প্রিয়অপ্রিয়ের সংসার পর্ব-২৪+২৫ এবং বোনাস পর্ব

0
139

#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৪+২৫(স্পেশাল পর্ব)

“সারোয়ার বাবা এসব কী শুনছি আমি হ্যাঁ? তুই বলে নিলীমার সাথে তিক্ত গলায় কথা বলেছিস। যার কারণে মেয়েটা কষ্টে পুরো একদিন দানাপানি ও মুখে নেইনি। বলি তোর কী বয়স নিয়ে এভাবেই হেলাফেলা করার ইচ্ছে জেগেছে ? তুই কী আসলেই বিয়ে করতে চাস না আমাদের ম’রার জন্য অপেক্ষা করছিস? তোর বিয়ের পর ঘরে বউ বাচ্চা দেখার স্বপ্নটা কী তুই আমাদের ছেলে হয়ে পূরণ করবি না? বল কী পেয়েছিসটা কী তুই আমাদের? আর তুই কী এখনো সেই দেখা পাত্রীর পেছনে পড়ে আছিস? নিলীমা তোর ফোনের মধ্যে শেহু নামের কারো মেসেজ দেখেছে বলল। এই শেহু কী সেই পাত্রী? কী হলো সারোয়ার তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছি আমি। মায়ের প্রশ্নের জবাব দিস না কেনো?”

সারোয়ার মায়ের রাগান্বিত রূপ দেখে চুপ করে রইল। জাহানারা পুষ্প বারদুয়েক কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করে হাঁপিয়ে উঠেন। মায়ের ক্লান্তিভরা চেহারা দেখে সে মায়ের কাঁধ জড়িয়ে ধরে সোফায় বসায়। মায়ের পাশে বসে সাবলীল গলায় বলে,

“মা আপনি তো জানেন আমি পাত্রীর বাবার কাছ থেকে সময় চেয়েছিলাম। সেই দিক দিয়ে নিজেকে বোঝার এবং মেয়েটার জীবনসঙ্গী হিসেবে আসলেই কী আমি যোগ্য কি-না তা জানার জন্য মেয়েটার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এর মাঝে আপনি আর সাজিয়া একবার মাইমুনাকে দিয়ে আমার ধ্যান ফেরাতে চাইলেন। তার পর এখন নিলীমাকে হাতিয়ার করে আমার ধ্যান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছেন। এসব করে কী লাভ মা বলেন? আপনি কী চান না আমার ভবিষ্যৎ বউ যেনো আমার সঙ্গে নিরাপদে থাকে। তার কোনো ত্রুটি আছে কি-না যার কারণে তার চিকিৎসা দরকার। সেই সব দিকগুলো খেয়ালে রেখেই আমি চাইছি। আমার দেখা প্রথম পাত্রী কে পরিপূর্ণ সময় দিতে।”

জাহানারা পুষ্প ম্লান মুখশ্রী করে ছেলের হাত ধরে বিষণ্ণ গলায় আওড়ান।
‘কেনো বাবা সেই এক মেয়ের দিকে কেনো তুই ঝুকে পড়বি বল? তোর কী মনে হয় সে ছাড়া কী পৃথিবীতে আর মেয়ে নেই সেই এক মেয়েকে তোর লাগবে? তোর বয়স দেখেছিস? তুই কবে বিয়ে করবি , কবে সংসারে মন দিবি , কবে আমরা নাতিপুতি পাবো? মেয়েটা কী তোর কথায় সহজে রাজি হয়েছে? জবাব দে আমায়। মেয়েটা কী রাজি ছিল? ছিঃ কেমন অভদ্রতাই না করেছিল আমাদের সাথে সেদিন। ভাগ্যিস তোর বাবা ছিল না সেদিন। তোর বলা কথাও তিনি শুনতেন না সোজা মুখে না করে দিতেন।’

“ভুল জানো তুমি পুষ্প। আমি আমার ছেলের সিদ্ধান্ত কে প্রাধান্য দিতাম। কারণ আমার ছেলে কোনো অবুঝ বালক বা কিশোর নয়। তার জ্ঞান, বিবেকবোধ প্রখর। সেই ক্ষেত্রে তার যথেষ্ট হক আছে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার।”

জাহানারা পুষ্প এর মুখখানা মলিনতা থেকে গম্ভীর হয়ে গেল। স্বামীর উল্টো জবাব শুনে ধীমি শ্বাস ছেড়ে ছেলের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেন তিনি। সারোয়ার ভ্রু কুঁচকে তাকায়। মোঃ আবু সিদ্দিক স্ত্রীর পাশে ফাঁকা জায়গা দেখে তার পাশ ঘেঁষে বসতে লাগলে জাহানারা পুষ্প আমতার সুরে দাঁড়িয়ে যান। মোঃ আবু সিদ্দিক দেখে তপ্ত শ্বাস ফেলে বসে পড়েন। জাহানারা পুষ্প ছেলের দিকে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলেন,

“দেখ বাবা তোর জীবনে তোকে খুশির দিনগুলোতে নেওয়ার জন্যেই বাবা মায়েরা চেষ্টা করে যান। বাকিটা তোর নিজের ইচ্ছে। আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি। আজ বৃহস্পতিবার সবার জন্য গ্রামীণ খাবার রান্না করা হবে। তৈলাক্ত খাবার আজ রান্না হবে না। কেউ খেতে চাইলে বাহির থেকে অর্ডার করে খেতে পারে।”

