#প্রতিশোধে_প্রনয়
part : 61
writer : Mohona
(do not copy please)
.
নীলা : তোমার থেকে দূরে যেতে চাই।
প্রনয় : দূরেই তো ছিলাম আমরা। কাছে তো কখনো ছিলামই না। আমার জন্য আমাদের মধ্যে বরাবরই দূরত্ব ছিলো। আমার ভুলের শাস্তি আমার ছেলেটাকে আর দিওনা। আমার সাথে থেকে আমাকে যতো ইচ্ছা শাস্তি দাও কিন্তু আমার থেকে দূরে যেওনা। আমাদের ছেলের জীবনটাও আর নষ্ট করো না। আমার ভুল সংশোধন করার একটা সুযোগ দাও। আমি সবটা ঠিক করে দিবো। তোমার হাসি ফিরিয়ে আনবো।
নীলা : আমার হাসি ফিরিয়ে আনবে… আমার জন্য কিছুই করতে হবেনা। তোমাকে নিজের ভুলও সংশোধন করতে হবেনা।তুমি কেবল আমাকে আমার জীবনের ৬টা বছর ফিরিয়ে এনে দাও।
প্রনয় চুপ করে রইলো।
নীলা : কি হলো? দিতে পারবে?
প্রনয় : নীলা… অতীত ঠিক করা আমার ক্ষমতার বাহিরে। কিন্তু আমি তোমাকে একটি সুন্দর ও হাস্যজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দিতে পারি। যেখানে আমি নিজের তরফ থেকে তোমাকে সর্বসুখ দেয়ার চেষ্টা করবো।
নীলা : ভবিষ্যৎ যতো সুন্দরই হোকনা কেনো মানুষের মন থেকে অতীত মুছে ফেলা যায়না। তোমার উপস্থিতি আমাকে যন্ত্রণা ভিন্ন কিছুই দেবেনা। মনে করিয়ে দেবে যে এই লোকটা আমার সব হাসি কেরে নিয়েছে। তোমার উপস্থিতিতে থাকা তো দূরের কথা নিশ্বাস নিতেও আমার কষ্ট হয়।
নীলা এগিয়ে গেলো প্রান্তিকের কাছে।
নীলা : সোনামনি…
প্রান্তিক : হ্যা মামনি?
নীলা : চলো।
প্রান্তিক : কোথায়?
নীলা : বাহিরে।
প্রান্তিক : সবাই রেডি?
নীলা : সবাই যাবেনা। কেবল আমি আর তুমি যাবো।
প্রান্তিক : মামমাম চাচ্চু আসবে?
নীলা : ওরা দু…
কবির : বাহিরে অনেক বৃষ্টি হচ্ছে।
নিহাল : দাদুভাই… বৃষ্টি দেখবে?
প্রান্তিক : মামনি যে বলল আমি আর মামনি বের হবো।
নিহাল : বৃষ্টির মধ্যে কি বের হওয়া যায়? আর রাত হয়ে গিয়েছে। চলো আমরা তিনজন মিলে বৃষ্টি দেখি।
কবির-নিহাল প্রান্তিককে নিয়ে বৃষ্টি দেখতে গেলো। কনিকা এসে নীলার কাধে হাত রাখলো। নীলা কনিকার হাতটা সরিয়ে দিলো। দূরে গিয়ে দারালো। কনিকা পর্দাটা সরিয়ে দিলো। বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে।
কনিকা : বৃষ্টির উপকার এবং অপকার দুইটাই আছে। বৃষ্টি এলে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের জন্য কষ্টের। সময়ের মধ্যে এলে কৃষকের আনন্দ , অসময়ে এলে কৃষকের বেদনা। বৃষ্টির পর পরিবেশ শান্ত হয়ে যায় , পরিষ্কার হয়ে যায় চারিদিক। সবটা ধুয়েমুছে যায়। আগুনে পুরলে সবকিছু শুদ্ধ হয়ে যায়। দুঃখ হলো আগুন এবং চোখের পানি হলো বৃষ্টি। যা আমাদের হৃদয়কে শুদ্ধ করে দেয়। ভাগ্য এবং সময় সবাইকে দ্বিতীয় সুযোগ দেয়না। আমি আমার সন্তানদের হারিয়ে আবার ফিরে পেয়েছি। প্রনয় তোমার অপরাধী । কিন্তু অপরাধ কি তোমারও ছিলোনা? তুমিও তো প্রনয়কে বিশ্বাস করার ভুল করেছো। যে কিবরিয়া এমন ভয়ংকর করেছে তারকাছে বিকল্প পরিকল্পনাও নিশ্চয়ই ছিলো। প্রনয়কে দিয়ে তোমাকে ফাঁসিয়ে দুই পরিবারের শত্রুতা বারানো ওর উদ্দেশ্য ছিলো। তুমি আর প্রনয় এই ফাঁদে পা না দিলে অন্য কোনো উপায়ে নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করতো। এই পরিকল্পনার প্রতিকার তো আমরা পেয়ে গিয়েছি। হয়তো সেই পরিকল্পনার প্রতিকার আমরা পেতাম না। ভাগ্য হয়তো দ্বিতীয় সুযোগ দিতোনা। কারন আল্লাহ যখন যা করে সেটা ভালোর জন্যই করে। প্রনয় তোমার অপরাধী। অপরাধের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। কারন প্রনয় যেটা করেছে সেটার শাস্তি না পেলে ভবিষ্যতে অনেক মেয়ের সাথে এমন অন্যায় হবে। তবে শাস্তিরও কিছু ধরন থাকে। তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি।
.
