#প্রনয়ের_বাকবিতন্ডতা
#২য়_পর্ব
#বর্ষা
৪। বিয়ে ভাঙার পরদিন কেউ স্বাভাবিকভাবে তার জীবনটা চালাতে পারেনা।তবে অদ্রিতার ক্ষেত্রে যেন ভিন্ন। নতুন করে আঘাত তাকে ভাঙেনি।বেশি ভালোবাসায় বোধহয় খুঁত থাকে।কলেজ ড্রেস পড়ে সুন্দর করে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে নিচে নেমে আসে সে। ডাইনিং এ সবাই আছে।রিয়ান ঘুমে দুলতে দুলতে রুটিতে কামড় দিচ্ছে।মারিয়াম মা,ফুফুর হাতে হাতে কাজ করছে।অদ্রিতা গিয়ে আজাদ মীর মুর্তজার পাশে বসে।সবাইকে শুভ সকাল জানায়।
ফাতেমা জোহরা খাবার দিতে এসে অদ্রিকে দেখে চমকান।খাবার প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠেন,
‘’বাচ্চা সব ভুলে যা।তোর জন্য রাজপুত্র আসবে দেখিস’’
‘’বড় আম্মু আমার রাজপুত্র চাইনা।আর কখনো এসব বলবে না’’
অদ্রির কথায় ফাতেমা চুপ হয়ে যান।ছোট থেকে ওনার কাছেই বড় হয়েছে অদ্রিতা।পুরো নাম অদ্রিতা জাবিন।অদ্রির দাদা আজাদ মীর মুর্তজা স্বল্প বয়সে সংসারে জড়িয়েছিলেন।আবার নিজের তিন সন্তানকেও খুব অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়েছিলেন।আঠারো হতে দেরি হলেও বিয়ে দিতে দেরি করেননি।তাইতো পঁয়ষট্টি বছরে যাওয়ার পূর্বেই তিনি পুতির মুখ দর্শন করেছেন।
মারিয়ামের ছোট ছেলে লিয়ন।ওর স্বামী আপাতত দুবাইতে আছে। চাকরিসূত্রে গেছে এইতো একমাস।লিয়নের বয়স তিন বছর।অদ্রির নেওটা।অদ্রির কোলে এসে বসে সে।মিষ্টি কন্ঠে বলে ওঠে,
‘’মিমি,আ’’
লিয়নের মুখে খাবার দিতেই সে সুন্দর করে খায়।এমন করে আর সে কারো হাতে খায় না।ওর মায়ের হাতে দুই তিনটা চড় থাপ্পড় খেয়ে তারপর খায়।অদ্রির বেলায় অবশ্য সে ভালো বাচ্চা হয়ে খায়। হঠাৎ মিরাজুল করিম বলে ওঠেন,
‘’আব্বা জেনিয়া নাকি দেশে আসবে।এখানে আসতে বলবো কি?’’
আজাদ মীর মুর্তজা কিছু বলার আগে নাতনির দিকে তাকান।অদ্রিতার মাঝে কোনো ভাবান্তর দেখা যায় না।সে লিয়নের সাথে খেলে খেলে খাচ্ছে।আজাদ ভেবে পাননা কি বলবেন।যেই না অদ্রিকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবেন ওই অদ্রি উঠে দাঁড়ায়।আয়েশা সিদ্দিকার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘’ফুফু আম্মা আরিয়া কলেজে যাবে না?তুমি তো ওর বই খাতা সব এনেছিলে’’
‘’গিয়ে দেখ যাবে কিনা!খাবার নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে আছে সে’’(আয়েশা)
‘’অদ্রি আমি কিন্তু যাবো।রেখে যাস না’’(রিয়ান)
‘’তুই তো রেডিই হোস নাই’’(মোয়াজ)
‘’আমাকে আন্ডারএস্টিমেট করো না ভাই।অদ্রিকে জিজ্ঞেস করো আমি মাত্র তিন মিনিটে রেডি হতে পারি’’(রিয়ান)
‘’হ্যা ভাই,ওহ তো গিদর।হাত মুখ কিছু ধোয় না,চুলও আঁচড়ায় না।শার্ট প্যান্ট পড়ে ব্যাগ নিয়ে দৌড়ায় ‘’(অদ্রি)
হাসির রোল পড়ে যায় যেন। মিরাজুল করিম অদ্রিকে কাছে ডেকে হাতে টাকা ধরিয়ে দেন।বলেন পছন্দের কিছু কিনে নিতে। ততক্ষণে আরিয়া প্লেট রাখতে এগিয়ে এসে দেখে অদ্রি রেডি।সে অবাক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
‘’কিরে কালকে না কত কিছু হলো!আর আজ তুই কলেজ যাচ্ছিস?’’
