#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_৮
#Saji_Afroz
-কী বলিস! ওই ফালতু ছেলের ঘরে আমি যাব? একদমই না। না খেয়ে টাকার জন্য মরব তবুও আত্মসম্মান বিসর্জন দেব না।
ইধার কথা শুনে মাইশা বলল, এমন উত্তর আশা করছিলাম তোর কাছে।
-ওর কথা তুই আমাকে বললিও কেন!
-অফার দিয়েছে এটা জানালাম। তোর লাইফ সিদ্ধান্ত তুই নিবি।
-তুইও নিবি। আমার এই নিউ লাইফটা তোর জন্যই। তোর যেটা খারাপ মনেহবে আমার জন্য সেটা না করবি।
মাইশা ইধাকে জড়িয়ে ধরে বলল, এত অধিকার দিচ্ছিস আমায়?
-তুই আমার জীবনে কতটা জুড়ে আছিস জানিস না।
-কতটা?
-পুরোটা।
ইধাকে ছেড়ে মাইশা বলল, থাম থাম! ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছি। কেঁদেই ফেলব আবার!
মাইশার ফোন বেজে উঠে। সাদ্দামের ফোনকল দেখে রিসিভ করলো ও। সাদ্দাম ওপাশ থেকে সালাম জানিয়ে হালচাল জিজ্ঞাসা করে মাইশার। মাইশা ভালো আছে জানায়। কথার এক পর্যায়ে সাদ্দাম নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত করে মাইশা ও ইধাকে। রুজাইনের সঙ্গে তাদের রেস্টুরেন্টে আসতে বলে।
মাইশা একটু ভেবে বলল, জন্মদিনের অগ্রীম শুভেচ্ছা। তবে আসতে পারব কি-না জানি না।
-কেন?
-আমরা আসলে ওভাবে বাসা থেকে বেরুই না। আম্মুকে কী বলব! এই আরকি।
-কলেজে যাচ্ছেন বলবেন। ওই সময়েই আয়োজন হবে।
-পুলিশ সাহেব মিথ্যে শিখিয়ে দিচ্ছেন?
-আপনার জন্যই এই আয়োজন।
-মানে?
-না মানে আপনাদের জন্যই আয়োজন। আসলে ভালো লাগবে। প্লিজ না করবেন না!
-আচ্ছা চেষ্টা করব।
-চেষ্টা নয়। বলুন আসবেন?
সাদ্দামের জোরাজোরিতে না বলতে পারলো না মাইশা। হ্যাঁ বলার পরেই ফোন রাখে সাদ্দাম। এসব কথা ইধাকে জানালে ও বলল, কলেজ ফাঁকি দিয়ে এখন তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যেতে হবে?
-বেশিক্ষণের ব্যাপার না। কী করব বল! একেবারেই নাছোড়বান্দা।
মুচকি হেসে ইধা বলল, কেমন যেন সুভাষ পাচ্ছি।
-কীসের?
-প্রেমের!
-কীসব বলিস না! আর কখনোই এসব আমি করব না। দাওয়াত দিলেই এসব ভাবতেই হবে! ধুর ধুর ধুর!
এই বলে বকবক করে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায় মাইশা। ইধা আপনমনে বলল, যা সন্দেহ করছি তা হলে মন্দ হয় না! ভালোই মানাবে দু’জনকে।
আজ আতিয়াতকে পড়ানোর সময় কাজের বুয়া নুডলস এনে দেয় ইধাকে। ইধা বাটি হাতে নিয়ে চামচ দিয়ে নেড়েচেড়ে বাটিটা রেখে দেয় আবার। কিছুক্ষণ পর বুয়া চা নিয়ে আসলে ভরা বাটি দেখে বলল, খেলেন না এখনো! ঠান্ডা হয়ে গেল। আমি গরম করে আনি।
ইধা নরমস্বরে বলল, তার প্রয়োজন নেই। আমাকে নাস্তা দিতে হবে না।
-সে কী! আশা আপা জানলে রাগ করবেন।
-আমিই বলেছি বলবেন। শুধু শরবত, চা, কফি আর থাকলে দুধ দিলেও হবে। তবে প্লিজ নাস্তা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
-কিন্তু কেন? গরুর মাংস দিয়ে করেছি নুডলসটা। একবার খেয়ে দেখতেন?