শেষাক্ত কথাটি ছিল মূলত মোঃ আবু সিদ্দিক এর জন্যে। তিনি খাবারে তরকারির ঝোল খুব পছন্দ করেন। প্রতিদিন কোনো মাংস অথবা মাছের তরকারিতে ঝোল না পেলে তৃপ্তি নিয়ে খেতে পারেন না। সারোয়ার মায়ের কথা শুনে বাবার হাত ধরে বলে,
‘আপনি চিন্তে করবেন না আমি অর্ডার করে…।’
‘না করিস না। আমি মজা করেই তোর মাকে চেঁতায় দেয়। তুই তো জানিস আমার কোলেস্টেরল এর সমস্যা আছে। এই সমস্যায় উল্টো আমার তেল খাওয়া বারণ নিষেধাজ্ঞা কঠোর ভাবে। তোর মা এই ব্যাপারে জানে না। তোর মায়ের সাধারণত তেল ছাড়া খাবার বেশি পছন্দ। তাই ইচ্ছে করে আমি তোর মাকে চেঁতিয়ে রান্না করাতাম। বুঝিস তো কাজের বুয়ার চেয়ে তোর মায়ের হাতের রান্না আমার কাছে অমৃত লাগে। যেই সুখ তার অরুচিময় রান্নায় পায় সেই সুখ রুচিময় খাবারে পায় না। হয়ত তোর মায়ের রান্না একটু আধটু লবণ ছাড়া নাহয় শুকনো,ঝাল,তিতা হয়ে যায়। এমনো হয় মিষ্টি বেশি হয়ে যায়। সেসবের স্বাদ তোরা না পেলেও আমি পায়।”

সারোয়ার বাবার কথা শুনে মুচকি হাসে। পরক্ষণে তার ফুপির কথা মাথায় আসে। সে নিজেকে ধাতস্থ করে বাবার চেহারার দিকে পলকে তাকায়। তিনি হাত কচলে সময় উপভোগ করছেন। ছেলের প্রশ্নাতীত দৃষ্টি তিনি না দেখেও বুঝতে পারছেন। নিঃস্বার্থ কণ্ঠে আওড়ান।
‘বাবা আমি তোর বাবা। তোর মনে যেই প্রশ্ন জেগেছে অথবা আছে নিঃসন্দেহে জিজ্ঞেস কর। আমি জবাব দিতে বাধ্য। কারণ তোরা এখনকার জেনারেশন এর যুবরাজ। তোদের কাছে নিজস্ব ব্যক্তিগততা অবশ্য আছে। বল কী বলতে চাস তুই?’
‘বাবা আমার মা কে?’
প্রশ্নটা শুনে থমকে যান মোঃ আবু সিদ্দিক। তিনি ঢোক গিলে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। আমতা আমতা করে বলেন,
‘কে আবার এইত তোর মা। এটা আবার কেমন প্রশ্ন?’
‘প্রশ্ন আমার অদ্ভুত শুনাতেই পারে বাবা। তাই বলে জবাবটা আপনার এটা নয় সেটাও আমি বুঝতে পেরেছি। প্লিজ! বলেন বাবা আমি কে? আমার আসল পরিচয় কী? ছোট থেকে ম্যাসে পেলেপুলে বড় হলাম। আপনাকে আর মাকে দেখলে অদ্ভুত এক অনুভূতি হতো। যেনো আপনারা একে অপরের সাথে থেকেও খুব দূরে থাকেন। বাড়িতে এসে দেখি মায়ের সাথে আপনার বনাবনি হতো না। আপনিও মুচড়ে হয়ে থাকতেন মাও একপ্রকারে উদাসীন থাকতেন। কী হয়েছে অতীতটা নাহয় আজ বলে দেন।’

মোঃ আবু সিদ্দিক এর চোখে অতীত ভেসে উঠল। তিনি চোখের মাঝে ভীড় হয়ে আসা জল মুছে ছেলের কাঁধে হাত রেখে বলেন,

“আজ নয় বাবা আমাকে অন্তত দুদিনের সময় দে। আমি সব বলব তোকে। তবে এটা শুনে রাখ আমিই তোর আসল বাবা। আমি চাইছি কথাগুলো বলার আগে বোন জামাই কে দেখতে। তার সাথে কয়েক মুহুর্ত কথা বলার পর যেয়ে হয়ত তোকে সব বলব। সেই তোকে কথাটা বলেছে তাই না? এমনিতে দু’পক্ষের সম্বন্ধি হিসেবে আমাদের একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হতো। সেই বিশ্বাসের জোড়ে নাহয় নাছির তোকে বলেছে। তুই আপাতত সেসব নিয়ে ভাবিস না। তোর ফোকাস কেসের দিকে রাখ। মেয়েটি যেনো ইনসাফ পায়।”

“ইন শা আল্লাহ্ দোয়া করবেন।”

