প্রাণনাশিনী পর্ব-১৪

0
1

#প্রাণনাশিনী
#পর্ব_১৪
#সুহাসিনি_মিমি

রাতের আকাশে চাঁদ নেই। চারপাশে ঘনিয়ে আছে ঘুটঘুটে গাঁ হিম ধরা আধার আর নিঃসঙ্গ শিতিল একরাশ নিস্তব্ধতা।

সেই অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসছে একটি কালো বাইক। যার হেডলাইটের আলোতে কেবল সামনে থাকা ধুলোপড়া পথটুকুই আলোকিত করছে। সেই বাইকের পেছনে বসে থাকা লাল জামদানি পরা মেয়েটির চোখে আপাতত কিছুই নেই। না আলো আর না আশ্বাস। দৃষ্টি টুকু স্থির এক অনাগত ভবিষ্যতের দিকে। লোকটা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওকে সেই ধ্যান টুকু পর্যন্ত নেই মেয়েটার মধ্যে।

নাওফিক এসে থামাল এক বিশাল অট্টালিকার সামনে। বাইক এর গর্জন থামতেই মাথা তুলে সামনে তাকালো সুবহা। অমনিই একরাশ বিস্ময় ছড়িয়ে পড়ল ওর চোখে মুখে।

এই বাড়ি সে চেনে। দু’একবার আগে এসেছে এ বাড়িতে। তবে মূল ফটক পেরিয়ে ভিতরের দিকটায় পা রাখার সৌভাগ্য হয়নি কখনও তেমন করে। এটি এ গ্রামের সবথেকে অভিযাত বাড়ির মধ্যে একটি। চৌধুরী বাড়ি!

সুবহার বুকের ভেতরটা কাঁপছে অবিরাম।
মনের মধ্যে ভাসছে বিদায় বেলার ভাইয়ের সেই জ্বলজ্বল করা চোখ দুটো। যেখানে ভালোবাসার আড়ালে চাপা ছিল হাজারটা না বলা কথা। ভাইয়ের প্রতি এক আকাশ পরিমান রাগ, অভিমান সুবহার। ওর ভাই কিভাবে পারলো এমন একটা লোকের হাতে ওকে তুলে দিতে?

সেই ধ্যানমগ্ন অবস্থাতেই ফিরে আরেকবার চমকে উঠল সুবহা।নাওফিক হঠাৎ বাইক থেকে নেমে একবারের জন্যও পেছনে না তাকিয়ে গেট খুলে হণহন করে ঢুকে গেল ভিতরে।

সুবহাকে বাইক থেকে নামতে না দেখেই পিছন ফিরে ভ্রু নাচিয়ে হাঁক ছাড়লো নাওফিক,

–“ওমনে ফার্ম এর মুরগির মত ঝিমতাসোস কেন?যদিও প্রথমবার শ্বশুরবাড়ি এসেছিস। তবে এটা তোর শশুরবাড়ি কম, নিজের বাড়ি বেশি মনে হইব কিছুক্ষণ পর। এখন ভিতরে আয়।”

সুবহা চেয়েও পা দুটো নাড়াতে পারলো নাহ। অচল হয়ে বসে থাকলো ওভাবেই।
নাওফিক মুখে একটা ‘চ ‘ জাতীয় বিরক্ত শব্দ করে এগিয়ে আসলো ওর কাছে। এরপর হাত ধরে শক্ত করে টেনে ভেতরে নিয়ে গেলো মেয়েটাকে নিজের সঙ্গে।

বাড়ির ড্রয়িংরুমে পা রেখেই কোনো রকম ভনিতা ছাড়াই চিৎকার করে উঠল নাওফিক,

–“আব্বা! আব্বা! কই গেলেন? এই দেখেন আপনাগো জন্য বউ নিয়া আসছি!”

