প্রার্থনায় রবে তুমি পর্ব-১১+১২

0
356

#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_১১
#Saji_Afroz

আহারে! মেয়েটা পড়াতে এসে ডাকাতের খপ্পরে পড়ে গেল। ঘাবড়ে আছে তাই না ও?

শারমিন আক্তারের কথা শুনে আশামনি বললেন, ওই মেয়ের কথা ভাবছ তুমি ভাবী? ঘরের কী অবস্থা করেছে দেখেছ ডাকাত দল!

রুজাইন বলল, সেসব ঠিক করা যাবে। মেয়েটার সম্মানহানি হলে সেটা কী ঠিক হত?

শারমিন আক্তার সহমত পোষণ করে বললেন, ঠিক তাই। মেয়েটার সঙ্গে কাল আমি কথা বলব। সাহস দেব ওকে। বড়ো বিপদ থেকে রক্ষা পেল ও।

আশামনি বলল, রাত ন’টায় শহরে ডাকাতি করতে আসে। কত বড়ো সাহস!

পাশে বসে থাকা সাদ্দাম বলল, গভীর রাতে আসলে দারোয়ান দরজা খুলতো না। এটা ওরা জানে। এইজন্যই এই সময়টা বেছে নিয়েছে। ওদের টার্গেট তোমরাই ছিলে। দারোয়ানকে মারধর করে বাড়িওয়ালার ঘর কোনটা জিজ্ঞাসা করা হয়। এতে আবার একটা বিষয় প্রমাণ হয়। ওরা খুব বেশি জানে না তোমাদের সম্পর্কে। কেবল জানে এখানে বাড়িওয়ালা থাকে।

রুজাইন বলল, শাস্তি ওদের পেতেই হবে।
-তা পাবে। ইধার সঙ্গে বেয়াদবি করার শাস্তিও পাবে।

ইধা ফ্রেশ হয়ে আসে। মরিয়ম জান্নাত ওর কাছে আসে। তিনি বললেন, ঠিক আছ তুমি?
-জি আন্টি।
-সবটা শুনেছি। সময় মতো পুলিশ না আসলে অঘটন ঘটে যেত!
-রুজাইন ভাই এর সঙ্গে খারাপ কিছু হত।
-তোমার সঙ্গেও।
-আমার আর কিছু হতে দিলেন কই উনি! আমাকে বাঁচিয়ে নিজে মরতে বসেছিল।
-সত্যিই ছেলেটা প্রশংসার দাবী রাখে। দেখা হলে ধন্যবাদ জানিয়ে দেব। খেতে আসো। আমি সব টেবিলে সাজিয়েছি।
-আচ্ছা।

খাবার সেরে রুমে এসে মোবাইল হাতে নেয় ইধা। রুজাইনের মেসেজ এসেছে আরও আগে। ইধাকে দু:খিত জানায় ও। ইধা কেন জানতে চায়। সঙ্গে সঙ্গেই রিপ্লাই আসে-
আমার জন্যই এখানে থাকতে হয়েছিল তোমার। আর এসব ঘটে গেল।
-আর আমার জন্য আপনি প্রাণও দিতে চেয়েছিলেন।
-আমার জন্য বিপদে পড়েছ তুমি। রক্ষা করার দায়িত্ব আমারই ছিল।
-অনেক ধন্যবাদ।
-তোমাকেও।
-আমাকে কেন?
-চাউমিনের জন্য।

ইধা মৃদু হাসে। মাইশা এসে বলল, এই মুচকি হাসির রহস্য কী?

ফোনটা পাশে রেখে ইধা বলল, তোকে এত ফুরফুরে দেখাচ্ছে কেন?
-আমার বান্ধবী ঠিকঠাকভাবে আমার পাশে আছে তাই।
-ওহ! আমি ভেবেছি অন্যকিছু।
-কী?
-বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাই হ্যালো করা হয় ইদানীং। দেখি দেখি।
-ইদানীং! শুধু আজকেই। এতবার করে বলল, না করতে পারলাম না।
-এতবার করে ভালোবাসার ডাকেও সাড়া চায়ছে। তবে কেন না করছিস?
-অজানা ভয় কাজ করছে মনে। ফখরুলকে কম ভালোবেসেছিলাম বল? কী করলো ও আমার সঙ্গে! মোহ থেকে সম্পর্কে জড়িয়ে সেও যদি ঘোর কেটে গেলে আমায় কষ্ট দেয়?
-শিওর কীভাবে এটা মোহ?
-হতেও পারে। প্রেমের সম্পর্কে আমি আর জড়াব না ভেবেছিলাম। কেন সাদ্দাম আমার সামনে এসেছে! না পারছি ওকে ছাড়তে, না পারছি কাছে যেতে। আমার অবস্থাটা কাউকে বুঝাতে পারব না।

এই বলে ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়ে মাইশা।
ইধা বুঝতে পারে ওর কী করা উচিত এখন। এতে যদি সাদ্দাম আর মাইশা কাছাকাছি আসে!

