প্রথম ভালোবাসার সুর পর্ব-১৪

0
2

#প্রথম_ভালোবাসার_সুর❤️
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৪

বাসার দরজা থেকে এত এত মানুষ দেখে মেহের অবাক হয়ে গেল।সবাই বেশ হাসি-খুশি।দরজা খোলার সাথে সাথে মেহেরকে দেখে মেহেরের মা বলতে লাগলো,

-“কেমন আছিস মা?”

আরবাজ মেহেরের মাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,

-“আন্টি আসসালামু আলাইকুম।শরীর ভালো আপনার?”
-“ওয়া আলাইকুুমুস সালাম বাবা।আমি ঠিক আছি।তোমরা যে এসেছো আমি ভীষণই খুশি হয়েছি!”
-“আন্টি এটা আপনার জন্য।”

বলে মিষ্টির প্যাকেটগুলো এগিয়ে দিলো।মেহেরের মা সেগুলো হাতে নিলেন।মেহের আরবাজের দিকে কোণাচোখে তাকালো।সে তার মায়ের সাথে কথা বলার আগে আগে এই লোকটা শুরু হয়ে গেছে।
আরবাজ সেদিক লক্ষ্য করে ভ্রু উঁচিয়ে তাকালো।মেহের মুখ ভেংচি কাটলো। মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,

-“তোমার শরীর কেমন আছে মা?”
-“এখন ঠিক আছি।ভিতরে আয়।আয় আয়।”

বলতে বলতে ভিতরে নিয়ে এলো।মেহেরের আত্মীয়দের মধ্যে একজন বলতে লাগলো,

-“তোর জন্য সেই সকাল থেকে বসে আছি।”

মেহের তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

-“মা!খালামণি রা কখন এসেছে?”
-“সকালে এসেছে।বলেছে জামাই আসবে বলে কথা।তাই আরকি।জামাই আদর করতে।”

মেহের মনে মনে ভীষণ রাগ হলো।সে ভেবেছিল তাকে দেখতে এসেছে সবাই।মেহের মুড অফ করে বললো,

-“আমি আমার ঘরে যাচ্ছি!”

বলে যেতে নিলে।পিছন থেকে মেহেরের ছোট খালা বলতে লাগে,

-“কিরে..কোথায় যাচ্ছিস।বোস এখানে।”
-“আমাকে দিয়ে আর কি করবে।যার জন্য এসেছ তার সাথেই গল্প করো।”

বলতে বলতে চলে গেল।মেহের খালারা হাসাহাসি করতে লাগলো মেহের কথা শুনে।আরবাজ সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।সিদ্দিক আলম বলতে লাগলেন,

-“অন্তত জামাইকে নিয়ে যা।”

মেহের নিজের ঘরের সামনে থেকেই বললো,

-“কেন?পা নেই নাকি।”

আরবাজের ভ্রু কুঁচকে গেল।এখানে এসে কি এই মেয়ের সাহস বেড়ে গেছে নাকি!শাপলা বেগম বলতে লাগলেন,

-“তুমি কিছু মনে করো না বাবা।চলো আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।”
-“থাক আন্টি।আমি পারব।”

বলে মেহের যেদিকে গেছে সেদিকেই পা বাড়ালো।মেহেরের বড় খালা আর ছোট খালা এসেছে।ওনারাই বসে বসে গল্প করছিলেন।শাপলা বেগম ওনাদের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলেন,

-“হয়েছে অনেক গল্প করা।চলো চলো আমরা রান্নাঘরে গিয়ে সব কাজ করে ফেলি।”

সিদ্দিক আলম ঘরের দিকে চলে গেলেন।মেহেরের ছোট খালা বলতে লাগলো,

-“বাচ্চাদেরও ডেকে নিই।ওরার সাহায্য করে দিবে।আর মেহেরও ভাই-বোন কে পেয়ে খুশি হয়ে যাবে।”
-“হ্যা আপা। তুমি বরং তিতলি,পিউ আর বাবলু কে ডেকে নাও।”
-“ঠিক আছে।”

সবাই রান্নার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল।এদিকে আরবাজ ঘরে ঢুকে দেখতে পেল মেহের আলমারি খুলে তার জামা-কাপড় বের করছে।আরবাজকে ঘরে ঢুকতে দেখে বলতে লাগলো,

-“আপনি কি ফ্রেশ হবেন?”

আরবাজের বেশ টায়ার্ড লাগছিল।গাড়ি চালিয়ে এসেছে।তাই মাথা নাড়িয়ে বললো,

-“হুম।”

মেহের হাতে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে বললো,

-“তাহলে অপেক্ষা করুন।”
-“মানে?”(ভ্রু কুঁচকে)
-“মানে এটা আমার ঘর।আর আমি আগে যাচ্ছি ফ্রেশ হতে।”

বলে মেহের ওয়াশরুমে চলে গেল।আরবাজ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো।আর রাগ নিয়ে বলতে লাগলো,

-“ও মনে হচ্ছে বেশিই বড়াই করছে!”

