প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব-৩৩+৩৪

0
369

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(৩৩)

বাড়ির পিছন থেকে হুডিওয়ালা সে জন বাড়ির ভিতরে কিছু একটা ছুড়ে মারল,যা মাটিতে পতিত হওয়ার সাথে সাথেই সারা বাড়ি ধোঁয়ায় ভরে গেল।হঠাৎ ধোঁয়ার উৎপত্তি চক্ষু সীমানার ভিতর এলে বাড়ির দু’জন দারোয়ান সেদিকটায় ছুটে যায়,কিন্তু ধোঁয়ার সংস্পর্শে যেতেই দু’জন জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটে পরে।

হুডিওয়ালা সে জন নির্ধিদায় আজ গেট দিয়েই বাড়িতে প্রবেশ করে,বাড়ির চারিদিকেই বিচক্ষণতা নিয়ে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারে ভিতরে প্রবেশের সব রাস্তাই আজ বন্ধ, অজ্ঞাত সে জন এবার বাড়ির বাগানের দিকে যায়,সেখানে বেশ বড় একটা পেয়ারা গাছ যেটা দিয়ে চড়ে ঘরের ভিতর প্রবেশ করা যাবে,সেদিনকটায় বারান্দা দেওয়া বেশ বড় করে, যেখানে বসে বাগানের দিকটা অনায়াসে চোখ ভরে দেখা যায়,তবে সেখানে প্রবেশ করা গেলেও ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে যাওয়া সহজ ছিল না,সেখান থেকে ঘরে যাওয়ার রাস্তায় বড় একটা দরজা দেওয়া,যাতে পার্সওয়ার্ড দিতে হবে।অজ্ঞাত জন কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে মনে মনে কি যেন ভেবে নিল,অতঃপর এগুলো সেদিকে,কয়েক মুহুর্তেই সে অনায়াসে সঠিক পাসওয়ার্ড দিয়ে দরজা খুলতে সক্ষম হলো,ঢুকে গেল ভিতরে।রিদিকা শুয়ে ছিল কিন্তু হঠাৎ ঘরে কারো উপস্থিতি অনুভবে নাড়া দিলে তার ঘুম ভেঙে গেল।বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো রিদিকা।হুডিওয়ালা ব্যক্তি রিদিকার কক্ষের পানে এগুচ্ছে হঠাৎ পিছন থেকে রিদিকা তার উপর ভারী লাঠি দিয়ে প্র*হা*র করতে নিলে অজ্ঞাত জন সাথে সাথে জায়গা থেকে সরে যায়,যাতে মা*র টা ফ্লোরে পরে,অজ্ঞাত ব্যক্তি একটা লাথি দিয়ে রিদিকাকে ফেলে দেয়,রিদিকা এবার হাতে থাকা ছু*রি নিয়ে অজ্ঞাত জনের উপর হামলা করতে নিলে সে এবার রিদিকার গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসায়,রিদিকা ছিটকে পরে ফ্লোরে।অজ্ঞাত জন ভারী স্বরে বলে উঠে।

″যতই যা করে নে নকল নকলই থাকে,আসলের জায়গা নিতে পারে না।শে*য়া*ল যতই চালাকি করুক বা*ঘ হয়ে উঠতে পারে না।তাই শে*য়া*ল হয়ে বা*ঘি*নী*র সাথে টক্কর নিতে আসিস না।″

″এখনই দেখিয়ে দিব কে কী।″

অতঃপর রিদিকা ছুরি নিয়ে আবারও অজ্ঞাত সে জনের উপর ঝাপিয়ে পরবে তার আগেই সে বিনা বাক্যে রিদিকার উপর কিছু স্প্রে করল,যার ফলস্বরূপ তার উপর প্রহার করে উঠার আগেই জ্ঞান হারিয়ে পরে যায় রিদিকা।অজ্ঞাত জন বেশ বড় করে হাসে এতে,রিদিকার হাত ধরে হেঁচড়িয়ে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে, বিছানার পাশে এসে রিদিকাকে অনেকটা কোলে করেই বিছানাতে তুলে শুইয়ে দেয়।আস্তে আস্তে তার শরীরের সকল কাপড় খুলে ফেলে শুধু একটা চাদর দিয়ে তার শরীর ঢেকে দেয়,বিছানাটা হাত দিয়ে বেশ খানিক অগোছালো করে দেয়।রিদিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।

″রিদিকা,সুইটহার্ট তোকে আমি প্রাণে মা*র*ব না,তোর জীবন ইন্টারেস্টিং করব শুধু,বড্ড ভালোবাসি যে তোকে সুইটহার্ট।″

কথাটা বলে পকেট থেকে পুরুষদের পরিধানের একটা ঘড়ি রিদিকার বালিশের পাশে রেখে দেয়,অতঃপর পকেট থেকে একটা ইনজেকশন বের করে রিদিকার শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেয়।

″কংগ্রাচুলেশন বেবি,থার্ড ডোজ কমপ্লিট। শান্তিতে ঘুমো সকাল ১০ টার আগ অব্দি তোর উঠার কোনো সম্ভাবনা নেই যদি কেউ না উঠায়।এর আগে তোর প্রাণের সোয়ামী এসে পরবেন,আই হোপ।নাও বাই।″

