প্রতিশোধে প্রনয় পর্ব-৬০

0
613

#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 60
writer : Mohona
(do not copy please)

.

কিবরিয়া : তুমি যেটা বলবে।
প্রনয় : হামম। কিবরিয়া তোর জন্য একটি সারপ্রাইজ আছে।
কিবরিয়া : সারপ্রাইজ?
প্রনয় : হামম। প্যান্থার নিয়ে এসো।
প্যান্থার নাবিল এবং বর্ষাকে নিয়ে এলো।
প্রনয় : কি? কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ?
কিবরিয়া : এরা ক…
প্রনয় : কথা ভেবে বলতে হয়।
কিবরিয়া মনেমনে : না না… প্রনয় যখন এদেরকে এনেছে তখন ও নিশ্চয়ই জানে যে এরা আমার সন্তান।
প্রনয় : চুপ থাকার কারন?
কিবরিয়া : এতোদিন পর ছেলেমেয়ে দুইটাকে দেখলাম। বলার জন্য ভাষা খুজে পাচ্ছিনা।
প্রনয় : ভাষা এমনিতেও আর থাকবেনা।
কিবরিয়া : বর্ষা… তোমার এমন অবস্থা কে করেছে? নাবিল তুমি এমন শুকিয়ে গিয়েছো কেনো?
নাবিল-বর্ষা চুপ
কিবরিয়া : ওরা চুপ করে আছে কেনো?
প্রনয় : কারন ওরা জানে ধ্বংস হতে চলেছে।
কিবরিয়া : মানে?
তখন শমসের খান , কবির-কনিকা এবং নিহাল-নীলিমা ভেতরে ঢুকলো।
কবির : কি খবর কিবরিয়া? বন্দি দশা কেমন উপভোগ করছো?
নিহাল : নিজের প্রতিশোধের আগুনে নিজে পুরেছো । আমাদেরকে পুরিয়েছো। আমাদের সন্তানদের পুরিয়েছো। এমনকি নিজের সন্তানদেরকেও পুরিয়েছো। দেখো নিজের সন্তানদেরকে।
কবির : তোমার ধ্বংস চলে এসেছে। তোমার বাবা অপরাধী ছিলো তাই শাস্তি পেয়েছে। অপরাধীক বিরুদ্ধে সঠিক স্বাক্ষী দেয়া দোষের কিছু নেই।
কিবরিয়া : দেখো বাবা দেখো… তোমার সামনেই কেমন ব্যবহার করছে এই কবির।
শমসের : এখন তো লজ্জা করো। মানুষ হও। ভুল স্বীকার করা দুর্বলতার প্রতীক নয়। নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চাও।
কিবরিয়া : আপনার ছেলে আমার সাথে অন্যায় করেছে। প্রনয় বাবা এদের সবাইকে শেষ করে দাও। এরা সবাই তোমার এবং আমার শত্রু। আমাদের জীবন ওরা শেষ করে দিয়েছে। এরা বেঁচে থাকতে পারেনা।
নাবিল : বাবা… প্রনয় তোমার এবং আমাদের মৃত্যু হয়ে দারিয়ে আছে। ওদের নয়।
কিবরিয়া : প্রনয় বাবা…
প্রনয় : শসস… তুই সবকিছু বরবাদ করে দিয়েছিস। তোর জন্য আমার জীবন তো নষ্ট হয়েছেই সাথে আমার ছোটভাইটারও। আমার ছেলেটাও একটা বস্তুমাত্র হয়ে রয়েছে। যখন যে জিতেছে তখন তার কাছে জয় করা বস্তু হিসেবে রয়েছে। স্নেহ তো সকলের পেয়েছে। কিন্তু ও নিজের অজান্তেই বস্তু হয়েছিলো । আর এসবের পেছনে তুই আছিস। আমার স্নেহের মানুষগুলোকে কষ্ট দিয়েছিস আমার মাধ্যমে। এখন আমার পালা। নাবিল-বর্ষা তোর প্রিয় এবং তোর স্নেহের। আগে ওদের শাস্তি হবে। তুই দেখবি শাস্তি পেতে। যেটা হবে তোর জন্য সেটা কঠোর শাস্তি হবে। চলো সবাই।
নীলিমা : মানুষ হয়েছো। তাই শাস্তিটা মানুষের মতোই দিও।
প্রনয় : আমি কারো অ্যাডভাইস চাইনি। চলো সকলে।
সকলে বের হলো। টাইগার এবং প্যান্থার এলো। কিবরিয়া ও নাবিলকে একটি কাঁচের গোলকে ঢুকিয়ে দিলো। নিজেরাও পরেছে সুরক্ষিত পোশাক। বর্ষাকে রাখা হলো প্রায় উন্মক্ত।
প্যান্থার : নিয়ে এসো।
একটি বিশাল আকৃতির বক্স নিয়ে আসা হলো।
প্যান্থার : সবাই বাহিরে যাও। আমি বক্সটার মুখ খুলে দিয়েই চলে আসবো।
সকলে বের হলো।
নাবিল : কি আছে এ বক্সে?
প্যান্থার : নিজেরাই দেখে নাও।
প্যান্থার বক্সের মুখ খুলে দিয়ে বেরিয়ে গেলো। লাগিয়ে দিলো এই ঘরটির দরজা। কিছুক্ষন পর বক্সের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটি অজগর।
বর্ষা : না… অজগর বাবা বাবা…
নাবিল : বাবা ওরা বর্ষাকে অজগরের মুখে ছেরে গেলো।
কিবরিয়া : প্রনয়… কোথায় আছো তুমি? প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার মেয়েটার সাথে এমন করোনা।
বর্ষা : বাবা… অজগরটা বেরিয়ে আসছে বাবা। আমাকে বাঁচাও বাবা।
নাবিল : প্রনয়… আমার বোনকে ছেরে দে। না হলে আমি তোকে শেষ করে দিবো। ছার আমার বোনকে।
অজগর সম্পুর্নভাবে বক্সের ভেতর থেকে বের হলো।
নাবিল : বর্ষা স্থির থাক। তাহলে ও কোনো ক্ষতি করবেনা।
বর্ষা : এটা কোনো সাপ নয় অজগর। অজগর মানুষ খেকো হয়। আমাকে বাঁচাও।
নাবিল : বাবা কিছু করো।
কিবরিয়া : প্রনয়…
কিবরিয়া কাঁচটা ভাঙার চেষ্টা করতে লাগলো। নাবিলও। কিন্তু ভাঙতে পারলোনা।

