#প্রাসাদকথন
পর্বঃ৪
#সুলতানা_তানি
( ১.রাকিন-নওরা
২.তাসকিন-নাবিহা
৩.শামস্-মাহিরা
এই তিনটি জুটি গল্পে। বাহার রাজ্যের রাজা মুনাওয়ার। বাহার রাজ্যে তিন রাজকন্যা–নেহেরিন,নাবিহা,নওরা। নেহেরিন বিধবা। সম্ভার রাজ্যের রাজা তারিক। সম্ভার রাজ্যে প্রধানত তিন রাজপুত্র–তাসকিন,রাকিন,শামস্।)
…………
সাঁঝের আগমন ঘটেছে। রাজপ্রাসাদে
শত শত প্রদীপ জ্বলছে। প্রদীপের শিখায় ঝলমল করছে প্রাসাদ। এই প্রাসাদটিও ত্রিতল। সম্ভার রাজ্যের রাজপ্রাসাদ এটি। নিচতলায় রাজদরবার,অতিথিশালা, পাঠাগার,রসুইঘর,দরবার নৃত্যের কক্ষসহ আরো কিছু কক্ষ আছে। দোতলায় রাজা তারিক মুনতাসির থাকেন। রাজমন্ত্রীও থাকেন দোতলায়। রাজা তারিক মুনতাসিরের আপন ছোট ভাই হচ্ছেন রাজমন্ত্রী। মন্ত্রীকন্যাও দোতলায়ই থাকে। তিন তলায় রাজপুত্ররা থাকে। আজ নিচতলার অতিথিশালায় আছে বাহার রাজ্যের দুই রাজকন্যা। ওদের সেই দাদীও আছে অতিথিশালায়। আলাদা আলাদা কক্ষেই আছে তিনজন। সম্ভার রাজ্যের জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র তাসকিন এসেছে অতিথিশালায়। ধীর পায়ে এসে কড়া নেড়েছে নাবিহার কক্ষে। নাবিহা উঁকি দিয়েছে দরজার পাশ থেকে। তাসকিনকে দেখে বেরিয়ে এসেছে হাসিমুখে। শাহ্জাদা এসে বসেছে অতিথিশালার হল রুমে। বসার অনুরোধ করেছে নাবিহাকেও। প্রেম প্রেম ভাব শাহ্জাদা তাসকিনের চোখেমুখে। নাবিহা আসন গ্রহণ করার পরে প্রশ্ন করেছে–“শুনলাম বিকেলে পুরো রাজপ্রাসাদ ঘুরে দেখেছো! কেমন লাগছে ভবিষ্যত শ্বশুরালয়?”
“ভীষণ সুন্দর।”
“তাই?”
“হুম। তবে এ প্রাসাদে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লাগে এই শাহ্জাদাকে।”–সলজ্জ হেসে।
হবু স্ত্রীর মুখে প্রথমবার প্রশংসা শুনে বেশ আনন্দিত শাহ্জাদা তাসকিন। খুশির ঝিলিক এসেছিলো নয়নে। তবে ক্ষণিকেই বিলীন হলো সে খুশি। খানিক বিষণ্ণতার সাথে তাসকিন শুধিয়েছে–“তুমি কি আমার সম্পর্কে সবকিছু জানো নাবিহা?”
“জানি। আপনি জ্যেষ্ঠ রাজপুত্র, তবে সিংহাসনের উত্তরাধিকার নন। এটাই তো?”
“জ্বী, এটাই। আমার মেজো ভাই রাকিন মুনতাসির সিংহাসনের উত্তরাধিকার। ভবিষ্যতে রাকিনের কোনো অঘটন ঘটলে সেক্ষেত্রে বিকল্প উত্তরাধিকার শামস্।”
“আমি আগেই শুনেছি আপনার রোগ সম্পর্কে।”
“তারপরেও পছন্দ হলো আমায়?”–কৌতূহলী ভঙ্গিতে প্রশ্ন করেছে তাসকিন।
নাবিহা তৎক্ষনাৎ জবাব দিয়েছে –“রাজা হবার জন্য আপনাকে যেমন রাজকীয় শিক্ষা দেয়া হয় নি, আমাকেও তেমনি রানী হবার মতো শিক্ষা দেয়া হয় নি।”
“তুমি তো বড্ড বেখেয়ালি আর মনভোলা। রানীর দায়িত্ব নিলে বেখেয়ালি স্বভাবের কারণে তুমি ভুল করে বসতে।”
“এজন্যই তো সিংহাসনে আরোহন করবে এমন কোনো রাজপুত্রের সাথে আমার শাদী দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না বাবা।”
“জানি তো এসব!”
“আচ্ছা শাহজাদা, আপনাকে স্থলযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া হয় নি?”
