প্রার্থনায় রবে তুমি পর্ব-০৯

0
360

#প্রার্থনায়_রবে_তুমি
#পর্ব_৯
#Saji_Afroz

সাদ্দামের জন্মদিন উপলক্ষে রেস্টুরেন্টে এসেছে মাইশা ও ইধা। চকবাজারের একটা রেস্টুরেন্টে ওদের আসতে বলা হয়। কলেজের পাশে হওয়াতে আসতে ওদের অসুবিধা হয়নি।
মাইশা ও ইধা সাদ্দামের জন্য হাত ঘড়ি ও একটি পাঞ্জাবি কিনে নেয়। ওরা রুজাইনের জন্যও একই উপহার কিনে। যদিও জন্মদিন সাদ্দামের। কিন্তু ওদের রুজাইন অনেকটা সাহায্য করেছে। তাই ওর জন্যও উপহার নিলো।
মতি টাওয়ার থেকে উপহার কিনে ওরা রেস্তোরাঁয় চলে আসে। আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, ওরা যেমন ভেবেছে তেমন কিছুই নেই। জন্মদিন উপলক্ষে কোনো আয়োজন নেই। নেই কোনো মানুষজন। সচারাচর রেস্তোরাঁ যেমন সাধারণ মানুষে পরিপূর্ণ থাকে তেমনি এখানকার পরিবেশ। রুজাইন ও সাদ্দাম কেবল একপাশের টেবিলে সামনাসামনি বসে রয়েছে। ওরা রুজাইনদের পাশে আসে। ওদের দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে সাদ্দাম। হালচাল জিজ্ঞাসা করে বসতে বলে ওদের। রুজাইন সাদ্দামের পাশে গিয়ে বসে। দুই বান্ধবী পাশাপাশি বসে উপহার সামগ্রী এগিয়ে দেয় দু’জনের দিকে।
সাদ্দাম বলল, এসবের কী প্রয়োজন ছিল!

রুজাইন বলল, ভাইয়ার নাহয় জন্মদিন! আমার জন্য কেন?

মাইশা বলল, বোন হিসেবে দিলাম ভাবুন।
ইধা কিছু বলতে যাবে তখনি রুজাইন বলল, ধন্যবাদ তোমাদের।

ইধাও যদি নিজেকে রুজাইনের বোন বলে এই ভয়েই ওকে এখন কিছু বলতে দিলো না।

সাদ্দাম বলল, কী খাবে তোমরা?

মাইশা আশেপাশে তাকিয়ে বলল, আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না?
-আর কাউকে বলা হয়নি।

মাইশা অবাক হয়ে বলল, মানে?
-তোমাদের নিয়ে গল্প করব, কাচ্চি খাব এটাই প্ল্যান। খাও তো কাচ্চি?
-তা খাই। তবে আমাদের জন্য কেন শুধু শুধু…
ওকে থামিয়ে সাদ্দাম বলল, শুধু শুধু নয়। কারণ আছে।
-কী?
-বলব। আগে খেয়ে নিই।

ইধা যেন সবটা বুঝতে পারছে। তাই ও মৃদু হাসছে।
কাচ্চি খাওয়ার পরে সাদ্দামের জন্য আনা কেকটা টেবিলের নিচ থেকে বের করে রুজাইন। আগেই ও এসে লুকিয়ে রেখেছিল।
সাদ্দাম তা দেখে হেসে বলল, আমি কী বাচ্চা এখনো!
-বড়োদের কেক কাটা বারণ নাকি?

ইধা বলল, একদম। আমার তো কেক ফেবারিট।
-তাহলে এনে ভালোই করলাম।

সবাই মিলে কেক কাটে। সাদ্দাম হাতে কেকের টুকরো নিয়ে প্রথমেই মাইশার দিকে এগিয়ে দেয়। মাইশা অবাক হয়ে তাকায়। সাদ্দাম ইশারায় ওকে মুখ খুলতে বলে। মাইশা অল্প একটু খেয়ে সাদ্দামকেও খাইয়ে দেয়। এরপর পুরো কেকটা রুজাইন হাতে নিয়ে বলল, তোমরা কথা বলো। আমরা পাশের টেবিলে আছি।

এই বলে ইধাকে ডেকে ও হাঁটা দেয়। মাইশা বলল, মানে কী?

সাদ্দাম বলল, তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে।

ইধা বুঝতে পেরে হালকা কেশে বলল, হ্যাঁ বলুন কথা। আমিও পাশেই আছি।

এই বলে ইধাও সরে যায়। মাইশাও এইবার কিছুটা হলেও বুঝতে পারছে কী হতে চলেছে।
ও চেয়ার টেনে বসলো। সাদ্দাম বলল, কিছু কথা তোমাকে জানানো খুব প্রয়োজন। নাহলে যে নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমার!

