#প্রথম_ভালোবাসার_সুর❤️
#লেখনীতে:অনুসা_রাত(ছদ্মনাম)
#পর্ব:০৭
খাবার টেবিলে নানারকমের খাবার সাজিয়ে মেহের মীরাকে বললো সবাইকে ডেকে আনতে।
একের পর এক খাবারগুলো সাজিয়ে ফেলেছে সুন্দর করে।মেহেরের শ্বাশুড়ি শেহনাজ পারভীন টেবিলের সামনে এসে বলতে লাগলেন,
-“অবশেষে রান্না শেষ তোমার?২:৩০ টা বাজিয়ে দিয়েছ।”
-“আসলে আন্টি অনেকদিন পর রান্না তো।”
শেহনাজ পারভীন কিছু বলতে যাবেন তার আগেই শাহীন খান আর বাকি সবাই আস্তে আস্তে এসে ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হলো।শাহীন খান টেবিলে বসতে বসতে বললেন,
-“বাহ!ভালো ঘ্রাণ এসেছে তো।কি কি রেঁধেছ দেখি তো।”
মেহের খুশি হয়ে বলতে লাগলো,
-“আমি দেখাচ্ছি, আপনারা সবাই বসুন না।”
সবাই একে একে বসতেই মেহের আস্তে আস্তে একটা একটা করে খাবারের ঢাকনা সরিয়ে বলতে লাগলো,
-“এইযে,সর্ষে ইলিশ। নাজমা আন্টি যেটা খেতে চেয়েছিলেন।তারপর বেগুন ভাজা,ছোট মাছ,তেঁতুল দিয়ে ডাল,শিং মাছের ঝোল আর এটা হলো মাছের ভর্তা। আমার স্পেশাল আইটেম।”
-“বাহ বেশ ভালো তো।”
শাহীন খানের প্লেটেই মেহের সবার আগে খাবার দিলো।মীরা আর আয়শা তো খেয়ে সেই রকমের প্রশংসা করলো।আয়শা বেশ খুশি হয়ে বললো,
-“উফফ মেহের!তেঁতুল দিয়ে ডাল রান্না করে তুমি আমার মনটাই জিতে নিলে।আহা!”
মেহের বিনিময়ে হাসলো। শাহীন খান খুশি হয়ে বউমার হাতে বকশিশ গুঁজে দিলেন।সবাই বেশ প্রশংসা করলেও শেহনাজ পারভীন আর নাজমা বেগম চুপচাপ খেয়ে উঠে গেলেন।প্রশংসা না করলেও খারাপ মন্তব্যও করেননি।মেহের ধরে নিলো তার রান্না তাদের ভালোই লেগেছে। সবাই উঠে যাওয়ার পর মেহের খেতে বসলো।বেশ রাত করেই বাড়িতে ফিরে আরবাজ।গতকালের মত আজও মেহেরকে বসে থাকতে দেখতে পেলো সে।ঘরে যেতে যেতে আরবাজ ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
-“তুমি আজও বসে।”
-“হ্যা।কেন কোনো সমস্যা?”
আরবাজ দমে গেল।সে তো ভালোর জন্যই জিজ্ঞেস করেছিল।কিন্তু এই মেয়ে তাকে পাল্টা প্রশ্ন করে।এদিকে আরবাজের ঘাড় খানিকটা বেঁকে এখনো।তা দেখে মেহের কোনোমতে নিজের হাসি আটকালো।তারপর বললো,
-“আপনার এখনো ঘাড়ে ব্যাথা?”
আরবাজ কোণাচোখে তাকালো মেহেরের দিকে।গম্ভীর গলায় বললো,
-“তোমার এত ভাবতে হবে না।”
-“ভাববো না?”
-“নো নিড।”
বলেই আরবাজ ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।মেহের ফিক করে হেসে দিলো।খাবার টেবিলে গিয়ে বসে পড়লো।বেশ অনেকটা সময় পর আরবাজ এসে চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
-“খালামণি চলে গেছে?”