.

প্রান্তিক : আর খাবোনা মামনি।
নীলা : তুমি তো খেলেইনা।
প্রান্তিক : তুমি তো গল্পই বললেনা। রাতের বেলা গল্প না শুনলে আমার খেতেই ইচ্ছা করেনা।
নীলা : কি গল্প শুনবে বলো?
প্রান্তিক : ঈশপের গল্প। কিন্তু যেগুলো শুনেছি সেগুলো বলা চলবেনা।
নীলা : তুমি কোনকোন গল্প শুনেছো সেগুলো আমি কিভাবে জানবো?
প্রান্তিক : কিন্তু মামমাম তো জানে।
নীলা : মামমাম গল্প শুনিয়েছে তো মামমাম তো জানবেই।
প্রান্তিক : হামম হামম এটাও ঠিক।
নীলা : তোমার মামমাম ছোটবেলায় আমার কাছে যে গল্প শুনতে সেটার কথা কি কখনো বলেছে?
প্রান্তিক : না।
নীলা : তাহলে আমিই আজকে শোনাবো তোমাকে।
নীলা প্রান্তিককে গল্প শোনাতে শোনাতে খাইয়ে দিলো।
নীলা : কেমন লাগলো গল্পটা?
প্রান্তিক : সুন্দর। আচ্ছা মামনি… মামমাম কোথায়? আসছেনা কেনো? আবার চাচ্চুকেও দেখতে পাচ্ছিনা। সারাদিন দেখলাম না।
নীলা : চাচ্চু মামমামকে নিয়ে আসতে গিয়েছে।
প্রান্তিক : ওও। তাহলে ঠিক আছে।
নীলা : মামমাম ও চাচ্চুকে খুব ভালোবাসো তাইনা?
প্রান্তিক : হামম হামম। আমি মামমাম ও চাচ্চুকে এতো… না না এতোএতো ভালোবাসি। জানো আমি একটুখানি ব্যাথা পেলেও না মামমাম আর চাচ্চু পাগল হয়ে যায়। আমি ওদের ছারা থাকতে পারিনা ওরাও আমাকে ছারা থাকতে পারেনা। মামমাম চাচ্চু আমাকে এতোএতো লাভ করে।
প্রনয় : মামনি-বাবাও তোমাকে ভালোবাসি সোনামনি। অনেকবেশি ভালোবাসি।
প্রান্তিক : চাচ্চু বলেছে তো। মামমামও বলেছে যে তোমরা আমাকে খুব ভালোবাসো। কিন্তু আমি জানি মামমাম চাচ্চু আমাকে বড়বাবা , দাদুদীদু , নানাভাই ও নানুর চেয়েও অনেক বেশি ভালোবাসে। আর তোমাদের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। আর আমিও।
প্রনয় : তুমি কাদেরকে বেশি ভালোবাসো? আমাকে-মামনিকে? নাকি চাচ্চু-মামমামকে?
প্রান্তিক : চাচ্চু মামমামকে।

