প্রাচীর পর্ব-২৪

0
233

#প্রাচীর
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ২৪

নিশাত ইশারায় সজলকে ডাকলো! সজল অবশ্য দেখেও দেখলো না। সে সাইড কেটে যেতে চাইলো। নিশাত এক ফুল নিয়ে ছুঁড়ে মারলো। সেই ফুল গিয়ে পড়ল একেবারে তার পিঠ বরাবর।

সজল বড় একটা শ্বাস ফেললো। এই মেয়ে তাকে এমন জ্বালিয়ে মারছে কেন? তার আসার ইচ্ছে’ই ছিল না। থাকার কথাও না। প্রিয় মানুষকে অন্যের বউ রুপে দেখা চাট্টিখানি কথা না। তবে এই রোবট বুঝলে তো। আসিফ লোকটাকে পাঠিয়ে বলতে গেলে তুলে নিয়ে এসেছে। সে এগিয়ে যেতেই নিশাত বিরক্ত মুখে বললো,– চোখ কোথায় তোমার?

সজলও তার মতো বললো, — খুলে টেবিলের উপরে রেখেছিলাম। আবার পরার সময় পেলাম কোথায়? তুলে নিয়ে এলি।

— ফাজলামি করছো?

— সেটা তোর কাজ।

— সেটাই! তো আমার কাজ তুমি করছো কেন?

— বাদ দে তো ডেকেছিস কেন?

— মা, মামিরা কোথায়? তারা তো এখানে এসে একটু বসতেও পারে। ইঁদুরের মত গর্তে ঢুকে বসে আছে কেন?

— এখানে অনেক লোকজন। তারা ঐখানেই থাক।

— তুমি কি করছো?

— কিছু না। কেন কোন সমস্যা?

— আরে না! কি সমস্যা হবে? বসো! এতো মানুষের সাথে ছবি তুলছি। তোমার সাথে তুলবো না?

— তুলে কি হবে?

— কি হবে আবার? আবার কবে না কবে এমন বউ সাজি। পরের টাকায় ফ্রিতে ফ্রিতে একমাত্র বউয়েরাই তো সাজে।

— আবার কবে বউ সাজি মানে কি? তোর কয়টা বিয়ে করার ইচ্ছা।

— দেখি! আপতত সেই রকম কোন চিন্তা করিনি। তবে আমি কারো জন্য দেবদাস টেবদাস হয়ে বসে থাকবো না।

— কে দেবদাস হয়ে বসে আছে?

— কে আবার তুমি। দ্যা গ্রেট সজল উদ্দিন আকবর মুদি দোকানওয়ালা।

— তোকে তো ভালোবেসে পাপ করে ফেলেছি। এখন বল এই পাপের পায়শ্চিত্ত কিভাবে করি।

— একটা মেয়ে পটাও, চারিদিকে এতো সুন্দরী সুন্দরী ললনা।

সজল উত্তর দিলো না। সে স্টেজ থেকে নামতে গেলো। নিশাত সাথে সাথে বললো, — যাচ্ছো কোথায়? বললাম না ছবি তুলবো।

সজল কথা বাড়ালো না! একটু দূরত্ব রেখে বসলো। বসতেই নিশাত বললো, — আমাকে কেমন লাগছে সজল ভাই?

সজল এবার হাসলো! হেসে নিশাতের মুখের দিকে তাঁকালো। তাঁকিয়েই বললো, — রক্ত জবার মতো।

নিশাতও হাসলো! হাসতেই কবির উঠে এলো স্টেজে। তাকে দেখে নিশাত বললো, — আরে আমাদের হিরো সাহেব। এই গল্পের মেইন নায়ক তো সে। সে যদি না থাকতো নিশাত আজ এখানে থাকতোই না।

কবির হাসলো! হেসে বললো, — কনগ্রাচুলেশন আপু।

— ধন্যবাদ রে ভাই। চাকরি জীবন কেমন যাচ্ছে?

