প্রানেশা পর্ব-১৭

0
199

#প্রানেশা
#পর্ব_১৭
#জান্নাত_সুলতানা

রিহান আজ বাড়ি এসছে।
মিরার লাস্ট পরীক্ষার দিন রিহান চলে গিয়েছিল। অফিসে জরুরি প্রয়োজনে যেতে হয়েছে।
মিরা রাতে খাওয়া শেষ শাশুড়ীর সাথে খাবার ঘরে ছিল। ঠিক তক্ষুনি রিহান মিরা কে ডাকে।রাহনুমা বেগম অবশ্য মিরা কে আগেই অনেকবার রুমে যেতে বলেছে মিরা যায় নি।ছেলের ডাক শুনে রাহনুমা বেগম মিরা কে ঠেলেঠুলে রুমে পাঠিয়ে দিলো।
মিরা রুমে আসার সাথে সাথে রিহান দরজা বন্ধ করে দিলো।হাতে থাকা পিলের পাতা গুলো বিছানায় ছুঁড়ে ফেলে খাবলে ধরে মিরার বাহু।মিরা যেনো প্রস্তুত ছিল।কোনো শব্দ করে না।তবে ভয় পাচ্ছে মেয়ে টা।রিহান বুঝতে পারলো।কিন্তু তবুও নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। শক্ত হাতে মিরার বাহু ঝাঁকিয়ে বিছানায় ঔষধ গুলোর দিকে একবার দৃষ্টিপাত করে ফের মিরার দিকে তাকিয়ে রাগী কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“এসব কি মিরা?
আমি বলেছিলাম না মেডিসিন মিস না করতে?
তাহলে এগুলো একটাও ফিনিশ হয় নি কেন?”

মিরা রিহানের ধমকে কেঁপে উঠল। রিহান মিরা কে ভয় পেতে দেখে তাচ্ছিল্য হাসি হেঁসে জিগ্যেস করলো,

-“তুমি ভয় পাও আমাকে!
হাসলে।আমি বারণ করে নি।এই মেয়ে আমি তোকে না করি নাই।এখন আমার বাচ্চা চাই না। তোকে,,,

-“বাবু ভয় পাবে।”

রিহান কে সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই মিরা মিনমিন করে বলে উঠলো।
রিহান মিরা বাহু ছেড়ে দু কদম পিছিয়ে গেলো।
আবার হঠাৎই এগিয়ে এসে মিরা কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।একদম শক্ত করে মিরার যেনো দমবন্ধ হয়ে আসছে। তবে নিজে কে সামলে রিহানের পিঠে হাত দু’টো রাখতে কাঁধে তরল কিছুর স্পর্শ পেলো। বুঝতে বেগ পেতে হয় না।এই তামাটে বর্ণের শক্ত পোক্ত মানুষ টা কান্না করছে। খুশিতে লোকটা কেঁদে দিয়েছে। মিরা নিজে কে ছাড়িয়ে নিলো রিহানের কাছ থেকে রিহানের ততক্ষণে নিজের চোখের জল আড়াল করে মিরার ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো।

-“কত দিন হয়েছে জানতে পেরেছো?”

-“সন্দেহ আগে হয়েছে।
কাল শিওর হয়েছি।”

-“বলো নি কেন আমায়?”

-“বলতাম।
আপনি তো তাঁর আগেই রেগে গিয়েছেন।”

-“আমার রংহীন জীবনে এসে আমার জীবন টা রঙিন করে তোলার জন্য ধন্যবাদ মিরা।”

-“ভালোবাসেন না?
শুধু ধন্যবাদ দিলেন!”

-“ভালোবাসি তো ভীষণ ভালোবাসি।
মাই লিটেল ওমেন।”

মিরা মুচকি হেঁসে রিহান কে জড়িয়ে ধরে বলল,

-“আমিও ভালোবাসি।”