-আসলে নাস্তা করে রাতে আর ভাত খেতে পারি না। এইজন্য এই সময়ে কিছু খেতে চাচ্ছি না।
বুয়া বাটি নিয়ে যায়। রুজাইন ওপাশ থেকে সব শুনে ভাবলো, এখন থেকে টাটকা গরুর দুধ বাসায় এনে রাখতে হবে ইধার জন্য।
আজ ইধা ও মাইশার ক্লাস নেই। দু’জনে বাসায় রয়েছে। সপ্তাহে চারদিন ক্লাস থাকে ওদের। ছুটির দিনে বাসার রান্না ওরাই করে। ইধা-ই মরিয়ম জান্নাতকে এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মাইশা ভালোভাবে রান্না শিখতে পারবে এই ভেবে তিনিও রাজি হোন।
আজ ইধা ডিম দিয়ে লাউ ভাজি ও ডাল রান্না করেছে। রুই মাছ রান্না করবে এখন। মাইশা এসে জোরাজোরি করে রুই মাছ রান্নার দায়িত্ব নেয়। ইধাকে আরাম করতে পাঠিয়ে ও রান্না বসায়৷ রান্না শেষে দেখলো লবণের পরিমাণ বাড়তি হয়েছে৷ মুখটা ফ্যাকাসে করে দাঁড়িয়ে রইলো ও৷
রান্না কতটুক হয়েছে তা দেখতে আসে ইধা। মাইশার এমন চাহনি দেখে বলল, লবণ বেশি হয়েছে?
-হু।
-এইজন্যই তোকে বলি লবণের পরিমাণ প্রথমেই অল্প দিবি৷ পরে লবণ দেওয়া যায়৷ এত তাড়াহুড়ো তোর!
-তোর বকা পরে শুনব। আগে লবণ কমাই।
-ও হ্যালো! আবারও কী পানি মিশিয়ে দিবি নাকি!
-ধুর! আমায় এত বোকা মনেহয় তোর? তরকারিতে লবণ বেশি হলে আলু কেটে দিতে হয় আমি জানি।
-আর বাসায় যদি আলু না থাকে?
একথা শুনে সুর টেনে মাইশা বলল, আলু……
আলুই তো নাই!
-সেটাই। এখন?
-তবে কী পানিই মিশিয়ে দেব?
-সর৷ আমি করছি যা করার।
-কী করবি?
-পেয়াজ কুচি করে তেলে ভেজে নেব। এরপর তরকারির সঙ্গে মিশিয়ে দেব।
-এভাবেও লবণের পরিমাণ কমে?
-হু।
-আচ্ছা কর যা করার। লবণ কমতে হবে৷ আমি আসি।
-কোথায় যাবি?
-স্টুডেন্ট একটা সকালে পড়বে বলল না? বিকালে বাসায় থাকবে না। পড়িয়ে আসি।
-আচ্ছা যা।
মাইশা বের হয়। ইধা তরকারি ঠিকঠাক করে রুমে ফিরে আসে।
ও ভাবলো গোসলটা সেরে নেওয়া যাক মাইশা ও মিলি আসার আগেই। ইধা ওয়াশরুমে আসে গোসল সেরে নিতে। কল থেকে বেশ কয়েকদিন যাবত ফোটা ফোটা পানি পড়ছে। দারোয়ানকে জানানো হয়েছে এই সমস্যা কথা। কিন্তু এখনো কোনো সমাধান করেনি। এভাবে পানির অপচয় হচ্ছে। এই ভেবে ইধা পানির কল শক্ত করে বন্ধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভুলবশত কলটা ভেঙে পড়ে যায়৷ অনবরত পানি পড়তে থাকে ফাঁকা জায়গা থেকে। ইধা খুব কাছে থাকায় পানি এসে পড়ে ওর শরীরে। ও ঘাবড়ে যায়৷ তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমের বাইরে আসে ও। শরীরে আরেকটা ওড়না প্যাচিয়ে দরজা খুলে পা বাড়ায় নিচের দিকে। কিছুদূর আসতেই রুজাইনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে ওর৷ ইধা পড়েই যেত যদি না রুজাইন ওকে ধরতে অক্ষম হত। রুজাইন ওকে দাঁড়াতে সাহায্য করে বলল, ঠিক আছেন আপনি? এভাবে ছুটে যাচ্ছেন কোথায়?
