#প্রাসাদকথন
পর্বঃ৭
#সুলতানা_তানি
রাকিন ঝাঁপিয়ে পড়েছে প্রণয় নদের পানিতে। তীর বি’দ্ধ কুমিরটি খানিক দুর্বল হয়ে গেছে যন্ত্রণায়। গতিও কমেছে কিছুটা। কুমিরকে আ’ক্রমণকারী নৌযান থেকে একজন পানিতে পড়েছে। কুমির কি তাকে ছেড়ে দেবে নাকি! ভীষণ ক্ষোভে কুমিরটি এগিয়ে এসেছে রাকিনকে আ’ক্রমণের উদ্দেশ্যে। রাকিন লাফিয়ে উঠে গেছে নৌযানে। গতি কম থাকায় রাকিনের নিকটে পৌঁছুতেই পারে নি কুমিরটি। কিন্তু নৌযানের নিকটে চলে এসেছে প্রচন্ড ক্ষোভে। রাকিনকে পানিতে দেখে লোভ আর ক্ষোভ দুটোই হয়েছিলো কুমিরের। শাহ্জাদা লোভ দেখিয়ে নৌযানের নিকটে নিয়ে এসেছে কুমিরকে। একদম নৌযান লাগোয়া এখন প্রাণীটি, যেনো হাতের নাগালেই রয়েছে। আ’ক্রমণ করতে ব্যর্থ হয়ে কুমির আবার ডুব দিচ্ছিলো নদে। প্রাণীটির গতি বড্ড কম তীরবি’দ্ধ থাকায়। ডুব দেয়ার চেষ্টা করতেই রাকিন সামান্য ঝুঁকে কুমিরের পৃষ্ঠদেশ থেকে তীরটি খুলে নিয়েছে। শামস্ পেছন থেকে জড়িয়ে রেখেছিলো রাকিনকে যেনো ভারসাম্য হারিয়ে ভাই কুমিরের মুখে পড়ে না যায়! তীর খুলতেই কুমির আবার ভেসে উঠেছে। স্থির দৃষ্টি এ হিংস্র প্রাণীর। দৃষ্টি নি’বদ্ধ করেছে সম্মুখে অবস্থানরত তিন রাজপুত্রের বদনে। রাকিন,শামসের সাথে আরশানও ছিলো সম্মুখেই। সম্ভার রাজ তারিকও উপস্থিত ছিলেন। রাজা তারিক এসে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন পুত্র রাকিনকে।
জলেসিক্ত পোশাকে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাকিন। দৃষ্টিপাত করছে চারদিকে। বড় ভাই তাসকিনের উপস্থিতি কোথাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। শামস্ও অনুধাবন করতে পেরেছে ব্যাপারটি। দু’ভাই অনুসন্ধিৎসু নয়নে খুঁজে যাচ্ছে বড় ভাইকে। ভাই তাসকিন মৃগী রোগী। না আবার পানিতে পড়ে গেছে! বৃদ্ধ পিতাকে কিছু অবগত না করেই দুজন ছুটছে এদিক-সেদিক। না, কোথাও তাসকিন নেই। হন্তদন্ত হয়ে এসে রাকিন নক করেছে নববধূর কক্ষদ্বারে। শামস্ও দাঁড়িয়ে রয়েছে দুয়ারেই। কিছুক্ষণ আগে তাসকিন এসেছিলো নববধূর কক্ষে। এতোকিছু যে হয়ে গেছে কিছুই জানে না শাহ্জাদা। সে ব্যস্ত ছিলো আধো আধো মহব্বতে। বউয়ের অধরে চু’ম্বনে মগ্ন ছিলো শাহ্জাদা তাসকিন। ভাব তো আগেই হয়ে গিয়েছিলো তাদের। দোষ কি একটু মহব্বতে! যমজ দু’ভাই কড়া নাড়ছে কক্ষদ্বারে এসে। আজ নববধূর ঠোঁট রাঙানো ছিলো লাল রঙে। চুম্বনের ছোঁয়ায় সে রঙ লেগেছে তাসকিনের ঠোঁটেও। বেচারা তড়িঘড়ি করে ঠোঁট মুছে নিয়েই বের হয়েছে বউয়ের কক্ষ থেকে। দোরগোড়ায় দাঁড়ানো রাকিনকে প্রশ্ন করেছে –“তোর শরীর এমন ভেজা কেনো রে?”
