাবিকে ফাসিয়ে বিয়ে করো। কোনো অধমও বিয়ের পর নিজের স্ত্রীর সম্মান নষ্ট করেনা। আর তুমি নিজেই নিজের স্ত্রীকে সকলের সামনে ক্যারেক্টারলেস প্রমান করেছো। আমি এবং মামনি ভাবিপ সাপোর্ট করতাম বলে আমাদের কাছেও ভাবিকে চরম খারাপ বানিয়েছো। ব্যাভিচারী বানিয়েছো। নাবিলকে বিশ্বাস করেছো কিন্তু নিজের স্ত্রীকে না । সেই তোমার মুখে ভাবিকে ভালোবাসার কথা বলতে লজ্জা করছেনা? যখন সবার কাছে খারাপ প্রমানিত করেছো তখন সবাই সেই অনুযায়ীই তো ব্যবহার করবে। নয় কি? মামনিকে আরো দোষী করি তোমার কাছে। গত প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে মামনি ভাবিকে বন্দি করে রেখে ছিলো। খুন করো মামনিকে। নাও প্রতিশোধ। শান্তি ভোগ করো। কিন্তু মনে রেখো সব অশান্তির মূলে তুমি।কেবল আর কেবল তুমি। তুমি ওই কিবরিয়ার পরিকল্পনা সফল করেছো। কবির ফয়সাল খান যে প্রতিশোধের খেলাটা থামিয়ে রেখেছিলো সেটাকে তুমি পুনরায় সচল করেছো। তোমার জন্য ভাবি নিজের শ্বশুরবাড়িতে লাঞ্ছিত তো করেছোই সেই সাথে নিজের পরিবারের মাবাবার থেকেও দূরে করেছো। দোষী করেছো। তোমার জন্য প্রান একটি অস্বাভাবিক জীবন পেয়েছে। জন্মের পর থেকে বাচ্চাটা সংঘর্ষ করে চলেছে বাচ্চাটা। তোমার জন্য দুই পরিবারে অশান্তি। তোমার জন্য মেরিন আমার থেকে দূরে চলে গিয়েছে। আমার সন্তানটাও প্রানের মতো সংঘর্ষ করবে। প্রানের সংঘর্ষ আল্লাহ শেষ করে দিলেন সেটার জন্য আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু আমার সন্তানেরটা হয়তো শুরু। তোমার জন্য আমি প্রতিশোধের খেলায় নেমেছি। সবকিছু হারিয়েছি। প্রান না থাকলে তোমাকে আমি সবকিছুর জন্য শাস্তি দিতাম। জান মেরে ফেলতাম। তুমি যে আমার ভাইয়া সেটাও ভুলে যেতাম। কিন্তু প্রান আমার হাত বেধে রেখেছে। তুমি আমার পুরো জীবন লন্ডভন্ড করে দিয়েছো। আমিও দায়ী নিজের ভালোবাসা হারানোর জন্য। আমি তোমাকে কোনোদিনো ক্ষমা করবোনা। তুমি আমার কাছে মৃত। শুনেছো তুমি? তুনি আমার কাছে মৃত। কিবরিয়া কোথায় আছে বলে দাও। ওকে শেষ করবো। ও না … তুমি তো আমার কথা বিশ্বাস করবেনা। কিবরিয়ার কাছ থেকে সত্য জানো। তবে ওর মুখের কথা বিশ্বাস করোনা। লাই ডিটেক্টর এর হেল্প নিও। ২৪ঘন্টা সময় দিয়েছো তুমি। শেষ করলে করে দাও। আমার কোনো আফসোস নেই। প্রশ্নের উত্তর দিয়েছো। মেরিন ঠিক বলতো। আমিই বোকা। তাই ওক ভরসা করিনি। আমাকে মেরেই ফেলো। বাঁচার ইচ্ছা আমার নেই। তোমার মতো আমিও চাইলে সব ধ্বংস করতে পারি। কিন্তু তাহলে মেরিনকে পাওয়ার একটুখানি আশাও শেষ হয়ে যাবে।
নীড় ওখান থেকে সরে গেলো। প্রনয় ধপ করে বসে পরলো। কতোবড় ভুল করেছে ও! ওর চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো।

.

কনিকা নীলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। নীলা তো ঘুম।
কনিকা : আমার বাচ্চা… আমার সোনাবাচ্চা…
কবির : জীবনে সবকিছু একদিন না একদিন হয়তো ঠিক হয়েই যায়। তাইনা?
কনিকা : কোথায় ঠিক হলো? এক মেয়েকে পেয়েছি। কিন্তু অন্য মেয়েকে তো হারিয়ে ফেলেছি।
কবির : মেরিন আমাদের কাছে ছিলো কবে?
কনিকা : তুমি কি চাওনা মেরিন আমাদের কাছে আসুক?
কবির : আমি বিশ্বাস করি নীড় মেরিনকে খুজে বের করতে সক্ষম হবে।
কনিকা : আর যদি খুজে না পায়?
কবির : পাবে। পেতেই হবে নীড়কে।
কনিকা : তোমার কি মনেহয় প্রনয় নীড়ের কথা বিশ্বাস করবে? নাকি প্রনয় মেরে দেবে আমাদের সবাইকে?
কবির : নীড় আমাদের মরতে দেবেনা এবং প্রনয় আমাদের মারবেনা।
কনিকা : হামম। মেরিনের জন্য চিন্তা হচ্ছে। যদি নীড় মেরিনকে খুজে পেতে দেরি করে ফেলে?
কবির : ভরসা রাখো ভাগ্যের ওপর।
কনিকা : ভাগ্যের কাজই তো পরিহাস করা।

.