কিন্তু মেহেরের কারসাজি বুঝতে ওর সময় লেগে গেল।কেননা ততক্ষণে মেহের ওয়াশরুমে।আরবাজ গিয়ে মেহেরের বিছানায় বসে পড়লো। আর তার বাবাকে ফোন করে জানালো যে তারা পৌঁছে গেছে।অনেকসময় পর মেহের বের হলো চুল ঝাড়তে ঝাড়তে।আরবাজ উল্টো দিকে ঘুরে ফোনে কথা বলছিলো।ঘাড়ে পানির ছিটা পড়তেই আরবাজ পিছনে ফিরে বলতে লাগলো,

-“সমস্যা কি তো…”

এতটুকু বলে আটকে গেল। মেহের নিজের চুল ঝাড়তে ব্যস্ত তখনো।পড়নে কামিজের কিছুটা অংশ ভিজে থাকায় শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।
গলায় গালে এখনো পানির ফোঁটা! আরবাজের সব রেখে চোখ আটকে গেল মেহেরের গোলাপি ওষ্ঠ জোড়ায়।মেহের নিচের ঠোঁট দ্বারা উপরের ঠোঁট চেপে ধরে চুল ঝাড়তে ব্যস্ত।তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

-“কি যেন বলছিলেন?”

আরবাজ তখনো মেহেরের দিকে তাকিয়ে। মেহের আরবাজের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,

-“হ্যালো?ফ্রেশ হবেন না?”

আরবাজের হুঁশ ফিরলো।এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললো,

-“আব…যাব।”
-“কি যেন বলছিলেন?”

আরবাজ মেহেরের দিকে রাগ নিয়ে তাকিয়ে বললো,

-“বলছিলাম যে আমার মুখের সামনে এসে চুল ঝাড়ছো কেন?”
-“এক্সকিউজ মি!আমি মোটেও আপনার মুখের সামনে এসে চুল ঝাড়ছি না।”
-“তাহলে আমার গায়ে পানি পড়লো কোত্থেকে!”
-“আমি কি করে বলব!”(মুখ ভেংচি কেটে)
-“একে তো দোষ করেছ।আবার বড় বড় কথা!”
-“আমার ঘর, আবার আমাকেই… ”

আরবাজ মেহেরের হাত চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে বলতে লাগলো,

-“অনেক হয়েছে তোমার আমার ঘর আমার ঘর করা।এনাফ!”
-“হ..হাত ছাড়ুন।”
-“এখানে এসে তোমার ভাব বেড়ে গেছে তাই না।”
-“বাড়বেই তো।আমার ঘ…”

এতটুকু বলতেই আরবাজ মেহেরের মুখ চেপে ধরলো। তারপর বলতে লাগলো,

-“আরেকবার এ কথা বললে না…একদম!”
-“উমম….”

মেহের মুখ দিয়ে শব্দ করছে যা তার রাগের বহিঃপ্রকাশ। আরবাজ মেহেরের এতটা কাছে এসে আবারো মেহেরের মাঝে ডুবে যাচ্ছি। মেহেরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহের এদিকে প্রাণপণে চেষ্টা করে চলেছে নিজেকে ছুটানোর।

-“উমমম…”

আরবাজের ভ্রু কুঁচকে গেল।আর বলতে লাগলো,

-“কি সমস্যা! ”

মেহের ইশারা করলো তাকে ছাড়তে।আরবাজের হুঁশ এলো আর মেহেরকে ছেড়ে দিল।তারপর তাড়াতাড়ি করে টাওয়াল নিয়ে চলে গেল।মেহের জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করতে ১০-১৫ সেকেন্ড লাগলো।কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে লাগলো,

-“শয়তান একটা!”
.

খাবার টেবিলে বসে আছে আরবাজ আর মেহের। আরবাজের সামনে কত রকমের খাবার যে সাজানো হয়েছে! শ্বাশুড়ি আর খালা শ্বাশুড়ি রা মিলে আরবাজকে জামাই আদর করতে ব্যস্ত।এদিকে মেহের তো নিজের খালাতো ভাই বোনদের সাথে মজা করে খাচ্ছে। মেহের খেতে খেতে একবার আরবাজের দিকে তাকালো।আরবাজ অসহায় ভাবে বসে আছে।বেচারা কোত্থেকে শুরু করবে বুঝতেই পারছে না।এর মাঝেই তিতলি বলতে লাগলো,

-“দুলাভাই যদি এগুলা খেতে না পারেন তাহলে আজ কিন্তু এখান থেকে উঠতে দিব না।”

পিউ ও তাল মিলিয়ে বললো,

-“একদম ঠিক।এগুলা খেয়ে শেষ করতে হবে কিন্তু।”

মেহের হেসে বললো,

-“উনি নাকি ওয়েলি খাবার কম খান।আল্লাহ জানে এই সবগুলা খেতে পারবে কিনা।”

বাবলু মজা করে বললো,

-“তাই নাকি মেহের!তোর বর তো তাহলে খেতেই জানে না।আমি তো আমার শ্বশুরবাড়ি তে গিয়ে সব খাব!”