———

পরীক্ষা শেষ হয়েছে আজ চার দিন হতে চলে।রাশি সমুদ্র এখন রাশিদের বাড়িতে রয়েছে। আজগর শিকদার এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। কিন্তু তিনি আজ রাশিদের বাড়ি এসছে। রাশি বিশ্বাস হচ্ছে না।আবার ভয়ও পাচ্ছে মেয়ে টা।কেন এসছে আজগর শিকদার?সমুদ্র রাশি কে আশ্বাস দিয়েছে। কিছু হবে না। কিন্তু রাশি তবুও ভয়ে আছে।এখব বর্তমানে সমুদ্র সহ সবাই রাশিদের ছোট বসার ঘর টায় বসে আছে।
সাথে সমুদ্রের দাদি নিজেও রয়েছে। আজগর শিকদার কিছু ইশারা করতেই রিয়াজ মাহমুদ স্ত্রী দিকে তাকাল। রাহনুমা বেগম রাশি কে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো।

-“এই মাসের শেষ এর দিকে আমার নাতবউ কে অনুষ্ঠান করে ঘরে তুলতে চাই।”

-“আলহামদুলিল্লাহ।
এতো ভালো কথা।”

রিয়াজ মাহমুদ উৎফুল্ল নিয়ে বলল।
আজগর শিকদার আমতা আমতা করে আরও কিছু হয়তো বলতে চাচ্ছিল।
তবে স্ত্রী দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলল না।
সমুদ্রের দাদি রিয়াজ মাহমুদ কে বলল,

-“আসলে হয়েছে কি,আমরা চাইছিলাম বিয়ে টা যদি শিকদার বাড়ি থেকে হতো।”

রিয়াজ মাহমুদের হাসি খুশি মুখ টা মূহুর্তে চুপসে গেলো।একটা মাত্র মেয়ে। নিজের যা সামর্থ্য রয়েছে মেয়ে কে আর মেয়ের জামাই কে নিজের মতো করে সাজানোর ইচ্ছে। যদিও মেয়ের জামাই আর মেয়ের শ্বশুর বাড়ির কাছে এসব খুবই সামন্য। কিন্তু তাও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য একজন মেয়ের সব দিক সামলে ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়।
রিয়াজ মাহমুদও চান একমাত্র মেয়ের বিয়ে নিজ সামর্থ্যের মধ্যে রেখে দিতে। মেয়ের শ্বশুর বাড়ির থেকে কিছু নিয়ে মেয়ে কে বিদায় দেওয়ার ইচ্ছে নেই।
সমুদ্র হয়তো শ্বশুরের মনের কথা আন্দাজ করতে পারে তাই তো দাদা-দাদি কে বুঝিয়ে রাশি কে রাশিদের বাড়িতে রাখার কথা বলল।
রিয়াজ মাহমুদ নিজেও আবদার করে। আজগর শিকদার মেনে নিলেন।
বৈঠক শেষ বিকেলে নাস্তা করে শিকদার বাড়ির সবাই বিদায় নিলো।

——-

সময় খুব দ্রুত চলে যায়।দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলেই এলো।কাল বাদে পরশু বিয়ে।তবে বিয়ের আগ পর্যন্ত সমুদ্রের দাদি একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছে। শর্ত টা হলো বিয়ের এক দিন আগে থেকে রাশির সাথে যেনো সমুদ্র কোনো যোগাযোগ না করে।রাশি এই শর্তে কোনো প্রক্রিয়া নেই।রাশি ভাবলেশহীন। কিন্তু সমুদ্রের অবস্থা করুন। বউ ছাড়া এখন এক ঘন্টা থাকা মানে এক যুগের সমান মনে হয়। সেখানে পুরো এক দিন এক রাত বউ ছাড়া এটা কিছুতেই সম্ভব না।
তবে সমুদ্র দাদির সামনে কিছু বলল না।চুপচাপ ঘাড় নাড়ে। সমুদ্র দাদি রাশিদের বাড়িতে রাশির হলুদের সব নিয়ে এসছিল সাথে সমুদ্র কে নিয়ে।আর তক্ষুনি তিনি নিয়ম টা দিয়েছে।
সন্ধ্যার আগে আগে শিকদার বাড়ি হতে হলুদ নিয়ে আসা সবাই আবার ফিরে গেলো।ওদিকে গিয়ে আবার ছেলের হলুদের সব আয়োজন করতে হবে।

