প্রার্থনায় রবে তুমি পর্ব-২৭

0
250

#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_২৭
#Saji_Afroz

সকালে ঘুম থেকে উঠে রুজাইনকে নিজের পাশে দেখে চমকালো ইধা। রুজাইন বলল, কেমন লাগছে এখন?

ইধা উঠে বসে৷ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল, ভালো। কিন্তু তুমি এখানে কেন?
-মাত্রই এলাম। দেখতে এসেছি তোমাকে। কাল রাতে জ্বর বেশি ছিল।
-এখন ঠিক আছি।
-দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তা এখন আবার মুখটা ঘুরিয়ে রেখেছ কেন? কাল তো বেশ কাছে আসো কাছে আসো বলছিলে।

ইধা অবাক হয়ে তাকায় রুজাইনের দিকে। রুজাইন আরও বলল, ভালোবাসো সেটাও বলেছ। শুধু এতদিন এই নাটকের মানে কী তা বলোনি।

ইধার মনে নেই জ্বরের ঘোরে কী আবোলতাবোল ও বলেছে। তবে জ্বর হলে বকবক করার অভ্যাস সেই ছোটো থেকেই আছে। একবার তো জ্বরের ঘোরে মামীকে বকে দিয়েছিল। যত রাগ ছিল সব করেছিল প্রকাশ। কাল বুঝি রুজাইনকে মনের কথা জানিয়ে দিলো!

রুজাইন বলল, কী হলো?

ইধা নিজেকে শক্ত করে ওর দিকে তাকিয়ে বলল, কেন দূরে সরেছি বলেছি। আমার মা এর জন্য, নিজের জন্য। আবেগ আজ আছে কাল নাই হয়ে যাবে। মা কে কষ্ট দিয়ে নিজে খুশি হতে পারব না।
-সে যাই হোক, ভালো তুমি আমাকে বাসো।
-বাসি না।
-না?
-না।

মরিয়ম জান্নাত আসলে দু’জনেই থেমে যায়। রুজাইনের সঙ্গে আলাপচারিতা চলতে থাকে তার৷ তার মাঝেই ইধার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে রুজাইন। মেয়েটার শরীর এখনো দূর্বল বুঝতে পারছে ও।

দু’দিন কেটে যায়। কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছে ইধা। মাইশা বলল, আজ না গেলেও হত। দূর্বলতা ভালোভাবে কেটে যেত!

ইধা হাতে ঘড়ি পরতে পরতে বলল, জ্বরের কারণে এতদিন কী শরীর খারাপ থাকে! এত ভাবিস না।
-আজকে মাত্র দুইটা ক্লাস ছিল। না গেলেও হত রে!
-আজ যেতেই হবে। শেষ দিন। যাওয়ার সুযোগ নেই আর।

মাইশা ভ্রু কুচকে বলল, শেষ দিন মানে?

ইধা আমতাআমতা করে বলল, সপ্তাহের শেষ দিনের ক্লাস।
-যেভাবে বলছিস, যেন ওই কলেজে আর যাবিই না!

একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আয়নার দিকে তাকালো ইধা। শেষ বারের মতো আজ প্রাণপ্রিয় চট্রগ্রাম কলেজের ছাত্রী হয়ে যাবে ও। এই কলেজে পড়ার কতই না স্বপ্ন ছিল! পূরণ হতে হতেও যেন হলো না!

ক্লাস শেষে গেইট থেকে বেরুতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রুজাইনের দিকে চোখ যায় ওর। একটি মেয়ের সঙ্গে হেসে হেসে বেশ কথা বলছে ও। ওদের দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় ইধা৷ ওকে দেখে রুজাইন মেয়েটির আরও কাছাকাছি এসে কথা বলতে থাকে। ইধা আরও কঠিন চোখে তাকায় ওদের দিকে।
মাইশা ইধার দিকে তাকিয়ে বলল, কী দেখছিস ওভাবে?
-কেমন খিটমিট করছে দেখছিস?
-সে ভাইয়া করতেই পারে! তুই পাত্তা দিচ্ছিস না। এই যুগের ছেলে হয়ে কী দেবদাস হয়ে থাকবে!