মুখ দিয়ে রহস্যময়ী একটা সুরে শিশ দিতে দিতে বেড়িয়ে গেল সে জন।

ঘন্টাখানিক পর দারোয়ানদের জ্ঞান ফিরে,উঠে নিজেদের এমন অবস্থা সম্পর্কে কিছুই বুজে উঠতে সক্ষম হয় না,আদ্রিশকে ফোন করলে ফোন উঠায় না।দু’জন আবারও নিজেদের জায়গায় চলে যায়,অনেকবার ফোন করলে আদ্রিশ তাদের ফোন উঠায় অবশেষে,তারা রাতের ঘটনা সম্পর্কে বললে আদ্রিশ অনেকটা ঘাবড়ে বাড়ি চলে আসল, সকাল ১০ টার বেশ আগেই বাড়ি পৌঁছাল।

″তোমরা দু’জন এখানে!ঘরে ম্যাডাম ঠিক আছে কি না সেটা জানার প্রয়োজন মনে করো নি?″

″স্যার ম্যাডাম তো ভিতর থেকে সব দরজা জানালা বন্ধ করে নিয়েছেন,আমরা বাহির থেকে ম্যাডামকে ডাকলেও উনার কোনো জবাব পাই নি তাই আপনাকে ফোন করি।″

″হ্যাঁ স্যার, অনেক ডেকেছি।″

″আচ্ছা ঠিক আছে আমি দেখছি।″

দাঁড়োয়ানদের কথা শুনে আদ্রিশ বেগতিক পায়ে ঘরের দিকে গেল,রিদিকাকে ডাকলেও সাড়া পেল না,পাসওয়ার্ড টাইপ করলে দরজা খুলে গেল,আদ্রিশ ঢুকে গেল ভিতরে।
অতঃপর সোজা তার কক্ষের দিকে যায়,কক্ষের দরজা আজানো দেখে থাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে,রিদিকাকে উক্ত অবস্থায় দেখে ঠিক থাকতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠে তার নাম নিয়ে। চেঁচানোর শব্দেও রিদিকার জ্ঞান ফিরে না,আদ্রিশ রেগেমেখে তেড়ে যায় তার দিকে অতঃপর তাকে তার নাম ধরে ডেকে ঝাঁকাতে শুরু করলে রিদিকা জেগে উঠে।

″কি হয়েছে আদ্রিশ,সাত সকালে চেঁচাচ্ছো কেন?″

″তোমার অবস্থা দেখো আগে।″

″ও মা আমার এ অবস্থা কে করল!″

নিজের বিবস্ত্র অবস্থা দেখে আশ্চর্যের সহিত চাদড় দিয়ে ঘা ঢেকে উঠে বসে রিদিকা।

″কোন নাগর এসেছিল তোমার?″

″কি বলছ আদ্রিশ এসব!কোন নাগর মানে!″

″মানে বুঝো না!ন্যাকা সাজো আমার কাছে,বিবস্ত্র অবস্থায় বিছানায় আয়েশে শুয়ে আছো,বালিশের পাশে পুরুষের হাতের ঘড়ি রাখা,বিছানা এলোমেলো,রাতে হঠাৎ আমার দারোয়ানরা অজ্ঞান হয়ে যায় এর মানে কি হতে পারে বলো?″

″কি বলতে চাইছ তুমি আদ্রিশ?″

″এটাই বলতে চাইছি আমার দারোয়ানদের কিছু একটা করে অজ্ঞান করেছ যাতে তোমার নাগরকে দেখতে না পায় ওরা,আর তারপর ওকে নিয়ে রাতভর ফুর্তি করেছ।″

″স্টপ ইট আদ্রিশ,তুমি তা ভাবতেও পারো কি করে!কাল রাতে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তিটা এসেছিল যে আমার শরীরে ভাইরাস দিয়েছে, সে হঠাৎ আমার মুখে কিছু স্প্রে করলে আমি জ্ঞান হারাই হয়ত,কারণ তারপরের কোনো কথা আমার মনে নেই।″

″সাট আপ রিদিকা,কথা দিয়ে পাপ ঢাকতে এসো না,আমি বোকা নই।তুমি কি মনে করো মনগড়া কিছু গল্প বলবে আর আমি বিশ্বাস করব,এর জন্যই ঘরের সিসিটিভি সরিয়েছ আমাকে দিয়ে যাতে আমি তোমার নোং**রা*মো সম্পর্কে কিছু জানতে না পারি। আমারই ভুল ছিল আঁখির মতো পবিত্র ফুলের উপর তোমার মতো নোং*রা*কে এনে তুলেছি।″

″তুমি বিশ্বাস করো আদ্রিশ,আমি সত্যি বলছি,আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি,আমি শুধু তোমার।তুমি যেমনটা ভাবছ তেমনটা কিছু নয়।আমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই কিন্তু বিশ্বাস করো প্লিজ আমার উপর।″