— ভালো।

— আসেন ভাই ছবি তুলি। এই যে এখানে বসেন। আর কখনো সুযোগ হয় কি না, কে জানে? আজব দুনিয়া! যা খুশি করো, হাজার বার করো। কোন দোষ নাই। তবে ভাই বিয়া, একবারই। মরো বাঁচো একবারই। নিয়ম ভাঙলেই আউট। ভদ্র সমাজের গেইম থেকে টাটা, বাই, বাই, চিরবিদায়।

কবির হাসলো! সজল চোখ পাকিয়ে তাঁকালো। যার মানে, মুখ বন্ধ কর নিশাত । নিশাত দেখে আগের মতোই হাসলো।

তখনি ওয়াহিদ তাঁকালো! রং তুলির আঁকা পদ্মফুলের মতো নিশাত বসে আছে। ওয়াহিদ চোখ ফেরাতে পারে না। চোখ ফেরালেই মনে হয় হারিয়ে যাবে। তাই কিছুক্ষণ পর পরই ফিরে ফিরে দেখছে। কেন? সে জানে না। শুধু জানে! আবেগ অনুভূতি সব তৈরি হওয়ার আগেই আল্লাহ এই মেয়েটাকে তার করে দিয়েছে। আর দিয়েছে পর থেকেই তার সব আবেগ, অনুভূতি তৈরি হয়েছেই এই মেয়েটাকে ঘিরে। এই মেয়ে তাকে ভালো বাসুক, না বাসুক, দেখতে পারুক আর না পারুক। এই অনুভূতি তার আর সব সময় তার’ই থাকবে। আর খুব খুব যত্ন করে আগলেও রাখবে। যেমনটা রেখেছে এই যে সেই ছোট বেলা থেকে। সে অবশ্য ধরেই নিয়েছিল, তাকে তার পাওয়া হবে না। তবে উপরওয়ালার হয়ত অন্য কিছু চাওয়ার ছিল। তাই তিনিই সব আয়োজন করে মিলিয়ে দিয়েছেন।

ওয়াহিদ চোখ ফিরেই বন্ধুদের দিকে তাঁকালো! বিজনেস রিলেটেড কিছু গেস্টের সাথে কথা বলার জন্যই সে স্টেজ থেকে নেমেছে, তাছাড়া নিশাতের সোলো ফটোশুট ও হচ্ছে। এই মেয়ে কত ঢং যে জানে আল্লাহ্’ই জানে। তার সাথে লেপটে চেটকে প্রায় গলা ধরে ঝুলে পড়ে এমন ভাবে ছবি তুললো। তুলতে তুলতে আবার বলে, — কেটা কালের বিয়ের ছবি নিয়ে আর কত কাল কাটাবেন। নিন এগুলোও রেখে দিন। বাকি জীবন এমনিতে’ই কেটে যাবে।

তখনি আসিফ এসে জানালো। কিছু গেস্ট এসেছে স্যার, অপরিচিত । তবে পাস কার্ড আছে। ওয়াহিদ সাথে সাথে বললো, — তাদের সম্মানের সাথে ভেতরে এনে বসাও। নিশাতের কিছু গেস্ট আসবে। হয়ত তারাই।

আসিফ চলে গেলো। যেতেই ওয়াহিদ আবার ফিরে তাঁকালো। তাঁকাতেই দেখে নিশাত নেই। তার ভ্রু কুঁচকে গেলো। সে এগিয়ে যাবে তার আগেই তার বন্ধুরা ঘিরে ধরলো। ধরে দুষ্টুমি মাখা কন্ঠে বললো, — এই কয়দিন বউ নিয়ে কি করেছিস শালা। এক সেকেন্ডের জন্য চোখে হারাচ্ছিস না।

ওয়াহিদ বড় একটা শ্বাস ফেললো! ফেলে মনে মনে বললো, — কাবাডি খেলেছি। বউ খেলা ছাড়া আর বুঝে কি? ডেঞ্জারাস খিলাড়ি সে। তার কাছে সবাই কুপোকাত।

মাহফুজদের আজ পুরো ফ্যামিলি এসেছে। মাহফুজ তাদের সাথেই ছিল। নিতু একবার দেখা করেছে, এই পর্যন্তই। আর খবরও নেই। কোথায় আছে কে জানে। তখনি তার মোবাইলে ম্যাসেজ এলো। নিতুর! শাড়িতে নাকি কি প্রবলেম হয়েছে। ওয়াশরুমের সামনে যেতে বললো।

মাহফুজ বিরক্ত হলো। বিরক্ত মুখেই এগিয়ে গেলো। শাড়িতে প্রবলেম হয়েছে সে করবেটা কি? তার তো লোকের অভাব নেই। দু’তিন জন চাঙ্কি পাঙ্কি নিয়ে ঘুরে সে।

সে এগিয়ে যেতেই দেখলো ওয়াশরুমের সামনে ফাঁকা। দেখতো অবস্থা? লেডিস ওয়াশরুম! সে এখান এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে? তখনি কেউ একজন ধাক্কা দিলো। সে অবাক হয়ে গেলো। পেছনে ফিরবে তখনি কেউ বাইরে থেকে দরজা লক করে দিলো। আশ্চর্য! সে এগিয়ে গিয়েই দরজা নব ধরে কিছুক্ষণ ঝাকাঝাকি করলো। চেঁচিয়ে বললো, — দরজা কে লক করেছে? কে? দরজা খোল।

