#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_৫
#Saji_Afroz
প্রায় দশ মিনিট পরেই মাইশার দেখা পায় ওরা৷ আশ্চর্যভাবে মাইশা ফখরুলের সঙ্গে এদিকে আসছে। ইধা তা দেখে বিড়বিড়িয়ে বলল, কী ব্যাপার! ফখরুল ওর সঙ্গে!
রুজাইন ভ্রু কুচকে বলল, আমিও তাই ভাবছি।
ওদের দেখে মাইশা পাশে এসে বলল, তোমরা এখানে?
ইধা রাগান্বিত কণ্ঠে বলল, আমায় না বলে কোথায় গিয়েছিস? আমি ভয়ে রুজাইন ভাইকে ফোন দিলাম। আর এই ফখরুল ভাই তোর সঙ্গে কেন?
-আসলে আমরা আমাদের মধ্যকার ঝামেলা মিটিয়ে নিয়েছি। সাথে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
-কী?
-আমরা বিয়ে করব। এবং সেটা কালই।
একথা শুনে বিস্ময় এর শেষ পর্যায়ে চলে গেল ইধা। রুজাইন বলল, মাথা ঠিক আছে তোমার! কাল অবধি এই ছেলেকে তোমার সহ্য হত না। আর আজ হুট করে বিয়ের কথা বলছ!
মাইশাকে কিছু বলতে না দিয়ে ফখরুল বলল, ঝামেলা কোন সম্পর্কে হয় না বলুন! আমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল তা এখন পরিষ্কার৷ এমন ভুল বুঝাবুঝি ভবিষ্যতে যাতে না হয় তাই আরকি বিয়ের সিদ্ধান্ত।
রুজাইন বলল, পরিবারের কাউকে না জানিয়ে এটা করা তোমাদের উচিত হবে না।
-ভাই! নিজে কী প্রেমে পড়েছেন! প্রেমে পড়লে উচিত অনুচিত বোঝার ক্ষমতা লোপ পায়। দু’জন দু’জনের কাছাকাছি থাকতে ইচ্ছে হয় কেবল।
-তবে বাসায় জানান?
-আমি স্টুডেন্ট এখনো। না মানবে ওর পরিবার না মানবে আমার পরিবার! আর আপনি বরং আমাদের চিন্তা বাদ দিন। আমরা নিজেরাই আমাদেরটা বুঝে নেব।
রুজাইন আর কিছু বলল না। ইধা তাড়া দিলে মাইশাও বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। রুজাইন ওকে ইশারা দিয়ে বোঝায়, মাইশার দূর্বলতা কিসের তা জেনে নেওয়ার। রুজাইন আছে ওদের পাশে।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে দুই বান্ধবী খেতে বসলো। চুপচাপ ভাত সামনে নিয়ে বসে আছে মাইশা। ইধা খেলেও ও খাচ্ছে না। গলা দিয়ে যেন খাবার নামছে না ওর। শুধু নাড়াচাড়া করে সময় পার করছে। ইধা বলল, এতবড়ো একটা সিদ্ধান্ত আমায় না জানিয়ে হুট করেই নিলি?
মাইশা কাঁপা কণ্ঠে বলল, নিতে হলো। ফখরুল ওভাবে ক্ষমা চাইলো! না করতে পারিনি।
-তবে তোর খুশি হওয়ার কথা। দু:খে খাওয়া ভুলে গেছিস কেন?
জবাব দিলো না মাইশা। ইধাও কিছু না বলে খাওয়াটা শেষ করলো।
খাওয়া শেষে বারান্দায় থাকা দোলনাতে এসে বসে মাইশা। ইধা এসে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ। সেদিকে খেয়াল নেই মাইশার। মনমরা হয়ে বসে আছে ও৷
ইধা বলল, আন্টি এসব জানলে কত কষ্ট পাবে জানিস?
এইবার উঠে দাঁড়ায় মাইশা। ও কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল, ফখরুল আমায় ভয় দেখাচ্ছে। ওর সাথে আমার কিছু ছবি ছিল। ওসব দিয়েই।
-ঘনিষ্ঠ ছবি?
-আমাদের মধ্যে ওমন কিছু হয়নি। তবে টুকটাক এই আরকি।
-কাছাকাছি, কিস করা ওমন?