“স্থলযুদ্ধের সব প্রশিক্ষণ নিয়েছি। কিন্তু রাজা হতে হলে শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিক থেকেই বলীয়ান হতে হয়। রাজ্যের প্রয়োজনে জলে-স্থলে যুদ্ধ করার ক্ষমতা থাকতে হয়।”
“বুঝি নি।”–নাবিহা জবাব দিয়েছে।
“বোঝো নি মানে! এটা তো জানো যে আমি আমি মৃগী রোগী?”–তাসকিন মলিন বদনে শুধিয়েছে।
“জ্বী, আপনার মৃগী রোগের কথা শুনেছি।”
“ধরো, আমি ভবিষ্যতে রাজা হলাম! কিন্তু আমার প্রাসাদেই গোপন শত্রু তৈরি হলো। ঘুমন্ত অবস্থায় আমায় উঠিয়ে নিয়ে এ রাজ বাড়ির পুকুরেই ফেলে দিলো! সেক্ষেত্রে আমি কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই মা’রা যাবো। আমার রাজ্যও শত্রুর হাতে চলে যাবে।”
“সেটা ঠিক!”
“রোগের কারণে সংকটাপন্ন অবস্থায় আমার মস্তিষ্কও ধীরে কাজ করে। ”
“ওহ্।”
“আমার মেজো ভাই রাকিনকে রাজকীয় সকল শিক্ষা দেয়া হয়েছে। রাকিন যেমন বুদ্ধিমান, তেমনি জলে,স্থলে সমানে যু’দ্ধ করতে পারবে। আর শামস্ও জলে,স্থলে যু’দ্ধবিদ্যায় পারদর্শী। আমি শারীরিকভাবে অক্ষম তো! তাই আমার অনুজ রাকিনই সিংহাসনের উত্তরাধিকার। সম্ভার রাজ্যের ভবিষ্যত রাজা।”
“সে যাইহোক, আপনি কিন্তু একটি ভুল করেছেন শাহ্জাদা। আপনার প্রণয় নদ পেরিয়ে শাদী করার সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয় নি। শ্বশুরালয়ে যাবার সময় ঝড় উঠলে কি করবেন?”–দুষ্ট হেসে বলছে নাবিহা।
“বউ নিয়ে যে একবার আসবো আর যাবোই না শ্বশুরের বাহার রাজ্যে।”–মৃদু হেসে জবাব দিয়েছে তাসকিন।
“আপনার বেখেয়ালি বউ কিন্তু বাবার বাড়ির চিন্তায় তার বরকেও ভুলে যাবে।”
“বউকে এমন করে ভালোবাসবো যেনো বরকে ছাড়া অন্য সবকিছু ভুলে যায়!”
“ইশশ্, ভালোবাসার সাগর একদম!”
“হুম সাগরই হবো। বহু বছর বাঁচবো আমি। স্থলে তো আমার কোনো সমস্যা নেই। আমার রাজকীয় দায়িত্বও কম। জীবনে একটাই দায়িত্ব থাকবে, শুধু এই বউটাকে ভালোবাসা।”
…………….
শৈতী প্রভাত। ধোয়াশা,কুয়াশা আর মৃদু অমানিশা এখনো ঘিরে রেখেছে প্রকৃতিকে। শাহ্জাদী নওরা সবসময় প্রভাতের প্রথম প্রহরেই ঘুম থেকে ওঠে। আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি। গতকাল বিকেলে পুরো সম্ভার রাজপ্রাসাদ ঘুরে দেখেছে শাহ্জাদীরা। কিন্তু আশেপাশে কোথাও কোনো সমাধি দেখে নি। ওদের ফুফু তো এই রাজ্যের রানী ছিলেন। ওদের জন্মের আগেই ফুফু ইহলোক ত্যাগ করেছে। নওরার ভীষণ ইচ্ছে করছে ফুফুর সমাধি দর্শন করার। ফুফু মহারানী ছিলেন সম্ভার রাজ্যের। তাকে অবশ্যই রাজকীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়েছে। কিন্তু কোথায় সে সমাধি! ফুফুর সমাধি দর্শন করার আগ্রহ থেকেই সকাল সকাল প্রাসাদ ত্যাগ করেছে নওরা। নাবিহা আর দাদী শয্যা ত্যাগ করে নি। আলসেমি করে এখনো শায়িত হয়ে আছে বিছানায়। প্রাসাদ থেকে বের হয়ে নওরা দৃষ্টিপাত করছে এদিক-সেদিক। রাজসমাধি খুঁজে যাচ্ছে। কোথাও কোনো সমাধি নেই। বিষণ্ণ নাবিহার আলাপ করতে ইচ্ছে করছে না প্রহরীদের সাথে। নিজেই খুঁজে যাচ্ছে আনমনে। কিছুটা সন্দিহান হয়ে আছে শাহ্জাদী। ভাবছে রাজপ্রাসাদের পশ্চাতে থাকতে পারে রাজকীয় সমাধিস্থল। ধীর কদমে শাহ্জাদী চলে গেছে প্রাসাদের পশ্চাতে। কোনো সমাধি নেই এখানেও। কিন্তু দূরে একজন লোক তীর নিক্ষেপ করছে। লোকটিকে বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে দূর থেকে। নওরা এগিয়ে গেছে সম্মুখে। এ যুবককে চিনতে দেরি হয় নি শাহ্জাদীর। শাহ্জাদা রাকিন তীর ছুঁ’ড়ছেন বিশেষ নিশানায়। শাহ্জাদী এগিয়ে যাচ্ছে সেদিকটায়। রাকিনের নিকটে গিয়ে দাঁড়িয়েছে নওরা। ভীষণ মনোযোগী শাহ্জাদা শুধু একবার তাকিয়েছে। আবারও তীর নিক্ষেপ করেছে নিশানায়। ছোট একটি নিশানা। তবুও রাকিন তীর বি’দ্ধ করেছে সহসাই। নওরা আগ বাড়িয়ে আলাপ শুরু করেছে–“আপনার নিশানা তো খুব নিখুঁত।”
“ধন্যবাদ শাহ্জাদী।”
“আমাকেও ধনুর্বিদ্যা শেখানোর চেষ্টা করা হয়েছিলো। দেখি তো, আজ একটু তীর ছুঁ’ড়ে!”
