প্রাণপ্রিয় পর্ব-১১

0
6

#প্রাণপ্রিয়❤️ [পর্ব-১১]
~আফিয়া আফরিন

অনিতা বাড়ি ফেরার পর বিয়ের কথাবার্তা খুব দ্রুতই এগোতে লাগল। আহিরের পরিবারের পক্ষ থেকেও কোন আপত্তি ছিল না, আর এইদিকে অনিতার বাবা দেখলেন ছেলে এবং তার পরিবার তার পছন্দমত হয়েছে; তাই সব মিলিয়ে তিনিও আর দেরি করতে চাইলেন না। তাই ওয়াসিম সাহেব অর্থাৎ আহিরের বাবার সাথে আলোচনা করে ঠিক করলেন, সামনের মাসের মাঝামাঝিতে বিয়েটা দিয়ে দিলেই ভালো হয়। অনিতাকে আংটি সেদিন’ই তারা পড়িয়ে দিয়ে গেছিলেন, পাকা কথাও শেষ, এইবার ভালো একটা দিন দেখে দু’জনের চার হাত এক করে দেওয়ার অপেক্ষা মাত্র!
অনিতা তার স্বাচ্ছন্দটাই প্রকাশ করছিল ফুপির কাছে। সবকিছু মিলিয়ে সে ভীষণ খুশি। তার বান্ধবীরা বিয়ে করতে চায় না। এখন নাকি চিল করার সময়, বিয়ে করে ফেললে সেই সুযোগটা আর পাওয়া যাবে না। জীবনটা একটা পরাধীনতার শিকলে আটকে যাবে। কিন্তু অনিতার কখনোই সেটা মনে হয় নাই। মা-বাবাকে ছেড়ে থাকতে হবে এটা দুঃখজনক, নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে হবে এটাও দুঃখজনক। কিন্তু আনন্দের বিষয় হচ্ছে, সেখানে তার ভালোবাসা আছে। তার নিজস্ব মানুষ, যে কিনা তাকে ভালোবাসে। ওই মানুষটা পাশে থাকলে আবার কোথায় কীসের বাঁধা?
এখন অনিতার মূল কাজ হচ্ছে, সময় পেলে আহিরের সাথে ঘুরে বেড়ানোর আর সেসব সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে অনুকে বলা। অনু বেশ আগ্রহ নিয়ে গল্প শোনে। অনিতা আর আহিরের মধ্যে সে তার জীবনের বিশেষ সময় গুলো দেখতে পায়। প্রেম ভালবাসার মত এই জিনিসটা তার জীবনেও ছিল, অথচ পূর্ণতা পাওয়ার আগেই সব শেষ। অনিতার জন্য সে সুখ প্রার্থনা করে। তার জীবন যেমন’ই হোক, মনে প্রাণে সে আর কারো ভালোবাসা নিলামে উঠুক এটা চায় না। ভালোবাসা যে সাধনার বিষয়, অনেক কষ্টে তা পাওয়া যায়।
ওই মানুষটা একবার বলেছিল, ‘জীবনে কোনো না কোনো একটা পূর্ণের কাজ করেছিলাম কখনো, তাই তো তোমার মত একটা লক্ষী, নির্ঝঞ্ঝাট আর শান্তশিষ্ট একটা মেয়ের ভালোবাসা পেয়েছি…. এখনও পাচ্ছি… আর ভবিষ্যতেও পাব। তাহলে বোঝো, আমার কী লাক!’

