#প্রাণপ্রিয়❤️ [সূচনা পর্ব]
~আফিয়া আফরিন
অনিতা অনেকক্ষণ যাবৎ ঘরময় পায়চারী করছে। অবশেষে ফোনে একটা মেসেজ পেয়ে দৌড়ে গেল মূল ফটকের দিকে। কয়েক সেকেন্ড দাঁড়াতেই অদূরে দেখতে পেল কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে। পরনে কালো শাড়ি, চুলগুলো বরাবরের মতই খোঁপা করা, ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি—অনিতার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছে। ফটকের সামনে এসে রিকশা থেকে নামতেই অনিতা ছুট্টে এসে জড়িয়ে ধরল। উচ্ছ্বাসিত ভঙ্গিতে বলল, ‘ফুপি…. ফুপি, জানো কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে তোমার জন্য?’
তিনি ভাড়া মিটিয়ে একমাত্র ভাস্তির মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘কেনো রে? কি করবি আমাকে দিয়ে? ভাইয়ার কাছে কিন্তু তোর হয়ে কোনো সুপারিশ করতে পারব না, আগেই বলে দিচ্ছি।’
অনিতা ইনিয়ে বিনিয়ে বলে, ‘আরে, আমি কি তোমাকে মিস করতে পারিনা? এসো এখন ভেতরে এসো। অজস্র কথা জমে আছে তোমার সাথে। কী যে মজা লাগতেছে।’
অনিতা নিজেই আগ্রহের সহিত ফুপির হাত থেকে ব্যাগটা নিল। ফুপিকে সহজে পাওয়া যায় না। কাজ নিয়ে প্রচুর ব্যস্ত তিনি। অনিতা অনেক দিন থেকেই বলছিল বাসায় আসতে। সময় হচ্ছে না, হচ্ছে না করে আজ অবশেষে সময়টা চলেই এলো। একমাত্র অনিতা ছাড়া বাসার কেউ জানে না, আজ তিনি আসবেন। গতকাল’ও সাদাত হোসেন অর্থাৎ অনিতার বাবা আফসোসের সুরে বলছিলেন, ‘অনু কতদিন বাড়ি আসে না! মনেও পড়ে না বোধহয় আমাদের কথা। সেই কবে এসেছিল, মাস ছয়েক হবে বোধহয়। ফোন করলেও আজকাল নাগাল পাওয়া যায় না।’
অনিতা ফুপিকে নিয়ে সরাসরি ঘরে না গিয়ে ছাদে এলো। সে জানে মা অথবা দাদির সাথে ফুপির দেখা হয়ে গেলে সে আর ঘন্টাখানেকের জন্য তাকে কাছে পাবে না। অথচ আহিরের কথাটা তাকে বলা খুব প্রয়োজন।
অনু ভাস্তির উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল, ‘এই সময় ছাদে আসার কারণ? রোদ দেখেছিস তুই? মাত্র এলাম, একটুখানি দম নিতে দিলি না। বাপু রে, তোর মত রংয়ের বয়স আমার এখনো আছে?’
অনিতা মিনমিন করে বলল, ‘তোমার সাথে আমার কথা আছে। ওই যে ওর কথা তোমায় একদিন ফোনে বলেছিলাম না?’
অনু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চাইল। জিজ্ঞেস করল, ‘কার কথা?’
‘ওই যে, ওই যে….. বলেছিলাম তো তোমায় একদিন। এরই মধ্যে ভুলে গেলে?’
‘তুই তো আমাকে দিনে দশজনের নাম বলিস। কতজনের নাম আমি মনে রাখব? এখন সব পরিষ্কার করে বল তো। তোর মুখ দেখে অন্যকিছু মনে হচ্ছে। ঝেড়ে কাশ এইবার।’
অনিতা দ্বিধায় ভুগছিল। কিন্তু লাভ নেই। ফুপিকেই সবটা বলতে হবে। বাবা অথবা মা, সরাসরি কাউকে আহিরের কথা বলা তার পক্ষে সম্ভব নয়। ফুপিকে বলবে, রাজি করাবে তারপর ফুপি মা এবং বাবাকে রাজি করাবে। আর তার কথা যে কেউ অমান্য করবে না এটা অনিতা ভালো করেই জানে।
তাই সমস্ত দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে বলল, ‘আহির! ওর কথা একবার তোমাকে বলেছিলাম। ভুলে গেছো কেনো?’