ভাইয়ের ঠোঁট কিছুটা লাল দেখে রাকিন মুখ টিপে হেসে ফিরে গেছে অন্য দিকে। শামস্ ফি’স’ফি’সিয়ে বলছে তাসকিনকে–“ভাই,আমরা তো একরকম যু’দ্ধ করে এলাম। আর আপনি ব্যস্ত হয়েছেন মহব্বতে! আজ কি দুনিয়ার কোনো হুশ নেই আপনার?”
“বেয়াদব! কিসের যু’দ্ধ? কিসের মহব্বত?”
“আপনার ঠোঁটে মহব্বত লেগে আছে ভাই।”(শামস, হেসে হেসে)
“যা, বেয়াদব! আগে বল, রাকিন ভিজে গেলো কিভাবে? তুই নিজেও তো একটু ভিজে গেছিস! কি করে হলো এসব?”
শামস্ এখনো হাসছে দুষ্টুমির ছলে। আরশান এগিয়ে এসেছিলো এদিকটায়। আরশান একটু অন্যরকম। বড় ভাইকে এমন রাঙা অবস্থায় আরশান দেখুক, এটা শামস্ হতে দিতে চায় নি। ধা’ক্কা দিয়ে তাসকিনকে নববধূর কক্ষে ঢুকিয়ে দিতে দিতে বলেছে–“যান, আপনি ভেতরেই থাকুন! আরও বেশি করে রঙিন হোন!”
……….
রাত গভীর। রাজপুরী ঘুমন্ত। টিমটিমে আলো জ্বলছে রাজপ্রাসাদে। এ সম্ভার রাজপ্রাসাদ যেনো নীরব,নিস্তব্ধ। প্রাসাদের ভেতরে রয়েছে সুসজ্জিত একটি কক্ষ। বাসর ঘর এটি। নাবিহা বসে রয়েছে এ বাসর ঘরে। কত শত স্বপ্নেরা ছুঁয়ে যাচ্ছে তার হৃদয়! মখমলি সুখের এক অনুভূতি। আজ ভাবনার রাজ্যের যেনো কোনো সীমা নেই। দাসীরা ছুটে এসেছিলো খানিক আগে। আবারও সাজগোজ করিয়ে রেখে গেছে নববধূকে। শাহ্জাদা তাসকিন হয়তো এখনই আসবে বাসর ঘরে। দাসীরাও কক্ষ ত্যাগ করেছে। শাহ্জাদী নাবিহা বড্ড মনভোলা। কোনোকিছু সহজে মনে রাখতে পারে না সে। সাথে থাকা রুমালটি বের করে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে বারবার। গায়ের বেনারসী শাড়িটিও গুছানোই রয়েছে। কথার মারপ্যাঁচে বেশ পারদর্শী নাবিহা। অনামিকার রিংটিতে মনোযোগ তার। শাহ্জাদা দিয়েছে এ রিং। এরই মাঝে তাসকিনের আগমন ঘটেছে কক্ষে। মৃদু হাসি শাহ্জাদার বদনে। নাবিহাও সলজ্জ হয়ে বসে আছে অবনত বদনে। কক্ষদ্বার বন্ধ করে আদুরে কণ্ঠে তাসকিন বলছে–“এ্যাই, বসে আছো কেনো,হ্যাঁ? সালাম-টালাম দিচ্ছো না যে!”
“সমান অধিকার!”–লাজুক স্বরে নাবিহা জবাব দিয়েছে।
“মানে!”
“আমি সালাম দিলে আমাকেও সালাম দিতে হবে।”
“তোমার সালামের দরকার নেই ভাই।”
“ভাই না, বউ বউ।”
” ওহ্ হ্যাঁ,বউ। আজ খুশি তো আমার বউটা?”
