#প্রলয়_পুতুল
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ২
(কপি করা নিষিদ্ধ 🚫❌)
আরুশা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল,
“ও হামারো বন্ধু আজকে তুই ভার্সিটি আসলি না কেন রে?”
রোজ মুখ বাঁকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
“ওলে সোনাটা আমার আমাকে কত মিস করেছে বাবুটা। তা ফেসবুকে যে ক্যান্টিনে বসে আবিদ নামক এক গাঁধার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলে আবার ক্যাপশন দেখে তো আমার নাকের পানি বের হয়ে আবার ভিতরে চলে গেছে। বলদের মতো চশমা পড়িয়া যে ছবি ছেড়েছো ময়না সেই ছবিতে চশমার উপরে ওই গাঁধা আবিদের ব্যাঙের মতো মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।”
আরুশা ক্ষিপ্ত কন্ঠে বলল,
“দেখ ওনার নামে কিছু বলবিনা। উনি ভালো মানুষ। আর তুই সব ভুল ভাবছিস। আমি তো শুধু পিক তুলেছি।”
রোজ আবারো ভেংচি কাটলো।
“কল রাখ ছেমরি। তোর ওই গাঁধার কথা আমি আর শুনতাম না।”
বলেই মুখের উপরে কল কেটে দিলো রোজ।
——–
বাসায় ফিরে উঁচু গলায় মাকে ডাকতে লাগলো জুবায়ের। জাহানারা বেগম হাতে কিছু পরীক্ষার খাতা নিয়ে বসার রুমে আসলেন। চোখের চশমা নাক থেকে তুলে চোখে রাখলেন।
“এভাবে ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছো কেন?”
জুবায়ের রাগী কন্ঠেই বলে উঠলো,
“তুমি ওই মেয়েটার সামনে আমাকে ধমকালে কেন? মেয়েটা কেমন করে হাসছিলো দেখছিলে না?”
জাহানারা বেগম খাতা গুলো দেখতে দেখতে বিরক্তি নিয়ে বললেন,
“আমার ইচ্ছা।”
“আম্মুউ তুমি না জেনেই আমাকে বকেছো। আর ওই মেয়েটা দাঁত বের করে হাসছিলো। ওকে তো কিছু বললে না।”
জাহানারা বেগম উত্তর দিলেন না। তিনি বর্তমানে খাতার দিকেই মনোযোগী। জুবায়ের তা দেখে পা দিয়ে মেঝেতে দুটো আঘাত করে পিছু ঘুরে হনহনিয়ে যেতে নিবে তখনি দোতালায় উঠার সিঁড়ির সামনে থাকা পাপোসের সাথে উষ্টা খেয়ে হুড়মুড়িয়ে মেঝেতে পরলো জুবায়ের। চিৎপটাং হয়ে পরেছে সে। জাহানারা বেগম সেদিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“দেখে চলতে পারো না। নাকি এখনো বাচ্চাই রয়ে গেছো।”
জুবায়েরের রাগ বাড়লো। জুবায়ের কিছু বলতে নিবে তার আগে জিনিয়ার হাসির শব্দ শুনে অবাক নয়নে এদিকসেদিক তাকালো। জিনিয়া ঠিক ওর সামনে সিঁড়ি দিয়ে নামতে ধরে ওকে দেখে হাসছে। জিনিয়ার যেন হাসি থামছেই না। জুবায়ের তাড়াতাড়ি উঠে পরলো। গর্জন করে বলল,
“এখানে এই অপদর্থটাকে কে রেখেছে?”
কাজের মেয়েটা দৌড়ে এলো জুবায়ের গলা শুনে। মাথা নিচু করে কাচুমাচু করে বলল,
“ছোটসাহেব এই পাপোস তো এখানেই থাকে সবসময়।”
“তোমাকে এতো কথা বলতে কে বলেছে? সব স্টুপিড। আরেক পাগল হাসতেছে। মনে হয় লাফিং গ্যাস ছাড়া হয়েছে।”
বলেই গটগটিয়ে চলে গেলো জুবায়ের। জুবায়ের যেতেই জিনিয়া আরো জোরে হেসে দিলো। মেয়ের হাসি দেখে এতক্ষণে চেপে রাখা হাসিটুকু বের হয়ে এলো জাহানারা বেগম। কাজের মেয়েটাও হেসে দিলো।
জাহানারা বেগম নিজেকে স্বাভাবিক করে বললেন,
“রিমি তুমি তোমার কাজে যাও। আর জিনি হাসা বন্ধ করো। তাছাড়া এরপরে তোমার ভাই কিছু বললে আমি কিছু জানি না।”
রিমি মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো। জিনিয়া মায়ের পাশে বসে আগ্ৰহ নিয়ে বলল,
“আম্মু ভার্সিটিতে আজ কি হয়েছে এমন যে ভাইয়া চেঁচাচ্ছিলো?”
