#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#৩
#Saji_Afroz
-লাভ এট ফার্স্ট সাইটে বিশ্বাস করিস তুই?
রুজাইনের প্রশ্ন শুনে ওর বন্ধু তমাল বলল, নিজের সাথে ঘটেনি। তবে বিশ্বাস করা যায়! একটি জনপ্রিয় ডেটিং সংস্থার করা সমীক্ষা বলছে, প্রায় ৭৩ শতাংশ মানুষ প্রথম দেখায় প্রেমে পড়েছেন ।
-তাহলে আমিও ওদের মধ্যে একজন হতে চলেছি।
তমাল হেসে বলল, কাকে এত ভালো লেগে গেল?
-আমাদের ভাড়াটিয়া। প্রথম দেখায় কিছু মনে হয়নি। দ্বিতীয় দেখাতে ভালো লাগে। আর সেদিন তৃতীয়বার ছাদে দেখলাম! বিশ্বাস কর আমি আর আমার মধ্যে নেই। এত মিষ্টি মেয়েটা! তখনি না ওকে নিজের করে পেতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো। এটার মানে কী ভালোবাসা ধরেই নেব?
-তোর মতো ছেলে নিশ্চয় আবেগে পড়ে এসব বলবে না! তবে অবশ্যই ভালোবাসা এটা।
-বলছিস?
-হু। তবে আমি আরেকটু সময় নিতে বলব। ওর সম্পর্কে জানিস কিছু?
-শুধু নামটা জানি।
হো হো শব্দে হেসে উঠে তমাল। ও বলল, আরেকটা প্রচলিত কথা আছে।
-কী?
-হুটহাট প্রেম হুটহাট ভাবেই শেষ হয়।
রুজাইন মুখ বাঁকিয়ে বলল, শুরুর আগেই শেষের কথা বলছিস বন্ধু!
-আচ্ছা দোয়া দিলাম! সফল হোক তোর প্রেম। এইবার তোর স্টাডির কথা বল? চলছে কেমন?
-এইতো ভালোই!
নতুন স্বপ্ন নিয়ে অনার্স জীবনের পথচলা শুরু হচ্ছে ইধা ও মাইশার। নতুন এই অধ্যায়ে পথচলাটা সবার জন্য সমান হয় না। ঠিক তেমনি সহজ নয় ইধার জন্য৷ ওর জন্য কেবল এই কলেজই অচেনা নয়, এই শহরটা অচেনা। নতুন এই পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে তো! এই নিয়ে ভাবনায় থাকে ও প্রতিনিয়ত।
-ইধা!
মাইশার ডাকে সাড়া দিয়ে ও বলল, বল?
-মনমরা হয়ে আছিস কেন? আমি আছি সাথে তোর।
-তুই আছিস বলে ভরসা করে এসেছি এখানে। তুই না থাকলে আমার কী যে হত!
-কিছুই হত না। চল তো এখন।
ওরা লোকাল সি.এন.জির জন্য অপেক্ষা করে। এখান থেকে লোকালে করে মোড়ে যেতে হবে। এরপর আবারও লোকালে উঠতে হবে। এভাবেই কলেজ যেতে হবে ওদের। ওরা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে তখনি মাইশার পাশে এসে লতিফ বলল, ও মাইশা?
-ভাইয়া আপনি?
-দূর থেকে তোমাকে দেখে ছুটে আসছি।
-কেন?
-গতকাল আলিম ফুচকার টাকা দেবে বলছিল না?
-হু।
-দেয়নাই। আমাকে শাসায় চলে গেছে।
ইধা অবাক হয়ে বলল, বলেন কী?
-এইটা নতুন কী আপা! প্রায় আমার থেকে খায় কিন্তু টাকা দেয় না। কালও দেয়নাই। এটা আবার তারে বলতে যাইয়েন না।
মাইশা লতিফের প্রাপ্য টাকা তাকে বুঝিয়ে দিয়ে বলল, বলব না।
লতিফ ধন্যবাদ জানিয়ে চলে যায়। ইধা বলল, হিরো হতে চেয়েছিল। ভিলেন সেটা আবারও প্রমাণিত হলো।
-ছাড় তো ওসব। আজ একটা গাড়িও পাচ্ছি না!
একটা সি.এন.জি এসে থামে। ওরা এগুতে চাইলে এর আগেই ওখানে গিয়ে বসে পড়ে রুজাইন। আর মাত্র একটা সিট খালি থাকে। গাড়ি চালক ওদের উদ্দেশ্যে বলল, যাবেন নাকি মোড়ে?