এইবার অনুর মনে পড়ল। তিনি খানিকটা হেসে বললেন, ‘মনে পড়েছে। তো এইবার বল, এই ছেলের কথা আমার কেন বলেছিস? ওর সাথে তোর কি সম্পর্ক? কোথায় থাকে? কি করে? পড়াশোনা করছে নাকি তোর মতই ফাঁকিবাজ?’
‘উফফফ, এত প্রশ্ন একসাথে করলে জবাব দিব কোনটার? শোনো, ওর কথা মা-বাবাকে বলতে হবে আর…..’
অনিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই অনু নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলল, ‘হ্যাঁ, তো বলে দে।’
অনিতা মাথা নামিয়ে বলল, ‘তোমাকে বলতে হবে। আমি ওকে ভালবাসি। ও কিন্তু মোটেও আমার মত ফাঁকিবাজ না। পড়াশোনা শেষ প্রায়, চাকুরীতে জয়েন করেছে। ওদের মূল বাসা কুমিল্লায় তবে থাকে ঢাকাতেই।’
অনু হেসে মেয়েটার মাথায় হাত রাখল। অনিতা ছলছল নেত্রে মুখ তুলে তাকাল। এইটুকু কথা ফুপিকে বলতে গিয়েই তার লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেছে। মা-বাবাকে তো কোনভাবেই বলতে পারতো না। অনু একহাত অনিতার কাঁধে রেখে বললেন, ‘বাড়িতে বুঝি বিয়ের কথাবার্তা চলছে টুকটাক? ছোট্ট মেয়েটা আমার এত বড় হয়ে গেল? চিন্তা করিস না, যদি মন থেকে তুই এবং সে মন থেকে তোকে ভালোবাসে তবে পৃথিবীর কারো সাধ্যি নেই তোদের আলাদা করার। আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলব, নো টেনশন মাই প্রিন্সেস।’
অনু সিঁড়ি ভেঙ্গে নিচে নামলেন। সত্যিই প্রচুর রোদ। অনিতা তৎক্ষণাৎ আহিরকে ফোন করল। মা সেদিন বিয়ের কথাবার্তা বলছিলেন। ঠিকই আছে, মেয়ে বড় হয়েছে এখন তো বিয়ের কথা টুকটাক উঠবেই। সেদিন থেকেই অনিতার মনে ভয় ঢুকে গেছে। আহিরকে কথাটা বলতেই সে বলেছিল, তার বা তার পরিবারের দিক থেকে কোনো অসুবিধা নেই। আহির সেই মুহূর্তে বিয়ে করতে প্রস্তুত এবং পরিবার থেকেও বাঁধা নেই। কথাটায় সামান্য হলেও স্বস্তি পেয়েছিল অনিতা।
.
সানজিদা ইসলাম অনু—এই বাড়ির একমাত্র মেয়ে। একমাত্র মেয়ে হওয়াতে বড় ভাই এবং মা-বাবার আহ্লাদেই বড় হয়েছে বেশ। বর্তমানে রাজশাহীতে থাকছে। ওখানে ভার্সিটির প্রভাষক। সারাদিনে যতটুকু সময় পায় ততটুকুই কাজে ব্যস্ত থাকে অথবা নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখে। বাড়ি আসা পরে খুব কম। এ নিয়ে সকলের ভীষণ অভিযোগ। আজ তাকে দেখে সকলে খুশি হলেও অভিযোগ করছে কেউ ভুলে যাননি। ভাইয়া তো বলেই দিয়েছেন, ‘আমরা তো অচেনা মানুষ, দূরের মানুষ। কী দরকার ছিল এতদিন পর এই অধমদের মনে করার? ওখানেই ভালো, এখানে আসার কী দরকার?’
