#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_২১
#Saji_Afroz
আজ মাইশার শশুরবাড়িতে ওর সঙ্গে যাবে ইধা। মাইশার শাশুড়ীর নাকি তাকে বেশ দেখতে ইচ্ছে করছে। তাই শাশুড়ীর কথা রাখতে ও বাড়ি যাবে।
প্রথমবার শশুরবাড়িতে যাচ্ছে মাইশা। সাদ্দামের মা এর পাঠানো সবুজ রঙের কাতান শাড়িটা পরলো ও। খোপা করে মাথায় ঘোমটা টেনে নিলো। ইধা ওকে দেখে বলল, বাহ! আজ নতুন বউ এর মতোই লাগছে তোকে। নম্র ভদ্র বউ!
-আমি বুঝি অভদ্র?
-তা নয়৷ দুষ্টু বউ।
মাইশা হেসে বলল, তুই কেন বসে আছিস এখনো?
-আমাকে তো আর শাড়ি পরতে হবে না।
-কিন্তু তোর রাজকুমার তো থাকবে। ওর জন্যে হলেও নিজেকে সবসময় পরিপাটি করে রাখবি।
-জন্মদিনে যে সালোয়ার কামিজটা তুই উপহার দিয়েছিস, সেটাই পরি তবে?
-পর। রুজাইন ভাই তাড়া দিলে বেরুতে হবে। তার তাড়া ও বাড়ি যাওয়ার জন্য নয়। তোকে দেখার জন্য।
-কীসব বলিস না!
এই বলে উঠে পড়ে ইধা। মাইশা হাসে। রুজাইনকে মেসেজ পাঠিয়ে জানায়, ত্রিশ মিনিট পর বেরুনোর জন্য।
ওদের সঙ্গে রুজাইনও যাবে। মিলির যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু ওর শরীরটা ভালো নেই। জ্বর এসেছে। তাই মিলি যাচ্ছে না।
ওরা তৈরী হয়ে নিচে নেমে আসে। রুজাইনও আসে। সাদ্দাম গাড়ি পাঠিয়েছে। সে গাড়ি করেই ও বাড়ি যাবে ওরা।
মাইশাকে দেখে রুজাইন বলল, তোমাকে অনেক দারুণ লাগছে ভাবী।
-ধন্যবাদ ভাইয়া।
-কিন্তু তোমার বান্ধবীও শাড়ি পরলো না কেন? তুমি শাড়ি পরবে জানলে ওর জন্যেও নিয়ে আসতাম!
ইধা বলল, ও বাড়ির বউ আমি না। তাই পরিনি।
-আমার বউ তো হবে!
ওর কথা শুনে কেশে উঠলো মাইশা। ইধা চোখ রাঙিয়ে তাকায় ওর দিকে। রুজাইন গাড়ি দেখে বলল, গাড়ি এসেছে!
মাইশা সামনে বসতে চাইলে ইধা বলল, বউ মানুষ সামনে কেন বসবি? আয় আমার সঙ্গে।
ওরা দু’জনে পেছনের সিটে এসে বসে। রুজাইন বসে সামনে। গাড়ি চলতে শুরু করে।
মাইশা ফিসফিস করে বলল, কী হত ভাইয়ার পাশে বসলে?
-অসভ্যতা করতো। তাই এখানে এসে বসলাম।
-ইশ! করে নাকি ওমন দুষ্টুমি?
-চান্স দেব না। বিয়ের আগে মোটেও না।
-উহু! যখন কাছে আসবে তখন নিজেকে সামলাতে পারিস কি-না দেখিস!
-তুই না! ইদানিং ভীষণ দুষ্টু কথা বলিস।
-বিয়ে করে দুষ্টুমিতে পাক্কা হয়ে যাচ্ছি, তাই!
