প্রমত্ত অঙ্গনা পর্ব-৪৬+৪৭

0
417

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(৪৬)

আঁখি আদৃতের জ্ঞান ফিরালে আদৃত হকচকিয়ে উঠে আঁখিকে জিজ্ঞেস করে।

″আঁখি তুমি ঠিক আছো তো?আদ্রিশ তোমাকে কিছু করে নিত?″

″আরে না আমি ঠিক আছি,উঠুন আপনি।″

আঁখি আদৃতকে হয়ে যাওয়া সবকিছু বলে যায় শুধু নিজের দিক পরে।অতঃপর আদৃতকে নিয়ে বাড়ি চলে যায়।

হাসপাতালের বিছানায় পরে আছে রিদিকা,গুলির ক্ষত এখনও সারে নি,সুস্থ হলে পুলিশ জেলে নিয়ে যাবে,এদিকে না তো কিছু বলতে পারছে আর না তো হাত পা ভালো করে নাড়াতে,জিসান বেশ কয়েকবার তাকে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করে কিন্তু বলতে চাইলেও বলতে পারে না রিদিকা।এমনকি লিখতে চাইলে তাও পারে না।ডাক্তার বলেছেন ওর শরীরের কর্মক্ষমতা নেই বললেই চলে,ও কখনও আর কথা বলতে পারবে না,আর না তো ভালো করে চলতে পারবে,হাত পা অক্ষম হয়ে গেছে তার,ও বেঁচে থাকবে এটাই অনেক তাছাড়া আর কিছু করতে পারবে না,এখন ওর বাঁচা ম*রা সব কিছুতেই পরনির্ভরশীল হয়ে থাকতে হবে তাকে।ইন্সপেক্টর জিসান পরলেন বড্ড দুশ্চিন্তায়।

″স্যার,কি ভাবছেন?আমরা নকল প্রমত্ত অঙ্গনাকে তো পেয়ে গেলাম,কিন্তু আসল জনের কাছে কিভাবে পৌঁছাব?আপনি তো বললেন নকল জন অব্দি পৌঁছালে আসল জনকে পাওয়া যেতে পারে।″

″না সুমন আমার মনে হয় না ওই আসল জনকে আর পাওয়া যাবে বলে।″

″কেন স্যার?″

″কারণ প্রমত্ত অঙ্গনা যেই হোক না কেন,খুব চালাক,আমি কেন আমার থেকেও সাকসেসফুল অনেক ইন্সপেক্টরও বৃথা গেছেন প্রমত্ত অঙ্গনার পিছন পরে।তবে একদিক থেকে আমার তাকে সমর্থন করতে ইচ্ছে করে,এমন অনেক কেস আসে যা আমরা চাইলেও সমাধান করি না,অনেকেই ক্ষমতার বলে উচ্চ স্থর থেকে ওর্ডার আনিয়ে ছাড়া পায় আমাদের হাত থেকে,পুলিশ হয়েও আমরা কিছু দূর্নীতিবাজ আর ক্ষমতা সম্পন্ন লোকের হাতের ধুলা হয়ে থেকে যাই,এমন জায়গায় বেআইনিভাবে হলেও একজন তো ওইসব অপরাধীদের সাজা দিতে মরিয়া হয়ে আছে।তাই আমি তাকে সমর্থন করি,আসল প্রমত্ত অঙ্গনা যেই হোক না কেন সমাজের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কারীদের দূর করছে,আর আমি চাই বাঘিনী রূপে সে এক ন্যায়ের প্রতিক ও অপরাধীদের জন্য অ*ভি*শা*প হয়ে সমাজের প্রতিটি মানুষের মনে বেঁচে থাকুক।তাই আমিও কেসটা ছেড়ে দিব।নকল জনকে ধরতে পেরেছি এটাই আমার অনেক বড় পাওয়া,তবে আসল জনকে খোঁজে পাওয়া দূরুহই না অসম্ভব ব্যাপার আমার জন্য,বাকিটা উপরের স্থর যেভাবে পারেন তার খোঁজ নিবেন,আমার মনে হয় না কেউ সফল হবেন বলে,আর চাইও না কেউ সফল হোক।প্রমত্ত অঙ্গনা অনেক ভালো মনের কেউ একজন আর যথেষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন, কারণ ও শুধু অপরাধীদের মৃ*ত্যু দান করে না বরং অসহায়দের সহায় হয়।ইন্সপেক্টর ইশতিয়াককে মে*রে ফেললেও তার স্ত্রীকে সেই জব পাইয়ে দিয়েছে।মনে আছে ইশতিয়াকের স্ত্রী আমাদের বলেছিলেন উনি যেখানে জব পেয়েছিলেন সেখানের প্রতিষ্ঠান তাকে নিজে থেকে জব অফার করেছিল,সেখানে গিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইলে উনারা আলাদা কিছুই জানালেন না,শুধু এটুকুই বললেন সেখানের বসের সাথে ইন্সপেক্টর ইশতিয়াকের খুব ভালো সম্পর্ক ছিল তাই তার মৃ*ত্যু*র পর তার স্ত্রীকে তারা জব অফার করে,কিন্তু আমার এই কথার একটুও সত্য বলে মনে হয় নি,আমার যতটুকু মনে হয় প্রমত্ত অঙ্গনাই তাকে জব পাইয়ে দিয়েছিল।হয়ত যেকোনো ভাবে।তবে যেভাবেই হোক প্রমত্ত অঙ্গনা যাই করছে ভালোই করছে।এমন একজন প্রমত্ত অঙ্গনা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে থাকলে দেশটার রূপ পাল্টে যেত।″

