প্রথম ভালোবাসার সুর পর্ব-১৫

0
4

#প্রথম_ভালোবাসার_সুর❤️
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৫

রাতের বেলায় বেশ জমিয়ে আড্ডা হলো মেহেরদের বাড়িতে।আরবাজও আজ যোগ দিয়েছে।
সবার সাথে আনন্দ করতে আরবাজের বেশ অন্যরকম লাগছে।কাজ থেকে ছাড়া পেয়ে এমন মুহুর্ত সে কবে কাটিয়েছে তা মনে পড়ছে না।মেহের তো সবাইকে পেয়ে শ্বশুরবাড়ির কথা ভুলতে বসেছে।তার হয়ত মনেই নেই যে তার বিয়ে হয়েছে। আরবাজ এটাই ভেবে চলেছে মেহেরকে অনবরত কথা বলতে দেখে।
আড্ডা শেষে রাত প্রায় এগারোটার দিকে ঘরে ঢুকলো আরবাজ।কিন্তু লাইট নিভানো।আরবাজ অবাক হলো।যাওয়ার সময় তো লাইট অন ছিল।হয়ত মেহের অফ করেছে!ভেবে আরবাজ লাইট জ্বালালো।
কিন্তু যা দেখলো তাতে সে অবাকের শীর্ষে!পুরো ঘর আর খাট ফুল দিয়ে সাজানো।এসব কে করলো!
আরবাজের ভাবনার মাঝেই মেহের এসে উপস্থিত হলো।আরবাজকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পিছন থেকে বলতে লাগলো,

-“এভাবে সং এর মত দাঁড়িয়ে আছেন কেন?আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।”

বলতে বলতে ঘরের ভিতরে ঢুকতেই মেহেরও অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।আর বলতে লাগলো,

-“এসব কি!”

আরবাজকে কথা বলতে না দেখে মেহের বলতে লাগলো,

-“আরে…কিছু তো বলুন।”

মেহের কিছু সময় চুপ রইলো।তারপর বলতে লাগলো,

-“আপনি!আপনি এসব করেননি তো?”

আরবাজের ভ্রু কুঁচকে গেল।আর বলতে লাগলো,

-“মানে!”
-“মানে মানে করছেন কেন?আপনি এমন চুপ কেন?এসব সাজগোজ আপনি করেননি তো?”
-“রিডিকিউলাস!আমি কেন করতে যাব।”
-“আমি কি করে জানব?”

আরবাজ রাগ নিয়ে তাকালো মেহেরের দিকে।শক্ত গলায় বললো,

-“না জেনে বলাও উচিত নয়।”
-“হতে পারে এতদিন পর আপনার ভিতরের পুরুষত্ব জাগ্রত হয়েছে।”(বাঁকা চোখে তাকিয়ে)
-“হোয়াট ননসেন্স আর ইউ সেয়িং!”(রাগী গলায়)
-“মনে হলো জাস্ট।রাগ করার কি আছে।”
-“আমার উপর মিথ্যা দোষ দেয়ার সাহস কি করে হয় তোমার।”

মেহের কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিছন থেকে তিতলি,পিউ আর বাবলু এসে দাঁড়ালো। তিতলি দৌড়ে এসে দুজনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,

-“হয়েছে হয়েছে! তোমরা তো ঝগড়া শুরু করে দিয়েচ ভাই!আমরা তো তোমাদের দুজনকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য এত কিছু করলাম।”

বাবলু ও তাল মিলিয়ে বললো,

-“একদম!আমরা সবাই তোদের জন্য এতকিছু করেছি।আর তোরা দুজন ঝগড়া শুরু করে দিয়েছিস।”

মেহের অবাক হয়ে বললো,

-“এক মিনিট!তোরা এসব করেছিস। মানে…কেন?”

আরবাজও ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“এসব করেছ কেন তোমরা?”

পিউ বলতে লাগলো,

-“আরে কেন করেছি মানে!যেন তোমরা একসাথে সময় কাটাতে পারো।তোমাদের প্রেমটা তাড়াতাড়ি হয়।”

আরবাজ রাগ নিয়ে বলে উঠলো,

-“এসব সরাও এখনি!”

মেহের মুখ ভেংচি কেটে বললো,

-“প্রেম হওয়ার জন্যও ভালো মনের মানুষ লাগে।আর এসব সাজালেই না প্রেম হয় না।পাগল নাকি তোরা।”
-“ভালো মানুষ মানে!আমাকে কি তোমার খারাপ মনে হয়?তুমি কি আমায় খারাপ বললে।”

তিতলি দুজনকে থামিয়ে বললো,

-“হয়েছে হয়েছে। আর ঝগড়া না।মোট কথা হলো আমরা এসব সাজিয়েছি।এবার এসব নষ্ট কেন করব।তোমরা ঝগড়া বন্ধ করো।”