গম্ভীরমুখে রুজাইনের পাশ কাটিয়ে যেতে থাকে ইধা। মাইশার নাম ধরে ডেকে ওকে থামায় রুজাইন। ইধাও থামে। রুজাইন মাইশাকে বলল, ও হলো রুকমি। আমার নিউ ফ্রেন্ড।

রুকমির দিকে তাকিয়ে রুজাইন বলল, আর ও সম্পর্কে আমার ভাবী হয়। কাজিনের ওয়াইফ।

মাইশা বলল, হ্যালো রুকমি আপু! কেমন আছেন?

রুকমি হেসে বলল, ভালো ভাবী। রুজাইনের ভাবী মানে তো আমারও ভাবী।

ইধা না চাইতেও বলে ফেললো, কোন হিসেবে?

রুকমি বলল, ও আমার ফ্রেন্ড৷ তাই আরকি! বাই দ্যা ওয়ে, আপনি কে?

রুজাইন বলল, মাইশা ভাবীর ফ্রেন্ড।
-ও!

মাইশা বলল, সদ্য ফ্রেন্ড বলতে ঠিক বুঝলাম না! একই ক্লাসের নন আপনারা?

রুকমি বলল, জি একই ক্লাসের৷ সত্যি বলতে এতদিন আমিই ফ্রেন্ডশিপ করতে চেয়েছি। বাট এত গুরুত্ব পাইনি। কিন্তু রুজাইন বলল, এখন থেকে আমার কদর সে করবে।

রুজাইনও একগাল হেসে বলল, যে কদর করে তাকেই গুরুত্ব দিতে হয়। মরিচীকার পেছনে ছুটে লাভ কী?

রুকমি দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল, ওহহো! তাহলে আমি তোমাকে ওতটাই কদর করব যেন সারাজীবনের সঙ্গী হয়ে যেতে পারি।

ওর এই কথার জন্য প্রস্তুত রুজাইনও ছিল না। ও অপ্রস্তুত হয়ে তাকায় ইধার দিকে। ইধা চোখ জোড়া বড়ো করে তাকিয়ে থাকে রুকমির দিকে।

মুহুর্তেই মিষ্টি হাসি দিয়ে রুকমি বলল, মজা করলাম! তোমার বন্ধু হতে পেরেছি এটাই অনেক। এখন থেকে পড়াতে তোমার হেল্প পাব। এটাই আমার কাছে সবচেয়ে জরুরি। কারণ তুমি ক্লাসের বেস্ট স্টুডেন্ট।

মাইশাকে ইধা বলল, ওরা বন্ধুত্বের আলাপ করুক। আমরা বরং যাই৷

বিদায় জানিয়ে ওরা এগুতে থাকে। পথিমধ্যে ইধা বলল, দেখেছিস কাণ্ডটা? ওই মেয়ে ওর পিছু সহজে ছাড়বে না। শিওর আমি। আর রুজাইনও! ওকে পছন্দ করে জেনেও ওর সঙ্গে ফ্রেন্ডশিপ কেন করলো?

আচমকা রুজাইন ইধার সামনে এসে বলল, হিংসে হচ্ছে?

ওকে দেখে থামতে হলো ইধার। পাশে মাইশা মুচকি হেসে চলেছে। ইধা ওকে ধমকের সুরে বলল, না হেসে ওকে বল আমার কেন হিংসা হবে! আর ওকে ওই রুকমিনীর কাছেই যেতে বল।

রুজাইন বলল, রুকমিনী নয়। রুকমি!
-ওর নাম ডাইনি হলেও আমার কোনো সমস্যা নেই।
-সেটা তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
-উফ! সরো তো!

