#প্রানেশা
#পর্ব_১৪
#জান্নাত_সুলতানা
রিহান শহরে গিয়েছে আজ এক সাপ্তাহর বেশি সময় হতে চলে।মিরা কেমন হয়ে গিয়েছে।সেদিন রাত টা কেবলই মিরার স্বপ্ন মনে হয়।
রিহান এই এতোদিনে শুধু মিরার সাথে কাল ফোন কলে কথা বলেছে। কণ্ঠে কেমন কাঁপছিল রিহানের। কিন্তু কেন?মিরা ভেবে পায় না। আচ্ছা এমন নয়তো লোক টা ওর অনুপস্থিতিতে ওঁকে মিস করছে! যেমন টা মিরা নিজে করে।পরক্ষণেই মিরা এসব চিন্তা ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। এটা সম্ভব নয়।হয়তো একই ঘরে একই বিছানায় নিজের বিয়ে করা স্ত্রী বলেই সেই দিন রাতে অতটা কাছে এসছিল।এমন রূপবতী বউ থাকলে যেকোনো পুরুষই কাছে আসবে সেটা কে ভালোবাসা ভাবা হয়তো বোকামি। নয়তো আজ তো একবারও ওকে কল দিলো না।
মিরা পড়ার টেবিলে বসে একটা কলম হাতে কথা গুলো ভাবছিল। ঠিক তক্ষুনি রাহনুমা বেগম মিরা কে ডাকতে ডাকতে রুমে এলো।
-“রিহান কল করেছে নে।”
রাহনুমা বেগম ছোট বাটন ফোন টা মিরার হাতে দিয়ে আবার হন্তদন্ত হয়ে কক্ষ হতে বেড়িয়ে গেলো।
মিরা অবাক হয়েছে বটে।তবে নিজে কে সামলে ফোন টা কানের গোড়ায় ধরতেই রিহান গুরুগম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“কথা বলছো না কেন?”
-“হুঁ।”
-“খাবার খেয়েছো?”
রিহান শান্ত কণ্ঠে জানতে চাইলো।
-“না বাবা আসে নি।
আপনি খেয়েছেন?”
মিরা জিজ্ঞেস করলো। রিহান ক্লান্তিতে চোখ বুঁজে জানালো,
-“না মাত্র অফিস থেকে ফিরলাম।”
অতঃপর দু’জনে চুপ করে রইলো।রিহান হঠাৎ বলে উঠলো,
-“আমাকে নিশ্চয়ই তুমি কাপুরষ ভাবছ!
অবশ্য ভাবারই কথা।কিন্তু বিশ্বাস করো।আমি সত্যি মন থেকে সেদিন র,,,
-“থাক না ওসব কথা।
আপনার স্ত্রী আমি অধিকার আছে আপনার।”
-“আমি একটা বাসার ব্যবস্থা করে তোমায় এখান নিয়ে আসব।তুমি পরীক্ষা টা দাও।”
অতঃপর টুকটাক কথা বলে ফোন রাখে রিহান।মিরাও ফোন নিয়ে শাশুড়ীর রুমে চলে যায়।
———
-“তুমি ইলেকশনে দাঁড়াবে না?”
-“আমি আগেই তোমাকে সে কথা জানিয়েছি দাদা জান।”
সমুদ্র এর কথায় আজগর শিকদার চোয়াল শক্ত করে নিলো।
মেয়ে টা তাঁর নাতির জীবনে আসার আগে সব ঠিক ছিল। মেয়ে টা আসার পরই নাতি তাঁর বদলে গেলো।
-“দাদু ভাই।আমার মনে হয় তোমার আরও একবার ভাবা উচিৎ এটা নিয়ে।”
আজগর শিকদার কিছু টা নরম স্বরে বোঝানোর চেষ্টা করে বলল।
সমুদ্র সেই একরোখা গম্ভীর কণ্ঠে জানালো,
-“কোনো ভাবাভাবি নেই দাদা জান।
আপনার যদি এটা নিয়ে কোনো মতামত থাকে আর।তবে
আমি আমার বউ নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাব।”
সমুদ্রের কথায় আজগর শিকদার ক্ষিপ্ত হলেন।
একপর্যায়ে তিনি হুংকার ছাড়ে।সমুদ্রদের মা বোন,বোনের জামাই দাদি সবাই তখন ডাইনিং টেবিলে বসে ছিল।রাশি চুপটি করে শাশুড়ীর পেছনে গিয়ে দাঁড়াল।
আজগর শিকদার খাবার ছেড়ে ওঠে দাঁড়িয়ে রাগী কণ্ঠে সমুদ্রের প্রস্তাব কে সায় দিয়ে জানালো,
-“তবে তাই হোক।
কাল সকালের আগে আমি তোমাদের আমার বাড়িতে যেনো না দেখি।”
-“ঠিক আছে।”
সমুদ্র স্বাভাবিক ভাবে বলল।
আজগর শিকদার রাশির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।আজগর শিকদার এর মতে এই মেয়ে টা যত নষ্টের মূল। তিনি রাশির দিকে তাকিয়ে থেকে আবার সমুদ্র দিকে তাকালো বলল,
-“এই মেয়ে টার মধ্যে এমন কি আছে যার জন্য তুমি তোমার পরিবার ছাড়তে রাজি!”
