প্রিয়অপ্রিয়ের সংসার পর্ব-৬০+৬১

0
31

#প্রিয়অপ্রিয়ের_সংসার
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_৬০_৬১ (ভিনদেশে তুমি-আমি একরাত🔥)
#স্পেশাল_পর্ব

“কী ব্যাপার কৃষ্ণ কুমারী আপনি হঠাৎ আমার কাছে! আজ সূর্য কোন দিকে অস্ত যাচ্ছে! স্বয়ং আপনি নিজ পায়ে হেঁটে এ পর্যন্ত এলেন। তবে এলেন যে, আপনার ব্যারিস্টার হাজবেন্ড জানলে রাগ করবেন না। ওপস উনি তো আবার বেশ বউ পাগল মানুষ। বউয়ের উপর মোটেও সন্দেহভাজন রাখেন না।”

কায়েসাম এর মশকারা স্পষ্ট প্রতীয়মান শেহরীনার কাছে। শেহরীনা ফিচেল হেসে বলে,

“হুম কারণ আমার উনি মানুষটাই তেমন। তার মতে, তার বউ কখনো অন্যায় করতে পারে না। করলে উনি নিজেই এসে আমায় প্রটেক্ট করতে আর্জি পোষণ করেন।”

কায়েসাম উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। সে তার নজর দিয়ে সে কখনো তার প্রিয় নারী কে ম্লান করে দিতে চাই না। শেহরীনা কায়েসাম এর থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছে।

“কিছু বলতে চান কৃষ্ণ কুমারী!”

“আপনি তো আমাকে তুমি করে ডাকতেন। এখন আপনার মুখে হঠাৎ ‘আপনি’ সম্বোধনটা হজম করার চেষ্টা করছি।”

“এই অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে অন্য কেউ।”

শেহরীনার মনের থেকে ভারী এক বোঝা নামল। চোখ বুঁজে তৃপ্তির শ্বাস ছেড়ে বলে,

“আপনাকে সংসারে মন দিতে দেখে বেশ ভালো লাগছে। এভাবেই তনুদি আপুর হাত ধরে রাখবেন। কখনো তার সাথে কারো কথা ভেবে অন্যায় করবেন না।”

কায়েসাম এর কানে কথাগুলো হুল ফুটিয়ে দেওয়ার মত লাগছে। নিরবে বিকালের এক প্রাণঢালা হাওয়া খাওয়ায় মগ্ন থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করল সে। শেহরীনা জবাব না পেয়ে মলিন মুখে চলে যেতে ধরল। তখনি নরম গলায় কেউ বলে উঠে।

“আশা করি আপনিও জীবনে অনেক সুখী হবেন। আমি সফল আমার জীবনে তনুদির মত কেউ এসেছে তাই। আপনার জন্যে ও খুশি অনুভব করি আমি। রবের দোয়ায় আপনাদের ঘর ও একসময় আলোকিত হবে। পাপীদের শাস্তি তারা নিজেরা পেয়েছেন। আপনার মনে কোনো গ্লানি রাখবেন না। আর একটা অনুরোধ করব। আপনার সন্তান হলে তাকে কখনো আমাদের ব্যাপারে জানাবেন না।”

শেহরীনার কাছে কথাগুলো বেশ অদ্ভুত ঠেকল। মুখ ঘুরিয়ে দেখল কায়েসাম চলে যাচ্ছে। সে পিছু ডাকতে গিয়েও ডাকল না। তার মনের সংশয় দূর করতে চেয়েছিল। কী বুঝিয়েছেন কায়েসাম তার কথায়!