রিদিকা আদ্রিশের পায়ে লেপ্টে পরে কাঁদছে,এদিকে আদ্রিয় ভাবলেশহীন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,মস্তিষ্ক ভাবশূণ্য অবস্থা ধারণ করল তার অল্প ক্ষণেই।কিছু সময় মুর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে থেকে পা রিদিকার কাছ থেকে টান দিয়ে ছাড়িয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়,রিদিকা চাদর জড়ানো অবস্থায় কাঁদতে থাকে সেখানে পরে।
___________

আঁখি পৌঁছায় পুলিশ স্টেশন,রিদিকার স্বামী আজিজের উপর থেকে কেস তুলে সমস্ত ব্যবস্থা নিয়ে আজিজকে মুক্ত করল আঁখি,অতঃপর তাকে নিজের গাড়িতে এনে বসাল।আজিজ অবাকত্ব নিয়ে বলল।

″কী ডা. আঁখি! আপনিই জেলে দিলেন আর আপনিই বের করলেন,ব্যপার বুঝলাম না।″

″জেল এ আপনি গিয়েছিলেন আপনার কর্মে,কারণ আপনি নিজের হয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন নি,আপনি নির্দোষ তা কাউকে বুঝিয়ে উঠতে পারেন নি,ভিকটিম হয়ে সবকিছু মানিয়ে নিয়েছেন।″

″কি করতাম,রিদিকা এমন অবস্থা সৃষ্টি করেছিল যে কেউ আমার উপর বিশ্বাস করার কথা ভাবতেও চায় নি।″

″হুম,এখন প্রথম থেকে বলুন আসলে ব্যপারটা কী?″

″আসলে বরিশালে আমি রিদিকাদের বাড়ির পাশে একটা কোচিং সেন্টারে ক্লাস করাতাম তখন, প্রায়ই আসতে যেতে রিদিকার সাথে কথা হতো আমার,আস্তে আস্তে পরিচয়,তারপর ওর সাথে ফোনেও কথা হতে শুরু হয়,এক পর্যায়ে বুঝতে পারি আমি ওকে ভালোবাসি, ওকে প্রপোজ করলে সাথে সাথে ও একসেপ্ট করে নেয়,তারপর শুরু হয় দু’জনের প্রেম,আমার মা বাবা কেউ নেই,একা থাকতাম একটা ভাড়া ঘরে,চাকরি বলতে একটা বেসরকারি স্কুলের টিচার ছিলাম আর একটা কোচিং সেন্টার চালাতাম।অবস্থা খারাপ ছিল না আমার,ওকেও অনেক ভালোবেসে গিয়েছিলাম,তাই একদিন ওকে বললাম আমাদের বিয়ের জন্য ওর বাবাকে বলব।কিন্তু ও মানা করে দিল।বলল ওর মা বাবা ওকে একদম পছন্দ করেন না,প্রথম থেকেই কথা হতো সময় প্রায়ই বলত ওর মা বাবা ওকে ভালোবাসেন না,ওকে একদমই পছন্দ করেন না,ওকে বিয়ে দিতে চান না,আমার বিষয়ে শুনলে না কি ওকে প্রানে মেরে ফেলবে।আমি অবাক হয়ে যখন জিজ্ঞেস করতাম এমনটা কেন করবেন উনারা,তখন ও বলত ও না কি জানে না ওর বাবা মা কেন ওকে অবহেলা করেন,কিন্তু কথাটা জোর দিয়েই বলত ওর মা বাবা ওকে ভালোবাসেন না।যাতে আমি ওর কথা বিশ্বাস করে যাই,তাও অনেক বোঝাই ওর মা বাবাকে কোনোরকম আমাদের কথা বলার জন্য। কিন্তু ও মানত না,তাই আর কোনো পথ না পেয়ে ওকে পালিয়ে আসার জন্য বলি আর ও মেনেও যায়,দু’জন ঢাকা চলে আসি,এখানেও আমি একটা বেসরকারি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ হই,বিয়ে করে আমরা দু’জন একসাথে থাকতে শুরু করি।ওর সাথে ভালোই কাটত আমার দিন,কিন্তু আস্তে আস্তে ওর স্বভাবে অস্বাভাবিকতা আন্দাজ করতে পারি আমি,ও আমাকে আমার কোনো বন্ধু বান্ধবদের সাথে মিশতে দিতো না।আমাকে কেমন জানি বন্ধি করে রাখতে চাইত নিজের কাছে,আমার এক কাছের মেয়ে বন্ধু ছিল,বলতে শুধুই ফ্রেন্ড,ওর বদৌলতেই ঢাকাতে চাকরি পাওয়া আমার,অনেক কথাবার্তা হতো আমার ওর সাথে প্রায়ই কিন্তু এ নিয়ে রিদিকার সাথে সমস্যা হতো,যার কারণে ওর সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেই আমি,কিছুদিন পর ওর লাশ পাওয়া যায় একটা ঝোঁপে,প্রমত্ত অঙ্গনা নামের কেউ ওকে মেরে দেয়,যাতে আমি অনেক শোকাহত হই,যা রিদিকা মেনে নিতে চাইত না,এ নিয়ে শুধু ঝগড়া বাঁধাত আমার সাথে।হঠাৎ একদিন আমি রেগে বলি ওকে ছেড়ে দিব তারপর ঘর থেকে বেড়িয়ে যাই,পুরো একদিন আমার এক বন্ধুর বাসায় থাকি তার পরদিন আবারও ফিরে আসি ওর টানে,ওকে বড্ড ভালোবাসতাম চাইলেও দূরে থাকতে পারতাম না,কিন্তু কে জানে ও আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল ছিল,সেদিন আসার পর জানতে পারি ও আমার নামে অনেক দূর্নাম রটিয়ে আমাকে সবার চোখে অপরাধী বানিয়ে রেখেছে অনেক আগ থেকেই,নিজেকে হয়ত নিজেই আঘাত করেছিল তারপর দোষ দিয়েছিল সেদিন আমার ঘাড়ে,যার ফলস্বরূপ কেউ শুনে নি আমার কথা,আপনি আর আদ্রিশ মিলে আমাকে মেরে জেলে দিয়ে দাও।″