অনু উত্তরে বলেছিল, ‘আর আমি মনে মনে সবসময় প্রার্থনা করতাম, আমাকে বোঝার মত কাউকে যেন আমি পাই। শুধুমাত্র আমাকে বুঝতে পারবে, টুকটাক ভালবাসবে, আমাকে শাসন করবে আবার আদরও করবে। আমার সে সাধনা হয়তো তুমি!’
সাধনায় হয়তো কমতি ছিল কারণ দুই দিক থেকে চাওয়া পাওয়া সমান না হলে তো সেই মানুষটাকে নিজের করা প্রায় অসম্ভব।
অনুর প্রথম প্রথম ভীষণ আফসোস হতো, নিজের জন্য। সে ভীষণ সাদামাটা, দুনিয়ার ঘোরপাক তখনও বুঝতে শেখেনি। দুনিয়ার কিছুই চিনত না, সেই অচেনা একটা জগতে একটা মানুষকে চেনার জন্য উঠে পড়ে লাগল অবশেষে। তার ফল সে পেয়েছে। এটা ভাগ্য মনে করে মেনে নিয়েছে। তবে আফসোস লাগে কারণ সে মানুষ চিনতে পারে নাই। যেই মানুষটাকে চোখ বন্ধ করে অন্ধের মত বিশ্বাস করত, সেই মানুষটার থেকে একটা বিশাল ধাক্কা খেয়ে নিজের প্রতি বিশ্বাসটাও চলে গেছে। তখন নিজের ছায়াটাকেও ভয় হত, মিথ্যে মনে হত। ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল, মা-বাবা জিজ্ঞেস করেছিল; কারণ কী? অনু বলতে পারে নাই। তার বলার মুখ ছিল না। ছিঃ ছিঃ, এভাবে ভাগ্যের কাছে হেরে যেতে হলো?
মাকে উত্তরে বলেছিল, ‘পরীক্ষার কারণে একটু টেনশন হচ্ছে, তাছাড়া কিছুই না। অযথা আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না।’
মা’ও তাই মনে করে অনুকে আর ঘাঁটালেন না। মেয়ে তার একটু নিজের মত থাকতে পছন্দ করে, কোলাহল থেকে নির্জনতাই তার বড্ড প্রিয়!
.
অনিতার বিয়ের তারিখ ঠিক করা হলো, সামনের মাসের প্রথম শুক্রবার। আজ মাসের ১২ তারিখ। হাতে সময় বেশিদিন নাই। রুবি একমাত্র ননদকে ফোন করে বলে দিল, সে যেন খুব তাড়াতাড়ি চলে বাড়ি চলে আসে। অনুর’ও ভীষণ ইচ্ছে, অনিতার বিয়ের প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে স্বশরীরে উপস্থিত থাকা। সে দ্রুত নিজের কাজকর্ম গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল। অনিতা দিনে দুইবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে, সে কবে আসবে? অনু বাড়ি গিয়ে সকলকে চমকে দিতে চায় তাই সে মন খারাপ করা গলায় বলে, ‘আমি বোধহয় এখন আর ছুটি পাব না রে। দেখি, তোর বিয়ের দিন একেবারে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করব।’

‘চেষ্টা? তারমানে তুমি শিওর না? এটা কেমন কথা হলো? ইচ্ছে ছিল আমরা একসাথে কেনাকাটা করব, আরও কত প্ল্যান ছিল। দাদী শুনলে কতটা মন খারাপ করবে ভাবতে পারছ! তার একমাত্র মেয়ে কিনা তার একমাত্র নাতনির বিয়েতে থাকছে না।’ রাগ অভিমানে মিশে যায় অনিতার কণ্ঠস্বর।

অনু ফের বলে, ‘আরে পাগলি! আমি তো আসার চেষ্টা করব। আচ্ছা যা কথা দিলাম, তোর বিয়ে মিস করব না। আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র জানের জান, তার বিয়েতে আমি না গেলে হবে?’
অনিতা মন খারাপ করে দাদীর কাছে ফোন ধরিয়ে দেয়। তারপর মা মেয়ের মধ্যে কথাবার্তা চলে, রাগ অভিমান হয় আবার মিটেও যায়।