″রাগ না করলে একটা কথা বলব স্যার?″

″বলো?″

″আপনি প্রমত্ত অঙ্গনার প্রেমে পরলেন না কি?″

″বউ বাচ্চা আছে তাই তা ভাবতেও পারব না,নয়ত কোনো একদিন আমারও লা*শ পাওয়া যাবে আর পাশে লিখা থাকবে।″

স্ত্রী সন্তানকে ধোকা দান কারির বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।
প্রমত্ত অঙ্গনা…

অতঃপর জিসান সহিত সবাই হেসে উঠল।
__________

দেখতে দেখতে আঁখি আদৃতের বিয়ের দিন চলে আসল।

রাত প্রায় সাড়ে ১১ টা,ছোট্ট এক নদীর জলে ভাসছে এক সাজানো নৌকা,আদৃত শুয়ে আছে তাতে তার বুকে মাথা রেখে শুয়েছে আঁখি,আঁখির মেহেদী রাঙানো হাত হাতে নিয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখে যাচ্ছে আদৃত।আজকে চাঁদ জোৎস্নায় ভরিয়ে দিয়েছে ধরণী,সেই জোৎস্নার আলোতে প্রেমে বিভোর হয়েছে দুটি মন।

″পা*গ*ল হলেন আপনি?রাত পোহালেই তো আমাদের বিয়ের ক্ষণ শুরু,মধ্যরাতে এভাবে নদীর ভ্রমণ করার সখ জাগল কেন হঠাৎ?″

″হুম,কারণ আজকের এই রাত প্রেমিক প্রেমিকা হিসেবে আমাদের শেষ রাত,কাল থেকে আমরা স্বামী স্ত্রী হয়ে যাব,মিশে যাব একে ওপরের অস্তিত্বে,তুমি আমি মিলে জন্ম নিবে আমাদের এক নতুন অস্তিত্ব,তাই বিয়ের আগের এই সুন্দর ক্ষণটাও উপভোগ করতে চাই আমি তোমার সাথে।″

″একটা কথার জবাব দিবেন?আজকাল তো যে কেউ,জীবন থেকে কারো চলে যাওয়ার পরপরই অন্যকে নিয়ে আসছে,সেখানে আমার ফিরে আসার কোনো আশা না থাকা সত্ত্বেও আপনি আমারই পথ চেয়ে রইলেন!″

″তুমি আছো তো এই জীবনে সুখ আছে আঁখি,তুমি ছাড়া যে আমি জীবন্ত লাশ,প্রাণহীন কেউ জীবনে রং কি করে ভরবে?″

″আপনি আমাকে এতো ভালোবাসেন কেন?আমি কি খুব জরুরি আপনার জীবনে?″

বাধন হারা মনটা আমার,
শাসন বারণ মানে না।
তোমার প্রেমে পাগল পরাণ,
আর কিছু তো জানে না।
চোখের স্বপন তুমি,বুকের কাঁপন তুমি
কতো আপন তুমি,জানা নাই,নাই…
তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই,
আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই।
তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই,
আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই।

″আপনি সত্যিই একটা পা*গ*ল।″

″হুম তোমার পা*গ*ল।″

″আচ্ছা ডা.সাহেব,কখনও যদি আমার খুব বড় কোনো সত্য আপনার সামনে আসে,আমি যদি আপনার কাছ থেকে বড় কিছু লুকিয়ে যাই,আপনি কি আমায় ভুল বুঝবেন?ছেড়ে চলে যাবেন আমায়?″

আদৃত এবার উঠে বসে আঁখিকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিল শক্ত করে।

″যে বিষয় তুমি আমার থেকে লুকাবে নিশ্চিত কোনো কারণ থাকবে,আর আমি তোমার লুকানো সত্য কখনও জানতে যাব না,আমি ততটুকুই জানব যতটুকু তুমি আমায় বলবে আর কিছু মন দিয়ে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করব,আর যদিও বড় কোনো সত্য কখনও সামনে আসে যা আমাকে তোমার থেকে দূর করবে তাকে আমি মিথ্যে বলে অদেখা করে দিব।কারণ আমার শুধু তোমাকে চাই।″

″আই লাভ ইউ ডা.সাহেব।″

″লাভ ইউ মোর আমার ডা.সাহেবা।জানো আজকে তোমাকে কেমন জানি আলাদা লাগছে,তুমি তো এমনিতেই মোহনীয়,কিন্তু আজকের মোহনীয় ভাবটা বেশি।″

