#প্রাসাদকথন
পর্বঃ৩
#সুলতানা_তানি
শীতের বেলা খুব ছোট। সময়ও কে’টে গেছে দ্রুত। মধ্যাহ্নভোজের পরে গল্প আর আর আড্ডায় মেতেছিলেন দুই রাজা। দুপুর গড়িয়ে কখন যে বিকেল এসেছে সে হুশ নেই। নাবিহা আর তাসকিনের বিয়ের তারিখও নির্ধারিত হয়েছে। দু’সপ্তাহ পরে বিয়ে হবে ওদের। সম্ভার রাজ এখন ফিরে যাবেন নিজ রাজ্যে। রাজপুত্র রাকিনের মনে রয়েছে প্রেমময় এক ভাবনা। আচানক এক মাতাল হাওয়া এসে তার হৃদয়টাকে এলোমেলো করে দিয়ে গেছে। সে এলোমেলো দোলায় প্রেম প্রেম ছন্দে দিশেহারা সে। আজকের মধ্যাহ্নে পর্দার আড়াল থেকে উঁকি দিয়েছিলো শাহ্জাদী নওরা নানজিবা। চুপিচুপি দৃষ্টি বিনিময় হয়েছিলো রাকিনের সাথে। রাকিন তো আর জানে না যে নওরা এই রাজপ্রাসাদের রাজকন্যা! তবে অজান্তেই সন্দিহান হয়েছে সে। তার ভাবনা ঐ মনচোরা মেয়েটি রাজকন্যাই হতে পারে। এসব ভেবে এখনই নিজ রাজ্যে ফিরে যাবার ইচ্ছে নেই শাহ্জাদা রাকিনের। যেভাবেই হোক একবার সাক্ষাৎ করতে চায় সে সুনয়না নারীর সাথে। কিন্তু বাবা তো ফিরে যেতে চায় নিজেদের সম্ভার রাজ্যে! এদিকে ঐ সুন্দরী,সুনয়নার খোঁজ বের না করে কিছুতেই ফিরবে না রাকিন। যেকোনো বাহানায় আজ এ বাহার রাজ্যেই অতিথি হয়ে থাকবে সে। এখানে থাকার ছল হিসেবে ছেলেটি বাবাকে বলেছে–“আব্বা, নানাবাড়িতে তো আমাদের কখনো থাকাই হয় নি। এদিকে দু’সপ্তাহ পরেই তাসকিন ভাইয়ের বিয়ে দিচ্ছেন! বিয়েতে তো আমাদের রাজ্য থেকে অনেক লোক নিয়ে এখানে আসবো! তাই না?”
“হুম। তো কি হয়েছে?”(সম্ভার রাজ)
“আমি বলেছিলাম কি, আজ আমরা তিন ভাই এ বাহার রাজ্যে থেকে যাই। লোকজন নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে আসার আগে এখানকার রাজবাড়ি এলাকাটা একটু ভালো করে চেনাজানা দরকার।”
রাকিনদের সম্মুখেই ছিলেন বাহার রাজ্যের রাজা। ভাগ্নের কথা শুনে বাহার রাজ নিজেও খুশি হয়েছেন। এই প্রথমবার ভাগ্নে রাজঅতিথি হবার ইচ্ছে পোষণ করেছে। খুশি তো হবারই কথা! সম্ভার রাজও সম্মোহনী সুরে পুত্রকে বলছেন–“ঠিক আছে। তোমরা থাকো তাহলে! আমি আজই আমার সম্ভার রাজ্যে ফিরে যাবো।”
রাকিন তো বেজায় খুশি। তার পা’গল মন এখনই যে বাঁধনহারা হয়ে খুঁজতে চায় সে সুন্দরীকে। সম্ভার রাজ তো জানেন না পুত্রের চুপিচুপি মন হারাবার কথা! তিনি বাহার রাজ্যের রাজার পানে চেয়ে বলছেন–“আমার রাজপুত্ররা তোমার বাড়িতে অতিথি হয়ে থেকেছে। তোমার রাজকন্যাদেরকেও কিন্তু আগামীকাল আমার রাজ্যে অতিথি করে পাঠাবে। ওদেরও চেনাজানা হবে আমাদের রাজবাড়িটা।”
বাহার রাজ দ্বিধান্বিত স্বরে জবাব দিয়েছেন সম্ভার রাজকে–“নাবিহার তো শ্বশুরালয় হতে যাচ্ছে আপনাদের রাজবাড়িটা। বিয়ের আগে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো কি ঠিক হবে!”