″হুম,রিদিকা যা করার করে নিয়েছে,আপনাকে আপনার ন্যায় বিচার আমি পাইয়ে দিব চিন্তা করবেন না।আপনাকে আমি এখন একটা ভাড়া ঘরে নিয়ে যাব,সেখানে আপনি থাকতে পারেন,৬ মাসের ভাড়া আমি ভরে দিয়েছি আপনি সেখানে থেকে নিজের জীবন গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন,তবে হ্যাঁ ভুলেও আদ্রিশ রিদিকার সামনে পরবেন না,আর আমার সাথে যোগাযোগে থাকবেন,প্রয়োজনে যেন আপনাকে পাই।বাকিটা আমিই সামলাব।″
_______________

আজ আজিজের কাজে দেরি হয়ে যাওয়ায় আঁখি আর আদৃতের বাড়ি না গিয়ে হাসপাতালে চলে যায়,আজ যে করেই হোক সে আদৃতকে সবকিছু জানিয়ে ছাড়বেই।
নিজের ক্লাস শেষ করে এসে আদৃতের কেবিনে বসে আছে আঁখি,বর্তমানে আদৃতেরও একটা কাজ চলছে এসে পরবে কিছুক্ষণ এর মধ্যে তাই অপেক্ষা করছে সে,কিছুক্ষণের মধ্যেই আদৃত এসে পরল।

″আরে আঁখি তুমি এখানে বসে আছো যে?″

″আপনার সাথে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল আমার।বর্তমানে কোনো কাজ না থাকলে বলুন।″

″না না এখন কোনো কাজ নেই বলো কি বলতে চাও?″
নিজের চেয়ারে বসতে বসতে বলল আদৃত,আঁখি আমতা করে বলল।

″ব্যপারটা কি করে জানাব আপনাকে বুঝতে পারছি না,আর আপনি কেমন প্রতিক্রিয়া করবেন তাও ভেবে পাচ্ছি না,তবে আগে বলুন সত্যতা শুনার পর আপনি স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করবেন।″

″কি হয়েছে আঁখি বলবে তো?কি এমন কথা হতে পারে যা শুনে আমি খুব বেশি রিয়াক্ট করব বলে তোমার মনে হয়!″

″আসলে…″

″কি হয়েছে আঁখি বলবে তুমি,তোমাকে এর আগে আমি কখনও এমন দ্বিধাদ্বন্দে দেখি নি,বলো কি হয়েছে?″

″আসলে ছয় বছর আগে আমরা নিজেরা আলাদা হই নি,আমাদের আলাদা করা হয়েছে।″
অপ্রস্তুত মনোভাবের সহিত বলে দিল আঁখি।

″আলাদা করা হয়েছে মানে!″

অতঃপর আঁখি নিজের ফোনে করা সানিয়ার ভয়েস রেকর্ড শুনায় আদৃতকে,সবকিছু শুনে আদৃত যেন পাথর হয়ে যায়,এত কঢ়া সত্য কি করে মেনে নিবে,নিজের কানে আজ বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না,রাগে ক্ষোভে চোখ দিয়ে গড়াতে শুরু করেছে জল,মুহুর্তেই আদৃতের চোখগুলো র*ক্ত*ব*র্ণ ধারণ করে নিয়েছে,উঠেই হনহনিয়ে বেড়িয়ে গেল এবার।আঁখি তার পিছনে ছোটতে শুরু করল।

″ডা.আদৃত,কোথায় যাচ্ছেন আপনি?″

″ওই আদ্রিশকে খুন করতে,ও আমার কাছ থেকে আমার বেঁচে থাকার আমার খুশি থাকার কারণ আমার ভালোবাসা ছিনিয়ে নিয়েছে,আমাকে জীবন্ত লা*শ বানিয়ে দিয়েছিল,ওর বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।″

″ডা.আদৃত,আইন নিজের হাতে তুলে নিবেন না,ওকে সাজা দেওয়ার অনেক রাস্তা আছে,সোজা ওকে খুন করতে গেলে কেমনে হবে!আপনার পুরো জীবন পরে রয়েছে সামনে,আপনার লাইসেন্স চলে যাবে,মাথায় রাখতে হবে এসব,আপনি তো ওর মতো বা*জে নন,মাথা ঠান্ডা করুন প্লিজ।″