-“আপনি ভুল করছেন।
এই মেয়ে নয় ও আমার স্ত্রী,সেটা আপনি ভুলে যাচ্ছেন।”
সমুদ্র কণ্ঠে কিছু একটা ছিল যাতে করে সবাই চমকালো।শুধু সমুদ্রের দাদি খুব স্বাভাবিক। স্বামী তাঁর বরাবরই নিজের মর্জি মতো সবাই কে চালাতে চায়।যাক এবার অন্তত কেউ এলো।কথা টা ভেবে তিনি মুচকি হেঁসে খাবার শেষ করে বসা হতে দাঁড়িয়ে সমুদ্র কে উদ্দেশ্য করে বলল,
-“অনেক টা পথ যেতে হবে দাদু ভাই।
তুমি ছোট নাত বউ কে নিয়ে যাত্রা শুরু করো এক্ষুনি।”
সমুদ্র ঘাড় নাড়ে। পরপরই রাশির দিকে তাকিয়ে ইশারা করে রুমে আসার জন্য। অতঃপর মায়ের দিকে তাকিয়ে নিজের রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
আজগর শিকদার স্ত্রী কথা শুনে রাগে গজগজ করতে করতে রুমে চলে যায়।
রাশি তখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সামিরা বেগম রাশি কে রুমে যেতে বলল।
সারাহ নিজেও রাশি কে বুঝিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো অনেকক্ষণ হয় ছেলে কে রুমে একা ঘুমাতে দিয়ে এসছে। এক এক করে সবাই চলে গেলো।
রাশি নিজেও গুটিগুটি পায়ে রুমে এলো।সমুদ্র তখন ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে।
রাশি কে রুমে প্রবেশ করতে দেখে ইশারায় রেডি হতে বলল।রাশি তাই করলো।বোরকা পড়ে হিজাব পড়ে রেডি হয়ে নিলো।সমুদ্র কথা শেষ করে রাশির বই গুলো একটা ব্যাগে নিয়ে রাশির হাত ধরে বাড়ি হতে বেড়িয়ে এলো।
———
রাত অনেক টা হয়েছে।মিরা ঘুমিয়েছে ছিল। কিন্তু ছোট বাটন ফোনটার শব্দ ঘুম ভেঙ্গে গেলো।এটা রাহনুমা বেগম ওর কাছে খাবার শেষ রুমে আসার আগে ধরিয়ে দিয়েছে। বালিশের নিচ থেকে হাতরে ফোন বেড় করতেই দেখা মিলে রিহান কল করেছে। মিরা অবাক হলো।বিস্ময় কাটিয়ে ওঠে কল টা আর রিসিভ করতে পারে না। দ্বিতীয় বার রিং হওয়ার সাথে সাথে মিরা কল টা রিসিভ করে কানে নিতেই রিহান স্বাভাবিক কণ্ঠে হুকুমজারি করল,
-“গেইট খোলো।”
মিরা রিহানের কথা চোখ বড় বড় হয়ে এলো।শোয়া থেকে উঠে বসে বেশ জুড়েই বলল,
-“রাত একটার বেশি সমস্যা বাজে।
আপনি কি সব বলছেন?”
রিহান মিরার কথায় দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
-“ইস্টুপিট।
আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি।
এক মিনিট এর মধ্যে গেইট খোলো।
আর হ্যাঁ মা বাবা কে ডিসটার্ব করো না।”
মিরা ফোন টা হাতে নিয়েই এক দৌড়ে রুম হতে বেড়িয়ে এলো। খুব সাবধানের সহিত দরজা খোলে বারান্দায় গিয়ে দেখতে পায় রিহান গেইট এর বাইরে সত্যি দাঁড়িয়ে আছে।
মিরা কে দেখে রিহান ফোন টা পকেটে পুরো নিলো।মিরা বারান্দায় এক পাশের ছোট একটা টবের মধ্যে থেকে চাবি নিয়ে গেইট খুলতে রিহান তিন, চার টা শপিং ব্যাগ হাতে হুমড়ি খেয়ে ভেতরে এলো।নিজের হাতের ব্যাগ গুলো মিরার হাতে দিয়ে নিজে গেইটে লক করে দিয়ে আগে আগে রুমে চলে এলো।পেছনে পেছনে পা চালিয়ে মিরা নিজেও এলো।ব্যাগ বিছানায় রেখে
হন্তদন্ত হয়ে খাবার ঘর হতে পানি এনে রিহান কে দিলো মিরা।রিহান এক চুমুকে সব টা পানি শেষ করে নিয়ে মিরার হাতে গ্লাসে টা দিতে গিয়ে থমকাল।মেয়ে টা তারাহুরো ওড়না নিতে ভুলে বসে।
রিহান মিরার গলদেশর দিকে তাকিয়ে থমথমে খেলো। মেয়ে টার গায়ে ওই দিন রাতে দেওয়া ভালোবাসার চিহ্ন গুলো এখনো জ্বলজ্বল করছে।
কে বলেছিল এতো সাদা সুন্দর হতে? এখন বউ কে একটু মন মতো ভালোবাসা যাবে না দেখা যাচ্ছে।
রিহান কে এভাবে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিরা নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় আড়ষ্ট হলো। রিহানের হাত থেকে গ্লাস না নিয়ে ওড়না খোঁজার জন্য চার দিক চোখ বুলাতেই দেখা মিলে ওড়নার উপর রিহান বসে আছে।মিরা অসহায় মুখ করে রিহানের দিকে তাকাতেই রিহান ফিক করে হেঁসে দিলো।
মিরা জানে রিহান এখন কিছুতেই ওড়না দিবে না।
তাই রিহান কে চমকে দিয়ে হুট করে রিহান কে জড়িয়ে ধরে মিরা।
রিহান কস্মিনকালেও ভাবতে পারে নি মিরা এমন কিছু করবে।
রিহানের দেহ জুড়ে কম্পন হলো।তবে নিজে কে সামলে মিরা কে নিজের সাথে চেপে ধরে নেশাতুর কণ্ঠে বলে,
-“নিজের বিপদ এনেছো মেয়ে।
এখন লড়াই করে টিকতে পারবে তো!”
#চলবে…….