——–

রাশিদের বাড়ির বড় উঠোনে হলুদের জন্য সুন্দর করে জায়গায় করা হয়েছে। মিরাসহ কয়েকজন মেয়ে মিলে রাশিকে সাজিয়ে-গুছিয়ে সেখানে বসাল।
মিরা নিজে তৈরি হয় নি।রাহনুমা বেগমও মিরা কে রেডি হওয়ার জন্য তাগাদা দিলো। তাই মিরা রাশি কে রেখে রুমে গেলো।রিহান হয়তো কোনো কাজ করছে কোথাও।একমাত্র বোনের বিয়ে কোনো আত্মীয় স্বজন বাদ রাখে নি।কত কাজ।দম ফেলার সময় নেই।
মিরা রুমে গিয়ে দরজা আটকে ওড়না বিছানায় রেখে ছোটখাটো আলমারি থেকে একটা শপিং ব্যাগ বেড় করে। সেটা থেকে একটা হলুদ আর লাল পাড়ের শাড়ী বেড় করে।
সাথে সব প্রয়োজনীয় জিনিস রেখে বিছানায় পেছন ফিরতেই ধাক্কা খেলো শক্ত পোক্ত একটা শরীর এর সাথে। মিরা চমকাল।দরজা বন্ধ তাহলে?সুপরিচিত গন্ধ নাকে ভেসে আসতেই বুঝতে পারে হয়তো তাঁর ব্যাক্তিগত পুরুষ আগে থেকে রুমে ছিল।

-“আপনি কোথায় ছিলেন?
দেখি নি?”

মিরা একটা হাত উল্টো করে রিহানের চাপ দাড়ি ভর্তি গালে ছুঁয়েই জিগ্যেস করলো।

-“এতো বড় শরীরের মানুষ টা কে তুমি দেখো নি?
বিছানার ওপাশে ল্যাপটপ নিয়ে বসে ছিলাম।”

রিহান মিরা কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে মিরার কাঁধে থুঁতনি ঠেকিয়ে জানাল।

মিরা নিজের পেটের উপর হতে রিহানের হাতের বাঁধন আলগা করার চেষ্টা করে বলল,

-“ছাড়ুন।
তৈরী হয়ে ওখানে যেতে হবে।”

রিহান শুনল কি না কে জানে।রিহান তো মিরার ঘাড়ে নাক মুখ ঘষছে।মিরা বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। কিন্তু রিহানের সে দিকে পাত্তা নেই।
সে নিজের মতো মিরার কাঁধে গলায় সামনে বুকের উপর বারবার নিজের অধর ছোঁয়া দিচ্ছে।

-“তুমি এত্তো আদুরে কেন?
তোমায় সামনে পেলে আমার শুধু ভালোবাসতে ইচ্ছে করে।”

রিহান মিরার এলোমেলো চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে জানাল।
মিরা ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,

-“আগে লাগত না?”

-“আগে তো তোমার দিকে ভালো করে তাকাতামই না।
বাচ্চা মেয়ে একটা।
যখন থেকে বুঝতে পেরেছি তুমি আমায় ভালোবাসো, তখন থেকে বিরক্ত লাগত তোমায়।
আর সেই দিন হঠাৎ সমুদ্রের কথায় রাজি হয়ে বিয়ে পর মনে হচ্ছিল ভুল করেছি।
কিন্তু না আস্তে আস্তে বিরক্ত থেকে ভালো লাগতে শুরু করে।
কিন্তু ওই যে বাচ্চা মেয়ে লাগে। তবে হঠাৎ তুমি সেদিন কাছে এলে আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল তোমায় একবার ছুঁয়ে না দিলে জীবন বৃথা মনে হবে। আর সেদিন ছুঁয়ে দিয়ে নিজে এমন পাগল হয়ে যাব বুঝতে পারি নি।”

কথা গুলো এক টানা বলেই রিহান মিরা কে নিজের দিকে ফিরিয়ে মিরা অধরের ভাঁজে নিজের অধর চেপে ধরলো রিহান।
মিরা মিনিটখানেক রেসপন্স করার পর হাত ছুঁড়াছুঁড়ি করতে লাগলো।
রিহান মিরা কে ছেড়ে দিয়ে মিরা কে নিজের বুকে আগলে নিলো। মিরা জোরে জোরে শ্বাস ফেলে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

-“এখন বেশি সময় থাকলে শ্বাস আঁটকে আসে।”

-“সমস্যা নেই জানেমান।এটা দিয়ে আমার আজ অর্ধেক রাত অব্ধি চলে যাবে।”

#চলবে……