“জ্বী,জনাব।”
তাসকিন এসে বসেছে বাসর শয্যায়। বউয়ের হাতে পরিয়ে দিচ্ছে আরেকটি রিং। কণ্ঠ আবেগঘন শাহ্জাদার। ধীরে ধীরে বলছে– “আজ আমাদের প্রথম রাত। এ রাত মহব্বতের রাত। জীবনের সব রাতই হোক মহব্বতের!”
নাবিহা মুচকি হেসেছে। নতুন রিংয়ের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলছে–“শুনুন শাহজাদা তাসকিন মু..মু.. কি যেনো আপনার নামটা?”
“হায়হায়! তোমার স্বামীর নাম ভুলে গেছো?”–অবাকের সুরে প্রশ্ন করেছে তাসকিন।
“আসলে আমি একটু মনভোলা তো!”
“তোমার বাবা-মা,বোনদের নাম বলো তো!”
“এতো প্রশ্ন করেন কেনো হ্যাঁ? আমাদের সবার নামই জানি আমি।”
“সবার নাম জানে। শুধু স্বামীর নামটাই জানে না আমার বেগম সাহেবা! কেমন বেগম আপনি আমার?”
“এ রাত কিন্তু মহব্বতের। এতোসব কথা না বলে মহব্বতের আলাপ করুন তো!”
“বউ আমার নামটাই জানে না। এমন বউয়ের সাথে কি আলাপ করবো মহব্বতের!”
“আপনিও তো আপনার বাবার নাম জানেন না।”
“কে বললো আমি আমার বাবার নাম জানি না! আমার বাবার নাম মহারাজ তারিক মুনতাসির।”
“তাহলে আপনার নাম তাসকিন মুনতাসির।”–হি হি করে হেসে জবাব দিয়েছে নাবিহা।
“আরেহ, আমার বউ তো খুব চালাক! কৌশলে আমার বাবার নাম জেনে আমার নাম বের করে ফেলেছে।”
“কি ভেবেছেন! আপনার বেগম বোকাসোকা! আমি তো প্রথমেই বলতে পেরেছিলাম আপনার নিজের নাম….আরেহ্ কি যেনো আপনার নামটা! ধুর, এবার তো সবটুকুই ভুলে গেলাম!”–হতাশার সুরে মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলছে নাবিহা।
“হায়হায়! এবার সবটুকু ভুলে বসে আছেন!”
“এসব নাম ধাম দিয়ে কি করবেন,হ্যাঁ? মহব্বতের রাত,মহব্বত হলেই হলো!”–নাবিহা দুষ্টস্বরে ধ’মক দিয়েছে তাসকিনকে।
“আজ কোনো মহব্বত চলবে না আপনার সাথে। স্বামীর নাম জানে না! এসেছে মহব্বতের আলাপ করতে!”–দুঃখমিশ্রিত হাসিতে কথাটা বলেই ধপাস করে তাসকিন শুয়ে পড়েছে বিছানায়। নাবিহা শাড়ির আঁচলের কাছ থেকে রুমাল বের করে নিয়েছে। দেখে নিচ্ছে স্বামীর নামটা। তাসকিন উঠেছে শয়ন থেকে। বউয়ের পেছনে রয়েছে শাহ্জাদা। পেছন থেকেই মাথা রেখেছে বউয়েরর কাঁধে। শাহ্জাদী রুমাল মুঠো করে নিয়েছে। তাসকিন ভীষণ কৌতূহলী। টেনে রুমাল নিয়ে গেছে নিজের হাতে। রুমালে সেলাই করে লেখা ছিলো তাসকিন। পেছন থেকে বউয়ের কপোলে কপোল ঘ’ষে আদুরে কণ্ঠে তাসকিন প্রশ্ন করেছে–“আমার নাম কিভাবে লিখেছো?”
“আমি একটু মেনভোলা তো! প্রথম কয়েকদিন আপনার নামটা বারবার স্মরণ করলে মুখস্ত হয়ে যাবে। তাই নামটা আমি রুমালে সেলাই করে নিয়েছি, যেনো ভুলে গেলেই দেখে নিতে পারি!”
