#প্রানেশা
#পর্ব_১৬
#জান্নাত_সুলতানা
মিরা পড়তে বসে আছে পাশেই চার্জ লাইট জ্বলছে। কিন্তু বারবারই শরীর টা কেমন করছে।বমি বমি ভাব হচ্ছে আজ।হয়তো গরম বেশি সেই জন্য এমন হচ্ছে। তার উপর গ্রামে কারেন্ট বেশি ডিসটার্ব করে।রিহান আজ বাড়িতে আসবে।ক’দিন পর মিরার পরীক্ষা শুরু হবে তাই ছুটি নিয়েছে রিহান।যদিও মিরা বারণ করছেন তবুও রিহান শুনেনি।রিহান ফিরার পথে রাশি কে নিয়ে ফিরবে।মিরার ভাবনার মাঝেই গেইটে খটখট শব্দ হলো।মিরা লাইট হাতে রুম হতে বেড়িয়ে এলো। রাহনুমা বেগম ততক্ষণে গেইট খুলে রিহান আর রাশি কে বাড়ির ভেতরে নিয়ে এসছে। মিরা গিয়ে রাশি কে জড়িয়ে ধরে রাশি নিজেও ভীষণ খুশি হয়।আজ প্রায় এক মাস পর রাশি গ্রামে এলো।রাশির হাসি যেনো মুখ হতে সরছেই না।রাহনুমা বেগম মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।মেয়ে তার সুখে আছে মেয়ের মুখ দেখে সেটা তিনি বেশ বুঝতে পারে।মনের কোথাও খারাপ লাগা কাজ করে।একটা সময় এসব নিয়ে কতটা না মেরে ছিল মেয়ে টাকে।অবশ্য তখন পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল।
রাহনুমা বেগম এর ভাবনার মাঝেই রিহান তাগাদা দিলো।
ফ্রেশ হতে চলে গেলো। রাশি নিজের রুমে চলে গেলো।
রিয়াজ মাহমুদ দোকান থেকে এলে সবাই এক সাথে খাবার শেষ করে আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে গেলো।
রাশি রুমে যাওয়ার আগে অবশ্য রাহনুমা বেগম এর ছোট ফোন টা রাশি সাথে করে রুমে নিজেকে এসছে।
রাশি রুমে এসে পড়ার টেবিলে বসে গেলো।বেশ অনেকটা সময় পর ফোন টা বাজলো।
রাশির ঠোঁটের কোণায় এক চিলতে হাসি দেখা দিলো।
ফোন টা রিসিভ করে কানে নিতেই সমুদ্র’র গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠ ভেসে এলো।রাশি মুচকি হেঁসে কথা বলল।তবে সমুদ্র যেনো বেশ গম্ভীর আজ।বেশ অনেক্ক্ষণ কথা বলে সমুদ্র কল কাটলো।
রাশি ফোন রেখে ঘুমিয়ে পড়লো।
———
ময়নাল কে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কথা টা যেনো বিস্ফোরণের মতো শুনাল রাশির কানে।
রাশি চুপচাপ থম মে’রে বসে রইল।একটু আগেই রিহান কল করে কথা টা জানিয়েছে।রাশি মিরা কে বলে নিজের রুমে আসে। কিছু ভেবে তড়িঘড়ি করে সমুদ্র কে কল করল।সমুদ্র কল কেটে নিজে আবার কল করে।রাশি কল টা রিসিভ করেই বলে উঠলো,
-“ময়নাল ভাই কে কাল রাত থেকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!”
সমুদ্র নিশ্চুপ।তবে পরক্ষণেই সমুদ্র ফিসফিস করে জানালো,
-“আমার কলিজায় হাত দিয়েছে।
এতো সহজে ছেড়ে দি কি করে!”