সবার অভিযোগে অনু হাসে। জানে, এই অভিযোগগুলো তাদের অভিমানের বহিঃপ্রকাশ। তবে সে এসবে অভ্যস্ত। ছোট্ট এই জীবনে কত মানুষের কত অভিযোগ মাথা পেতে নিল, আর এ তো অতি সামান্য।
অনুর পরে আসে অনিতার কথা। অনিতা যখন জন্মাল, সবাই বলেছিল সে দেখতে তার ফুপির মতই হয়েছে। তাই অনু নিজের নামের সাথে মিলিয়ে নাম রেখে দিয়েছিল অনিতা। সে ছোটোবেলা থেকেই ফুপির ন্যওটা। স্কুলে যত কাহিনী করেছে, তার সাক্ষী করেছে অনুকে। অনু ভাই-ভাবীকে কিছু জানায় নাই তবে অনিতাকে শাসন করেছে নিজের মনে করে। জীবনের বড় একটা অংশ সে অনিতাকে উৎসর্গ করেছে। বিয়েশাদী করে নাই বলে তখন হাতে সময়ও ছিল অফুরন্ত। পিছুটান ছিল না, ভাবনা ছিল না, কোনো কিছু নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না—আপাতদৃষ্টিতে খুব সুখের জীবন মনে হলেও সেই সময়টা ছিল অনুর জন্য ভীষণ যন্ত্রণাময়। ভাগ্যিস বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে ভাইয়ের মেয়েটা ছিল!
.
অনিতা ছাদ থেকে নেমে সোজা অনুর ঘরে এসে উঁকি দিল। কিন্তু তাকে দেখতে পেল না। ব্যাগটা খাটের কোণায় দেখতে পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল। ফুপি প্রতিবার আসার সময় অনিতার জন্য পছন্দের চকলেট নিয়ে আসে। এগুলো নিশ্চয়ই এনেছে কিন্তু দিতে ভুলে গেছে। তাই অনিতা নিজেই ব্যাগ ঘাটাঘাটি করে কাঙ্খিত জিনিস খোঁজা শুরু করে দিল। ব্যাগের মধ্যে কাপড়-চোপড়ের চেয়ে বইয়ের পরিমাণই বেশি। মায়ের বাড়ি বেড়াতে এসেছে, এত বইপত্র দিয়ে কী করবে বোঝেনা সে। কাঙ্খিত জিনিসটা পেতেই অনিতার চোখে মুখে হাসি খেলে গেল। আপনমনেই বলল, ‘আমি জানতাম আমি এই জিনিসটা পাব। আমি তো এটার অপেক্ষাতেই থাকি।’
তারপর ব্যাগের মধ্যে সবকিছু তুলে রাখতেই চোখে পড়লো ঢাউস সাইজের একটা ডায়েরীর বক্স। এরকম একসেট তার বাবার কাছেও রয়েছে। দাদাভাই দিয়েছিলেন সেই কোনকালে! ফুপি কী যত্ন করে রেখেছে! আর তার বাবারটার অস্তিত্ব প্রায় নাই বললেই চলে।
অনুর দিন-দুনিয়ার কোন কিছুর প্রতি অভিলাষ নেই। সে একা মানুষ, কোনো না কোনো একভাবে সব হয়েই যায়। বাহিরের আলগা চাকচিক্য তার পছন্দ নয়। আত্মীয়-স্বজন কারো বাসায় দাওয়াত করলে, কারো জন্মদিনে যেতে বললে অথবা কারো বিয়েতে যেতে বললেন সে কখনোই যায় না। এসব সামাজিক অনুষ্ঠান সবসময় এড়িয়ে চলে। গতবছর তার চাচাতো বোনের বিয়েতেও অনুপস্থিত ছিল।
অনিতা বলেছিল, ‘সব এড়িয়ে যাচ্ছো তো, যাও। দেখি আমার বিয়েতে কীভাবে তুমি না থাকো!’
অনু হেসে বলেছিল, ‘তোর বিয়ে মিস করার সাহস আছে আমার? আমি তো তোর বিয়ের জন্য’ই সমস্ত এনার্জি আগে থেকে সঞ্চয় করে রাখছি। তোর বরের সাথে নাচতে হবে না?’