মেরিন : তোমরা তো বাংলা সিনেমা বানিয়ে ফেলেছো নিজেদের জীবনটাকে।
লিপি : ম্যাডাম… উনি তো বিয়ে করেছেন। ধর্ষন তো আর না। আর ধর্ম অনুযায়ী ধর্ষন করা পাপ।
মেরিন : তোমার কাছে ধর্মজ্ঞান চেয়েছি? যতোসব পাগল ছাগলের গোডাউন। তোমাদের সাথে কথাবার্তা যতো চলবে আমার মাথার তার ততো দ্রুত কাটবে। নিজেকে সামলাতে পারবোনা। খুন করতে ইচ্ছা করবে। চোখের সামনে থেকে দফা হও। গো গো গো।
৪জন বেরিয়ে গেলো।
মেরিন : উফফ… এদের মতো নারীদের অতি ভালোগিরির জন্য প্রতিবাদী মেয়েদের ভালো কাজেও বদনাম হয়। উফফ। আমি এখন একটা লম্বা ঘুম দিবো। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। এই কার্টুনদের চক্করে আমি নিজের সময় নষ্ট করছিলাম।
মেরিন দরজা লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো। আবার উঠে বসলো। নীড়ের কথা মাথায় এলো।
মেরিন : ওই অসভ্য বর্বর শয়তানটার ভাবনা মাথায় আসছে। উফফ। এয়ারপোর্ট গিয়েছিলো। গাধা একটা।
মেরিন আবারো শুয়ে পরলো। এপাশওপাশ করতে করতে ঘুমিয়ে পরলো।
.
নীড় : মনির হোসেনের বাড়ি। তুমি এখানেই আছো তুমি। আমার হৃদয় বলছে তুমি এখানেই। ওই মনিরের তো কুদৃষ্টি ছিলো মেরিনের ওপর। মেরিন এখানে কেনো এসেছে? উফফ…
নীড় রেগে ভেতরে ঢুকতে গিয়েও থেমে গেলো।
নীড় : না নীড় না… আওয়াজ পেলেই মেরিন আবার পালিয়ে যাবে। খুব সাবধানে যেতে হবে।
নীড় মনিরকে কল করলো।
মনির : ওরে বাবারে।
চাঁদনী : কি হলো?
মনির : তাইতো কি হলো? ওহ কল এসেছে। আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। আসলে বিপদ ঘরে আছে তো। তাই ভয়।
চাঁদনী : বেজে বেজে বন্ধই হয়ে গেলো।
মনির : অচেনা নাম্বার। চাঁদা চাইলে? না না কল করবোনা।
নীড়ই রেগে আবার কল করলো। মনির ভয়েভয়ে রিসিভ করলো।
মনির : হ্যাহ্যালো… ককে?
নীড় : তোর যম। আমি নীড় আহমেদ চৌধুরী বর্ষন।
মনির ভয় পেয়ে বিছানা থেকে নেমে দারিয়ে গেলো।
মনির : স্যার…
নীড় : হ্যা আমি। সদর দরজা খোলো। খুব সাবধানে। তোমার বউয়েরাও যেনো শব্দ না পায়।
মনির : আচ্ছা স্যার।
মনির খুব সাবধানে গিয়ে দরজা খুলল।
মনির : সালাম স্যার। এতো রাতে আপনি এখানে?