দুপুরের পর থেকেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে আলিম। ইধার টিউশনির সময় ও জানতে পেরেছে। ওকে দেখার আশায় ঘন্টা খানেক রাস্তায় আছে ও। অবশেষে ওর কষ্টের অবসান হয় ইধাকে দেখার মাধ্যমে।
ধীরপায়ে এগিয়ে আসছে ইধা। আলিমকে ও দেখেনি। আলিমের কাছাকাছি আসতেই ও বলল, এই যে মিস?

ইধা থামে। আলিমকে দেখে ভ্রু কুচকায়। আলিম বলল, হেঁটে আসছেন কেন? একটা রিকশা নিতেন!
-এতটুকু পথের জন্য রিকশার কোনো প্রয়োজন নেই। হাটা চলা করা শরীরের জন্যেও ভালো।
-তা ঠিক।

ইধা পা বাড়ালে আবারও আলিমের ডাকে থামতে হয়। আলিম বলল, আমার বোনটাকে পড়ালে বেশ ভালো হত।
-আমার সময় নেই। জানিয়েছিলাম আমি।
-কোনোভাবে যদি ম্যানেজ করতেন!
-এখন সম্ভবই না। আপনি অন্য কাউকে দেখুন।

আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হনহনিয়ে বাড়ি চলে আসে ইধা।
দারোয়ানের সঙ্গে দেখা হলে তার হালচাল জিজ্ঞাসা করে উপরে পা বাড়ায়।
বাসায় এসে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেয় ও। অসময়ে বড্ড ঘুম পাচ্ছে ওর। ঘুমানো প্রয়োজন। ভাবতে ভাবতেই চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয় ইধা।

ওর ঘুম ভাঙে মাইশার ডাকে। মাইশা বলল, আতিয়াতকে পড়াতে যাবি না? রাত আটটা পার হলো বলে।
-আজ শরীরটা ভালো লাগছে না ।

মাইশা ওর কপালে হাত দিয়ে বলল, সে কী! জ্বর এসেছে তোর!
-আমি টেরই পেলাম না।
-রেস্ট নে। আজ আর পড়াতে যেতে হবে না।
-অসুবিধে নেই। আমি পারব।

এই বলে উঠে পড়ে ইধা। ওকে থামিয়ে মাইশা বলল, এই শরীরে গিয়ে তুই পড়াতে মনোযোগ দিতে পারবি না। তার চেয়ে বরং আজ রেস্ট নে।

ইধারও বেশ দূর্বল লাগছে। তাই ও শুয়ে পড়ে। চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসে আবারও।

-ইধার প্রতি তোর এই অনুভূতি অবশ্যই ভালোবাসা বলা যায়।

ফোনের ওপাশ থেকে সাদ্দামের কথা শুনে রুজাইন বলল, সত্যি না ভাই?
-হ্যাঁ। ওর জায়গায় অন্য মেয়ে হলেও সাহায্য করতি। কিন্তু নিজের প্রাণ দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে যেতি না।
-আমি ওকে খুব করে চাই।
-বুঝলাম। পটানোর কাজে লেগে পড়। তবে হ্যাঁ, পড়াশোনা থেকে মনোযোগ সরানো যাবে না। ভালো কোনো জব না করলে ইধার ফ্যামিলি কিন্তু রাজি হবে না।
-ওটাও মাথায় রাখলাম। তোমার কথা বলো। কতটুক আগালো?
-আগাবো। ইধা আমায় সাহায্য করছে।
-বলো কী!
-হু। আমায় ফোন করেছিল। মাইশা কীভাবে রাজি হতে পারে শিখিয়ে দিয়েছে। এখন আইডিয়া কাজে লাগে কিনা দেখতে হবে।
-দেরী করছ কেন! লেগে পড়ো।
-হ্যাঁ। দোয়া কর যেন হয়ে যায়।

সাদ্দাম ফোন রাখে। রুজাইন ঘড়িতে সময় দেখলো। রাত দশটা বাজতে চলেছে। আজ ইধা কী আসবে না?

