#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_১৩
#Saji_Afroz
আজ মাইশা ও সাদ্দামের বিয়ে। তবে সেটা ঘরোয়াভাবে। মাইশার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে কেবল কাবিন সেরে রাখা হচ্ছে। কয়েকবছর পর সাদ্দামই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নিজের বাড়ি নিয়ে যাবে মাইশাকে।
ইধা ও রুজাইন ড্রয়িংরুমটা ফুল ও বেলুন দিয়ে সাজিয়েছে৷ মাইশা পার্লার থেকে এসে সাজানো রুম দেখে বেশ খুশি হয়। ও বলল, দারুণ হয়েছে।
রুজাইন বলল, সবটা ইধার আইডিয়া। আমি কেবল সাহায্য করলাম।
-শুধু রুম সাজালে হবে? নিজেদেরও সাজতে হবে না!
রুজাইন বলল, আমি তো ইধাকে দেখার অপেক্ষায়।
একথা শুনে সবাই চমকায়। রুজাইন মুখ ফসকে এ কী বলে ফেললো! ও কথা ঘুরানো জন্য চটজলদি বলল, না মানে এত কম সময়ে মেয়ে হয়ে তৈরী কীভাবে হয় দেখার অপেক্ষায়।
-এত করে বললাম আমার সঙ্গে পার্লারে যেতে। গেল না। রুম সাজাতে থেকে গেল। ওসব ডেকোরেশন এর লোক করতে পারতো না?
ইধা বলল, আমার চেয়ে বেস্ট পারতো না।
-তা ঠিক। এইবার চটজলদি রেডি হয়ে আয়। রুজাইন ভাই? আপনিও।
মরিয়ম জান্নাত আজ আকাশি রঙের জামদানী শাড়ি পরেছেন। মাথায় ঘোমটা টেনে আয়নায় নিজেকে দেখলেন।
এরপর আলমারি খুলে স্বামীর একটি ছবি তিনি বের করলেন। তাতে চুমু খেয়ে তিনি বললেন-
আজ আমাদের মেয়ের বিয়ে। মেয়ে সন্তানের শখ তোমার বরাবরই ছিল। তাই হয়তো মহান আল্লাহ আমাদের দু’টো জান্নাত দিয়েছেন। আমাদের পৃথিবীটাও ছিল এক টুকরো জান্নাত। কত সুখী ছিলাম আমরা! মাঝপথে চলে গেলে তুমি। আমার থেকে অনেকদূরে! ওপারে! জানি না তুমি দেখছ কিনা এসব। আমার মাইশা আজ বউ সেজে আসবে। তোমার মেয়ের বিয়ে নিয়ে কত ইচ্ছেই না ছিল তোমার! সেই ইচ্ছে মতো কিছু হচ্ছে না। কিন্তু তোমার সবথেকে বড়ো ইচ্ছেটাই পূরণ হচ্ছে। ভালো একটা ছেলের সঙ্গেই বিয়ে হচ্ছে ওর। এইবার তুমিও চিন্তামুক্ত হও।
এই বলে ছবিটা জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন তিনি। আড়ালে এসব দেখে মাইশার চোখেও পানি চলে আসে।
ওর বাবা যখন মারা যায়, মিলি কোলের বাচ্চা। দাদা বাড়িতে চাচাদের আশ্রয়ে ক’দিন থাকবে? তাই মরিয়ম জান্নাত বাবার বাড়ি চলে আসেন। নানা বাড়ির সবাই বেশ আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু ভাই এর উপরে ভর করে ক’দিন চলা যায়! এরপরেই তিনি শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। মিলি একটু বড়ো হলে আলাদা বাসা নেন।
মা এর কষ্ট নিজ চোখে দেখেছে মাইশা। তবুও কেন যে ফখরুলের মতো ছেলের সঙ্গে নিজের জীবনটা জড়িয়ে ফেলেছিল! ভাগ্যিস সে চলে গেছে জীবন থেকে। সাদ্দামের জন্য সবাই খুশি। এই খুশিটাই তো দেখতে চেয়েছিল মাইশা।
মাইশা নিজেকে সামলে নিয়ে ভেতরে এসে বলল, বাবাকে দেখানো হচ্ছে বুঝি? কেমন লাগছে তোমাকে?