″চলে যাক সব জাহান্নামে, আমার কোনো যায় আসে না,আমার তুমিকে কেঁড়ে নিয়েছে ও,নিজের হাতে ওকে সাজা না দিলে শান্তি পাবো না।″

সজোরে গর্জে উঠে কথাগুলো বলে আদৃত,হাসপাতালের অনেকেই সেখানে জরো হয় মুহুর্তেই। আদৃত আঁখির হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে যায়,আঁখিও পিছু যায় তার,আদৃতকে আঁখি এই দ্বিতীয়বার এতো রাগে দেখতে পেয়েছে যা মোটেও ভালো কিছুর লক্ষণ বলে মনে হলো না তার কাছে।অতঃপর সেও নিজের গাড়িতে পিছু গেল আদৃতের।″

আহিল আর আশরাফ খানের চোখেও উক্ত দৃশ্য গেল।

″কি হয়েছে বাবা?কোনো আন্দাজ করতে পারছ?″

″না,তবে আঁখি আদৃতের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়েছে বলে মন হয়।″

″জানো বাবা আমার মনে হয় ওদের মধ্যে কোনো সমস্যা তৈরি করা হয়েছিল ছয় বছর আগে,তোমার মনে আছে আঁখি আদৃতের জন্য কতো পাগল ছিল।আমরাও রাজি ছিলাম এ ব্যপারে,কিন্তু হঠাৎ একদিন আদৃত আমেরিকা চলে যায়,আঁখিও কেমন মনমরা হয়ে পরে,অসুস্থও হয়,তবে আমাদের কিছু বলে না,আদৃতের সাথে এ নিয়ে কথা বলতেও দেয় না আমাদের,অতঃপর তিনবছর আগে আমরা যখন আঁখির সাথে আদৃতের বিয়ে ঠিক করতে চাই তখন আঁখি সোজা মানা করে আর আদ্রিশের ব্যপারে জানায় আমাদের। আমার তো মনে হয় এ সবকিছুতেই কোনো না কোনোভাবে আদ্রিশ জড়িত।″

চলবে…

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(৩৪)

″আমার তো প্রথম থেকেই আদ্রিশকে পছন্দ ছিল না।″

″বাবা আমরা কি পারি না আঁখিকে আবারও একটা সুযোগ দিতে?″

আহিলের কথার উত্তরে আশরাফ খান কিছুই বললেন না,শুধু নিরবতাই পালন করে গেলেন।

আদৃত হাওয়ার বেগে গাড়ি টানল আদ্রিশের খোঁজে,যেহেতু দুপুর গড়িয়ে গেছে সেহেতু আদ্রিশ তার কাজের স্থানেই থাকবে বাড়িতে থাকার কথা নয়,সে হিসেবে সেদিকেই পথ ধরল আদৃত,পৌঁছে গেল সেখানে অবশেষে।

আদ্রিশ চেয়ারে মাথা হেলিয়ে দিয়ে বসে আছে চোখ বুজে,তিক্ত সকল ভাবনার চাপে মাথাটা বুঝি এখনই ফাটবে,চোখের সামনে যেন ধরা পরছে জীবনে করে যাওয়া সকল ভুল,বুঝে উঠতে সক্ষম হচ্ছে ভালোবাসার উপর মোহ এর অবস্থান করিয়ে কতো বড় ক্ষতি করে গেছে সে নিজের,চাইলেও সে এবার আঁখিকে ফিরাতে পারবে না,এদিকে রিদিকাকে পাশে রাখার চিন্তা যেন এখন দূর দূর অব্দি নেই,আজ বুঝতে পারছে কাছের মানুষের কাছ থেকে ধোঁকা মেনে নেওয়া কতটা যন্ত্রণার।ঠিক তখনই আদৃত এসেই আদ্রিশের কলার চেঁপে ধরে দার করিয়ে প্রবল এক ঘুষিতে তাকে ফ্লোরে ফেলে দিলো,আদ্রিশ তার জবাবে নিজেও আদৃতের উপর ঝাপিয়ে পরল,দু’জনেরই মধ্যে লেগে গেল লড়াই,কেউ কেউ থেকে কম যাচ্ছে না,আদৃত আদ্রিশের উপর বেশ ভারী পরছে তবে,যেহেতু সে আদ্রিশের তুলনায় বেশি দক্ষ ও বলিষ্ঠও।আদৃত আদ্রিশকে মারতে থেকে বলল।

″তোকে আমি ছাড়ব না আদ্রিশ,তুই আমার কাছ থেকে আমার আঁখিকে কেড়ে নিয়েছিস,আমার ছয় টা বছর অন্ধকারে ভরে দিয়েছিস।″

″আমি আঁখিকে কেড়ে নেই নি,ও আমার ছিল,তোর আসার অনেক বছর আগ থেকেই ওর সাথে আমার পরিচয় ছিল,ওকে ভালোবাসি আমি সেই ছোটবেলা থেকেই কিন্তু মধ্যখানে এসে তুই আমার জায়গা নিতে চেয়েছিলি, আমার আঁখিকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলি কিন্তু আমি তা হতে দেই নি,আমার আঁখিকে আমার কাছে ধরে রেখতে যা করতে হয়েছে সব করেছি আমি,কারণ ও শুধুই আমার।″