-দারোয়ানকে বলেছিলাম কলের সমস্যার কথা। এখন পানি বন্ধ করতে গিয়ে কলটাই পড়ে গেছে। পানি অনবরত পড়ছে। এইজন্য যাচ্ছিলাম দারোয়ানের কাছে।
-চলুন আমি দেখছি।
-আপনি কষ্ট করবেন!
-আমারও দায়িত্ব আছে নিজের বাড়ির ও বাড়ির লোকদের প্রতি। চলুন!
রুজাইন এসে দেখলো কলটা ভেঙে গেছে। তাই ও মিস্ত্রিকে ফোনকল দিয়ে আসতে বলে।
এদিকে ইধাকে ওড়না প্যাচিয়ে থাকতে দেখে বলল, এভাবে ওড়না জড়িয়ে আছেন কেন?
-ভিজে গেছিলাম।
-চেইঞ্জ করে আসুন।
ইধা অন্য ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। ওর কপালে চিন্তার ভাজ দেখে রুজাইন বলল, কী ভাবছেন?
-আমি কলটা ভেঙে ফেললাম। আপনার আম্মু জানলে নিশ্চয় রাগ করবেন আর জরিমানাও নেবেন!
-আম্মু জানলেই তো!
-মানে?
-জানবে না। আপনি চিন্তামুক্ত থাকুন।
মিস্ত্রি এসে কল ঠিক করে দেয়। রুজাইন ওকে টাকা দেয়। মিস্ত্রি চলে গেলে ইধা বলল, কত টাকা দিলেন?
-কেন?
-বারেহ! আমি নষ্ট করলাম, টাকা আমায় দিতে হবে না?
-আপনি জানিয়েছেন। ঠিক করতে দারোয়ান দেরী করলো। ভুল ইচ্ছেকৃত হয়নি।
-তবুও…
-চা হবে?
ইধা অবাক হয়ে তাকালে রুজাইন বলল, আসলে বাসার সবাই শপিং এ গেছে। চা খেতে ইচ্ছে হলো! বানাতে পারি না। নিচে যেতেও ইচ্ছে করছে না।
-নিশ্চয়! প্লিজ বসুন।
চা খেতে চাওয়া মানে ইধার পাশে আরেকটু থাকা। এভাবে একটু একটু করে ওর কাছে এসে একসময় পুরোটা সময় ওর কাছে থাকবে রুজাইন। ভাবতেই মুখে হাসি ফোটে ওর।
ইধা চা বানিয়ে আনে। সাথে বিস্কুট ও চানাচুর আনে। রুজাইন বলল, এসবের কী প্রয়োজন ছিল?
-তেমন কিছু আর করলাম কই! আসলে হুট করে আসলেন…
ওকে থামিয়ে রুজাইন বলল, প্লিজ লজ্জা দেবেন না। শুধু চা চেয়েছি।
চা এ চুমুক দিয়ে রুজাইন বলল, বাহ! অনেক ভালো চা বানান আপনি!
-সবাই বলে।
-তার মানে অন্য রান্নাও বেশ ভালো আপনার?
-সবাই সেটাও বলে।
-খাওয়াতে হবে একদিন।
-নিশ্চয় খাওয়াব।
আলিমের বোনকে ইধা পড়াতে পারবে না শুনে ভ্রু কুচকায় আলিম। ও মাইশাকে বলল, কেন? সে তো আর তোমার মতো টানা টিউশনি করায় না।
-করায় সেও। আর ওর পড়ার চাপ বেশি। আমি অন্য কাউকে ঠিক করে দেব?
-না, যাও তুমি।
মাইশা বাসার দিকে রওনা হয়। আলিম আপনমনে বলল, এই সুযোগটাও হাত ছাড়া হলো। কীভাবে কাছাকাছি যাব ইধার! দেখাই তো পাই না ওর।
.
