প্রানেশা পর্ব-১৮ এবং শেষ পর্ব

0
434

#প্রানেশা
#পর্ব_১৮[অন্তিম পর্ব]
#জান্নাত_সুলতানা

রাশির হলুদের অনুষ্ঠান শেষ মিরা রাশি কে কলপাড়ে নিয়ে গেলো।মিরা বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো আর রাশি ভেতরে গেলো।
রাশি ভেতরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাশি কে কেউ টেনে নিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। রাশি প্রথমে ভয় পেলেও পরে বুঝতে পারে তারই ভালোবাসার মানুষ টা।
রাশি কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই শাড়ীর আঁচল ভেদ করে নিজের মসৃণ পেটে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেলো।
চোখ বন্ধ করে সমুদ্রের পাঞ্জাবি খামচে ধরে বলল,

-“আমি জানতাম আপনি আসবেন।”

সমুদ্র কিছু বলল না।
রাশি কে জড়িয়ে রেখে রাশির গলায় নিজের ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দিলো।
পরপরই ছেড়ে দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে নিলো বাইরে কেউ আছে না কি।কেউ নেই দেখে রাশি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। সমুদ্র রাশির ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে বলল,

-“অপেক্ষা করছি।
জলদি চলে এসো।”

সমুদ্র সেখান থেকে বেড়িয়ে সোজা রাশিদের বাড়ির পেছনের দিকে চলে গেলো।
রাশি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে বিছানায় শোয়া মাত্রই জানালায় শব্দ হলো।রাশি চট করে এগিয়ে গিয়ে জানালা খুলতেই সমুদ্র ভেতরে আসে।রাত তখন একটার মতো বাজে।সমুদ্র জানালা বন্ধ করে দিয়ে ফিরে এসে রাশি কে টেনে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। রাশির অধরে গভীর একটা চুম্বন করে ছেড়ে দিয়ে বলল,

-“তোমাকে কয়েক ঘন্টা না দেখে নিজে কে কেমন পাগল পাগল লাগছিল। অনেক কষ্ট নিজে কে সামলেছি বউপাখি।
এখন তুমি আমাকে সামলে নাও।”

———

বর দুপুরে এলো।খাবার পর্ব শেষ বিয়ে পড়াতে পড়াতে বিকেল হলো।কনে বিদায় হতে হতে সন্ধ্যা হয়ে এলো।বিয়ে বাড়ির জমজমাট পরিবেশ কান্না দিয়ে শেষ হলো।রাশি কে নিয়ে শিকদার বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে সাড়ে সাত টা বাজে।
রাতে খাবার রাশি কে সামিরা বেগম খাইয়ে দিলো। আজগর শিকদার নাত বউয়ের পাশে বসে সবার সাথে পরিচয় করাল।রাশির যেনো এতো কিছুর পরেও সব স্বপ্ন মনে হচ্ছিল।
তবে সমুদ্র স্বাভাবিক দাদার সাথে গলায়গলায় ভাব।তবে দাদার কাছে একান্তই ক্ষমা চেয়েছে সমুদ্র। যদিও ভুল সে করে নি।
আজগর শিকদার এসব ভুল ভেবে ভুলে যেতে বলছে।ওনার কথা একটাই “আল্লাহ যা করে ভালোর জন্য করে” হয়তো আমাদের মন মতো হয় না তবে আমাদের জন্য হয়তো সেটাই মঙ্গল হয়।

——

রাশি কে বিদায় দিয়ে রাহনুমা বেগম, রিয়াজ মাহমুদ,রিহান সবাই কেমন চুপচাপ হয়ে গেলো।যে যার রুমে গাপটি মেরে বসে রইল।বাড়ি একদম ঠান্ডা। মিরার মাও সন্ধ্যায় নিজের বাড়ি চলে গিয়েছে।মিরা রাহনুমা বেগম আর রিয়াজ মাহমুদ কে রাতে খাবার বেশ জোর করেই খাওয়াল।রাহনুমা বেগম অবশ্য মিরা কে কড়াকড়ি ভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যাতে বেশি কিছু না করে। খাবার খেয়ে রুমে যায় যেনো তাড়াতাড়ি। বাচ্চা মেয়ে তারউপর স্বাস্থ ভালো নয়।এমন অবস্থায় সাবধানে চলাফেরা করতে হয়।মিরা শুধু শাশুড়ীর উপদেশ মন দিয়ে শুনে ঘাড় নাড়ে। অতঃপর
রিহান আর নিজের জন্য খাবার নিয়ে রুমে গিয়ে দেখল।রিহান বসে আছে জানালার পাশে চুপ করে। মিরা খাবার থালা রেখে রিহানের পাশে বিছানায় বসে মৃদু কণ্ঠে বলল,

-“দুপুরেও খান নি ঠিক করে।”

রিহান মিরার দিকে এক পলক তাকিয়ে হাত ধুয়ে প্লেট হতে খাবার তুলে মিরার মুখে দিতে দিতে বলল,

-“কতবার বলেছি আমার জন্য বসে থাকবে না।
একা তুমি? ছোট প্রাণ টার কথা মনে থাকে না?”

মিরা মুখে শিশুসুলভ ভাব এনে খাবার খেতে খেতে বলল,

-“আপনার তো মনে থাকে না।”

-“বাচ্চা কার পেটে?”