নীড় : শাট আপ।
বলেই নীড় সেই ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো যে ঘরটাতে ওরা ছিলো এখানে এসে।
মনির মনেমনে : জামাইবউ দুজনই ভয়ংকর। বউ এসে এক ভয়ে রেখেছে বর আরো আতঙ্ক নিয়ে এলো। এদের নাম নীড়-মেরিন না রেখে আতঙ্ক ও ভয় রাখা উচিত ছিলো।
নীড় : এই দরজার ওপাশেই তুমি আছো। এখন আর তুমি শব্দ পেলেও তোমার পালানোর সুযোগ নেই।
নীড় দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো। একটা সময় দরজা ভেঙেও গেলো।
নীড় : কট ইউ জান।
জন : জান না স্যার। জন বসে আছি।
নীড় : তুমি এখানে কেনো এসেছো?
জন : ম্যাম অর্ডার দিয়েছে।
নীড় : লিও বের হতে দিলো!
জন : দিয়েছে তো।
নীড় দেয়ালে একটা ঘুষি মেরে জনের দিকে এগিয়ে গেলো।
নীড় : পাগল পেয়েছো আমাকে?
জন : না স্যার। আমি নিজের ইচ্ছায় এখানে আসিনি। আমাকে অর্ডার করেছে ম্যাম।তাই আমি এসেছি।
নীড় : মেরিন কোন দিক দিয়ে বেরিয়েছে?
জন : আমি জানিনা স্যার। আমি তো এটাও জানিনা যে ম্যাম এখানে ছিলেন কি ছিলেন না।
নীড় : শাট আপ।
জন : ওকে স্যার।
নীড় : প্রান কেমন আছে?
জন : ভালো। আপনাদের দুজনকে অনেক মিস করছে।
নীড় : হামম। বাহিরে গিয়ে দারাও। আমি এক্ষনি আসছি।
জন ঘর থেকে বের হলো।
মনির মনেমনে : তওবা তওবা… এই ছেলেটাও ভেতরে ছিলো ওই মেরিনের সাথে? এই কারনেই হয়তো নীড় চুপিসারে এসেছে মেরিনকে হাতেনাতে ধরতে। আমি কি করবো? পালাবো?
নীড় পুরো ঘরটাতে চোখ বুলিয়ে নিলো।
নীড় : তুমি এখানে ছিলে মেরিন। ফিল করতে পারছি। বেশি দূর যাওনি। দ্রুত বের হতে হবে। কিন্তু কোন দিকে যাবো? উফফ…
জন : এভাবে কি দেখা হচ্ছে?
মনির মাথা এপাশওপাশ করে না করলো।
জন : বাকশক্তি নেই?
মনির : আছে।
জন : ওই ৪জন কারা?
মনির : আমার বিবিগন।
জন : একটা পাইনা আর তুমি ৪টা নিয়ে ঘুরো? বাপরে… ৪জন মিলে এটাকে মাঝেমধ্যে পিটাতে পারেননা?
নীড় ঘর থেকে বের হলো।
নীড় : চলো।
জন : চলুন স্যার।
মনির ঘরের দিকে উকি দিচ্ছে।
নীড় : এই যে চার বউয়ের এক স্বামী এটা আপনার বাসা। ওটা আপনার বাসারই একটি ঘর।এভাবে উকি মারছেন কেনো? তালা লাগিয়ে রাখুন খালিঘরে।
মনির : খালিঘর কিভাবে হবে? ম্যাডাম আছেন তো।
নীড় : একেবারে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দিবো। মেরিন থাকলে ওকে না নিয়ে বের হতাম?
মনির : ম্যাম ছিলেন তো…
নীড় : এখন নেই। চলো জন।
নীড় জনকে নিয়ে চলে গেলো। মনির এবং ওর চার বউয়ের মাথায় কিছু ঢুকছেনা।
.
