#প্রনয়ের_বাকবিতন্ডতা
#৪র্থ_পর্ব
#বর্ষা
১১.
আজলানের শরীর যেন জ্বলছে।শালার বালের জীবন তার।যার জন্য এতো দূর থেকে এখানে এসেছে সে হেই মেয়েরই নাকি বিয়ে হতে হতেও হয়নি।যদি হয়ে যেতো!আযান সেই খবর তাকে এখন দিচ্ছে।সে তো পারছে না আযানের ভেতর গুলি ঢুকিয়ে দিতে।আজলান দেয়ালে আঘাত করে। চিৎকার করে বলে ওঠে,
‘’কটু বির কোকোগুন হায়াটি।বীর তুর জারলিমা ওলমাদান সানসিল ওলজামাজসিন’’
(অর্থ- শালার বালের জীবন।কোনো কিছু জোরজবরদস্তি ছাড়া নসিবে জোটে না)
আযান ভয়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছে।একবার আগালে দশবার পেছাচ্ছে।এই সতেরো আঠারো দিনে আজলান বেহরান নামটা ওর কাছে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।মুখে কথা কম বলে।হাত তার বেশি চলে।বন্দুক নিয়ে ঘোরাফেরা করে। মাঝেমধ্যে তো রাস্তা ঘাটে মারামারি করে।সাতদিন আগে থানা থেকে ঘুরে আসতে হলো তাদের।একজনকে মেরে তাকে আবার লকাপে ভরে এসেছে এই ভয়ংকর মানুষ।
‘’স্যার…’’
‘’এই ম্যা ম্যা করছিস কেন?যা এখান থেকে। খোঁজ লাগা জাবিন কোথায়।ওই মেয়ে নিরুদ্দেশ হওয়া মানে আরেক ক্যাচাল বের হওয়া ‘’
আযান জান হাতে পালায়।আজলান তা দেখে।বিছানায় গিয়ে বসে।প্রত্যেক মানুষের কিছু গোপনীয়তা থাকে।আজলানেরও আছে। নিজের একান্ত গোপন একটা আইডি।এই আইডিতে সে লেখে।অনেকে গল্প ভাবে আবার অনেকে মস্করা ভাবে।সব অচেনা মানুষ। বেশিরভাগই বোধহয় তাকে ফেইক ভাবে।ভাবারই কথা।যেমনটা ভেবেছিলো অদ্রিরা।আজলান চায় সে একবার অদ্রির কাজিনের সাথে দেখা করে ধন্যবাদ জানাবে।মেয়েটার জন্যই তো অদ্রি ওর চোখে পড়লো।
ফেসবুকে ঢুকে অদ্রির আইডি ঘুরতে থাকে আজলান। প্রোফাইলে অদ্রির হাস্যোজ্জ্বল ছবি।ওর এসএসসির পরের বোধহয়।পেছনে পাহাড়,মেঘ। জায়গাটা কোথায় কে জানে!পরিবারের সাথেই গিয়েছিলো বোধহয়। হাইলাইটসে অনেক ছবি তাদের নিয়ে।ধীরে ধীরে নিচে নামে সে।অদ্রির খোলা চুলের এক ছবি।সে হাসছে। পেছনে বিরাট ঝিল।মেয়েটা কথা ভাবতেই আজলানের রাগ কমে।মনটা ভালো হয়ে।আজলান তুর্কি ভাষায় বলে ওঠে,
‘’এই মেয়েকে জিজ্ঞেস করতে হবে কি এমন জাদু করছে সে আমাকে।আমার কঠোর সত্ত্বাকে নাড়িয়ে দিচ্ছে এই দুঃসাহসিক নারী’’
আজলানের ভাবে এই মেয়ের কতগুলো ছবি বের করতে হবে।এদেশে তার ভিসার মেয়াদ দুই মাস। ইতিমধ্যে আঠারো দিন চলছে। বাকি দিনগুলোর মধ্যে তাকে তার প্রিয়জনকে সঙ্গি করতে হবে।এই মেয়েই হবে ওর প্রিয়জন এবং প্রয়োজন।আজলানের চোখে হুট করে অদ্রির বায়োটা আসে।মেয়েটা কি অবলীলায় ওখানে লিখে রেখেছে,
‘’সময় নিয়ে এসো, অসময়ে এসে বাহানা করো না
প্রিয় বানাতে চাইলে বউ কোরো,ঢং মারিও না’’
লেখাটা আজলানের মাথায় ঢোকে না।সে গুগল ট্রান্সলেশন করে। পরবর্তীতে বোঝে লেখার মানেটা।সে হাসে।ঘাড়ে হাত রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ে।একা একাই বলতে থাকে,
‘’সময় নিয়েই তো এসেছি। তোকে একেবারে আমার বক্ষপিঞ্জরে বন্দি করবো। প্রস্তুত হ ‘’
১২.