“এখনো কিন্তু বিয়ে হয় নি। রাজকন্যারা এখন ওদের ফুফুর শ্বশুরবাড়ি যাবে। আমি রাজকীয় নৌযান পাঠিয়ে দেবো।”
কথোপকথন শেষে সম্ভার রাজ্যের রাজা তারিক মুনতাসির বিদায় নিচ্ছেন শ্বশুরবাড়ি থেকে।
(নোটঃ এই গল্পে তিনটি জুটি-
১. রাকিন-নওরা
২.তাসকিন-নাবিহা
৩.শামস্-মাহিরা
রাকিন,নওরা হচ্ছে এই গল্পের নায়ক,নায়িকা। অনেকেই নাকি গল্পের জুটিগুলো বুঝতে পারেন নি!)
…………………
রুম ঝুম খুশির ছন্দ নিয়ে সাঁঝ এসেছে। সাঁঝের আঁধার মায়াময় হয়ে ঘিরে ধরেছে পৃথিবীকে। বাহার রাজ দরবার বন্ধ হয়েছে বিকেলেই। প্রাসাদে কোলাহল নেই এখন। এরই মাঝে রাজকুমারী নাবিহা এসেছে অতিথিশালায়। বুক ভরা সৌখিন আবেশ নিয়ে শাহ্জাদী বসেছে অতিথিশালার মধ্যবর্তী কক্ষে। হবু বর তাসকিনের সাথে সুখময় কিছু সময় কা’টাতে চায় রাজকন্যা। একজন প্রহরীকে ডেকে পাঠিয়েছে তাসকিনের কক্ষে। হবু বউ স্মরণ করেছে, তাসকিন না এসে পারে! এক সাগর প্রেমপিয়াসী উত্তেজনা নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে তাসকিন। খানিক বাদেই হাস্যোজ্জ্বল বদনে শাহ্জাদা ছুটে এসেছে অতিথিশালার সে কক্ষে। লাজরাঙা বদনে নাবিহা প্রশ্ন করছে তাসকিনকে–“শাহ্জাদা, এখন কেমন লাগছে আমাদের এখানে?”
“দুপুরে যখন তোমায় দেখেছিলাম খুব ভালো লেগেছিলো তখন। মাঝখানে শূন্যতা আর মৌনতারা এলো! এখন আবার তোমায় দেখে হৃদয়টা পরিপূর্ণ লাগছে।”
উথাল-পাথাল হৃদয়ের এলোমেলো কথাগুলো সহসাই ব্যক্ত করেছে তাসকিন। রাজকুমারী নাবিহা হেসেছে শাহ্জাদার এমন সোজাসাপটা জবাব শুনে। সে নিদারুণ হাসিতে শাহ্জাদা যেনো ফে’সে যাচ্ছে গোপনে। ভালোবাসারা যেনো বুক চিড়ে বেরিয়ে আসতে চায় চুপিসারে। এসব অনুধাবন করার মতো সময়ই নেই নাবিহার। মেয়েটি অনুরোধের সুরে তাসকিনকে বলছে– “চলুন শাহ্জাদা, তিন তলায় যাই। সেখানে দরবার নৃত্যের আয়োজন হয়েছে। আমরা একসাথে নৃত্য উপভোগ করবো।”
“চলো তাহলো!”–বলেও থেমে গেছে তাসকিন। প্রহরীকে দিয়ে ডেকেছে রাকিন আর শামসকে। ছোট ভাই দুজনও তো অতিথি হয়ে রয়েছে। ওদেরকে অনুরোধ না করে কি অনুষ্ঠানে যাওয়া যায়! ভাই তলব করেছে শুনে শামস্ আর রাকিন বেরিয়ে এসেছে কক্ষ থেকে। নৃত্যানুষ্ঠানে তার সাথে অতিথি হবার জন্য ওদের দুজনকে অনুরোধ করেছে তাসকিন। নাবিহাও বিনয়ী বদনে অনুরোধ করেছে ওদেরকে। রাকিন আর শামস্ দুজনই ভাইকে অনুসরণ করে দরবার নৃত্যের সে কক্ষে চলে এসেছে। এখানে এসেও রাকিন খুঁজছে সে মনচোরা মেয়েটিকে। শাহ্জাদার মনটা চুরি করে সে যে নিরুদ্দেশ হয়েছে। তাকে নিয়ে কত শত রঙিন স্বপ্নের জাল বুনছে শাহ্জাদা রাকিন! সেই সুনয়নাকে আরেকবার দেখার বাসনায় শাহ্জাদার নয়ন দুটোও মরভূমির ন্যায় তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে। কিন্তু কোথায় সে সুনয়না! নিজেকে হয়তো সন্তর্পণে রেখেছে লুকায়িত গোপনে। এই দরবার নৃত্যের কক্ষও পুরোপুরি পর্যবেক্ষণ করা হয়ে গেছে রাকিনের। নওশাদ আর নাবিহা ছাড়া বাহার রাজপরিবারের কেউ নেই এখানে। নৃত্যে উপভোগের ইচ্ছেও নেই রাকিনের। শাহ্জাদা নওশাদ বসে আছে এক প্রান্তে। রাজ নর্তকীরা ঘুঙুরে ছন্দ তুলে নাচছে। নওশাদ যেনো অপলক দৃষ্টিতে উপভোগ করছে সে নৃত্য। নাবিহা রয়েছে অন্যপ্রান্তে। নাবিহার এক পাশে তাসকিন, অন্যপাশে রাকিন বসেছিলো। রাকিনের কেনো যেনো মনে হচ্ছে সে সুন্দরী মেয়েটি কনিষ্ঠা রাজকন্যা হতে পারে। শাহ্জাদা ভাবছে কনিষ্ঠা রাজকন্যার একবার দর্শন পাওয়া উচিত, তাহলেই বোঝা যাবে রাজকন্যাই সে মেয়েটি কিনা! এমনটা ভেবেই রাকিন মনোযোগ আকর্ষণ করছে নাবিহার–“শুনেছি, আপনারা নাকি তিন বোন!”