সুবহার কান দিয়ে রীতিমতো গরম ধোঁয়া বের হতে লাগলো। দু’চোখ বন্ধ করে নিলো শক্ত করে। মুখের লজ্জায় চোখের কোণে পানি জমে উঠলো। নাওফিকের মুখে কোনো লাগাম নেই।মানুষটা যা মনে আসে তাই বলে। আর আচরণ? সেটা তো বাঘের থেকেও হিংস্র। এইতো বাইকে উঠার পর সুবহা লোকটাকে ধরে না বসাতে লোকটা রুক্ষ কর্কশ কণ্ঠে হিসহিসিয়ে বলেছিলো,

–“ধরছিস না কেন? পরে গিয়া হাত-পা ভাঙলে আবার তোর বাপ মা ভাই বলবে মেয়েটাকে নিতে না নিতেই হাত পা লেংড়া করে ফেলেছি। ভাববে অন্যকিছু, উল্টাপাল্টা। ধরে বস!”

লোকটার বজ্র কণ্ঠে ধমকানো শুনে সুবহা আর সাহস পায়নি। পিছন থেকে শার্ট খামচে ধরে বসেছিল ঘাপটি মেরে।

**

আকস্মিক ছেলের এহেন চিৎকারে তোলপাড় উঠল চৌধুরী বাড়িতে। প্রতিটা ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো একেকজন।

তোফাজ্জল সাহেব তখন সদ্য বাইরে থেকে ফিরে রুমে বিশ্রামের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
কিন্তু ছেলের চিৎকার শুনে কপাল কুঁচকে বেরিয়ে এলেন ড্রয়িং রুমে। রান্নাঘর থেকে হাত মোছার তোয়ালে ফেলে ছুটে এলেন ঝর্ণা বেগম। পেছন পেছন বাড়ির কাজের লোকরাও কৌতূহলে ভিড় জমালো সেখানে। তনয় বসেছিল পড়ার টেবিলে। সেও হাতে বই নিয়েই ছুটে এলো ড্রয়ইং রুমে।

বাড়ির সদর দরজার অভিমুখে দাঁড়িয়ে আছে নাওফিক। পাশেই জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে এক তরুণীকে দেখতেই রীতিমতো বিস্ময়ে হতোবিহুল হয়ে পড়ল সকলে।
তোফাজ্জল সাহেব বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে বললেন,

–“নালায়েক শেষপর্যন্ত এই বাচ্চা মেয়েটাকে রাত্রির বেলা বাসা থেকে তুলে আনলি?”

নাওফিক মুখে সেই চিরচেনা ঠোঁটের খ্যাপাটে হাসিটা ঝুলিয়ে গলা টান করে জবাব দিলো,

–“বাসা থেকে আনি নাই আব্বা, ঘাট থেইকা আনসি। নেন এখন দ্রুত কাজী ডাইকা বিয়েটা পড়াইয়া বাপের দায়িত্ব পালন করে দেখি।”

তোফাজ্জল সাহেব থমকে গেলেন এক মুহূর্ত। অতঃপর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললেন,

–“এই অর্ধেক কাজটা আবার অসম্পূর্ণ রাখসোস কেন? একবারে বিয়ে করেই নিয়ে আসটতি। নালায়েক কোথাকার!

নাওফিক চোখ টিপে জবাব দিলো,

–“আমারে কি আপনি বেয়াদব মনে হয়? আমি হলাম খুব মহৎ ব্যক্তি আব্বা। আপনারে ছাড়া বিয়ে করলে আমার বিয়া বিয়া ফিল আইবো নাহ। আপনি হইলেন আমার আইডল। ”

এবার রীতিমতো গায়ের রক্ত গরম হয়ে উঠলেন তোফাজ্জল সাহেবের। চোখ লাল করে হিসহিসিয়ে উঠলেন তিনি,

–“ঝর্ণা! তোমার ছেলে কে এখনই সামলাও। এইবার আমি ওরে ত্যাজ্যপুত্র করবো সিউর হায় আল্লাহ! আমার মান-সম্মান সব ধুলোয় মিশায়ে দিলো!”