এই বলে ইধা রুজাইনের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় ওর বাম হাতটা ধরে ফেলে রুজাইন। ইধা আশেপাশে তাকিয়ে বলল, ছাড়ো বলছি!
-রুকমির সাথে কথা বলায় খারাপ লেগেছে না বলো? আমি চেয়েছিই তোমার খারাপ লাগুক। তাই ইচ্ছে করে ওমন করেছি।
-লাগেনি খারাপ।
-লেগেছে।

মাইশাও বলল, হু লেগেছে। আমি সাক্ষী দিলাম।

চোখ রাঙিয়ে ওর দিকে তাকালো ইধা। রুজাইন ওর কাছে এসে বলল, কেন এমন করছ? সবটা ঠিক করা সম্ভব ইধা!

ইধা নিজেকে সামলে শান্তকণ্ঠে বলল, ছাড়ো।
-আগে বলো, সম্ভব না?
-মানুষ দেখছে।
-লোকজনের পরোয়া আমি করি না।
-আমি করি।
-প্রশ্নের উত্তর দিলেই ছেড়ে দেব।

একটু থেমে ইধা বলল, সম্ভব না! আমাদের এক হওয়া সম্ভব না। কারণ আমি চাই না!

একথা শুনে ইধার হাত ছেড়ে দেয় রুজাইন। ও হাত ছাড়ায় ইধাও আঁতকে উঠে। এই স্পর্শ শেষ স্পর্শ! এটা ভাবতেই দু:খে বুকটা ফেটে যাচ্ছে ইধার।
রুজাইন বলল, ছাড়লাম হাত! কিন্তু ছাড়ব না তোমাকে। আমি রোজ বিরক্ত করব তোমাকে। কারণ তুমিও আমায় ভালোবাসো। আর ভালোবাসলে সব সম্ভব। এক হওয়াও সম্ভব। তুমি আমার হওয়া সম্ভব!

ইধার চোখ ছলছলে হয়ে উঠে৷ নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে কষ্টকর। তাই ও মাইশার হাত ধরে সামনে এগুতে থাকে। রুজাইন পেছন থেকে চ্যাঁচিয়ে বলল, আই লাভ ইউ ইধা। ফিরে এসো ইচ্ছে হলে৷ আমি আছি তোমার অপেক্ষায়।

ইধা পেছনে ফিরে তাকায় না। গাড়িতে উঠে বসে মাইশার সঙ্গে। ওর চোখ বেয়ে পড়ছে পানি। যা আটকানো আর সম্ভব নয়!
মাইশা বলল, কেন ভাইয়াকে কষ্ট দিচ্ছিস আর নিজেও কষ্ট পাচ্ছিস?
-ওর ভালোর জন্যই।
-জানি না বাপু কী চলছে তোর মনে।

রাত হওয়ার সাথে ইধার জীবনেও যেন আঁধার হতে শুরু করেছে! এখানে থাকার সময় ওর শেষ। চট্রগ্রাম কলেজ থেকে বদলির সকল কার্যক্রমও হয়ে গেছে। সবটা করে দিয়েছেন শারমিন আক্তার।
নিজ বাড়ি ফিরে যাবে ইধা৷ মা এর সঙ্গে বাবার দেওয়া বাড়িতেই থাকবে। ওখানকান কলেজে ভর্তির কথাবার্তাও হয়ে গেছে। শুধুমাত্র এখান থেকে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া বাকি। সবটা শারমিন আক্তার টাকার জোরে করেছেন। আজই এই বাড়িতে শেষ রাত ওর। কাল ভোর হতেই বেরুতে হবে ওকে। এমনটাই কথা হয়েছে শারমিন আক্তারের সঙ্গে।

-মিলি, মাইশা, ইধা মা! খেতে আসো তাড়াতাড়ি।

মরিয়ম জান্নাতের কথায় ডাইনিং টেবিলে এলো সবাই। আজ তিনি বিরিয়ানি রান্না করেছেন। তার জন্য বিশেষ দিন আজ। কারণ তিনি প্রধান শিক্ষিকা হয়েছেন৷ সবই তার ধৈর্য আর নিষ্ঠার ফল। তার জন্যে একটি শাড়ি এনেছে ইধা। খরচ করার জন্যে ইধাকে বকাবকি করলেও আজই শাড়িটা পরেছেন তিনি। ইধা তা দেখে বলল, আন্টি! আপনাকে অনেক বেশি মানিয়েছে শাড়িটা!
-শাড়িটা সুন্দর তাই! সুন্দর বলেছি বলে আর যেন এমন উপহার না আনো!
-সেই সুযোগ হয়তো আর আমি পাব না।
-হু। আমি বকব তাই।

কথা ঘুরিয়ে ইধা বলল, জি তাই!