রাকিন তীর,ধনুক এগিয়ে দিয়েছে নওরার দিকে। হাতে নিয়ে প্রথমবার তীর নিক্ষেপ করেছে নওরা। নিশানা খুব ছোট। তীর লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে সহসাই। আবারও তীর নিয়ে মেয়েটি নিক্ষেপ করেছে সেই নিশানায়। এবারও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। রাকিন আগ্রহী সুরে প্রশ্ন করছে–“আমি শিখিয়ে দেবো?”
কোনো কিছু চিন্তা না করেই নওরা জবাব দিয়েছে –“দিতে পারেন।”
রাকিন পেছনে চলে গেছে নওরার। পেছন থেকে কাঁধের উপর দিয়ে হাত দিয়ে তীর নিক্ষেপণ শেখাতে চেয়েছিলো। নওরা সরে গেছে ক্ষণিকেই। রাকিনও তৎক্ষনাৎ বলেছে– “আমি দুঃখিত।”
“না মানে, আমি পরে শিখে নেবো।”–একটু সলজ্জ ভঙ্গিতে জবাব দিয়েছে নওরা।
“ঠিক আছে।”
খানিক দূরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে শাহ্জাদী। রাকিন আবারও তীর হাতে নিয়েছিলো। আবারও ব্যস্ত হতে দেখে ধীর কন্ঠে শাহ্জাদী বলেছে–“আমার ফুফুর সমাধি দেখতে বের হয়েছিলাম। কোথাও দেখছি না যে!”
“আমাদের রাজ পরিবারের সমাধি পুরনো রাজপ্রাসাদের ওখানে। আমার আম্মিকেও সেখানেই সমাহিত করা হয়েছে।”–রাকিন জবাব দিয়েছে সহসাই।
“আমায় নিয়ে যেতে পারবেন ফুফুর সমাধির কাছে?”
“জ্বী,পারবো। কখন যাবেন ?”
“এখনই।”
“তাহলে চলুন!”
দুজন হাঁটতে শুরু করেছে। পুরনো রাজপ্রাসাদ প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার দূরে। নতুন রাজবাড়ির সীমানার বাইরে। হাঁটতে হাঁটতে নওরা বলছে–“আমি কিন্তু বয়সে আপনার চেয়ে ছোট। আমায় তুমি করে বলতে পারেন।”
“ভীনরাজ্যের শাহ্জাদীকে আপনি করেই বলা উচিত।”
“তুমি করে বললে খুব খুশি হবো।”
“সত্যিই খুব খুশি হবেন নাকি?”–রহস্যের সাথে প্রশ্ন করেছে রাকিন।
“না…না,সেরকম কিছু না।”–ই’তস্তত করে জবাব দিয়েছে নওরা।
“সেরকম কিছু হতে পারে না শাহ্জাদী?”