ঝর্ণা বেগম স্বামীর ডাক শুনে সম্বিত ফিরলেন।
তবে ছেলেকে থামানোর চেয়ে উল্টো স্বামীকেই থামিয়ে বললেন,

–“আহ চুপ থাকো তো! বাড়িতে নতুন সদস্য আসছে, সেদিকে একটু খেয়াল রাখবেন তা না । আয় মা, ভয় পাইস না। আয় আমার কাছে আয়।”

সুবহা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কারো দিকেই ভালোভাবে তাকাতে পারছে না জড়তা আর ভয়ে। ঠিক তখনই নাওফিক বলে উঠলো,

–“আর বইলো না আম্মা, হিংসা বুঝেছো হিংসা! নিজে তো পারেনি কখনো এরকম কিছু করতে। তাই এখন আমি কিছু করলেই গা জ্বলতেছে!”

ঝর্ণা বেগম ছেলের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,

–“ঠিকই বলছিস। কথায় আছে না বউ বাড়িতে আসলে বরণ করে নিতে হয়। আর এখানে কেউ আসার আগেই চেঁচাচ্ছে। মেয়েটা এমনিতেই ভয় পেয়ে আছে। তুই সরে দাড়া, আমার কাছে আসতে দে।”

তারপর স্বামীর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বললেন,

—”আর আপনি দয়া করে হাসিম কাজী সাহেবকে কল দেন তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বলেন।”

তোফাজ্জল সাহেব স্ত্রীর কথা শুনে হুঁশে ফিরে কিছুটা শান্ত হয়েও মুখ ঘুরিয়ে বললেন,

–“তোমার এই পোলার মতো এতটা সাহস থাকলে আজ তোমার জায়গায় অন্য কেউ থাকতো, বোঝছো?”

বলেই হনহন করে সরে গেলেন রুমের দিকে।
ঝর্ণা বেগম কিছু বলার চেষ্টা করতেই আগ বাড়িয়ে কথা কেরে নিলো নাওফিক। বলল,

–“আম্মা, আব্বার কথায় কান দিয়েন না। ওনার মাথা গরম। আপনি আমার বউয়ের সাথে আলাপ করুন। আমি একটু উপরে যাই। জামাকাপড় পাল্টায়ে আসি। কেন জানি বর বর ফিলিংস আসতেছে না।”

এই বলে উপরের সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে যেতে নিলেই সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে চোখ দুটো ছলছল করা সুস্মিতা কে দেখে কপাল কুঁচকে উঠলো নাওফিকের। সুস্মিতার হাতে ফোন ছিল। এতক্ষন পাকিস্তানী ড্রামা ডুবে ছিল মেয়েটা। কেসি তেরি খুদগার্জি ড্রামার নাম। যেখানে নায়ক নায়িকার হাত ধরে বাড়িতে নিয়ে আসে পরিচয় করাতে। আহা সে কি আনন্দ লাগছিল এই সিনটা দেখে। কিন্তু বাস্তবে দেখতেই হৃদপিন্ড টা কেঁপে উঠল। থেমে গেলো বোধহয় হৃদযন্ত্রটা। ফোনটা পরে গেল অমনি। সিঁড়ি সুস্মিতার এমন রিয়েকশন উপরে দেখে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলল,

–“তোর বড় ভাইয়ের বউ। সম্পর্কে তোর ভাবি। বড় ভাবি। সম্মান টা এটলিস্ট বড় ভাবির সামনে বজায় রাখিস নিজের। ”

**

রুমে ঢুকে কয়েক মিনিটের মধ্যেই নাওফিক আবার বেরিয়ে এলো। গায়ে চাপানো সাদা পাঞ্জাবি। সঙ্গে সাদা পাজামা। চুলটা হাতে হাতে একটু গুছিয়ে নিতে নিতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে আবার বাবার সামনে হাজির হলো ও।

–“আব্বা, কী খবর? কাজী কই? সময় তো পার হয়ে যাইতাসে।”

তোফাজ্জল সাহেব সোফায় বসে চোখে চশমা চাপিয়ে পত্রিকা উল্টাতে উল্টাতে বললেন,

–“সহ্য করো। আসছে।”

নাওফিক হাঁফ ছেড়ে বলল,

–“ওটাই তো নেই আব্বা!”