“এতো কষ্ট করতে হবে না গো! আমার নামটা তোমার হৃদয়ে লিখে দেয়ার দায়িত্ব আমার।”
নাবিহা হেসেছে মিষ্টি করে। তাসকিন ফি’সফি’সিয়ে বলেছে–“মহব্বতের লগ্ন কিন্তু পেরিয়ে যাচ্ছে।”
জবাব নেই শাহ্জাদীর কণ্ঠে। শাহ্জাদা চু’মু খেয়েছে বউয়ের কাঁধে। রাজকন্যা খানিক দূরে সরে যেতে চেয়েছে লাজে। শাহ্জাদা নিজেই উঠে গেছে শয্যা ছেড়ে। শিখা নির্বাপন করেছে ক্ষণিকেই। ভারী বস্ত্র নিবারণ করছে শয্যায় শায়িত হবার জন্য। শাহ্জাদী নাবিহাও ভারী গয়না খুলে ঘুমের আয়োজনে মগ্ন। তাসকিন এসেছে নিকটে। ফুলশয্যায় শায়িত হয়েছে তার বেগম সাহেবার সাথে। এক জনমের তৃষ্ণা তার ভালোবাসার। ভালোবাসা কি হয়তো আসবে এ মধুক্ষণে। শাহ্জাদা একটি পা তুলে দিয়েছে বউয়ের পায়ে। গলা ধরে ফি’স’ফিসিয়ে বলেছে–“স্বামী আপনাকে আদর করলেও ভুলে যাবেন নাকি বেগম সাহেবা?”
“স্বামী যদি আদর মনে গেঁথে দিতে পারে তাহলে তো ভুলবো না।”
“ওরেহ্ দুষ্ট বউ রে! সবই তো স্বামীর মাথায় দিয়ে দিচ্ছো!”–কথাটা বলেই আলিঙ্গন করেছে বউকে। আচানক যেনো সুখের অনুভূতির ফোয়ারা এসেছে হৃদয়ে। শাহ্জাদা চু’ম্বন এঁকেছে বউয়ের ললাটে। হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে মখমলি সুখের লহরীতে। দুজনার ললাট মিশে গেছে ললাটে। অধর ছুঁয়ে আছে অধরে। চু’ম্বনও হচ্ছে অবিরত। ভালোবাসার তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত দুজন। নিঃশ্বাসও যেনো মিলিত আজ হচ্ছে নিঃশ্বাসে। শাহ্জাদা আচানক চু’মু খেয়েছে বউয়ের গলায়। বউ বেচারীর লাজ যেনো আজ হারাচ্ছে বড্ড নিলাজে। বড় নেশা নেশা এ রাত। নেশা এনেছে মহব্বতের স্রোত। সে স্রোতে মোহনায় ভেসে গেছে দুজন। এখনই যেনো মিলিত হবার ক্ষণ।
……….
রঙধনুর রঙে যেনো সাজানো রাজপুরী। স্বপ্নপুরীর মতো মনে হয়। মধ্যাহ্ন এখন।
দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে তিন দিন। আজ বাহার রাজ্য থেকে অতিথির আগমন ঘটেছে সম্ভার রাজ্যে। বৌভাতের অনুষ্ঠান হচ্ছে সম্ভার রাজ্যে। কত শত অতিথি এসেছে! কিন্তু তেমন কোনো নারী অতিথি আসেন নি। রাজকন্যা,রানীও আসেন নি। বাহার রাজপ্রাসাদেই রয়েছেন তারা। ধুমধাম আয়োজন হচ্ছে এ সম্ভার রাজ্যে। ভোজনবিলাসে ব্যস্ত অতিথিরা। শাহ্জাদা রাকিন আর শামস্ তদারকি এ অনুষ্ঠান।
…………
পড়ন্ত বিকেল। বৌভাতের অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়েছে। তাসকিন আর নাবিহাকে নিয়ে অতিথিরা ফিরে যাবে। তাসকিন মৃগী রোগী বলে রাকিন সঙ্গী হতে চেয়েছিলো নৌযাত্রায়। কিন্তু রাজকীয় দায়িত্বে আটকা পড়ে গেছে রাকিন। নৌযাত্রায় একজন ভাইকে সবসময় সঙ্গী করা হয় তাসকিনের। শামস্ যাচ্ছে বড় ভাইয়ের সাথে। আরশানও বায়না ধরে বসেছিলো বাহার রাজ্যে গমনের জন্য। ওকেও সঙ্গী করেছে তাসকিন।
………..