-“আমার,কিন্তু আপনার বাচ্চা তো আপনি না খেলে খেতে চায় না।”

রিহান ফোঁস করে দম ছাড়ে।এই মেয়ে মা হবে। কিন্তু এর কথাবার্তা শুনলে মনে হয় এই নিজেই বাচ্চা।

-“লাস্ট ওয়ার্নিং।
আমার বাচ্চা এন্ড বাচ্চার মা দু’জন কে সুস্থ চাই।
এখন তোমার ইচ্ছে।”

মিরা পা দোলাতে দোলাতে বলল,

-“আচ্ছা।
আপনি খান।”

রিহান মিরার মুখে খাবার তুলে দিয়ে নিজের মুখেও নিলো।মিরা চমৎকার একখানা হাসি হাসলো।
রিহান সেই হাসির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।পরপরই নিজেও হাসল।
প্রথম ভালোবাসা হয়তো ভোলা সম্ভব নয়।
কিন্তু দ্বিতীয় ভালোবাসা ভয়ংকর রকমের সুন্দর হয়।শুধু সেটা ভাগ্য থাকা লাগে,যদি ভাগ্যে আসে তবে নিজেও আগলে রাখা লাগে।
রিহান হয়তো মিরা মতো করে এতো ভালোবাসতে পারবে না। তবে নিজের সব টা দিয়ে ভালোবেসে আগলে রাখবে।
সত্যি মিরা তাকে ভালো না বাসলে হয়তো আজ এতো সুন্দর হত না তাঁর জীবন টা।

———

রাত প্রায় দশ টার দিকে রাশি কে রুমে রেখে গেলো কয়েকটা মেয়ে মিলে।সারাহ আসে নি।ছেলে ছোট তাই পরে আসবে বলে কথা দিয়েছে। রাশি রুমে প্রবেশ করে থমকাল।সমুদ্র রুম আগেই থেকেই সুন্দর গোছানো। এখন ফুল আর ক্যান্ডেল এর জন্য আরও দ্বিগুণ আকর্ষণীয় লাগছে।
রাশি কে দরজায় রেখেই মেয়ে গুলো বিদায় নিয়েছে। রাশি রুমের ভেতর গিয়ে ঘুরেঘুরে রুম টা ভালো করে দেখতে লাগলো।গায়ের ভারী সুন্দর লেহেঙ্গা টা মেঝে ছুঁয়ে যাচ্ছে। সে দিকে রাশির কোনো হেলদুল নেই।হঠাৎ দরজা বন্ধ করার শব্দ রাশি পেছনে না ফিরে বুঝতে পারে সমুদ্র রুমে এসছে।

-“মাশাআল্লাহ।”

সমুদ্র এগিয়ে এসে রাশির দোপাট্টা মাথা থেকে সরিয়ে মুচকি হেঁসে বলল।
রাশি লজ্জা পেলো বোধহয়। তাই তো মাথা নিচু করে লাজুক হাসি হাসে।সমুদ্র রাশি কে লজ্জা পেতে দেখে দুষ্ট হেঁসে বলল,

-“চলো বউ ঘটা করে দ্বিতীয় বাসর টা সেরে ফেলি!”

রাশি সমুদ্রের বুকে মাথা রেখে আস্তে করে সমুদ্রের বুকে কিল বসাল।সমুদ্র হেঁসে রাশি কে কোলে তুলে ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজের পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে খুলতে জিগ্যেস করলো,

-“বলো কি চাই তোমার?”

-“আপাতত তিন টা জিনিস।”

রাশি ডান হাতের তিন টা আঙ্গুল দেখি বলল।
সমুদ্র ভ্রু জোড়া টানটান করে বলল,

-“বাহ্।
বলো দেখি সেখানে আমি আছি নাকি!”

-“রেগে যাবেন না।আগে শুনবেন।
তার পর উত্তর দিবেন।
ঠিক আছে?”

সমুদ্র রাশির কথায় ঘাড় নেড়ে জানাল,

-“ডান।”

-“প্রথম, ময়নাল ভাই কোথায়?”

রাশি থমথমে কণ্ঠে প্রশ্ন করলো।
সমুদ্র কিছু সময় চুপ থেকে শান্ত স্বরে বলল,

-“আছে।
দেশের বাইরে মা বাবা সহ।”

-“এতো জলদি সব ভুলে গেলো?”

রাশি সমুদ্রের কথা শুনে অবাক বিস্ময় নিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“নাহ,জেলে থাকাকালীন সময় ওঁকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়।
ওর মানুষিক সমস্যা ছিল। যার কারণে খুব সহজে ওঁকে সব ভুলাতে কষ্ট করতে হয় নি।”

রাশি এপর্যায়ে এসে সত্যি যেনো বাকহারা হলো।তবে যা হয় ভালোর জন্যই হয়ে ভেবে নিজে কে ধাতস্থ করে ফের জিগ্যেস করলো,

-“দ্বিতীয়,ভাইয়া আর বাবা কে কি করে মিরার বিয়ের ব্যাপারে রাজি করালেন?”

-“এটা সিক্রেট।
তবে তুমি একটু মন দিয়ে ভাবলে উত্তর টা পেয়ে যাবে।
তৃতীয়? ”

সমুদ্র কথা শেষ রাশির অধরে আলতো স্পর্শ করল নিজের অধর দ্বারা।
রাশি এবার চোখ বন্ধ করে লম্বা দম নিয়ে চোখ বন্ধরত অবস্থায় বলে উঠলো,

-“আমার আপনার মতো একটা ছোট সমুদ্র শিকদার চাই।”

সমুদ্র মুচকি হেঁসে রাশির অধরে গভীর স্পর্শ করে বলল,

-“ভালোবাসি বউপাখি।

রাশি জবাব দিলো না শুধু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সমুদ্র কে।সমুদ্র বুঝতে পারে এই শক্ত হাতের বাঁধনের অর্থ যে “আমিও ভালোবাসি”।

~সমাপ্ত।