গতকাল এসেও গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যেতে পারেনি অদ্রি।লিজার বাবার নিষেধ ছিলো।লিজাকেও বারণ করা হয়েছিলো।যার গায়ে হলুদ সেও ছিলো কেবল আধা ঘন্টা।তারপর গুটি কয়েক ছবি তুলেই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো ঘরে।এমন করার কারণ অবশ্য অদ্রি জানে না।বুঝতেও পারেনি।সে আপাতত আজকের জন্য রেডি হচ্ছে।পরণে তার মেরুন রঙের কাজ করা থ্রিপিস। মিষ্টি লাগছে তাকে।
রিয়ানও ম্যাচিং করেই শার্ট আর জিন্স পড়েছে।শার্ট মেরুন রঙের।একসাথেই কিনেছিলো দুইজন।গত ঈদে।পড়া অবশ্য হয়নি।এতো এতো কাপড়ের মাঝে ছুটে গিয়েছিলো।বোধহয় আজকের জন্যই।বিয়ার আনুষ্ঠানিকতা কেবল শুরু।বর আসতে ঢেড় দেরি।কেবল এগারো পঞ্চাশ।অদ্রি-রিয়ান ক্ষেতে যায়।অনেক সুন্দর জায়গাটা।ক্ষেতের একপাশে বিশাল বিল।বিলে ফুটে আছে পদ্ম।
অদ্রি বিভিন্ন এংগেলে ছবি তোলে।রিয়ান তুলে দেয়।রিয়ান ছবি তুলে দিতে পছন্দ করে,তুলতে না।অদ্রি অবশ্য ভিন্ন।সে যেমন ভালো ছবি তুলতে পারে ঠিক তেমনি তুলে দিতে পারে।এই যে এখন জোর করে রিয়ানকে এংগেল দেখাচ্ছে।ওর ছবি তুলবে।ওরা হাসাহাসি করছে।বাড়ির খুব কাছে জায়গাটা।একটু পরপর মানুষজন যাচ্ছে আসছে।হুট করে কোথা থেকে এক ছেলে এসে বলে ওঠে,
‘’পরিবার কোনো শিক্ষা দেয় নাই?জামাই-বউয়ের মতন একজন আরেকজনকে টাচ করতাছো! নির্লজ্জ পোলাপান’’
ছেলেটা অদ্রি চিনতে পেরেছে।কালকের ছেলেটা।কি যেন নাম?হ্যা নিয়াম।রিয়ান ঠান্ডা স্বরেই বলে ওঠে,
‘’দেখুন ভাইয়া ও সম্পর্কে আমার বোন।আমার বোনকে আমি টাচ করবো নাকি কি করবো তা তো আপনার থেকে শিখবো না তাইনা’’
নিয়াম এক প্রকার তেড়ে এসে রিয়ানের কলার ধরে দুই চারটা চড় থাপ্পড় মারে চোখের নিমিষেই।লিজা তখন কি কারণে যেন এসেছিলো ওদের ডাকতে।নিয়ামের কাজ দেখে ভয়ে ছুটেছে বাবাকে ডাকতে। লিজার বাবা এসে কিছু বলার আগেই অদ্রি রেগে গিয়ে নিয়ামকে একটানে তার দিকে ঘুরিয়ে চড় মেরেছে গালে। আঙুল তুলে বলেছে,
‘’বড় বলে ছেড়ে দেব ভেবেছেন নাকি?নেরো মাইন্ডের মানুষ যতসব।নিজেরা যেমন বোনদের সাথে নষ্টামি করেন ওমন ভাবেন নাকি।চল রিয়ান আর এখানে থাকবো না।যতসব রিডিকিউলাস মানুষ জন’’
লিজার বাবা ওদের কিছু বলার আগেই ওরা চলে আসে।রিয়ানের গাল লাল হয়ে আছে।লিজা এসে ওদের বোঝায়।তবে ওরা শোনে না।রিয়ান ফোন দেয় ওর বাবাকে।জানতে পারে ড্রাইভার আংকেলের বাড়িটা এখানেই কাছাকাছিতে।তাকে বলা হয়েছিলো ওদের নিয়ে ফিরতে।কাজটা যেন ওদের জন্য ভালো হলো।তাইতো আধা ঘন্টার ব্যবধানে গাড়ি চলে আসলো।লিজা ওদের গ্রামের বাহির অব্দি এগিয়ে দিয়ে গেছে।
রাত নয়টা।জ্যামজটের রাস্তা পেরিয়ে অদ্রিরা বাড়ি ফিরেছে। সবাইকে খুব চিন্তিত বলেই মনে হচ্ছে অদ্রির। কিন্তু কি নিয়ে?কেউ তো কিছু বলছে না তাকে।ফাতেমা জোহরা এসে ওদের লেবু জল দেন।ওরা তা খেয়েই ফ্রেশ হতে চলে যায়।খারাপ লাগছে যে।বেলা বাড়ার পর জার্নিটা বেশ প্যারাদায়ক বোধহয়।
১৩.