অনিতা, অনিতা—কে যেন ডাকছে। বাস্তবে ফিরে এলো সে। দ্রুত হাতে সেই ডায়েরী এবং বইখাতাগুলো ব্যাগে তুলল।
ড্রয়িংরুমে আসতেই সবাইকে একযোগে বসে গল্প করতে দেখল। অনিতাকে দেখতে পেয়ে তার মা রুবি অনুকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘বুঝলে অনু, অনিতার বিয়ে-শাদী দিতে চাচ্ছি। তোমার ভাইয়ার হাতে দুয়েকটা খুব ভালো সম্বন্ধ আছে।’
অনু বলল, ‘হ্যাঁ ভাবী, দিয়ে দাও। সমস্যা কি? বিয়ে-শাদী যখন করতেই হবে, দেরিতে করে লাভ কি? আর অবশ্যই এমন জায়গায় বিয়ে দিবে, যেখানে ও পড়াশোনা করার স্বাধীনতা পাবে।’
অনিতা কাঁদোকাঁদো দৃষ্টিতে ফুপির দিকে তাকাল। রুবি বলল, ‘তোমার ভাইয়া আমাকে অনেকগুলো সিভি দিয়ে গেছে। মেয়েকে দেখতে বললে পাত্তাই দেয় না।’
অনিতা পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। মায়ের কথা শুনে রাগে গজগজ করে বলল, ‘তোমার সিভি তুমিই দেখো। আমার ওতো দেখার শখ নেই। আমার মনের মধ্যে এত রংও নেই।’
অনু হেসে উঠল হঠাৎ। হাসতে হাসতেই বলল, ‘আমরা বুঝি বুঝি। তাহলে খুব শীঘ্রই সানাই বাজছে অনির জীবনে! বাহ্।’
রুবি মুচকি হাসলেন। অনিতা ফুপির পাশে এসে বসল। ফিসফিস করে বলল, ‘পাল্টি খাচ্ছ কেনো? ওর কথাটা বলবে না?’
অনু বলল, ‘কী বলছিস? বিয়ের কথা শুনে লজ্জা পাচ্ছিস? আরে মেয়ে, লজ্জা পাওয়ার কি আছে? দেখেছ ভাবি, তোমার মেয়ে তোমাদের কাছ থেকে পাত্রের ছবি চেয়ে নিতে লজ্জা পাচ্ছে। পরিচয় জিজ্ঞেস করতে লজ্জা পাচ্ছে।’
ফুপির কথা শুনে অনিতা খাবি খাওয়া মাছের মতো বিষম খেল। তারপর রেগেমেগে এক দৌড়ে ওখান থেকে চলে এলো।
তা দেখে রুবি বলল, ‘মেয়েটা বোধহয় আবার লজ্জা পেয়ে চলে গেল। আমি তোমাকে ছবি এবং সমস্ত কিছু দিয়ে রাখব, তুমি ওকে দিয়ে দিও। আর তুমিই একটু শুনে নিও, ওর কাকে পছন্দ হয়?’
‘ঠিক আছে।’
রুবির কাছ থেকে ছবিগুলো নিয়ে অনু সরাসরি অনিতার ঘরে এলো। সে মুখ ফিরিয়ে বসে আছে। অনু খাটের এক কোণে বসে ছবিগুলো পরখ করতে করতে বলল, ‘অনি দেখ না? সবগুলো ছেলেই কিন্তু সুন্দর। বাবাহ, তোদের সময় কত সুন্দর সুন্দর ছেলে। আমার সময়ে এমন কেউ ছিল নাকি? থাকলে কি আর তোর বাপ দাদার কথা শুনতে হতো, তৎক্ষণাৎ বিয়ে করে নিতাম।’
অনিতা তেড়ছা কণ্ঠে বলল, ‘তো এখন করে নাও।’
‘বয়সে মিলবে না রে। বুড়ো হয়ে গেছি। চুলও পেকে গেছে। দুদিন পর দেখবি সামনের পাটির দু’টো দাঁত খসে পড়েছে। তারপর কিছুদিন বাদে দেখবি হাঁটতে হচ্ছে লাঠি নিয়ে।’
অনিতা এবার এগিয়ে এসে বলল, ‘তুমি দয়া করে আমার সাথে ফাজলামি করো না তো। কী করলে ওটা? আমি আহিরের সম্পর্কে সিরিয়াস ফুপি। এইযে বলছ, এই ছেলেটা সুন্দর বা ওই ছেলেটা সুন্দর; কিন্তু বিশ্বাস করো ও ছাড়া কাউকে আমার মনে ধরে না। কারো দিকে তাকাতেও ইচ্ছে করে না।’