আদ্রিশের তিক্ত বাণী শুনে আদৃতের রাগের পরিমাণ যেন সীমা পেড়িয়ে গেল,আদ্রিশের উপর দ্বিগুণ হারে ভারী পরল সে।এবার আর আদ্রিশ আদৃতের জবাবে তাকে যথেষ্ট টক্কর দিয়ে উঠতে পারছে না,অতিরিক্ত মারে আদ্রিশকে বেশ দমিয়ে নিয়েছে আদৃত,মা*র*তে মা*র*তে অনেকটা দূর্বল করে ফেলেছে তাকে তাও মা*র*ছে,সময়ের সাথে আদৃতের রাগ যেন বাড়ছেই,যতই মারছে ততই মা*র*তে মন চাইছে,একমাত্র আদ্রিশের প্রানহীন নিস্তব্ধ শরীর যেন তাকে শান্ত করতে পারবে, সেই ভাবনায় আদ্রিশকে মে*রে প্রায় অচেতন অবস্থায় ফ্লোরে ফেলে পাশের চেয়ার তুলে তার উপর দিয়ে মারবে তখনি আঁখি এসে চেয়ারটা পাকড়াও করে।

″কি করছেন ডা.আদৃত?পাগল হলেন আপনি?ওকে মারলে আপনার কি হবে ভেবেছেন?″

″না ভাবি নি আমি আর ভাববোও না,ওর সাহস হয় কী করে তোমাকে নিজের বলে দাবী করার,তুমি আমার ছিলে আমার আছো আর আমারই থাকবে,ওকে আমি প্রাণে মেরে ফেলব।″

″তুই এখনও দাবী করিস আদৃত ও তোর!দেখ ও যদি আমায় আজও ভালোই না বাসত তবে আমাকে কেন বাঁচাত তোর হাত থেকে?মানে বুঝতে পারছিস ও আমাকে এখনও ভালোবাসে,ও আমার।″

আদৃত আবারও আদ্রিশের দিকে তেড়ে আসতে নিলে তার আগে আঁখি আদৃতকে আটকিয়ে বলে।

″দাঁড়ান ডা.আদৃত ওকে জবাবটা আমিই দেই।ছিঃআদ্রিশ,তুমি সত্যিই একটা নিচ,কী দেখে যে তোমাকে জীবনে জায়গা দিতে গেলাম,তোমার জন্য এতো করলাম।তুমি কী মনে করো আমি তোমাকে এখনও ভালোবাসি তাই বাঁচিয়েছি?না আদ্রিশ,বরং আমি চাই নি ডা.আদৃত তোমার মতো নোং*রা*কে মেরে নিজের হাত নোং*রা করুক,কারণ উনি তোমার মতো সস্তা না।আমি চাই না তোমাকে মারার দরুন উনার ভবিষ্যত নষ্ট হোক,সবটাই উনার কথা ভেবে করেছি,যেখানে দূর দূর অব্দি তোমার কোনো ছোঁয়া নেই।চলুন ডা.আদৃত এর মুখ দেখতেও ইচ্ছে করে না এখন আমার।″

″এতটা বাজে হয়ে গেলাম আমি তোমার কাছে?″

″বাজে কে তো সবাই বাজে নজরেই দেখবে তাই না?চলুন ডা.আদৃত। ″

″না আঁখি আমি একে না মেরে শান্তি পাবো না,ওকে তো আমি…″
আদৃত আবারও এগিয়ে গেলে আঁখি তাকে আরও একবার বাঁধা দেয়।তার গালে হাত রেখে শান্ত স্বরে বলে।

ও এতো কিছু করার পরও আমাকে হারিয়ে গেছে ডা.আদৃত,এতো চেয়েও আমাদের আলাদা করতে পারে নি,নিয়তি ঠিকই আমাদের মিলিয়ে দিয়েছে এতেই ওর হার,ওকে ছেড়ে দিন ওর অবস্থায় চলুন আমার সাথে আপনি।″

আঁখির অল্প শান্ত ছোঁয়া মুহুর্তেই আদৃতের সকল রাগ যেন পানি করে দিল,তবে গা জ্ব*লে উঠল আদ্রিশের।

″আঁখি,তুমি ভুলে যেও না তুমি শুধুই আমার,ওই আদৃতকে ছোঁয়ার ভুল করো না,ভালো হবে না।″

″নিজের অবস্থা দেখো আগে,উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতাও জুটিতে উঠতে পারছ না,এদিকে হুমকি দেও আমায়।চলুন ডা.আদৃত। ″

আঁখি আদৃতের হাত ধরে নিয়ে যেতে শুরু করে,আদ্রিশ অসহায়ের মতো আঁখির আদৃতের ধরে থাকা হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।
______________

আজ কুলি করতে যেয়ে রিদিকার দাঁতের ভিতরের দিক থেকে দুটি আক্কেল দাঁত উঠে চলে আসল।রিদিকা অস্থির হয়ে পরল,ও ভালোয় বুঝতে পেরে গেছে ওর শরীরে তৃতীয় ডোজ দেওয়া শেষ,এদিকে আদ্রিশও তাকে ভুল বুঝে গেল,এতো বড় হার রিদিকা কেমনে মানবে!রিদিকা তো হার মানবার পাত্র না।রাগে ক্ষোভে রিদিকার নিজেকেই মারতে ইচ্ছে করছে,ঘরের বিভিন্ন জিনিস ছুড়ে ভেঙে দিয়েছে ইতিমধ্যে। এবার চেঁচিয়ে বলছে।