সমুদ্রের কথায় রাশি চমকাল।কিছু জিগ্যেস করতে পারে না মেয়ে টা।
সমুদ্র ফোনের ওপাশে হাসল বোধহয়। যা রাশির নিকট খুব রহস্যময় লাগলো।পরপরই সমুদ্র বলল,
-“কাল তো এক্সাম শুরু।
ঘুমিয়ে যাও রাত জাগতে হবে না।”
রাশি কে কিছু বলতে না দিয়ে সমুদ্র কল কাটে রাশি সেভাবেই বসে রইল।
——-
রাশির আজ তিন টা পরীক্ষা শেষ হলো।সমুদ্র এই তিন টা পরীক্ষার একটাতেও আসে নি। আসে নি বললে ভুল হবে।এসেছে তবে পরীক্ষার শেষে নয়।হয় রাতে নয় বিকেলে। আজও রাশি কে ফোন করে জানিয়েছে আসবে। কিন্তু এখনো কোনো খোঁজ নেই লোকটার।মিরা আর রাশি গেইটের থেকে একটু দূরে দাঁড়াল। তাঁর কারণে গেইটে ভীষণ ভীড়। রিহান হয়তো এসে যাবে এখনি।রাশির মনঃক্ষুণ্ন হলো। আজও সমুদ্র আসবে না ভেবে।
বেশ অনেক্ক্ষণ পর রিহান এলো।সাথে সমুদ্র। রাশি কোনো প্রতিক্রিয়া করল না। রিহান নিজের বাইকে মিরা কে নিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় অবশ্য বারকয়েক সমুদ্র কে সাবধানে আসতে বলেছে।
রিহান মিরা চলে যাওয়ার পর রাশি তখনো দাঁড়িয়ে থাকে।
সমুদ্র ভ্রু কুঁচকে রাশির দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করলো,
-“কি হয়েছে?
ওঠে বসো!”
রাশি তবুও কোনো নড়চড় নেই। তাঁর কারণে পাশেই দুই তিন টা মেয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। আর রাশি সেদিকে তাকিয়ে।
সমুদ্র দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।তবে মুখে দুষ্টু হেঁসে বলল,
-“তুমি চাইলে কোলে তুলে বসাতে পারি!”
রাশি সমুদ্রের দিকে রাগী চোখে তাকাল।তবে পরক্ষণেই সমুদ্রের চোখের দিকে তাকিয়ে লজ্জা পেলো।গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে সাবধানে ওঠে বসে বাইকে।এক হাত সমুদ্রের পেশিবহুল কাঁধে রেখে সুন্দর করে বসে গেলো।সমুদ্র মুচকি হেঁসে বাইক স্টার্ট দিল।
——–
দুপুরে খাবার শেষ সমুদ্র রুমে এসে বিছানায় শুয়ে ছিল।রাশি তখনো রুমে আসে নি। সমুদ্র ফোন টা হাতে নিতেই দেখা মিলে সামিরা বেগম অনেক গুলো কল দিয়েছে। বেশী সময় হয় নি কল গুলো এসছে। সমুদ্র চিন্তিত হলো।এতো কল দিয়েছে বাড়িতে কিছু হয়েছে ভেবেই সমুদ্রের কপালে চিন্তার ভাঁজ পরে।
ফোন হাতে মায়ের নাম্বারে ডায়াল করে।
দুইবার তিনবার পর পর অনেকবার বাজল কল টা তবে রিসিভ হলো না।
সমুদ্র দ্বিতীয় বারের ন্যায় কল করতেই কল টা রিসিভ হলো।
সামিরা বেগম অস্থির কণ্ঠে জানালো,
-“বাবা তোর দাদু ভীষণ অসুস্থ।”
-“কখন থেকে?
এখন কেমন আছেন?”