বাবলুও তাল মিলিয়ে বললো,

-“নষ্ট কেন করব এসব।তোমরা এত আনরোমান্টিক কেন বলোতো।”
-“কারণ আমাদের মধ্যে রোমান্টিকের কিছু নেই।হওয়ার কথাই না।হতেই পারে না।”(মেহের)

বেশ অনেক কথাবার্তা আর ফাজলামো করে তিতলি,পিউ আর বাবলু বের হয়ে গেল।ঝগড়া করে মেহের হাঁপিয়ে উঠলো।আরবাজেরও আর ইচ্ছে হচ্ছে না ঝগড়া করার।এখন একটা ঘুম দরকার।আরবাজ বিরবির করে বলতে লাগলো,

-“কই আসলাম আমি!সব পোলাপান পাকনা।কিসব করে রেখেছে।ওদের কি আমরা বলেছি এসব করতে?আর মেহেরও একটা শয়তান মেয়ে।ওরও মত আছে।সব আমাকে বেকায়দায় ফেলার ধান্ধা।আমি সিউর।”

মেহের দেখলো আরবাজ বিরবির করছে। কিন্তু সেটাকে পাত্তা না দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আরবাজ তখনো বিরক্ত হয়ে বিরবির করে তিতলি,পিউ আর বাবলু কে বকেই চলেছে।হঠাৎ চোখ গেল বিছানায়।মেহের ফুলের পাপড়ি সরিয়ে শুয়ে পড়েছে। আরবাজ দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে বলতে লাগলো,

-“তুমি এখানে কেন?”
-“আমি এখানে কেন মানে? আমি তো এখানেই থাকব ”
-“আরে এখানে কেন মানে এখানে ঘুমাবে নাকি তুমি।”
-“অবশ্যই। আমার বিছানা।”
-“তাহলে আমি কিভাবে ঘুমাব!”
-“হাউ ফানি!আমি কি করে বলব সেটা?”
-“আশ্চর্য! তোমার ঘরে তো সোফাও নেই।”
-“সো হোয়াট!আমার ঘর।আমি বিছানায় শোবো।”
-“হবে না।উঠো।”

মেহের শোয়া থেকে উঠে বসে ভ্রু নাচিয়ে বলতে লাগলো,

-“রিভেন্জ!”

আরবাজ অতীতে চলে গেল।সেও তো মেহেরকে সোফায় শুতে বলেছিল।কিন্তু এখানে তো সোফাও নেই।মেহের বলতে লাগলো,

-“আমি তো ঘুমালাম।আপনি চাইলে এইযে এই বালিশ টা নিয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়তে পারেন।”
-“আমি নিচে ঘুমাতে পারি না।”
-“আমি কি করব তাহলে।”

বলে বিছানার একপাশে শুয়ে পড়লো।আরবাজ এই ঠান্ডার মধ্যে কিছুতেই মেঝেতে শুতে চাচ্ছে না।শেষমেশ বাধ্য হয়ে মেহেরের আরেকপাশে দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে বললো,

-“ডোন্ট মাইন্ড।আমি এপাশে শুবো।”

মেহের ঘাড় ঘুরিয়ে চোখ বড় বড় করে বললো,

-“ওমা কেন?”
-“কারণ আমি নিচে ঘুমাতে পারি না!”
-“আপনি তো আমার সাথে ঘুমাতে চাননা বলেছিলেন।”
-“বাধ্য হয়ে শুতে হচ্ছে। (দাঁতে দাঁত চেপে)

মেহের মুখ ভেংচি কেটে ঘাড় ঘুরিয়ে ঠিক হয়ে শুলো।
আরবাজ বালিশ ঠিক করতে করতে বললো,

-“এপাশে আসার চেষ্টাও করবে না।”

মেহের চোখ বন্ধ করে ফেলেছিল।এবার মুখে হাসি ঝুলিয়ে বললো,

-“আমার ঠেকা পড়েনি।”

বলেই মেহের চোখ বন্ধ করে ফেললো।আরবাজ ফোন অন করে নিউজফিড ঘাটতে লাগলো।
অভ্যাসবশত সকাল সকাল ঘুম ভাঙতেই মেহের তার ঘাড়ের কাছে গরম নিঃশ্বাস অনুভব করলো।পাশে তাকিয়ে দেখতে পেলো আরবাজের মুখটা ঠিক তার ঘাড়ের কাছে।আর কাছে থাকায় গরম নিঃশ্বাস ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে।আরবাজের একটা পা মেহেরের পায়ের উপর।মেহের সটান হয়ে শুয়ে আছে।আরবাজের নিঃশ্বাস গুলো যেন বারবার ঘাড়ের কাছে আঁচড় কাটছে।আরবাজকে এতটা কাছে দেখে মেহের ঢোক গিললো।চোখ বড় বড় করে অন্যপাশে তাকিয়ে দেখলো তার জায়গাটা খালি।অর্থাৎ মেহের নিজেই এই পাশে এসেছে। এবার কি হবে!মেহের বিরবির করলো,