রাত নয়টা। শীত জেঁকে বসেছে রাজপ্রাসাদে। সব দরজা,জানালা বন্ধ। তবুও প্রচন্ড শীতের প্রকোপ। বাহার রাজ্যের রাজপ্রাসাদ এটি। সন্ধ্যার পরেই নাবিহাকে নিয়ে সবার আগমন ঘটেছে প্রাসাদে। নৈশভোজ শেষ। অতিথিশালায় ছিলো শামস্ আর আরশান। ভাই তাসকিনের সাথে সাক্ষাতের বাহানায় শামস্ এসেছে উপরে। অনেকক্ষণ উপরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আলাপচারিতায় মগ্ন ছিলো দু’ভাই। হঠাৎ নাবিহা এসেছে বারান্দায়। শামস্ দুষ্ট হেসে তাসকিনকে বলেছে–“ভাই, আপনি এবার ভাবীর কাছে যান তো! আমি শাহ্জাদী নওরার সাথে একটু কথা বলি!”
তাসকিন প্রস্থান করেছে। শামস্ কাছে ডেকেছে নওরাকে। হাতে একটি চিরকুট শাহ্জাদার। রাকিন চিরকুট পাঠিয়েছে শামসের মাধ্যমে। চিরকুট পেয়ে যেনো আনন্দে উদ্বেলিত নওরা। অবারিত খুশি শাহ্জাদীর চোখেমুখে। শাহ্জাদা শামস্ দুষ্ট হেসে বলছে—-“হাসিতে কোনো কাজ হবে না গো! আগে আমার জন্য কাউকে ঠিক করার ব্যবস্থা করুন!”
নওরা মুখ টিপে হেসে চিরকুট নিয়ে প্রস্থান করেছে। ভীষণ উচ্ছ্বাস মেয়েটির। নিজ কক্ষে এসে চিরকুট খুলেছে সানন্দে। সেথায় লেখা আছে—
প্রেয়সী নওরা,
কেনো দাঁড়িয়ে রয়েছো আমার হৃদয় দুয়ারে এসে? কেনো রেখেছো আমায় প্রতীক্ষায়? কেনো একটু ভালোবাসছো না আমায়? আমি তো হারিয়েছি,নিজেকে জড়িয়েছি তোমারই চোখের মায়ায়। কেনো বলছো না তুমি হৃদয়ের কথা? আশিক যে আমি তোমার! বধূবেশে তুমি আসবে আমার এ হৃদয়ঘরে। শুধু একবার কথা দাও আমায়!
ইতি,
তোমার আশিক
রাকিন
বারবার যেনো চিরকুটই পড়তে ইচ্ছে করছে শাহ্জাদীর। মনকে কি করে বোঝাবে মেয়েটি! চিরকুট হাতে নিয়েই দাঁড়িয়েছে আরশির সম্মুখে। দেখেছে কন্ঠে ঝুলে থাকা লকেটটিকে। লকেটটি রাকিন প্রদত্ত প্রেম উপহার। এ চিরকুট,এ লকেট যেনো রাকিন হয়েই জড়িয়ে আছে শাহ্জাদীর হৃদয়ে। আরশির সামনে দাঁড়িয়ে হঠাৎ মনে পড়েছে শামস্ কাল সকালে ফিরে যাবে। আজ আর কোনো নীরবতা নয়। চিরকুটের জবাব দিতে যে ভীষণ ইচ্ছে করছে! খানিক বাদেই শাহ্জাদী কাগজ আর কালি নিয়েছে সম্মুখে। মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখছে চিরকুট। কত শত ভাবনা! সব কি আর লিখে শেষ করা যায়! তবুও লিখছে মনের গোপন কথা।
………….