বাবার থেকে আশীর্বাদ স্বরূপ দোয়া চেয়ে সারোয়ার রুমে চলে গেল। মোঃ আবু সিদ্দিক ছেলেকে আশ্বাস তো দিলেন। তবে এর পরিণতি কী হতে পারে ভেবে তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন। অলস শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে রান্নাঘরের দিকে গেলেন। ভেতরের দিকে তাকিয়ে কয়েকপল তাকিয়ে রইলেন। ঘার্মাক্ত শাড়িতে লেপ্টে থাকা রমণীকে পরখ করেন। যেই চোখে মায়া আর মুগ্ধতা নিজস্ব রমণীর প্রতি। ইশ মেয়েটাও যদি কখনো সেই মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকে দেখতো! এই আক্ষেপটা বোধ হয় তার আক্ষেপ হয়েই রয়ে যাবে। মৃত্যুর পর হয়ত কখনো মেয়েটা একলা নির্জন গৃহে অবস্থান করা অবস্থায় বলে উঠবে,
‘আপনিই ছিলেন একমাত্র মানুষ যে আমায় নিঃস্বার্থ ভাবে আগলে রেখে ভালোবেসে ছিলেন। আমিই নির্বোধের মত কাঁচের টুকরোর পেছনে ঘুরে ছিলাম।’
তার মনের ভাবনায় ঠোঁট কামড়ে বিড়বিড় করে বলেন,
‘তোমায় আফসোস হতে দেখে হয়ত আমার রূহ কাঁদবে ভীষণ পুষ্পরাণী। কিন্তু তুমি আমায় বুঝলে না।’
দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি সরে যান। জাহানারা পুষ্প এর হাত থেমে যায়। খুন্তি পাতিলে রেখে তিনি একপলক পেছন ঘুরেন। কাউকে না দেখে তিনি অবাক হোন। হঠাৎ অনুভব করছিলেন কেউ তাকে গভীর দৃষ্টিতে দেখছিল। হয়ত তার মনের ভ্রম। এ ভেবে তিনি পুনরায় খুন্তি নাড়ায় মন দেন।

খাবারের টেবিলে নিলীমার পরিবারসহ সারোয়ার আর তার বাবা বসেছে। গরম গরম ভর্তা, শাকের বাটি একেক করে টেবিলে এনে রাখছেন জাহানারা পুষ্প। তিনি রান্না শেষ করে গোসল সেরেছেন বোঝা যাচ্ছে। চুলের মধ্যে গামছা আটকে রাখা। তার উপর থ্রিপিচ উড়না ঝুলিয়ে বন্ধক রূপে রেখেছেন তিনি। মাকেও বসতে বললে তিনি বলেন,
‘বাবা তোরা খেতে শুরু কর। মেয়েটা আসছে। অনেকদূর জার্নি করে আসবে। যে গণহারে বৃষ্টি হচ্ছে বাহিরে। কল করে ছিলাম বলেছিল আর একঘণ্টা লাগবে।’

সারোয়ার একগ্লাস জল পান করে বলে,’আমায় বলতো আমি পিকআপ করে আনতাম।’
‘আমিও বলেছিলাম সেই বলল ঘন বর্ষণে রিস্ক না নিতে।’
সারোয়ার মাথা নেড়ে ভাতের মাড়ে হাত লাগায়। নিলীমা আড়পল তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। জাহানারা পুষ্প বিষয়টা খেয়াল করে গলা খাঁকড়ে নিলীমার উদ্দেশ্যে বলেন,

“মা কী খেতে চাও বলো। আমি এগিয়ে দেয়।”

“না আন্টি আপনি দিয়েন না। যা দেওয়ার কথা তা তো দিতেই পারছেন না। খাবার দিয়ে আর আহ্লাদ না বাড়ালেই খুশি হবো।”

নিলীমার মা মিশকিতা মেয়ের কথায় গরম চোখ করে তাকিয়ে সাবধান করে দেন। মিশকিতা পূর্বেও তাদের বলেছিল এই জাহানারা পুষ্প তার কাজিন। সেই দিক ভেবে অন্তত নিজেকে সামলে রাখতে। কিন্তু নিলীমা রাগের চোটে বলে বসে। এতে শান্ত কণ্ঠে সারোয়ার বলে,
‘যদি এতোই নেওয়ার ইচ্ছে থাকে তবে আশ্রমে যান অথবা পাবে,ক্লাবে যান। অনেক কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে পেয়ে যাবেন।’

পাব,ক্লাবের কথা শুনে থমথমে হয়ে যায় নিলীমার মুখশ্রী। সে বুঝছে না লোকটা তার ব্যাপারে কেমনে জেনেছে! তাও এতটা গভীর জানার তো কথা নয়। জাহানারা পুষ্প ছেলেকে থামিয়ে খেতে বলেন। মোঃ আবু সিদ্দিক নিশীথ ভাবে খেয়ে যাচ্ছেন। জাহানারা পুষ্প স্বামীর পানে তাকান। মোঃ আবু সিদ্দিক আহ্লাদ করে তাৎক্ষণিক সময়ে তাকান। এতে দুজনের চোখাচোখি হওয়ায় জাহানারা পুষ্প লাজে অন্যদিক ফেরেন। মোঃ আবু সিদ্দিক মৃদু হেসে আহ্লাদ ভরা কণ্ঠে আওড়ান।
‘আসো জাহানারা আমার হাত থেকে কয়েক লোকমা খাও। মা না আসা পর্যন্ত খেয়ে নাও। খালি পেটে থেকো না। তোমার তো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ও আছে। না খেয়ে থাকলে সাথে সাথে গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ দেখা যাবে।’

