#প্রাণনাশিনী
#পর্ব০২
#সুহাসিনি_মিমি
দুপুরের তপ্ত করাফাটা রোদ্রে খাঁ খাঁ করছে ধরণী। বাতাসহীন চারপাশ যেন উত্তপ্ত এক চুল্লি। গাছের পাতাগুলোও ক্লান্ত হয়ে নুয়ে পড়েছে। আব্বাস মিয়া সবেই বাজার থেকে ফিরেছেন নিজ গৃহে। ফজরের আজানের সাথেই উঠে চলে গিয়েছেন নিজ দৈনন্দিন কাজে। এটা তার নিত্যদিনের রুটিন।
সকালে গিয়ে বসেছিলেন মাছের আড়তে। বিশাল ব্যবসা। যা তাদের পাটোয়ারি বংশের ঐতিহ্য বহন করে আসছে বহু বছর ধরে। বাজারজুড়ে তাদের এই আড়তের সুনামও কম নয়। প্রায় দশ-পনেরো জন কর্মচারী থাকলেও আব্বাস মিয়া ছাড়া অচল সবাই। ছোট ভাই রমজান মিয়া চেষ্টা করলেও ভাইয়ের অনুপুস্তিতে একা সামলাতে হিমশিম খান। তাই প্রতিদিনের মতো আজও বাজারে যেতে হয়েছিল তাকে।
গ্রামে প্রভাবশালীদের তালিকায় প্রথমেই চেয়ারম্যান পরিবার থাকলেও মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে রয়েছে এই পাটোয়ারি বাড়ি। শক্তি, প্রতিপত্তি আর অর্থবিত্তের দিক থেকে কারও চেয়ে কম নয় তারা।
বাড়িতে ঢুকতেই এক গ্লাস ঠান্ডা পানি এগিয়ে দিলেন সহধর্মিনী আসমা বেগম। তপ্ত রোদে পুড়ে যাওয়া স্বামীর ক্লান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারেন আজও সারাদিন বাজারের কর্মব্যস্ততায় কাটিয়েছেন তিনি। আব্বাস মিয়া ধীরে ধীরে গ্লাসের পানি শেষ করে। সেই ফাঁকেই আসমা বেগম স্বামীর জুতাগুলো খুলে এনে রাখলেন দরজার সামনের ছোট জুতোর রেকটায়।
আব্বাস মিয়া আর তার ভাই রমজান মিয়ার বাড়ির দূরত্ব মিনিট দশেকের মতো। রমজান মিয়া নতুন জায়গায় বাড়ি গড়ে পরিবার নিয়ে উঠে গেলেও আব্বাস মিয়া পারেননি পিতৃভিটা ছাড়তে। এই পুরোনো বাড়ির প্রতিটা কোণে বাবার স্মৃতি জড়িয়ে আছে। মায়ের স্পর্শ লেগে আছে ঘরের দেয়ালে জুড়ে। তাই মায়ার বাঁধনে আজও এখানেই রয়ে গেছেন তিনি। পুরোনো এই দুই তলা বাড়িটিকেই করে তুলেছেন নিজের আশ্রয়কেন্দ্র।
নিচ তলায় একপাশে রান্নাঘর। রান্নাঘরের পাশের ছোট রুমটি নির্ধারিত তার মা বিলকিস বানুর জন্য। বাবার মৃত্যুর পর বৃদ্ধা মায়ের দেখভালের দায়িত্বও যে তারই কাঁধে! এরপরের রুমটি তার নিজের ও সহধর্মিণীর। ওপরে তিনটি রুম। কোনার রুমটি বড় ছেলে শ্রেয়ানের। অন্য কোনার ঘরটিতে থাকে সুবহা। মাঝখানের কক্ষটিরেখে দিয়েছেন মেহমান দেড় জন্য। মাঝে মাঝে ভাইয়ের বাড়ি থেকে কিংবা আত্মীয়-স্বজন এলে আশ্রয় দেন সেই ঘরে।
বাবা বাড়িতে আসার খবর কানে যেতেই হন্ত দন্ত হয়ে নিচে নামে সুবহা। এই অসময়ে মেয়েকে বাড়িতে দেখে আব্বাস আলী মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
–“আজ স্কুলে যান নাই আম্মা?
–“নাহ আব্বা।
–“জামান কল দিয়া বললো আজকে নাকি আপনাগো পরীক্ষা আসিলো। যান নাই কেন?
