প্রথম ভালোবাসার সুর পর্ব-১৬

0
4

#প্রথম_ভালোবাসার_সুর❤️
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১৬

শীতে কাঁপতে কাঁপতে আরবাজ এসে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে পড়লো।আজ মেহেরের জন্য তার এ অবস্থা!মেহেরকে পেলে সে আস্ত রাখবে না।কিন্তু মেহের সেই যে তার উপর পানি ঢেলে দৌড় দিয়েছিল এখনো লাপাত্তা।আরবাজ চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকালো।রান্নাঘর থেকে আওয়াজ আসছে।হয়ত সবাই রান্নাঘরে। একটু পরেই পিউ রান্নাঘর থেকে বের হলো।আরবাজকে সোফায় বসে থাকতে দেখে বলতে লাগলো,

-“খালামণি,দুলাভাই উঠে গেছে।”

বলে এসে আরবাজের পাশে বসতে বসতে বললো,

-“কি ভাইয়া কাঁপছেন কেন এভাবে?”

আরবাজ কোনোমতেই নিজের কাঁপা কাঁপি থামাতে পারছে না।কাঁপুনি টা একদম ভিতর থেকে আসছে।তবুও পিউ এর কথার জবাবে বললো,

-“ক..কই না তো।”

পিউ মুখ টিপে হেসে বললো,

-“স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কাঁপছেন। আবার চুল থেকে পানি পড়ছে।মাথাটা ভালো করে মোছার দরকার ছিল।”

বলে হো হো করে হাসতে লাগলো।আরবাজ পড়লো বেকায়দায়। কি বলবে বুঝতে পারছে না বেচারা।আজ মেহেকে পেলে হয়!পিউ আবারো কিছু বলতে যাবে এমন সময় শাপলা বেগম রান্নাঘর থেকে বের হয়ে এলেন।আরবাজের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,

-“বাবা এসো খেয়ে নাও।”
-“জ..জ্বী আন্টি।”
-“এভাবে কাঁপছো কেন বাবা?”(অবাক হয়ে)
-“না আন্টি কই না তো।”

আরবাজ যথার্থ চেষ্টা করছে নিজেকে শক্ত রাখার।পিউ মজা করে বলতে লাগলো,

-“খালামণি,সকাল সকাল গোসল করলে ঠান্ডা তো লাগবেই।”

শাপলা বেগম বেশ লজ্জায় পড়ে গেলেন।পিউ কে চোখ রাঙিয়ে বললেন,

-“এই চুপ কর।এসো বাবা।”

বলে লজ্জায় সেখান থেকে চলে গেলেন।পিউ তো বেশ মজা নিচ্ছে আরবাজের।আরবাজের বেশ রাগ হলো ওর প্রতি।একদম বোনের মত হয়েছে।কি লজ্জাটাই না দিলো।আরবাজ কি আর বলবে।গিয়ে টেবিলে বসে পড়লো। মেহেরের বড় খালা এসে নাস্তা সাজিয়ে দিতে দিতে বললেন,

-“বাবা ঠিক করে ঘুমিয়েছ তো?কোনো অসুবিধা হয়নি?”

আরবাজ হালকা হেসে না বোধক মাথা নাড়ালো।তারপর বড় খালা চলে যেতেই আশেপাশে তাকিয়ে মেহেরকে খুজতে লাগলো।তিতলি ঘর থেকে বের হলো এতক্ষণে। টেবিলে বসতে বসতে বললো,

-“কি ভাইয়া!কাকে খুঁজেন?”
-“কাউকে না।”(গম্ভীর গলায়)

আরবাজ মোটেও এদের সাথে কথা বলতে চায় না।এরা সবগুলা শয়তান।তিতলি পিউকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করতেই পিউ বলতে লাগলো,

-“মেহেরকে খুঁজছে।”

আরবাজ ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,

-“একদমই না।”

তিতলি হো হো করে হাসতে লাগলো।তারপর বললো,

-“ওকে বাদ দিন।গুড মর্নিং।”
-“হুম মর্নিং!”

বলে আরবাজ খাওয়ায় মনোযোগ দিল।কিছু সময় পরই মেহের এসে উপস্থিত হলো। কিন্তু আরবাজের থেকে বের দূরত্বে আছে সে।এমনকি আরবাজের আশেপাশেও যাচ্ছে না। তাকাচ্ছেও না।আরবাজ যে তাকে রাগী চোখে পরখ করছে মেহের তা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে।কিন্তু তবুও সে তাকাচ্ছে অবধি না।
খাওয়া-দাওয়ার মাঝেই শাপলা বেগম বলতে লাগলেন,

-“মেহের,ভালোই রোদ উঠেছে।এক কাজ করিস, আচার গুলো ছাঁদে দিয়ে আসিস।আর জামাই কেও নিয়ে যাস।একটু রোদ পোহালে ভালো লাগবে।”