সমুদ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
সামিরা বেগম জানালো গতরাত থেকে বুকে ব্যাথা ওঠেছে। কিন্তু তিনি ডক্টর এর কাছে যেতে চাচ্ছে না। সমুদ্র মা সাথে রাশি কে নিয়ে ও বাড়িতে যাওয়ার কথা বললে সমুদ্র না করে দিলো।
তবে নিজে যাবে সেটা জানালো।
ফোন রেখে রাশি কে ডেকে সব টা জানাতে রাশি যাবে। সমুদ্র অনেকবার না করেও কোনো লাভ হয় না।ব্যাপার টা রিয়াজ মাহমুদ আর রাহনুমা বেগম কে জানালে ওনারেও রাশি কে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে।
তাদের মতে বুড়ো মানুষ কখন কি হয় বলা তো যায় না।সামন্য রাগ নিয়ে এভাবে থাকা ভালো হবে না। লোকটা অসুস্থ দেখতে যাওয়া উচিৎ।
সমুদ্র সবার সাথে যুদ্ধ করে না পেরে রাশি কে সাথে নিয়ে শিকদার বাড়ি এলো সাথে রিয়াজ মাহমুদ এলো।
সত্যি আজগর শিকদার ভীষণ অসুস্থ।কেমন শক্ত পোক্ত মানুষ টা বিছানায় পরে রয়েছে। পাশেই সমুদ্রের দাদি বসা।সমুদ্র বাবাও এসছেন সাথে করে এম্বুল্যান্স নিয়ে। সমুদ্র যাওয়ার আধঘন্টার মধ্যে শহরে রওনা দিলো আজগর শিকদার কে নিয়ে।
বাড়িতে শুধু রাশি কাজের লোক ছাড়া কেউ নেই। সারাহও নিজের স্বামীর সাথে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে সাপ্তাহ আগে।
রাশি সব দিক গুছিয়ে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
ফোন হাতে সমুদ্র কে কল করতেই জানালো হসপিটাল ভর্তি করা হয়েছিল আজগর শিকদার কে এখন মোটামুটি সুস্থ। সমুদ্র রাতে ফিরে আসবে এটাও জানাল।
রাশি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। রাত সাড়ে আটটা বাজে তখন।
———–
সমুদ্র রাতে বাড়ি ফিরে প্রায় এগারো টা বাজে তখন।
রাশি তখন ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। চোখ ভর্তি ঘুম আর মাথা ভর্তি টেনশন।সুস্থ মানুষ টা হঠাৎ কেমন অসুস্থ হয়ে গেলো।
হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ রাশি ওঠে গিয়ে দরজা খোলে দিলো।সমুদ্র এসছে।এলোমেলো চুল আর চোখ মুখে আতংক।রাশির বুকের ভেতর ধক করে উঠল।লোকটা কয়েক ঘন্টায় নিজের কি হাল করেছে।মুখে যা-ই বলে সত্যি তো এটা সমুদ্র আজগর শিকদার কে ভীষণ ভালোবাসে।রাশি নিজেও এটা একয় দিনে ভালোই বুঝতে পেড়েছে। বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে ঠিকই তবে রোজ আজগর শিকদার এর খোঁজ খবর নিতো।
-“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।
আমি খাবার নিয়ে আসছি।”
রাশি বলল।
সমুদ্র দরজা বন্ধ করে রাশির দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।মেয়ে টার চোখ মুখ শুকিয়ে আছে। নিশ্চয়ই এসবের জন্য নিজে কে দ্বায়ী করছে।সমুদ্র নিজে কে স্বাভাবিক করে। অতঃপর কি ভেবে রাশির ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে রুমের উদ্দেশ্য চলে গেলো।
খাবার শেষ সমুদ্র সব নিজে রান্না ঘরে রেখে এলো।রাশি তখন বিছানা ঠিকঠাক করছে শোয়ার জন্য।
সমুদ্র রুমে এসেই লাইট অফ করে দিলো।ছোট একটা লাইট অন করে এসে বিছানায় বসে রাশি কে টেনে কোলে বসাল।
রাশি চুপ করে বসে রইল।
সমুদ্র রাশি কাঁধে চুমু খেয়ে জিগ্যেস করলো,
-“মন কেন খারাপ করছো?”
-“আমার জন্য হয়েছে সব।”
রাশি মাথা নিচু করে বলল।
সমুদ্র আবার রাশির হাতে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে উঠলো,
-“উঁহু, একদম এসব ভাবতে যেয়েও না।”
-“আপনি থাকলে এসব হতো না।”
সমুদ্র রাশি কে নিজের দিকে ফিরে রাশির ললাটে ওষ্ঠ ছোঁয়া দিলো।রাশির চোখ হতে টপ করে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।
সমুদ্র রাশি কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“সব আল্লাহর ইচ্ছে।
দাদা জান কে এটা বুঝতে হবে।
আমাদের কারোরই কোনো কিছুর উপর হাত নেই।”
-“দু’দিন পরীক্ষা নেই।”
-“জানি।”
রাশির কথার বিপরীতে জানালো সমুদ্র।
রাশি কপালে ভাঁজ পরে।লোকটা ভীষণ শক্ত হয়েছে এখন।সত্যি রাশির দ্বারপ্রান্তে ঘেঁষে না বসে।নিজের কথা রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাশি ভাবনার মাঝেই নিজের অধর উষ্ণ স্পর্শ পেলো।
রাশি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সমুদ্র রাশিকে পুরো টাই নিজের দখলে নিয়ে নিলো।
#চলবে…..