-হ্যাঁ।
ইধা মাথায় হাত দিয়ে বলল, তুই এসব কিভাবে করলি! বিয়ের আগেই ওমন কাছাকাছি গিয়ে ছবি তোলাটা দরকার ছিল?
-ভুল হয়ে গেছে আমার। জীবনটা নরক হতে যাচ্ছে।
-আর কী বলেছে ফখরুল?
-বলেছে আমায় বিয়ে করে ভালোবাসার বদলে টর্চার করবে। ওকে ছোটো করার প্রতিশোধ নেবে। আমি কী করব এখন!
কান্নায় ভেঙে পড়ে মাইশা। ইধা বলল, রুজাইনের সাহায্য প্রয়োজন।
-কিন্তু ফখরুল কিছু টের পেলে ওসব ছবি পাবলিক করে দেবে।
-এইজন্য ওর মতো ছেলেকে বিয়ে করবি তুই! দেখ ফখরুলের জীবনে অন্য কেউ আসলে হয়তো ওর সঙ্গে এমন আচরণ ও করবে না। কিন্তু তোর সঙ্গে ও কখনোই স্বাভাবিক হতে পারবে না। যেহেতু তোর সঙ্গে এমন ব্যবহারেই ও অভ্যস্ত। সব জেনে নিজের জীবনটাকে কেন উলোটপালোট করবি তুই!
-তবে?
-কোনো উপায় আমি বের করছি। তুই ওত চিন্তা করিস না।
ফখরুলের ফোন আসে। ইধা তা দেখে বলল, ওর সঙ্গে নরমাল কথাবার্তা বল। বিয়েটা করতে চাস না বুঝতে দিবি না একদমই।
-আচ্ছা।
ইধা রুজাইনকে ফোন করে৷ এসব জানায়। রুজাইন বলল, আমাদের অবশ্যই পুলিশের সাহায্য নিতে হবে। আমার কাজিন সদ্য পুলিশে জয়েন হয়েছে। ওর টিমের সাহায্য নেব আমরা।
-প্লিজ আপনার সাহায্য ছাড়া কিছুই সম্ভব না। আপনি ব্যবস্থা করুন। যত টাকা লাগে দেব আমি।
-ওসব নিয়ে ভাববেন না। আমি আছি তো!
এই কথাতে ভরসা পায় ইধা। মাইশাকেও ভরসা দেয়, সব ঠিক হয়ে যাবে এই বলে!
রাত হয়। ঘুম নেই মাইশার চোখে। ইধা এতক্ষণ ওকে শান্তনা দিচ্ছিলো। ইধা ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু ঘুম নেই মাইশার চোখে। অস্থির হয়ে আছে ওর মনটা। রুজাইন সাহায্য করবে জানিয়েছিল। কিন্তু আদৌ ও ফখরুলের হাত থেকে রেহাই পাবে তো!
মাইশা শোয়া থেকে উঠে পড়ে। পা টিপে টিপে ধীরে হেঁটে মা এর রুমে আসে ও। ওর মা ঘুমে আচ্ছন্ন। মাইশা তার পা এর নিচে এসে বসে। দু-চোখ বেয়ে পানি পড়ছে ওর। মা এর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আপনমনে বলল, জানিনা কাল কী হবে আম্মু! যদি বেঁচে যাই; এমন ভুল আর কখনো করব না। তোমার মেয়ে হয়ে এটা আমি কীভাবে করলাম! ক্ষমা করে দিও আম্মু!
কথানুযায়ী ইধাকে নিয়ে বহদ্দারহাট কাজি অফিসের সামনে চলে আসে মাইশা। অপেক্ষা করে ফখরুলের। খানিকবাদেই ফখরুল ওর কয়েকজন বন্ধু নিয়ে ওদের পাশে আসে। মাইশাকে কলেজের পোশাকে দেখে ফখরুল বলল,
একটা লাল শাড়ি পরতে বিয়ের দিনে!
ইধা একগাল হেসে ব্যঙ্গ সুরে বলল, শাড়িটা পাঠাতেন আপনি ভাই!