উদয়কালের কোমলতা হারিয়ে, মধ্য দুপুরের প্রখরতা পাড়ি দিয়ে নিস্তেজ শেষ আলোটুকু আলতোভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছে রক্তিমাভ সূর্যটি। প্রকৃতি জুড়ে নিস্তব্ধ শীতলতা বিরাজ করছে। অনু বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসে সূর্যের এরূপ আত্মসমর্পণ দেখছিল। ধীরে ধীরে…. চোখের পলক ফেলতে না ফেলতেই সূর্য মামা তার চারপাশটা লাল টুকটুকে করে দিয়ে অতল গহ্বরে হারিয়ে গেল। ডায়েরীটা পাশেই ছিল, অনু হাত বাড়িয়ে তা নিজের মুঠোয় নিয়ে এলো। এই জিনিসটা সবসময় সে কাছাকাছি রাখে, কিন্তু বছরখানেক হলো এর পৃষ্ঠা গুলোর উপর হাত বোলানো হয় না, আঙ্গুল ছোঁয়ানো হয় না। মনের পাতায় ধুলো জমে গেছে, অথচ এই ডায়েরীতে শেষ সামান্য আঁচড়টুকু লাগতে দেয় নাই।
অনেকদিন পর আজ কিছু লিখতে ইচ্ছা হলো। পৃষ্ঠা শূন্য আছে কিনা কে জানে? অনু অনেকটা আলস্য সময় কাটাল। শেষের দিক সামান্য কয়েকটা পৃষ্ঠা এখনো খালি রয়েছে। সে ঘরে গিয়ে কলম নিয়ে এলো। সযত্নে ডায়েরীর পাতায় লিখতে আরম্ভ করল—
“রাতগুলো পেরিয়ে এক একটা দিন আসে…. যথাযথ নিয়মে দিনেরও পরিবর্তন ঘটে। প্রকৃতিও পাল্টে যায় যখন তখন। পরিবর্তনের মনোভাব এই পৃথিবীর প্রত্যেকটা বস্তুর মধ্যে দেখা যায়। সে জড় বস্তু হোক অথবা জীব! তবে আমি কী? আমি কি পৃথিবীর অভ্যন্তরে পড়ছি না? অন্য কোন গ্রহের অন্য কোন রকম প্রাণী আমি? যদি তা না হয়, তবে তোমাকে ভালোবাসতে না পারার ক্ষমতাটা কেন আমার মধ্যে তৈরি হলো না এখনও পর্যন্ত? আমি পৃথিবীর নিয়ম ভেঙ্গে ভালোবেসে গেলাম? কেন সেইদিনের আমি আর আজকের আমির মধ্যে কোনো পরিবর্তন নেই!
ভালোবাসার মায়া বড্ড অসহায়। বাঁচিয়ে রাখতে চাইবে, কিন্তু ঠিকমত বেঁচে থাকতে দিবে না। এই অসহায়ত্ব আজ’ও আমার জীবনটাকে ধূলিসাৎ করে দিচ্ছে। আমি নিজে একটা খারাপ মানুষ—আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য এই যুক্তিটা দেখালেও বোধহয় এতটা অসহায় বোধ হতো না।
ভালোবাসা কাকে বলে আমি জানতে চাই! তবে কি আজকের যুগের মত, না চাইতেই কাউকে পেয়ে যাওয়ার নাম ভালোবাসা? অথচ আমি পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ছিলাম। একের পর এক রাত কাঁদতে কাঁদতে পার করেছিলাম। আমার চোখের পানির হিসাব আমি নিজেও দিতে পারব না। পাওয়ার জন্য আমি জীবনের সেরা সময়গুলো অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছি। শুধুমাত্র পাওয়ার জন্য নিবিড় সভ্যতার ঝলমলে স্রোতে আমি ভেসে বেরিয়েছি, আমি প্রার্থনা করেছি…. অপেক্ষা করেছি এবং এখনও তা করছি। এগুলো বুঝি মন্দবাসা? এটা বুকে নিয়েই তো বেঁচে আছি। তুমি যে আমার ভেতর থেকে বেঁচে থাকার মূল উপাদান গুলো অর্থাৎ বিশ্বাস, ভালোবাসা, সুখ, আনন্দ সব কেড়ে নিয়ে চলে গেছ। তবুও আমি নিজেকে নিজে বাঁচিয়ে রেখেছি। কোনো না কোনো একদিন হব তোমার মুখোমুখি। সেদিন তুমি আমাকে মোকাবেলা কইরো। আমার কাছে আমার প্রশ্নের জবাব খুঁজব, সেসব প্রশ্ন যা এতদিন আমি নিজেকে করে এসেছি এবং নিজেকেই তার মাধ্যমে শান্তনা দিয়েছি। তুমি তৈরি থেকো কেমন! এই পৃথিবীটা খুব বড় নয়, একদিন তো তোমার এই প্রিয় শহরের কোন অলিতে গলিতে, অথবা চৌরাস্তার দেখা হয়ে যেতেই পারে!”
১৩ অক্টোবর, ২০২৮.