″না রিদিকা হার মানবে না,আদ্রিশ শুধু আমার,আমার হয়েই থাকবে,ও আমার থেকে দূরে যেতে পারে না,আর যদি তা চায় তবে ওরও সেই হাল হবে যা বাকিদের হয়েছে।না আমি এভাবে বসে থাকব না,আমি আমার সৌন্দর্য হারাতে পারি না,এসব ছাড়া আমার আদ্রিশ আমাকে কি করে ভালোবাসবে!

এবার ছুটে গিয়ে রিদিকা আদ্রিশের ছবি হাতে নিল,তারপর সেটার উপর হাত বুলিয়ে পাগলের মতো অঙ্গভঙ্গিতে বলতে লাগল।

″আমি জানি তুমি আমার রুপে মগ্ন হয়ে আমায় পেতে চেয়েছ,ওই আঁখিকে সরিয়ে আমাকে নিয়ে এসেছ তবে আমি কিভাবে তোমায় যেতে দিই,তোমাকে বাঁধতে হলে তো আমার এই রুপের প্রয়োজন,তুমি চিন্তা করো না,আমি ঠিকই তোমার সেই সুন্দরী রিদিকাতে পরিণত হবো আবার,এসব ভাইরাস আমার কিছুই করবে না।আমি বড় ডাক্তার দেখিয়ে আবারও আগের মতো হয়ে যাব,অতঃপর দু’জন আবারও আগের মতো ভালোবেসে থাকব।তোমাকে আমি কোথাও যেতে দিব না।তুমি শুধুই আমার।
______________

আঁখি ফোন করে তার ড্রাইবারকে বলে দিয়েছে গাড়ি এসে নিয়ে যেতে,তারপর সে নিজেই আদৃতের গাড়ি ড্রাইব করতে শুরু করে,আদৃতকে ড্রাইব করতে দেয় না,রাগে এখনও একরকম কাঁপছে সে,আঁখি ড্রাইব করছে আর আদৃত পাশেই বসে আছে,কিছুই বলছে না আদৃত, একটু পর পর ঠোঁট কামড়াচ্ছে,হাত মুঠো করছে,শরীরের কাপড় ঢিলে করছে,আঁখি জানে আদৃত অতিরিক্ত রাগে আত্নহারা হয়ে পরে,বর্তমানে রাগ দমন করতে না পেরে তার উক্ত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে,আঁখি এবার গাড়ি থামিয়ে দিলো।
তারপর নেমে ওপর দিকে এসে আদৃতের পাশের দরজা খুলল।

″চলুন আমার সাথে।″

অতঃপর আদৃতকে আঁখি একটা খোলা মাঠের মতো জায়গায় নিয়ে গেল,যেখানে বাতাস বইছে বেশ,এবার পানির বোতল খুলে আঁখি আদৃতের সামনে ধরল।

″পান করে নিন,ভালো লাগবে।″

আদৃত বিনা বাক্যে তা হাতে নিয়ে এক চুমুকে পুরো বোতলের পানি পান করে নেয়,অতঃপর ছুড়ে ফেলে বোতলটা,কিছুক্ষণ অল্প নিস্তব্ধতা পালন করার পরও রাগ দমনে ব্যর্থ হয়ে হাটু মুড়ে বসে সজোরে চিৎকার করে উঠে,আঁখি শান্তনা স্বরুপ আদৃতের পাশে বসে তার কাধে হাত রাখলে আদৃত পিছন মুড়েই আঁখিকে জড়িয়ে ধরে বেশ শব্দ করে কেঁদে দেয়,আদৃতকে আঁখি এই প্রথম কাঁদতে দেখল,যাতে চোখ বেয়ে তারও বেড়িয়ে এলো জল।

″কেন আঁখি?কেন আমাদের সাথে এমন হলো?কি দোষ ছিল আমাদের?কেন ওরা আমাদের সাথে এমন করল?তুমি হয়ত কল্পনাও করতে পারবে না আমি এই ছয় টা বছর কতো যন্ত্রণায় পোঁড়েছি,কতটা পীড়া হয়েছে আমার যখন যখন ভেবেছি তুমি আদ্রিশের সাথে আছো,যে আমি তোমার পাশে কোনো ছেলের আনাগোনাও সহ্য করতে পারি না।আমাকে ক্ষমা করে দিও আঁখি,আমি তোমাকে বাঁচাতে পারি নি,রক্ষা করতে পারি নি ওই আদ্রিশের ছলনার হাত থেকে,সেদিন যদি ওদের কথায় কান না দিয়ে ওসব ভুলভালে মন ভাসিয়ে না চলে যেতাম তবে এমনটা কখনও হতো না।আমায় ক্ষমা করে দিও।″