একথা শুনে মাইশা হেসে ফেললো। ও বলল, আমি কিন্তু ডাক্তার নই। শ্বাসকষ্ট হলে ডাক্তার দেখানো উচিত।
-এই রোগ ডাক্তার সারাতে পারবে না। কেবল পারবে তুমি!

এদিকে ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে ইধা। রুজাইন ওর দিকে তাকিয়ে বলল, হাসির রহস্য কী?
-সাদ্দাম ভাই মাইশাকে প্রপোজ করবেন। তাই না?
-বাহ বা! বুঝে গেলেন!
-আগেই বুঝেছি।
-সব বুঝেন না। শুধু ওদেরটা বুঝলেন।
-মানে?

রুজাইন কথা ঘুরিয়ে বলল,
মানে আমি যে আপনার জন্য কেক নিয়ে বসে আছি খেয়াল করেছেন?

ইধা হেসে বলল, আমার জন্য ওখান থেকে এভাবে নিয়ে আসলেন!
-ওরা প্রেম আলাপ করবে। কেক খাওয়ার সময় কই! আমরাই খাই।
-সেটাই। তবে আমি কিন্তু অনেক হ্যাপি মাইশার জন্যে। সাদ্দাম ভাইকে ওর জন্য আমার বেশ পছন্দ।
-আর মাইশার?
-তা আমি জানি না। তবে ও যেন রাজি হয় এটাই কাম্য।

এদিকে সাদ্দাম এখনো মাইশাকে আসল কথাটা বলতে পারেনি। বলার চেষ্টায় রয়েছে।
মাইশা বলল, আমাদের বাসায় যেতে হবে। আম্মু ক্লাসের সময় জানে। ফোনকল দিলে মিথ্যা বলতে হবে।
-ওকে ওকে! বলছি আমি। আসলে মাইশা….
একটু থেমে সাদ্দাম বলল, আমি তোমাকে ভালোবাসি মাইশা।

একথা শুনে কী করবে বুঝে উঠতে না পেরে ওর দিকেই ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রয়েছে মাইশা। সাদ্দাম বলল, আরও আগে থেকেই তোমাকে আমি পছন্দ করি। কিন্তু ভালোবাসি বুঝি সেদিনের ঘটনার পর। ওই ছেলেটা তোমার ক্ষতি করতে চেয়েছিল জানার পর অস্থির হয়ে পড়ি আমি। বুঝতে পারি তোমার কোনো ক্ষতি হোক আমি চাইনা। কারণ তোমাকে আমার করে চাই আমি। প্লিজ আমার হবে তুমি?

সাদ্দামকে নিয়ে এমন কিছু ভাবেনি মাইশা। তাই ও অপ্রস্তুত হয়ে যায়৷ ও আমতাআমতা করে বলল, আমার অতীতের সব জেনেও এসব বলছেন আপনি?
-হু। এসবে আমার কিছু যায় আসে না।
-আমার আর ফখরুলের দুই বছরের সম্পর্ক ছিল।
-সেটা অতীত। বর্তমান আর ভবিষ্যতে আমি তোমার হয়ে থাকতে চাই।

মাইশা একটু থেমে বলল-
আসলে আমি কখনো চাইনি, যে আমার অতীত জানবে তাকেই জীবনসঙ্গী বানাব। এমনটা অনেক দেখেছি, সব মেনে নিয়ে রিলেশনে জড়ায়। কিন্তু পরবর্তীতে এটাই অজুহাত দেখিয়ে সম্পর্ক ভেঙে দেয়।
-আমি মোটেও এমন না!
-ফখরুলও শুরুতে খারাপ ছিল না!
-তুমি ওর সঙ্গে আমাকে মেলাতে পারো না।
-দু:খিত! আসলে এমনভাবে ঠকেছি যে প্রেম ভালোবাসা থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে।

এই বলে মাইশা উঠে পড়ে। ইধার কাছে এসে বলল, চল।

ইধা উঠে বলল, তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?
-সব বলছি। চল।

রুজাইনকে বিদায় জানিয়ে ওরা বের হয়৷ সাদ্দাম রুজাইনের পাশে এসে হতাশ কণ্ঠে বলল, মানলো না।

রুজাইন বলল, ভেঙে পড়লে চলবে না ভাই। আবারও চেষ্টা করতে হবে।
-বলছিস?
-হু।

কলিংবেল বাজতেই দরজা খুলে দেয় রুজাইন। ইধাকে দেখে ভেতরে আসতে বলল ও। ইধা ভেতরে আসে। রুজাইন বলল, বাসায় কেউ নেই। আসলেই হঠাৎ করে আমাদের এক আত্মীয় এর শরীর খারাপ হওয়ার কারণে হাসপাতালে এডমিট করাতে হয়। ওরা ওখানেই গেছে।
-ওহহো! আমায় জানায়নি। নাহলে আসতাম না।
-সময় পায়নি আসলে।
-তবে আমি যাই।

