#প্রানেশা
#পর্ব_১০
#জান্নাত_সুলতানা
[পর্ব টা একটু রোমান্টিক, পড়তে না চাইলে স্কিপ করতে পারেন।]
-“পড়তে বসো মেয়ে।
সারা দিন ছুটোছুটি।থাপ্পড়ে তোমার সব দাঁত ফেলে দেব ষ্টুপিড।”
মিরা রিহানের কথা শুনে অশ্রু সিক্ত নয়নে একবার রিহানের দিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি নুইয়ে নিলো।
রিহান মিরার চোখে পানি দেখে ভরকালো হকচকালো।মেয়ে টা কাঁদছে? কিন্তু কেন?রিহান আর কিছু বলার পূর্বেই মিরা নিজের হাতের বই টা নিয়ে এক দৌড়ে আবার রুম হতে বেড়িয়ে গেলো। রিহান ডাকতে গিয়েও ডাকলো না।নিজের গায়ের শার্ট খোলে রেখে ফ্রেশ হতে কলপাড় চলে গেলো।
কিন্তু হঠাৎ মনে হলো ও তো মাত্রই রুমে এলো। আর মিরার হাতে বই ছিল। মেয়ে টা কি তবে রাশির রুমে ছিল এতোক্ষণ?
রিহান কলপাড়ে না গিয়ে ফিরে উল্টো দিকে বোনের রুমে গেলো।
-“আমি তো এতোক্ষণ পড়তে বসে ছিলাম। তাহলে তোর ভাই আমাকে ধমক দিলো কেন?”
কথা গুলো বলেই মিরা আবার হেঁচকি তুলে কান্না করতে লাগলো।
রাশি কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই নজরে পড়লো দরজায় দাঁড়ানো ভাই কে। রিহান রাশি কে কিছু ইশারা করে। রাশি হাসি পেলো।নিজের ভাই আর ভাবির এমন কান্ড দেখে।
-“তুই রুমে যা।
আমি ভাইয়া কে বকে দেব।”
রাশি নিজের হাসি চেপে বলল।
মিরা নাক টানলো।কণ্ঠে অভিমানের ছোঁয়া এনে জানালো,
-“আমি যাব না।
জানিস তোর ভাই এখনো সারাহ আপু কে ভালোবাসে!”
রাশি মিরার এরূপ কথায় আগে দরজার দিকে দৃষ্টি বোলাল। নাহ রিহান সেখানে নেই।রাশি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
মিরার একটা হাত টেনে ধরে বোঝানোর স্বরে বলল
-“আমার ভাইয়ের প্রথম ভালোবাসা সারাহ আপু। তাই সময় তো একটু লাগবেই। কিন্তু আমার বিশ্বাস তুই খুব শীগগির আমার ভাই কে নিজের আঁচলে বন্ধী করতে পারবি।চেষ্টা করতে হবে এভাবে ভেঙ্গে পড়লে কি করে হবে!”