″আপনার কোনো দোষ ছিল না,সবই আমাদের কপালের লিখন ছিল,যা চাইলেও কেউ বদলাতে পারত না কখনও।নিয়তি আবার আমাদের মিলিয়ে দিয়েছ তো,তাই অতীত ভেবে কষ্ট পাওয়ার চেয়ে বর্তমান ভেবে খুশি হওয়াটাই ভালো হবে, তাই না?প্লিজ আপনি কান্না বন্ধ করুন এবার।″

আদৃতকে ছাড়িয়ে তার চোখের জল মুছে দিতে দিতে কথাগুলো বলে গেল আঁখি,আদৃত বিমোহিত দৃষ্টি আঁখির উপর স্থির রেখে বলে গেল।

″তুমি কি আমার অতীতের ওই বিষাদ মুছিয়ে দিবে আঁখি?ভালোবাসবে আমায় আবার ঠিক আগের মতো?আনন্দে ভরিয়ে দিবে আমার জীবন আবারও?বলো না আঁখি,বলো না ভালোবাসতে শিখাবে,আবারও হাসতে শিখাবে,আমাকে নিয়েই মত্ত হবে আবারও?″

আদৃতের কথাগুলো শুনে মুখে মলিনতা বিরাজ করে যায় আঁখির, উঠে দাঁড়ায় সে,নিরাশ ভাব নিয়ে আদ্রিশও উঠে পরে।

″কি হলো আঁখি,কিছু বলছ না যে?″

″কি বলব আমি,অনেক কিছু পাল্টে গেছে ডা.আদৃত,আমি সেই আগের আঁখি নই আপনার,আপনি অবিবাহিত আর আমি এখন ডিভোর্সি,আপনার জীবনে আমি প্রথম নারী হলেও আমার জীবনে আপনি প্রথম ভালোবাসা হয়েও দ্বিতীয় পুরুষের মর্যাদা পাবেন যা আমি কখনই মেনে নিতে পারব না,আমি আপনার যোগ্য না।″

″খবরদার আঁখি যদি কথাটা আবারও বলেছ তো,আমার জীবনে এসব কিছু কখনও মেটার করে না,আর এসব কথা তোমার মুখে মানায়ও না,আমার তুমি হলেই চলবে আর কিছু চাই না।″

″আপনি বুঝতে পারছেন না,সমাজে আপনারও আলাদা নাম ডাক আছে,অবিবাহিত হয়ে ডিভোর্সিকে বিয়ে করলে কি হবে ভাবতেই পারছেন।″

″এসব কথা আমার হিটলার আঁখির কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য না,সমাজের কথা ভেবে আমরা নিজেদের জীবন নাশ করে তো পারব না,সমাজের কিছু বাজে লোকদের কথা শোনার ভয়ে বেঁচে থাকা তো ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে না।″

″কিন্তু আপনার পরিবারও কী…″

″হুশ,একদম চুপ আর কোনো কথা না।এতোদিন দাবী খাটাই নি,কিন্তু এখন খাটাব,আমি তোমাকে আর হারাতে পারব না,নয়ত পাগল হয়ে যাব।″

কথাগুলো বলার ছলে পকেট থেকে হিরের আংটি বের করে আঁখির অনামিকা আঙুলে পরিয়ে দিল আদৃত।

″এ কী করলেন আপনি!″

″বেশ করেছি,অনেক আগেই করা উচিৎ ছিল।এই আংটিটা আমি ছয় বছর আগে কিনেছিলাম তোমাকে প্রপোজ করব বলে কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছিলাম সেদিন,তারপর থেকে কখনও আংটিটা আমি নিজের থেকে দূর করি নি,সবসময় আমার কাছে রাখতাম,এটা আমায় মনে করিয়ে দিত আমি কী হারিয়ে গেছি।″

″এতো ভালোবাসেন আমায়!″

″আমার ভালোবাসার গভীরত্ব খোঁজতে এসো না সুখপাখি নিজেই তলিয়ে যাবে।″

″বড্ড ভয় করছে যে সেপথে আবারও এগিয়ে যেতে।″

″আমি থাকতে ভয় কিসের,বিশ্বাস করে হাতটা ধরো,শেষ নিশ্বাস অব্দি আগলে রাখব।বলো না একবার ভালোবাসো,আমাকে আপন করে নিতে চাও।″

″আমার সময় লাগবে।″

″ঠিক আছে নাও সময়,দিলাম দু’দিন ভেবে নাও,দু’দিন পর যদি আংটিটা হাতে না দেখি তাহলে ভাববো পর করে দিয়েছ আর যদি ওটা হাতে থাকে তাহলে ভাববো নতুন করে আপন করে নিতে চাও।″

″মাত্র দু’দিন।″

″যা তোমার জন্য দু’দিন তা আমার জন্য শত যুগ সুখপাখি,আর দূরত্ব সইতে পারব না তোমার।″

″আর যদি আংটিটা খুলে নেই,চলে যাবেন আমাকে ছেড়ে?″

″ মরণের পর সেই আঁখিরাতেও পিছু নিব তোমার সমস্যা হবে কী তাতে?তোমার সমস্যা হলে হোক,এই আদৃত না হয় তোমার পা*গ*ল প্রেমিক হয়েই রয়ে যাবে।″

চলবে…