চলবে#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_৮
#Saji_Afroz
-কী বলিস! ওই ফালতু ছেলের ঘরে আমি যাব? একদমই না। না খেয়ে টাকার জন্য মরব তবুও আত্মসম্মান বিসর্জন দেব না।
ইধার কথা শুনে মাইশা বলল, এমন উত্তর আশা করছিলাম তোর কাছে।
-ওর কথা তুই আমাকে বললিও কেন!
-অফার দিয়েছে এটা জানালাম। তোর লাইফ সিদ্ধান্ত তুই নিবি।
-তুইও নিবি। আমার এই নিউ লাইফটা তোর জন্যই। তোর যেটা খারাপ মনেহবে আমার জন্য সেটা না করবি।
মাইশা ইধাকে জড়িয়ে ধরে বলল, এত অধিকার দিচ্ছিস আমায়?
-তুই আমার জীবনে কতটা জুড়ে আছিস জানিস না।
-কতটা?
-পুরোটা।
ইধাকে ছেড়ে মাইশা বলল, থাম থাম! ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছি। কেঁদেই ফেলব আবার!
মাইশার ফোন বেজে উঠে। সাদ্দামের ফোনকল দেখে রিসিভ করলো ও। সাদ্দাম ওপাশ থেকে সালাম জানিয়ে হালচাল জিজ্ঞাসা করে মাইশার। মাইশা ভালো আছে জানায়। কথার এক পর্যায়ে সাদ্দাম নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত করে মাইশা ও ইধাকে। রুজাইনের সঙ্গে তাদের রেস্টুরেন্টে আসতে বলে।
মাইশা একটু ভেবে বলল, জন্মদিনের অগ্রীম শুভেচ্ছা। তবে আসতে পারব কি-না জানি না।
-কেন?
-আমরা আসলে ওভাবে বাসা থেকে বেরুই না। আম্মুকে কী বলব! এই আরকি।
-কলেজে যাচ্ছেন বলবেন। ওই সময়েই আয়োজন হবে।
-পুলিশ সাহেব মিথ্যে শিখিয়ে দিচ্ছেন?
-আপনার জন্যই এই আয়োজন।
-মানে?
-না মানে আপনাদের জন্যই আয়োজন। আসলে ভালো লাগবে। প্লিজ না করবেন না!
-আচ্ছা চেষ্টা করব।
-চেষ্টা নয়। বলুন আসবেন?
সাদ্দামের জোরাজোরিতে না বলতে পারলো না মাইশা। হ্যাঁ বলার পরেই ফোন রাখে সাদ্দাম। এসব কথা ইধাকে জানালে ও বলল, কলেজ ফাঁকি দিয়ে এখন তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যেতে হবে?
-বেশিক্ষণের ব্যাপার না। কী করব বল! একেবারেই নাছোড়বান্দা।
মুচকি হেসে ইধা বলল, কেমন যেন সুভাষ পাচ্ছি।
-কীসের?
-প্রেমের!
-কীসব বলিস না! আর কখনোই এসব আমি করব না। দাওয়াত দিলেই এসব ভাবতেই হবে! ধুর ধুর ধুর!
এই বলে বকবক করে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায় মাইশা। ইধা আপনমনে বলল, যা সন্দেহ করছি তা হলে মন্দ হয় না! ভালোই মানাবে দু’জনকে।
আজ আতিয়াতকে পড়ানোর সময় কাজের বুয়া নুডলস এনে দেয় ইধাকে। ইধা বাটি হাতে নিয়ে চামচ দিয়ে নেড়েচেড়ে বাটিটা রেখে দেয় আবার। কিছুক্ষণ পর বুয়া চা নিয়ে আসলে ভরা বাটি দেখে বলল, খেলেন না এখনো! ঠান্ডা হয়ে গেল। আমি গরম করে আনি।
ইধা নরমস্বরে বলল, তার প্রয়োজন নেই। আমাকে নাস্তা দিতে হবে না।
-সে কী! আশা আপা জানলে রাগ করবেন।
-আমিই বলেছি বলবেন। শুধু শরবত, চা, কফি আর থাকলে দুধ দিলেও হবে। তবে প্লিজ নাস্তা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
-কিন্তু কেন? গরুর মাংস দিয়ে করেছি নুডলসটা। একবার খেয়ে দেখতেন?