.

মেরিন : খোঁজো খোঁজো নীড়। খুজে যাও আমাকে।
তখন মেরিনের ফোনটা বেজে উঠলো। মেরিন রিসিভ করলো।
মেরিন : হ্যালো।
নীলা : কি যাদু করেছিস আমার বাচ্চাটাকে ? হামম? আমি ওর মা কিন্তু সারাদিন মামমাম মামমাম করে। তুই আমার কাছ থেকে আমার ছেলেকে কেরে নিয়েছিস।
মেরিন : তুমি আমার নাম্বার কোথায় পেলে? যে নাম্বার নীড়-পিটার-জন এবং প্রনয় চৌধুরী পায়নি সেটা তুমি কিভাবে পেয়েছো? হাউ কুড ইউ?
কয়েক সেকেন্ড দুই দিকেই নিরবতা বিরাজ করলো। এরপর দুজনই হেসে দিলো।
নীলা : তুইও ড্রামা করিস দেখে আমি সাংঘাতিক অবাক হয়েছি। তুই তো অলটাইম সিরিয়াস।
মেরিন : ইয়াহ ইয়াহ। ওদিকের খবর কি?
নীলা : শয়তান মেয়ে বর্ষার এই অবস্থা করেছিস কেনো?
মেরিন : ওর এক হাত এবং এক পা কেটে দিতে ইচ্ছা করছিলো। কিন্তু ভাবলাম রক্তপাত করা ঠিক হবেনা।
নীলা : এখন এমন কাটাকাটি করলে আমি তোর প্ল্যান ফ্লপ করে দিতাম।
মেরিন : রিয়েলি?
নীলা : একদম ভয় দেখাবিনা। আমি কিন্তু এখন খুব রাগী হয়ে গিয়েছি।
মেরিন : হাসিও আসেনি এই জোকসে।
নীলা : চুপ থাক।
মেরিন : এখন বলো তো ওখানের কি অবস্থা?
নীলা : বর্ষা হয়তো আজকে অজগরের ডিনার হবে।
মেরিন : ওহ ওয়াও। জোস তো আইডিয়াটা। এমন শাস্তির কথাতো শুরুতে আমার মাথাতেও আসেনি। তো শাস্তিটা কে দিলো? বড়জন নাকি ছোটজন?
নীলা : ছোটজন তোর খোঁজে বের হয়েছে। ফিরেনি এখানে।
মেরিন : ওহ তারমানে মাফিয়া কিং লিওর প্ল্যান।
নীলা : হামম। তুই কোথায় আছিস?
মেরিন : সেকেন্ড প্লেসে।
নীলা : আমাকেও সাথে নিয়ে যেতি। আমি তুই এবং আমাদের দুই সন্তান… ৪জন মিলে সবার থেকে দূরে চলে যেতাম । কেউ আমাদের খুজে পেতোনা। কোনো ঝামেলা নেই। কেউ কষ্ট দেয়ার নেই।
মেরিন : আপু… দৌড়ঝাপের যে জীবনের সাথে আমি অভ্যস্ত সেটার সাথে তুমি পরিচিত নও। আর প্রানতো বাচ্চা।
নীলা : আর আমার যে ভাগনে বা ভাগনি আসছে সে কি বৃদ্ধ?
মেরিন : আপু… এই টপিক পুরোই আলাদা।
নীলা : আলাদা হতে পারেনা। একেবারেই এক। তোর পক্ষে যেমন নীড়কে ক্ষমা করা সম্ভব নয় তেমন আমার পক্ষেও প্রনয়কে ক্ষমা করা সহজ নয়। নীড় তো প্রনয়ের মতো অমন অপরাধীও নয়। নীড়ই ক্ষমা পাচ্ছেনা সেখানে তো প্রনয়ের ক্ষমা পাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা।
মেরিন : তাকে তুমি ক্ষমা করবে কি করবেনা সেটা তোমার ব্যাপার। আর নীড়… ও যদি তিনবার আমি পর্যন্ত পৌছাতে পারে তাহলে আমি আর হারিয়ে যাবোনা।
নীলা : তুই কি আর সহজ সহজ জায়গায় লুকাবি?
মেরিন : প্রথমটা সহজ ছিলো।
নীলা : তোকে কথায় কে হারায়? আমি কিভাবে বের হবো? সকলের ভীরে বিশেষ করে প্রনয়ের উপস্থিতিতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্রায় ২৫টা দিন ধরে আছি। আর পারছিনা। এতোদিন তো তবুও অজ্ঞান সেজে থেকেছি। এখন আর সম্ভব না।
মেরিন : তুমি বেরিয়ে এলে প্রনয় চৌধুরী তোমাকে বাঁধা দিলে সেটাও অন্যায়।
নীলা : বাধা প্রনয় দেয়নি। বাবা দিয়েছে।
মেরিন : ইউ মিন মিস্টার খান।
নীলা : হামম।
মেরিন : তুমি নিজের আদর্শবান চরিত্র থেকে কবে বের হবে বলো তো? বিরক্তকর লাগে আমার।
নীলা : আমি করবো বলো তো?
মেরিন : স্বামী সন্তান শ্বশুরবাড়ি বাবার বাড়ি নিয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে সংসার করো। রাখছি আমি।
মেরিন রেখে দিলো।
নীলা : এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা।