আরবাজ আবারো লজ্জায় পড়ে গেল।একমাত্র মেহেরের জন্য এমনটা হলো।মেহের জোরপূর্বক হেসে বললো,

-“পিউ,তিতলি আর বাবলু ওদের বলো না মা।আমি কেন যাব?”
-“যা বলছি তাই করবে।”(চোখ রাঙিয়ে)
-“কিন্তু মা…”
-“আচার গুলো তোরই।তাহলে তুই ই যাবি।”
-“আচ্ছা।”
-“আর কর্ণারে যাবে না।রেলিং নেই।কাজ চলছে।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে।”

মেহের ভালোই বুঝতে পারছে আরবাজ যে তাকে ভীষণ বকবে।কিন্তু তাও সাহস করে সে খাওয়া শেষে আচার হাতে ছাদের দিকে যেতে নিল।পিছন থেকে শাপলা বেগম আরবাজকে উদ্দেশ্য করে বলছেন,

-“কিরে,আরবাজকে নিয়ে গেলি না?বাবা যাও তুমি।”

আরবাজ মাথা নাড়ালো।তারপর মেহেরের পিছনে পিছনে হাঁটা ধরলো।মেহের তো এক কদমের বদলে চার কদম হাঁটছে।আরবাজ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছে।ছাঁদে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে আঁচার গুলো দিয়ে দিলো।আরবাজ ছাঁদের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে।রোদটা গায়ে লাগায় একটু শান্তি লাগছে।মেহেরের হাত কাঁপছে। তাও কোনোরকমে আঁচারের বয়াম গুলো রেখে পিছনে ঘুরলো।আরবাজের দিকে তাকালো না।মাথা৷ নিচু করে হাঁটা ধরলো।সে ভেবেছিল আরবাজ হয়ত ছাঁদে হাঁটাহাটি করবে।কিন্তু আরবাজ যে ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকবে সেটা ভাবেনি।মেহেরের বুকের ভিতর কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। আরবাজকে ডিঙিয়ে সাইড করে চলে যাবে ভাবলো।আরবাজ হাতে হাত ভাজ করে মেহেরের কান্ড দেখছে।সাহস করে মেহের সাইড হয়ে যেতেই আরবাজ মেহেরের হাত ধরে ফেললো।মেহেরের চোখ বড় বড় হয়ে গেল।নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,

-“কি করছেন আপনি।ছাড়ুন আমার হাত।”

আরবাজ বাঁকা হাসলো।মেহের যথার্থ চেষ্টা করছে তবুও হাত ছাড়াতে পারছে না।আরবাজ এক হাতে ধরে আছে।আর মেহের দুই হাতে চেষ্টা করছে।মেহের কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

-“ছাড়ুন না।”
-“চেষ্টা করতে থাকো।ছুটে যেতে পারলে তো হলোই।”
-“ছাড়ুন আমাকে।”

আরবাজ মেহেরের হাত ধরে টান দিতেই মেহের আরবাজের বুকের উপর এসে পড়লো।মেহেরের চুলগুলো গিয়ে মেহেরের মুখের উপর পড়লো।আরবাজও অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো।কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে মেহেরের বাহু চেপে ধরে বললো,

-“তুমি আজ অনেক সাহস দেখিয়েছ মেহের।”

মেহের চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।আরবাজ মেহেরের মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিল।তারপর বলতে লাগলো,

-“সকাল থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছ।ভেবেছ আমার থেকে বেঁচে যাবে।এবার তোমাকে কে বাঁচাবে?”

মেহের চোখ খুলে আরবাজের দিকে অসহায় চোখে তাকালো। কিন্তু আরবাজের মন গললো না।সে মেহেরকে সেভাবেই চেপে ধরে বললো,

-“এখন চুপ কেন?তোমার জন্য আমায় লজ্জায় পড়তে হয়েছে! ”
-“আ..আমি কি করেছি?”
-“কি করেছ জানো না?”
-“….”
-“আমার উপর পানি ফেলেছ কেন?”(দাঁতে দাঁত চেপে)
-“ছাড়ুন আমাকে।আপনি আমাকে এভাবে ধরতে পারেন না।”

মেহেরের চিল্লানি শুনে আরবাজ মেহেরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।মেহের পড়তে পড়তে সামলে নিল নিজেকে।আরবাজ রাগ নিয়ে বললো,

-“আমার ঠেকা পড়েনি তোমাকে ধরবার।”

মেহের জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।আরবাজ আবার বললো,

-“কিন্তু শাস্তি তো তুমি পাবেই।”
-“কিসের শাস্তি?”
-“আমাকে পানি চুবানোর।এবার আমি তোমায় চুবাবো।”