নওরা নীরব হয়ে আছে। রাকিনও জবাব শোনার অপেক্ষায় আছে। নওরা কিছুটা বিব্রত। তবে মলিনতা নেই এখন। গতকাল কিছু দুঃখের কথা শেয়ার করেছিলো রাকিনের সাথে। নিজের বাড়িতে থেকে নওশাদের বিরুদ্ধে মন খুলে কারো সাথে কথাও বলতে পারে না। গতকাল দুঃখের কথাগুলো ব্যক্ত করার পরে কিছুটা ফুরফুরে হয়ে আছে শাহ্জাদী। যেনো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসতে চাচ্ছে। একসময় ভীষণ চঞ্চলা ছিলো শাহ্জাদী নওরা। বড়বোনের প্রেমিক নওশাদের সাথে বিয়ে ঠিক হবার পর থেকেই বিষণ্ণতা ঘিরে ধরেছে। বিধবা বড় বোনকে দেখেও কষ্ট হয় নওরার। সবকিছু মিলিয়ে কয়েক বছর ধরেই ভীষণ বিষণ্ণ ছিলো মেয়েটি। আজ যেনো বিষণ্ণতা একটু কমই। তবুও এখন আলাপচারিতা এগিয়ে নিচ্ছে না রাকিনের সাথে। প্রশ্নের জবাব দেয় নি বলে রাকিনও আর কথা বাড়ায় নি। নির্বাক থেকেই দুজন চলে এসেছে রানীর সমাধির কাছে। পাশেই জীর্ণ-শীর্ণ পুরনো রাজপ্রাসাদ। শাহ্জাদী নিশ্চুপ হয়ে আছে ফুফুর সমাধির পাশে। সে ভাবছে আমার আব্বার যমজ বোন ছিলো ফুফু। তেইশ বছর আগে মা’রা গেছেন তিনি। আব্বা এখনও জীবিত আছেন। রাজকার্য পরিচালনা করে যাচ্ছেন। আর ফুফু! যমজ রাজপুত্র জন্মদানকালে ইহলোক ত্যাগ করলো! রাজপুত্রদ্বয় তো এখনো জীবিত আছে। এসব ভাবতে ভাবতে আশেপাশে ফিরে দেখছে শাহ্জাদী। কৌতূহলী দৃষ্টি তার। হঠাৎ করেই শীতল কণ্ঠে রাকিনকে বলছে–“ফুফুর মৃ’ত্যুর পরে আপনার বাবা আবার বিয়ে করেছিলেন। সে স্ত্রীকে নাকি তিনি হ’ত্যা করেছিলেন। আপনার সেই সৎ মায়ের সমাধি দেখছি না যে!”
“ঐ বে’ঈমানকে রাজ্যের শেষ প্রান্তে নিয়ে জ’ল্লাদ দিয়ে হ’ত্যা করা হয়েছে। ওর লা’শ ওখানেই ফেলে দেয়া হয়েছে। রাজকীয় মর্যাদায় বে’ঈমানকে সমাহিত করা হয় নি।”
“ওহ্।”
নিশ্চুপ হয়েই দাঁড়িয়ে আছে শাহ্জাদী। সমাধির পাশেই একটি পুকুর। রাকিন ধীর স্বরে বলছে–“অনেক কথা ছিলো আপনার সাথে। চলুন, পুকুরঘাটে গিয়ে বসি।”
দুজন এসে মুখোমুখি হয়ে বসেছে পুকুরঘাটে। ঘাটের বেঞ্চ থেকেই নওরা আবারও তাকিয়েছে পুরনো রাজপ্রাসাদের দিকে। প্রাসাদটি অনেকটাই দেবে গেছে ভূমিতে। পুরনো রাজপ্রাসাদ দেখিয়ে জিজ্ঞাসু সুরে নওরা বলছে–“এই প্রাসাদের অবস্থা এমন জীর্ণশীর্ণ কেনো?”
“ভূমিকম্পে মূল কাঠামোটাই ভেঙে পড়েছিলো। অনেকখানি দেবে যাওয়ায় আর রক্ষনাবেক্ষণও করা সম্ভব হয় নি। এটা এখন সাপ,গুইসাপ,শেয়ালসহ বিভিন্ন জীব-জন্তুর আবাসস্থল। ”
“ওহ্।”
শাহ্জাদী কথা শুনে যাচ্ছিলো অবনত নয়নে। হঠাৎ তার দৃষ্টিগোচর হলো কিছু ময়লা লেগে আছে পায়ে। তড়িঘড়ি করে শাহ্জাদী নেমে যাচ্ছিলো সিঁড়ি বেয়ে। রাকিন সাবধান করার আগেই সে পা পিছলে পড়ে গেছে পুকুরে। এবার! এবার কি হবে! শাহ্জাদী তো ভীষণ লজ্জিত। সিক্ত দেহে কি করে ফিরে যাবে প্রাসাদে! কত পুরুষলোক রাজবাড়িতে! রাকিনের সাথেই কিভাবে ফিরে যাবে! এদিকে রাকিন ভাবছে এ মেয়েকে আমার রানী করতে চাই। ওর সম্মান তো আমাকেই রক্ষা করতে হবে। সিক্ত দেহে রাজবাড়ির কর্মচারীদের সামনে দিয়ে ওকে কিছুতেই নেয়া যাবে না। এমনটা ভেবে রাকিন প্রশ্ন করেছে –“আপনার পোশাক কোথায় রেখেছেন শাহ্জাদী? আমি পোশাক আনতে পাঠাবো।”
“নাবিহা আপুর কাছে গেলেই হবে। আপু পোশাক দিতে পারবে।”
