#প্রথম_ভালোবাসার_সুর❤️
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৫
মেহের খাবার বেড়ে খেতে বসতেই হঠাৎ করে আরবাজ সেটা টেনে নিলো।তারপর চেয়ারে বসে মেখে খেতে লাগলো।মেহের অবাক হয়ে গেলো।
চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।মাত্র হাত দিয়েছিলো ভাতে।মাখতেও পারেনি।মেহের ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“খাবেন ই যেহেতু আগে বলতেন।আমি খাবার বাড়তাম।”
-“কেন তোমার সমস্যা কোনোও?”(খেতে খেতে)
-“তো সমস্যা হবে না?এটা আমি বেড়েছিলাম খাওয়ার জন্য!”
-“আরেকটা বেড়ে খেয়ে নাও।”
মেহের ফোস করে শ্বাস ছাড়লো। তারপর প্লেট নিয়ে ভাত বাড়লো।আর বিরবির করে বলতে লাগলো,
-“খাবে না খাবে না বলে ঠিকই খেতে এসেছে।”
-“কিছু বললে?”
মেহের না বোধক মাথা নাড়ায়।তারপর বিপরীত চেয়ারে বসে খেতে শুরু করলো।আরবাজ খেতে খেতেই জিজ্ঞেস করলো,
-“মা খেয়েছে?”
-“….”
-“ঘুমিয়ে গিয়েছে তাই না?”
-“….”
আরবাজ মেহেরের দিকে চোখ গরম করে তাকালো।মেহের খাওয়ায় ব্যস্ত।আরবাজ হাত ধুয়ে পানি খেল।তারপর গ্লাসটা একটু জোরেই রাখলো টেবিল এ।মেহের ভ্রু কুঁচকে তাকালো সেদিকে।আরবাজ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“কথা বলছ না কেন?”
মেহেরের খাওয়া শেষ।হাত ধুয়ে পানি খেল।আরবাজ ভ্রু কুঁচকে মেহেরের কান্ড দেখছে।মেহের পানি খেয়ে ঢেঁকুর তুলে বললো,
-“ভাল্লুকের মত করছেন কেন?”
-“কি!আমি ভাল্লুক?”(রাগী গলায়)
-“তা নয়ত কি?আমি খাওয়ার সময় কথা বলা পছন্দ করি না।”
-“আই ডোন্ট কেয়ার তুমি কি পছন্দ করো না করো।আমি জিজ্ঞেস করেছি আর তুমি উত্তর দিতে বাধ্য!”
-“বয়েই গেল।”
বলেই মেহের বাসনগুলো কিচেনে রেখে রুমে চলে গেলো।আরবাজ তখনো ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছে।এই মেয়েটা তার সাথে এমন ব্যবহার করছে কিভাবে?
তার মা-বাবার সামনে তো একদম ভেজা বেড়াল হয়ে যায়।ভেবে পায় না আরবাজ!
এগিয়ে যায় রুমের দিকে।মেহের গিয়ে সোফায় বালিশ রেখে শুয়ে পড়লো।আরবাজ ঘরে ঢুকে একনজর সেদিকে তাকালো। তারপর বিছানায় শুয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিলো।মেহের মুখ দিয়ে ‘চ’ শব্দ করে বললো,
-“ইশশ!লাইট নিভান।”
-“আমি কাজ করব এখন।”
-“আশ্চর্য!এতরাতে লাইট জ্বেলে কাজ করবেন আপনি?”
-“হ্যা অবশ্যই।তোমার সমস্যা থাকলে অন্যরুমে গিয়ে শুতে পারো।”
বলেই আরবাজ ফোন বের করে দেখতে লাগলো।মেহের ঘাড় তুলে দেখলো একবার।তারপর বিরবির করে বললো,
-“এভাবে জ্বালানোর মানেটা কি?”
আরবাজ তখনো ফোন স্ক্রল করছে।মেহেরের আবার লাইটে ঘুম হয় না।বিরক্তি নিয়ে বললো,
-“আচ্ছা আপনার কি কাল অফিস নেই?”
-“সেটা তোমার না ভাবলেও চলবে।”
মেহের ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।মনে মনে আরবাজকে সেইরকম গালি দিচ্ছে। এদিকে আরবাজ আড়চোখে মেহেরের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।আর ভাবতে লাগলো,
-“আমাকে ভাল্লুক বলা!”
আরবাজ হাত বাড়িয়ে পাশ থেকে গ্লাস নিয়ে জগ থেকে পানি ঢেলে চুমুক দিতেই কাশি উঠে গেলো।কাশতে কাশতে বেচারার চোখ-মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। কাশির শব্দে মেহের উঠে বসলো।সোফা থেকেই বললো,
-“কি হলো আবার?ঠিক আছেন?”