প্রনয় গিয়ে কিবরিয়ার সামনে দারালো।
কিবরিয়া : প্রনয় বাবা…
প্রনয় : কিবরিয়া… তুই কবির ফয়সাল খানের চেহারা কেনো নিয়েছিস? কেনো নিয়েছিস? 📢
কিবরিয়া : আমি নেইনি। কবির ফয়সাল খান নিজের জজীবন বাঁচাতে আমাকে নিজের চেহারা দেয়। যেনো সহজেই নিজে সকল অপকর্ম করতে পারে এবং নিজের নির্দোষ হওয়ার প্রমানও রাখতে পারে। ওদের যন্ত্রনায় অতীষ্ট হয়ে আমিই কবিরের স্থান নেই। শমসের খান , মেরিনের হাত থেকে বাঁচতে এবং কবির ফয়সাল খানের হাত থেকে বাঁচতে। তুমি ভাবতেও পারবেনা যে ওরা কতো খারাপ। আমার পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছো ওই খান। জীবন বাঁচাতে আমি কাজটা করেছি। যেখানেই গিয়া লুকাতাম সেখান থেকে খুজে বের করতো। তাই বাধ্য হয়ে কাজটা করেছি। আর এতে কেবল আমার নয় অনেক সাধারন মানুষেরও উপকার হয়েছে।
প্রনয় : হামম। চৌধুরীদের দুশমন কেনো?
কিবরিয়া : বিশ্বাস করো বাবা আমি চৌধুরীদের সাথে শত্রুতা করতে চাইনি। খানেরা জোর করে আমাকে দিয়ে তোমাদের ক্ষতি করায়। তাই তো বাধ্য হয়ে আমি কবিরের রূপ নিয়েছি। খানেদের টর্চার সহ্য করে ওদের প্রতি রাগও বেরেছিলো। তাই প্রতিশোধ নেয়ার ইচ্ছা জাগে।
প্রনয় : আমাকে হত্যা করার চেষ্টা কেনো তবে?
কিবরিয়া : ওটা আমি করিনি বাবা। বিশ্বাস করো আমি করিনি। ওটা কবির ফয়সাল করে। আমি কেনো করবো? চেহারা তো একই।
প্রনয়: নীলাকে কেনো হত্যা চেষ্টা?
কিবরিয়া : নীলাকে হত্যাচেষ্টা আমি করিনি। তবে আমি জানতাম যে ওকে হত্যা করা হবে। আমি চাইলে ওকে বাঁচাতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটা করিনি।আসলে কবিরের ওপর রাগের কারনে আমি এটা করিনি।
প্রনয় : নীলার ওপর তবে কে হামলা করেছিলো? মানে কে হত্যাচেষ্টা করেছিলো?
কিবরিয়া : বললে বিশ্বাস করবানা বাবা…
প্রনয় : বল কে ছিলো?
কিবরিয়া : ববলছি। তোমার মাবাবার পরিকল্পনা ছিলো।
প্রনয় : হামম। তো আজমল কিবরিয়া রূপে যে কোমায় পরে আছে তোর বাড়িতে ওইটা কে?
কিবরিয়া : জানিনা বাবা। সেটাও ক…
প্রনয় : সেটাও কবির ফয়সাল খান জানে। তাইতো?
কিবরিয়া : হ্যা।
প্রনয় : তুই অনেক ভালো। কেনো জানিস? কারন আমার মতো তুইও খান এবং চৌধুরী দুজনেরই শত্রু। আর সে কারনেই তোকে তুলে নিয়ে এসেছি।
কিবরিয়া : আমি শত্রু কিনা জানিনা। কিন্তু এদের বলির পাঠা আমি।
কিবরিয়া কান্নার নাটক করলো।
প্রনয় : একদম কান্না করবিনা। তুই আমার কাছে আছিস। আমি এবং তুই মিলে সবাইকে কান্না করাবো।
কিবরিয়া : আমাকে আর প্রতিশোধে জরিওনা বাবা। আমি আর এই খেলা খেলতে চাইনা।
প্রনয় : এই শোন… গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিবো। একদম ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করবিনা। আমার ভালো মানুষ দেখতে মনে চায়না। খারাপেরা আমার প্রিয়। কিন্তু যারা খারাপ হয়ে ভালো সাজার চেষ্টা করে তাদের আমার খুন করতে ইচ্ছা করে। নিজের ভেতর প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে রাখ।আমার ভরসা অর্জন করলে তুই হবি এই মাফিয়া কিং এর মন্ত্রী।

.