-“জ্বী।”
-“আজ অনেক খিদে পেয়েছে।”
মেহের খাবার বেড়ে দিলো।আরবাজ খাবারের আইটেম দেখে বেশ খুশি হয়েই বললো,
-“বাহ!সর্ষে ইলিশ।”
মেহের মুচকি হেসে বললো,
-“আপনার পছন্দ? ”
-“হ্যা।”
আরবাজ টেস্ট করে বললো,
-“বাহ!ভালো হয়েছে তো।”
-“থ্যাংক ইউ।”(খুশি হয়ে)
আরবাজ খাবার চিবাতে চিবাতে বললো,
-“এমনভাবে থ্যাংক ইউ বলছ যেন রান্নাটা তুমি করেছ।”
-“অবশ্যই!আমিই তো করেছি।”
আরবাজ অবাক হয়ে বললো,
-“সিরিয়াসলি?”
-“ইয়েস।”
-“জঘন্য হয়েছে।”
মেহের হা হয়ে গেলো। মুখ ফুলিয়ে বললো,
-“অমনি জঘন্য হয়ে গেল?”
-“শাট আপ।খেতে দাও আমাকে।”
বলেই আরবাজ খাওয়ায় মনোনিবেশ করলো।মেহের দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মনে মনে বকছে আরবাজকে।
-“আমাকে না বকে খেতে বসে পড়ো।”
-“আমি মোটেও আপনাকে বকছি না।”(বসতে বসতে)
-“তোমার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।”
মেহের মুখ ভেংচি কাটলো।তারপর খাওয়া আরম্ভ করলো। আরবাজ খেয়ে দেয়ে ঢেঁকুর তুললো।মেহের তা দেখে বললো,
-“আপনাকে না আমি সাধে ভাল্লুক বলি না।”
-“মানে?”
-“মানে বুঝলেন না?জঘন্য খাবার কি আর মানুষ খেতে পারে?তাও এভাবে!”(মুখ চেপে হেসে)
আরবাজ রাগী চোখে তাকালো মেহেরের দিকে।মেহের জোরপূর্বক হেসে খাওয়ায় মনোযোগ দিল।আরবাজ উঠে চলে গেল ঘরের দিকে।মেহের খেয়ে হাত ধুতেই ওর মনে হল যে আরবাজ তো এখন ঘরের বিছানা দখল করে ফেলবে!মেহের কোনোমতে হাত মুছে দিলো এক দৌড়!যা ভেবেছিল ঠিক তাই।
মহারাজ বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন চাপতে ব্যস্ত।
মেহের গিয়ে কিছুসময় দাঁড়িয়ে থেকে একটা বুদ্ধি বাড় করলো।তারপর বলতে লাগলো,
-“বলছি যে,আপনার ঘাড়ে ব্যাথা তাই না?”
-“….”
আরবাজ কোনো কথাই বলছে না।কারণ সে ভালো করেই জানে যে মেহের এখন তাকে সোফায় পাঠাতে চাইবে। কিন্তু আজ সে সেটা হতে দিবে না।গতকাল ঘাড়ের ব্যাথায় বেচারা ঘুমাতে পারেনি।আর আজ অফিসেও মানুষ কতভাবে তাকিয়েছে আর মুখ টিপে হেসেছে।আরবাজের সাড়াশব্দ না পেয়ে মেহের বলতে লাগলো,
-“ব্যাথা নেই?”
-“…..”
-“বলছি যে আমার কাছে একটা মলম আছে ব্যাথার।আপনি চাইলে আমি আপনার ঘাড়ে মালিশ করে দিতে পারি!”
-“নো নিড।”
মেহের কোনো কথা না বলে মলমটা বের করে আনলো।তারপর আরবাজের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“উঠুন না।”
-“কেন জ্বালাচ্ছ আমাকে তুমি?সমস্যা টা কি?”
-“সমস্যা একটাই,আপনার ঘাড়ের ব্যাথা ভালো করব!”
-“বললাম তো লাগবে না।”
-“আরে লাগবে লাগবে।”
-“তুমি কেন চিন্তা করছ।যা ইচ্ছে হোক না।তোমার না ভাবলেও চলবে।”
-“আমার কারণেই তো এমন হলো।গতকাল যদি আমি আপনাকে ওভাবে সোফায় শুতে বাধ্য না করতাম তাহলে হয়ত এমন হত না।আমার জন্য এমন হয়েছে। আ’ম সো সরি!”