“জ্বী।”
“আপনার ছোটবোনের সাথে কিন্তু এখনো সাক্ষাৎ হয় নি আমাদের!”
“ও সবসময় মন খা’রাপ করে থাকে। কারো সামনেও খুব একটা আসতে চায় না।”–সহসাই জবাব দিয়েছে নাবিহা।
রাকিন ভাবছে সে সুনয়নায় বদনও ইষৎ মলিন ছিলো। সেই মেয়েটিই হয়তো কনিষ্ঠা রাজকুমারী! একবার যদি দেখতে পারতাম তাকে! শুধু একবার! কিন্তু রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলে কোন উছিলায় যাবো! নারীরা থাকে অন্দরমহলে। সেখানে গমন করাটাও অভদ্রতা। নিজের মনের গোপন কথা নাবিহার সাথেও আলোচনা করতে চায় না রাকিন। আজ দরবার নৃত্যের এখানে থেকে সময় নষ্ট করে লাভ নেই তার। সে কে যে খুঁজে বের করতেই হবে! রাকিন বেরিয়ে গেছে দরবার নৃত্যের কক্ষ থেকে। ভীষণ ব্যাকুল এক হৃদয় তার! এ ব্যাকুল হৃদয় আকুল আকুতি করছে সুনয়নাকে দেখার বাসনায়। বেচারা যেকোনোভাবে এখন সন্ধান পেতে চায় তার হৃদয়ের সে রানীর।
…………
সাঁঝ পেরিয়ে রাত এসেছিলো। রাতও পেরিয়ে যাচ্ছে নিঝুম ছন্দে। সেই বিকেল থেকে এদিক-সেদিক ঘুরে কতো খুঁজেছে রাকিন! কোনোভাবেই মোলাকাত হয় নি সে সুনয়নার সাথে। মেয়েটির জন্য একটি রাত অপেক্ষা করলো এ বাড়িতে! তবুও সন্ধান মিললো না। নৈশভোজ শেষে শাহ্জাদা শয়ন করেছে অতিথিশালার একটি কক্ষে। নিদ নেই তার চোখে। সুনয়নার ইন্দ্রজালে ফেঁসে গেছে সে। নিদ কেড়ে সরে গেছে সুনয়না চুপিসারে। আগামীকালই তো ফিরে যাবে রাকিন। তবে কি আর মোলাকাত হবে না সে মনচোরা নারীর সাথে!
……….
নবপ্রভাত এসেছে। এখনো প্রভাত রবির দেখা মিলে নি। কুয়াশার চাদরে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে রবি। রবিকিরণও আসতে পারে নি। এরই মাঝে বাহার রাজবাড়ির মালিরা ফুলবাগানের কাজ সেরেছে। ঘুম থেকে উঠে রাকিনও এসেছে বারান্দায়। শাহ্জাদার অবাধ্য নয়ন দুটো মগ্ন সুনয়নার খোঁজে। ঈগল চোখে শাহ্জাদা উঁকি মে’রে তাকিয়েছে ফুলবাগানে। কেউ নেই সেখানে। রাতে ভালো ঘুম হয় নি শাহ্জাদা রাকিনের। গভীর রাত পর্যন্ত বিনিদ্র ছিলো সে অনাকাঙ্ক্ষিত নারীকে ভেবে। তারপরে চুপিচুপি একটু নিদ এলো। সে নিদও দীর্ঘস্থায়ী হলো না। প্রভাতের এই প্রথম প্রহরেই স্বপ্নলোকে হারিয়ে নিদ কে’টে গেলো। শুধু শুধু বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকার ইচ্ছে নেই রাকিনের। ব্যক্তিগত কাজগুলো সেরে নিতে সে ফিরে গেছে কক্ষে। কাজও সেরেছে তড়িঘড়ি করেই। খানিক বাদে শাহ্জাদা আবারো এসে দাঁড়িয়েছে অতিথিশালার বারান্দায়। এখানে দাঁড়াতেই আচানক চমকে গেছে শাহ্জাদার অবাধ্য নয়ন দুটি। তার নয়ন সম্মুখেই আছে সেই সুন্দরী,সুনয়না মেয়েটি। আনমনা মেয়েটি ধীরে ধীরে খালি পায়ে হাঁটছে ফুলবাগানে। এ যেনো এক ফুল পরী! রাকিনের সামান্য দূরেই ছিলো একজন প্রহরী। শাহ্জাদা কাছে ডেকেছে প্রহরীকে। সে প্রহরী এগিয়ে আসতেই কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করেছে –“ফুলবাগানের এ মেয়েটি কে?”