পরদিন…
বর্ষা : আমাকে আর কতোদিন এখানে রাখবে মেরিন? আংকেল আন্টির সাথে কি করেছো? নীড় কিন্তু তোমাকে ছেরে কথা বলবেনা। ও ঠিক আমি পর্যন্ত আসবে। আমাকে মুক্ত করতে।
মেরিন : তোমার কাছে যে এখন কোন পক্ষে কি উদ্দেশ্যে আসবে সেটা আমিও জানিনা।
বর্ষা : নীড় আসবে আমাকে বাঁচাতে।
মেরিন : নীড় আসতে পারে। লিও আসতে পারে। কবির ফয়সাল খান আসতে পারে আই মিন আজমল কিবরিয়া আসতে পারে।
বর্ষা : আজমল কিবরিয়া কে?
মেরিন : তোর বাপ। একটু অভদ্রতা হয়ে গেলো। তোমার শ্রদ্ধেয় আব্বাজান।
বর্ষা : আজমল কিবরিয়া আমার বাবা কেনো হতে যাবে? কে এই লোকটা? আমার বাবার নাম ত…
মেরিন : চুপ… একদম চুপ। নিজের বাবার নামের জায়গায় অন্যকারো নাম ব্যবহার করে এমনিতেই মারাত্মক পাপ করেছিস। সেই পাপের শাস্তি তোকে আল্লাহ দিবে।
বর্ষা : তুমি পাগল হয়ে গিয়েছো মেরিন। নীড়কে হারিয়ে উন্মাদ হয়ে গিয়েছো। নীড় আমাকে বিয়ে করবে তুমি জাস্ট এটা মেনে নিতে পারোইনি। নীড় তোমাকে ছেরে দিয়েছে সেটা মেনে নাও।
মেরিন হাহা করে হাসতে লাগলো।
মেরিন : ও লে লে লে… আমার ভোলাভালা বর্ষা আপু। সতীন আপু বলবো?
বর্ষা : শাট আপ। নীড় আমাকে রক্ষা করতে নিশ্চয়ই আসবে।
মেরিন আবারো হাহা করে হাসতে লাগলো।
মেরিন : নীড় আসবে। এটা ঠিক। পাগলের মতো খুজবে সেটাও ঠিক। কিন্তু খুজে পাবে কি পাবেনা সেটা আমি জানিনা।
বর্ষা : ঠিক খুজে পাবে আমাকে।
মেরিন : তুমি তোমার কথা বলছিলে! ওহ হ্যা বলবেই তো। বাই দ্যা ওয়ে আমি আমার কথাই বলছিলাম। লিওর কাছ থেকে বের হলেই নীড় আমার খোঁজে বেরিয়ে পরবে। ভালোবাসেতো আমাকে।
বর্ষা : সেটা তোমার ভুল ধারনা ভিন্ন আর কিছুইনা। ও আমার খুজতে খুজতে এই পর্যন্ত আসবে।
মেরিন : ও তোমাকে খুজবে কেনো? ও তো জানেই যে তুমি এখানে। ওরই মিরর ওয়ার্ল্ডের আন্ডারগ্রাউন্ডে তুমি।
বর্ষার কপালে ভাঁজ পরলো।
মেরিন : ভাঁজ পরলো যে কপালে? কিছুই বুঝতে পারোনি নাকি অবাক হয়েছো?
বর্ষা : তোমার এসব পাগলের প্রলাপে কান দেয়ার আমার কোনো ইচ্ছা নেই। বিশ্বাস করা তো আরো দূরে।
মেরিন বর্ষার গাল টেনে দিলো।
মেরিন : বেবি টা। গত একমাস ধরে এই মিরর ওয়ার্ল্ডে আমরা একটি ছোট্ট সংসার গরেছিলাম। আমি , নীড় এবং আমাদের প্রান। মাঝেমধ্যে তিনজন সন্ধ্যায় বের হতাম ছদ্মবেশে। নীড়ই বেশিরভাগ রান্না করতো। আমি অসুস্থ হওয়ার পর তো রাতেও আমার সেবা করেছে। মনে করে দেখো ও বাসাতেই ফিরতোনা।
বর্ষা ভেবে দেখলো মেরিন তো ঠিকই বলছে।
মেরিন : ওহ হ্যা… তোমার একটি কনফিউশন আছে। লেট মি ক্লিয়ার। নীড়ের ধুম জ্বর ছিলো। তুমি ওর স্যুপে একটা ড্রাগ মিক্স করেছিলে।কিন্তু সেটা খাওয়ার পরেও ইফেক্ট করেনি। মনে আছে বেবি?
বর্ষা মনে করলো।
মেরিন : জানালা বারি খাওয়ার শব্দের কথা মনে আছে? সেটা আমি করেছিলাম। ওটা শুনে তুমি দেখতে যাও। সেই সুযোগে আমি পাল্টে দেই স্যুপ। তাই ইফেক্ট করেনি। সেদিন রাতে তো আমি এবং প্রান নীড়ের ঘরেই ছিলাম।
বর্ষা : চুপ চুপ একদম চুপ। আমি আর তোমার মিথ্যা কথা শুনতে চাইনা।
মেরিন : কিবরিয়া কন্যা… তোমার পরিচয় পাওয়ার পরই নীড় তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সেদিন রাতে জানের কসম দিয়ে বলেছিলো যে দ্বিতীয়বার ভালোবাসা সম্ভব না। আমি যে মারাত্মক রেগে ছিলাম তবুও বুঝেছিলাম যে ও আমার কসম খেয়েই আমাকে বলল যে দ্বিতীয়বার ভালোবাসা সম্ভব নেই। অথচ তুমি মাথামোটা ভুলে গেলে যে নীড় আমাকে জান বলে ডাকে। উফফ কি বোকা তুমি। তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া , আমার খান এবং চৌধুরীদের থেকে আড়াল হওয়া ছিলো একটি পরিকল্পনা। কবির ফয়সাল খানকে খোজা এবং কিবরিয়াকে ধ্বংস করা। আরো একটি আছে। সেটা হলো লিও অর্থাৎ প্রনয়কে দেখা।
বর্ষা : লিও… প্রনয়…
মেরিন : লিওই প্রনয়। আমি তো জানি। খান এবং চৌধুরীদের দেখানোর ছিলো।
বর্ষা : প্রনয় বেঁচে আছে?
মেরিন : একদম বেঁচে আছে। প্রনয় বেঁচে আছে , নীলা মানে আমার বোনও বেঁচে আছে।
বর্ষা : নীলা বেঁচে আছে?
মেরিন : ইয়েস ডিয়ার বেঁচে আছে। আর তোমার বাবা কিবরিয়া কোথায় আছে জানো? লিও মানে প্রনয়ের কাছে। কালকে তুলে নিয়ে গিয়েছে নিজের লোক দিয়ে। কি যে করবে কিভাবে যে মারবে সেটা সেই জানে।
বর্ষা : মেরিন… আমার বাবার যদি কিছু হয় তাহলে আমি ছারবোনা তোকে। শেষ করে ফেলবো।
মেরিন : যাক স্বীকার তো করলে যে কিবরিয়া তোমার বাবা।
বর্ষা : হ্যা হ্যা আজমল কিবরিয়া আমার বাবা। আমি গর্ব করি আমার বাবাকে নিয়ে। আমার বাবা আমার অহংকার। শুনেছিস তুই? ছারবোনা আমি তোদেরকে। তোকে শেষ করে ফেলবো।
মেরিন বর্ষার মাথায় বারি মারলো।
মেরিন : তোর সামনে মেরিন বন্যা খান বসে আছে। তাই জিহ্বাটার লাগাম রাখো। শেষ করে দিবো।

.