বাবার কথায় চুপ রয়ে গেলো সুবহা। বলার জন্য কোনো কথা খুঁজে পেলে না আপাতত। এর মাঝেই রান্নাঘর হতে বিলকিস বেগম খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে টেবিলে এনে রাখলেন।
–“তোমার মাইয়া ঘুম থেইকা উঠে কয়টা বাজে জানোনা? স্কুলে পড়ুয়া মাইয়া এতো দেরিতে ঘুম তে উঠলে স্কুলে যাওয়ার সময় থাকে?কইলাম আজ যাওন লাগতো নাহ। তোমার মাইয়া শুনলে তো! ঠিক রেডি হওয়া স্কুলে গেলো। গেলো তো গেলো আবার ঢেঙ্গ ঢেঙ্গ কইরা বাড়িতে ফিরা আইলো।
–“কি আম্মা? স্কুলে গিয়া আবার বাড়িতে ফিরা আসলেন কেন?
বাবার কথায় মাথা নিচু করে রইলো সুবহা। মেয়েটাকে কোনো কিছু বলেও শান্তি নেই।কিভাবে বলবে? একটু জোরে কথা বললেই যে দু চোখ দিয়ে বারিধারা শুরু হয় এই মেয়ের। আজকাল এর দিনে এমন নরম মনের মানুষ হলে চলে? আব্বাস মিয়া আদুরে কণ্ঠে মেয়েকে ডাকলেন। বাবার আদুরে ডাক পেতেই সুবহা গুঁটি গুঁটি পায়ে বাবার সামনে গিয়ে বসলো।
–“কি হইসে আম্মা? স্কুল থেইকা বাড়িতে ফিরা আইসেন কেন?
–“আব্বা দেরি হয়ে যাওয়াতে বাজারের পথ দিয়ে যাইতাসিলাম। পরে…
–“থাক আর বলা লাগবো না। বাজারে গন্ডগোল হইসে এর লাইগা আমনে ভয় পাইয়া বাড়িত আইসা পরসেন তাইনা?
সুবহা নীরব সম্মতিতে দু পাশে মাথা নারে। আব্বাস মিয়া মেয়েকে আদুরে গলায় বলেন,
–“হুনেন আম্মা। আমনে বড় হইতাসেন। এহন আর ছোট নাই। এই গ্রামে এমন ভয় ডর নিয়ে বাস করা যায়না। মনে সাহস রাখতে হয়। এই জমানায় আইসা এতো ভয় পাইলে চলে?
–” তোমার মাইয়া ভয় পায়? ওর সব ভয় শুধু নাওফিক এর মধ্যই সীমাবদ্ধ। এমনিতে তো সবার মাথায় লবন থুইয়া বড়োই খায়। শুধু খালি চেয়ারম্যান এর পোলারে দেখলেই ভয়ে জড়াইয়া ধরে ওরে।
–“আহ আসমা! চুপ থাকো তো।
–“তোমার আস্কারায় তোমার মাইয়া এমন হইসে। লাই দিয়া দিয়া মাথায় উঠাইসো।
–“তোহ আমার মাইয়া রে উঠামু নাতো কি তোমারে উঠামু?
–“হ মাইয়ার বেলায় যত আদর। ওদিক দিয়া পোলা যে সারাদিন কি করে বেড়ায় সে খবর রাখো?
— “শ্রেয়ান কই!
–“কাল রাতে বাড়ি ফিরে নাই। সকালে আইয়া রুমের ঢুকসে। এখনো বাইর হয়নাই।চেয়ারম্যান এর পোলা দেশে আসতে না আসতেই শুরু হইসে আবার।”
–“এতে চেয়ারম্যান এর পোলার দোষ কই। তোমার পোলারে আগে তুমি ঠিক করো। কত করে বললাম শহরে রাবুর কাছে পাঠাইয়া দেই। তুমি শুনসো আমার কথা?