“ছোট রাজকুমারী।”
প্রহরীর জবাব শুনে কালবিলম্ব করে নি শাহ্জাদা রাকিন। সুনয়নার সাথে সাক্ষাতের বাসনায় তৎক্ষণাৎ প্রস্থান করেছে অতিথিশালা থেকে। জোর কদমে শাহজাদার আগমন ঘটেছে ফুল বাগানে। হৃদয়জ চাপা প্রেমময় অনুভূতিরা প্রেয়সীর খোঁজ পেয়েছে। ভীষণ খুশির আমেজ এসেছে হৃদয় গহীনে। সে খুশির বাহারে পশ্চাৎ থেকেই রাকিন ডেকেছে রাজকন্যা নওরাকে–“শাহজাদী!”
শাহ্জাদী নওরা আড়চোখে তাকিয়েছে লাজনম্র বদনে। সে চিনতে পেরেছে রাকিনকে। গতকালই তো দৃষ্টি বিনিময় হয়েছে চুপিসারে। আজ অবনত বদনেই রাকিনকে জবাব দিয়েছে নওরা–“জ্বী!”
এ আওয়াজ যেনো রাকিনের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে আলতো করে। শাহ্জাদা রাকিন কথোপকথন এগিয়ে নিচ্ছে হাস্যোজ্জ্বল বদনে–“আমি রাকিন মুনতাসির, সম্ভার রাজ্যের রাজকুমার। আপনার সাথে তো ঠিকভাবে পরিচয়ও হলো না শাহ্জাদী!”
“আমি নওরা নানজিবা, এই বাহার রাজ্যের কনিষ্ঠা রাজকন্যা।”–মেঘমলিন বদনে জবাব দিয়েছে নওরা। এমন মলিন বদন দেখে হাহাকার করছে শাহ্জাদা রাকিনের বুক। কেনো এমন বিষণ্ণ মেয়েটি! এ বিষণ্ণতা যেনো চাঁদের গায়ে খানিক মেঘের ছায়া। এমন মলিনতা দেখে কি যে বলবে বুঝতে পারছে না শাহ্জাদা! ভাষা হারাচ্ছে সে ক্ষণে ক্ষণে। প্রেম প্রেম ভাবনাগুলো লুকায়িত রয়েছে মনের গোপনেই। তবুও এগিয়ে নিতে হবে এ আলাপ। আন্তরিকতার পূর্ণ আবেশ নিয়ে শাহ্জাদা রাকিন শুধিয়েছে–“এই শীতের সকালে খালি পায়ে কেনো হাঁটছেন রাজকুমারী?”
শাহ্জাদী নওরা ভীষণ বিষণ্ণ কণ্ঠে জবাব দিয়েছে–“ঠান্ডার লাগার কথা ভাবছেন! লাগুক না ঠান্ডা! আমি ম’রে গেলেই তো ভালো।”
শাহ্জাদীর ম’রে যাবার ভাবনা তীরের মতো বি’দ্ধ করলো রাকিনের হৃদয়কে। গোপন প্রাণপ্রিয়ার এহেন বিষণ্ণতায় হাঁসফাঁস করতে করতে শাহ্জাদা বলছে–“এমন করে কেনো বলছেন শাহ্জাদী! এতো সুন্দর আপনি! এতো সুন্দর বদনে এমন বিষণ্ণতা মানায় না।”
“এই সৌন্দর্যই তো কাল হলো আমার জন্য!”
আর কিছু বলতে পারে নি নওরা। একজন দাসী ছুটে এসেছে কাছে। রানী ডেকেছেন নওরাকে। মায়ের ডাকে ফিরে যাচ্ছে শাহ্জাদী। যাবার আগে একবার তাকিয়েছিলো পশ্চাতে। সাক্ষী হয়ে গিয়েছিলো রাকিনের অনড় প্রেমময় চাহনির।
………….