-“ভাল্লুক টা তো সব দোষ আমায় দেবে।কিন্তু এও তো আমার উপরে হাত-পা দিয়ে রেখেছে।কি একটা অস্বস্তি কর পরিস্থিতি।”

মেহের অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছে। জোরে জোরে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করে আরবাজকে সরাতে নিলে আরবাজ যেন আরেকটু আকড়ে ধরলো।মেহেরের চোখ যেন এবার কোটর থেকে বের হয়ে আসবে।আরবাজের স্পর্শে মেহেরের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অবস্থা। মেহের আর সরানোর উপায় না পেয়ে মিনমিন করে ডাকলো,

-“মিস্টার আরবাজ!শুনতে পাচ্ছেন?মিস্টার আরবাজ!”
-“…..”
-“এইযে!উঠুন।”

বলে এক হাত দিয়ে আরবাজের কাঁধে ঠেলা দিল।
আরবাজ ভ্রু কুঁচকে জোরে শ্বাস ছেড়ে শব্দ করলো,

-“উমমম….”

এবার যেন মেহেরের হৃদপিণ্ড টা বের হয়ে হাতে চলে আসবে।এবার মেহের বেশ জোরেই বললো,

-“উঠুননননন!”

আরবাজের চোখ খুলে গেল।নিজেকে মেহেরের গালের কাছে পেয়ে আরবাজ চট করে উঠে বসলো।মেহের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বললো,

-“এসব কি মেহের।”

মেহের ধীরে ধীরে উঠতে বসতে বসতে বললো,

-“এটা তো আমারও প্রশ্ন মিস্টার আরবাজ।আপনার ঘুমের স্টাইল এত বাজে কেন?”

আরবাজ ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“মোটেও না।তুমি এদিকে এসেছ।”
-“ওকে মানলাম আমি এসেছি।তাই বলে আপনি এভাবে আমার উপর…”
-“শাট আপ।”

মেহের মুখ বাঁকিয়ে বললো,

-“সত্যি কথা বললে সবারই গায়ে লাগে।”
-“লিসেন!দোষটা তোমার।”
-“হ্যা আমি তো মানলাম ই।আপনিও দোষটা স্বীকার করুন না।”
-“আমার কোনো দোষই নেই।”

মেহের মুখ ভেঙালো।আরবাজের এই জিনিসটা মোটেও পছন্দ না।সে রাগ নিয়ে বললো,

-“একদম মুখ ভেঙাবা না।”

মেহের ফের ভেঙিয়ে বললো,

-“ভেঙাবো সমস্যা আপনার?”
-“আবার করছো!না করেছি আমি তোমায়।সকাল সকাল আমার মাথা গরম করো না।”
-“আপনাকে ভয় পাই নাকি আমি।”

বলে আবার ভেঙাতেই আরবাজ মেহেরকে বিছানার সাথে চেপে ধরলো।মেহের চুপ হয়ে গেল।গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলো আরবাজের দিকে।আরবাজ গম্ভীর গলায় বললো,

-“একদম চুপ।মুখ বন্ধ।”
-“আপ….”
-“শশশ!”

বলে মুখ চেপে ধরলো।তারপর বলে উঠলো,

-“এবার আমি ঘুমাব।চুপচাপ উঠে চলে যাবে।বিরক্ত করবে না আমায়।আমার ঝগড়ার মুড নেই।”

বলেই মেহেরকে ছেড়ে দিল।মেহের কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

-“আপনি আমার সাথে এমন করেন কেন সবসময়।”
-“ডোন্ট টক এগেইন।”

বলে আরবাজ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে লাগলো।মেহের উঠে দাঁড়ালো।আর ফন্দি আঁটতে লাগলো কিভাবে আরবাজকে বাঁশ দেয়া যায়।এই লোকটা কথায় কথায় তার মুখ চেপে ধরে।আরবাজের চোখ বন্ধ দেখে মেহের আরো কয়েক দফা ভেঙালো জিভ বের করে।তারপর বিরবির করলো,

-“এবার আয় দেখি।”

মেহের ওয়াশরুমে চলে গেল।ফ্রেশ হয়ে বের হলো হাতে এক মগ পানি নিয়ে।পা টিপে টিপে আরবাজের সামনে এলো।মহারাজ কি সুন্দর ঘুম!আর কিছু না ভেবে মেহের আরবাজের মুখের উপর পানি ঢেলে দিল।এই শীতের সকালে ঠান্ডা পানিতে আরবাজের ঘুম উড়ে গেল আকাশে।চমকে উঠে সে বসে পড়লো।বিছানা সহ ভিজে গেছে।মুহুর্তেই আরবাজ কাঁপতে লাগলো।মেহেরকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাগ নিয়ে বলতে লাগলো,

-“হোয়াট ওয়াজ দ্যাট!”

মেহের হাসতে হাসতে কিছু বলার মত শব্দই পাচ্ছে না।আরবাজের অবস্থা দেখে ভীষণই হাসি পাচ্ছে। পেটে হাত দিয়ে হাসছে সে।

চলবে…..