সকালে…
প্রনয় : গুড মর্নিং শত্রুরা।
নাবিল : তোকে আমি মেরে ফেলবো। আমার বোনকে তুই মেরে ফেলেছিস।
প্রনয় : এখন তোর পালা।
কিবরিয়া : খবরদার বলছি প্রনয় আমার ছেলেকে কিছু করবেনা। আমার মেয়েকে তো তুমি কেরেই নিয়েছো। আমার ছেলের সাথে কিছু করলে আমি কিন্তু তোমাকে ছারবোনা।
প্রনয় হাহা করে হাসতে লাগলো।
প্রনয় : নিজের দিকে তাকা কিবরিয়া। পাতালের কীটের ন্যায় আছিস। অথচ আমাকে হুমকি দিচ্ছিস? হাহাহা।
কিবরিয়া : বায়ু এবং যুদ্ধ যেকোনো সময় পরিবর্তন হয় প্রনয়।
প্রনয় : যুদ্ধ! তোর সাথে যুদ্ধ কে করছে? তোকে তোর পাপের শাস্তি দিচ্ছি।
কিবরিয়া : আমি পাপী হলে তুমিও পাপী।
নাবিল : যে ভালোবাসার ব্যবসা করে , যে ভালোবাসাকে ব্যবহার করে যে নারীকে অসম্মান করে সে কি?
প্রনয় : আমি যার অপরাধী সে আমাকে শাস্তি দিবে। তোরা না। বোনকে মরতে দেখে ভালো লেগেছে তোর? এখন নিজের মৃত্যু দেখবি। প্যান্থার…
প্যান্থার : ইয়েস বস।
ওদেরকে সুইমিং পুলের সামনে নেয়া হলো।
প্রনয় : কি স্বচ্ছ পরিষ্কার পানি… উফফ। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই তোর রক্তে লাল হয়ে যাবে নাবিল। এই মাছগুলো চিনিস? এগুলো হলো মাংসাশী মাছ। আর এই পুলের চারিদিকে থাকা রেলিং দেখতে পাচ্ছিস? এগুলো তো আছে ইলেকট্রিসিটি। তুই মাছের হাত থেকে বাঁচতে সাতার কেটে উঠে আসতে নিবি। আর তখনই ঝটকা খাবি।
কিবরিয়া : নাবিলকে ছেরে দাও প্রনয়। আমি… আমি তোমার অপরাধী। ওকে কিছু করোনা। মু্ক্ত করো। ওকে।
প্রনয় হাহা করে হাসতে হাসতে মাছগুলোকে সুইমিং পুলে ফেলতে লাগলো।
কিবরিয়া : আমাকে যে শাস্তি দেয়ার দাও। নাবিলকে মুক্তি করো।
প্রনয় : প্যান্থার… নাবিলকে পানিতে ফেলো। ফেলার পর ইলেকট্রিসিটি অন করে দিবে।
প্যান্থার : ইয়েস বস।
প্যান্থার প্রনয়ের কথামতোই কাজ করলো।
প্রনয় : এনজয় দ্যা সিন ডিয়ার কিবরিয়া।
প্রনয় চলে গেলো।
.
মেরিন : নীড় ওখানেও চলে গেলো? উফফ… যাইহোক এখানের কথা নীড়ের ভাবনার অতীত হবে। যদি আমার ভূতের ভয় থাকতো তাহলে এখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না। আপুকে একটা কল করি। আপডেট নেয়া প্রয়োজন।
মেরিন নীলাকে কল করলো।
নীলা : কি খবর?
মেরিন : ভালোনা। তৃতীয় অবস্থানে আছি। শয়তানটা ওখানেও চলে গিয়েছিলো।
নীলা : তৃতীয় অবস্থানেও চলে যাবে। বড্ড ভালোবাসে তোকে।
মেরিন : ভালোবাসা না ছাঁই। ভালোবাসা বলতে কিছু নেই।
নীলা : তাহলে নীড়ের প্রতি তোর যে অনুভূতি আছে সেটা কি?
মেরিন : ঘৃণা… আমি কেবল ওকে ঘৃণা করি।
নীলা : তুই আমার ছোটবোন। তোর মনে নীড়ের জন্য কেবল ঘৃণা থাকলে তুই তিনটা ধাপ প্রস্তুত করতি না। দূরে কোথাও চলে যেতি। কারো কথা ভাবতিই না।
মেরিন : আপু… এসব ভিত্তিহীন কথার কোনো মূল্য আমার কাছে নেই। ওখানের খবর বলো।
নীলা নাবিলের কথাটা বলল।
মেরিন : এই প্রনয় চৌধুরী তো আমার আর নীড়ের চেয়েও এক ধাপ ওপরে। শাস্তি দেয়ার কৌশল তো দারুন।
নীলা : ভয়ংকর বল। মানুষটা খারাপ বলেই এসব করছে।
মেরিন : আপু… প্রনয় চৌধুরী যে নির্দোষ সেটা আমি বলবোনা। কিন্তু ওই তিনজন ব্যাক্তি এমন ভয়ংকর মৃত্যুই ডিজার্ভ করে।
নীলা : জীবন মৃত্যু অথবা শাস্তি দেয়ার আমরা কে বল তো?