‘’তো আমরা কি তোর মতন পড়া চোর নাকি?সাইন্সে পড়ি বুঝিস পড়া চোর’’
রিয়ান গিয়ে শার্ট প্যান্ট বদলে চলেও এসেছে। অবশ্য শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতেই সে সিঁড়ি দিয়ে নামছে।চুল এলোমেলো।জানা কথা গাড়িতে বসে সে চুলে চিরুনি করবে।জুতার লেস বাঁধবে গাড়ি থেকে নামার একটু আগে। প্রতিদিনের সিডিউল ওর এটা।
৫।অদ্রিতারা কলেজের খানিক দূরেই নামে।তারপর পায়ে হেঁটে কলেজে আসে।আজও তেমনি আসার পথে ওদের এলাকার একজনের সাথে দেখা।সে তার পাশের জনকে ফিসফিসিয়ে অদ্রিকে নিয়েই বলছিলো।অদ্রি শুনেছে।তবে কিছু বলেনি।বললেই তো আর ঘটনা চাপা পড়ে যাবেনা!
‘’হেই জাবিন ওয়েট’’
কলেজের গেটের সামনে আসতেই কেউ অদ্রিকে ডেকে ওঠে।অদ্ভুত লাগে ওর কেননা দাদা বাদে সবাই ওকে অদ্রি বলে ডাকে।অদ্রিতা পিছু ফিরে দেখে অবাক হয়।ওর চোখ বড় বড় হয়ে যায়।আজলান বেহরান এখানে কি করছে!রিয়ানও ওর সাথেই ছিলো।দুইজনই বেশ ভয় পেয়েছে।এক দৌড়ে কলেজের ভেতর ঢুকে গেছে।যদিও বাইরে থেকে বেশ কয়েকটা ডাক তারা শুনেছে।
ঘটনার শুরু প্রায় একমাস আগে।অদ্রিতার বিয়ের দিন নির্ধারণ উপলক্ষে ওর সব কাজিনরা এসেছিলো। অবশ্য রিয়ান ব্যতিত ওর সাথে কারো খুব কুল সম্পর্ক নেই।সেদিন ট্রুথ ডেয়ার খেলার ফাঁকে আরিয়া হুট করে অদ্রিকে ডেয়ার দেয়।সেই ডেয়ারের ফলাফল আজলান বেহরান।যদিও আইডিটা দেখে ফেইক মনে হয়েছিলো।হবার কথাও।আইডিতে যে ছবি ছিলো সেটা স্ক্রিনশট দেওয়া।তাইতো ওরা ফেইক ধরেই ম্যাসেজ পাঠিয়ে ছিলো। অবশ্য অদ্রি কোনো কিছুই লেখেনি।আরিয়াই যা লেখার লিখেছিলো।তবে অদ্রির ফেসবুক আইডি থেকে।অদ্রি জানে না আরিয়া কি লিখেছিলো কেননা ম্যাসেজ ডিলিট করা ছিলো এপাশ থেকে। আর ওপাশ থেকেও তেমন কোনো বার্তা আসেনি।
কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক বাদেই অদ্ভুত ভাবে আজলান বেহরানের দেখা পায় অদ্রি। কিন্তু প্রথম দেখাটাই ছিলো সবচেয়ে ভীতিকর।চোখের সামনে নির্মম ভাবে খুন হতে দেখাটা কি এতোই সহজ!না। তারপর অবশ্য সে কলেজ যাওয়া বাদ দিলো।পাক্কা নয়দিন অসুস্থ থেকে তারপর যখন সুস্থ হলো তার বিয়ের সময় ঘনিয়ে এলো।
‘’ওই তোর আশিক এখানে কি করে?’’
‘’হারামী আমার আশিক কেমনে!আরিয়ার বাচ্চার সব দোষ।আমার পেছনে এখন এই শালায় পড়ে আছে’’
‘’অদ্রি এক কাজ করি চল।এই বেডারে আরিয়ার কথা বলে দেই।তোর পিছু তো নিবো না আয়’’
‘’আরিয়ার পিছু নিলে?’’
‘’এতো ভালো হওয়া লাগবো না।আরিয়ার সাথে যা মন চায় তা হোক। আমাদের কি!’’