জাহানারা পুষ্পের চোখ বড় হয়ে গেল। তিনি সবার দিকে তাকিয়ে স্বামীকে বলেন,
‘না না লাগবে না আপনি খেয়ে নিন।’

নিলীমার মা মিশকিতা হেসে বলেন,’আরে ভাবী খেয়ে নিন। ভাইয়া এত আদুরীয় গলায় বলছেন। অস্বীকার করা মোটেও ঠিক হবে না।’

সারোয়ার তাকিয়ে রইল। তার মা কী প্রতিক্রিয়া জানান তা দেখার জন্য। মোঃ আবু সিদ্দিক কয়েক পল অপেক্ষা করে হাত নামিয়ে নিতে গেলে সেই হাত ধরে নেন জাহানারা পুষ্প। চমকে যান তিনি।লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)এ প্রথম মেয়েটা নিজ থেকে তার হাত দিয়ে খেতে চাইছে পূর্বে যাও খাওয়াতেন তা হতো জোরপূর্বক। জাহানারা পুষ্প হাতটা মুখের কাছে এনে লোকমাটা মুখে পুরে নেন। মোঃ আবু সিদ্দিক তৃপ্তি ভরা চোখে তাকিয়ে থেকে পুনরায় লোকমা হাতে মাখেন। তা নিজ মুখ দিয়ে আরেক লোকমা নিজ স্ত্রীর দিকে এগিয়ে দেন। সারোয়ার এ প্রথম মায়ের দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় সন্তুষ্ট অনুভব করছে।

পরের দিন ভোরে,
সারোয়ার গাড়ি নিয়ে শেহরীনার ঘরের সামনে অপেক্ষা করছে। এই বৃষ্টিতে তার ভার্সিটি থাকায় তার জন্য সুবিধে হলো। সে মেয়েটাকে দেখেশুনে ড্রপ এন্ড ডাউন করতে পারবে ভেবে স্বস্তি পায়। রূপালি বেগম ছাতা নিয়ে মেয়েকে ধরে বেরিয়ে আসেন। তৎক্ষণাৎ সারোয়ার গাড়িটা কিছুটা সামনে এগিয়ে নেয়। শেহরীনা চট করে দেখে ফেলে।
সারোয়ার তার ফুপির সামনেই প্রকট হয়ে আস্ত মজার সুরে বলে,

“এই যে মিস মামুর ভাগ্নি আমার গাড়ি আছে, যাবেন কী কাজির অফিস? না মানে আপনার ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিতে পারি। এই ভরা মৌসুমে দাঁড়িয়ে থাকলে কাক ভেজা কাপড় নিয়ে শরমের চৌদ্দটা বেজে যাবে।”

রূপালি বেগম তো সারোয়ার কে ভোর সকালে ঘরের সামনে গাড়ি নিয়ে দেখে গদগদ করে উঠেন খুশির ঠেলায়। শেহরীনা মুখ বিকৃত করে বারণ করে ফেলে। কিন্তু তার মা তার কথা শুনলে তো! তিনি টেনে হেঁচড়ে মেয়েকে গাড়ির সামনে নিয়ে আসেন। বেকুবের মত মায়ের কাণ্ডে তাকিয়ে রইল সে। সারোয়ার মেয়ের হতবাক হওয়া চেহারা দেখে ঠোঁট কামড়ে হাসে। মনে মনে বলে,’মেয়ে সবেই তো ফাজলামি শুরু হয়েছে। আগে আগে দেখো হতা হে কেয়া!’
শেহরীনা বসবে না বলে জেদ করে দাঁড়িয়ে রইল। তখনি বিজলী চমকাল ঘন আকাশের মাঝে মেঘের আড়ালে। চমকে গাড়ির সাথে ঠেসে দাঁড়ায় সে। রূপালি বেগম দেখে হায় হুতাশ করতে লাগেন। শেহরীনা নিষ্পাপ মুখশ্রী করে এপাশ ওপাশ রাস্তায় চোখ বুলায়। কোনো রিকশা অব্দি নেই। ফলে সে উপায়ান্তর না পেয়ে সারোয়ার এর গাড়িতে উঠে বসে। তবে সে সামনে বসেনি। সারোয়ার হা। সে রূপালি বেগম অর্থাৎ নিজের ফুপিকে অভিযোগের সুরে বলে,

“বলি ফুপি আম্মু তোমার মেয়ের মাথায় কী গোবর ভরা? আমাকে কী উনি ড্রাইভার ভেবেছেন? এত দূর এসেছি শুধু মাত্র আপনার জন্য। আজ ঘন বৃষ্টি হবে মেয়ের চিন্তায় যেনো আপনি আহত না হোন সেই জন্য আমি এসে স্বস্তি দিচ্ছি আর সেখানে আপনার মেয়ে আমায় ড্রাইভার বানিয়ে অস্বস্তি দিচ্ছে। ইটস নট ফেয়ার ফুপি আম্মু।”