সকাল এগারোটা। ঝলমলে রোদের আলোয় আলোকিত ধরণী। রোদেলা আভায় প্রণয় নদের পানি ঝিকমিক করছে। এরই মাঝে রাজকীয় নৌযান এসেছে সম্ভার রাজ্য থেকে। বাহার রাজ্যের রাজপ্রাসাদ থেকে অশ্বারোহী হয়ে নদের তীরে এসেছে তিন রাজপুত্র। গতকাল রাজকন্যাদেরকে নিমন্ত্রণ করে গেছেন সম্ভার’রাজ। বাহার রাজকন্যা নাবিহা আর নওরা অতিথি হয়ে যাবে আজ সম্ভার রাজ্যে। ওরা তীরে এসেছে একটি ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে। বাহার রাজের একজন বিধবা,বৃদ্ধা ফুফু আছেন। তাকে পাঠিয়েছেন রাজকন্যাদের সাথে অভিভাবক হিসেবে। ওদের সাথে কয়েকজন দাসীও আছে। সম্ভার রাজপুত্রদের অনুরোধে রাজকন্যাসহ সবাই উঠে গেছে রাজকীয় নৌযানে। এ রাজকীয় নৌযানে কয়েকটি কক্ষ আছে। একটি কক্ষে বৃদ্ধাসহ রাজকন্যাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্য একটি কক্ষে দাসীরা আছে। এই বৃদ্ধা হচ্ছেন সম্ভার রাজপুত্রদের মায়ের ফুফু। তাই সম্পর্কে নানী ওদের তিন ভাইয়ের।
রাজকীয় নৌযান সবাইকে নিয়ে চলতে শুরু করেছে ধীরে ধীরে। সকালের প্রণয় নদ নিস্তরঙ্গ। নদের বুক চি’ড়ে চলছে এ রাজতরী। শৈতী হাওয়ার দাপটও নেই আজ। হঠাৎ রাকিন এসেছে বড় ভাই তাসকিনের কাছে। রাকিন ভীষণ আন্তরিকতার সহিত ভাইকে বলছে–“তাসকিন ভাই, একা একা কি করছেন? আমাদের হবু ভাবীকে একটু সময় দিন না! ভাবী হয়তো আপনার সঙ্গ চাচ্ছে।”
সম্ভার রাজ্যের জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র তাসকিনেরও মন চাচ্ছে নাবিহার দর্শন পেতে। মন কে মানানো যে ভীষণ দায়! এদিকে ভাই রাকিনও উৎসাহী করেছে তাকে। এবার যে রাজকন্যার কাছে যেতেই হয়! একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে তাসকিন ছুটেছে রাজকন্যার কক্ষের দিকে। রুম ঝুম প্রণয় উচ্ছ্বাসে উচ্ছ্বসিত তার হৃদয়। কাশি দিতে দিতে শাহ্জাদা এগিয়ে গিয়েছে সে কক্ষের সম্মুখে। কাশির শব্দ শুনে বৃদ্ধা কক্ষ থেকে উঁকি দিয়েছে। বৃদ্ধাকে দেখেই নাবিহার কথা জিজ্ঞেস করেছে তাসকিন। নাবিহাও উঁকি দিয়েছিলো হবু বরের কণ্ঠ শুনে। তাসকিন বিনীত কণ্ঠে অনুরোধ করেছে নাবিহাকে–“এ্যাই, আসো না একটু বাইরে!”
অনুমতি পাবার আশায় নাবিহা তাকিয়েছে দাদীর পানে। দাদী ইশারায় সম্মতি দিয়েছে। রাজকন্যা বেরিয়ে গেছে কক্ষ থেকে। রাজতরীর এক প্রান্তে চলে এসেছে ওরা দুজন। হৃদয় গহীনে লুকানো ভালোলাগারা ভালোবাসা হয়ে আসতে চায় আজ। সে ভালোবাসার খুশিতে দুষ্ট-মিষ্টি কিছু আলাপন চলছে দুজনার মাঝে। এদিকে রাকিন এবার ছুটে এসেছে যমজ ভাই শামসের কাছে। এসেই অনুরোধের সুরে বলছে–“শামস্, তুই গিয়ে বুড়ি নানীটাকে একটু ডেকে নিয়ে আয় তো! তাহলে আমি নওরার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পাবো।”
“ভালোই তো! দুই ভাই মিলে প্রেম করে বেড়াবেন! আর আমি বসে বসে ঘোড়ার ঘাস কা’টবো নাকি!”–একরোখা জবাব শামসের। নওরার সাথে একবার আলাপের বাসনায় ভীষণ ব্যাকুল রাকিন। হৃদয়জ ব্যাকুলতায় হারিয়ে বেচারা বিনীতভাবে শামসকে বলছে –“আমায় একটু সুযোগ করে দে ভাই। আজকের মতো বুড়িটার সাথে একটু ভাব দে না তুই!”