মাইশার ফোন বেজে উঠে। সাদ্দামের ফোন দেখে বারান্দায় চলে এল ও। কারণ ইধা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
মাইশা ফোন রিসিভ করতেই সাদ্দাম সালাম জানিয়ে হালচাল জিজ্ঞাসা করে। মাইশাও তাই করে। এরপর সাদ্দাম বলল, মাইশা। একটা কথা বলার ছিল।
-আবারও প্রেম ঘটিত বিষয়ে?
-উহু! আরও সুন্দর কিছু।
-বলুন শুনি।
-বিয়ে করবে আমায়?
-কী!
-খাটি বাংলায় বললাম। না বুঝলে আবারও বলি। বিয়ে করবে আমাকে?

মাইশা অবাক হয়ে বলল, বিয়ে!
-প্রেমের সম্পর্কে জড়াতে তুমি ভয় পাচ্ছ। আমিও চাই না অনিশ্চিত কোনো সম্পর্কে জড়াতে। বিয়ে করে সারাজীবন তোমাকে আমার করে নিতে চাই। তোমার বাসায় প্রস্তাব পাঠাতে চাই। তবে সেটা অবশ্যই তোমার সম্মতি নিয়েই। পছন্দ করো তো তুমি আমায়? ভালোবাসা সেটা নাহয় হয়েই যাবে। আমায় ভালোবাসতে দাও তোমায়?

মাইশার মুখে হাসি ফোটে। ও একটু থেমে বলল, আমি রাখছি এখন। জানাব আপনাকে।
-আবারও ঝুলিয়ে রাখছ? বাসায় মা, বউ খুঁজছেন। তিনিও জেনে খুব খুশি হবেন।
-বেশিক্ষণ ঝুলতে হবে না।

এই বলে ফোনের লাইন কেটে দেয় মাইশা। ইধাকে জানাতে হবে একথা। ও একা সিদ্ধান্ত নিতেই পারে না৷ তবে হ্যাঁ, সাদ্দামকে মন্দ লাগে না ওর৷ জীবনসঙ্গী হিসেবে খারাপও না৷ সব জেনেও ছেলেটা ওকে আপন করে নিতে চায়। ভালো না বাসলে কী এটা সম্ভব হত!

সকালে কলিংবেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে মরিয়ম জান্নাত।
শারমিন আক্তার ও আশামনিকে দেখে বেশ অবাক হলেন তিনি। সঙ্গে আতিয়াতও রয়েছে।
আজ শুক্রবার বলে তিনি বাসায় আছেন। হঠাৎ তাদের আগমনে তিনি বেশ অবাকই হয়েছেন। সালাম জানিয়ে ভেতরে আসতে বলা হয় তাদের৷ শারমিন আক্তার একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বললেন, এগুলা রাখুন।
-কী এতে?
-মাইশার কাছে ইধার শরীর খারাপ শুনলাম। ওকে দেখতে এসেছি। ওর জন্য ফ্রুটস আর গরুর দুধ আছে এতে।
-এসবের প্রয়োজন ছিল না। আমিই দেখভাল করছি ওর। আগের চেয়ে ভালো লাগছে এখন।
-যাক ভালো।
-বসুন আপনারা। আমি ইধাকে ডাকছি।

ইধা ও মাইশা আসে। ইধার শরীরে শাল প্যাচানো। শারমিন আক্তার ওকে বসতে বলে বললেন, ওই ঘটনার পরই তোমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কী ভয়ানক একটা ঘটনা ঘটে গেল।

ভাঙা ইধা বলল, জি আন্টি। আতিয়াত বাসায় না থেকে ভালোই হলো। ভয় পেত।

আশামনি বললেন, তা ঠিক। তোমার কেমন লাগছে এখন? ক’টা দিন আরাম করার প্রয়োজন হলে করো।
-কাল থেকে পড়াতে যাব।
-আচ্ছা।

মরিয়ম জান্নাত সবার জন্য চা নাস্তার ব্যবস্থা করলেন। বড়োরা কথা শুরু করলে ইধা ও মাইশা ভেতরে চলে যায়। আশামনি বললেন, ইধা মেয়েটার পরিবার কেমন আপা? না মানে আপনাদের সঙ্গে আমাদের বাড়িতেই তো থাকে। তাই জেনে রাখছি।
-মাইশার কাছে যতটুক শুনেছি, ভালো পরিবারের মেয়ে। তবে ওর বাবা নেই। মা এখন নানা বাড়িতেই থাকে। নানা বাড়িরও বেশ নামডাক আছে।