বলেই মেহের মাথা নিচু করে ফেললো।আরবাজের মনে হয় মেহের হয়ত আসলেই অনেক গিল্টি ফিল করছে।মেহের আবার বললো,
-“প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
-“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে।এত মন খারাপ করতে হবে না।ইটস ওকে।”
-“তাহলে আমাকে একটা সুযোগ দিন।”
আরবাজ ভ্রু কুঁচকে মাথা নাড়ালো।তারপর উঠে বসলো।মেহের বিছানায় উঠে আরবাজের পিছনে গিয়ে হাঁটুর সাহায্যে বসলো।মলম নিয়ে আরবাজের ঘাড়ে হাত দিতে গিয়ে থেমে গেল।আরবাজকে সে স্পর্শ করবে?কেমন যেন লাগছে মেহেরের।
-“কি হলো?আমার সকালে অফিস আছে।”
আরবাজের কথায় মেহের ঢোক গিললো।আলতো করে ঘাড়ে হাত দিলো।নরম স্পর্শে আরবাজের কুচকানো ভ্রু জোড়া স্বাভাবিক হলো।মেহেরের নিঃশ্বাস তার ঘাড়ে এসে পড়ছে।আলাদা এক অনুভূতি।মেহের ধীরে ধীরে ঘাড়ে মালিশ করছে।আরবাজ মেহেরের স্পর্শ অনুভব করছে।কেমন যেন একটা আলাদা রকম ফিল হচ্ছে।মেহের আরবাজের কাত হওয়া ঘাড়টা আস্তে আস্তে সোজা করে দিলো।তারপর বললো,
-“ফিলিং বেটার?”
-“হু।”
মেহের চুপচাপ বিছানা থেকে নেমে গেল।তারপর কিছু না ভেবে সোফার দিকে এগিয়ে গেল।আরবাজ যখন চায় না তখন ছল ছাতুড়ি করে বিছানায় শোয়ার মানেই নেই।আগামী কাল থেকে বরং মীরার ঘরে ঘুমাবে।আজ কষ্ট করে সোফায় শুয়ে পড়বে।এই ভেবে সোফায় গিয়ে বসলো।এদিকে আরবাজ শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো,
-“মেয়েটা আমার জন্য এতটা গিল্টি ফিল করলো,আবার আমার সেবা করে দিল।মেয়েটা এতটা খারাপ না।নয়ত একটু বাচ্চামো আছে। তাছাড়া হতে পারে ওর সোফায় শুতেও কষ্ট হচ্ছে। নতুন বাড়ি,নতুন ঘর।আচ্ছা আমি কি বেশি ভাবছি ওকে নিয়ে।বাদ দে আরবাজ!তুই শুধু তোর বাবার কথা অনুযায়ী এই মেয়েকে বিয়ে করেছিস।তোর তো ওর প্রতি কোনো ফিলই নেই।আর তাছাড়া তুই তোর ক্যারিয়ারে ফোকাস কর!মেয়েদের প্রতি না।”
ভেবেই আরবাজ চোখ বন্ধ করলো।এদিকে মেহের শুয়ে শুয়ে ভাবছে,
-“আমি চাইলেই ছল-ছাতুড়ি করে বিছানায় শুতে পারতাম।কিন্তু উনি যখন চান না তখন তা করে আমারি আত্মসম্মান নষ্ট।যেদিন উনি নিজে আমাকে বলবেন সেদিনই আমি যাব,তার আগে নয়।”
কথাগুলো ভেবেই মেহের ঘুমিয়ে গেল।পরের দিন সকালে মেহের ঘুম থেকে উঠেই রান্নাঘরে গিয়ে সবার জন্য নাস্তা তৈরী করলো। আশ্চর্যজনক ভাবে তার শ্বাশুড়ি তাকে কিছুই বললো না।এমন পরিবর্তন কি স্বাভাবিক কিনা সেটাও মেহের বুঝতে পারলো না।
তবে যা হচ্ছে হয়ত ভালোর জন্যই।এই ভেবে মেহের মনে মনে খুশি হলো।
চলবে….