-আসলে নাস্তা করে রাতে আর ভাত খেতে পারি না। এইজন্য এই সময়ে কিছু খেতে চাচ্ছি না।
বুয়া বাটি নিয়ে যায়। রুজাইন ওপাশ থেকে সব শুনে ভাবলো, এখন থেকে টাটকা গরুর দুধ বাসায় এনে রাখতে হবে ইধার জন্য।
আজ ইধা ও মাইশার ক্লাস নেই। দু’জনে বাসায় রয়েছে। সপ্তাহে চারদিন ক্লাস থাকে ওদের। ছুটির দিনে বাসার রান্না ওরাই করে। ইধা-ই মরিয়ম জান্নাতকে এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মাইশা ভালোভাবে রান্না শিখতে পারবে এই ভেবে তিনিও রাজি হোন।
আজ ইধা ডিম দিয়ে লাউ ভাজি ও ডাল রান্না করেছে। রুই মাছ রান্না করবে এখন। মাইশা এসে জোরাজোরি করে রুই মাছ রান্নার দায়িত্ব নেয়। ইধাকে আরাম করতে পাঠিয়ে ও রান্না বসায়৷ রান্না শেষে দেখলো লবণের পরিমাণ বাড়তি হয়েছে৷ মুখটা ফ্যাকাসে করে দাঁড়িয়ে রইলো ও৷
রান্না কতটুক হয়েছে তা দেখতে আসে ইধা। মাইশার এমন চাহনি দেখে বলল, লবণ বেশি হয়েছে?
-হু।
-এইজন্যই তোকে বলি লবণের পরিমাণ প্রথমেই অল্প দিবি৷ পরে লবণ দেওয়া যায়৷ এত তাড়াহুড়ো তোর!
-তোর বকা পরে শুনব। আগে লবণ কমাই।
-ও হ্যালো! আবারও কী পানি মিশিয়ে দিবি নাকি!
-ধুর! আমায় এত বোকা মনেহয় তোর? তরকারিতে লবণ বেশি হলে আলু কেটে দিতে হয় আমি জানি।
-আর বাসায় যদি আলু না থাকে?
একথা শুনে সুর টেনে মাইশা বলল, আলু……
আলুই তো নাই!
-সেটাই। এখন?
-তবে কী পানিই মিশিয়ে দেব?
-সর৷ আমি করছি যা করার।
-কী করবি?
-পেয়াজ কুচি করে তেলে ভেজে নেব। এরপর তরকারির সঙ্গে মিশিয়ে দেব।
-এভাবেও লবণের পরিমাণ কমে?
-হু।
-আচ্ছা কর যা করার। লবণ কমতে হবে৷ আমি আসি।
-কোথায় যাবি?
-স্টুডেন্ট একটা সকালে পড়বে বলল না? বিকালে বাসায় থাকবে না। পড়িয়ে আসি।
-আচ্ছা যা।
মাইশা বের হয়। ইধা তরকারি ঠিকঠাক করে রুমে ফিরে আসে।
ও ভাবলো গোসলটা সেরে নেওয়া যাক মাইশা ও মিলি আসার আগেই। ইধা ওয়াশরুমে আসে গোসল সেরে নিতে। কল থেকে বেশ কয়েকদিন যাবত ফোটা ফোটা পানি পড়ছে। দারোয়ানকে জানানো হয়েছে এই সমস্যা কথা। কিন্তু এখনো কোনো সমাধান করেনি। এভাবে পানির অপচয় হচ্ছে। এই ভেবে ইধা পানির কল শক্ত করে বন্ধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভুলবশত কলটা ভেঙে পড়ে যায়৷ অনবরত পানি পড়তে থাকে ফাঁকা জায়গা থেকে। ইধা খুব কাছে থাকায় পানি এসে পড়ে ওর শরীরে। ও ঘাবড়ে যায়৷ তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমের বাইরে আসে ও। শরীরে আরেকটা ওড়না প্যাচিয়ে দরজা খুলে পা বাড়ায় নিচের দিকে। কিছুদূর আসতেই রুজাইনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে ওর৷ ইধা পড়েই যেত যদি না রুজাইন ওকে ধরতে অক্ষম হত। রুজাইন ওকে দাঁড়াতে সাহায্য করে বলল, ঠিক আছেন আপনি? এভাবে ছুটে যাচ্ছেন কোথায়?