এইদিকে সুবহা তখনও ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে ঝর্ণা বেগমের রুমে বসে আছে। মেয়েটার মুখে কোনো কথা নেই। চোখেমুখে আতঙ্কের ছায়া।
সবকিছু ধাঁধার মতো মনে হচ্ছে ওর কাছে।এটাই কি তাহলে ওর জীবনের নতুন অধ্যায়?

ঝর্ণা বেগম বাইরে এসে ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

–“কিরে, মেয়েটা তো একদম ভয় পেয়ে আছে। ভাবছিলাম ওর বাবা-মাকে ডেকে এনে একসঙ্গে বিয়েটা…”

নাওফিক সাথে সাথে মায়ের কথা কেরে নিয়ে বলল,

–“ওখানেই থামেন আম্মা। একবার বিয়েটা হয়ে যাক তারপর আপনি চাইলে ওর বাপ-মা কেন, চৌদ্দ গুষ্টি দাওয়াত কইরা এনে খাওয়ান। আপাতত ওরা আসলে যা হইব তা আমি জানি। তাই প্লিজ এখন কোনো বাধা দিবেন না।”

ঝর্ণা বেগম ছেলের কথায় এক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন। ছেলের চোখে দৃঢ়তা দেখে আর কিছু বললেন না। চুপ করে গেলেন। গিলে ফেললেন না বলা কথাটুকু।

**

কাজী সাহেব এসে পৌঁছেছেন গত ৫ মিন যাবৎ।
তোফাজ্জল সাহেব হাত দিয়ে মুখ চেপে বসে আছেন সোফায়। রাগে শরীর কাঁপছে তার।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি রাগ হচ্ছে তার স্ত্রীর উপর। ঝর্ণা বেগমের আদিখ্যেতা আর ছেলের প্রতি অন্ধ পক্ষপাতিত্ব দেখে নিজের কপাল নিজের চাপড়াতে মন চায় তোফাজ্জল সাহেবের।

ওদিকে কাজী সাহেব বিয়ের রেজিস্ট্রেশনের খাতা খুলে কলম বের করতে করতেই নাওফিক ততক্ষণে বিয়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে টেবিলে বসে গেছে।কাজী সাহেব বললেন,

–“বাবা তুমি আগে কবুল বলো।”

নাওফিক যেন এই মুহূর্তটার জন্যই অপেক্ষা করছিল।এক নিঃশ্বাসে গলগল করে এক নাগাড়ে পরপর তিনবার স্পষ্ট গলায় বলল,

–“কবুল!”

তারপর টেবিলে রাখা মিষ্টির কৌটা থেকে একটা রসগোল্লা তুলে বাবার সামনে ধরে বলল,

–“নেন আব্বা পোলার বিয়ের মিষ্টি খান। আগেই আপনাকে দিলাম। দোয়া টা একটু বেশি করে কইরেন।”

তোফাজ্জল সাহেব হঠাৎ মিষ্টির কৌটার দিকে তাকিয়ে গর্জে উঠলেন,

–“নালায়েক! ওটা সরাও আমার মুখের সামনে থেকে।”

নাওফিক হেসে বলল,

–“আরে আব্বা আপনি তো আবার ডায়াবেটিস। সমস্যা নাই এইটা আমি খেয়ে ফেলি। একদম ওয়েস্ট যাবে না। আফটার অল আপনার দু নাম্বারির টাকায় কেনা মিষ্টি বলে কথা। ”

মিষ্টি মুখে পুরে আনন্দে গরগর করছে নাওফিক। তনয় চুপচাপ মুখ টিপে বসে হাসছে ভাইয়ের পাগলামি দেখে। এরপর কাজী সাহেব সুবহার কক্ষে প্রবেশ করলেন।

রুমের ভিতরে গিয়ে লাল বেনারসি পরা খাটের উপর জড়োসড়ো হয়ে বসে থাকা সুবহা কে চোখে পড়তেই থমকে গেলেন তিনি। মেয়েটাকে তিনি চেনেন। হান্নানের মেয়ে। কাজী সাহেব পাশেই চেয়ার টেনে বসে জিজ্ঞেস করলেন,

–“তোমার বাবা-মা কই?”