অনু ফাজলামির ছলে একটা ছবি অনিতার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘একে দেখ তো। নাকটা একটু বোচা, কিন্তু সুন্দর আছে। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, ফ্যামিলিও বেশ ভালো।’
অনিতার আশা ছিল ফুপি কিছু একটা করবে। তাকে কোনো উপায় বাতলে দিবে। সে আরোও বড়মুখ করে আহিরকে ফোনে কত কথা বলেছিল! কিন্তু এখন? নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। অনু তা খেয়াল করার আগেই অনিতা বলে উঠল, ‘আহিরকে ছাড়া আমি আর অন্য কাউকে বিয়েই করব না।’
অনু সহসা অনিতাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ‘পাগলি মেয়ে, এমন কথা বলে না। আমি তো তোর সাথে মজা করছিলাম। দেখ, কাল সকালেই ভাইয়ার সাথে কথা বলব। খুশি? এখন একটু হাসি দেখতে চাই। এই মেয়ে, এইতো তোর হয়ে তোর বাবার কাছে সুপারিশ করব এইজন্য কিন্তু আমাকে অবশ্যই তোর বিয়েতে একপিস রোস্ট বেশি দিতে হবে।’
অনুর কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু অনিতার খিল খিল করে হাসতে দেরি হলো না একমুহূর্তও। সে ফুপির হাতে হাত রেখে বলল, ‘ডান।’
অনু বাড়িতে থাকাকালীন সময়টা অনিতা তার সাথেই থাকে, এমনকি রাতের বেলায়ও। আগে তো ফুপির শাড়ি বা ওড়নার আঁচল হাতের সাথে গিট দিয়ে রাখত, যাতে কোনোভাবে সে তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যেতে না পারতো। এখন তো বড় হয়েছে। এখন ফুপিকে জড়িয়ে ধরেই নিশ্চিন্তে ঘুম দেয়।
মাঝরাত, ঘুমটা হঠাৎ ভেঙ্গে গেল অনিতার। পাশ ফিরে ফুপিকে দেখতে পেল না। উঠে বসতেই তাকে কিছুটা দূরে চেয়ারে বসে থাকতে দেখল, তখনকার সেই ডায়েরীটাকে কোলে নিয়ে। ড্রিমলাইট এবং বাহির থেকে আসা চাঁদের আলোতে সে স্পষ্ট তার ফুপির চোখের পানি দেখতে পেল। কোনোদিকে তার হুঁশ নেই, দেখে মনে হচ্ছে জীবনের প্রতি তার হিসাব ছাড়া অভিযোগ, চোখে মুখে বিষন্নতা বিরাজ করছে। চোখ মুছে হাতে রাখা ডায়েরীটায় আরেকবার চোখ বুলাল সে এবং শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে রাখল অনেকক্ষণ….. দীর্ঘক্ষণ!
অনিতা ঘড়ির দিকে তাকাল। তিনটা বেজে পার হয়েছে। সে চুপচাপ শুয়ে পড়ল। ঘুমাতে পারল না। মাথার মধ্যে শুধু একটাই চিন্তা, কী হয়েছে ফুপির? সর্বক্ষণ হাসিখুশিতে মেতে থাকা মানুষটা কাঁদছে কেন? কী এমন দুঃখ তার জীবনে? আর কীইবা আছে ওই ডায়েরীটায়? মনের মধ্যে এত কৌতুহল নিয়ে ঘুমাতে পারল না অনিতা। বাকিটা সময় শুধু এপাশ-ওপাশ করে কাটাল। যে করেই হোক, ওই ডায়েরীটা তাকে এক মুহূর্তের জন্য দেখতেই হবে! এত রাতে ফুপি কেনো কাঁদছে এটা জানতেই হবে!
.
.
.
চলবে……