নিহাল : সারাটা রাত তুমি ঘুমাওনি নীলি।
নীলিমা : ঘুম…ঘুম কিভাবে আসবো? শ্বাশুরি কখনো মা হতে পারেনা সেটা হয়তো আমার মতো শ্বাশুরির জন্যই প্রযোজ্য। পুত্রস্নেহে অন্ধ হয়ে নির্দোষ মেয়েটাকে দিনের পর দিন অত্যাচার করেছি। ছিঃ… ধিক্কার আমার ওপর।
নিহাল : আমি আরো অনেক আগেই বলেছি যে প্রনয়ের দোষ ছিলোনা।
নীলিমা : তুমি যখন বিস্তারিত জানতে তখন আগে কেনো বলোনি?
নিহাল : আমি বিস্তারিত জানতাম না নীলি। বিয়ের বিষয়টা জানতাম। বাকি সব আন্দাজ ছিলো।
নীলিমা : আমার শিক্ষাতেই হয়তো কোনো ঘাটতি ছিলো। তাই আমার ছেলে এগুলো করেছে।
নিহাল : না নীলি। সম্পুর্ন দোষ আমার। আমি শত্রুটাকে অনেক বারিয়ে দিয়েছি। আমার ছেলের মনে প্রতিশোধের আগুন আমি ধরিয়েছি। তাই দোষ আমার।
নীলিমা : কিন্তু মা হয়ে এই আগুন আমি নেভাতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা।
নিহাল : তুমি চেষ্টা করেছো।
নীলিমা : সফল হলেই চেষ্টা সার্থক।

.

চলবে…

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 59
writer : Mohona
(do not copy please)

.

নীলিমা : সফল হলেই চেষ্টা সার্থক।
নিহাল : এখন নিজেদের দোষের বিচার করার সময় নয়। যা হয়েছে সেটা পরিবর্তন তো করতে পারবোনা। অতীত বদলানো যায়না। অতীতের জন্য বর্তমানও নষ্ট হয়ে আছে। ভবিষ্যৎ সুন্দর করার একটি চেষ্টা তো করতেই পারি। প্রনয়ের জীবন অনেকটা বরবাদ হয়েছে। ওকে ধ্বংসের পথ থেকে স্বাভাবিক পথে নিয়ে আসতে পারি। নীড়ের জীবন বরবাদ হওয়া থেকে বাঁচাতে পারি। প্রান তো পেয়েছেই অস্বাভাবিক জীবন। আরো এক নাতিনাতনির সাথে আমি একই ঘটনা ঘটতে দিতে পারিনা। প্রানের মতো বঞ্চিত হতে দিবোনা।
নীলিমা : বঞ্চিত… প্রান প্রনয়-নীলার ভালোবাসা পায়নি সেটা ঠিক। কিন্তু স্নেহের কোনো ঘাটতি ছিলোনা। নীড়মেরিন ওকে যথেষ্ট স্নেহভালোবাসা দিয়েছে। তিন বছর মেরিনের কাছে যখন ছিলো তখন মেরিন মায়ের মতো ওর খেয়াল রেখেছে। ৬মাসের মতো নীড়ের কাছে ছিলো। নীড় বাবার মতো ওর খেয়াল রেখেছে । পরবর্তীতে নীড়-মেরিন মিলে মাবাবার মতো করে ওকে স্নেহ করেছে , ভালোবাসা দিয়েছে।
নিহাল : হ্যা অবশ্যই দিয়েছে। কিন্তু শুরুতে আলাদা আলাদাভাবে স্নেহ পেয়েছে। নতুন জনের সাথে অমন কিছু হতে দিতে পারিনা। প্রনয়কে বলবো যে আমাদেরকে মারলে মেরে ফেলুক। কিন্তু নীড়কে যেনো মুক্তি দেয়। ও মেরিনকে ঠিক খুজে ঠিক বের করবে।

.

প্রনয় : টাইগার… মেরিনকে পেলে?
টাইগার : না বস। কোথাও পাইনি।
প্রনয় : এমনভাবে বললে যেনো সারা দুনিয়া খুজেছো।
টাইগার : সরি বস।
প্রনয় : এয়ারপোর্টে খোঁজ নিয়েছো?
টাইগার : ইয়েস বস। কিন্তু তথ্য পাইনি। বস , ওর পুরো পরিবার তো এখানে। তাহলে ওদের মাধ্যনে ব্ল্যাকমেইল করে মেরিনকে খুজে বের করতে পারিনা।
প্রনয় : সেই ভয় যদি মেরিনের থাকতো তাহলে এরা কেউ এখানে আসতোনা।
টাইগার : তাহলে কি মেরিন জেনে বুঝে সবাইকে এখানে পাঠিয়েছে মরার জন্য?
প্রনয় : এখানে পাঠানোটা ওর পরিকল্পনা হতে পারে। কিন্তু এটা আমার রাজ্য। এই রাজ্যে সেটাই হয় যেটা আমি চাই। নাবিলকে এখানে নিয়ে এসো।
টাইগার : নাবিলে এখানে নিয়ে আসবো?
প্রনয় : হ্যা। সাথে বর্ষাকেও।
টাইগার : বর্ষা?
প্রনয় : হ্যা বর্ষা। নীড়ের ওই বন্ধু বর্ষা।
টাইগার : কিন্তু ওকে কোথায় পাবো?
প্রনয় : খুজে বের করবে।
টাইগার : চেষ্টা করবো বস।
টাইগার বেরিয়ে গেলো। প্রনয় ভেতরের দিকে গেলো।