“কি বললি! আমি বুড়ির সাথে ভাব…।”
“আরেহ্,সত্যি সত্যি ভাব দিতে বলি নি তো! ভাবের অনুশীলন করতে বলেছি। ভবিষ্যতে পাত্রী পটাতে তোর কাজে লাগবে।”ব
“আমার কপালে কিছু নেই রে! প্রেমও নেই, বিয়েও নেই আর বিয়ের পাত্রীও নেই।”– দুঃখের সাথে যমজ ভাইকে কথাগুলো বলেছে শামস্। আর কথা না বাড়িয়ে ছেলেটি চলে যাচ্ছে সেই কক্ষের দিকে। ভাইয়ের এমন অনুরোধ তো আর প্রত্যাখান করা যায় না! বুড়িকে কৌশলে সরিয়ে আনতে হবে। তাহলেই তো রাজকন্যার সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পাবে তার ভাই! সে কক্ষের নিকটে এসে “নানী..নানী” বলে ডেকেছে শামস্। বুড়ি চুপটি করে উঁকি দিয়েছে কক্ষ থেকে। শামস্ অনুরোধের সুরে বলেছে–“নানী,আমার সাথে একটু আসুন না! আপনার কাছ থেকে নানাবাড়ির গল্প শুনবো। নাতনীকে আর কতো সময় দেবেন! আমার সাথেও একটু গল্প করুন না!”
বুড়ি প্রত্যাখান করতে পারে নি শামসের অনুরোধ। নওরার মুখপানে চেয়ে বলেছে–“ওদের মা নেই। আপন নানীও নেই। আজ আমার সাথে একটু সুখ-দুঃখের আলাপ করতে চাচ্ছে। আমি কি না বলতে পারি!”
বুড়ি বেরিয়ে গেছে কক্ষ থেকে। শামস্ বুড়িকে নিয়ে নৌযানের সম্মুখভাগে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। শাহ্জাদা রাকিন চলে এসেছে রাজকুমারীর সে কক্ষের পাশে। বুকে তার রংধনুর সাত রঙে হারাবার স্বপ্ন। সে স্বপ্নে স্বপ্নলোকে উড়ে যাবার আশায় প্রেমালাপ যে করতেই হবে। বুকভরা প্রেম প্রেম আবেশ নিয়ে বাতায়নে দাঁড়িয়ে রাকিন ডেকেছে নওরাকে–“শাহ্জাদী!”
নওরা তাকিয়েছে বিষণ্ণ বদনেই। তবে প্রাসাদের বাইরে থাকায় বিষণ্নতা যেনো একটু কম। অবাকের সুরে রাকিনকে বলেছে– “আপনি!”
“জ্বী আমি। বুড়ি নানীকে আমিই পাঠিয়ে দিয়েছি আপনার কক্ষ থেকে।”
“কেন?”–কৌতূহলের সাথে প্রশ্ন করেছে নওরা।
“আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন!”–রাশভারি কণ্ঠে।
শাহ্জাদী নওরা চুপ হয়ে আছে রাকিনের পাল্টা জবাব শুনে। শাহ্জাদার চোখের ভাষা যেনো অনেক কিছু বলে যাচ্ছে তাকে। সে ভাষার নেশায় ছোট ছোট কিছু স্বপ্ন এসে জড়ো হচ্ছে নওরার হৃদয় রাজ্যে। এ স্বপ্নকে ঠাঁই দেয়া যাবে না সেথায়। তাই নওরা রয়েছে নীরব হয়ে। শাহ্জাদীকে নীরব থাকতে দেখে রাকিন কাজের কথায় চলে এসেছে। অসীম কৌতূহলের সাথে বলেছে–“আপনার বয়স তো কম শাহ্জাদী! এমন বিষণ্ন হয়ে থাকেন কেনো?”