মনের মধ্যে অনেক কিছুই ছিল। কিন্তু অনু এইটুকুর বেশি আর কিছুই ব্যক্ত করতে পারল না। তার অতীতে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই নেই। সে মনে করতে চায় না, কিন্তু যা জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে তা তো ভুলেও থাকা যায় না। এভাবেই কেটে যাবে জীবন। দিন গড়াতে গড়াতে একদিন নিঃশ্বাস ফুরিয়ে যাবে—আহ শান্তি! স্মৃতিগুলো আর পোড়াবে না তখন।

অনু ১৫ তারিখ বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিল। সেদিন রাতেই আবার আহিরদের কিছু নিকট আত্মীয়দের সাথে তাদের বাড়ির সকলের পরিচয় পর্বের অনুষ্ঠান হবে তাদের’ই বাড়িতে। অনুর জন্যও ভালো হলো, দারুণ একটা মুহূর্তের সাক্ষী হতে পারবে।

মাঝের দুটো দিন কেটে যেতে আর সময় লাগল না। অনু দুপুরে গিয়ে বাড়িতে হাজির হলো। তখন রান্নাবান্নার আয়োজন চলছিল, আমন্ত্রিত মেহমান’রা সবাই সন্ধ্যার পর থেকে আসতে শুরু করবে। অনুকে থেকে বাড়ির সবাই যে পরিমাণ খুশি হলো, বলার মত নয়। অনিতা আরও খুশি হলো তখন, যখন জানতে পারল তার ফুপি তার বিয়ে পর্যন্ত থাকবে। বাহ্! দারুণ হলো। ফুপির সাথে বিয়ের কেনাকাটা সহ মজাও হবে আবার তার ডায়েরীটা’ও পড়া হবে—ব্যাপারটা একদম এক ঢিলে দুই পাখি মারার সমান।
.
সন্ধ্যার পর মেহমান’রা সকলেই চলে এলো। অনু অনিতাকে তৈরি করে দিচ্ছিল। অনিতা শাড়ির আঁচল গায়ে জড়িয়ে বলল, ‘ওদের সামনে যাইতে লজ্জা করবে তো।’

‘কেনো? লজ্জা লাগবে কেনো?’

‘প্রথমবার তো। তুমি কিন্তু আমার সাথে সাথেই থাকবে। মা, দাদী দু’জনেই নানান রকম কাজে ব্যস্ত থাকবে। আমার একমাত্র ভরসা তুমিই।’ অনিতা ফুপির হাত ধরে কাকুতি মিনতি করে বলল।

অনু মুখ টিপে হেসে বলল, ‘ওখানে আহিরকে পেলে তুই আর আমাকে চিনতেই পারবি না।’
অনিতা পেল কিঞ্চিত, তাই মাথা নিচু করে চুপ রইল। যতটা জটিল পরিস্থিতি তৈরি হবে ভেবেছিল, তার কিছুই হয় নাই। সকলে খুব সহজ ভাবেই তাকে বরণ করে নিয়েছে। অনু দরজা থেকে দেখে চলে এসেছিল। সকলের সামনে যাওয়ার ইচ্ছেটা কেমন ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে। এত এত মানুষ, জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন—নিজেকে কেমন সকলের মাঝে উটকো ঝামেলা মনে হচ্ছিল। সকলের ভীড়ে মা ভাবিও খেয়াল করে নাই, অনু এখানে অনুপস্থিত। অনিতা কয়েকবার আশেপাশে তাকিয়েও দেখল না। দাদীকে সামনে পেয়ে একবার জিজ্ঞেস করল, ‘ফুপি কোথায়? দেখছি না যে?’

‘আমি তো খানিক আগেই দেখলাম। আছে কোথাও হয়ত! ঘরকুনো মানুষ, দেখ গিয়ে ঘরেও বসে থাকতে পারে। তুই এখানেই থাক, তোর শশুর-শাশুড়ির সাথে গল্পগুজব কর।’
.
আহিরের মা ইরা, পুত্রবধূকে তার দারুণ পছন্দ হয়েছে। এ যুগের সাথে তার বিস্তর ফারাক রয়েছে। ভদ্র, শান্তশিষ্ট, চুপচাপ এবং বিনয়ী। পরিবারটাকেও বেশ নির্ঝঞ্ঝাট মনে হয়। তিনি স্বামীর উদ্দেশ্য বললেন, ‘তোমার ছেলে সব পছন্দে ডাব্বা মারলেও, আমার জন্য বৌমা পছন্দ করেছে একশো’তে একশো।’