″আর এমনটা কেন লাগছে জানতে পারি?″

″কারণ তুমি মিস থেকে আমার মিসেস হতে চলেছ,দিনটা শুরু হয়ে গেছে।″

আদৃত আঁখিকে তার হাতের ঘড়িতে দেখালো তখন রাত ১২ টা বাজে,আঁখি তা দেখে হেসে আবারও আদৃতকে জড়িয়ে ধরল।

″আচ্ছা ডা.আদৃত, আমি যে মা হতে পারব না তাতেও কি আপনার কোনো অসুবিধে নেই?″

″এমন কথা আবারও শুনতে চাই না আমি আঁখি,আমার শুধু তুমি হলেই চলবে,আর ডাক্তার হয়ে এমন কথা আর যাকেই হোক তোমার মুখে মানায় না,তোমার জায়গায় যদি আমি বাবা হতে অক্ষম হতাম তখন কি তুমি আমায় বিয়ে করতে না? এসব কথা আর মাথায়ও আনবে না বলে দিলাম।″

″ঠিক আছে″

আঁখি আদৃতের বুকে মাথা রেখে রহস্যময়ী একটা হাসি দিয়ে বলল।
___________

আঁখির বিয়ের তড়িঘড়ি শুরু হয়েছে,বিয়ের লেহেঙ্গাতে আঁখিকে দেখে চোখ ভরে এলো তার বাবা মায়ের।আঁখি এগিয়ে গিয়ে তাদের সালাম করল।

″এই তো সেদিন নার্স হাতে রেখে বলেছিল,স্যার আপনার একটা ফুটফুটে রাজকন্যা হয়েছে,সেদিন কোলে নিয়ে কতো আদর করেছিলাম তা শুধু আমি জানি,আমার সেই পা*গ*লি প্রমত্ত অঙ্গনা যে আজ কত বড় হয়ে গেছে বিশ্বাস হচ্ছে না নিজের চোখে।″

″আজ তোর বাবা আর ভাইয়ের জন্য তোর থেকে তিনটে বছর দূরে থাকলাম।অবশেষে তোকে পাশে পেলাম তো অন্যরা নিজেদের ঘরে নিয়ে যাওয়ার জেদ করছে তোকে,ইচ্ছে করছে তোকে বুকে লুকিয়ে নেই।″

″বাবা,মাম্মাম,তোমরা এমনটা করলে আমি কিন্তু যাব না,পরে ডা.আদৃত আবার সুইসাইড করতে নিলে দায়ভার কিন্তু তোমাদের, এমনিই কাঁদিয়ে আমার এতো টাকার মেকআপ নষ্ট করছ।″

আঁখির কথায় সবাই হেঁসে ফেলে,আহিল ওর কান মুড়ো দিয়ে বলল।

″ওই বা*ট*পা*র ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ করিয়ে ডং করছিস।বাবা মনে আছে তোমার ডাক্তার যখন ওকে এনে তোমার কোলে দিয়েছিল তখন ও সাথে সাথে হিসু করে দিয়েছিল।″

″ভাইয়া আমি তোকে ছাড়ব না।″

″মাম্মাম বাঁচাও আমায়,নিজের বিয়ের দিনও শেওলা গাছের পে*ত্নী পরেছে গেছে আমার পিছন,বাঁচাও আমায়।″

″দাঁড়া এখনই তোর ঘার ম*ট*কা*ব।″

″ওরে থাম তোরা,এই পা*গ*ল মেয়েটা আমার কখনও শুধরাবে না।″হাসতে হাসতে বললেন আঁখির মাম্মাম।

সবাই হাসতে লাগল।বিয়েটা একটা কনভেনশন হলে রাখা হয়েছে।

বরের সাজে আদৃতকে দেখে তার বাবা মায়ের মন জুরিয়ে গেল।আদৃত বাবা মাকে সালাম করে নিল।দু’জনই দোয়া করলেন তাকে।

″জলদি করে চল,আঁখি মাকে ঘরের লক্ষি করে ঘরে নিয়ে আসি।″

″হয়েছে আর ডং করতে হবে না তোমায়,যা করেছ।আমার ছেলেটাকে মারতে বসেছিলে আর এখন ডং করা হচ্ছে, অভিনয় করা বন্ধ করো আরিয়ান,আমার আঁখি মা আমার জন্য আসছে এখানে,তোমার কিছুই হয় না ও।″

″শায়েলা আমার কথাটা তো শুনো।″

″আদৃত চলে আয় জলদি,আমি দেখি কোনোদিকে কিছু কম পরেছে কি না।″

″দেখলি তো তোর মা কিভাবে চলে গেল।ভুল করে গেছি,ক্ষমা করা কি যায় না?″

″চিন্তা করো না বাবা,আমি মায়ের সাথে কথা বলব।″

″হ্যাঁ বাবা চলো,আমিও কথা বলব মায়ের সাথে।″
″সিয়াম তুমি মিহির কে নিয়ে আসো,আমি নিশিকে নিয়ে যাই।″