নীলা : প্রান…📢
নীলার চিৎকারে সবাই ওর ঘরে উপস্থিত হলো। নীলার ঘুম ভেঙে গিয়েছে।
কনিকা : কি হয়েছে মা?
প্রনয় : নীলা তুমি ঠিক আছো?
মায়ের চিৎকারে খানিকটা ভয় পেয়ে প্রান্তিক নীড়ের কোলে চুপটি করে আছে।
প্রনয় : নীলা… কি হয়েছে তোমার?
নীলা চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো। সবাইকে দেখলো। কবিরের কোলে থাকা প্রান্তিককে দেখলো। বিছানা থেকে নেমে ধীর পায়ে প্রান্তিকের দিকে গেলো। প্রান্তিকের গালে হাত রাখলো। নীড় প্রান্তিককে ওর কোলে দিলো। নীলা প্রান্তিকের সারামুখে চুমু দিলো। এরপর বুকের সাথে শক্ত করে জরিয়ে ধরে রেখে কান্না করতে লাগলো। সবাই চুপচাপ দেখছে।
নীলা : বাবা…
নীলা আবারো ওক সারামুখে চুমু দিয়ে দিলো।
প্রান্তিক : ও মামনি… তুমি কান্না করছো কেনো? তোমাকে কি কেউ বকেছে? নাকি মেরেছে? তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে?
নীলা : না বাবা। আমার মোটেও কষ্ট হচ্ছে না। আমার খুব আনন্দ হচ্ছে। আমি তোমাকে যে পেয়েছি। আমার কি কষ্ট হতে পারে?
নীলা আবারো প্রান্তিকের সারামুখে চুমু দিলো। গলায় , ঘাড়ে , কানে চুমু দিলো। নীলিমার চোখ থেকে পানি গরিয়ে পরলো। প্রনয় এগিয়ে এলো নীলা এবং প্রান্তিকের দিকে। প্রনয় ওর কাধে হাত রাখতে নিলে নীলা সরে গেলো। প্রনয় নিজের হাত গুটিয়ে নিলো। প্রনয় প্যান্থারকে ডাক দিলো। প্যান্থার এলো।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
প্রনয় : ডক্টরকে আসতে বলো।
প্যান্থার : ওকে বস।
প্যান্থার বেরিয়ে গেলো। উপস্থিত সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো।
নীড় : লাভ…
প্রান্তিক : হ্যা চাচ্চু?
নীড় : চলো আমরা খেলা করি। এসো।
প্রান্তিক : ওকে।
নীলা : ও আআমার কাছেই থাকবে। সোনামনি… একটু মামনির কাছে থাকোনা। হামম…
প্রান্তিক : ওকে মামনি। চাচ্চু…আমি একটু মামনির কাছেই থাকি। পরে খেলা করবো।
নীড় মেরিনের বলা কথাটা কল্পনা করলো। প্রান্তিকের মাবাবা উপস্থিত আছে। তাই ওর ওপর এই দুজনের অধিকারই সর্বাধিক। নীড় কিচ্ছুটি না বলে মাথাটা নারিয়ে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে । ঘরে রয়ে গেলো প্রনয়নীলা এবং ওদের প্রান্তিক। নীলা ওকে কোলে নিয়ে বসলো। ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
প্রান্তিক : মামনি জানো মামমামও না মাঝেমধ্যেই আমাকে এভাবে কোলে নিয়ে বসতো আর আদর করে দিতো।
নীলা : মামমাম…
প্রনয় : মেরিন।
নীলা প্রনয়ের কথা শুনেও শুনলোনা।
প্রান্তিক : তুমি মামমামকে চেনোনা? মামমাম না তোমার বোন।।
নীলা : চচিনবোনা কেনো? আমি তো কেবল মজা করছিলাম। মামমাম তোমাকে আদর করে?
প্রান্তিক : অনেক অনেক আদর করে। সবাই আদর করে। কিন্তু মামমাম আর চাচ্চু সবচেয়ে বেশি আদর করে। এই এত্তোগুলো আদর করে।
প্যান্থার ডক্টর নিয়ে এলো।
প্যান্থার : বস…
প্রান্তিক : মামনি… ডক্টর কেনো? আমাকে ইনজেকশন দিবেনা তো?
প্রনয় : না বাবা।
প্রান্তিক : সবাই না বলে। মামমাম… চাচ্চু… চাচ্চু…
প্রান্তিক নীলার কোল থেকে নেমে ঘর থেকে বেরিয়ে নীড়ের কাছে ছুটে গেলো।নীড় দ্রুত নিজের চোখের কোনের পানি মুছে নিলো।
নীড় : কি হলো লাভ? কি হয়েছে?
নীড় ওকে কোলে তুলে নিলো।
প্রান্তিক : চাচ্চু… ডক্টর এসেছে আমাকে ইনজেকশন দিতে। বাঁচাও বাঁচাও।
নীড় মুচকি হাসলো।
নীড় : ডক্টর ইনেজকশন দিবেনা। চলো।