ওয়াসিম সাহেব ছেলের দিকে একবার তাকালেন, নিজের দিকে একবার। তারপর বললেন, ‘কার ছেলে দেখতে হবে না? একদম বাপ কা বেটা।’

‘চাপবাজি করে লাভ নাই। ছেলে মোটেও তোমার মত হয় নাই। তুমি কি আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলে? বরং আমাকে তো তোমার গলায় জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’

‘তুমি আবার এসব শুরু করলে? বাসাভর্তি মানুষ, কেউ শুনলে কি মনে করবে?’
ইরা আর কোনো কথা বললেন না। এই প্রসঙ্গ তিনি প্রায় টেনে নিয়ে আসেন। বিশেষ করে, যখন বাবা তার ছেলেদের নিজের সাথে তুলনা দেয় তখন!
.
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর আহির আর অনিতা সকলের মাঝ থেকে ছুটি নিয়ে ছাদে উঠল। অনুও অনেকক্ষণ যাবত ঘরে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছিল, তাই সেও ওই পথে পা বাড়াল। দরজায় দাঁড়াতেই দু’জনের কথোপকথন ভেসে এলো।
অনিতা আহিরকে বলছে, ‘আমাকে বিয়ে করলে যে খুব সমস্যা হবে, এটা বুঝতে পারছ তুমি?’

‘বুঝি নাই। তুমি বুঝিয়ে দাও দেখি।’

‘এইতো কথায় কথায় রাগ করি, তোমার সাথে ঝগড়া করি। কখনো কখনো কথা বলা বন্ধ করে দিই। এগুলা বাদ দিলেও আমি তো সংসার’ই সামলাতে পারি না। রান্না করতে পারি না। কোন কাজ গুছিয়ে করতে পারি না। শুধু সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারব।’

আহির হেসে বলল, ‘যেটুকু পারো সেটুকুতেই আমার চলবে। যা পারো, যেমন পারো, এর বেশি তোমাকে করতে হবে না। আমি ঘরে বউ নিয়ে যাচ্ছি। তিনবেলা নিয়ম করে তাকেই যে রান্না করতে হবে, সব কাজ করতে হবে; সেটা তো কোথাও লেখা নেই।’
অনিতা সুন্দর করে হাসল। আহির পুনরায় বলল, ‘অনেকক্ষণ হলো এসেছি। আমরা কি এখন যেতে পারি? সবাই নিচে। কী ভাববে বলো তো?’

‘যা ইচ্ছে হয় ভাবুক। ভাবতে দাও ওদের।’

‘আমাদের’ও যে এইবার বাড়ি ফিরতে হবে। রাত হয়ে যাচ্ছে।’

অনিতা মন খারাপ করা গলায় বলল, ‘চলে যাবে?’

‘যেতে হবে। তোমাকে পুরোপুরি ভাবে আমার বাসায় নেওয়ার বন্দোবস্ত করতে হবে না!’

‘ঠিক আছে তবে।’
আহির চলে যেতে উদ্যত হচ্ছিল। অনিতা ফের পিছু ডাকল।
‘আহির শোনো…..’

আহির ঘুরে তাকিয়ে বলল, ‘হ্যাঁ বলো।’

‘কখনো বদলে যাবে না তো? এইই রকমটাই থাকবে সবসময়!’

‘কথা দিতে পারছি না। তবে ভরসা রাখতে পারো।’

‘আর এভাবেই ভালোবাসবে তো?’

‘বিশ্বাস রাখতে পারো।’
দু’জনেই আসছে। অনু দ্রুত দরজা থেকে সরে দাঁড়াল। এত ভালোবাসা, টিকে থাকুক সারাজীবন! কোনো ঝড়ঝাপটা না আসুক জীবনে। আহির অনিতা, দু’জন দু’জনার জীবনের পরিপূরক হয়ে উঠুক। হাসল অনু, তবে বুকচিরে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস’ও বেড়িয়ে এলো।
.
.
.
চলবে…..
[কার্টেসি ছাড়া কপি করা নিষেধ]
শব্দ সংখ্যা— ১৮৩৬