এসব শুনে ফ্যাকাসে হয়ে যায় আশামনির মুখ। তিনি আর ইধা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন না।

ওরা কথাবার্তা শেষে বাড়ি ফিরে আসে। শারমীন আক্তার বললেন, ইধাকে নিয়ে ওতকিছু জিজ্ঞেস করলে কেন?
-মেয়েটা সুন্দরী। আমার স্বামীর একটা কাজিনের জন্য দেখব ভেবেছিলাম। কিন্তু নানা বাড়িতে থাকে এসব শুনে আর ভালো লাগলো না।
-ঠিক। দেখতে সুন্দর হলেই হয় না। বংশপরিচয়ও সুন্দর
হতে হয়।

.
চলবে

#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_১২
#Saji_Afroz

ক’টা দিন কেটে যায়। ইধা এখন পুরোপুরি সুস্থ। আবারও নিয়মিত পড়ানো শুরু করেছে ও।
আতিয়াতকে পড়াচ্ছে ইধা। আশামনি এসে বললেন, তুমি কিছু জানতে নাকি?

ইধা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কী বিষয়ে?
-মাইশা ও সাদ্দামের বিষয়ে।

ইধা কী বলবে বুঝে উঠতে না পেরে তার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো।
পাশের রুমেই ছিল রুজাইন। ফুফুর মুখে একথা শুনে ছুটে এল ও। রুজাইন বলল, ও কিছুই জানে না। ও কীভাবে জানবে? মাইশা যেখানে জানে না!
-তুই জানতিস সব?
-শুরু থেকেই।

ইধা ভ্রু কুচকে বলল, হয়েছে কী?

রুজাইন বলল, সাদ্দাম ভাই বাসায় মাইশাকে পছন্দ করার কথা জানিয়েছে। আসলে তোমার ফ্রেন্ড মাইশাকে তার বেশ পছন্দ। বিয়ে করতে চায়।

ইধাও কিছু না জানার অভিনয় করে বলল, ও তাই! ভালো খবর। সাদ্দাম মানে আপনার পুলিশ কাজিন?
-হু। ডাকাতের ঘটনাচক্রে উনার কথা বলেছিলাম।

ইধা জেনে খুশি হয় যে, সাদ্দাম সবাইকে মাইশার কথা জানিয়েছে। কিন্তু মাইশা ওকে জানালো না সে বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে। তাই একটু অভিমান নিয়েই বাসায় আসলো ও। ওর গোমড়া মুখ দেখে মাইশা বলল, কী হয়েছে? মুখটা এমন করে রেখেছিস কেন?
-কেন আবার? আজকাল আমার আগে অন্যরা তোর মনের খবর পেয়ে যায়।
-মানে কী?
-তুই বিয়ের জন্য রাজি হয়েছিস আমায় বলেছিস?
-বিয়ে! কিসের বিয়ে?
-তোর আর সাদ্দাম ভাই এর।
-কিসব বলছিস! আমি তার প্রস্তাবে এখনো রাজিই হলাম না আর তুই বলছিস বিয়ে!
-রাজি না? তবে ও বাড়ির সবাই বিয়ের কথা বলছে কেন?

কলিংবেলের শব্দ হলে দু’জনে থেমে যায়। মরিয়ম জান্নাত
দরজা খুলে শারমিন আক্তারকে দেখে চমকান। তিনি বললেন, আপা এত রাতে আপনি?
-ভেতরে আসতে বলবেন না?
-কেন নয়!

তিনি ভেতরে এসে ড্রয়িংরুমে বসেন। মরিয়ম জান্নাত বললেন, বসুন আপা। আমি আসছি।
-এই রাতে কিছু আনতে যাবেন না প্লিজ। এখন কিছু খেলে রাতে ভাত খেতে পারব না। আমি আবার ভাত প্রিয় মানুষ। পেট ভরে ভাত না খেলে ঘুম আসে না।

একগাল হেসে মরিয়ম জান্নাত বললেন, তবে ভাতের আয়োজন করি।
-সে অন্য আরেকদিন হবে। এখন যে কাজে এসেছিলাম তা বলি।
-বলুন আপা।
-আত্নীয়তা করতে এসেছি।
-আমি ঠিক বুঝলাম না।
-আমার বোনের ছেলে সাদ্দাম, পুলিশের চাকরিতে জয়েন হয়েছে শুনেছেন মনেহয়।
-জি।
-ওর মাইশাকে বেশ পছন্দ৷ বিয়ে করতে চায়।