ডক্টর : নীলা ম্যাম… প্রথমে আপনার বিপিটা চেক করতে হবে। এরপর আপনাকে হিপনোটাইজ করবো। পরবর্তিতে কিছু করাতে হবে।
নীলা : আমি কিছু করাবোনা। আপনি এখন আসতে পারেন।
ডক্টর পরলো বিপদে। মাফিয়া কিং লিওর অর্ডার শুনবে নাকি নীলার?
ডক্টর : দেখুন… কিং লিওর অর্ডার করেছে। আমাকে তো আমার কাজ করতেই হবে।
প্রনয় : লিভ ডক্টর। প্যান্থার…
প্যান্থার ডক্টরকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
প্রনয় : নীলা.. ডক্ট…
নীলা : আমার নাম নিবেননা মিস্টার প্রনয় আহমেদ চৌধুরী। নিবেন না। আপনার কোনো অধিকার নেই আমার নাম নেয়ার।
প্রনয় : আমি… জানি আমি…
প্রনয়ের সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।
নীলা : আপনার চেহারা দেখে আমার ঘৃণা হচ্ছে। নিজেকে কীট মনে হচ্ছে । চোখের সামনে ভেসে উঠছে নিজের করা অপরাধ।
প্রনয় : ততোমার কোনো অপরাধ নেই নীলা। সকল অপরাধ তো আমার। সব ভুল সব অন্যায় আমার।
নীলা : না। কোনো ভুল আপনার নয়। সব ভুল আমার। কারন আমি আমার বাবার কথা শুনিনি। আমার বাবার কথা বিশ্বাস করিনি। চোখে মিথ্যা ভালোবাসার কাপর বেধে রেখেছিলাম। ভুলেই গিয়েছিলাম একজন বাবা কখনো নিজের সন্তানের খারাপ চায়না। কোনো ভুল আপনার নয়।
প্রনয় : ওই কিবরিয়াকে আমি ছারবোনা।
নীলা : কেনো? কিবরিয়া কি করেছে? কি করেছে ও? কিচ্ছু করেনি। ওকে আপনি সুযোগ দিয়েছিলেন। আর আপনাকে আমি। তাই সব দোষ আমার। কেবলমাত্র আমার। আর কারো কোনো দোষ নেই।
প্রনয় : নীলা…
নীলা : বলেছিনা আমার নাম নিবেনা। ঘৃণা হয় আমার নিজের নামটাকে। তোমার মুখ থেকে নামটা শুনলে ঘৃণা আরো বারে। তোমাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি। তোমার উপস্থিতিতে আমার নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। শুনতে পাচ্ছো তুমি? দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তোমার উপস্থিতিতে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। বিষাক্ত করে ফেলেছো তুমি আমার জীবনটাকে। আমার অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সবটা শেষ করেছো তুমি। সব সব সব…
নীলা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। প্রনয়ের চোখ থেকেও পানি গরিয়ে পরলো। নীড়ের বলা কথাগুলো মনে পরলো। নীড় ঠিক কথাগুলোই বলছিলো। কাঁদতে কাঁদতে নীলা জ্ঞান হারালো।
প্রনয় : নীলা… নীলা…
প্রনয় ওকে কোলে তুলে বিছানায় রাখলো। প্যান্থার ডক্টরকে নিয়ে এলো। ডক্টর নীলার চেকআপ করলো।
ডক্টর : ভয়ের কোনো কারন নেই। একটু উত্তেজিত হয়ে পরার কারনে এমন হয়েছে। কিছুক্ষন ঘুম দিয়ে উঠলে ঠিক হতো। হসপিটাল নিয়ে গিয়ে কিছু টেস্ট করালে তার ইনার কন্ডিশন বোঝা যেতো।

.

কবির : নিহাল…
নিহাল : হ্যা বলো।
কবির : তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
নিহাল : বলো।
কবির : তোমার দুই ছেলে এবং আমার দুই মেয়ের জীবনে কঠিন ঝড় উঠেছে। সবটাই আমাদের পারিবারিক দুশমনির জন্য। এর দায় আমরা এরিয়ে যেতে পারবোনা।
নিহাল : তুমি শেষ করতে চেয়েছিলে শত্রুতা। কিন্তু আমি শেষ হতে দিবোনা।
কবির : এখন সময় অতীতের ভুল বিচার করার নয়। এখন সময় বাচ্চাদের জীবনের ঝড় থামানো। নীলার অভিমান বৈধ আমি জানি। কিন্তু এই অভিমানের কাহিনি আর বারানো যাবেনা। এখনো সময় আছে ওদের ৪জনের জীবন ঠিক করার। প্রনয়কে এই অপরাধের জগৎ থেকেও বের করতে হবে।
নিহাল : নীলার পক্ষে কি প্রনয়কে ক্ষমা করা সহজ হবে? এই সম্পুর্ন ঘটনার একমাত্র ভুক্তভোগী নীলা।
কবির : একমত হতে পারলাম না। নীলা আমার মেয়ে। অনেক কষ্ট করেছে জানি। কিন্তু ও একমাত্র ভুক্তভোগী নয়। আমরা সকলেই ভুক্তভোগী। কিবরিয়ার জালে পা দিয়ে যেমন প্রনয় ভুল করেছে তেমন প্রনয়ের জালে পা দিয়ে নীলা ভুল করেছে। আমি আমার মেয়েকে মিথ্যা ভালোবাসা থেকে ফেরাতে পারিনি সেটা আমার ভুল। তদ্রুপ তুমিও নিজের ছেলেকে অন্যায় করা থেকে বিরত রাখতে পারোনি সেটা তোমার ভুল। আমার বাবা ভুল করেছে কিবরিয়া যে কবির রূপে ছিলো তার কথা শুনে। তার কথা শুনে মেরিনকে অন্ধকারে রেখেছে , ধোকা দিয়েছে। মেরিন বাবাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেছে॥ অথচ বাবা মেরিনকেই ধোকা দিয়েছে , বিশ্বাস ভেঙেছে। কনিকাও ভুল করেছে। মা হয়ে সন্তানকে ধোকা দেয়া ঠিক হয়নি। ভুল নীলিমা ভাবিও করেছে নীলাকে বন্দি বানিয়ে রেখে। ভুল নীড় করেছে। ভুল মেরিন করেছে। ওরা প্রতিশোধের খেলায় নেমেছিলো। তাই ওদেরও ভুল আছে। এই গল্পে প্রত্যেকেই অপরাধী এবং প্রত্যেকেই ভুক্তভোগী।
নিহাল : কিন্তু প্রনয় যদি কিবরিয়ার জালে পা না দিতো তাহলে এগুলো হতোই না।
কবির : যে কিবরিয়া এতো ভয়ংকর পরিকল্পনা করেছিলো সে নিশ্চয়ই প্ল্যান বি রেখেছিলো। প্রনয় কিবরিয়ার জালে পা না দিলে কিবরিয়া অন্য কোনো জাল বিছাতো। ধ্বংসের বাজনা বেজে উঠলে ধ্বংস কম অথবা বেশি হবেই।
নিহাল : হামম। তবে আমি নীড়মেরিনকে দোষ দিবোনা। ওদের ভুল ধরবোনা। কেনো জানো? ওরা যদি এই প্রতিশোধের খেলায় না নামতো তবে এই মহারহস্যের সমাধান হতোনা। প্রনয় লিও রূপে সবাইকে শেষ করে দিতো। নীলা বন্দি দশায় থেকেই মরে যেতো। কেউ ওর খোঁজই পেতোনা।মাঝখান থেকে নষ্ট হতো প্রানের জীবন। প্রান হয়তো প্রনয়ের সাথে থাকতো। কিন্তু ওর জীবনও এই আন্ডারওয়ার্ল্ডের সাথে যুক্ত হতো।
কবির : প্রনয়কে এই অন্ধকার জগৎ পরিত্যাগ করতে হবে।
নিহাল : হামম।
কবির : বোঝানো শুরু করো প্রনয়কে।
নিহাল : আমি না। তুমি বোঝাবে। আমার বিশ্বাস তুমি বোঝাতে সক্ষম হবে। আমার ছেলে আমার কথা আর শুনবেনা।
কবির : দুজন মিলেই বোঝাবো।