কোনো উত্তর করল না সুবহা। চুপচাপ বসে রইলো ও। দৃষ্টি নিচে নিবদ্ধ। ঝর্ণা বেগম তখন পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,

–“ওর বাবা-মা এখনো আসেনি হাসেম চাচা। আপাতত আমরাই ওর অভিভাবক। আপনি বিয়ে পড়ান।”

কাজী সাহেব থমকে গেলেন। তার অভিজ্ঞ চোখে সব স্পষ্ট হয়ে উঠল। এটা সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছেতে বিয়ে না। মেয়েটাকে এই ছেলে তুলে নিয়ে এসেছে নির্ঘাত। গ্রামে নাওফিকের ব্যাপারে কমবেশি সবাই অবগত।

–“মেয়ের তো আঠারো বছর হয়নি। আইন অনুযায়ী এখন বিয়ে পড়ানো যাবে না আম্মা। এটা বেআইনি হবে।”

ঠিক তখনই দরজা ঠেলে ভিতরে ঢোকে নাওফিক। একহাতে রসগোল্লা, আরেকহাতে পানির গ্লাস।

–“আরে আমার তো হয়েছে। এমনকি ওভার কোয়ালিফায়েড। এখন যদি এই মেয়েটার আঠারো বছর হওয়ার অপেক্ষা করি তাহলে আমার কপালে আর বিয়ে জুটবে না।
আপনি কি চান এমন নিষ্পাপ, ভোলাভালা, সরল ছেলেটা নিঃসঙ্গতায় মারা যাক?”

কাজী সাহেব থতমত খেলেন।

–“কিন্তু মেয়ে তো এখনো…”

–“ছোট? সমস্যা নাই, বিয়ের পর বড় হয়ে যাবে। বয়স তো আর চিরকাল আটকে থাকবে না।আপনি বরং বিয়ে পড়ান। আইনের দিকটা আমরা পরে দেখবো।”

ঝর্ণা বেগম দ্রুত ছেলের কথা ব্যাখ্যা করলেন,

–“আহা তেজ ওনি গুরুজন এভাবে কথা বলিস নাহ। চাচা আপনি বিয়ে পরান। আমাদের নলেজে আছে মেয়ে ছোট। কিন্তু আমাগো তেজ পছন্দ করেছে সুবহা কে। বলেন যেই ছেলেকে বিগত ৮ বছর যাবৎ বিয়ে কর বিয়ে কর বলে মুখ দিয়ে ফেনা ছুটিয়েও রাজি করাতে পারেনি সে আজ নিজ থেকে বিয়ে করার জন্য মেয়ে নিয়ে এসেছে এটার থেকে খুশির মুহুর্ত আর কি হতে পারে বলেন।”

হাসেম কাজী এবার পুরো ব্যাপারটা বুঝে গেলেন। তিনি আর কিছু না বলে খাতা ও কলম হাতে নিয়ে সুবহার দিকে এগোলেন।
নরম গলায় বললেন,

–“মা, তুমি কবুল বলো।”

সুবহা তখনও চুপচাপ। গলা দিয়ে শব্দ বেরোলো না।পাশ থেকে রসগোল্লা মুখে পুরে ধমকে উঠল নাওফিক উচ্চ শব্দে।

এক ধমকে কেঁপে উঠল সুবহা।চোখ গড়িয়ে জল পড়তে লাগলো। ঠোঁট কাঁপতে কাঁপতে ফট ফট করে একে একে তিনবার বলে ফেলল,

–“কবুল… কবুল… কবুল।”

কাজী সাহেব সংলাপ সম্পন্ন করার আগেই নাওফিক দুই হাত তুলে বলে উঠল,

–“আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ!
আমার বিয়া হইয়া গেছে। আম্মা কংগ্রেচুলেশন। আপনার ছেলের বিয়ে হয়ে গেসে ফাইনাললি!”

চলবে……