রূপালি বেগম চোখ গরম করে তাকান মেয়ের দিকে। শেহরীনা মনে মনে একদফা গা*লি ছুঁড়ে। তবে একপাও বাহিরে ফেলে না। মুখ ভেংচে বলে,
‘যদি নিয়ে যাওয়ার হয় তো নিয়ে চলুন। নাহলে আমি ঘরের ভেতর গিয়ে বসে থাকলেও শান্তি পাবো।’
সারোয়ার ‘গাধী’ বলে বিড়বিড় করে। শেহরীনা তার ঠোঁটের নড়চড় দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,
‘কী বললেন বুঝিনি?’
সারোয়ার মাথা নেড়ে কিছু না বোঝায়। রূপালি বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘সরি-রে বাপ। আমার মেয়ের মাথায় আসলেই গোবর ভরা। যাও বাপ তাকে গোবরখানায় ফেলে আসো।’
মায়ের কথায় শেহরীনার মুখ গোল হয়ে ঠোঁটজোড়া কিঞ্চিৎ ফাঁকা হয়ে যায়। মিররগ্লাস দিয়ে এ দৃশ্য দেখে সারোয়ার ঠোঁট হেলিয়ে বলে,
‘ওই ফাঁকা স্থান পূরণের সুযোগ করে দেবেন নাকি মেয়ে?’
‘পাভার্ট।’

শেহরীনা শব্দটা উচ্চ আওয়াজে আওড়ে বুকের উপর হাত গুটিয়ে জানালার দিকে মুখ করে রইল। সারোয়ার রূপালি বেগম এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি ফিরিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে। মাঝ রাস্তায় শেহরীনার নজর ফোনে আবদ্ধ রইলেও। তার খেয়াল নেই একজোড়া শান্ত চোখের দৃষ্টিকোণ খুব মুগ্ধতার ন্যায় তার উপর বিরাজ করছে। আচমকা ফোনের থেকে চোখ সরিয়ে উঠায় শেহরীনা। হৃৎপিণ্ড লাফিয়ে উঠে তার। মিররগ্লাসে দুজনের চোখের মিলন হওয়ায় কম্পনতা বেড়ে যায় শেহরীনার। অন্যত্রে, সারোয়ার চোখের দৃষ্টি স্বাভাবিক করে রাস্তার মধ্যে দৃষ্টি দেয়। লজ্জায় তুষ্ট হয়ে যায় শেহরীনা আর সারোয়ার এর ঠোঁটে লুকায়িত চমৎকার হাসি।
শেহরীনার ভার্সিটির সামনে এসে গাড়ি থামায় সে। মেয়েটা সেই যে লজ্জায় মুখ লুকিয়েছে। আর মিররগ্লাসের দিকে তাকায়নি। তার লাজুক চেহারা দেখতে সারোয়ার এর ভালো লাগছে না। তাই সে তার গাড়ির বক্স থেকে একটা পেন্সিল বের করে। এটা কোনো পেন্সিল ও না কাজল বলা চলে। সাজিয়া তার গাড়িতে সবসময় তার ব্যবহৃত একটা না একটা কাজল কালো পেন্সিল ফেলে যেতো। সেই কাজল পেন্সিলটি হাতে নেয় সে। গলা খাঁকড়ে মেয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। শেহরীনা চোখ পিটপিট করে মাথা তুলে তাকায়। সারোয়ার কে দেখে চোখের ইশারায় ভ্রু নাড়ে। সেও ভ্রু নাড়িয়ে জানালার বাহিরে তাকাতে ইঙ্গিত করে। শেহরীনা দেখে ঠোঁট ফাঁকা গোল করে ‘ওহ’ শব্দ বের করে কাঁধে ব্যাগ জড়িয়ে নেয়। বের হতে গেলে সারোয়ার ঠোঁট কামড়ে হঠাৎ ‘একমিনিট ওয়েট’ বলে মেয়েটাকে থামিয়ে দেয়। সে তার সঙ্গে আনা ছাতাটা নিয়ে বের হয় গাড়ি থেকে প্রথম। শেহরীনার সামনের গাড়ির দরজা খুলে তার দিকে ছাতা এগিয়ে বলে,’ধরো’।
শেহরীনা বলে,’আমার কাছে …।’
‘তোমার জন্য ধরতে বলিনি। আমায় বৃষ্টির ফোঁটা থেকে রক্ষা করতে ধরে থাকার জন্য বলছি।’
‘এ্যাহ কেনো?’
সারোয়ার জবাবহীন মেয়েটার হাতের আঙ্গুলের ভেতর ছাতা ধরিয়ে সে ঝুঁকে মুখ বরাবর। শেহরীনার মুখ দিয়ে ‘বেশরম’ শব্দ বের হয়ে আসে। সারোয়ার বাঁকা হেসে কিছুটা এগিয়ে থেমে যায়। শেহরীনা ভয়ে চোখ বুঁজে ফেলেছে। এ সুযোগ হাতছাড়া করে না সে। সুন্দর করে মেয়েটার মুখ স্পর্শ না করেই একটানে দুই ভ্রু এর উপর কাজল টেনে দেয়। শেহরীনা চমকে চোখ খুলে। সারোয়ার তার টুঁটি মৃদু চাপ দিয়ে ধরল। বুড়ো আঙুল দিয়ে মেয়েটার চোখের নিচে সযত্নে কাজল টেনে চট করে ছাতা নিয়ে দূরে সরে যায়। শেহরীনার ঘন ঘন চোখের কাজল কালো আঁখিদ্বয় দেখে সারোয়ার বুকের বাঁ পাশে বাঁহাত দিয়ে চাপড় মে’রে শেহরীনার উদ্দেশ্যে বলে,
‘ইশ কাজল এঁকে দেওয়ার জন্যে হলেও আমায় বিয়ে করিও কৃষ্ণরাণী।’