মিরা চুপ করে বসে রইলো অনেক্ক্ষণ কোনো প্রতিক্রিয়া করল না।
বেশ অনেক টা সময় পর মিরা চলে গেলো তবে যাওয়ার আগে বলে গেলো,
-“প্রথম ভালোবাসা না, আমি তোর ভাইয়ের শেষ ভালোবাসা হবো।”
———
সমুদ্র সন্ধ্যায় ফিরেই রাশি কে নিয়ে শিকদার বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য তোরজোড় শুরু করে দিলো। রাশি অবশ্য আসতে চায় নি।কিন্তু সমুদ্র’র দিকে তাকিয়ে না বলতে পারে নি।
লোক টা কত টা পথ জার্নির করে এসছে। নিশ্চয়ই মেজাজ খিটখিটে হয়ে আছে। তাই তো চুপচাপ বাইকে ওঠে বসে।তবে মনে অভিমান বেশ জামা হয়েছে সমুদ্র নামক স্বামীর প্রতি। রাস্তায় কোনো কথা বলল না রাশি সমুদ্রের সাথে। সমুদ্র বুঝতে পারে বউ তার রেগে আছে। তবে কিছু করার নেই কাল সকালে তাকে আবার শহরে যেতে হবে। সেখানে হয়তো বেশ কয়দিন থাকতে হবে। যদিও ইচ্ছে করছে বউ কে সঙ্গে নিতে কিন্তু এটাও সম্ভব নয়। কয়দিন বাদে মেয়েটার পরীক্ষা।দুই মনে দুই রকম ভাবনা নিয়ে সাত কি আট মিনিট এর মধ্যে শিকদার বাড়ি এসে পৌঁছাল ওঁরা।
রাশি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রান্না ঘরে চলে এলো।সামিরা বেগম বাসায় নেই। হসপিটাল রয়েছে। বাড়িতে সমুদ্র’র দাদা আর দাদি আছে। সে মোতাবেক রাশি কাজের লোকের সাহায্য নিয়ে রান্না করে নিলো।এর মধ্যে সমুদ্র’র দাদি সাজেদা খাতুন এসে রাশির সাথে কয়েকবার সাক্ষাৎ করে গেলো।
রাশি রান্না শেষ করতে করতে রাত প্রায় আটটা বেজে গেলো।কাজের লোক কে সব গুছিয়ে নিতে বলে রাশি রুমে চলে এলো।
সমুদ্র রুমে বসে ল্যাপটপে কোলে কিছু করছে। রাশি সেদিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
সারা দিন কাঠফাটা রোদের প্রকোপ থাকলে এখন রাতে এসে হিম শীতল বাতাস বইছে। সাথে আকাশে ঘনকালো মেঘ জমেছে হয়তো বৃষ্টি হবে।
সমুদ্র ল্যাপটপ রেখে নিজের রুমের বড়সড় ব্যালকনিতে এসে দাঁড়াল।
আর অমনি ঠান্ডা বাতাস এসে গা ছুঁয়ে দিলো। সমুদ্র চোখ বন্ধ করে তাকে নিজের শরীরে লেপ্টে নিলো।
রাশি ওয়াশ রুম হতে বেড়িয়ে সমুদ্র কে রুমে না দেখে।ভ্রু কুঁচকে এলো।
থমথমে কণ্ঠে ডাকল
-“কোথায় আপনি?
খাবার খেতে চলুন।শুনছেন? ”
-“তুমি এদিকে এসো।”
সমুদ্র ব্যালকনি হতে ডাক দিলো রাশি কে।
রাশি এগিয়ে গেলো।বাতাস এসে রাশির সারা শরীর ছুঁয়ে দিলো। সেই সাথে শরীর এর কাপড় গুলো এলোমেলো হলো।
সমুদ্র সে দিকে তাকিয়ে রাশি কে নিজের নিকটে আসার আহ্বান জানাল।রাশি দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে এগিয়ে গেলো।তখন হাল্কা বৃষ্টি পড়ছে। সমুদ্রের গায়ে শুধু স্লিভলেস এর একটা সাদা শার্ট। রাশির গায়ে আসমানী রঙের একটা নরমাল থ্রি-পিস যেটায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে শরীর এর ভাঁজ গুলো ফুটে উঠছে একটু একটু করে। সমুদ্রের বেলায়ও ব্যতিক্রম নয়। রুম হতে আসা আবছা আলো আর বিদ্যুৎ চমকানোর ফলে বলিষ্ঠ পেটানো শরীর এর পেশিবহুল গুলো বেশ ভালো করে বোঝা যাচ্ছে।
রাশি যত এগিয়ে যাচ্ছে রাশির বুকের ভেতর টিপটিপ শব্দ তত বেড়েই চলেছে।
সমুদ্র যেনো রাশির প্রতি চুমুক এর ন্যায় টানছে । নিজের পুরুষালী সত্ত্বা জেগে ওঠছে।মেয়ে টা রেগে আছে তার সাথে সেটা যেনো বেমালুম ভুলে বসে সমুদ্র।
-“খাবার খেতে চলুন।”
রাশি বলল।
সমুদ্র পাত্তা দিলো না। রাশি কে টেনে এনে একদম নিজের শরীর এর সঙ্গে মিশিয়ে নিলো।এক বিন্দু ফারাক রাখলো না।
রাশি প্রতি বারের ন্যায় এবার কেঁপে উঠল। সমুদ্র যতবার মেয়ে টাকে গভীর হতে গভীর স্পর্শ করে ঠিক ততবারই মেয়ে টা বিদ্যুৎ চমকানোর ন্যায় চমকে ওঠে। সমুদ্র আশেপাশে থাকলে অষ্টাদশী কন্যা রাশির বুকের ভেতর ধকধক শব্দ করে।
লাজুক লতার ন্যায় নেতিয়ে আসে।
এবারও ব্যতিক্রম নয়।
সমুদ্র রাশির কোমড়ে নিজের হাত টা সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরে। অতঃপর ঝট করে উঁচু করে রাশি কে নিজের উপর তুলে।রাশির শরীর বেয়ে বৃষ্টির ফোঁটা সমুদ্রের মুখের উপর টপটপ করে পড়ছে।
সমুদ্র রাশির গলায় আলতো করে নিজেদের ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। রাশি শক্ত হাতে খামচে ধরে সমুদ্রে চুল।
-“বউ তো দেখি আমার থেকে ফাস্ট!”