মাইশার কণ্ঠ শুনে ছবিটা আলমারির ভেতরে তিনি রেখে দিলেন। আড়ালে চোখের পানি মুছে মাইশার দিকে তাকালেন। সোনালি রঙের লেহেঙ্গায় দেখতে কী মিষ্টি লাগছে মাইশাকে! তিনি বললেন, মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ! আমার মেয়েকে দেখতে কী সুন্দরটাই না লাগছে!
-আমার মা কেও সেরা লাগছে।
-আমাকে কে দেখবে! তোকে দেখবে সবাই।
-তোমাকে দেখব আমি। মন ভরে দেখব আম্মু। তুমি আমার জন্য কী তা তুমিও জানো না। একটা কথা বলব?
-হু?
-অনেক ভালোবসি আমি তোমাকে।
মেয়েকে জড়িয়ে ধরে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, আমিও।
সাদ্দামের দেওয়া লাল কাতান শাড়িটা পরলো ইধা।
চুলগুলো খোলা রেখেছে ও। কানে দিয়েছে বড়ো ঝুমকো আর হাত ভর্তি চুড়ি৷ মাইশা এনেছে ওর জন্যে এসব। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দেওয়ার সময় থেমে যায় ও। মাইশা আসে। ওর কপালে চিন্তার ভাজ দেখে বলল, কী ভাবছিস?
মাইশার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ইধা বলল, রুজাইন ভাইয়ার সামনে তখন কিছু বলিনি। তোকে যা মারাত্মক লাগছে না! আজ তো সাদ্দাম ভাই পাগল হয়ে যাবে।
-বলছিস?
-হু। উনি জানতেন তোকে লেহেঙ্গাতে কেমন লাগবে। তাইতো আগে থেকে হোটেল রুম বুকিং করে রেখেছেন। কবুল বলার পর পরই বাসর করে নিতে চান। চান্স মিস দিতে চান না।
-সেই যতই হোটেল রুমে নিয়ে যাক। ধরা আমি ওত সহজে দেব না। প্রেম যেমন করিনি, রোমান্সও করব না। এটার জন্যেও অপেক্ষা তাকে করতে হবে।
-বেচারাকে ঘুরাবি?
-হু।
-আহা!
-উফ! এসব কথা ছাড়। তুই এখনো মেকআপ করিসনি কেন?
-এমনি ঠিক আছে।
-মোটেও না। সাজলে একেবারে বউ বউ লাগবে।
-তোরও এমন মনে হচ্ছে তাই না?দেখ তো কাণ্ড! রুজাইন ভাই আমার জন্য লাল টুকটুকে শাড়ি দিলো। আমাকেই তো মানুষ বউ ভাববে।
ও লিপস্টিকটা রেখে বলল, আমি সাজবই না আর। এতটুকুই ঠিক আছি।
মাইশা লিপস্টিক হাতে নিয়ে বলল, আমি সাজিয়ে দিচ্ছি। বউ লাগুক। বর পেলে তোকেও দিয়ে দেব বিয়ে।
সাদা পাঞ্জাবি পরিধান করেছে রুজাইন। হাত ঘড়িটা পরতে পরতে ভাবছে ও, লাল শাড়িতে কেমন মানাবে ইধাকে।
শাড়িটা রুজাইনের পছন্দের কেনা। দামটাও ওরই দেওয়া। এটা জানলে হয়তো ইধা গ্রহণ করতো না বা অন্যকিছু ভাবতো। তাই সাদ্দামের মাধ্যমে ইধার কাছে পাঠানো হয়েছে এটা।
নিজের প্রিয়তমাকে নিজের পছন্দের শাড়িতে দেখার জন্য অস্থির হয়ে আছে মনটা। এখনি যাবে ও বাড়ি? নাকি অপেক্ষা করবে সাদ্দামের জন্য?