শেহরীনা মাথা নুইয়ে তার নিজস্ব ছাতা খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে ভার্সিটির দিকে এগিয়ে গেল। তখন পেছন থেকে সারোয়ার পুনরায় বলে উঠে।
‘ওহে কৃষ্ণরাণী আপনার চোখে কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক এঁকে দিয়ে মুছে লেপ্টে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে চাই। দিবেন কী আমায় সেই আর্জি ম্যাম?’
শেহরীনা দাঁতে দাঁত চেপে পেছন ঘুরে বলে,’ছিঃ নির্লজ্জ কোথাকার।’
সে অন্যদিক আর ধ্যান না দিয়ে ভেতরে চলে যায়। সারোয়ার ও গাড়িতে বসে চমৎকার হাসতে থেকে তার কোর্টের উদ্দেশ্যে চলে যায়।

চলবে….

#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#বোনাস_পর্ব
(১৮+ এলার্ট)

“ভাই কইতে ছিলাম আপনার টাকা না দেওনের একটা ব্যবস্থা আছে আমার কাছে। মানিলে আমি অবশ্য টাকা মাফ করে দিমু। এটা স্বাক্ষর ও করে দিমু। কিন্তু শর্ত হইলো আপনার ঐ যে কালো দেইখা বড় মাইয়াটা আছে না? তারে আমি আমার সোহাগী করতে চাই। আসলে হাচা কথা ঐদিন দেইখা খুব মনে ধরছিল আমার। শরমের ঠেলায় কইতে পারি নাই। এহন ওনে অসুস্থ হইয়া পড়ে আছেন। টাকা কেমনে দেবেন? তার চেয়ে ভালা মাইয়া বিয়ে দিয়া দেন। রাজরাণী হওয়া থাকবো। আমার রাজশাহীতে বড় প্রাসাদ আছে। সেহানে….।”

নাছির উদ্দিন জ্বলন্ত অগ্নিগিরির ন্যায় ক’ষে এক চ’ড় বসালেন মোকতাব মিয়ার গালে। তিনি বিছানার থেকে সোজা মাটিতে পড়ে যান। চোখজোড়া রক্তিম করে তিনি নাছির উদ্দিন এর পানে চান। নাছির উদ্দিন বসে থাকা অবস্থায় দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হোন। তবুও নিজেকে দমাননি। গলা উঁচিয়ে কথার দ্বারা এক ঝাড়া মা’রেন।
‘ঐ শু য়ো রের বাচ্চা , কু ত্তা হা রা ম জাদা চোদ*** তোর সাহস কেমনে হলো আমার মাইয়ার দেখে কু নজর দেওয়ার। আরেকবার কইলে তোর চোখ তুইলা আমার পুকুরের মাছরে খাওয়ামু‌। শা*লা বয়স হইয়া মইরা তুইয়ে পড়বি। তোর নজর তাও কচি জোয়ান মাইয়াদের শরীরে ঘুরে বেড়ায়। কু ত্তা তোরে আমি আর সহ্য করতে পারছি না। এই রূপ রূপ কোথায় তুমি জলদি রুমে আসো। এই রূপপপ।’

রূপালি বেগম ঘরে মেহমান স্বরূপ মোকতাব মিয়া অর্থাৎ দোকানের পূর্বের মালিক এসেছেন। হুট করে তার আগমনে খেয়ালে আসল পরিশোধের তারিখ পার হয়ে গিয়েছে। টাকা এখন অব্দি দেওয়া হয়নি। তবুও ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা অত্যন্ত সাবলীল কণ্ঠে তার স্বামীর কথা জিজ্ঞেস করেন।

“নাছির মিয়া কোথায়-রে দোকানের ভাড়া মেটান না বহুদিন হওয়া গেল। উনার কাছ থেইকা বাকি টাকা চাইতে আইলাম।”

ভাড়ার কথা শুনে পুরো মুখে কালো আঁধার ছড়িয়ে পড়ে রূপালি বেগম এর। একে তো ভারি বর্ষণ তার উপর দোকানপাটের দূরদর্শা চলছে। সেখানে বাকি টাকা পরিশোধ করা মোটেও এখন সম্ভবপর নয়। রূপালি বেগম ম্লান গলায় বলেন,
‘ভাইসাব আরেকটু সময় লাগবে। উনি এখন অসুস্থ। শয্যাশায়ী রোগীর মত বিছানায় আসেন এখন।’

“ওহ ছ্যা ছ্যা আমি তাইলে আরেকটু সময় বাড়িয়ে দিলাম।”

এই বলে তিনি ফিরে যেতে গিয়েও থেমে যান। খুব নম্র ভদ্র হয়ে রূপালি বেগম এর নিকট পুনরায় ফিরে এসে বলেন,