কারো কোন শব্দ এলো না। মিউজিক বাজচ্ছে। তার কন্ঠ খুব বেশি দূরে যাওয়ার কথাও না। চেঁচামেচির শব্দ শুনে নিশাত বেরিয়ে এলো। বিশাল ওয়াশরুম। সামনে লেডিসদের বিভিন্ন প্রয়োজনের জন্য, বাথরুমের সাইডটা ভেতরে। সে দেখে চোখ মুখ আকাশে তুলে বললো, — আপনি এখানে কি করছেন ভাইয়া?

মাহফুজ কেঁপে উঠল। আল্লাহ! সে ঢোক গিলে পেছনের ফিরে তাঁকালো। তার চোখে মুখে অজানা আতঙ্ক। আতঙ্ক নিয়েই তাঁকিয়ে দেখলো, নিশাত দাঁড়িয়ে আছে। সে ঢোক গিলেই বললো, — দরজা কেউ বাইরে থেকে লক করে দিয়েছে।

নিশাত ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গিয়ে বললো, — দরজা লক করবে। আশ্চর্য! কেন? বলেই সে এগিয়ে গেলো। দরজা নবে হাত রাখতেই খুলে গেলো। তার হেসে গুড়িয়ে পড়ার অবস্থা? গড়িয়ে পড়লোও। ভালো মানুষগুলো এত বোকা হয় কেন?

গড়িয়ে পড়তেই মাহফুজ নিশাতের হাত ধরে ফেরালো। এই মেয়েতো এখনি পড়বে, তাছাড়া দরজা লক দেখে তার রুহ্ কেঁপে গিয়েছিল। আর এই ভয়ে’ই হয়তো দরজা খুলতে পারেনি।

তখনি দরজা পুরো খুলে গেলো। নিশাত, মাহফুজ দু’জনেই সামনে তাঁকালো। নিতু, লামিয়া, আরো অনেকে দাঁড়িয়ে আছে। তারা স্তব্ধ হয়ে তাঁকিয়ে আছে।

মাহফুজ তাড়াতাড়ি হাত ছাড়িয়ে নিলো। লামিয়া ঠোঁট টিপে হেসেই দৌড়ে গেলো। এতো বড় সুযোগ সে হাতছাড়া করবে নাকি? তাকে অপমান? অপমানের শোধ তো সে ঠিক নেবে।

নিতু থমকে দাঁড়িয়ে আছে । সে থমকে থাকার মাঝেই চোখ থেকে চুপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো। সে ফিরে যেতে নিলো। মাহফুজ তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে বললো, — নিতু তুমি যা ভাবছো এমন কিছু না।

নিতু শুনলোও না। চলে যেতে নিলো। মাহফুজ হাত ধরে ফেরালো। ফিরিয়ে বললো, — আমাকে চেনো না তুমি?

নিতু উত্তর দিলো না। হাত ছাড়াতে ছাড়াতেই এগিয়ে গেলো। মাজফুজ কাতর সরে বলতে লাগলো, — নিতু প্লিজ, বোঝার চেষ্টা করো।

— “ছাড়ো “বলেই নিতু চেঁচিয়ে উঠল। তার চিৎকারে পুরো হল থমকে গেলো। মিউজিক বন্ধ হয়ে গেলো। এতক্ষণে লামিয়ার অবদানে অনেক মানুষ’ই ঘটনা কিছুটা জেনে গেছে। সবাই এদিকে জড় হতে লাগলো। ওয়াহিদ ভিড় ঠেলে এগিয়ে এলো। এসে নিশাতের দিকে তাঁকালো। সে চুপচাপ ওয়াশরুমের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

সে তার দিকে এগিয়ে যাবে তখনি নিতু কেঁদে উঠল। ওয়াহিদ ফিরে তাঁকালো। নিতু ভাইয়ের বুকে জাপটে পড়লো। ওয়াহিদ কি করবে দিশে পায় না। সে বোনের মাথায় হাত রেখে কোমল সুরে বললো, — কি হয়েছে?

নিতু বলতে পারে না, তার মুখে আটকায়। লামিয়া সাইড থেকে বলে, — আপু কি বলবে? আপনার বউ আর আপনার বোনের জামাই লেডিস ওয়াশরুমে এক সাথে দরজা লাগিয়ে কি করছিল সেটাই জিজ্ঞেস করেন?