বিরিয়ানি মুখে দিয়ে ইধা বলল, আপনার বিরিয়ানি বেস্ট আন্টি! আমার মা এর চেয়েও বেস্ট।
-তাই! উনাকে আসতে বলো একদিন। শিখিয়ে দেব।

হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নেড়ে ইধা বলল, বলব!

আজ মাইশা বিকালে সাদ্দামের সঙ্গে বেরিয়েছিল। সেই সুযোগ ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছে ইধা৷ ব্যাগটা রেখেছে খাটের নিচে। টুকটাক জিনিস যেসব চোখের সামনেই থাকে, আর বই-পুস্তক এসব নেওয়া বাকি। মাইশা ঘুমোলে সেসবও নেওয়া হবে।
আজ মাইশার সঙ্গে এক বিছানায় শেষ বারের মতো ঘুমোবে ইধা। মাইশা ওর জীবনে অনেকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে। ওকে ভোলা কখনোই সম্ভব না ইধার৷ কারণ মাইশা সেই মানুষ যে ইধাকে বুঝিয়েছে, ওকে কেউ জীবনে অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ ভাবে!
মাইশার দিকে তাকিয়ে এসবই ভাবছে ইধা। ওর দিকে চোখ পড়তেই মাইশা বলল, কী দেখছিস?
-বিয়ের পর অনেক সুন্দরী হয়ে গেছিস। রহস্য কী?
-রুজাইন ভাইকে বিয়ে করে তুইও সুন্দরী হয়ে যা। সব চুমুর পাওয়ার!

ইধা অন্যদিকে ফিরে বলল, ধ্যাত!

মূলত ইধা চোখে আসা পানি লুকোতে ব্যস্ত। কিছু বুঝতে দেওয়া যাবে না মাইশাকে। বুঝতে পারলে ওর যাওয়া আটকাবে মাইশা!

ভোর হওয়ার আগেই উঠে পড়ে ইধা। কেননা এখানে সবাই ফজরের নামাজ আদায় করে। ইধা ওর বাকি জিনিস সব ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয়। শারমিন আক্তারের কথায় দারোয়ান এসে সেসব নিয়ে যায়।
ইধাকে নিচে দাঁড়াতে বলেন শারমিন আক্তার। কিন্তু ও ঠিক করে শারমিন আক্তারের বাসায় ও যাবে। বেরুনোর আগে মাইশার কপালে আলতো করে চুমু খায় ইধা। মরিয়ম জান্নাত ও মিলিকেও দেখে নেয় এক নজর। ধীরপায়ে চলে আসে শারমিন আক্তারের বাড়িতে।
তাকে ফোনকল দিতেই দরজা খুলে দেন।
তিনি বললেন, নিচে দাঁড়াতে বলেছিলাম তোমাকে। এখানে এলে যে?

আচমকা তার পা ধরে মেঝেতেই বসে পড়লো ইধা। তিনি অবাক হয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, করছ কী?

ইধা কাঁদতে কাঁদতে নরমস্বরে বলল-
আমি কোনো সিনক্রিয়েট করতে আসিনি আন্টি। আমার মনের কথা বলতে এসেছি আমি। আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে আন্টি। রুজাইনকে এত অবহেলা করার পরেও ও আমাকেই চায়। অনেক ভালোবাসে আমাকে। আমিও বাসি। আমি যেতে চাই না আন্টি। কোনো কী উপায় নাই আমাদের এক হওয়ার?