একথা শুনে কী বলবেন ভেবে পান না মরিয়ম জান্নাত। হুট করে এমনকিছু তিনি ভাবেননি।

শারমিন আক্তার বললেন-
মেয়ের বিয়ের কথা ভাবেননি বুঝি?
-জি। আসলে একা হাতে সব সামলাই। আপনার কাছে কী লুকোবো? এখনো ওর বিয়ের জন্য কোনো প্রস্তুতি নিইনি।
-ওসব নিয়ে ভাববেন না। আমার আপা মেয়ের বাড়ির কিছুই চান না। চট্রগ্রামের ওসব নিয়মের ধার তিনি ধারেন না। ঘরোয়াভাবে বিয়ে হবে আর বিয়ের পর অনুষ্ঠান তারাই করবেন। কিচ্ছুটি তারা নেবেন না।

একথা শুনে হাসি ফোটে মরিয়ম জান্নাতের মুখে। শারমিন আক্তারের ফোনে সাদ্দামের ছবি দেখেও তার বেশ ভালো লেগে যায়।
তিনি বললেন, তারা কিছু না চাইলেও আমারও কিছু আশা আছে। যতটুক পারি আমি মেয়ের বিয়েতে করব।
কিন্তু এখুনি মেয়ে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। ওকে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে বলছিলাম সেদিনই আর আজ বিয়ের কথা কীভাবে বলি বলুন?
-এখুনি না দিন। অন্তত কাবিন করে রাখুন? সাদ্দামের বড়ো তাড়া। মাইশাকে ওর খুব পছন্দ। বুঝেছেন তো!
-তা বুঝেছি। আমার মতামতের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো মাইশার মত। সেটা জানার প্রয়োজন।
-কেন নয়! জেনে নিন।

তিনি চলে যান। মাইশা সব শুনে মা কে বলল, আমি এখনো বিয়ের জন্য ভাবিনি মা।
-আমিও না। কিন্তু সাদ্দামের পরিবার খারাপ হত না।

ইধা বলল, আমি কিছু বলতে পারব আন্টি?
-কেন না? তুমি মাইশার বান্ধবী কম, বোন বেশি। আমারও মেয়ের মতো। বলতেই পারো।
-বিয়ের জন্য ভাবেননি তাতে কী? ভাবতে তো পারেন। ছেলেটা নিজে পছন্দ করে ফ্যামিলি মানিয়ে নিয়েছে। সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে। আবার কোনো চাহিদাও নেই। এমন সোনার টুকরো পরিবারকে দূরে সরিয়ে দেওয়া ঠিক হবে? ক্যারিয়ার কিন্তু বিয়ের পরেও গড়া যায়। আর ওরা যথেষ্ট হেল্প ওকে করবে, সেটা কথাবার্তাতে বোঝা যাচ্ছে।

মাইশা বলল, আমাকে ঘর ছাড়া করতে উঠে পড়ে লেগেছিস কেন?
-তোকে পাঠিয়ে আমি আর মিলি রুমটা দখল করব।
-দেখেছ আম্মু? এই ছিল ওর পেটে পেটে।
-খারাপ বলেনি। তুই ভেবে দেখ। আমার তোদের নিয়ে বড্ড চিন্তা হয়। তোকে ভালো কারো হাতে তুলে দিতে পারলে আমিও শান্তি পেতাম। তোদের বাবা নেই। আমার কত চিন্তা জানিস?

মাইশাকে নীরব দেখে তিনি বললেন, তোর ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।

তিনি রুমে ফিরে যান। মাইশা রাগে গিজগিজ করে ফোনকল দেয় সাদ্দামকে। সাদ্দাম রিসিভ করলে ও কর্কশ কণ্ঠে বলল, আমি কী বলেছিলাম বিয়েতে রাজি? আমার বাসায় কেন প্রস্তাব পাঠালেন?
-এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম।
-কী?
-রুজাইনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মা সব শুনে ফেলেন। তবে তোমাকে সব জানিয়েছে তা জানে না। কেবল জানে আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর মা শুনেই খুব খুশি হোন। রুজাইনের মা কে সব জানান। বিশ্বাস করো, তোমার অমতে আমি এসব করিনি। আমার হাতে কিছুই ছিল না।

সব শুনে মাইশা শান্ত হয়।
সাদ্দাম বলল, কিছু তো বলো? তুমি কী খুব রাগ করলে?
-এসব শুনে রাগ কমলো।
-তবে কী তোমার উত্তরও পাব?
-পারিবারিক ভাবে প্রস্তাব দিয়েছেন না? উত্তর পারিবারিকভাবেই পাবেন।

এই বলে ফোনের লাইন কেটে হাসতে থাকে মাইশা। ওর হাসি দেখে ইধা বলল, তার মানে তুই রাজি?

হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নাড়ে মাইশা। ওকে জড়িয়ে ধরে ইধা বলল, আমি অনেক বেশি খুশি তোর জন্যে।
-নাকি রুমের জন্য? তবে শোনেন জনাবা, আমি কেবল কাবিনটা সেরে নেব। এখনি শশুরবাড়ি যাব না। শুনেছি হবু বরের সঙ্গে এভাবে প্রেমের মজাই আলাদা। তাছাড়া কেবল ভার্সিটি লাইফ শুরু আমার। এখুনি সংসারের প্যারা নিতে চাই না।
-তুই যা ভালো মনে করিস।
-আমি এতদিন সিদ্ধান্ত হীনতায় ছিলাম। আজ আম্মুর জন্য সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হলো আমার। এই বিয়েটাই আম্মুর চিন্তা অনেকটা কমে যাবে। আমার জন্য সাদ্দাম থাকবে ঢাল হয়ে। মিলির জন্য থাকবে আম্মু।

ইধা মৃদু হাসে। মাইশা ওর হাত ধরে বলল, আর তোর জন্যে থাকব আমি।

দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। এই যেন সুখের কান্না!

অনেকক্ষণ যাবত দাঁড়িয়ে আছে আলিম। বেশ কয়েকদিন এই সময়ে এখানে দাঁড়িয়ে থাকে ও। ইধা এই সময়ে বাসায় যায়। ওকে একনজর দেখতেই আলিম এখানে দাঁড়িয়ে থাকে। ইধা ওকে খেয়াল করে প্রতিবারই। ভ্রুক্ষেপহীনভাবে হনহন করে হেঁটে ও চলে যায়।
এভাবে আর ক’দিন! আলিম ঠিক করেছে আজ ওকে মনের কথা জানাবে।
ইধা রাস্তা পার হয়ে এদিকে আসতে থাকে। ওকে দেখে এগিয়ে আসে আলিম। ইধার সামনে এসে দাঁড়ালে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ও৷ ইধা বলল, আপনি?
-তুমি কী বুঝো না, কেন আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকি?

আশেপাশে তাকিয়ে ইধা মিনমিনে স্বরে বলল, কেন?
-আমি তোমাকে ভালোবাসি ইধা। তোমাকে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করি প্রতিটা দিন।
-এসব বলবেন না প্লিজ। আমি আপনাকে ভালোবাসি না।

এই বলে ইধা চলে যেতে চাইলে ওকে থামায় আলিম। ও বলল, দরকার নেই আমার ভালোবাসার। সে আমি অনেক বাসতে পারি। তুমি শুধু হ্যাঁ বলে দাও।
-এটা সম্ভব নয়! আপনার ভালোবাসাতেই সম্পর্কে আগানো সম্ভব নয়।
-সম্ভব। আমি সম্ভব করে দেখাব। তুমি মানবে না তো? মেনো না। কিন্তু আমিও পিছপা হব না।

ইধা বুঝতে পারে, আলিম থেমে যাওয়ার পাত্র নয়। জেদের বশে হলেও ওকে বিরক্ত করবে। তাই ও বলল, আমার সম্পর্কে কী জানেন আপনি? চেহারা দেখে আর নাম শুনেই ভালোবেসে ফেললেন?
-মাইশার বান্ধবী তুমি। এর চেয়ে বেশিকিছু জানার নেই।
-অবশ্যই আছে।
-কী?

ইধা যা বলল, তা শোনার জন্য প্রস্তুত আলিম ছিল না। ও বলল, আমি সরে যাওয়ার জন্যই এই মিথ্যে তুমি বলছ তাই না?
-মোটেও না।
-প্রমাণ কী?

ইধা ওর ব্যাগে থাকা নিজের পরিচয়পত্রটা বের করে দেখালো আলিমকে। যা দেখে ও কয়েক কদম পেছনে চলে যায়। ইধা হেসে বলল, ভালোবাসা চলে গেল মুহুর্তেই?
.
চলবে