আদৃত বরের গাড়িতে উঠবে তখনই কোথাও হতে ছোটে এলো রিংকি,আদৃতকে জড়িয়ে ধরতে যাবে তার আগে আদৃত সরে দাঁড়ালো,শায়েলা বেগম তার দিকে এগিয়ে যেতে নিলে উনাকে আটকালো আদৃত।

″মা,আমি দেখছি।″
″কি ব্যাপার?এখানে কি করছ তুমি রিংকি।″

″তুমি প্লিজ আঁখিকে বিয়ে করো না,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আদৃত।″

″দেখো রিংকি আমি তোমার ভালোবাসার সম্মান করি,কিন্তু আমি তার প্রতিদান দিতে পারব না,আমি আঁখিকে খুব ভালোবাসি,তুমি আমার কাছে যে ভালোবাসা চাও তা তোমাকে তো কি কাউকেই দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না,আমার ভালোবাসায় শুধু আঁখির রাজত্ব। আশা করি বুঝবে তুমি,তুমি যথেষ্ট ম্যাচিওর,এছাড়াও এডাল্ট, আমার থেকেও ভালো কেউ পেয়ে যাবে তুমি দোয়া করি আল্লাহর কাছে।চলি।″

আদৃত গাড়িতে উঠে চলে গেল।রিংকি ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার যাওয়ার পানে।
আঁখি কনভেনশন হলের সামনে নামবে তখনই তার সামনে প্রকট হলো আদ্রিশ।কাকুতি ভরা স্বরে বলল।

″আঁখি শেষবারের জন্য ক্ষমা চাইছি ক্ষমা করে দাও আমায়,চলে আসো আমার জীবনে,আমি আমার ভাগের সাজা পেয়ে গেছি কিন্তু আর সইতে পারব না তোমার দূরত্ব,আমি পা*গ*ল হয়ে যাব আঁখি তোমাকে ছাড়া,আর সাজা দিও না আমায়,সেই ভুল আর আমি করব না আবার,ফিরে আসো আমার জীবনে।″

আজ আঁখি একদম শান্ত গলায় জবাব দিলো।

″জানো আদ্রিশ যে যা করবে প্রতিদানস্বরুপ তাই পায়,আজ তুমি আমার কাছে নিজের জীবনে দ্বিতীয় সুযোগ চেয়ে নিচ্ছ,চেয়ে নিচ্ছ ভালোবাসার ভিক্ষে,কিন্তু তুমি তো আমাকে সেই সুযোগটাই দাও নি একবার,সোজাই জীবনে নিয়ে আসলে কাউকে,অনায়াসে জীবনে নতুন রং ভরে নিলে,আমাকে সোফায় বসিয়ে রেখে অন্যের সাথে রাত কাটানোর সুবিধায় কক্ষের দরজা বন্ধ করলে আমার চোখের সামনে,রঙিন রাত পার করলে,অন্যের দেওয়া ভালোবাসার চিহ্ন শরীরে নিয়ে আমার সামনে এলে।কখনও কি ভেবেছ,সেই মুহুর্তে তোমার শরীরে রিদিকার ভালোবাসার দেওয়া দাঁগগুলো কতটা পীড়া দান করেছিল আমার মনে?আজ যখন আমি অন্যের হতে যাচ্ছি তবে তা বড্ড পেরেশান করছে তোমায়,ভেবেছ কখনও আমি কিভাবে তোমাকে অন্যের সাথে মেনে নিয়েছি?তবুও তোমাকে ক্ষমা করে দেওয়ার কথা ভাবা যেত কিন্তু এখন তার কোনো সুযোগই নেই,তুমি আমার জীবন থেকে আমার ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছ,যে ভালোবাসা সহিত আমি তোমার সাথে ছিলাম তা ছিল শুধু এক মিথ্যে,ডা.আদৃতের ভালোবাসার অংশ মিথ্যে দিয়ে ঢেকে তুমি নিজের করে নিয়েছিলে।কিন্তু আজ তা আবারও সত্য মানুষের নিকট পৌঁছে গেল।আমি ডা.আদৃতকে ভালোবেসেছিলাম,বাসি আর আজীবন ভালোবাসব,মাঝখান থেকে তুমি ছিলে শুধুই একটা ভুল মাত্র।″

″আজ আমাদের বিয়ের দিন আদ্রিশ তাই আমিও তোমার উপর হাত তুলতে চাইছি না,যতই হোক তোমার জন্য আমি ওকে হারিয়ে গেলেও তোমার জন্যই আবার ফিরে পেয়েছি,আমাদের জন্য দোয়া করতে না পারলেও দূরে থাকবে আশা করি।কারণ পাশে আসার চেষ্টা করলেও আঁখিকে পাবে না।ও এখন শুধুই আমার।″

আদৃত বরের বেশে বেড়িয়ে এসে আঁখির হাতধরে কথাগুলো আদ্রিশের উদ্দেশ্যে বলে আঁখিকে নিয়ে চলে যায় ভিতরে,আদ্রিশ অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকল বাহিরে।