–“হূ কাছে থাকতেই এমন দশা শহরে গেলে কি হইবো জানা আছে।
–“আচ্ছা আগে প্লেটে ভাত দাও। ক্ষুদা লাগছে। পেচাল পরে পাইরো।”
–“ভালা কথা তো তোমার কাছে পেচাল লাগবই। আমি পরসি যত যন্ত্রনায়। এই সুবহা যা ওইডারে ডাইকা উঠা। ভাত খাইতে আইতে বল যলদি।
সুবহা কিছু বললো না। মায়ের আদেশ পাওয়া মাত্রই হন হন করে ছুটলো উপরে ভাইয়ের রুমের দিকে।
**
সকালের সোনালী কিরণ সাদা কাঁচের জানালা ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে রুমে। উঁবু হয়ে শুয়ে থাকা মাসেল দেহি শরীরে একে যাচ্ছে আঁকিবুকি। নিচের দিকটা কমফোর্টে ডাকা। সিল্কি যাকরা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। পিছনে পিঠের বা পাশে একটা পুরোনো সেলাই করা কাঁটা দাগ। বাড়ির কত্রীর আদেশ পালন করতে কাজের মেয়েটি বার কয়েক দরজার সামনে এসে ঘুরে গেছে। তবে ভিতরে ঢুকার সাহস হয়নি। এবারও একই ভাবে এসে দাঁড়িয়ে আছে রুমের সামনে। বাড়ির গৃহিনীর কড়া আদেশ যেন খুব শীগ্রই ডেকে দেয়া হয় রুমে থাকা ব্যক্তিটিক। এই নিয়ে তৃতীয় বার একই রুমের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালো কাজের মেয়ে মর্জিনা। দরজাটা আধা খোলা। ভেতর থেকে কোনো শব্দ আসছে না। যদি এই অসময়ে ডাকলে যদি রেগে যায়?মেজাজ চওড়া এই ব্যক্তিটিকে ভয় পায় মর্জিনা।
দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখে চিত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে ব্যক্তিটি। এক হাত কপালের ওপর রাখা।
–কিরে মর্জিনা! তোকে সেই কখন পাঠিয়েছি উপরে। এখনো ডাকিস নি?”
–মেডাম, বড় স্যার রে আমার কেন জানিনা ভয় লাগে। আপনি যহন আইসেন তহন আমনেই একটু ডাইকা দেন নাহ। আমি নিচে গেলাম। নাস্তা বানাইতে হইবো।”
বলে আর অপেক্ষা করলোনা কাজের মেয়েটি। কোনো রকম উসিলা দেখিয়ে কে”টে পরলো সেখান থেকে। তপ্ত শ্বাস ছাড়লেন চেয়ারম্যান বাড়ির বড় বউ ঝর্ণা বেগম। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলেন কপাল কুচকিয়ে। মেয়েটাকে সেই কখন পাঠিয়েছে ছেলেটাকে ডেকে উঠাতে। অথচ না ডেকে দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে?
–তেজ!বাবা উঠ। তোর বাবা আসছে বাড়িতে। উঠ বাবা।”
মায়ের কথায় নড়াচড়া দিয়ে ফের শুয়ে পরলো নাওফিক। ছেলের পিঠে সেই কাঁটা দাগটায় আঙ্গুল ছুঁয়ে দিলেন ঝর্ণা বেগম। এই ছেলেটা তার অনেক শখের। বিয়ের পরপরই অন্তঃসত্ত্বা হয়েছিলেন তিনি। পরপর দুটো ছেলে হয়ে মা”রা যায় দুদিন থেকেই। এরপর কত ডাক্তার কবিরাজ কোনো কিছু বাদ রাখেন নি তারা।সবাই বলেছিলেন আর বাচ্চা হবেন নাহ তার। শেষমেষ সৌভাগ্যবশত পেটে রয়ে গিয়েছিলো তার এই ছেলে। সেই কত সাবধানে থেকে এই ছেলেকে জন্ম দিয়েছেন তিনি। দশটা মাস কেটেছে অনিদ্রায়। কত নির্ঘুম রাত পারি দিয়েছেন ছেলের অসুস্থতায় তা কেবল সেই জানে। তেজ নামটাও রেখেছেন তারা সকলেই মিলে। ছোট থেকেই ছেলেটা যে ভীষণ জেদি আর একরোগা। কারো কথা শুনতো নাহ। যেটা চাইতো সেটা না এনে দেয়া পর্যন্ত দম নিতো না এই ছেলে। তাইতো সবাই মিলে এই তেজি ছেলের নাম দিয়েছেন তেজ। এরপর কয়েক বছর পর জন্ম হয় তিয়ান এর। তিয়ান তার ছোট ছেলে। তবে তেজ এর মত আদর যত্ন পায়নি তিয়ান।
–“তেজ বাবা!উঠ। তোর বাবা এসেছে বাড়িতে।
মায়ের আদুরে স্পর্শে আড়মোড়া ভাঙে তেজ। বিরক্তির সুরে আওড়ায়,
–“মা! কত করে বলসি তেজ ডেকো না আমায়। ভাল্লাগেনা।”
–“উঠ বাবা। তোর বাবা সেই সকালে বাড়িতে এসেছেন। এমনিতেই রেগে আছেন তোর উপর। আর জামেলা বাঁধাস না বাপ্ আমার। উঠ!