মাইশা বলল, আমরা দুজন আছি। আপনার গাড়িতে আর জায়গা নেই।
রুজাইনকে দেখে ইধা ভ্রু কুচকায়। রুজাইন এটা ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে ভেবে রাগ হয় ওর। কিন্তু ওকে অবাক করে রুজাইন গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে৷ ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমরা যাও।
-কিন্তু আপনি!
-আমার অসুবিধে নেই। একা ছেলে মানুষ ম্যানেজ করে নেব। আজ তোমাদের কলেজের প্রথম দিন নিশ্চয়?
-হ্যাঁ।
-অল দ্যা বেস্ট দু’জনকেই।
এইবার ইধাও কথা বলল। মৃদু হেসে ধন্যবাদ জানিয়ে উঠে পড়ে ও। রুজাইন আপনমনে বলল, তোমার হাসি দেখেছি না! আজকের দিনটা ভালো হতে চলেছে আমার।
গাড়ি চলতে শুরু করে। মাইশা বলল, উনি আমাদের বাড়ির মালিকের ছেলে।
-চিনি।
-কিভাবে?
সবটা শুনে মাইশা হেসে বলল, এতকিছু ঘটে গেছে!
-হু।
গাড়ি মোড়ে চলে আসে। ওরা ভাড়া মিটিয়ে আরেকটা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। ইধা বলল, আলিমের ব্যাপারে তো নেগেটিভ রিভিউ দিলি। তা তোদের বাড়ির মালিকের ছেলে কেমন?
-হীরের টুকরো!
-কী করে সে?
-অনার্স শেষ বর্ষে। মহসিন কলেজে।
-মানে আমাদের কলেজের সামনেই?
-হ্যাঁ। মজার ব্যাপার কী জানিস?
-কী?
-একই সাবজেক্ট আমরা। হেল্প নিতে পারব।
-করবে?
-হু৷ কথাবার্তা হয় আমার সঙ্গে।
ওরা কলেজের সামনে চলে আসে। কলেজে প্রবেশ করতেই যাবে তখনি ওদের সামনে এসে দাঁড়ায় একটি ছেলে। মাইশার দিকে তাকিয়ে গম্ভীরমুখে বলল, চলো এখুনি।
মাইশা বিরক্ত হয়ে বলল, ফখরু! তুমি এখানে?
-হ্যাঁ এখানে। গত দু’দিন আমার ফোনকল রিসিভ করোনি তুমি। আর চাচ্ছ আমি এখানে না আসি? জানতাম আজ তোমার প্রথম ক্লাস। সময়ও জানি। তাই চলে এলাম।
-আমার হাতে সময় নেই।
-বললাম না আসো!
এই বলে ফখরুল ওর হাত ধরে টানলে ইধা বলল, ভাইয়া! পাবলিক প্লেসে এসব কী করছেন!
ইধার কথা শুনে ফখরুল ওর হাত ছাড়ে। ও নরমকণ্ঠে বলল, ইধা তুমি?
-হু।
-আমি ওর বয়ফ্রেন্ড।
-কিন্তু আপনি শত্রুর মতো ব্যবহার করছেন।
-কী করব! ও আমার ফোন ধরেনি।
-কেন?
-ওইটাই তো জানতে চাই।
-আপনি জানেন।
-কী জানি?
-ও বেড়াতে গিয়েছিল বলে যা তা বলেছেন আপনি। তাই
ও কথা বলছে না। আপনি ওর রাগ না ভাঙিয়ে উলটো রিয়াক্ট করছেন!
মাইশাও গম্ভীরমুখে বলল, এমনি ও। নিজে যা করে সব ঠিক, আমার সবই ভুল। এই ছেলের সঙ্গে রিলেশনে জড়িয়ে জীবনটা নষ্ট করে ফেললাম।
এই বলে হনহনিয়ে ও কলেজের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ইধাও ওর পিছু নেয়। ফখরুলও প্রবেশ করতে চাইলে দারোয়ান বাঁধা দেয় ওকে৷ কলেজের পোশাক না থাকায় এই কলেজের ছাত্র কি-না জিজ্ঞাসা করা হয় ওকে। না জানালে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না ওকে। ফখরুল রাগে আপনমনে বলল, দেখে নেব তোকে আমি।
ভেতরে এসে ইধা বলল, সিরিয়াসলি! এমন একটা সাইকোর সঙ্গে তুই রিলেশন করিস!
-দুইটা বছর সাথে থেকেছি এই সাইকোর সঙ্গে। আর পারছি না৷ বিলিভ মি! আমার দ্বারা আর সম্ভব না।
এটা বলতেই মাইশার দু-চোখ ছলছলে হয়ে উঠে। ইধা বলল, ও কী তোর সঙ্গে আরও খারাপ কিছু করেছে?
নিশ্চুপ মাইশাকে দেখে ইধার কাছে যেন সবটা পরিষ্কার। ও বলল, গায়ে হাত তুলেছে?