চলবে…

#প্রমত্ত_অঙ্গনা
#লেখিকা_আরোহী_নুর
(৪৭)

অনেক ধুমধামের সহিত সম্পন্ন হলো আঁখি আদৃতের বিয়ে,আদৃত অবশেষে নিল সস্তির নিশ্বাস,হাজারো প্রতিকূলতা পেরিয়ে আঁখিকে নিজের করেই নিল সে আজ,এবার তাকে আর হাতছাড়া করবে না।বিদায়ের ক্ষণ এসে গেলে আঁখির পরিবার বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে উঠেন সাথে আদ্রিশের পরিবারও,আঁখি দুই পরিবারের প্রতিই দূর্বল হয়ে পরে তখন,সবাইকে একে একে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে।আশরাফ খান মেয়ের হাত আদৃতের হাতে দিয়ে বললেন।

″আমার নয়নের মনি তোমার হাতে তুলে দিলাম আদৃত,আমার মেয়ের জীবনে কিছুই চাই না,সব সক্ষমতা ওর মধ্যে আছে,শুধু ও একটু ভালোবাসার কাঙাল, আমার পাগলি মেয়েটাকে জীবনভরের ভালোবাসাটা দিও শুধু।″

″চিন্তা করবেন না স্যার,আপনার নয়নের মনিকে আমি প্রাণ দিয়ে হলেও আগলে রাখব আজীবন।″

আঁখি আদৃত বাবা মায়েদের সালাম করে নিল। তাদের গাড়িতে তুলে দেওয়া হলো।গাড়িতে উঠার সময় দেখতে পেল আঁখি –আদ্রিশ অদূরে দাঁড়িয়ে আছে, জল এখনও বয়ে পরছে চোখ দিয়ে, আঁখি দ্বিতীয়বার আর না তাকিয়ে উঠে গেল গাড়িতে,আদ্রিশ পুরো বিয়ের সময়টাতে বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল,আঁখির গার্ড আর হলের সিকিউরিটি গার্ড তাকে ভিতরে যেতে দেয় নি আদ্রিশ অনেক চেষ্টা করলেও।অনেক বার আঁখির নাম নিয়ে ডেকেছেও কিন্তু তার বিপরীতে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েশে আদ্রিশকে।বর্তমানে নিজেকে পৃথিবীর বোঝা ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না তার,যাকে পাওয়ার জন্য কতো কিছুই না করল আদ্রিশ কখনও তাকে এভাবে হারিয়ে যাবে কল্পনাও করে নি।এই মাত্র আঁখির গাড়ি তার সামনে দিয়ে গেল।

″তোমাকে রিদিকার চেয়েও ভয়ংকর কিছু দিতে চেয়েছিলাম আদ্রিশ কিন্তু পরক্ষণে যখন দেখলাম তুমি অনুতপ্ত, অনুশোচনার আগুনে জ্বলছ তখন নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টালাম,কারণ অনুশোচনার আগুনে পোড়া আর ভালোবাসার মানুষকে অন্যের সাথে মেনে নেওয়ার মতো পীড়াদায়ক কিছু আর হতে পারে না।তুমি সত্যিই আমাকে ভালোবেসেছিলে আদ্রিশ,কিন্তু আফসোস তোমার ভালোবাসায় খুঁত ছিল,আর প্রমত্ত অঙ্গনা তোমার মতদের ছাড় দেয় না,তুমি যতদিন অনুশোচনার আগুনে জ্বলবে ততদিনই স্বাভাবিক থাকবে আদ্রিশ কিন্তু যেদিন জানতে পারব এই অনুশোচনার সমাপ্তি ঘটেছে সেদিন তোমার জীবন আর স্বাভাবিক থাকবে না,অস্বাভাবিক করে দিবে তোমার সবকিছু এই প্রমত্ত অঙ্গনা।″

″এই যে ডা.সাহেবা,কি ভাবা হচ্ছে?এতো কাঁদলে কেন?মাথা ব্যথা করবে না।″

″বাবা-মা ছেড়ে তো আপনি আসেন নি,হুহ।″

আঁখিকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল আদৃত।

″জানো আঁখি সত্যিই নারীদের কোনো তুলনা হয় না,জন্ম থেকে এক জায়গায় বড় হয়ে একটা সময় তাকে অন্য ঘরে চলে যেতে হয়,পুরাতন টান ভুলে নতুন মানুষ নতুন জায়গাকে আপন করে নিতে হয়,যা তারা অনায়াসে মেনে নেয়,হাসিমুখে সব মানিয়ে যায়।আসলেই নারীরা যা পারে তা কোনো পুরুষ কখনও পেরে উঠতে পারবে না,পিরিয়ড থেকে শুরু করে ডেলিভারি পেইন অব্দি যে যন্ত্রণা নারী সহ্য করে কোনো পুরুষের সে ধৈর্য্য আর মনোভাব থাকতে পারে বলে আমার মনে হয় না।″