আরবাজের কাশি থামলো।ভাঙা গলায় বললো,
-“তুমি আমায় মনে মনে গালি দিচ্ছ তাই না!”
-“বলছে আপনাকে।”
কথাটা বলেই মেহের মনে মনে ভাবলো,
-“বুঝলো কেমনে!”
আরবাজ রাগী গলায় বললো,
-“আময় মনে মনে বকছো বলেই তো আমি বিষম খেলাম।”
-“আশ্চর্য! আপনি কি মনোবিজ্ঞানী?”
-“একদম কথা ঘুরাবা না।”
-“রাত বিরেতে আপনি আমার সাথে ঝগড়া করছেন কেন!নিজে যক্ষা বাঁধিয়ে বসে আছে মনে হয়।সেটা বলে না।”
-“শাট আপ।”
-“ইউ শাট আপ।”
আরবাজের রাগ উঠে গেল।ফোনটা পাশে রেখে উঠে দাঁড়ালো।মেহেরের কাছে যেতে যেতে বললো,
-“কি বললে তুমি?”
মেহের ঢোক গিললো।মুখের উপর বালিশ চেপে ধরে বললো,
-“কিছু না গুড নাইট।”
আরবাজ এসে টেনে মেহেরের মুখ থেকে বালিশ সরিয়ে বললো,
-“তোমার সাহস কিভাবে হলো তুমি আমাকে শাট আপ বলো।”
-“আপনিও তো বলেছেন।”(ঢোক গিলে)
-“আমি আর তুমি সেম না।”
-“কেন?আপনিও মানুষ আমিও….ওওও বুঝছি।আমি মানুষ কিন্তু আপনি তো ভাল্লুক।”
-“আবার আমায় ভাল্লুক বললে।”(দাঁতে দাঁত চেপে)
বলেই আরবাজ সোফার উপরের দিকে থাকা সুইচ চেপে লাইট জ্বালিয়ে দিলো।মেহের বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বললো,
-“উফফো!কি যে শুরু করেছেন আপনি।আপনার মা উঠে দেখলে তো পরে বলবে আমি আপনাকে ঘুমাতে দিচ্ছি না।”
-“উঠো।”
-“কেন?”
বলতে বলতে মেহের উঠে বসলো।আরবাজ মেহেরের হাত ধরে দাঁড় করিয়ে দিলো।আর রাগী গলায় বললো,
-“কি বলছিলে আবার বলো দেখি?”
মেহের খেয়াল করলো রাগে আরবাজ ফায়ার হয়ে যাচ্ছে। বেচারার চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেছে। মনে হয় কেউ কোনোদিন এভাবে ক্ষেপায় নি।তাইত এমন সিরিয়াসলি নিচ্ছে।মেহের মুখ চেপে হেসে বললো,
-“ভাল্লুক বলেছি।ভাল্লুক!শুনেননি?ভা…”
আর কিছু বলার আগেই আরবাজ মেহেরের বাহুতে হাত দিয়ে মেহেরকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।মেহেরের মুখ বন্ধ হয়ে গেল।আরবাজ এমনভাবে তার বাহু চেপে ধরেছে যে সেখানে মেহের ব্যাথা পাচ্ছে। আঁতকে উঠে বললো,
-“আহ!ব্যাথা পাচ্ছি হাতে।”
-“আমাকে এসব বাজে কথা বলার সাহস কিভাবে পেলে তুমি?”
-“ছাড়ুন আমাকে।”
আরবাজ আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। মেহেরের চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে গেল।আরবাজ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“আমাকে এসব কখনো বলবে না।মাইন্ড ইট!”
বলেই ছেড়ে দিলো।মেহেরের বেশ রাগ হলো।আরবাজ পিছনে ঘুরে বিছানার দিকে যেতে নিলে মেহের গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো আরবাজের আগে।আরবাজ ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“এটা কি হলো!”
-“বেশ হলো।”
-“তুমি আমার জায়গায় শুয়েছ কেন?”(রাগী গলায়)
-“আমার ইচ্ছে।”
-“তুমি তো ভালোই দস্যি মেয়ে!যতটা ভালো ভেবেছিলাম ততটা না।”
-“আমি এমনি।আপনি আমাকে ব্যাথা দিয়েছেন কেন।এটা আপনার শাস্তি!”
-“কি বললে!তুমি আমায় শাস্তি দিবে!উঠো বলছি।”
-“আমি উঠব না।আপনার ইচ্ছে থাকলে পাশে জায়গা রেখে শুতে পারেন, আমি কিছু মনে করব না।”
-“আমার বিছানা,আমার ঘর।তুমি মনে করার কে?”