ইধা চলে যেতে চাইলে ওকে থামায় রুজাইন। ইধা পেছনে ফিরে বলল, বলুন?
-তোমার রান্না খাওয়াবে?
-এখন? কী খাবেন বলুন? বানিয়ে আনি।
-এখানেই বানাও।
-মানে?
-চাউমিন বানাতে পারো? ইচ্ছে করছে খেতে। আমার বাসায়ই বানাও।
-পারি। বাসায় মাংস, ডিম এসব আছে?
-মুরগির মাংস আজ রান্না হয়েছে জানি। ডিম ফ্রিজে থাকার কথা।
-চলবে।

ইধা রান্নাঘরে আসে। রুজাইনও এসে বলল, কষ্টে ফেলে দিলাম!
-উহু! রান্না করতে আমার ভালো লাগে। আলসেমি কোনো সময়ই লাগে না।
ওসব ছাড়ুন। লবণ, মরিচ এসব কোথায় খুঁজতে হেল্প করুন তো!

চাউমিন বানানো হয়ে যায়। ওরা ড্রয়িংরুমে আসে।
রুজাইন চাউমিন মুখে দিয়ে বলল, দারুণ! তোমার রান্নার হাত প্রশংসনীয়।
-ধন্যবাদ।
-তোমাকে থ্যাংকস।

খেতে খেতে টুকটাক গল্প করে দু’জনে। খাওয়া শেষে রুজাইন পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় ইধার দিকে। ইধা পানি পান করে বলল, এইবার তবে আসি?
-একটা কথা।
-জি বলুন?
-সাদ্দাম ভাই এর ব্যাপারে ভেবে দেখতে বলো মাইশাকে। উনি মাইশাকে অনেক ভালোবাসে।
-আমি বলছি এবং আরও বলব। আসলে মাইশার প্রেমের প্রতি ভীতিটা কাটতে সময় লাগছে। তবে আমিও মনেকরি, ওর জন্য সাদ্দাম ভাই পারফেক্ট।

এই বলে ইধা দাঁড়িয়ে পড়ে। যাওয়ার জন্য এক পা বাড়াতেই বাসার বিদ্যুৎ চলে যায়৷ ইধা বলল, এই সময়ে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল!

ঘুটঘুটে অন্ধকারে রুজাইন মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে একটি সুইচ চাপে। সঙ্গে সঙ্গে লাইট জ্বলে উঠে।
রুজাইন বলল, ইলেক্ট্রিসিটি না থাকলেও জ্বলে লাইট গুলো।

হঠাৎ ধুমধাম আওয়াজ শোনা যায়। ওরা বুঝে উঠতে পারে না কিসের শব্দ। রুজাইন দরজা খুলতে চাইলে ইধা বলল, থামুন! মারামারির শব্দও ভেসে আসছে। বাসায় কেউ কী এসেছে?

রুজাইনের ফোন বেজে উঠে। নিচ তলার ভাড়াটিয়ার ফোন। ও রিসিভ করলে ওপাশ থেকে বলল, রুজাইন বাবা! কারা যেন এসে দারোয়ানকে মারছে। আমি সিড়িতে ছিলাম। দেখে মনে হয়েছে ডাকাত দল। গ্রিলের চাবি খুঁজছে দারোয়ানের কাছে। না দেওয়াতে হয়তো মারছে আর গ্রিল ভাঙছে। কিছু করো!

ফোন রেখে রুজাইন বলল, ডাকাত এসেছে!

ঘাবড়ে যায় ইধা। ওদের বাসার নিচে সিড়িতে উঠার পথেই গ্রিল রয়েছে। যেহেতু ওরাও এখানে থাকে নিরাপত্তার জন্য এই ব্যবস্থা। রাত আটটার পর থেকেই বন্ধ থাকে এই গ্রিল।
ডাকাত দল তাণ্ডব চালানোর আগেই পুলিশকে জানাতে হবে। এই বলে রুজাইন ফোনকল দেয় পুলিশকে৷ ফোন রাখার সঙ্গে সঙ্গে ওদের দরজায় কেউ কড়া নাড়ে৷ ইধা ভয়ে ঝাপটে ধরে রুজাইনকে।
এই প্রথম ইধার ছোয়া পেল রুজাইন! এত সুন্দর মুহুর্তটা আজই আসবে কে জানতো!
.
চলবে