“আমার কথা জেনে আপনার কি লাভ?”–পাল্টা প্রশ্ন নওরার।
“লাভ-ক্ষতির হিসেব পরে হবে। আগে জানতে চাই আপনাকে।”
“পরে একদিন জানাবো।”
“আবার কবে সুযোগ হয় জানি না। আমি আজ এবং এখনই শুনবো আপনার বিষণ্ণতা সম্পর্কে।”
“যদি না বলি!”–একরোখা ভঙ্গিতে নওরা জবাব দিয়েছে।
“না বললে আমি এখান থেকে এক কদমও নড়বো না।”
শাহ্জাদী নওরার বোধগম্য হয়েছে রাজকুমার ভীষণ কৌতূহলী। এ কৌতূহলী রাকিনের প্রতি মুগ্ধতাও তৈরি হচ্ছে মেয়েটির। কিন্তু হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে আছে তার। এমন বিদীর্ণ হৃদয়ে কারো প্রতি মুগ্ধতা থাকতে নেই। তবুও কেনো যেনো মনে হচ্ছে রাকিন সত্যিই তার প্রেমে পড়েছে। তাই এ শাহ্জাদাকে অবগত করা উচিত সবকিছু। এসব ভেবে নওরা করুন কন্ঠে বলছে–“তাহলে শুনতে চান শাহ্জাদা?”
“জ্বী,বলুন!”
“আমার চাচাতো ভাই নওশাদকে দেখেছেন?”
“হুম, দেখেছি তো!”
“নওশাদ ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।”
“মানে! নওশাদ ভাইয়ের বয়স তো আপনার দ্বিগুন।”
“জ্বী।”
“আপনার বাবা রাজা হয়ে এমন সিদ্ধান্ত কিভাবে নিয়েছে?”
“আব্বা আমাদের মঙ্গল করতে চেয়েছেন।”–দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জবাব দিয়েছে নওরা।
“বুঝি নি।”
“আপনি হয়তো জানেন নওশাদ ভাইয়ের বাবা প্রথমে আমাদের রাজ্যের রাজা ছিলেন।”
” হুম, জানি তো! নওশাদ ভাই ছোট থাকতে ওনার বাবা মা’রা যান। তারপরে আপনার বাবা মুনাওয়ার মোর্শেদ বাহার রাজ্যের সিংহাসনে আরোহণ করেছেন।” ”
“জ্বী, ঠিকই শুনেছেন। আমার বড় চাচা প্রথমে রাজা ছিলেন। তাই আব্বা ভ্রাতুষ্পুত্র নওশাদকে সিংহাসনের ভবিষ্যত উত্তরাধিকার ঘোষণা করেছে।”
“সিংহাসনের সাথে আপনার বিষণ্ণতার সম্পর্ক কি?”
“সেটাই তো বলতে চাচ্ছি। আমাদের কোনো ভাই নেই তো! আমার বড় বোন নেহেরিন আপুর সাথে ছোটবেলায় নওশাদ ভাইয়ের বিয়ে ঠিক করে রাখা হয়েছিলো। আব্বার চিন্তা ছিলো নেহেরিন আপু বাহার রাজ্যের রানী হবে আর নওশাদ ভাই রাজা হবে।”
“তারপর? নেহেরিন আপুর অন্যত্র বিয়ে হলো কিভাবে? আর নওশাদ ভাইয়ের সাথে আপনার বিয়ে ঠিক করা হলো কেনো শাহ্জাদী?” –উৎকণ্ঠিত বদনে কৌতূহলের সাথে প্রশ্ন করেছে রাকিন।
“নেহেরিন আপুর সাথে নওশাদ ভাইয়ের বহু বছরের মহব্বত ছিলো। দুজনই দুজনকে ভীষণ ভালোবাসতো।”(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)
” তারপর?”
আজ এসব বলতে গিয়ে মেঘমলিন হয়েছে নওরার বদনখানি। একরাশ হতাশা নিয়ে শাহ্জাদী বলছে–“আব্বা যখন নেহেরিন আপুর সাথে নওশাদ ভাইয়ের শাদী নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন তখন নওশাদ ভাই প্রত্যাখান করেছিলো। নওশাদ ভাই জানিয়েছিলো সে নেহেরিন আপুকে নয়, আমাকে শাদী করবে। কারণ আমি নাকি সবচেয়ে সুন্দরী!”
“এতো বড় প্রতারণা! তখন বয়স কতো ছিলো আপনার?”–বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করেছে রাকিন।
“আমার বয়স তখন বারো বছর ছিলো। আব্বা প্রতিবাদ করেছিলো নওশাদ ভাইকে। ওনাকে জানিয়ে দিয়েছিলো আমার বড় বোনদের রেখে এতো অল্প বয়সে আমায় বিয়ে দেবে না। তখন নওশাদ ভাই জানিয়েছে আমার বড় দুই বোনের শাদী হবে। তারপরে নিয়ম মেনেই সে আমায় শাদী করবে।”
“এখন বলুন, শাদী হয়েছে আপনার?”–ভীষণ চিন্তিত ভঙ্গিতে প্রশ্ন করেছে শাহ্জাদা রাকিন।
“আরেহ্ না। আমার মেজো বোন নাবিহা আপুরই তো এখনো শাদী হয় নি। আমার কি করে শাদী হবে!”