মাইশার ফোন বেজে উঠে। অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন দেখে প্রথমে রিসিভ করলো না ও। বেশ কয়েকবার রিং পড়ার কারণে রিসিভ করে নেয় ও। ওপাশ থেকে ফখরুলের কান্নাজড়িত কণ্ঠ শুনে মাইশা ঘাবডায়। ও বলল, ফখরুল?
-পরিচয় না দিয়েও চিনে ফেললে?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাইশা বলল, কেন ফোন করেছ?
-বিয়েটা করো না প্লিজ!
মাইশা অবাক হয়ে বলল, আমার বিয়ে তুমি কীভাবে জানো?
-যোগাযোগ না করলেও প্রতিনিয়ত তোমার খবর আমি নিয়েছি। লুকিয়ে কত দেখেছি তোমায়! তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা মিথ্যে ছিল না। হারানোর ভয়ে ওমন আচরণ করতাম। আমার ভুল আমি বুঝতে পেরেছি। আমায় ক্ষমা করে দাও। নিজেকে পালটে দেখাব তোমাকে। তুমি যা বলবে তা হবে।
-এখন এসব কথার কোনো মানে হয় না।
-তুমি উঠতে বললে উঠব, বসতে বললে বসব। আমার লাইফের প্রতিটা পদক্ষেপ তোমার কথাতে হবে। প্লিজ তুমি বিয়েটা করো না।
-সম্ভব নয়!
একটু থেমে ফখরুল বলল, তবে আমার লাশ দেখেই করো বিয়ে।
-কীসব বলছ!
-ঠিক বলছি। তোমার বাসার নিচেই আমি৷ দারোয়ানকে বলেছি বিয়ে বাড়ির আত্নীয়। আর এখানেই আমি এখন আত্মহত্যা করব।
-তুমি কেন অযথা তামাশা করছ?
-আমার ভালোবাসা তোমার কাছে তামাশা মনেহচ্ছে? কতশত স্মৃতি তুমি মুহুর্তেই ভুলে যাচ্ছ মাইশা! আমি কী কম ভালোবেসে ছিলাম তোমাকে! ভালো সবকিছু মনে করে আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আর না পারলে আমার লাশ দেখেই করো বিয়ে।
নিশ্চুপ হয়ে যায় মাইশা। ফখরুল বলল, আমার উপর অভিমান করে বিয়েটা করছ আমি জানি। প্লিজ করো না। চলে আসো। আমি নিচে আছি। নিজের ভালোবাসার কথা ভাবো। প্লিজ!
কলিংবেলের শব্দ হতেই দরজা খুলে দেয় রুজাইন। ইধাকে দেখে থমকে যায় ও। কী সুন্দরটাই না লাগছে ওকে! ইচ্ছে করছে এভাবে পলকহীন চোখে অনেকক্ষণ যাবত তাকিয়ে থাকতে।
-রুজাইন ভাইয়া?
ইধার ডাকে ঘোর কাটে ওর। রুজাইন বলল, হ্যাঁ বলো?
-আন্টিকে মাইশার আম্মু ডাকছে।
-কেন?
-রান্নার আয়োজন দেখানোর জন্য। সব ঠিক আছে কিনা।
পাশেই ছিলেন শারমিন আক্তার। তিনি কাছে এসে বললেন, দেখার কিছু নেই। সব ভালোই হবে আশাকরি।
-তবুও চলুন। একবার দেখবেন প্লিজ!
-আচ্ছা চলো। ছাদেই তো খাওয়ার আয়োজন তাই না?
-জি। উনি ওখানেই আছেন। আপনি যান। আমি মাইশার সঙ্গে গিয়ে বসি।
শারমিন আক্তার ছাদের দিকে এগুলে ইধা বাড়ি ফিরে আসে। হঠাৎ পেছনে ফিরে রুজাইনকে দেখে চমকায় ও। রুজাইন বলল, তোমাদের সঙ্গে গল্প করতে আসলাম।
-আসুন।
ইধা মাইশাকে ডাকতে ওর রুমে আসে। কিন্তু ওকে পায় না। সারা বাড়ি খুঁজেও ওকে না পেয়ে অস্থির হয়ে রুজাইনের কাছে আসে। রুজাইন বলল, এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?