″যদি পৃথিবীর সব কয়টা পুরুষ আপনার মতো হতো,তবে পৃথিবীটা সত্যিই আলাদা রূপ নিত।″

″ভালোই হয়েছে সব পুরুষ আমার মতো না।″

″কেন!″

″কারণ তখন তুমি আমার উপরও অনেকটা অপশন পেয়ে যেতে।″

আঁখি আদৃতের বুক থেকে নিজেকে সরিয়ে এবার অনেক ভাব নিয়ে বলল।

″অপশন তো এখনও অনেক আছে,ওই আমি একটু দয়াবান তো তাই আপনাকে বাছাই করা।

আদৃত এক টান দিয়ে আঁখিকে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে এসে বলল।

″অপশন হতে পারে তোমার কাছে হাজারটা কিন্তু সঠিক উত্তর আমি ছিলাম আর আমিই থাকব।″

″গাড়িতে ড্রাইবার আছে ভুলে গেছেন?″

″তুমি চোখের সামনে থাকলে তো আমি পৃথিবী ভুলে যাই সুখ।″

আঁখির মৃদু কন্ঠে বলা কথার উত্তরে আদৃতের মোহনীয় বাণী আঁখিকে আরও লজ্জায় ফেলে দিল,আদৃতকে ছাড়িয়ে গাড়ির জানালার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল।আদৃত আঁখির হাত ধরেই থাকল।
_________

আদ্রিশ আঁখির স্বপ্নের ভুবনে এসেছে নিজের পরিবারের কাছে।এসেই মায়ের পায়ে লেপ্টে পরেছে,কেঁদে কেঁদে বলতে শুরু করেছে।

″মা গো আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি জানি তোমরা আমায় ক্ষমা করো নি,তাই সেদিন আমাকে হাসপাতালে দেখতে গেলেও,আমার পাশে থেকে আমার দেখাশোনা করলেও আমার সাথে একটা কথাও বলো নি তোমরা,বরং আমি সুস্থ আছি জেনে চলে এলে,আমি না হয় বাজে,তাই বলে কি এতো পর করে দিবে!দেখো না আজ নিঃস্ব হয়ে গেছি।আমার কেউ রইল না মা,ওই রিদিকা আমার সব কেড়ে নিল,কেড়ে নিল আমার আঁখিকেও।″

মায়ের মন আর শক্ত রাখতে পারলেন না,আদ্রিশকে পা থেকে তুলে চোখের জল মুছে দিয়ে বললেন।

″ভেবেছিলাম তোকে কখনও ক্ষমা করব না,কিন্তু মা হয়ে যে নিরুপায় আমি,নয় মাস গর্ভে ধরেছি তোকে আমি,কী করে পর করে দিব!″

″ভাইয়া, ভাবী ক্ষমা করে দাও আমায়,আমি সত্যিই আজ লজ্জিত। ″

″আমরা তোর উপর আর রেগে নেই আদ্রিশ,তুই তোর ভুল বুঝতে পেরেছিস এটাই অনেক।″

″তোমরা আমার সাথে চলো,আমরা আবার একসাথে থাকব।″

″না,আদ্রিশ এমনটা আর হয় না,আমরা এখানেও বেশিদিন থাকব না,আমি একটা ব্যবসা শুরু করেছি আর কম দিনে অনেক উন্নতিও হয়েছে, কয়েকদিনেই নিজের উদ্যোগে নিজের একটা বাড়ি তৈরি করার কাজ লাগাব।″

″কেন ভাইয়া আমাদের বাড়ি আছে তো।″

″না রে ওই বাড়িটাও বাবা তোর নামে লিখে দিয়েছে,আমি নিজের ক্ষমতায় নিজের সবকিছু গড়তে চাই নতুন করে।″

″ভাইয়া এখন আমার সবকিছুই তো তোমরা,প্লিজ তোমরা আমায় ফিরিয়ে দিও না,আমার সাথে চলো,আমি আমার সবকিছু তোমার নামে লিখে দিব,আমার চাই না আর কিছু শুধু তোমরা সাথে চলো।″

″না রে,তা আর হয় না,তুই বরং নিজের জীবন নতুন করে শুরু কর, আমরা তোর পাশে আছি।″

পর করে দিলে না তোমরাও,ওই আঁখির নামক নির্দয়ের মতো তোমরাও পর করে দিলে,ভালোই করেছ, এটাই আমার প্রাপ্য,আমি কারো আপন না, কারো না।″

″আদ্রিশ শোন আমাদের কথা।″

আদ্রিশ কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে চলে এলে আদিলের ডাকে কান না দিয়ে।
________________

আঁখিকে শায়েলা মা আর ইশিকা মিলে আদৃতের কক্ষে নিয়ে এলেন।

″আঁখি তোর কিছুর প্রয়োজন হলে আমাকে আগে ডাক দিবি কেমন?এতো ভারী সাজে ক্লান্ত লাগছে হয়ত যা তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নে।তারপর রেস্ট করবি।