[
নীলার ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার দুদিন পর মেরিন নীলার সাথে দেখা করতে গেলো। নীলা নিজের মতো কবিতা বলতে , গান গাইতে ব্যস্ত। মেরিন কিছু না বলে নীলাকে দেখছে। চুপটি করে এক পাশে দারিয়ে আছে। নীলা একটি করে কবিতা বা গান শেষ করছে আর মেরিনের দিকে তাকাচ্ছে। নাচছে নাচছে আবার মেরিনের দিকে তাকাচ্ছে। ওর চোখের দিকে তাকাচ্ছে আবার চোখ সরিয়ে নিচ্ছে।
মেরিন : প্রনয় আহমেদ চৌধুরী বেঁচে আছে। তার কিছু হয়নি। মাফিয়া কিং লিও হয়ে আছে।
নীলা লাফাতে লাফাতে বলল : জানিতো। একটু আগেই তো অফিসে গেলো। বেঁচে না থাকলে কেউ অফিসে যায়?
মেরিন : কিবরিয়া কবির সেজে আছে। শীঘ্রই কিবরিয়ার শাস্তি হবে।
নীলা হাসতে লাগলো।
নীলা : কিবরিয়া কবির কি? চকোলেটের নাম?
মেরিন নীলার দিকে এগিয়ে গেলো।
মেরিন : মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যাক্তি কখনো কারো চোখের দিকে তাকাতে ভয় পায়না বা চোখ সরিয়ে নেয়না। প্রনয় আহমেদ চৌধুরীর জীবীত থাকার খবরে চোখে পানি ভাসছে। চোখের পানির ওপর নিয়ন্ত্রন থাকেনা। পাগল কারো বেঁচে থাকার কথা শুনে কান্না অন্তত করেনা।কিবরিয়া শাস্তির কথা তোমার মুখে স্বস্তি এনেছে। পাগলের শান্তি থাকতে পারে স্বস্তি নয়।
নীলা আবারও কবিতা বলতে লাগলো।
মেরিন : তোমার একটি সন্তান আছে।। ওই বাচ্চাটাকে কসমের মতো রাবিশ আকারে ব্যবহার করতে চাইনা।
নীলা থেমে গেলো। অন্যদিকে ঘুরে গেলো। মেরিন গিয়ে ওর মুখোমুখি দারালো। নীলা কান্না করতে লাগলো। ধীরেধীরে কান্নার বেগ বেরো গেলো। চিৎকার করে কাঁগতে লাগলো। মেরিন বাধা দিলোনা। নীলার কান্নাগুলো ওর মধ্যে জমে আছে। সেগুলো বের হয়ে যাওয়া প্রয়োজন। একটুপর এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে নীলার সামনে ধরলো। ওর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে
বলল : পানিটা পান করে নাও।
নীলা মেরিনকে জরিয়ে ধরলো।
মেরিন : কান্না করার সময় শেষ হয়েছে। কান্না করানোর সময় এটা।
একটু সময় নিয়ে নীলা স্বাভাবিক হলো।
মেরিন : তুমি সুস্থ থেকেও এতোবছর বন্দি কেনো ছিলে?
নীলা : বন্দি ছিলাম কারন আমি কিবরিয়া নয় বাবার কাছেই প্রানকে রেখে এসেছিলাম। আমি বের হলেই কিবরিয়া আমার ওপর আবার হামলা করতো। একবার বেঁচেছি বারবার বেঁচে যাবো তার কি ভরসা? মরতে চাইনি কারন ছেলেকে পুনরায় দেখতে চাওয়ার লোভটা ত্যাগ করতে পারিনি। মামনিই আমাকে বাঁচিয়েছিলো বলেই আমি বেঁচে আছি। মামনির রাগ জায়েজ আছে। ওই নকল প্রনয়কে দেখে বোঝার উপায় ছিলোনা যে ওটা প্রনয় নয়। মামনি আমাকে আঘাত করতো। তবে আঘাতে ঔষধও লাগিয়ে দিতো। মনের দুঃখে কষ্ট দিতো। কিন্তু কষ্ট দিয়ে নিজেও কষ্ট পেতো।
মেরিন : কিবরিয়া মিষ্টার খানকে কোথাও বন্দি করে রেখেছে। মিস্টার খানকে উদ্ধারের কাজ চলছে।
নীলা : সেসব পরের কথা। এখন এটা বল তো যে তুই এসবের মধ্যে কেনো আর কিভাবে এসবের জরিয়ে গেলি?
মেরিন : সেসব এখন অতীত। ভবিষ্যতের পরিকল্পনা শোনো।
মেরিন বলল।
নীলা : আমার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা।
মেরিন : বুঝতে চাইছোনা তুমি। কিন্তু এতোটাও কঠিন নয়। পরিকল্পনাটা হয়তো তোমাকে প্রনয় চৌধুরীর মুখোমুখি দার করাবে।
নীলা : না। ওই লোকটা সামনে আমি আর যাবোনা। ও আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে।
মেরিন : আপু… প্রনয় আহমেদ চৌধুরীর সাথে তোমার ব্যাক্তিকত হিসাবনিকাশ পরে করবে। কিন্তু এখন পরিকল্পনা মতোই কাজ করতে হবে। কিবরিয়া নামক শত্রুর শেষ করতে হবে।
নীলা : আমার প্রান কেমন আছেরে?
মেরিন : ভালো আছে।
নীলা : আমি কি আমার অভিনয় চালিয়ে যাবো?
মেরিন : হ্যা।
]