-মাইশাকে দেখছি না। ফোনও রিসিভ করছে না।
-ছাদে নয় তো?
-আমি এতক্ষণ ওখানেই ছিলাম। কয়েকজন মেহমান, আন্টি আর মিলি আছে কেবল।
-তাহলে হঠাৎ গেল কোথায় মাইশা?
.
চলবে
#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_১৪
#Saji_Afroz
-আমি জানতাম মাইশা, তুমি আসবে! আমার কথা তুমি ফেলতেই পারো না। আমাকে এখনো তুমি ভালোবাসো। জানি আমি।
ফখরুলের কথা শুনে মাইশা ভ্রু কুচকে বলল, দেখতে এলাম।
-কী?
-কীভাবে মরতে চাচ্ছ।
ফখরুল অবাক হয়ে বলল, মানে?
-এমনভাবে অবাক হচ্ছ যেন আমিই বলছি এই কথা! এটা তোমারই কথা। মরতে না চেয়েছ? কীভাবে মরছ?
ফখরুল আমতাআমতা করে বলল, সেটা তুমি না আসলে মরব বলেছিলাম।
-আমি এসেছি। তোমাকে হেল্প করতে এসেছি।
মাইশা ওর হাতে থাকা প্যাকেট থেকে একটি দড়ি, ছুরি ও তেলাপোকার বিষ বের করে বলল, এখান থেকে কী নিয়ে মরবে বলো। আমার মনেহয় তেলাপোকার বিষটাই খেয়ে নাও তুমি।
-মাইশা!
-কী মাইশা? আমাকে আগের মতো ভেবেছ? একটুতেই দূর্বল হয়ে যাব! মোটেও না। তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছ, আমার হবু স্বামী পুলিশ। তোমার কী হাল ও করতে পারে ধারণা আছে?
-দু’দিনের সাদ্দামের জন্য তুমি আমাকে এসব বলছ?
-দুই বছরের তুমি আমায় যতটা কষ্ট দিয়েছ, দুই দিনের সাদ্দাম তার চেয়ে ঢের সম্মান ও ভালোবাসা আমায় দিয়েছে।
-আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না মাইশা।
-তবে মরে যাও। তাতে আমার কিছু যায় আসে না। মরো! আমার সামনেই মরো৷ আমি তোমার লাশ দেখেই করব বিয়ে।
ফখরুল একটু থেমে বলল-
আমার ভালোবাসার কদর যার কাছে নেই, তার জন্য মরার কোনো মানেই হয় না।
-না মরলেও এখন তোমায় জেলে যেতে হবে। আমার বিয়ের সময় আমাকে বিরক্ত করার অপরাধে। এই তো সাদ্দাম এল বলে!
আর এক মুহুর্তও অপেক্ষা করলো না ফখরুল। দ্রুত চলে গেল গেইটের বাইরে। মাইশা ওর পথের দিকে তাকিয়ে বলল, ওরে ফখরুইল্লা! অহেতুক আগে ভয় পেতাম তোকে। তোর দৌড় কতটুক বুঝেছি আমি।
রুজাইন ও ইধা নিচে নামার সিদ্ধান্ত নেয় মাইশাকে খোঁজার জন্য। তখনি দেখা পায় ওর। ইধা ওকে দেখে বলল, এই ভারী লেহেঙ্গা পরে কোথায় গেছিস তুই?
-ফখরুলের সঙ্গে দেখা করতে।
-মানে?
মাইশা সব খুলে বলে। সবটা শুনে হাসতে থাকে ওরা৷ ইধা বলল, কিন্তু তোর এত সাহস আসলো কোথা থেকে?