দক্ষিণ কোরিয়ায় রাত একটা। বাংলাদেশে সময় বোধহয় নয়টার কাছাকাছি।ক্যাম ফায়ারের কাছে বসে আছেন আহসানুল আদ্র উরফে সান।সে বসে বসে দেখছে তার ম্যানেজার অ্যারিনের চিন্তিত মুখ।ছেলেটা বেশ ঠান্ডা মাথার।নয়তো তার এতোসব কাজ সামলাতে পারতো না বোধহয়।এই যে আজ তার করা এক কাজের পরিণামে শতখানেক কল আসছে অ্যারিনের ফোনে।
সান বেশি কিছু করেনি। নিজের পেইজে গিয়ে খুব ছোট একটা বাক্য লিখেছে। তাই নিয়েই তোলপাড়।হ্যা,সে অবশ্য ট্যাগ করেছে কাউকে।পোস্টে লিখেছে,
‘’হ্যাপি এইটিন বার্থডে সুইটি”
মেয়েটা বাঙালি।প্রোফাইলে নাম আছে ‘অদ্রিতা জাবিন’।দেখতে অনেক মিষ্টি।অনেকের ভাষ্যমতে এই মেয়ে সানের প্রেমিকা।দুইজনকে বেশ মানায়। অবশ্য অনেকে আবার ট্রল করছে অদ্রিকে নিয়ে। আজেবাজে মন্তব্য করছে।এসব নিয়ে আপাতত ভাবছে না সান।সে ভাবছে অদ্রি বোধহয় আজ কল দিবে তাকে। এসব ক্লিয়ার করতে বলবে।না তেমন কিছু হয়নি। বরং আজাদ মীর মুর্তজা তাকে শাসিয়েছেন।আজব বিষয় হলিউডের এতো বড় অভিনেতার নাম্বার কিনা একজন সামান্য বাঙালি ব্যবসায়ীর কাছে!
গতপরশু সকালে একটা মুভিতে সাইন করেছে সে।মুভির মাঝখানে ঢুকছে সে। থ্রিলারধর্মী মুভি।কাহিনীটা মনে ধরেছে বলেই বিনা সময় ব্যয়ে সে ছুটে এসেছে আমেরিকা থেকে সাউথ কোরিয়াতে। অবশ্য রাত একটায় তো আর সুটিং নেই।
সান আশায় আশায় সময় পার করছে।আর অ্যারিনের এদিক ওদিক ছোটাছুটি দেখছে। রিপোর্টারের লোকগুলো বেচারাকে পাগল বানাচ্ছে।সানের একবার ইচ্ছে হয়েছিলো ওকে ডেকে বলতে যে সে যেন ফোন বন্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে আর বলেনি।সেও তো ছটফট করছে।ওও করুক। হঠাৎ অ্যারিনকে দেখা যায় ছুটে আসতে। সানের পার্সোনাল ফোনে কল আসলে সে ধরে না।স্যারকেই এনে দেয়।
আননোন নাম্বার দেখে সান ভাবে অদ্রি বোধহয় কল দিয়েছে। কিন্তু তার আশায় সেগুড়ে বালি।অদ্রি নয় অন্যকেউ। খুব পরিচিত কেউ। অনেক বছর বাদেও তার কন্ঠ শুনেই সান চিনতে পেরেছে।সে একপ্রকার হুমকি দিয়েছে সানকে।এভাবে নাকি অদ্রির নাম খারাপ হচ্ছে।সে কেন অদ্রির ক্ষতি করতে চাইছে এই নিয়ে অনেক কথা শুনিয়ে কল রেখেছে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত নারী।সান অবাক হলো। আশ্চর্য হলো।এই নারী অদ্রির কাছে কি?কিভাবে গেলো!সানের বুকে কাঁপুনি ধরলো।
ফোন হাতে সে লাইফ ভিডিও শুরু করলো। নগদেই প্রায় কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হলো। একজন অভিনেতা, একজন গায়কের সাথে।চমৎকার হেসে সান বলে উঠলো,
—’’অদ্রিতা জাবিন,সি ইউ মাইন।মাই লাভ।সি ইউ মাই….’’
চলবে?