বাসায় আসতেই ওদেরকে আপ্যায়ন শুরু করা হয়৷ বাসায় পরিবারের লোকজন ছাড়া আর কেউ নেই। তারা সবাই মাইশাকে বেশ আদর যত্ন করছে। সাদ্দামের মা সাবিতা বানু ওকে নিজ হাতে মিষ্টি খাইয়ে দিলেন। ইধাকেও খাইয়ে দিলেন তিনি। ইধার চাঁদের মতো মুখটার দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, মাশাআল্লাহ মা! তুমিও অনেক ভালো বর পাবে। দেখে নিও।
ইধা লাজুক হেসে বলল, দোয়া করবেন আমার জন্যে।
সাবিতা বানুর ফোন বেজে উঠে৷ তিনি রিসিভ করেই আতঙ্কিত কণ্ঠে বললেন, কী বলেন! আমি এখুনি আসছি।
সাদ্দাম উত্তেজিত হয়ে বলল, কী হয়েছে মা?
-তোর চাচী রোড এক্সিডেন্ট করেছে।
-বলো কী! অবস্থা খারাপ নাকি?
-এখনো বোঝা যাচ্ছে না। তবে আমাদের যাওয়া উচিত।
-অবশ্যই।
-আমরা যাব। তুই থাক এখানে।
-কিন্তু…
-ওখানে অনেকেই থাকবে। পরে গেলেও চলবে। কিন্তু আমার সৌজন্যের খাতিরে যাওয়া প্রয়োজন।
-আচ্ছা।
-বুয়া আসবে বারোটার পরে। ও টেবিলে দুপুরের খাবার সাজিয়ে দেবে।
এই বলে তিনি তৈরী হতে গেলেন। এসে সবাইকে বিদায় জানিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
তারা যাওয়ার পর ওরা আড্ডায় মেতে উঠে। খানিকক্ষণ পার হতেই মাইশাকে ইশারায় নিজের রুমে ডাকে সাদ্দাম। মাইশা না সূচকভাবে মাথা নাড়লে ও লজ্জা ভেঙে বলল, মাইশা! আমার রুম তুমি দেখোনি। চলো দেখাই?
মাইশা ইধার দিকে তাকিয়ে বলল, তোরাও চল?
ইধা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল, তুই যা। আমরা এখানে আছি।
সাদ্দামও দুষ্টুমির ছলে বলল, ইধাও আমার ব্যাপারটা বুঝেছে। কিন্তু তুমি বুঝলে না!
মাইশা রাগান্বিত কণ্ঠে বলল, চলো তো! এখানে থাকলে আরও কথা শুনতে হবে।
যাওয়ার সময় রুজাইনের উদ্দেশ্যে সাদ্দাম বলল, গেস্ট রুম খালি আছে। না মানে ওখানের বারান্দাটা তোর পছন্দ না রুজাইন? গিয়ে সময় কাটাতে পারিস।
ওরা চলে যেতেই ইধার দিকে তাকিয়ে রুজাইন বলল, সাদ্দাম ভাই এর ব্যাপারটা বুঝেছ। আমারটা বুঝছ তুমি?
ইধা কথা ঘুরিয়ে বলল, বারান্দায় কী দোলনা আছে? এই বারান্দার কথা মাইশার কাছেও শুনেছি।
-আছে। যাবে?
-নাহ। ওখানে কী করব।
রুজাইন উঠে ইধার পাশে এসে বসলো। অনেকটা পাশে! ইধা কিছুটা দূরে সরে বসলে রুজাইন আরও কাছে এসে বসে।
ইধার হাতে টিভির রিমোট ছিল। ও রিমোট দিয়ে বিভিন্ন চ্যানেল আনতে শুরু করে।
রুজাইন ওর হাত থেকে রিমোটটা কেড়ে নিতেই ইধা বলল, কী হলো?
টিভি বন্ধ করে রুজাইন বলল, ওসব ছাড়ো। এমন একাকী সময় পেয়েছি কখনো? দু’টো ভালোবাসার কথা বলো!
মৃদু হেসে ইধা বলল, কী বলব?
-আমায় শিখিয়ে দিতে হবে?
-তুমিই বলো না?