ওয়াহিদ আগুন চোখে তাঁকায়। তাঁকিয়ে বলে, – জিভ ছিঁড়ে ফেলবো লামিয়া।

— আমার জিভ ছিঁড়ে ফেললে তো আর সত্য বদলে যাবে না।

— চুপ! আর একটা কথাও না।

— কেন? কেন চুপ থাকবো? তারা রঙ্গলীলা করতে পারে। আমরা মুখ খুললেই দোষ।

সুর্বণা এগিয়ে এলো! ঠাস করে লামিয়ার গালে চড় বসিয়ে দিলো। দিয়ে চেঁচিয়ে বললো, — তোমার সাহস কি করে হয় আমার ছেলের সাথে এভাবে কথা বলার?

যেই লামিয়ার মা এতদিন তেল দিয়ে এসেছে, সেই লামিয়ার মা’ই আজ তেজ দেখিয়ে বললো, — তুমিও কোন সাহসে আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলো? তোমাদের টাকা আছে ঠিক আছে তবে তোমাদেরটা তো খাইয়ে পড়িয়ে মেয়ে বড় করি নি। আবার আমার ছেলে, আমার ছেলে। ছেলেকে পারে না বাগে আনতে। আমার মেয়েকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে আসে। আবার বড় গলায় কথা। আর আমার মেয়ে মিথ্যা বলেছে? আরো মানুষ ছিল না। তাদের জিজ্ঞেস করো? তাছাড়া কাহিনী তো ভুলে যাই নি। যেমন বাপ, তেমনি মেয়ে। এমন মেয়ে আনবে আবার আমরা বললে দোষ।

ওয়াহিদ এক ধমক দিলো। তার ধমকে পুরো হল যেন কেঁপে উঠলো। কেঁপে উঠলো লামিয়ার মাও। সব সময় আপার মুখে ওয়াহিদের জেদের কথা শুনেছে, আজ দেখলো। চোখে রক্ত উঠে গেছে তার। রাগে থরথর করে কাঁপছে। যেন এখনি খুন করে ফেলবে।

সুর্বণা এগিয়ে ছেলে কে শান্ত করতে চাইলো। এখন সে কোন বয়স দেখবে না। ওয়াহিদ হাত উঠিয়ে সুর্বণা কে থামায়। তারপর মাহফুজের দিকে তাঁকায়!

তাঁকাতেই মাহফুজ বলে, — নিশাত আমার বোনের মতো ভাইয়া। এটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট।

সাউড থেকে আরেক জন মুখ বাঁকিয়ে বলে, — ধরা পড়লে সবই অ্যাক্সিডেন্ট।

মাহফুজের মা রেগে বললো, — আমার ছেলেকে আমরা চিনি। তারপর সুর্বণার দিকে তাঁকিয়ে বললো, — আপনার আত্মীয়- স্বজনদের মুখ সামলাতে বলুন। তা না হলে আমি ভুলে যাব, আমাদের কোন সম্পর্ক আছে।

সুর্বণা অসহায় ভাবে ছেলের দিকে তাঁকায়। কি হচ্ছে এখানে? তার মাথায় কিছুই তো ঢুকছে না। সারা জীবনের গুচ্ছিতো সম্মান সব শেষ। বাকি জীবন কি আর মুখ দেখাতে পারবে?

ওয়াহিদ আবারো নিশাতের দিকে তাঁকায়। নিশাত এখনো আগের মতোই দাঁড়িয়ে। তখনি সাইড থেকে একজন বলে, — লেডিস ওয়াশরুমে তাহলে কি করতে গিয়েছিল। বোনের হালচাল দেখতে?

ওয়াহিদ আগুন চোখে তাঁকায়। কে এরা? এদের সে চিনতে পারে না। সে আসিফকে খুঁজে! আসিফ মরেছে কোথায়? সব কয়টাকে খুন করবে সে?