-দারোয়ানকে বলেছিলাম কলের সমস্যার কথা। এখন পানি বন্ধ করতে গিয়ে কলটাই পড়ে গেছে। পানি অনবরত পড়ছে। এইজন্য যাচ্ছিলাম দারোয়ানের কাছে।
-চলুন আমি দেখছি।
-আপনি কষ্ট করবেন!
-আমারও দায়িত্ব আছে নিজের বাড়ির ও বাড়ির লোকদের প্রতি। চলুন!
রুজাইন এসে দেখলো কলটা ভেঙে গেছে। তাই ও মিস্ত্রিকে ফোনকল দিয়ে আসতে বলে।
এদিকে ইধাকে ওড়না প্যাচিয়ে থাকতে দেখে বলল, এভাবে ওড়না জড়িয়ে আছেন কেন?
-ভিজে গেছিলাম।
-চেইঞ্জ করে আসুন।
ইধা অন্য ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। ওর কপালে চিন্তার ভাজ দেখে রুজাইন বলল, কী ভাবছেন?
-আমি কলটা ভেঙে ফেললাম। আপনার আম্মু জানলে নিশ্চয় রাগ করবেন আর জরিমানাও নেবেন!
-আম্মু জানলেই তো!
-মানে?
-জানবে না। আপনি চিন্তামুক্ত থাকুন।
মিস্ত্রি এসে কল ঠিক করে দেয়। রুজাইন ওকে টাকা দেয়। মিস্ত্রি চলে গেলে ইধা বলল, কত টাকা দিলেন?
-কেন?
-বারেহ! আমি নষ্ট করলাম, টাকা আমায় দিতে হবে না?
-আপনি জানিয়েছেন। ঠিক করতে দারোয়ান দেরী করলো। ভুল ইচ্ছেকৃত হয়নি।
-তবুও…
-চা হবে?
ইধা অবাক হয়ে তাকালে রুজাইন বলল, আসলে বাসার সবাই শপিং এ গেছে। চা খেতে ইচ্ছে হলো! বানাতে পারি না। নিচে যেতেও ইচ্ছে করছে না।
-নিশ্চয়! প্লিজ বসুন।
চা খেতে চাওয়া মানে ইধার পাশে আরেকটু থাকা। এভাবে একটু একটু করে ওর কাছে এসে একসময় পুরোটা সময় ওর কাছে থাকবে রুজাইন। ভাবতেই মুখে হাসি ফোটে ওর।
ইধা চা বানিয়ে আনে। সাথে বিস্কুট ও চানাচুর আনে। রুজাইন বলল, এসবের কী প্রয়োজন ছিল?
-তেমন কিছু আর করলাম কই! আসলে হুট করে আসলেন…
ওকে থামিয়ে রুজাইন বলল, প্লিজ লজ্জা দেবেন না। শুধু চা চেয়েছি।
চা এ চুমুক দিয়ে রুজাইন বলল, বাহ! অনেক ভালো চা বানান আপনি!
-সবাই বলে।
-তার মানে অন্য রান্নাও বেশ ভালো আপনার?
-সবাই সেটাও বলে।
-খাওয়াতে হবে একদিন।
-নিশ্চয় খাওয়াব।
আলিমের বোনকে ইধা পড়াতে পারবে না শুনে ভ্রু কুচকায় আলিম। ও মাইশাকে বলল, কেন? সে তো আর তোমার মতো টানা টিউশনি করায় না।
-করায় সেও। আর ওর পড়ার চাপ বেশি। আমি অন্য কাউকে ঠিক করে দেব?
-না, যাও তুমি।
মাইশা বাসার দিকে রওনা হয়। আলিম আপনমনে বলল, এই সুযোগটাও হাত ছাড়া হলো। কীভাবে কাছাকাছি যাব ইধার! দেখাই তো পাই না ওর।
.
চলবে