“আমি পোশাক আনার ব্যবস্থা করছি। আপনার বোনকেও নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠাচ্ছি।”–বলেই রাকিন এগিয়ে গিয়েছে কিছু দূরে। আরো দূরে ছিলো একজন প্রহরী। তাকে ডেকে শা্হজাদী নাবিহার কাছে যাবার আদেশ করেছে। ঘটনা বর্ণনা করে নাবিহাকে দাসীসহ পোশাক নিয়ে আগমনের জন্য বলে দিয়েছে। প্রহরী ফিরে গেছে নতুন রাজপ্রাসাদে। রাকিন দাঁড়িয়েছিলো প্রহরীর পথ চেয়ে। নওরা লজ্জা পাবে বলে সে আসে নি ঘাটের কাছে। প্রহরী প্রাসাদে গিয়ে নাবিহাকে খুঁজে পায় নি। কি করে পাবে! প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছে নাবিহা। বয়োবৃদ্ধা দাদীর কাছে ঘটনা খুলে বলেছে প্রহরী। সব শুনেছে বৃদ্ধা। পায়ে ব্যথা হয়েছে তার। এতো দূরে হেঁটে আসতে পারবেন না তিনি। শুধু চাদরে পেঁচিয়ে নওরার পোশাক দিয়েছে প্রহরীর হাতে। রাকিন নওরাকে পুকুরে রেখে প্রাসাদে ফিরে যেতে পারতো! কিন্তু এ জায়গাটা বর্তমান রাজবাড়ির সীমানার বাইরে। নিরাপত্তাও নেই এখানে। রাকিন ভেবেছিলো নাবিহা আসবে দাসীদেরকে নিয়ে। এসে সাহায্য করবে নওরাকে। কিন্তু প্রহরী একাকী ফিরে এসেছে পোশাক নিয়ে। পুকুর পর্যন্ত আসতে পারে নি লোকটা। নওরাকে প্রহরী দেখতে পাবে বলে রাকিন নিজেই এগিয়ে গিয়েছে। ঘটনা শুনে শাহ্জাদা পোশাক নিয়ে এসেছে প্রহরীর হাত থেকে। ঘাটের কাছে এসে নওরাকে বলেছে–“শাহ্জাদী,আপনার বোনকে খুঁজে পায় নি প্রহরী। শুধু পোশাক নিয়ে এসেছে। পানি থেকে উঠে আসুন এবার।”
“কিন্তু উঠে কোথায় পোশাক বদলাবো আমি?”
“পুরনো রাজপ্রাসাদে ঢুকে পোশাক বদলে নিন।”
নওরা উঠে এসেছে পুকুর থেকে। পোশাক নিয়ে প্রবেশ করেছে জীর্ণশীর্ণ রাজপ্রাসাদের একটি কক্ষে। প্রাসাদের বেশি ভেতরে প্রবেশ করে নি শাহ্জাদী।একদম শুরুর দিকের কক্ষেই ছিলো। এতোক্ষণ ধরে শীতে বেশ কষ্ট হয়েছে মেয়েটির। ভেতরে এসে কোনোদিকে খেয়াল করে নি। তড়িঘড়ি করে জামা পাল্টে একটি স্লিভলেস জামা পরে নিয়েছে। তার উপরে ফুল স্লিভ আরেকটি জামা পরিধান করবে এখন। হাতে নিচ্ছিলো সে জামাটি। হঠাৎ খেয়াল হলো কক্ষের কোনেই একটি গুইসাপ। গুইসাপটি দেখে চিৎকার করে বেরিয়ে যাচ্ছিলো নওরা। চিৎকার শুনে রাকিনও দৌড়ে এসেছিলো কক্ষে। ক্ষণিকেই শাহ্জাদী জড়িয়ে ধরেছে রাকিনকে। গুইসাপ বুদ্ধিহীন নিরীহ প্রাণী। শাহ্জাদা তরবারি ব্যবহার করবে না এ বুদ্ধিহীন প্রাণীকে ভয় দেখানোর জন্য। বাহু উঁচু করে সে ভয় দেখিয়েছে গুইসাপকে। গুইসাপ দেয়ালের ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে গেছে। শাহ্জাদা শান্ত কণ্ঠে বলছে নওরাকে–“হুশে আসুন শাহ্জাদী! গুইসাপ তো ফিরে গেছে।”
নওরা ছেড়ে দিয়েছে শাহ্জাদাকে। বিনা অনুমতিতে ওভাবে আলিঙ্গন করায় বেশ অনুতপ্ত সে। অবনত বদনে ধীর স্বরে বলেছে–“আমি দুঃখিত শাহ্জাদা।”
“দুঃখপ্রকাশের প্রয়োজন নেই তো! এটা পরিস্থিতি। এবার পোশাক বদলে নিন তাড়াতাড়ি।”—বলেই রাকিন বের হয়ে গেছে কক্ষ থেকে। কক্ষের জানালায় পোশাক রেখেছিলো নওরা। এবার এগিয়ে এসে ভেজা স্যালোয়ার পাল্টে নিয়েছে। ফুল স্লিভ জামাটি এখনো পরিধান করা হয় নি। পরিধান করার জন্য জামাটি আবারও হাতে নিচ্ছিলো শাহ্জাদী। হঠাৎ দৃষ্টিগোচর হয় গুইসাপটি ফিরে এসেছে ছিদ্র দিয়ে। আবারও চিৎকার করেছে নওরা। রাকিনও দৌড়ে এসেছে। শাহজাদীর এবারও হুশ নেই। যথারীতি জড়িয়ে ধরেছে রাকিনকে। শাহ্জাদা আবারও বাহু উঁচু করে ভয় দেখাতেই গুইসাপটি ফিরে গেছে। রাকিন এবার আদেশের সুরে বলেছে–“বাকী কাপড় পরে নিন তো! আমি আছি এখানেই।”
নওরা রাকিনকে ছেড়ে দিয়েই বলেছে–“আপনার সামনে আমি কাপড় পরবো নাকি!”