.

পরদিন…
প্রনয় : প্যান্থার… অজগরের ঘুমের ব্যবস্থা করো। ওকে বক্সে ঢুকিয়ে নিজের স্থানে রাখার ব্যবস্থা করো।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
প্যান্থার নিজের কাজ করতে গেলো। নীড়কে কল করলো। প্রথমবার ও রিসিভ করলোনা। দ্বিতীয়বার করলো।
নীড় : কি হলো? আমাকে কল করছো কেনো?
প্রনয় : বর্ষার মৃত্যু হয়েছে অজগরের হাতে। প্রথমে অজগর বর্ষার শরীরটাকে চেপে ধরেছে। এরপর ওর জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়েছে।
নীড় : কারো শাস্তি এবং স্বস্তি নিয়ে আমার কিছুই জানার নেই। আমি নিজের স্বস্তির সন্ধানে আছি। প্রান ভালো আছে?
প্রনয় : হ্যা। প্রান ভালো আছে। মেরিনকে খোঁজার জন্য আমি লোক লাগিয়েছি।
নীড় : তোমার কোন লোক মেরিনকে খুজে পাবেনা। তোমার সাহায্যও চাইনা।
প্রনয় : আমার ওপর অভিমানের চেয়ে এখন মেরিনকে খুজে বের করা জরুরী।
নীড় : আমার মেরিনকে আমি খুজে নিবো।
নীড় রেখে দিলো।
প্রনয় : চারিদিকে কেবল আর কেবল অভিমান ছরিয়ে পরেছে আমার জন্য। ভুলটাকে যেকোনো উপায়ে সংশোধন করতেই হবে। নীলা আমাকে ক্ষমা করলে পরিবারের কেউ আমাকে ক্ষমা করতে পারবেনা। মেরিনকে না পেলে নীড়ের কাছ থেকে ক্ষমা পাওয়াও অসম্ভব।