-সাদ্দামের জন্য৷ আমি ওকে ফোন করে এসব জানাই। তখন সাদ্দামই আমাকে এই বুদ্ধি দেয়। ফখরুইল্লার দৌঁড়টা যা ছিল না!
আবারও হাসতে থাকে সকলে। রুজাইনের ফোন বাজতে থাকে৷ সাদ্দামের ফোন। ওরা রওনা হয়েছে।
রুজাইন বলল, ফিতা ধরতে রেডি হয়ে যাও।
ইধা বলল, এমন করব ভাবিনি।
-সে কী! এত সহজে ভাগ ছেড়ে দেবে?
মাইশাও তাল মিলিয়ে বলল, ঠিক ঠিক! রুজাইন ভাইয়া? আপনি এখুনি ফিতার ব্যবস্থা করেন। আমার কাজিন আছে, ইধা আর মিলি আছে! সবাই মিলে লুটে দিবি সাদ্দামকে।
রুজাইন বলল, আর আমি?
ইধা বলল, আপনি আমাদের বেশি করে নিয়ে দেবেন তবেই ভাগে আপনিও পাবেন।
-ডান! আমি এখুনি ফিতার ব্যবস্থা করছি।
মেহমান আসতে শুরু করে৷ খানিকবাদে চলে আসে সাদ্দাম ও তার পরিবার। দরজার সামনে সাদ্দাম আসতেই গেইট আঁটকে রাখা হয়। সাদ্দাম বলল, আজও এমনটা হবে তা তো জানা ছিল না।
ইধা বলল, বিয়ে করবেন আর এই নিয়ম জানেন না এটা আমাদেরও জানা ছিল না।
-কাচি কই?
-টাকা দেবেন, কাচি নেবেন!
-দেখেছিস রুজাইন? ওরা ভালোই প্রস্তুতি নিয়েছে৷ আমাদের কী করা উচিত বল?
-ডিমান্ড পূরণ করা।
-এই! তুই কার দলে?
-সেটা তুমি ভালো করেই জানো।
এই বলে চোখ টিপে হাসলো রুজাইন। সাদ্দাম হতাশ কণ্ঠে বলল, তুই যখন ওদের দলে তখন আমারও আর রক্ষা নেই।
এই বলে একটি খাম ওদের দিকে এগিয়ে দেয় সাদ্দাম। ইধা তা হাতে নিয়ে বলল, দুলাভাই জিন্দাবাদ!
মাইশাকে স্টেজে নিয়ে আসা হয়। বর কনের সঙ্গে সবাই ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ইধাও তুলে নেয়।
ওর ফোন বাজতে থাকে। বেশ কয়েকবার বাজার পর রিসিভ করে ও। ওপাশ থেকে মা এর কণ্ঠস্বর শুনে থমকে যায় ইধা।
ও ছুটে নিজের রুমে চলে আসে। এখানেও মানুষ থাকায় বারান্দায় এসে দরজা লাগিয়ে দেয় ও। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, মা তুমি!
-হা আমি। কেমন আছিস মা তুই?
-আমি ভালো। তুমি কেমন আছ? আর কীভাবে আমায় ফোন করলে?
-তোর ছোটো চাচার কাছ থেকে নাম্বারটা নিয়েছি। তোর কথা ভীষণ মনে পড়ছিল। তাই ফোন দিলাম।
-ফোন পেলে কোথায়?
-এলাকার এক দোকান থেকে করছি। তবে তোর ছোটো চাচা আমার জন্য ফোন পাঠাবে বলেছে। তখন রোজ ফোন দেব।
-ওরা তোমাকে ব্যবহার করতে দেবে?
-এখন আমার কদর হচ্ছে এই বাড়ি।
-মানে?
-তোর জন্মদাতা এসেছিল আমার কাছে। তার সঙ্গে অনেক খারাপ কিছু হয়েছে। স্ত্রী, সন্তানদের কাছে অবহেলিত সে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইতে এসেছিল। শুধু তাই নয়! আমার নামে একটি বাড়ি লিখে দেয়। দু’টো আলাদা ফ্ল্যাট আছে এতে। দু’টোতেই ভাড়া চলছে। সেই ভাড়ার টাকা এখন থেকে আমি পাব।
-কী বলছ!