“আমি আপনাকে পোশাক পরতে বলেছি শাহ্জাদী, ছেড়ে দিতে কিন্তু বলি নি।”
নওরা বেশ বিব্রত হলো এমন কথায়। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে প্রশ্ন করেছে– “একজন পুরুষলোকের সামনে আমি কিভাবে পোশাক পরবো?”
“দু’বার যে এ পুরুষ লোককে আলিঙ্গন করলেন!”–ঠোঁট টিপে হেসে।
“সেটা তো বাধ্য হয়ে।”–মিনমিন করে জবাব দিয়েছে নওরা।
“এখনো বাধ্য হয়েই বাকী কাপড় পরে ফেলুন। কারণ গুইসাপটি এ কক্ষে ডিম দিয়েছে। আবারও ফিরে আসবে ডিমগুলোর টেনশনে। ও ভয়ে আছে ওর ডিম নিয়ে।”
নওরা দৃষ্টি নি’বদ্ধ করেছে চারপাশে। আসলেই তো! কক্ষের এক কোনে গুইসাপের ডিম। চিন্তিত ভঙ্গিতে মেয়েটি তাকিয়েছে রাজপুত্রের বদনে। রাজপুত্র গম্ভীর কন্ঠে বলছে–“এটা প্রথম দিকের কক্ষ। ভেতরের দিকের কক্ষে সাপও থাকতে পারে। ভেতরের দিকের কক্ষে প্রবেশ করাও যায় না। এখানেই পোশাক বদলানো উচিত আপনার!”
পোশাক বুকে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে নওরা। শাহজাদা রহস্যের হাসি দিয়ে বলেছে–“সমস্যা নেই। আমি অন্য দিকে ফিরে থাকবো। ছি’দ্রের মুখে আমি দাঁড়িয়ে থাকলে গুইসাপটি এখন আর ফিরে আসবে না।”
“না, আপনি এখানে থাকলে আমি পোশাক পরবো না।”
“হাত বের করে দাঁড়িয়ে না থেকে পোশাক পরে নিন তো!”
নওরা বেশ লজ্জিত হয়েছে রাকিনের কথায়। স্লিভলেস জামাই তো পরে রয়েছে এখন। বাকি পোশাক হাতে নিয়ে বুকে চেপে রেখেছে সে। পরনের স্লিভলেস জামাটার গলা একটু বড়। শাহ্জাদার সামনে নিলাজ দেখাতে পারতো তাকে। তাই বাকি পোশাক বুকে চেপে নিশ্চুপ হয়েই দাঁড়িয়ে আছে শাহ্জাদী। রাকিন রহস্যের সাথে বলেছে–“আমি বাইরে গেলেই গুইসাপটি আবার আসবে। আপনিও হয়তো দৌড়ে গিয়ে আবারও আলিঙ্গন করবেন আমায়! দু’বার ছেড়ে দিয়েছি আপনাকে। এরপরে আলিঙ্গন করলে কিন্তু আমি ছাড়বো না।”
এমন ঠোঁটকা’টা কথা শুনে নওরা নিশ্চুপ হয়ে গেছে। মিনমিন করেই বলেছে–“তাহলে অন্য দিকে ফিরে থাকুন তো! আমি বাকি কাপড়গুলো পরবো।”
শাহ্জাদা অন্য দিকে ফিরে দাঁড়িয়েছে। হাফ স্লিভ জামার উপরে তড়িঘড়ি করে ফুল স্লিভ জামাটি পরে নিয়েছে নওরা। তারপরে ওড়না পরে ডেকেছে শাহ্জাদাকে। দুজন তৎক্ষনাৎ প্রস্থান করেছে পুরনো রাজপ্রাসাদ থেকে। নির্বাক দুজনই। হাঁটতে শুরু করেছে নতুন রাজপ্রাসাদের উদ্দেশ্যে। আলাপ না করে বেশিক্ষণ থাকতে পারে নি রাকিন। খুব বিনীতস্বরে বলেছে–“একটা কথা বলবো শাহজাদী?”
“জ্বী,বলুন।”
“আপনাকে কিন্তু এখনো হাসতে দেখে নি।”
“দুঃখের জীবন আমার! হাসি আসবে কোথা থেকে?”