″মামুমি আমি আসলে একটা কথা বলতে চাইছিলাম।″

″হুম,বল?″

″আংকেল যা করেছিলেন তা উনার জায়গা থেকে ঠিকই ছিল।কিন্তু তারপর তো উনি সেটাকে নিজের ভুল হিসেবে ধরে নিয়েছেন,শুধু যে ডা.আদৃতের প্রাণের বদলে উনি বিয়েতে রাজি হয়েছেন তেমনটা নয়,সেদিন আমি উনার চোখে শুধু ডা.আদৃতের জন্য ভালোবাসা নয় অনুশোচনাও দেখতে পেয়েছিলাম,তাই বিয়ের জন্য রাজি হয়েছি,তাছাড়া এনগেজমেন্টের দিন আংকেল নিজের অনেক কাছের আত্নীয়দের তাদের মুখের উপর জবাব দিয়েছিলেন সবার সামনে যখন উনারা আমার আর ডা.আদৃতের বিয়ে নিয়ে আংকেলকে অপদস্ত করতে চাইছিল।আংকেল সত্যিই অনুতপ্ত মামুনি,তোমাকে অনেক ভালোবাসেন,উনাকে আর কষ্ট দিও না।″

″হুম ওকে ভেবে দেখব তোর আংকেল এর কথা,এখন তুই ফ্রেস হো,আদৃত সিয়ামের সাথে কি জানি গল্প করছে একটু সময়ে চলে আসবে।″

শায়েলা মির্জা কথাগুলো বলে চলে গেলে এবার ইশিতা বলল।

″শুন ফ্রেস হয়ে আবার ঘুমিয়ে পরিস না,আজ তো সাধনার রাত।″

″তোকে একটা মে*রে দাঁত সবটা ফেলে দিব,যা বলছি এখান থেকে,দুই সন্তানের মা হয়েছে কিন্তু সুবুদ্ধি উদয় হলো না,বড় ভাবী আমি তোর সম্মান দিবি।″

″বয়েই গেছে আমার,হুহ।″

মশকরাসুচক ভঙ্গিতে চলে গেল ইশিকা।আঁখি হেসে কক্ষে চলে গেল,পুরো কক্ষ যেন নতুন রূপ ধারণ করে আছে,চারিদিকেই ফুল,ডেকোরেশন পুরো আঁখির পছন্দ অনুযায়ী করা হয়েছে,গোলাপের পাঁপড়িতে ছড়ানো বিছানার একপাশে একটা বেগুনী রঙের শাড়ি রাখা পেল আঁখি,সাথে একটা চিরকুট।

″এই যে আমার মিসেস,ভারী সাজটা খুলে শাড়িটা পরে নিও,চুলগুলো ছেড়ে চোখে হালকা কাজল দিও,আমার সুখকে যে আমার ওভাবেই পছন্দ।″

″আঁখি হেসে শাড়িটা নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেল।শাওয়ার নিয়ে শাড়িটা পরে চুল মুছতে মুছতে বেড়িয়ে এলো এবার।″

আঁখিকে হঠাৎ এমনরূপে বেরুতে দেখে ওখানেই আটকা পরল আদৃতের চোখ,যতবারই এই রমণীকে দেখে ততবারই যেন তার প্রেমে নতুন করে পরে।আদৃতের ধ্যান ভঙ্গ করল আঁখি।

″এই যে ডা.সাহেব,ফ্রেস হলেন কখন?আর কোথায়?শেরওয়ানি খুলে দেখি শার্ট পরে নিয়েছেন,আর এভাবে জায়নামাজে বসে কি করছেন?″

″ফ্রেস আমি অন্য ওয়াসরুমে হয়েছি যাতে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায়ে দেরি না হয়। ওযু করে আসুন ডা.সাহেবা।শুকরিয়া আমরা একসাথেই আদায় করব আল্লাহ তায়ালার কাছে।″

″আমি এখুনই আসছি।″

আঁখি ওযু করতে চলে গেল,অতঃপর দু’জন একসাথে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে দু’রাকাত নামায জামায়াতের সহিত আদায় করে নিল।

নামায শেষে আঁখির চোখে আদৃত নিজে কাজল দেওয়ার জেদ করল,কথা অনুযায়ী তাই করল সে।আঁখিও মানা করল না।

″চলো।″

″কোথায়?″

″গেলেই বুঝতে পারবে।″

আঁখির হাত ধরে তাকে ছাঁদের দিকে নিয়ে আসল আদৃত,ছাঁদে প্রবেশ করতেই আরেকদফা চমকে গেল আঁখি।সারাটা ছাঁদ সাজানো,চারিদিকেই ফুল ও বেলুন,তাছাড়া অজস্র মোমবাতি, ছাঁদের এক প্রান্তে একটা বিছানা পাতানো,তার চারিদিক সাদা পর্দায় আবৃত,উপরের দিকটা খোলা,সবকিছুই আঁখির সুন্দর এক কল্পনার মতো মনে হচ্ছে। আদৃত আঁখিকে নিয় বিছানাটাতে বসাল। তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরল চট করে।