-আমার গয়নাগাটি সব সে আঁটকে রেখেছিল। এক কাপড়ে বের হতে হয়েছিল আমাকে। এসব দিয়ে ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করছে। যদিও আমি চাইনি৷ কিন্তু সেই বলল, এসব আমাদের অধিকার। তার এক সন্তানের জননী আমি।
-সব তোমার ধৈর্য্যের ফল মা।
-হয়তো! মা তুই ভালো আছিস ওখানে? চলছিস কীভাবে?
-সব একদম ঠিক আছে। টিউশনির টাকাতে হয়ে যাচ্ছে সব।
-ভাড়া পেলে আমি তোকে টাকা পাঠাব।
-তুমি ওসব নিয়ে ভেবো না। নিজের খেয়াল রাখো।
-টাকা জমিয়ে পারলে আমি ওখানেই চলে আসব। মা মেয়ে ছোট্ট একটা বাসা নিয়ে থাকব। ভাড়ার টাকা, তোর টিউশনির টাকা দিয়ে হয়ে যাবে আমাদের।
-হুম মা।
-আমি চাইলেই ওদের কারো থেকে ফোন নিয়ে কথা বলতে পারতাম। কিন্তু ওদের কারো ছায়াও তোর উপরে পড়ুক আমি চাই না। সব মনে রেখেছি আমি।
এই বলে কেঁদে উঠলেন তিনি। মা কে শান্তনা দেয় ইধা। বেশ অনেকক্ষণ কথা বলার পর ফোন রাখে ও। মুখে ফোটে ওর এক চিলতে হাসি। ওদের দু:খের দিন বুঝি শেষ হতে চলেছে!
কবুল বলার মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়।
খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু হলে সবাই উপরে চলে যায়। ইধা সবার জন্য সাদ্দামের দেওয়া টাকা সমানভাগে ভাগ করে নেয়। এরপর সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় দেখা পায় রুজাইনের। রুজাইন বলল, তোমাকে না পেয়ে খুঁজতে এলাম।
-খাওয়ার পর মাইশার কাজিনরা চলে যাবে, তাই সবার টাকা ভাগ করছিলাম।
কিছু টাকা রুজাইনের দিকে এগিয়ে দেয় ইধা। রুজাইন কিছু বলার আগে একটা বিড়াল ছুটে আসে ওদের দিকে। ইধা হঠাৎ তা দেখে ভয় পেয়ে যায়। ও আচমকা জড়িয়ে ধরে রুজাইনকে। ও বলল, এটা কী!
রুজাইন হেসে বলল, বিড়াল!
-গেছে?
-উপরে চলে গেছে।
রুজাইনকে ছেড়ে দেয় ইধা। কিন্তু ওর চুল গিয়ে আঁটকায় রুজাইনের পাঞ্জাবির বোতামে। ইধা তা ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে রুজাইন বলল, থাক না?
ইধা বলল, কী থাকবে?
-এভাবে আঁটকে থাকুক।
-মানে?
রুজাইন কিছু না বলে ওর চুল ছাড়াতে সাহায্য করে। ইধাকে এত কাছে পেয়ে নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না ও। এরপর ইধা ওর দিকে টাকা এগিয়ে দিলে রুজাইন বলল, লাগবে না।
-ভাগ নেওয়ার কথা ছিল আপনার।
-লাগবে না।
-আরে রাখুন!
-রাখতে চাই। তবে অন্যকিছু।
-কী?
-তোমাকে। আমার জীবনে আজীবন রাখতে চাই তোমাকে।
একথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না ইধা। ও মিনমিনে স্বরে বলল, কী বলছেন?
-আই লাভ ইউ ইধা।
ইধা কী বলবে বুঝে উঠতে পারে না। তবে ও দাঁড়ালো না। ছুটে চলে যায় উপরে।
.
চলবে