সমুদ্র চোখেমুখে দুষ্টুমির আবাস এনে শুধালো।রাশি লজ্জা পেলো।চোখ বন্ধ করে সমুদ্রের ঘাড়ে মুখ গুঁজে জোরে জোরে শ্বাস ফেলে।
এই মেয়ে কি জানে এতে করে সমুদ্র আরও কয় দফা দিশেহারা হলো?বা বুঝতে পারছে নিজের অবস্থা একটু পরে এর ফলে কি হতে পারে? উঁহু, জানলে কি আর অমন করে স্বামী নামক প্রেমিক পুরুষ কে এমন উত্তেজিত করে দিতো!
নিজের সর্বনাশ ডেকে আনতো?
-“তুমি কি জানো!আমায় উলোটপালোট করে তুমি তোমার কষ্ট কে আহ্বান জানালে?”
সমুদ্র রাশি কে নিজের সাথে ঠেশে ধরে। নিজের অধর জোড়ার ভাঁজে নিয়ে প্রথমে আলতো করে চুমু খেলো। পর পর কয়বার অতঃপর শক্ত করে চেপে ধরে পাগলের মতো চুম্বনে আবদ্ধ হলো। রাশি সেই পাগলামির সঙ্গে দিলো।স্বামীর ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে ভুলে গেলো রাগ অভিমান।ডুবে গেলো ভালোবাসার সাগরে।
———
রিহান নিজের রুমের জানালার ছিটকানি খোলে সেখান দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখছে।
একটু আগেই খাবার শেষ রুমে এসছে। মিরা এখনো রুমে আসে নি।শাশুড়ীর হাতে হাতে হয়তো কিছু করছে। রিহানের বেশ লাগে এটা, মেয়ে টা তাঁর মাকে যথেষ্ট সাহায্য করে কাজে। নিজের দায়িত্ব বুঝে নিতে চাচ্ছে। কতয় বা বয়স।ছোট একটা বাচ্চা মেয়ে।সব এখনো ঠিকঠাক করে ওঠতে পারে না। কিন্তু তাও আয়ত্তে আনার চেষ্টা করছে।
ঠোঁটে সিগারেট এর ছেঁকা লাগতেই রিহানের ধ্যান ভাঙ্গে।
রিহান ঠোঁটের ভাঁজ হতে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে আবার সিগারেট জ্বালায়। ঠোঁটের ভাঁজ হতে সেটা হাতে নিয়ে মুখের ভেতর হতে ধোঁয়া গুলো ছাড়তেই পাশ হতে মিরার মলিন স্বর ভেসে এলো,
-“আপনি আর আমি ঠিক এই সিগারেট এর ধোঁয়ার মতো রিহান ভাই।
এক সাথে দেখতে হলেও ধোঁয়ার মাঝে যেমন কোনো বন্ধন নেই।তেমন সত্যি কোনো বন্ধন আমাদের মাঝে নেই।”
#চলবে…..