“একটু হাসুন না আমার জন্য!”–অনুরোধের সুরে।
লাজরাঙা হয়েছে নওরার বদন। কোনো আওয়াজ নেই কণ্ঠে। হাসিও নেই অধরে। তবুও শাহ্জাদীর এ লাজরাঙা বদন যেনো আকর্ষণ করছে রাকিনকে। হৃদয়ে যেনো ভালোবাসার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। আবেগী কন্ঠে কৌতূহলের সাথে রাকিন প্রশ্ন করেছে–“আমায় পছন্দ করেন শাহ্জাদী?”
হঠাৎ যেনো ব’জ্রাঘাত হলো শাহ্জাদীর হৃদয়ে। কি জবাব দেবে সে সে এখন! সত্যিই তো ভালো লাগে শাহ্জাদাকে। কিন্তু নিজে তো বন্দী হয়ে আছে রাজ’শিকলে। এ শিকল,এ নিগড় থেকে মুক্ত হওয়া তো সম্ভব নয়। তাই নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে নওরা জবাব দিয়েছে–“একজনের সাথে আমার বাগদান হয়ে আছে পারিবারিকভাবে। তাকেই পছন্দ হয় নি! আর আপনাকে পছন্দ করবো কি করে!”
“আপনি মিথ্যে বলছেন শাহ্জাদী!”
নওরা চুপ হয়ে আছে। রাকিন আত্মবিশ্বাস নিয়েই বলছে–” আপনি পছন্দ করেন আমায়!”
“আপনি ভুল ভেবেছেন।”
“যদি পছন্দ না করতেন তবে আমায় দেখে ওভাবে শ’রমিন্দা হতেন না!”
কোনো কথা নেই নওরার কণ্ঠে। রাকিন শান্তস্বরে বলছে–“আমার প্রশ্নের জবাব চাই শাহ্জাদী। আমি জবাবের আশায় রইবো।”
ওরা নতুন রাজপ্রাসাদের নিকটে চলে এসেছিলো। কয়েকটি পায়রা উড়ে এসেছে রাকিনের কাছে। খুব সুন্দর পায়রাগুলো। নওরা স্থির হয়ে দেখছে সেগুলোকে। রাকিন মৃদু হেসে বলেছে–“আমার পোষা পায়রা।”
………
দুপুর গিয়ে বিকেল এসেছে। বিকেলের প্রথমভাগ এখন। রবিকিরণ ঝরছে। এখন আর তেজোদীপ্ত নয় রবি। মৃদু কিরণ ঝরিযে বিদায়ী সুর শোনাতে উদ্যত হয়েছে। রাজকন্যারা বাহার রাজ্যে ফিরে যাবে আজ। রাজকার্যে ভীষণ ব্যস্ত ছিলো রাকিন। রাজা তারিকের কাছ থেকে দ্বিতীয় পক্ষের পুত্র আরশান দায়িত্ব নিয়েছে রাজকন্যাদের ফিরিয়ে দেবার। কিন্তু সৎ ভাই আরশানের সাথে রাজকন্যাদ্বয়কে পাঠাতে রাজি হয় নি রাকিন। তাসকিন তো মৃগী রোগী। খুব প্রয়োজন ছাড়া জলপথে কোথাও গমন করে না। জলপথে গমন করলেও নিজ ভাইদেরকে সঙ্গী করে। সহসাই সে রাজকন্যাদের ফিরিয়ে দিতে যেতে পারবে না। রাকিন আশায় ছিলো আজও যাত্রাপথে সে মহব্বতের আলাপ করবে নওরার সাথে। কিন্তু সৎ ভাই আরশান আগেই দায়িত্ব নিয়ে রেখেছে বাবার কাছ থেকে। আরশানকে তেমন বিশ্বাস করে না রাকিন। তাই ওকে সে বাদ দিয়েছে নৌযাত্রা থেকে। কিন্তু আরশান এসে বায়না ধরেছে রাকিনের কাছে–“ভাই, আপনার নানা বাড়িতে একটু যেতে চাই।”
“তাসকিন ভাইয়ের বিয়ের দিন যেতে পারবি বাহার রাজ্যে।”–রাকিনের সোজাসাপ্টা জবাব।
আরশান গিয়ে বায়না ধরেছে বাবার কাছে। রাজা তারিক আদেশ দিয়েছেন আরশানকেও সাথে নিয়ে যাবার জন্য।অবশেষে আরশানকে সঙ্গী করেই ওরা যাত্রা করেছে। রাজপ্রাসাদ থেকে বের হবার কিছুক্ষণ পরে চলে এসেছে প্রণয় নদের তীরে। রাজকীয় নৌযান প্রস্তুত ছিলো। বাহার রাজ্যের’দুই রাজকন্যা আর ওদের দাদী উঠে গিয়েছে নৌযানে। দাসীরা তো সাথেই আছে। দুই রাজপুত্র রাকিন আর আরশানও উঠে এসেছে। আরশান কিন্তু বিনা কারণে আসে নি নৌযাত্রায়। আরশানেরও পছন্দ হয়েছে নওরাকে। রাকিন জানেনা আরশানের মনের গোপন কথা।
রাজকীয় নৌযান চলতে শুরু করেছে। প্রণয় নদ আজ তরঙ্গ সংকুল। ঢেউ কে’টে সম্মুখে চলছে নৌযানটি। এ জলযানের বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে নওরা। একাই বেরিয়ে এসেছিলো কক্ষ থেকে। নওশাদকে তার যতোটা খা’রাপ লাগছে ঠিক ততোটাই ভালো লাগছে রাকিনকে। ষোড়শী নওরার সাথে ত্রিশ বছর বয়সী নওশাদ বড্ড বেমানান। নওরার বয়সের হিসেবে নওশাদকে বুড়োই বলা চলে। তেইশ বছর বয়সী রাকিনকে বেশ মনে ধরেছে শাহ্জাদীর। শাহ্জাদাও সুযোগ খুঁজে যাচ্ছিলো প্রেম নিবেদনের। নওরাকে একাকী দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে এসেছে রাকিন। শাহ্জাদার উপশ্চিতি টের পেয়েছে নওরা। সে দাঁড়িয়ে রয়েছে রহস্যময়ী বদন নিয়ে। কাছে এসে রাকিন ডেকেছে–“শাহ্জাদী!”