তখনি আরেকজন বলে, — সেটাই লেডিসওয়াশ রুমে আবার কিসের অ্যাক্সিডেন্ট? কেন যাবে সেখানে? এখন যত ঢং।

মাহফুজ চোখ বন্ধ করে। তার মাথা ঘুরছে। বড় একটা শ্বাস ফেলে বলে, — নিতু আমাকে ম্যাসেজ করেছিল। তার শাড়িতে নাকি প্রবলেম। আমি সেটাই দেখতে গিয়েছিলাম।

নিতু অবাক হয়ে ভাইয়ের বুক থেকে মুখ তোলে। রাগে ঘৃণায় তার শরীর শিরশিরিয়ে উঠে। কি মিথ্যাবাদী ! সে রেগেই বলে, — নিজেকে বাঁচাতে আমাকে এখন ব্যবহার করছো ? এতো নিচ তুমি? এসব করতে তোমার বিবেকে বাঁধছে না? অন্তত করার আগে একটা ছেলে আছে তোমার সেটা তো একবার ভাবতে।

মাহফুজ সাথে সাথেই মোবাইল বের করে। করে ম্যাসেজ ওয়াহিদের সামনে তুলে ধরে। ওয়াহিদ দাঁতে দাঁত চেপে নিতুকে এক ঝটকায় সোজা করে। করতেই
মাহফুজ বললো, — আমি ওয়াশরুমের সামনে যেতেই কেউ আমাকে ধাক্কা মারে। আমি ভেতরে চলে যাই। আমি জানিও না নিশাত ভেতরে ছিল। আমার কথা বিশ্বাস না হলে, — সিসিফুটেজ দেখুন ভাইয়া।

নিতু অবাক হয়ে মাহফুজের হাত থেকে মোবাইল নেয়। সাথে সাথে সে নিজের পার্সে হাত দেয়। তার মোবাইল’ই নেই। তার মোবাইল কোথায় সে মনে করতে পারে না।

ওয়াহিদ চোখ বন্ধ করে কয়েকটা শ্বাস ফেলে। নিজেকে শান্ত বললে, — সব দরজা বন্ধ। একটা মানুষও যেন হল থেকে বের হতে না পারে। তারপর চেঁচিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ডাকলো, — আসিফ।

ওয়াহিদের চিৎকারে আসিফ দৌড়ে এলো। সে ছিল সুলতানা আন্টিদের ওখানে। ঘটনা কানে যেতেই সুলতানা আন্টি মাথা ঘুরে পড়ে গেছে।

আসিফের সাথে সজলও এগিয়ে এলো। দুনিয়া উল্টে যাবে তাও এমন কিছু সে নিশাতের ব্যাপারে বিশ্বাস করবে না। সে ডানে বামে তাঁকালো না। সোজা নিশাতের কাছে গেলো। যেতেই নিশাত সজলের দিকে তাঁকালো। এই মেয়েটার দৃষ্টি সে কখনো পড়তে পারে না। সে এগিয়েই বললো, — এখান থেকে চল।

নিশাত উত্তর দেয় না। আগের মতোই দাঁড়িয়ে রইলো। সজল হাত ধরে বললো, — আয়! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাটক দেখার মানে হয় না। নিশাত নড়লো না। আস্তে করে হাত ছাড়িয়ে নিলো, আস্তে করেই বললো, — যাদের সারা অঙ্গে কলঙ্ক, তারা কালি দেখে ভয় পায় না সজল ভাই।

সজল টলমলো দৃষ্টিতে নিশাতের দিকে তাঁকায়। নিশাত ফিরে তাঁকায় না। সে তাঁকায় সুর্বণার দিকে। সুর্বণা চোখে পানি। তখনি সে আশে পাশে চোখ বুলায়, তার মা কই, মা?

আসিফকে দেখেই ওয়াহিদ দাঁত চিবিয়ে বললো, — ম্যানেজার কোথায়? মনিটর চেক কর। সবার সামনে এই ঘটনা হয়েছে। সবার সামনেই সত্য আসবে। সে পর্যন্ত একটা মানুষও হল থেকে বের হবে না।

বলেই নিশাতের দিকে আবার তাঁকালো। এগুতে যাবে, তখনি আবার হইচই হলো। কেউ পালাতে গিয়ে গার্ডের কাছে ধরা পড়েছে। ওয়াহিদ নিশাতের দিকেই কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে রইলো। এই মেয়েটা আর তার সামনে এতো বাঁধা কেন?

তারপর’ই সে ঘুরে হনহনিয়ে দরজার কাছে গেলো। রাগলে তার মাথা ঠিক থাকে না, আজও নেই। যে ধরা পড়েছে, তাকে সে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করলো না। গিয়েই মারতে লাগলো মুখ বরাবর ঘুষি। তার বন্ধুরা তাকে টেনে সরালো। সরাতেই বললো, — এই কুত্তার বাচ্চাকে জিজ্ঞেস কর, কেন পালিয়েছে তা না হলে এক্ষুনি আমি খুন করে ফেলবো।

চলবে……