মেরিন : আমরা কেউ নই। মাধ্যম বলতে পারো। আল্লাহ যার মৃত্যু যেভাবে রেখেছে তার মৃত্যু সেভাবেই হয়। প্রান কেমন আছে?
নীলা : তোদের দুজনের কথা বলেবলে অস্থির।
মেরিন : হামম হামম রাখছি।
মেরিন রেখে দিলো। একটুপরই প্রনয় নীলার ঘরে এলো।
নীলা : তোমাকে না বলেছি তুমি এই ঘরে আসবেনা।
প্রনয় : আমি কিছু বলতে আসিনি। আমি কেবল তোমাকে দেখতে এসেছি। চুপটি করে জড়বস্তুর মতো এক কোণে দারিয়ে তোমাকে দেখবো।
নীলা : তোমার উপস্থিতিই আমার সহ্য হচ্ছে না। তোমার উপস্থিতি আমার কাছে মৃত্যু যন্ত্রণার সমান।
প্রনয় : আমার উপস্থিতি খুব সময় ধরে তোমাকে সহ্য করতে হবেনা…
নীলা প্রনয়ের দিকে তাকালো।
প্রনয় : আমার অনুপস্থিতির পেছনে কেবল একটি বাধা আছে। অতীব শীঘ্রই সেই বাধাও দূর করে দিবো। এরপর না আমি থাকবো না আমার উপস্থিতি থাকবে। ব্যস এই অসহ্য আমিটা দূর হয়ে যাবো চিরতরে। এমন পাপীদের পরিনতি এমনই হওয়া উচিত।
প্রনয় চলে গেলো। নীলার বুকটা ভয় কাঁপতে লাগলো।
নীলা : কি বলে গেলো ও… ও কি করবে নিজের সাথে! যযা করার করুক। আমার কি?
শমসের : দিদিভাই…
নীলা : তুমি কেনো এসেছো এখানে?
শমসের : আগুন কখনো পানির ন্যায় এবং পানি কখনো আগুনের ন্যায় আচরণ করেনা দিদিভাই। সূর্যের কাছ থেকে স্নিগ্ধতা এবং চাঁদের কাছ থেকে প্রতাপ পাওয়া যায়না। সূর্য যতোই শক্তির আধার হোকনা কেনো চাঁদের শীতলতা ভিন্নও পৃথিবী অচল হয়ে পরবে। রাগ , জেদ এবং তেজ মেরিন দিদিভাইয়ের বৈশিষ্ট্য। সেগুলো ওর সৌন্দর্য্যও। ও তো সূর্য। তুমি তো চাঁদ।
নীলা : সময় চাঁদকেও বাধ্য করে সূর্যের ন্যায় আচরণ করতে।
শমসের : হয়না। যে শান্তি দেয় সে শাস্তি দিতে পারেনা। ভাগ্য বড় নিষ্ঠুর। সে কারো নিয়মে চলেনা। কারো কথা শোনেনা। কারো দুঃখ বোঝেনা। কারো সুখের মূল্য দিতে জানেনা। ভাগ্য নিজের নিয়ম এবং বেগে চলে।
নীলা : তোমরা মেয়েদেরকে সবসময়ই দুর্বল ভাবো। তাইনা দাদুভাই?
শমসের : কবির আমার একমাত্র ছেলে। আর কোনো সন্তান নেই আমার। তুমি এবং মেরিন দিদিভাই ওর সন্তান। দুজনই মেয়ে। তবুও একটি দিনের জন্যেও আমার মনে এই আফসোস আসেনি যে আমার নাতি নেই কেনো। মেয়েরা তো অমূল্য হয়। পৃথিবীর সবথেকে মূল্যবান রত্নের চেয়েও মেয়েরা দামি। কারন রত্নের মূল্য আছে। মেয়েরা তো অমূল্য।
নীলা : কথার জাল বুনে আমাকে আটকাতে পারবেনা দাদুভাই। তুমি মেরিনের সাথে মারাত্মক অন্যায় করেছো।
শমসের : কর্মফল তো প্রতিটি মানুষকেই ভোগ করতে হয়। আমি কিভাবে বাকি থাকবো দিদিভাই? অন্যায় শাস্তিও আমি পাবো।
.