আর কিছু বলতে পারে নি রাকিন। এক ধা’ক্কায় নওরা তাকে ফেলে দিয়েছে প্রণয় নদে। তারপর খিলখিল করে হেসে উঠলো মেয়েটি। এ যেনো এক নয়ন জুড়ানো হাসি! রাকিন মাথা তুলে তাকিয়েছে নদ থেকে। ক্ষণিকেই মুগ্ধ হয়েছে এমন ভুবন ভুলানো হাসি দেখে। নওরা হেসে হেসেই বলছে–” উঠে আসুন শাহ্জাদা। কুমির আছে কিন্তু নদে।”
আরশানও এসেছিলো বারান্দায়। রাকিনের সাথে নওরার এ হাসি,এ দুষ্টুমি দৃষ্টিগোচর হয়েছে আরশানের। ঈর্ষান্বিত হয়েছে সে। রাকিনও উঠে এসেছে নদ থেকে। সিক্ত শরীর ছেলেটির। শাহজাদীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সেভাবেই। এক রহস্যের হাসি দিয়ে বলেছে–” আমার জবাব আমি পেয়ে গেছি শাহ্জাদী!”
“কিসের জবাব?”–বিস্মিত বদনে নওরা শুধিয়েছে শাহ্জাদাকে।
“এক প্রশ্ন করেছিলাম আপনাকে। জানতে চেয়েছিলাম আমায় পছন্দ করেন কিনা!”
শাহজাদী লাজনম্র হাসি দিয়ে ফিরে যাচ্ছিলো কক্ষে। পেছন থেকে ডেকে উচ্ছ্বাসের সাথে রাকিন বলেছে–“আমি কিন্তু সত্যিই জবাব পেয়ে গেছি শাহ্জাদী!”
নওরা ফিরে গেছে কক্ষে। পুরো নৌযাত্রায় আর একবারও বের হয় নি কক্ষ থেকে। রাকিন আরেকটু কথা বলার আশায় চাতক পাখি হয়ে অপেক্ষা করেছিলো। সিক্ত শরীর নিয়েও একবারও প্রস্থান করে নি বারান্দা থেকে। সন্ধ্যার একটু পরে বাহার রাজ্যের তীরে এসে পৌঁছেছে নৌযান। নওরা মাথায় বিশাল ঘোমটা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলো নৌযান থেকে। রাকিন কাছে এসে ফি’স’ফি’সিয়ে বলেছে–“মহব্বতের বার্তা নিয়ে আমার পায়রা যাবে তোমার কাছে। মহব্বতের সাথেই আমায় জবাব দিও।”
হঠাৎ ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’ সম্বোধনে চলে এসেছে শাহ্জাদা। এ পরিবর্তন আরো নতুন বার্তা দিচ্ছে। নওরা নির্বাক থেকেই নেমে গেছে নৌযান থেকে। ঘোড়ায় আরোহণ করেছে সবাই। কিছুক্ষণ পরে সবাই পৌঁছে গেছে বাহার রাজ্যের প্রাসাদের নিকটে। এখনো সিক্ত দেহে থাকায় শাহ্জাদা প্রবেশ করে নি প্রাসাদে। ভীনরাজ্যের রাজপ্রাসাদে অগোছালোভাবে প্রবেশ করাটাও অভদ্রতা। সৎ ভাই আরশানের সঙ্গী করে রাজকন্যাদের পাঠিয়েছে প্রাসাদে। রাকিন ফিরে গিয়েছিলো প্রণয় নদের তীরে। বাহার রাজ্যের রাজপ্রাসাদে গিয়ে সৎ ভাই আরশান ঘটিয়েছে অন্য ঘটনা। সে সাক্ষাৎ করেছে বাহার’রাজ তারিক মুনতাসিরের সাথে। ভবিষ্যৎ সকল সম্পর্কে বি’ষ ঢালতে শুরু করেছে আরশান।
চলবে