জাহানারা বেগম একটা তপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বললেন,
“ও তেমন কিছু না। পরে বলবোনি। এখন গিয়ে পড়তে বসো। তোমার না পরীক্ষা হচ্ছে।”
জিনিয়া মায়ের কথায় গাল ফুলিয়ে ফেলল। ধুপধাপ পা ফেলে উপরে চলে গেলো। তা দেখে জাহানারা বেগম হাসলেন।
জিনিয়া নিজের রুমে যাওয়ার আগে ভাইয়ের রুমে একটা টুকি দিতে চাইলো কিন্তু তার সে ইচ্ছা পূরণ হলো না। কারণ জুবায়ের রুমে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। তাই অগত্যা নিজের রুমেই গেলো সে।
————–
রোজ বর্তমানে বিছানার ঠিক মাঝ বরাবর বসে ফোন টিপছে আর আইসক্রিম খাচ্ছে।সময় সময় নাক মুছলেও আইসক্রিম সে খাবেই। এই নিয়ে মায়ের সাথে বেশ তর্কও করতে হয়েছে অবশ্য।খানিকক্ষণ আগে তার বাবা নুরুল হোসেন অফিস থেকে ফিরেছেন। তখনি মেয়ের কথামতো আইসক্রিম নিয়ে এসেছেন। সেটাই খাচ্ছিলো রোজ। তখনি রুমে এসে হাজির হলো রোজের বড় ভাবি সারা। সারাকে দেখে রোজ মুচকি হেসে বলল,
“আরে ভাবিজান যে!”
সারা গাল ফুলিয়ে রোজের পাশে এসে বসলো। আইসক্রিমের শেষ অংশটা একেবারে মুখে নিয়ে রোজ ফোন রেখে সারার দিকে এগিয়ে গেলো। সারার দিকে চোখ ছোট ছোট করে বলল,
“কি হয়েছে? দাদাই বকেছে?”
সারা ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,
“আমি ওই লোকের সংসার আর করবো না!”
রোজ মাথায় হাত রেখে চোখ পিটপিট করে বলতে লাগলো,
“হায়রে আমার ভাবিজানরে এখন কে দেখবে গো। আমার ভাবিজান কার সঙ্গে ঝগড়া করবে গো!”
সারা কটমটিয়ে রোজের দিকে তাকাতেই রোজ দাঁত বের করে হাসার চেষ্টা করলো। তা দেখে সারা এবার কেঁদেই দিলো। রোজ এবার কিছুটা ভরকালো। সারাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“কি হয়েছে বলো আমায়?”
সারা নাক টেনে বলল,
“কাল তোমার দাদাই নাকি চট্টগ্রাম যাবে অফিসের কাজে। আর আমাকে আগে থেকে কিছুই বলেনি। এখন এসে বলছে সকালে চলে যাবো। আমি কি যাওয়ার কথা না করতাম নাকি? আসলে ও আমাকে আপনই ভাবে না তাই তো এমন করে আমার সাথে। আমি থাকবো না ওই লোকের সাথে।”
রোজ মুহুর্তেই সিরিয়াস ভঙ্গিতে চলে গেলো।
“কিহ দাদাই এই কাজ করেছে? আমি আজকে ওকে ছেড়ে দিবো না। আমি দেখে নিচ্ছি ওকে।”
রোজ সারার চোখের পানিটুকু মুছিয়ে দিয়ে বলল,
“তুমি আজ আমার সাথে থাকবে। এটাই ওই বেত্তুমিজের শাস্তি বুঝলে।”
তখনি দরজা সামনে এসে হুড়মুড়িয়ে পরলো নেহাল।
“এই এই তুই আমাকে শাস্তি দেওয়ার কে রে? কোথায় আমার বউ তোর কাছে আসছে আমার নামে অভিযোগ নিয়ে তুই ওকে বুঝাবি তা না কানে ফুস মন্ত্র দিচ্ছিস!”
রোজ মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“তোমার বউয়ের আগে আমার ভাবিজান। তুমি অন্যায় করেছো। তোমার শাস্তি পেতেই হবে।”
নেহাল করুন দৃষ্টিতে তাকালো সারার দিকে। সারা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। নেহাল মুখটা বাংলার ঘ করে ধপ করে এসে বসলো বিছানায়। বিছানায় বসতে রোজ খেকিয়ে উঠলো,
“এখানে বসলে কেন? ভাবিকে উল্টাপাল্টা বুঝ দিতে। যাও বলছি, অন্যায় করেছো আবার নাটক করতে এসেছো। ভাবি আমার সাথেই থাকবে।”
নেহাল তীব্র নাকোচ করে বলল,
“না জীবনেও না। আমার বউ কেন তোর সাথে থাকবে। আমি মানি না।”
রোজ কিছু বলতে নিবে তার আগেই ওর নাকটা সুরসুর করতে লাগলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই জোরে করে একখানা হাঁচি দিয়ে বসলো রোজ। তবে হাঁচি টা যে সে হাঁচি না। হাঁচির সাথে নাকমুখ দিয়ে বের হয়ে এলো একদলা শ্লেষ্মা। যা গিয়ে পরলো একদম নেহালের টিশার্টে। নেহালের চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেলো। অবাক নয়নে রোজের দিকে তাকালো। রোজ বেডসাইট টেবিলের উপর থেকে টিস্যু নিয়ে মুখটা মুছে দাঁত বের করে বোকামোর হাসি হাসলো।
“পিচ্চুউউউ”
নেহাল চেঁচিয়ে উঠলো। নেহালের চেঁচানো শুনে পাশের রুম থেকে নুহান দৌড় এলো। কিছু বুঝতে না পেরে বলল,
“কি হয়েছে দাদাই?”