-“তাহলে শুয়ে পড়ুন।”
আরবাজ তবুও দাঁড়িয়ে রইলো।বেড শেয়ার করা তার মোটেও ভালো লাগে না।কেননা রাতের বেলায় তার পুরো বিছানাই লাগে।মেহের মুচকি মুচকি হাসছে আর মনে মনে বলছে,
-“একদম ঠিক হয়েছে। এখন থেকে এভাবেই ঘুমাব।”
আরবাজ আবার বললো,
-“তুমি কি উঠবে না?”
-“না।আপনার সমস্যা হলে সোফায় যান।”
আরবাজ মেহেরকে কোলে তুলে নিলো।মেহের অবাক হয়ে গেল।জীবনে প্রথম কোনো ছেলের কোলে উঠে মেহের চুপ হয়ে গেল।আরবাজকে এতটা কাছ থেকে সে কোনোদিন দেখেনি।আরবাজের গায়ের গন্ধ টা সে প্রবলভাবে পাচ্ছে।আরবাজ তাকে তুলে সোফায় ছুঁড়ে মারতেই তার ধ্যান ভাঙলো।আরবাজ আবারো বিছানায় যেতে নিলে মেহের আবারো দৌড়ে চলে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।এবার আর সে উঠবে না।
-“কি নাটক শুরু করলে তুমি?”
-“…..”
মেহের চুপ করে আছে।অগত্যা আরবাজকে সোফাতেই শুতে হলো।নাহলে এই মেয়ে তার ইজ্জত নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিবে।আরবাজ চোখ বন্ধ করতেই মেহেরের মুখটা ভেসে উঠলো।
মেহেরকে যখন নিজের সাথে চেপে ধরেছিল মেহেরকে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছিল।
মেয়েটার ঠোঁটের নিচে ছোট্ট একটা তিল আছে।যে কারোর সর্বপ্রথম নজর যাবে সেই তিলটায়।
আরবাজ চোখ খুলে ফেললো।বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেহের ঘুমিয়ে গেছে। আরবাজ লাইট অফ করে দিলো।
এদিকে লাইট অফ করার পর গিয়ে মেহেরের ঘুম এলো।এতক্ষণ ধরে তার বুকটা ধরাস ধরাস করছিলো।
আরবাজের এতটা কাছে ছিল সে!ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল।পরক্ষণেই ভাবলো,
-“ধুস!বাদ দে।ঘুমা মেহেরররর!”
।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে মেহের লক্ষ করলো আরবাজ সোফায় গম্ভীর হয়ে বসে আছে ঘাড়ে হাত দিয়ে।মেহের একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো।ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হলো।সে বের হওয়ার পরেই আরবাজ ঢুকলো ফ্রেশ হতে।
মেহের চুল আঁচড়াচ্ছিলো।কিন্তু সে খেয়াল করলো আরবাজ ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার পরেও ঘাড়ে হাত দিয়ে রেখেছে। আর থাকতে না পেরে মেহের জিজ্ঞেস করেই বসলো,
-“আপনার কি ঘাড় বেঁকে গেছে?”
-“….”
আরবাজ জবাব দিল না।নিজের মত করে টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে চলেছে।মেহের ঠোঁট চেপে হেসে বললো,
-“না মানে আপনি তো এমনিই ঘাড়ত্যাড়া!এখন মনে হচ্ছে পুরাই ঘাড়ত্যাড়া হয়ে গেছেন।”
বলেই হো হো করে হাসতে লাগলো।আরবাজ রাগ নিয়ে তাকিয়ে রইলো মেহেরের দিকে।কিছু বলতে যাবে কিন্তু মেহেরের হাসিটা দেখে আঁটকে গেল।মেহেরকে এভাবে হাসতে সে কখনো দেখেনি।খিল খিল করে হাসছে মেয়েটা।সবসময় তো কাঁদতেই দেখে
আজ প্রথম এতটা খোলামেলা ভাবে হাসতে দেখলো।মেহের তুড়ি বাজিয়ে বললো,
-“কি?ঘাড় সোজা হয় না?”
বলে আবারো হাসতে লাগলো।আরবাজ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“সকাল সকাল আমাকে রাগিয়ো না।”
-“ওকে ওকে।”(মুখ চেপে হেসে)
আরবাজ নিজের মত তৈরী হতে লাগলো অফিস যাবে বলে।তবে ঘাড়টা কিছুটা বেঁকিয়ে! মেহের পারছে না পেটে ধরে হাসতে।আরবাজকে এতটা ফানি লাগছে তার কাছে।
আরবাজ তো পারছে না ওকে খেয়ে ফেলতে।মেয়েটা এতটা জ্বালাচ্ছে কেন তাকে!আরবাজের উচিত ই হয়নি তার বাবার কথা শুনে এই ঝামেলা টা কে উঠিয়ে আনার।এখন তার রুম দখল করে তাকে জ্বালিয়ে মারছে!
চলবে…..