“ওহ্। আপনার কোনো মহব্বত হয়েছে নওশাদ ভাইয়ের সাথে?”–উৎকণ্ঠিত ভঙ্গিতে একদম হাঁসফাঁস করতে করতে প্রশ্ন করেছে রাকিন।
“না, কিসের মহব্বত ঐ বুড়োর সাথে! উনি আমার বড়বোনের সাথে বে’ঈমানী করেছে। তাছাড়া ওনার মতো বে’ঈমান বুড়োর সাথে শাদী ঠিক হয়েছে বলেই তো আমার মন খারাপ থাকে। এই এক শাদীর সিদ্ধান্ত আমার জীবন থেকে সব খুশি কে’ড়ে নিয়েছে।”
“আপনার বাবা মেনে নিলো কেন ওনার দাবি?”
“নওশাদ ভাই বিদ্রোহ করতে পারতো আব্বার বিরুদ্ধে। সিংহাসনচ্যুত করতে পারতো আব্বাকে!”
“উনি নেহেরিন আপুর সাথে মহব্বত করে বে’ঈমানী করলো। ভবিষ্যতে আপনাকে যে সুখে রাখবে সেটার নিশ্চয়তা আছে?”
“সেটাই তো! নওশাদ ভাই প্রত্যাখান করায় নেহেরিন আপুকে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছিলো আব্বা। আপুর সে রাজকুমার স্বামী আপুকে ভীষণ ভালোবাসতো। কিন্তু ভাগ্যের খেলায় আপু বিধবা হয়ে গেলো।”
“আপনার আব্বা তো নেহেরিন আপুকে জোর করে আবারও বিয়ে দিতে চাচ্ছে। ওনার সাথেও অন্যায় করা হচ্ছে।”
“ঠিক সেরকম না। নেহেরিন আপুর মঙ্গলই চাচ্ছেন আব্বা। আপুর প্রাক্তন প্রেমিক হচ্ছেন নওশাদ ভাই। নওশাদ ভাইয়ের চোখের সামনে নেহেরিন আপুকে রাখতে চাচ্ছেন না আব্বা। তাছাড়া আপুর পুরনো প্রেমিকের সাথে আমার শাদী হলে সেটা মনস্তাত্ত্বিক কষ্টের বিষয় হবে আমাদের দু’বোনের জন্যই। তাই আব্বা নেহেরিন আপুকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে রাজপ্রাসাদ থেকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন।” –একশ্বাসে কথাগুলো বলেছে নওরা।
“সব বেঈমানী তো নওশাদ ভাই করেছে!”
” জ্বী। জানেন,যেদিন নওশাদ ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হলো সেদিন থেকেই আমার জীবনটা যন্ত্রণায় ভরে গেলো। কারণ নেহেরিন আপু মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো নওশাদ ভাইকে। তার পুরনো প্রেমিককে কি করে আমার জীবনসাথী করবো! নেহেরিন আপুও চায় না নওশাদের মতো বে’ঈমান আমার জীবনসাথী হোক!”
ওরা কথোপকথন থামিয়েছে ক্ষণিকের জন্য। কারণ নাবিহা আর তাসকিনের হাসাহাসি শোনা যাচ্ছিলো কক্ষের বাইরে। হয়তো ওরা কক্ষের কাছাকাছি চলে এসেছে। শাহ্জাদা রাকিনের এবার বিদায় নেবার পালা। হৃদয়ের গোপন কথাগুলো বলারও সুযোগ হলো না। হতাশ বদনে হৃদয়জ কথাগুলো লুকায়িত গোপনে রেখেই বিদায় নিচ্ছে শাহ্জাদা। বিদায়ের পূর্বে সে বলে গেছে নওরাকে–“নওশাদের সাথে আপনার মহব্বত এখনো হয় নি। জীবনে কখনো মহব্বত হবেও না। আর শাদী! শাদী আপনার ভীনদেশী কোনো রাজপুত্রের সাথে হবে।”
“কি বলছেন আপনি!”
“আমি যথার্থই বলেছি শাহ্জাদী। আপনি ভীনরাজ্যের রানী হবেন। আমি তাহলে এখন আসি! আবার মোলাকাত হবে আমাদের।”
বাতায়ন থেকে রাকিন এগিয়ে গিয়েছিলো কয়েক কদম। আবার পশ্চাতে ফিরে এসে বলে গেছে চুপিসারে–“ভীনরাজ্যের কোনো রাজকুমার স্বপ্নে,কল্পনায় আপনাকে মনের রানী করে নিয়েছে। আপনার মনকে প্রশ্ন করুন! মন চিনতে পেরেছে কিনা সে রাজকুমারকে! যদি মন চিনতে পারে তবে মহব্বত তার সাথেই হোক!”
চলবে