“আসলে ভাবী কইতে আইছিলাম। ভাইসাব এখন কোথায় আছেন? একটু দেখা করুন লাগতো। কথা আছে কথা কইয়া চলে যামুনে।”

মোকতাব মিয়ার কথা শুনে রূপালি বেগম ও নাকচ করতে পারেননি। ঘোমটা ভালো করে টেনেটুনে লোকটাকে দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেন। ভেতরের রুমে অনুমতি চাইতে স্বামীর কাছে যান। এর মাঝে অবশ্য মোকতাব এর কু নজর পুরো ঘরের মধ্যে তল্লাশি দেওয়া শেষ। নাছির উদ্দিন শুনে কিছুটা বিরক্ত বোধ করেন তবুও মেহমান মানুষ দেখে নাকচ করেননি। স্বসম্মানে ভেতরে আসার জন্য পাঠান। রূপালি বেগম আজ্ঞা দেন। এতে মোকতাব মিয়াকে স্বামীর কাছে দিয়ে তিনি সরে আসেন রুমের ভেতর থেকে। কেননা নাছির উদ্দিন মোটেও পছন্দ করেন পর পরপুরুষের সামনে নিজ স্ত্রী মেয়ে সন্তানদের উপস্থিতি।
রূপালি বেগম রান্নাঘরে চা পানির ব্যবস্থা করছিলেন। আকস্মিক স্বামীর রুম থেকে জোরালো কণ্ঠে ‘রূপ’ ডাক শুনে হতবিহল হয়ে ছুটে যান। কোনো অঘটন ঘটল না তো?
কিন্তু রুমে এসে আশ্চর্য হয়ে যান। মাটিতে গালে হাত দিয়ে র ক্তে লাল কাঁ টা ঠোঁট নিয়ে মোকতাব মিয়াকে বসে থাকতে দেখে তিনি আশ্চর্যান্বিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন।

“এ কী উনি মেঝেতে বসে আছেন কেনো! উনার দেখি মুখে হাতের ছাপ ও লেগেছে কী হয়েছে গো বলুন তো?”

“রূপ এখনি রান্নাঘরের থেকে দা টা আমার জন্য নিয়ে আসো। এই লোকটারে আমি আজকা খু ন কইরা তুইবো। এরে এখনি খু ন করমু হা লার পুতরে।”

রূপালি বেগম তার কণ্ঠস্বর বের করতে চাইলেও নাছির উদ্দিন গরম চোখে চোখ রাঙান। রূপালি বেগম স্বামীর বিপরীতে কথা বলতে পারেন না। তিনি সোজা রান্নাঘরে যান।এর মাঝে মোকতাব মিয়া চোখ লাল করে নাছির উদ্দিন কে শাসিয়ে দেন।

“এডা তুই ঠিক করলি না-রে নাছির। তুই চিনস নাই আমারে, জানিস না আমার পাওয়ার। তোকে আর তোর এই সংসারটারে নরক দেখাইয়া ছাড়মু। দেখে নিস আমার নজর তোর সংসারকে জ্বালাইয়া মারবো।”

নাছির উদ্দিন রেগেমেগে তার পাশে রাখা পানি ভর্তি কাঁচের গ্লাসটি নিয়ে ছুঁ ড়ে মা রেন মোকতাব মিয়ার দিকে। তিনিও তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া জানাতে না পেরে ঠাসস করে কপাল বরাবর গ্লাসটি লেগে যায়। যার কারণে তিনি কপাল চেপে চিৎকার করে মেঝেতে বসে পড়েন। রূপালি বেগম এসে মুখে হাত চেপে ধরেন। পাড়া পড়শীর কাছে আওয়াজটা গণহারে পৌঁছে গেল। নাসমা ঘুম ছিল বাবার রুম থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ঘুম ঘুম চোখ ডলে ডলে বাবার রুমে এসে এক লোককে র ক্তা ক্ত হয়ে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেয়।
রূপালি বেগম ভয়ে মেয়েকে দেখে তাকে বুকে চেপে ধরেন। নাছির উদ্দিন ধপ করে গাঁ হেলিয়ে দিলেন বিছানায়। রা গের তেজস্ক্রিয়তায় তিনি মারাত্মক ভুল কর্ম করে ফেলেছেন।
নাসমুর ঘরে নেই। সে তার বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছে। তার ল্যাব প্র্যাকটিক্যাল নিয়ে বন্ধুগণের মাঝে শলা পরামর্শ করতে। রূপালি বেগম বাক বিতণ্ডা খুঁজে না পেয়ে ঠোঁট কামড়ে বুদ্ধি সাজায় মনে। স্বামীর কাছ থেকে পরে পুরো বিষয় জানা যাবে। আপাতত পরিস্থিতি সামলাতে হবে। তিনি বাহিরে গিয়ে উঠান পেরিয়ে কাঁদা মাটির পাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে আহাজারি করে সবাইকে ডাকেন।
কয়েকপলে ছড়িয়ে গেল এলাকার চেয়ারম্যানের বাসায় মোকতাব মিয়া নামের এক লোক আহত হয়েছে। আহত হওয়ার মূল ঘটনার প্রেক্ষাপটে জানা গিয়েছে। লোকটা পা পিছলে কাঁচের গ্লাস নিয়ে হেঁচকে পড়ে ছিলেন। উক্ত প্রসঙ্গ সত্য না মিথ্যে এ বিষয়ে তিনি আহত থাকায় জবাব দিতে পারেননি।