তিতলি বাবলুর মাথায় গাট্টা মেরে বললো,

-“তুই তো পেটুক।”

শাপলা বেগম ধমক দিয়ে বললেন,

-“খাওয়ার সময় এত কথা কিসের রে তোদের।”

আরবাজ রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে। আর মেহের তো সবার সাথে মজা করতে ব্যস্ত।
আরবাজ আর খেতেই পারছে না।জোর করে সব দিয়ে রেখেছে।তার মধ্যে এই ছেলে-মেয়ে গুলো কিসব বললো।কিন্তু আরবাজের পেটে আর জায়গা অবশিষ্ট নেই।তাই আর না পেরে বলেই বসলো,

-“আন্টি আমি আর খাব না।”

বলতেই ওরা সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।আরবাজ থতমত খেয়ে গেল।শাপলা বেগম চোখ রাঙাচ্ছেন।কিন্তু সেসব উপেক্ষা করে তিতলি বলতে লাগলো,

-“ইশশ!দুলাভাই, এমন অল্পতে হাঁপিয়ে উঠলে কি চলে বলুনতো।”

মেহেরও হাসছে।আরবাজের সব রাগ গিয়ে পড়ছে মেহেরের উপর।মনে মনে ভাবছে,

-“বাসায় চলো,পরে দেখাচ্ছি।”

শাপলা বেগম আর সাধলেন না।আরবাজকে বললেন ঘরে গিয়ে রেস্ট নিতে।আরবাজ ঘরে গিয়ে খাটে বসলো।গলা অবধি খাবার।বেচারা এমন জামাই আদর পেয়ে বেকায়দায়।
প্রায় এক ঘন্টা পর মেহের সহ ওর বিচ্ছু কাজিন গুলো এসে ঘরে ঢুকলো।আরবাজ আধশোয়া হয়ে ছিল।সে উঠার প্রয়োজন বোধ করলো না।সবে তো ঘুমটা এসেছিল।মেহের এসে বিছানায় বসে পড়লো।তিতলি এসে আরবাজের আরেকপাশে বসে বললো,

-“দুলাভাই,আপনি কিন্তু রাগ কইরেন না আমাদের সাথে।আমরা শুধু মজা করছিলাম।”
-“ওহ ইটস ওকে।”

বাবলু মেহেরের পাশে বসতে বসতে বললো,

-“তো তারপর বলো,কেমন কাটছে সংসার জীবন।আমাদের মেহের জ্বালাচ্ছে না তো?”

আরবাজ গম্ভীর গলাতেই বললো,

-“করলেও কি?”
-“তোমাদের মধ্যে কি এখনো প্রেম হয়নি নাকি?”(অবাক হয়ে)

আরবাজ মনে মনে ভাবতে লাগলো,

-“ঠেকা পড়সে ওর প্রতি প্রেম হওয়ার।”

বলে মেহেরের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।চোখ এড়ায় না মেহেরের।মনে মনে ভাবলো,

-“বয়েই গেল! ”

পিউ বলতে লাগলো,

-“বিয়েটা যে সিচুয়েশনে হয়েছে তখন প্রেম ছিল না।কিন্তু এখন তো প্রেম হওয়া উচিত।কি উচিড না তিতলি?”
-“একদম।”
-“আচ্ছা চলো আমরা আজ তোমাদের প্রেম হওয়ার জন্য একটা পথ খুলে দিব।”

আরবাজ ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“মানে।”

মেহেরও বলতে লাগলো,

-“এই কিসব বলছিস।”

তিতলি মজার ছলে বললো,

-“লজ্জা পাস না তো। আমরা আমরাই তো।”
-“কিসব বলছিস তোরা।চুপ কর।”
-“তেমন কিছুই না।আমাদের একটা প্ল্যান আছে।”

বলে তিনজন শয়তানি হাসি হেসে একে-অপরের দিকে তাকাতে লাগলো।
মেহের আরবাজের দিকে প্রশ্নবোধক চাহনি দিয়ে তাকালো।আরবাজও তাই!
কিন্তু ওরা টপিক চেন্জ করে অন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে বসলো।যা মেহেরের কাছে ভালো লাগলেও আরবাজের কাছে লাগছে না।কিসব পটরপটর আরম্ভ করেছে।আরবাজ একটু ঘুমাতে চেয়েছিলো।সব পন্ড করে দিল।আরবাজ ফোন ঘাটতে ঘাটতে বারান্দায় চলে গেল।নয়ত মাথায় ঝং ধরে যাবে।

চলবে…..