“ওত বেশি ভাবতে নেই আমার কৃষ্ণবউ। কাছে আসো তো। এখানে কেউ নেই।”

হঠাৎ সারোয়ার এর আগমনে শেহরীনার মুখে হাসি ফুটল। তার আগাতে হয়নি। সারোয়ার নিজ পায়ে হেঁটে এসেই সূর্যের অস্তিমুখে দাঁড়িয়ে নিজ অর্ধাঙ্গিনী কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। পরম আবেশে স্বামীর কাঁধে মাথা ঠেকাল সে। সারোয়ার তার কানের কাছে ঠোঁট এলিয়ে বলে,

“আমরা মানুষ হলাম বেশি কৌতুহল প্রবণ। আমাদের উচিৎ সব কথা না শোনা। তবুও বাঙালি জাত বলে কথা। কথা জানতে না পারলে পেট ভরে না। কিন্তু আমি স্ট্রিট খুব। তোমার থেকে এত গভীরে ভেবে কী লাভ! তারা বিদেশ চলে যাচ্ছে। এই তো সুখবর আমার জন্য!”

শেহরীনা চোখ পাকিয়ে তাকাল। সারোয়ার হেসে ফেলল। টুপ করে তার বউয়ের কপালে চুম্বন দিয়ে বলে,
‘দোয়া করো যেনো তারা সুখে সংসার করুক ভীনদেশে হলেও।’
শেহরীনা আলগোছে মাথা নাড়ল।
‘মা গো তোমরা বাবা অতিথি হয়ে এসেও রোমান্সে পড়লে! এখন মুরব্বিদের কথাও একটু ভাবো। শেহরীনা মা চলো তো কাজ আছে।’

রুফিয়া সাইমুম এর কথায় দুজন ছিটকে দূরে সরে গেল। তিনিও মুচকি হেসে তৎক্ষণাৎ ছাদের দরজা থেকে সরে গেলেন। কায়েসাম এর মায়ের সামনে অপ্রতিভ অবস্থায় পড়ায় শেহরীনা চোখ রাঙিয়ে তাকাল সারোয়ার এর দিকে। বেচারা নিজেও বুঝতে পারেনি যে, এক লজ্জাজনক ঘটনা ঘটবে। চোখ পিটপিট করে নিষ্পাপ বাচ্চার মত মুখ লটকিয়ে নেয়। শেহরীনা আর দুদণ্ড ছাদে রইল না। দ্রুত হেঁটে নিচে চলে যায়। সারোয়ার ও তার পিছু পিছু রাগ অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য এগোলো। কায়েসাম ছাদের সিঁড়ি দিয়ে এক দম্পতিকে খুনসুটি করে নামতে দেখে চোখ নামিয়ে নিলো। শীতল চাহনি নিয়ে তাকাল নিজ স্ত্রীর দিকে। যার চেহারায় ফুরফুরে এক উম্মাদনা বিরাজ করছে। আজ কতদিন পর মেয়েটার চেহারায় প্রশান্ত এক ফুরফুরে হাসি খিলখিল করছে। এই প্রশান্তির অধিকারীনি সে। তাই বোধোদয় তার সাথে সে অন্যায় করতে পারেনি।
শেহরীনা গলা ঝেড়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। সবাই কাজ এবং গল্প থামিয়ে তাকাল। শেহরীনা ঘাবড়ে গেল। দৃষ্টি আকর্ষণ করার অর্থ যে সকলের চোখ পড়া আগে ভাবেনি। স্ত্রী কে নিশ্চুপ দেখে সারোয়ার নিজেই বলে উঠল।

“টানা একটা বছর কেমনে চলে গেল আমরা কেউই বুঝতে পারলাম না। শেহরীনার অনার্সের নতুন বর্ষ আরম্ভ হবে। এর পূর্বে তাদের মাঝে বন্ধ পড়েছে। এই বন্ধে আমরা প্ল্যানিং করেছি কোথাও ঘুরতে যাবো। এজ এ্যা ফ্যামিলি ট্যুর, কী বলেন সবাই!”