নেহাল খিটমিটিয়ে রোজের দিকে তাকালো। রোজ ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
“এমন ভাব করছো যেন বমি করে দিয়েছি। একটু সর্দি লেগেছে বৃষ্টিতে ভিজে। কোথায় আলুতালু করবে তা না!”
রোজ আর নেহালের কান্ড দেখে নুহান আর সারা একে অপরের দিকে তাকালো। পরমুহূর্তেই হো হো করে হেসে দিলো। নেহালের মেজাজ আরো গরম হয়ে গেলো। সে হনহনিয়ে রুমে চলে গেলো। নেহাল যেতেই রোজও হেসে দিলো। নুহান আর সারার হাসিও দ্বিগুন হলো।
হাসি থামিয়ে নুহান বলল,
“খেতে চলো এবার। আম্মু তাছাড়া এবার সবাইকে ধুঁয়ে দিবে।”
“যাচ্ছি আমরা যা তুই।”
নুহান চলে গেলো। রোজ সারার দিকে তাকিয়ে ইশারায় যেতে বললো। দুইজন মিলে খাবার টেবিলে বসলো। রোজ বসতেই নুরুল হোসেন বললেন,
“রোজ মামুনি তুমি নাকি আজকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বাসায় ফিরেছো?”
রোজ হাসার চেষ্টা করে বলল,
“আব্বু আসলে কি হয়েছে বলো তো, আমি তো ভার্সিটিতে গেছিলাম। সেখানে গিয়ে শুনি ক্লাস হবে না। ফিরে আসার সময় হঠাৎ করেই বৃষ্টি আসে তাই একটু ভিজে গেছি।”
জান্নাত বেগম স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ওর কথা একদম বিশ্বাস করবেনা। পুরো ভিজে একাকার হয়ে এসেছে। নির্ঘাত বৃষ্টিতে ভিজে আসার সময় রেইনকোটটা গায়ে দিয়ে এসেছে।”
নুরুল হোসেন স্ত্রীর কথায় পাত্তা না দিয়ে রোজের দিকে তাকিয়ে বললেন,
” মা তুমি কি বৃষ্টিতে ভিজেছো?”
রোজ ঠোঁট উল্টে আল্লাদীর হাসি হেসে বলল,
“আব্বু একটু আধটু ভিজলে কিছু হয় না।”
“কিন্তু মা তোমার তো ঠান্ডা লেগে গেছে। তার উপরে তুমি আইসক্রিম খাওয়ার জন্য জিদ করছো। ঠান্ডা লাগার পরে আইসক্রিম খাওয়া কি ঠিক?”
রোজ মাথা নাঁড়িয়ে না বোঝালো।
“আর হবে না আব্বু।”
নুরুল হোসেন হাসলেন। মেয়ের সামনে দুধের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“দুধটুকু খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিবে। তারপর চুপচাপ শুয়ে পরবে।”
রোজ নাকোচ করে বলল,
“আব্বু দুধ না খেলে হয়না।”
জান্নাত বেগম রাগী দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“না হয় না। এবার আমি তোমার আর কোনো কথা শুনবোনা নূর।”
রোজ দেখলো অবস্থা বেগতিক। তাই আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে লাগলো। নেহাল, নুহান আর সারা চুপচাপ খাচ্ছে। নুরুল হোসেন নেহালকে বললেন,
“কালকে কয়টার সময় বের হবে নেহাল?”
নেহাল ধীর গলায় বলল,
“সকাল আটটায় গাড়ি।”
নুরুল হোসেন ছোট করে ওও বলে খাওয়ায় মনোযোগ দিলেন।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করে সারা পা বাড়ালো রোজের রুমের দিকে। যেই না ঢুকতে নিবে তখনি ঝট করে কেউ একজন কোলে তুলে নিলো তাকে। সারা ভয়ে চোখমুখ খিচে বন্ধ করলো। পারফিউমের গন্ধে বুঝে গেছে এটা তার স্বামী নামক আসামি। সারা ঝট করে চোখ খুললো। নিজেকে নেহালের থেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে লাগলো।
“ছাড়ুন আমাকে। আমি থাকবো না আপনার সাথে।”
নেহাল কোনো কথা বলছে না। সে হাঁটা দিয়েছে নিজের রুমের দিকে। রোজ তা পিছন থেকে দেখে মিটমিট করে হাসলো। রোজ নিজের রুমে ঢুকে লাইট অফ করে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পরলো। ফোন টিপতে টিপতে গাইতে লাগলো,
♪♪বন্ধু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ীর সামনে দিয়া
রঙ কইরা হাইট্টা যায়, ফাইট্টা যায়
বুকটা ফাইট্টা যায়
ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়♪♪
#চলবে