.

নীড় : কোথায় যেতে পারো মেরিন? এমন কোথাও কিভাবে চলে গেলে ?
তখন নীড়ের মাথায় কিছু একটা এলো। ও প্রনয়ের এই জগৎ থেকে বের হতে নিলো। কিন্তু বাধা দেয়া হলো।
নীড় : প্যান্থার… প্যান্থার।
প্যান্থার এলো।
নীড় : ওকে বলো যে আমাকে যেনো বের হতে দেয়।
প্যান্থার : আমি বসের অর্ডার ভিন্ন কারো অর্ডার ফলো করিনা।
নীড় : অর্ডার আমি এখনো দেইনি। আমি অর্ডার দিলে এতোক্ষনে দরজা খুলে যেতো।
প্রনয় : কি হচ্ছে এখানে?
নীড় : দরজা খুলতে বলো আমি বের হবো।
টাইগার : অনুমতি নেই। বের হলে লাশ বের হবে। জানিয়ে পুলিশকে?
নীড় : পুলিশকে আনার হলে সাথেই নিয়ে আসতাম। মেরিনকে খুজতে যাবো। আর ফিরেও আমাকে আসতেই হবে। প্রানকে আমি এই বিপদে রেখে তো যেতে পারিনা।
টাইগার : তুম…
প্রনয় : যেতে দাও একে।
টাইগার : বস…
প্রনয় : বললাম তো যেতে দাও।
নীড় বের হয়ে গেলো।

.