___
জাহানারা পুষ্প রুমে এসে দেখেন মোঃ আবু সিদ্দিক উদাসীন হয়ে জানালার ধারে চেয়ার টেনে বসে আছেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তিনি একপলক তাকিয়ে চলে যেতে নিয়েও কী ভেবে স্বামীর দিকে এগিয়ে যান। স্বামীর পেছনে এসে দাঁড়াতেই তিনি চটকে ধরে ফেলেন।
‘বউ পেছনে কেনো দাঁড়িয়ে আছো? সামনে এসে বসো।’
জাহানারা পুষ্প শুনে জবাবহীন প্রতিক্রিয়া দেখান। চেয়ার এক হাতে ধরে জানালার বিপরীত পাশে টেনে বসেন। বরাবর, মুখোমুখি দুজনে। তবে চোখের দৃষ্টি একজনের জানালার বাহিরে প্রাকৃতিক সমাবেশের দিকে আরেক জনের তার অর্ধাঙ্গিনীর দিকে। মোঃ আবু সিদ্দিক তপ্ত শ্বাস ফেলেন। স্ত্রীর হাতে আলগোছ ছুঁয়ে দিলেন। কেঁপে উঠেন জাহানারা পুষ্প। কেননা আবেশময়ী স্পর্শ তিনি এ প্রথম অনুভব করছেন। পূর্বে তিনি অন্যমনস্ক থাকায় কখনো স্বামীর স্পর্শ কে আমলে নিতেন না। বলতে গেলে তিনি একধরণের পুতুলের ভাব নিয়ে নিজেকে প্রদর্শন করতেন। আজ স্বামীর স্পর্শ কে তিনি প্রথম করে চিনছেন। মোঃ আবু সিদ্দিক মৃদু কণ্ঠে আওড়ান।

“জানো পুষ্প আমার না তোমাকে কষ্ট দেওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। পরিস্থিতি আমাদের হাতের মুঠোয় ছিল না। আজ যা বলব হয়ত তুমি শুনে তোমার মনে থাকা আমার জন্যে দয়াটা মিটে যাবে। সেখানে ভালোবাসা অটুট হতে শুরু করবে। কিন্তু আমি চাই তুমি আমায় ঘৃণা করেই আজীবন পার করে দিও। আমার তোমাকে পাওয়া হয়ে গিয়েছে। তুমিময় স্বাদ আমি কিশোর জীবনেই গ্রহণ করে ফেলে ছিলাম। মনে পড়ে সেই সাঁঝবেলার কথা? যখন তুমি একজোড়া ঝুমকা,পায়ে আলতা আর নুপূর পড়ে পুরো গ্রামের চারপাশ ঘুরে বেড়াতে! তোমার সেই নুপূরের ঝুনঝুনি আমার হৃদয়ে ঢোলা দিয়ে ছিল। আমি সেই নুপূর পরিহিত ঝুনঝুনির প্রেমে পড়েছিলাম। কখনো যদি আমায় একটু হলেও মন থেকে ভালোবেসে থাকো তবে একজোড়া নুপূর পরে আমার সামনে দীর্ঘক্ষণ বসে থেকো। বেশিক্ষণ না শুধু তিনঘণ্টা। তারপর তুমি তোমার মত পাখা ঝাপ্টে উড়ে বেড়াবে। আমি সেই তোমার উড়ন্ত পাখার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসব।”

জাহানারা পুষ্পের কথাগুলো শুনে কেমন যেনো বুকটা চিনচিনে ব্যথা করে উঠল। তিনি বুঝছেন না আজ হঠাৎ সারোয়ার এর বাবার হলো কী? তিনি অদ্ভুত কথা কেন বলছেন? জাহানারা পুষ্প আলগোছে স্বামীর হাত চেপে ধরে মৃদু চাপ দেন। চমকিত, পুলকিত হয়ে গেলেন মোঃ আবু সিদ্দিক। তার স্ত্রী এ প্রথম পৃথকভাবে তার হাতে সমর্থন করেছেন। তিনি লোভ সামলাতে না পেরে আবদার করে বসলেন।
‘একবার আমায় জড়িয়ে ধরবে ঝুনঝুনি?’
স্বামীর এ আব্দার শুনে থমকে যান জাহানারা পুষ্প। তবুও তার কেনো যেনো আজ বারণ করতে মন সায় দিচ্ছে না। ফলে তিনি মুচকি হেসে স্বামীকে দুহাত মেলে বুকে জড়িয়ে নেন। মোঃ আবু সিদ্দিক স্ত্রীর পিঠে চোখের জল ফেলেন। যা স্ত্রী বোঝার আগেই তিনি হাত দিয়ে মুছে নেন। মিনিট খানেক থেকে তিনি নিজ থেকে সরে আসেন। স্ত্রীর হাত ধরে বলেন,

“শুনো তোমার থেকে আমি অনেক কিছু লুকিয়েছি। হয়ত পরে বলার মত সময় সুযোগ নাও পেতে পারি।

চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)