″অনেক দিনের সপ্ন ছিল আঁখি তোমার কোলে শুয়ে জোৎস্না বিলাস করব,আজ পূরণ হলো অবশেষে।তুমি হয়ত ভাবছিলে আঁখি, এতো পাগল হয়ে বিয়ে করেছি হয়ত প্রথম রাতেই তোমায় কাছে পেতে চাইব,কিন্তু আমি এমন কিছুটা ভাবি নি,শারিরীক সম্পর্কের জন্য তো পুরো জীবন পরে রয়েছে, বাসর রাতে প্রিয়তমার কোলে জোৎস্না বিলাস করার ক্ষণ আর কতসময় থাকবে,শারিরীক সম্পর্ক ভালোবাসার একটা অংশ মাত্র,পুরো ভালোবাসা জুরে তার রাজ চলতে পারে না,আমার ক্ষেত্রে তো তা একদমই না।তোমার কি খুব খারাপ লাগবে যদি আজকের রাতের কিছুটা ক্ষণ তোমার কেলে শুয়ে কাটাই।″

″খারাপ কেন লাগবে!বরং অনেকগুণ বেশি ভালো লাগবে।″

আঁখির কথার বিপরীতে আদৃত মিষ্টি হাসি উপহারে দিলো।বেশ কিছুক্ষণ আদৃত আঁখির সাথে গল্প করল,নিজের মনে জমে থাকা আঁখির জন্য সেই লুকন্ত অনুভুতিগুলো আজ সব জানানোর প্রচেষ্ঠা করে গেল তাকে।আঁখি তার মধ্য দিয়ে আদৃতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলে এক পর্যায়ে আদৃত ঘুমিয়ে গেল।জোৎস্নার আলোতে আদৃতের সুদর্শন চেহারা আরও সুদর্শন লাগছে আঁখির কাছে,আজ এই গম্ভীর পুরুষের জন্য তার মনের ভালোবাসা ও সম্মান আরও হাজার গুণ বেড়ে গেল।

″আমি সত্যিই ভাগ্যবতী ডা.আদৃত, শুভ্রতা আপু ঠিকই বলেছিলেন আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন,আমার কপালে নিশ্চিত ভালো কিছু আল্লাহ তায়ালা রেখেছেন।আমার ভাগ্যে আপনার মতো কেউ লিখা ছিল তাই আল্লাহ ওই বিশ্বাসঘাতককে সরিয়ে দিলেন আজ আমি তা বুঝতে পারলাম।আজকে আপনি আরেকদফা প্রমাণ করে দিলেন আপনাকে ভালোবেসে আমি ভুল করি নি,আদ্রিশ তো প্রথম দিনই আমায় কাছে টেনেছিল,সে জায়গায় জীবনের এতটা বছর একা পার করেও আজ ভালোবাসার মানুষকে এতো কাছে পেয়েও নিজেকে সামলে রাখলেন,বরং রাতটাকে আরও রঙিন করলেন নিজের বুকের অফুরন্ত ভালাবাসার অনুভুতি প্রকাশের মাধ্যমে। আজ আমার চোখে আপনার সম্মানটা আরও বেড়ে গেল।″

কথাগুলো বলে আঁখি বেশ কিছু সময় আদৃতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল,অপলকে দেখে গেল তাকে বেশ কিছুক্ষণ, এবার পাশের একটা বালিশ নিয়ে তাতে শুইয়ে দিল আঁখি আদৃতকে খুব যত্নসহকারে,তার কপালে আলতো করে চুমু কাটল,অতঃপর নিজে আদৃতের বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরল।

মির্জা হাউজের বাইরের রাস্তায় বসে আছে আদ্রিশ,বার বার তাকাচ্ছে বাড়িটার দিকে,বুকের ভিতর চলছে তোলপাড়।

″তুমি ঠিকই বলেছিলে আঁখি যে যা করবে তাই পাবে।নিয়তি দেখো না আমার টা কিভাবে আমাকেই ফিরিয়ে দিল,সেদিন তোমাকে বাইরে রেখে আমিও অন্যের সাথে রঙিন রাতে মগ্ন ছিলাম,হয়ত সেদিন তুমিও এমনভাবে কেঁদেছ,এমন যন্ত্রণায় পোড়েছো।সেদিন বুঝতে পারি নি তোমার কষ্টটা, এমনটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল আমার কাছে,মোহের পর্দা পরে গিয়েছিল আমার চোখে।কিন্তু আজ যখন চোখের সামনে তুমি অন্যের হয়ে গেলে তখন বুঝতে পারলাম সেদিন তোমার কতটা কষ্ট হয়েছিল।দেখো না আজ তুমি অন্যের বাহুতে আর রাস্তায় বসে তোমার ভালোবাসার হাহাকারে পোড়ে ম*র*ছি আমি।সেদিন যদি নিজেকে সামলে নিতাম তবে আজ এই পরিণীতি হতো না।″

চলবে…