মেহের চোখ বড় বড় করে তাকালো। এখন বাজে মাত্র ১১ টা।সে এত জলদী জীবনেও গোসল করবে না।মেহের ঠান্ডা কে ভীষণ ভয় পায়।আর আরবাজ তো তাকে অল্প পানিতে চুবাবে বলে মনে হয় না।আচমকা ঠান্ডা পানিতে পড়লে কেমন লাগবে ভাবতেই মেহেরের ভিতরটা কেঁপে উঠছে।আরবাজ এগিয়ে আসতে লাগলো মেহেরের দিকে।মেহের পিছনে যেতে লাগলো।আর বলতে লাগলো,

-“আপনি এভাবে এগিয়ে আসছেন কেন?”
-“শাস্তি দিব তাই।”
-“দ..দেখুন।”
-“আমার কিছু দেখার ইচ্ছে নেই।আমি ওমন ছেলে না যে তুমি দেখিয়ে আমায় বশ করে ফেলবে।”
-“ছি!”
-“এত কথা বলিও না।চুপচাপ আত্মসমর্পণ করে দাও।”

আরবাজ এগুচ্ছে আর মেহের পিছনে যাচ্ছে। পিছনে যেতে যেতে কখন যে ছাদের শেষ প্রান্তে চলে এলো মেহের নিজের জানে না।তার মনে তো এখন ঠানডা পানির ভয়।আরেক পা পিছাতেই মেহের পড়ে যেতে নিলো।কিন্তু আরবাজ হাত ধরে ফেললো।মেহের ঢোক গিলে বললো,

-“আল্লাহ বাঁচাও বাঁচাও। আর করব না।”

আরবাজ মেহেরের ভয়ার্ত চেহারা দেখে বেশ মজা নিচ্ছে।শয়তানি হেসে বললো,

-“তুমি তো জানো যে বাবার কথায় তোমায় বিয়ে করেছি।আবার মা ও তোমায় পছন্দ করে না।এমনকি তোমারও আমার সাথে তেমন বনিবনা হয় না।এখন আমি যদি তোমায় ফেলে দিই তাহলে আমার রাস্তা ক্লিয়ার।”

মেহেরের চোখ বড় বড় হয়ে গেল।জোরে জোরে বলতে লাগলো,

-” না না না।ছাড়বেন না প্লিজ। ও মাআআআ!মাআআআ!”

মেহের জোরে জোরে শাপলা বেগম কে ডাকছে।কারণ আরবাজ যদি তাকে সত্যিই ফেলে দেয়!বিশ্বাস নেই।
মেহেরের চিল্লানি শুনে আরবাজের মাথা ভনভন করতে লাগলো।মেহের বলতে লাগলো,

-“প্লিজ প্লিজ এমন করবেন না।ও মাআআআ।বাবাআআআ।”

আরবাজের হাত ধরে উঠার চেষ্টাও করলো।কিন্তু পারলো না।আরবাজ বলতে লাগলো,

-“আমি তোমায় তুললে তো।আজ আমার পথের কাটা ক্লিয়ার।”

মেহের এবার কেঁদেই দিলো।আর বলতে লাগলো,

-“ওও আমায় মেরে নিজে আনিয়া ফানিয়া কে বিয়ে করবেন তাই তো।তো করুন না।আমি কি আটকে রেখেছি? আমায় কেন মারছেন?আমি মরে গেলে আমার বাবা-মায়ের কি হবে।আমার আচার গুলোর কি হবে।তুলুন আমায়।আর করব না।”

আরবাজের ভ্রু কুঁচকে গেল।মেহেরকে টান দিতেই মেহের আরবাজের বুকের উপর পড়লো।ভয়ে আরবাজের শার্টের পিছনের দিক খামচে ধরে আছে।আরবাজ গম্ভীর গলায় বললো,

-“তুমি আনিয়া কে কিভাবে চিনো?”

মেহের কিছু বলতে পারছে না।এখনো বুক কাঁপছে। ভয়ে বেচারি কেঁদেই দিয়েছে তাও জোরে জোরে।আরবাজ হতভম্ব হয়ে গেল।মেহের জোরে জোরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো,

-“আপনি ভীষণ খারাপ।আমি আর কখনো আপনার সাথে কথা বলব না।কখনো না।”

আরবাজ কিছু বলতে যাবে এমন সময় ছাদের দরজা খোলার শব্দ হলো।তিতলি,পিউ,বাবলু ওরা ছাদে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো।তিতলি চোখ বড় বড় করে বললো,

-“এই চল চল সবাই নিচে চল।এরা এখানে রোমান্স করছে।”

মেহের আরবাজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।তিতলিদের পাস করে দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।কিন্তু ওরা ভাবলো মেহের লজ্জা পেয়েছে। কিন্তু কান্নাটা আরবাজ দেখেছে।তিতলি,পিউ আর বাবলু মিলে আরবাজের সাথে মজা করতে লাগলো।কিন্তু আরবাজের কানে যেন কথাগুলো যাচ্ছেই না।তার চোখে শুধু মেহেরের চেহারাটা ভেসে চলেছে। মেহেরকে এভাবে কাঁদানো কি ঠিক হলো!

চলবে……