প্রভাতের প্রথম প্রহর। সূর্যালোকে আলোকিত হয় নি প্রকৃতি। চারদিকে কুয়াশা। এই প্রভাতেই শামস্ ফিরে যাবে নিজ সম্ভার রাজ্যে। আজ কিছু রাজকীয় দায়িত্ব আছে শাহ্জাদার। আগামীকাল আবার আসবে ভাইকে ফিরিয়ে নিতে। তাসকিন আরো এক’দিন অবকাশ যাপন করবে শ্বশুরালয়ে। শামস্ ফিরে যাবে বলে শাহ্জাদী নওরা এসেছে অতিথিশালায়। রাকিনের জন্য একটি চিঠি দিয়েছে শামসের কাছে। শামস্ ফিরে গেছে খানিক বাদেই। আরশান থেকে গেছে এ বাহার রাজ্যের রাজপ্রাসাদে। তাসকিনের সাথে সে আগামীকাল ফিরবে নিজ রাজ্যে। নওরাকে পটানোর জন্যই আজ অতিথি হয়ে থেকেছে আরশান। আজকের এই প্রভাতেও শাহ্জাদী হাঁটাহাঁটি করছে ফুলবাগানে। আরশান এগিয়ে এসেছে নওরাকে দেখে। শাহ্জাদীর কোনো হেলদোল নেই। আরশান মনোযোগ আকর্ষণ করে বলছে–“কেমন আছো শাহ্জাদী?”
নওরা বিস্ময়ের সাথে তাকিয়ে জবাব দিয়েছে–“শুনুন জনাব,ভীন রাজ্যের শাহ্জাদীদেরকে আপনি সম্বোধন করতে হয়। রাজকীয় ব্যবহার কিছু শেখেন নি?”
“তুমি বয়সে আমার চেয়ে অনেক ছোট। তাই তুমি করে বলছি।”
“আমি বয়সে আপনার চেয়ে অনেক ছোট। কিন্তু আপনার ঘনিষ্ঠ কেউ নই যে আমায় তুমি করে বলবেন!”
“যদি আমি ঘনিষ্ঠ কেউ হই তোমার!”–এক রহস্যময় হাসি ফুটে আছে আরশানের ঠোঁটে।
“কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?”–শাহ্জাদী শুধিয়েছে ক্ষু’ব্ধস্বরে।
“তোমাকে আমার রানী করতে চাই।”
এবার যেনো ব’জ্র’পাতের আওয়াজ হচ্ছে শাহ্জাদীর কণ্ঠে। ভীষণ রাগে প্রতিবাদ করছে সে–“মুখ সামলে কথা বলুন! ভদ্রতাও বজায় রাখুন! তাছাড়া আপনি তো নিজেই রাজা হবেন না। এসেছেন আমায় রানী করতে! আপনাকে তো ঠিক রাজপুত্রের মতোও দেখায় না। রাজা হবেন কি করে! সবসময় দূরে থাকবেন আমার নিকট থেকে।”– বলেই নওরা পা বাড়িয়েছিলো প্রস্থানের উদ্দেশ্যে। পেছন থেকে আরশান জানিয়েছে–“সম্ভার রাজ্যের রাজা রাকিন নয়,আমিই হবো। আর তোমাকেই চাই আমার রানী হিসেবে।”
নওরা সোজা এসে প্রবেশ করেছে নাবিহার কক্ষে। বোন,ভগ্নীপতি কক্ষেই ছিলো। শাহ্জাদী ক্ষুব্ধস্বরে তাসকিনকে শুধিয়েছে–“আমার ফুফুর মৃ’ত্যুর পরে আপনার বাবা যেনো কিভাবে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলো? আরশানের জন্ম যেনো কিভাবে হয়েছিলো?”
চলবে