বর্ষা : তুমি আমার মাথার চুল কাটছো কেনো?
মেরিন : কাটবোনা কাটবোনা। অর্ধেক মাথা ন্যারা করা হবে।
বর্ষা : আশ্চর্য্য তো! তুমি কি পাগল?
মেরিন : না। সাইকো। আমি ভাবছি অর্ধেক ন্যারা হলে তোমাকে কেমন লাগবে! হাহাহা। তোমার নীড় তোমাকে দেখবে।
বর্ষা : তুমি এমন কেনো করছো?
মেরিন : আমার মুড সুইং হচ্ছে তাই। যেহেতু আশেপাশে কেউ নেই তাই তোমার ওপরই পরছে। তোমাকে জানে মেরে দিতাম। অথবা কোনো অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে পারতাম। কিন্তু এখন এই টাইপের কাজ হয়তো ঠিক না। তাই করলাম না।
বর্ষা : কেনো?
মেরিন : পাগলি… তুমি সৎমা হতে চলেছো।
বর্ষা : ককি?
মেরিন : হামম।
মেরিন বর্ষার মাথার অর্ধেক চুল ফেলে দিলো।
মেরিন : এগুলো বাচ্চাদের কাজ। রক্ত আমার প্রিয়। তুমি লাকি। হাতে কয়েকটা বাড়ি মারাই যায়। গুলি দিয়ে ক্ষতও করা যায়। কি বলো?
মেরিন হাহা করে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে থেমে গেলো।
বর্ষা : কি হলো? হঠাৎ হাসি বন্ধ হয়ে গেলো যে?
মেরিন : পায়ের শব্দ পাচ্ছোনা? এসে পরেছে।
বর্ষা : কে?
ধোয়া চলে এলো।
বর্ষা : আরে… ধোয়া কেনো?
নীড় : মেরিন… মেরিন..
বর্ষা : নীড়…
ধোয়া চলে গেলো। নীড়-বর্ষা একে অপরকে দেখতে পেলো।
নীড় : মেরিন কোথায়?
বর্ষা : এখানেই তো। ককোথায় গেলো?
নীড় : মেরিন… মেরিন…
নীড় পাগলের মতো খুজতে লাগলো। কোথাও পেলোনা। আশেপাশেও পেলোনা। বর্ষার কাছে এলো। ওর গলা চেপে ধরলো।
নীড় : মেরিন কোথায়? বলো মেরিন কোথায়?
বর্ষা : আআমি কিভাবে বলবো? আমি নিজেই তো বন্দি।
নীড়ের খেয়াল হলো যে বর্ষা তো ঠিকই বলেছে।
নীড় : চলো নিজের বাবার কাছে চলো।
নীড় বর্ষাকে নিয়ে প্রনয়ের কাছে গেলো। ওকে ভেতরে রেখে নীড় বেরিয়ে যেতে নিলো।
প্রনয় : তুমি এখন যেতে পারবেনা।
নীড় : আমাকে আপনি আটকাবেন?
প্রনয় : তোমাকে আমি বন্দি করবোনা। কিবরিয়া , নাবিল এবং বর্ষাকে একসাথে শাস্তি দেয়া হবে। ওদের শাস্তি দেখে তারপর যেও।
নীড় : ওদের শাস্তি দেখাতে আমার কোনো আগ্রহ নেই।
প্রনয় : মেরিনকে খুজতে আমি সাহায্য করবো। আমি সমগ্র শক্তি লাগিয়ে দিবো মেরিনকে খুজে পেতে।
নীড় : মেরিনকে খুজে পেলে আমিই পাবো। আর যে নিজের স্ত্রীকে খুজে পেতে পারেনি সে আমার স্ত্রীকে কিভাবে খুজে দেবে? আর তাছারাও মেরিন কোনো পাহাড়ি নদী নয় যার স্রোতের শব্দের মাধ্যমে তাকে খুজে পাওয়া যাবে।
প্রনয় : এরা তিনজন আমাদের প্রত্যেকের শত্রু। তোমারও , মেরিনেরও।
নীড় : শত্রু শত্রু খেলা আমি ছেরে দিয়েছি। আমি সবচেয়ে বড় শত্রু আপনাকে মনে করি। বুঝতে পেরেছেন?
নীড় বেরিয়ে গেলো।
প্রনয় : প্যান্থার এই ম্যাডামকে নাবিলের কাছে নিয়ে যাও। দুই ভাইবোনের দেখা তো হোক।
বর্ষাকে নাবিলের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো।

.

মেরিন : ফার্স্ট স্টেপ ডান। আরো দুইটা স্টেপ বাকি। কিছু ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ কঠিন থাকে এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ সহজ হয়। এক্ষেত্রে প্রথম ধাপ সহজ ছিলো। এবার দ্বিতীয় ধাপ। সেও নিজের কাজটা ঠিক ভাবেই করছে। ফসলের জমিতে নতুন ফসল লাগানোর জন্য পুরোনো ফসলের অস্তিত্ব মিটিয়ে দিতে হয়। জমিটা পরিষ্কার করা হয়। সেই জমিই এখন পরিষ্কার হচ্ছে । বর্ষা যেখানে যাওয়ার সেখানে চলে গিয়েছে। কিন্তু নীড় যে এতো দ্রুত পৌছে যাবে সেটা আমার জানা ছিলোনা। সর্বোচ্চ সময় একমাস। তাই দ্রুত এসে ভালোই করেছে।

নীড় : একটুখানির জন্য মেরিনকে পেলাম না। উফফ… কেনো হলো এমনটা? আর আমি সকালেই কেনো বুঝতে পারলামনা যে মেরিন মিরর ওয়ার্ল্ডে বা সেটার আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকবে। ও তো রহস্যময়ী। ওর কাজই রহস্য করা। নীড় নীড় নীড়… অধৈর্য্য হলে চলবেনা। মেরিনকে পেতে হলে মেরিনের মতো করে ভাবতে হবে। খান বাড়ি… একটিবার খানবাড়িতে দেখতে হবে। কিন্তু খান বাড়িতে খুজতে যাবো সেটাই তো স্বাভাবিক। ও এতো স্বাভাবিক জায়গায় তো থাকতে পারেনা।

.

পরদিন…
কবির : কোথায় যাচ্ছো?
নীলা : এখান থেকে অনেক দূরে। আমি আমার ছেলেকে সাথে নিয়ে যাবো। ওই লোকটাকে বলো আমাকে যেনো যেতে দেয়।।
কবির : মামনি আমার কথাটা শোনো…
নীলা : আপনার সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে আমি এসেছিলাম।
কবির : মাবাবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা যায়না মা।
নীলা : তাই বুঝি? তাহলে সেদিন কোথায় ছিলেন আপনি? বিশ্বাস কেনো করেননি? আমার তো মনেহয় আপনিই কিবরিয়া। তাই আমার সাথে কথা বলছেন।
কবির : মেয়ের সাথে বাবার সম্পর্কের মতো সুন্দর একটি সম্পর্ক কমই আছে। বসো। কথা আছে।

.

কিবরিয়া : আরে… কি হচ্ছে এসব? আমাকে দুধ দিয়ে গোসল কেনো করাচ্ছো? আশ্চর্য্য তো।
টাইগার : আপনার সময় পরিবর্তন হতে চলেছে। দুধ দিয়ে গোসল করানোর তো প্রয়োজন। লিও বস অর্ডার করেছে।
কিবরিয়া : বাবা বলেছে? তাহলে তো আমার সৌভাগ্য।
টাইগার বেরিয়ে গেলো। প্রনয় এবং প্যান্থার ভেতরে এলো।
কিবরিয়া : প্রনয় বাবা…
প্রনয় : ডিয়ার আংকেল প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নিজের স্থান নেয়ার জন্য প্রস্তুত তো?
কিবরিয়া : তুমি যেটা বলবে।

.

চলবে…