নীড় পাঞ্চিং ব্যাগে ঘুষি মারছে।
নীড় : কি চাইছো তুমি মেরিন? কি তোমার পরিকল্পনা? এমন লুকোচুরি কেনো খেলছো? এটাতো তোমার স্বভাব বিরাধী কাজ। কিছুতো আছে তোমার পরিকল্পনা। কিন্তু কি? মাথা কাজ করছেনা আমার। আমি তোমাকে হারাতে পারবোনা। কিছুতেই না। এভাবে দুবার লুকোচুরি খেলার ছলে লুকিয়ে যাবেনা তো? নীড় নীড় নীড়… রিল্যাক্স। মেরিনের মতো চিন্তা কর। ও যদি হারিয়ে যায় তাহলে আর ওকে খুজে পাওয়া যাবেনা।
নীড় চুপটি করে বসলো। মেরিনের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো কল্পনা করছে। চোখ বন্ধ করে লম্বা নিশ্বাস নিলো।
নীড় : আমি তোমাকে মধুর স্মৃতি নয়। তোমাকে সবসময় নিজের বর্তমান করে রাখতে চাই। তুমি আমার জান। জান তো সবসময় জান হয়েই থাকে । জান চলে গেলে মানুষ মরেই যায়। তাই তুমি কখনো আমার অতীত হতে পারবেনা। আমার বর্তমান হয়ে থাকবে।
.
২দিনপর…
প্রনয় : মেয়ে মরতে দেখেছিস। ছেলে মরতে দেখেছিস। এবার তোর নিজের মৃত্যুর পালা। তোর হাত পা কিছুই আমি কাটবোনা। নিজের সন্তানদের এমন নৃশংস মৃত্যু দেখার পর নিজের যন্ত্রণা তো আর যন্ত্রণা মনে হবেনা। আমাদের জীবন বরবাদ করার জন্য তোর মাথা অনেক খাটিয়েছিস। তোর এই মাথাটাকে আমি ভাঙবো। গুড়োগুড়ো করে দিবো তোর মাথা।
প্রনয় রড দিয়ে কিবরিয়ার মাথায় বারি মারতে লাগলো।
কিবরিয়া : আ…
প্রনয় : চিৎকার করতে থাক।
প্রনয় ননস্টপ কিবরিয়ার মাথায় বারি মারতে লাগলো। একটা সময় কিবরিয়া মারা গেলো। প্রনয় হাহা করে হাসতে লাগলো। উন্মাদের মতো হাসছে।
প্রনয় : শান্তি পেলাম। তোকে মেরেই আমি আমার প্রকৃত প্রতিশোধ শেষ করলাম। এখন সময় প্রনয়ের।
প্রনয় রক্ত পরিষ্কার করে নীলার সামনে গিয়ে দারালো। সাদা পোশাক পরে।
প্রনয় : নীলা…
নীলা ওর দিকে তাকালো।
প্রনয় : জানি তুমি না করেছো তোমার নাম নিতে। আজই শেষবার তোমার নাম নিচ্ছি।
নীলা : নাটক বন্ধ করো। আর কোনো নাটকে ভুলবোনা আমি।
প্রনয় হাসলো।
প্রনয় : কিবরিয়াকে শেষ করার মাধ্যমে আমি আমার প্রতিশোধ শেষ করেছি। এবার প্রনয়ের জন্য এসেছি।
নীলা : আমার কাছে সে আশা রেখোনা।
প্রনয় : কোন মুখে রাখবো বলো? নিজেকে শাস্তি দিয়েই প্রনয়েরও সমাপ্তি ঘটাবো।
প্রনয় নিজের গানটা হাতে নিলো।
নীড় : শাস্তি স্বরূপ যখন নিজেকে মৃত্যুদন্ড নিয়েছোই তখন আমার হাতেই ভোগ করো।
প্রনয় নীড়ের দিকে ঘুরলো। গান তাক করে দারিয়ে আছে।
নীড় : আত্মহত্যার চেয়ে মৃত্যুদন্ড ভোগ করো।
প্রনয় হাত মেলে দিলো।
প্রনয় : বুক পেতে দিলাম। চালা গুলি।
নীড় প্রনয়ের বুকে গুলি করলো।
নীলা : প্রনয়…
.
চলবে…