নীড় : কোথায় যেতে পারে মেরিন? মিরর ওয়ার্ল্ডের মতো এমন কোন জায়গা আছে যেখানে আমাদের মিষ্টিমিষ্টি স্মৃতি আছে? উফফ… মাথা কাজ করছেনা। মেরিন… বাংলাদেশ টু সিঙ্গাপুর ফ্লাইট। দেখতে হবে। প্যাসেঞ্জার লিস্টে মেরিনের নাম আছে কিনা দেখতে হবে।
নীড় এয়ারপোর্টে পৌছালো। প্যাসেঞ্জার লিস্টে মেরিনের নাম নেই। ফিনল্যান্ড চলে যায়নি তো? না না না।
নীড়ের মাথায় কিছু একটা এলো। হাসলো।
নীড় : আসছি মেরিন।
নীড় এয়ারপোর্ট থেকে বের হলো।
নীড় : হেলিকপ্টার নিয়ে যাবো? মেরিনের কাছে খবর চলে যেতে পারে। কিন্তু বাইরোড গেলে দেরি হবে।

.

মেরিন : কি দিন এসেছে… এই মনির হোসেনের বাসায় এসে থাকতে হচ্ছে। এর তিন বউকে দেখলে আমার আগের বারের থার্ডক্লাস আচরণের কথা মনে পরে যায়। নীড় এই জায়গার কথা কল্পনাও করতে পারেনি।
লিপি : ম্যাডাম… মেরিন ম্যাডাম।
মেরিন : কি?
লিপি : আপনার কি কিছু লাগবে?
মেরিন : আধাঘন্টা পরপর এসে এই প্রশ্ন করার মানে কি?
লিপি : না মানে ওই আর কি।
মেরিন হাতি পিস্তল ঘোরাতে ঘোরাতে
বলল : তোমার বাকি তিন সতীন কোথায়?
লিপি : ঘরে।
মেরিন : নতুনটার নাম যেনো কি?
লিপি : চাঁদনী।
মেরিন : ডেকে নিয়ে এসো তিনজনকে।
লিপি : জী ম্যাডাম।
লিপি রোজিনা , হেলেনা এবং চাঁদনীকে ডেকে নিয়ে এলো।
মেরিন : এই যে নতুন সদস্য ৬০+ বুড়ো তারওপর তিনটা বউ এবং এতোগুলো বাচ্চাকাচ্চা আছে। কোন দুঃখে আসছো এই বুড়ো ভৈরবের কাছে?
চাঁদনী : মাবাপে দিলে আমি কি করতাম?
মেরিন : ছেরে দিবে মাবাবাকে। যে মাবাবা বুড়ো টাকা দেখে মেয়েকে বিয়ে দেয় তারা প্রকৃতপক্ষে বিয়ে দেয়না। ব্যবসা করে। তুমি যদি মুক্তি চাও বা তোমার জীবনে যদি কোনো স্বপ্ন থাকে তাহলে বলতে পারো। আমি সাহায্য করবো।
চাঁদনী : গরীবের মাইয়ার নাকি আবার স্বপ্ন। এই বুইড়া ব্যাডার লগে সংসার করতে করতে একদিন বিধবা হয়ে যাবো।
লিপি : এ কেমন তরো কথা? উনি মরবে কেনো?
মেরিন : বুড়োটা কি অমর?

.

প্রনয় : তোমার জন্য লিলি… তোমার লিলি অনেক পছন্দ। তাইনা? ধরো…
নীলা সেগুলো নিলো। প্রনয়ের মুখে হাসি ফুটলো। তবে সেটা বেশিক্ষন স্থায়ী হলোনা। কারন নীলা ফুলগুলোকে নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে দিলো।
নীলা : তোমার হাত থেকে ফুল নিবো আমি? যে আমার জীবনটা বিষাক্ত করে দিয়েছে তার কাছ থেকে আমি ফুল নিবো? কি মনে করো তুমি আমাকে?
প্রনয় চুপ করে রইলো।
নীলা : আমি আমার ছেলেকে নিয়ে বের হবো। তোমার বন্দিশালায় আমি আর থাকতে পারবোনা। তোমার থেকে দূরে যেতে চাই।

.

চলবে…