কলেজের বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকে আজলান বেহরান।চোখে কালো রোদচশমা।আর এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে কালো মাস্ক।পরনে কালো পলো শার্ট,জিন্স।সাদা ত্বকের মানুষকে এসবে সুন্দরই লাগে।ওর পিএ আযান এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
‘’স্যার এইযে জাবিন ম্যামের হুল ডিটেইলস’’
এইতো ষোলোদিন হয় এই ছেলে ওর পিএ।বাংলাদেশে প্রথমবার আসা।টিকে থাকতে বাঙালি একজনকেই চাই।তাইতো বেশ ভেবে চিনতে এই ছেলেকে চুজ করেছে সে।বেশ পারদর্শী এবং সময়জ্ঞান আছে ওর।কেবল ফেসবুকের ডিটেলইসে এতো দূর,এই কলেজের সন্ধান পাওয়া আজলানের।এদেশে ওর কোনো ক্ষমতা নেই তাইতো পারেনি অদ্রির খোঁজ চালাতে।
৬।আজলান বেহরানের সাথে কফিশপে বসে আছে অদ্রি আর রিয়ান। কলেজ শেষে বেরিয়েই তারা আজলানের মুখোমুখি হয়েছে।এবার আর পালাইনি ওরা।আজলানের সাথে কথা বলা দরকার,সত্যিটা জানানো দরকার বলেই ওরা এসেছে ওর সাথে। দুই পক্ষই চুপচাপ বসে আছে।অদ্রি নখ কামড়াছে।রিয়ান জুস খাচ্ছে।আজলান অদ্রিকে পরোক্ষ করছে।এই মেয়ে এতো সহজে ওর সাথে এলো!
‘’দেখুন’’(অদ্রি)
‘’ক্যান ইউ সে ইন ইংলিশ?আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড বাংলা’’(আজলান)
রিয়ান হেসে ওঠে।অদ্রির কানে কানে বলে,
‘’ভাই এই বেডায় তো বাংলাই পারেনা।আবার আইছে বাংলাদেশে!’’
অদ্রি চোখ রাঙাতেই মুখে আঙ্গুল দিয়ে চুপ হয়ে যায় রিয়ান।অদ্রি এবার ইংলিশেই বলে ওঠে,
‘’আপনাকে ম্যাসেজ পাঠানো ব্যক্তি আমি নই।আমার কাজিন পাঠিয়েছিল।প্লিজ দয়া করে আমার পিছু নিবেন না’’
‘’হোয়াট অ্যা লেইম জোকস!’’(আজলান)
‘’আপনার মনে হচ্ছে আমি মজা করছি?’’(অদ্রি)
‘’তা নয়তো কি!যেই আইডি থেকে ম্যাসেজ এসেছে সেই আইডির পিক আপনার।দেখুন তো এই আইডি আপনার না?’’
আজলানের কথায় হ্যা বোধহক মাথা ঝাঁকায় অদ্রি।রিয়ান এক্সপ্লেইন করতে নিলে আজলান আযানকে ইশারা করে।আযান এসে জোর করে নিয়ে যেতে নেয় রিয়ানকে।রিয়ান চিৎকার শুরু করলে আজলান হুট করে বন্দুক বের করে তাক করে তার দিকে।
‘’হুসসসস,আর একটা আওয়াজ বের হলে গুলি এপার ওপাশ করে দিবো।তোমার বোনকে খেয়ে ফেলছি না।আমার সাথে তোমরা খেলবে আর আমি যদি ছেড়ে দেই তাহলে হবে নাকি’’
অদ্রি আর রিয়ান কিছুক্ষণ পর বেরিয়ে আসে।অদ্রির মাথা ভনভন করছে।রিয়ান হাজারটা গালি দিচ্ছে আজলান বেহরানকে।তবে অদ্রির শরীরটা জ্বলছে।মন চাচ্ছে আরিয়াকে ছাদ থেকে ফেলে দিতে। ছিঃ কি বাজে ম্যাসেজ দিয়েছিলো।আজলান ওকে ম্যাসেজ দেখিয়েছে।অদ্রির লজ্জায় মরি মরি অবস্থা।আরিয়া কি পাগল ছিলো নাকি!এতো যদি এসব পাঠানোর শখ থাকতো তাহলে নিজের আইডি দিয়েই তো পাঠাতে পারতো।ম্যাসেজটা ইংলিশে ছিলো ‘’আপনার হৃদয়ের উষ্ণ ছোঁয়া পেতে ব্যাকুল হৃদয় হচ্ছে বারবারই।কি করলে বলুন পাবো আপনাকে চিরতরে পবিত্র সব আলিঙ্গনে।মন চাচ্ছে শুনতে বঊ ডাক তবে তা আপনার থেকে।আদরে আদরে ভরাবেন কবে আমাকে!’’
চলবে?