–তুমি যাও আসছি আমি।
ছেলের কথায় আস্বস্থ হয়ে চলে যায় ঝর্ণা বেগম। মা যেতেই আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো নাওফিক। ঘুমু ঘুমু চোখ মেলে তাকালো বেডের বরাবর থাকা দেয়াল ঘড়িটার দিকে।
**
খাবার টেবিলে বসে আছেন তোফাজ্জল চৌধুরী। রাশ ভারী মুখ। কাজের খাতিরে শহরে গিয়েছিলেন গত পরশু। কিছুদিন থাকতে চাইলেও পারলেন নাহ ছেলের হঠাৎ দেশে আসার খবর শুনে। এই ছেলেকে দু বছর আগে বিদেশ পাঠিয়েছিলেন কত শত কাহিনী করে! পেশায় চেয়ারম্যান হলেও শান্তশিষ্ট, ভদ্র, নরম স্বভাবের মানুষ তোফাজ্জল চৌধুরী। মা”রামারি খু”ন খারাপির ধারে কাছে ঘেঁষেন না যথাসম্ভব দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করেই এসেছেন সবসময়। এই দুটো বছর বেশ শান্তিতেই তো ছিলেন সকলে। ছেলের দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকালেন তিনি। ঠিক বরাবর রাখা পাশের চেয়ার টায় বসে আছে নাওফিক। পরোটা দিয়ে গরুর টাটকা রান্না কড়া মাংস চুবিয়ে মুখে পুড়ছে একটু পরপর। তোফাজ্জল সাহেবের ধর্য্যর বাধ ভাঙলো এইবার। ছেলের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললেন,
–“কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ করে দেশে ফিরে আসছো কেন তুমি? বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করেই এসে হাজির হয়েছো!”
নাওফিক ধার ধাড়লো না বাবার কথায়। নির্বিকার ভঙ্গিতে এখনো খেয়েই যাচ্ছে। ছেলের এহেন ভাবলেশহীন রূপ দেখে ফুসে উঠলেন তোফাজ্জল সাহেব। দৃঢ় স্বরে তেতে উঠলেন,
–এভাবে আর কতদিন পার করবে তুমি? বয়স হচ্ছে আমাদের। নিজ দায়িত্ব সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। তোমাকে জন্ম দিয়ে কি লাভ হলো আমাদের? বিয়েও করছো নাহ! বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। তোমার জন্য তোমার ছোট জনকেও বিয়ে করাতে পারছি নাহ। তোমার মায়ের বয়স হয়েছে। একা একা আর কত সামলাবে সে?
–“তুই বিয়ে করবি তিয়ান? মেয়ে দেখবো? ”
পাশে বসে থাকা তিয়ান মনোযোগ দিয়েই শুনছিল বাবা ভাইয়ের জগড়া বিবেদ। হঠাৎ ভাইয়ের এহেন সরাসরি প্রশ্নে ভীষম খেলো তিয়ান। ভাইকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতে দিতে নাওফিক ফের বলে উঠলো,
–“বিয়ের নাম শুনতেই ভীষম খাচ্ছিস ব্যাপার কিরে? সিস্টেম টিস্টেম ঠিক আছেতো তোর? সমস্যা কোনো? থাকলে কিন্তু নির্ধিদায় বলতে পারিস। আমি তোর বড় ভাই হলেও বন্ধুর মত সব শেয়ার করতে পারিস কিন্তু চাইলে।”
–“অসভ্য বেয়াদব ছেলে। সামনে তোমার পিতা বসে আছেন। সেদিকে তো খেয়াল রাখবে। ঝর্ণা বুঝাও ওকে। এইবার যদি আমার কাছে আর একটা নালিশ আসে তাহলে কিন্তু সত্যিই সত্যিই এইবার আমি ওকে তেজ্য পুত্র করবো বলে দিলাম।
বলেই তোফাজ্জল সাহেব উঠে দাঁড়ালেন সেখান থেকে। রাগে রি রি করতে করতে চলে গেলেন নিজ রুমে। ঝর্ণা বেগম রাগী দৃষ্টে চেয়ে সুধালো,
–“বাবার সামনে এসব কি ধরণের কথাবার্তা বলিস তেজ! আমরা তো তোর ভালোই চাই বল বাবা। এভাবে আর কতদিন। তোর থেকে ছোট রাও বিয়ে করে ছেলে মেয়ের বাপ্ হয়ে যাচ্ছে।
–“নাতি নাতনির মুখ দেখতে চাইলে তিয়ান এর ব্যবস্থা করে দাও। আমার পিছনে পরে অযথা সমসয় নষ্ট করোনা।
–“সত্যিই করে বলতো বাবা। তোর কি কাউকে পছন্দ আছে? আমি নিজে গিয়ে কথা বলবো। একবার শুধু বল কাউকে পছন্দ করিস?