ইধার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে রুজাইন বলল, ভালোবাসি অনেক বেশি।
রুজাইনের ভারী নি:শ্বাসে বলা এই কথাটি ইধার হৃদয় স্পর্শ করে। ও কেঁপে উঠে। রুজাইন আরও কিছু বলতে চাইলে শোনে না ইধা। ও উঠে পড়তে চাইলে হাতটা ধরে থামায় রুজাইন।
সেও দাঁড়িয়ে ইধার কাছে আসে। ইধা আশেপাশে তাকিয়ে বলল, কী করতে চাইছ তুমি?
ইধার মুখের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে রুজাইন বলল, বুঝছ না?
-নাহ।
-ঠিকই বুঝছ। তবে তোমার মনের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছুই করব না।
-তবে করো না।
এই বলে রুজাইনকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে আসে ইধা।
ওর মতের বিরুদ্ধে কিছু করবে না ভেবে রুজাইনও নিজেকে সামাল দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
ইধা ভাবে রুজাইন হয়তো রাগ করেছে। অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে তাই।
ইধারও ওর থেকে এভাবে সরে এসে ভালো লাগছে না। বুকের মাঝে কেমন যেন হাহাকার করছে। ইচ্ছে করছে রুজাইনের ভীষণ কাছে যেতে। ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখতে না পেরে রুজাইনকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো ও।
আচমকা ওর কাণ্ডে অবাক হয় রুজাইন। সঙ্গে খুশিও হয়। পেছন থেকে সামনে টেনে আনে ইধাকে ও। ইধা ওর চোখ জোড়া বন্ধ করে নেয়। ওর মায়াবী মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকায় রুজাইন। চোখ গিয়ে আঁটকায় গোলাপি রাঙা ঠোঁট জোড়াতে। সেই ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় রুজাইন।এই প্রথম কারো এমন ছোঁয়া পেল ইধা। মনে হচ্ছে কোনো সুখের ভেলায় দুলছে ও। যেন অজানা এক সুখের পৃথিবীতে বসবাস করছে ও!
মিষ্টি ঠোঁটের স্বাদ নিয়ে ইধাকে ছাড়লো রুজাইন। ইধার চোখ এখনো বন্ধ। ঠোঁট জোড়া কাঁপছে ওর। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইধা।
রুজাইন ওর সারামুখে আদরমাখা চুমু খেতে শুরু করে। নিজেকে রুজাইনের কাছে সমপর্ণ করে নীরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইধা। মাইশা ঠিকই বলেছে, কাছে আসলে নিজেকে সামলানো যাবে না।
ইধা পারছে না, নিজেকে সামাল দিতে ও পারছে না। মুহুর্তটাকে ভীষণ উপভোগ করছে ও।
ইধার নি:শ্বাসও ভারী হয়ে আসে। ও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রুজাইনের চুল।
এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ ওরা শুনতে পায়। তৎক্ষনাৎ দু’জন দু’জনকে ছেড়ে দেয়।
ইধা ওর কাপড় ঠিক করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রুজাইন নিজের চুল ঠিক করে দরজা খোলে। বুয়াকে দেখতে পায় ও। বুয়া সালাম জানিয়ে ভেতরে এসে রান্নাঘরে চলে যায়।
রুজাইনের দিকে তাকানোর সাহস ইধা পায় না। ও বুয়ার পিছু নেয়। গেস্ট রুম কোনটা জেনে সেখানে যায়। ওয়াশরুমে এসে বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে ও। না চাইতেও ওর মুখে হাসি ফুটছে। কিন্তু এই কাজটা করা ওর মোটেও উচিত হয়নি। ভাগ্যিস বুয়া এসেছিল! নতুবা এমন চলতে থাকলে গভীরতা আরও বেড়ে যেত। যা হচ্ছে তা কী ঠিক হচ্ছে!
এটা ভাবতেই যেন মনটা খারাপ হলো ইধার। আবেগের বশে কী করে ফেললো ও!
.
চলবে