-বাসা থেকে শাড়ি পরে বেরুবে কিভাবে! এই ভেবে পাঠাইনি।
-বুঝেছেন যখন আবার জিজ্ঞাসা করছেন কেন!
ইধার সঙ্গে কথা না বাড়িয়ে মাইশার হাত ধরে ফখরুল৷ বলল, চলো বিয়েটা সেরে নিই। সাক্ষী সবাই হাজির।
পেছন থেকে রুজাইন বলল, আমরাও হাজির।
পেছনে ফিরে রুজাইন সহ পুলিশ টিমকে দেখে ফখরুলের অন্যান্য বন্ধুরা ছুটে চলে যায়। তাদের বাঁধা দেয় না পুলিশ। ফখরুলকে আটক করা হয়।
ওকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেয় না। এরপর সবাই পুলিশের গাড়িতে করে থানায় আসে।
রুজাইনের চাচাতো ভাই পুলিশ। ওর নাম সাদ্দাম। মাইশার কাছে ফখরুলের ব্যাপারে কথাবার্তা শুরু করে। এদিকে রুজাইন আড়চোখে ইধাকে দেখায়। আগেই ইধাকে পছন্দের কথা সাদ্দামকে জানায় ও। সাদ্দাম মাইশার কাছে ফখরুলের ব্যাপারে সব জানে। এরপর ফখরুলকে মারধর শুরু করে। ফখরুলের কাছ থেকে মাইশার সমস্ত ছবি, মেসেজ ডিলিট করা হয়।
এইবার ওকে দিয়ে একটা কাগজে সাক্ষর করা হয়। তাতে লেখা ছিল, মাইশার দিকে ফিরেও তাকাবেনা ও। মাইশাও আর কোনো অভিযোগ দেয়নি। ছেড়ে দিতে বলে ফখরুলকে। এবং দূরে থাকতে বলে ওর থেকে। সাদ্দামও তাই করে। ফখরুল চলে গেলে মাইশা খুশিতে জড়িয়ে ধরে ইধাকে৷ ও কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি বেঁচে গেলাম বান্ধবী!
ওদের দিকে সাদ্দামকে তাকিয়ে থাকতে দেখে পাশে আসে রুজাইন। ও বলল, ওদিকে কী দেখছ ভাইয়া? ইধা কিন্তু আমার। আগেই জানিয়েছি।
-চুপ কর ব্যাটা! বড়ো ভাই এর সঙ্গে এভাবে কথা বলে!
-বড়ো বলেই ভয়! তুমি প্রপোজ করলে রাজি হয়ে যাবে। আমি কেবল স্টুডেন্ট।
-মাইশা রাজি হবে?
-মানে?
-মাইশাকে মনে ধরেছে। মা ও বিয়ের জন্য প্যানপ্যান করছে। আসলে মাইশাকে আরও আগে থেকেই দেখছি। কিন্তু সেভাবে ওকে নিয়ে ভাবিনি৷ আজ কেন জানি মায়া হচ্ছে ওর জন্যে৷ কত বড়ো বিপদে পড়তে পারতো মেয়েটা!
সাদ্দামের কথা শুনে রুজাইন বলল, আমি নিজের কানে শুনেও বিশ্বাস করতে পারছি না যে তুমিও প্রেমে পড়েছ!
-কেন! প্রেম বুঝি তোর জন্যেই এসেছে শুধু!
-তা নয়!
-তবে?
-মাইশাকে পছন্দ করো আর আমি একটুও বুঝলাম না!
-আমি নিজেই কনফিউশানে ছিলাম এই বিষয়ে। আসলেই এটা ভালোলাগা নাকি মোহ!
-এখন কী বুঝলে?
-আসলেই ভালোলাগা।
-কীভাবে বুঝলে?
-এই যে আজ মাইশা বিপদে পড়লো, ওকে উদ্ধার করতে পেরে কতটা শান্তি পাচ্ছি আমি! ওই বখাটের পাল্লায় পড়ে ওর জীবনটা নষ্ট হত ভেবেই বুক ধড়ফড় করছে। এটা কেবল প্রিয় মানুষের জন্য হয়। বুঝলি?
হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নাড়ে রুজাইন। আর ভাবে, ইধার প্রতি ওর কী কাজ করে! ভালোবাসা নাকি মোহ?
.
চলবে