–“সময় হলে তোমাদের বলবো নাহ আম্মু। সোজা গিয়ে তুলে নিয়ে আসবো। সেই পর্যন্ত ধর্য্য রাখতে পারলে রাখো।”
**
প্রতিদিনের মতোই স্কুলের ড্রেস গায়ে জড়িয়ে রেডি হচ্ছে সুবহা। আজ সময় করেই স্কুলে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠেছে। এখনো অনেকটা সময় বাকি আছে ক্লাস শুরু হতে। গালে একটু স্নো মেখে ঠোঁটে একটু ন্যাচারাল কালার লিপস্টিক লাগিয়েছে আজ। আজ মনটা ভীষণ ফুরফুরা। কারণ জানা নেই তার। দেয়ালে ঘড়ি টার দিকে তাকিয়ে আরেকবার দেখে নিলো। নাহ! এখনো অনেক সময় আছে হাতে। মনের খুশিতে বেলতলার ঘাট দিয়ে যেতে পারবে সে। নির্ধিদায়। এমন সময় বাড়িতে আসে শিউলি। কাঁধে ব্যাগ,পরনে স্কুলের ড্রেস। গতকাল বিকালে এসেছিলো একবার। কথা শুনিয়েছে সুবহা। শিউলি মাফ চেয়েছে। সুবহা আর রাগ ধরে রাখতে পারেনি। মাফ করে দিয়েছে শিউলিকে। শিউলির সাথে অবশেষে স্কুলের জন্য রওনা দিয়েছে সুবহা।
–“কিরে সুবহা আজ তোকে এতো খুশি খুশি লাগছে কেন রে?
–ফুপি আসবে আগামী সপ্তাহে আমাদের বাড়িতে।”
–“তোর শহরের ফুঁপিটা? ওইযে যার মেয়ে গোবর দেখে বলেছিলো ডার্ক চকোলেট!”
সুবহা নাক মুখ ছিটকালো। ব্রু কুঁচকে বললো,
–“এটা ছাড়া আর কি কোনো উদাহরণ পাস না তুই শিউলি? জানোস তারপরও বার বার এই একই কথা টানতে হবে কেন?
–তোহ কি বলবো বল? গোবর কে কোন আক্কলে ডার্ক চকোলেট এর মত লাগে? তবে যাই বলিস তোর শহরের ভাইটা কিন্তু হেব্বি জোস্!”
–“লুচু মাইয়া।দুনিয়ার সব পোলারেই তো তোর কাছে জোস্ লাগে।
–“লাগবো নাহ! আমার চোখের দৃষ্টি সুন্দর। পবিত্র, পরিষ্কার বুঝসোস? তাই যা দেখি তারেই ভালো লাগে।
—“লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ্জালিমিন!
আচমকা সুবহার পা দুটো থেমে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসা সুরাহ পাঠে ভড়কালো শিউলি। হতোভম্ব চোখে পরখ করলো সুবহা কে।
–“কিরে ভাইয়া। এমন খাম্বার মত দাঁড়াইয়া দোয়া দুরুদ পরতাসোস কেন? ভুত দেখসোস নি?
–“শিউলিরে। সামনে দেখ!”
সুবহার কথায় সামনে তাকায় শিউলি।আসে পাশে তাকিয়েও বিশেষ কিছু দেখতে না পেয়ে প্রত্তুত্বর করে,
–“কি দেখমু? মুরাদ মিয়া রাস্তায় হি”সি করতাসে বইসা। বেডারে কতদিন কইসে আব্বায় যেদিকে ওদিকে হি”সি কইরো না মুরাদ!”
–“হুরো! সামনে দেখ! সামনে!
শিউলি এবার ভালো করে তাকালো সামনে। সাথে সাথে চোখ পরলো বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানবে। অস্ফুট শব্দে বুলি আওড়ালো,
–ঐডা নাওফিক ভাই নাহ?”
চলবে…..