-এটাই মেইন কারণ। এর পরেও ওর কোনো অনুশোচনা নেই৷ আমিই নাকি দোষী। আমি খেতে গেলে ওর পারমিশন নিতে হবে, উঠতে গেলে তাই, বসতে গেলেও৷ এখন কী নিয়ে সমস্যা জানিস?
-কী?
-এখানে ছেলে মেয়ে একসঙ্গে ক্লাস করব। আমি কেন মহিলা কলেজে এডমিশন নিলাম না! চট্রগ্রাম কলেজে চান্স পেয়েও নাকি আমি পিছপা হতাম! আর এখন সব নতুন নিয়ম। গ্যারান্টি কী যে মহিলা কলেজেই নামটা আসবে আমার! অন্য একটা কলেজে চলে আসলে?
-এর মানে উনি তোকে ভরসাই করে না।
-এক বিন্দুও না। শুরু থেকে ছাড় দিতে দিতে আজ ব্যাপারটা গায়ে হাত অবধি চলে এসেছে। ব্রেকআপ করতে চাচ্ছি। সেটাও করছে না। এই পাগলের কাছ থেকে সরব কিভাবে!
এই বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে মাইশা৷ ওকে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ইধা। ভেবেছিল আজ কলেজের প্রথম দিনটা কাটবে অন্যরকম। ঘুরে দেখবে কলেজটা। এমন কিছুই আজ হবে না৷ মাইশাকে শান্ত করা এখন সবচেয়ে জরুরি।
আজ তেমন ক্লাস হয়নি। ঘন্টা খানেক পরেই বেরিয়ে পড়ে ওরা। কলেজ থেকে বেরিয়ে দু’জনে গাড়ির জন্য সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করে। চকবাজার মোড়ে আসলেই লোকাল গাড়ি পাবে ওরা। এর আগেই ওদের পথ আঁটকে দাঁড়ায় ফখরুল। ওকে দেখে মাইশা উত্তেজিত হয়ে বলল, তুমি বুঝতে পারছ না তোমার সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী নই আমি।
ফখরুল রাগে গিজগিজ করতে করতে বলল, এই রোদে আমি এতক্ষণ তোমার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। এতে কিছু আসে যায় না তোমার?
-না। তুমি আমাকে জ্বালাতে অপেক্ষা করছিলে। আর এখন এসব আর মানব না আমি। সরো তুমি।
-কথা বলবি না তুই! তোর বাপ বলবে।
এই বলে ও মাইশার হাত ধরে টানাটানি করলে ইধা ফখরুলকে বাঁধা দিতে চায়। তখনি ওকে জোরে ধাক্কা দেয় ফখরুল। ও পড়েই যাবে ঠিক তখন ওকে ধরে রুজাইন। ইধা রুজাইনকে দেখে বলল, প্লিজ এই ছেলেকে এখান থেকে যেতে বলুন। আমাদের ডিস্টার্ব করছে ও।
রুজাইন ওর কাছে আসলে ফখরুল ভ্রু কুচকে বলল, কে আপনি?
-আগে মাইশার হাত ছাড়ো।
-না ছাড়লে?
রুজাইন পকেট থেকে ফোন বের করে বলল, পোলাপান ডাকব ভেবো না। ওসব ফাতরামি আমি করি না। ডাকব পুলিশ। চেনাজানা ভালোই আছে।
মাইশার হাত ছেড়ে দেয় ফখরুল। বাধ্য হয়ে নীরবতা পালন করেই সেখান থেকে প্রস্থান নেয় ও। মাইশা রুজাইনের উদ্দেশ্যে বলল, আপনি আজ না থাকলে কী যে হত!
-কে ছেলেটা?
মাইশা ওকে সব খুলে বললে ও বলল, ভালোই হলো এমন একটা ছেলে থেকে সরিয়ে নিচ্ছ নিজেকে। আবার ডিস্টার্ব করলে জানাবে। ওর ব্যবস্থা আমি করব।
-অনেক ধন্যবাদ।
-এখন ওয়েট করো। একটা সি.এন.জি ঠিক করছি তোমাদের জন্য।
-আমরা লোকালেই..
মাইশাকে থামিয়ে রুজাইন বলল, উহু! ও আবার ডিস্টার্ব করতে পারে। আজ অন্তত তোমাদের একা ছাড়ছি না আমি। আমিও বাসায়ই যাচ্ছি। একসঙ্গে যাই।
এই বলে ও গাড়ি দেখতে যায়। মাইশা তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। ইধা ওর পাশে আসলে মাইশা বলল, ভেবেছিলাম এই ছেলে হীরের টুকরো! এখন দেখছি পুরাই হীরে!
.
চলবে