ইধাকে উঠিয়ে তিনি বললেন, আমার সংসার ভেঙে এক হও। আমি না করিনি।
-এভাবে বলবেন না প্লিজ! আমাদের কথাও একবার বুঝুন! আজও রুজাইন রাস্তায় সবার সামনে চিৎকার করে ভালোবাসার কথা বলেছে। কিন্তু আমি কিছু বলতে পারিনি। ওকে এভাবে দেখতে আমার কী কষ্ট হচ্ছে না! ও আমাকে ভাবছে পাষাণ। কিন্তু আমি নই। প্লিজ আঙ্কেলের সঙ্গে আরেকটা বার কথা বলতে দিন আমায়।

ফোন হাতেই ছিল তার। তিনি ইধার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, কথা বলার আগে ম্যাসেজ গুলো দেখো।

ইধা ফোন হাতে নিয়ে দেখলো, আজও রমজিদ শাহ ম্যাসেজ করেছেন।
লিখেছেন-
যায়নি এখনো ওই মেয়ে? এত তোষামোদ করার কী আছে! ধাক্কা দিয়ে বের করে দাও। রুজাইনকে আমি সামাল দেব। আর তোমার দ্বারা সম্ভব না হলে বলো আমায়। ব্যবস্থা আমি নেব। কিন্তু কোনো অঘটন ঘটলে তোমায় আমি ক্ষমা আমি করব না শারমিন। কিছুতেই না!

এর আগেরও কয়েকটা ম্যাসেজ ইধা দেখে। এসব দেখে থমকে যায় ও। ওকে এতটাই ঘৃণা করেন রমজিদ শাহ! শারমিন আক্তার কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন, কী মনেহয় তোমার? মানবেন উনি আদৌ! এসব দেখেও যদি আমার সংসারে আগুন জ্বালাতে তোমার ইচ্ছে হয় তবে এসো!

ইধা আর কিছু বলার সাহস পেল না। ওর জন্যে এত সুন্দর পরিবারের ধ্বংস ও চায় না।
চোখ মুছতে মুছতে ইধা বলল, বেশ তবে! আমিই চলে যাচ্ছি।

শারমিন আক্তার একটি চেক ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, এটা রাখো। পাঁচ লাখ টাকার চেক। তোমার প্রয়োজন হবে।
-কোনো প্রয়োজন নেই৷ কলেজের ব্যাপারে সহায়তা নিয়েছি কারণ আপনার অনেক চেনাজানা থাকবে। আর এই অসময়ে বদলি হওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হত না। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার প্রয়োজন নেই।
-তবুও! তোমাকে একটু উপকার করতে পারলে আমার ভালো লাগতো।
-আসলেই করতে চান?
-হ্যাঁ!
-তবে শেষ বারের মতো রুজাইনকে দেখতে দিন আমায়! কথা দিচ্ছি, এক মিনিটের সময় বেশি নেব না।
-ঘুম ভেঙে যেতে পারে।
-ভাঙবে না। ভাঙলেও আমি কোনো বাহানা দিয়ে সরে যাব।
-টের পেলে? সামলাবে কিভাবে?
-জীবন থেকেই সরে যাচ্ছি টের পেল না।!

শারমিন আক্তার আর না করলেন না৷ যেতে দিলেন ইধাকে।

ধীরপায়ে রুজাইনের রুমে এল ইধা। আসতেই মনে পড়ে গেল সেদিনের কথা, যেদিন এসেছিল ডাকাত দল! সেদিনই প্রথম ওর বাহুডোরে ছিল ইধা৷
ঘুমন্ত রুজাইনের দিকে চোখ যায় ইধার। ডিম লাইটের হালকা আলোতে ওর মুখটা দেখেই মুখে হাসি ফোটে ইধার। ইচ্ছে করছে আরও একবার রুজাইনের বাহুডোরে থাকতে! কিন্তু এটা কোনো ভাবেই আর সম্ভব নয়!
রুজাইনকে ছোঁয়ার লোভ সামলাতে পারে না ইধা। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলল, আমার না হলেও আমার প্রার্থনায় রবে তুমি চিরকাল!
.
চলবে
.
বি:দ্র: ১৩ ও ১৬ তারিখ এক্সাম আছে। পরবর্তী পর্ব এর পরে দেওয়া হবে।