জাহানারা পুষ্প উৎফুল্ল গলায় বলেন,

“এত ভালো ভাবনা বাবা। কতদিন হয়ে গেল কোথাও ঘুরি না। এখনি তো সময়। ম’রার জন্য এক পা তো কবরে চলেই গেল।
আরেক পা যাওয়ার আগে চলুন সবাই মিলে ঘুরে আসি‌।”

শেহরীনার মনটা হাঁসফাঁস করছে। সে চাইছে ফ‌্যামিরি ট্যুরের মধ্যে তার পরিবারের ও সামিল হওয়ার দরকার। নাহয় অন্যায় দেখাবে। মোঃ আবু সিদ্দিক অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে শেহরীনার ভাবনা কে সত্য করে দিলেন।

“বুদ্ধি খারাপ নয় বাবা। সবাই মিলে যাওয়া যায়। নাছির উদ্দিন কেও জানিয়ে দেবো। কী বলেন ইদরিব ভাই!”

ইদরিব সাবেক এবং রুফিয়া সাইমুম কিছুটা নিরব প্রকৃতির হয়ে গেলেন। তারা চোখে চোখে ইশারায় কথা বলছেন। মোঃ আবু সিদ্দিক দম্পতির ইশারায় বার্তা দেখে নিজ স্ত্রীর দিকে তাকান। তিনি সংকোচহীন কণ্ঠে তাদের উদ্দেশ্যে বলেন,

“আপনারা চাইলে সময় পেছানো যাবে।”

ইদরিব সাবেক চমকে বলেন,’না না সিদ্দিক ভাই কী বলছেন! আমাদের জন্য দোয়া করে অপেক্ষা করবেন না আপনারা। আপনারা নিজেদের মতন এনঞ্জয় করুন।’

শেহরীনা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সবার নজর ইদরিব সাবেক এর পরিবারের সদস্যদের দিকে। তিনি ইতস্ততহীন কণ্ঠে বলেন,

“আসলে আজকের দাওয়াতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমাদের জন্য। বিদায় বেলায় সবার সঙ্গে দেখা করাটা জরুরি।”

‘বিদায়বেলা’ শব্দটা যেনো শেহরীনার কানে গুঞ্জন এর মতন লাগল। তনুদির দিকে তাকাল। তার লাজুক চেহারা দেখে যা বোঝার বুঝে নিলো। চোখ বুঁজে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। ঠোঁটের উপর ভেসে উঠল প্রাণঢালা হাসি‌। সেই হাসির দিকে দুজোড়া চোখের মালিক এর দৃষ্টিকোণ মুগ্ধতায় ছড়িয়েছে। হ্যাঁ তাতে একজন পবিত্র হলেও অপরজনের জন্য সেই দৃষ্টিকোণ অপবিত্র এবং মান্যহীন। তথাপি কায়েসাম গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,

“বাবা কানাডার সিটিজেনশিপ পেয়েছেন। সেই সুবিধার্থে আমরা সবাই কানাডায় সিফিট হতে চলেছি। দেশে বোধোদয় আর কখনো ফেরা হবে না‌। তাই বাবা আয়োজন করে দাওয়াতটি দিয়েছেন। ইতিমধ্যে আমি ও তনুদি ভার্সিটি থেকে টিসি নিয়ে ফেলেছি। এই ডিসেম্বরে আমার অনার্স এর চতুর্থ বর্ষের সমাপনী হয়েছে। তাই বাবাও ভার্সিটির থেকে ছাড়পত্র নিয়ে সব প্রস্তুতি করে রেখেছেন। কালকের ভোর ৫টায় আমাদের ফ্লাইট! আপনাদের কাছে অধীর প্রার্থনা আমাদের জন্য দোয়া করবেন।”

পিনপতন নীরবতা চেয়ে গেল বাড়িতে। কায়েসাম এর স্পষ্টবাদী কণ্ঠ যেনো তারা মানতে পারছে না। শেহরীনা মাথা নুইয়ে রেখেছে। মনের কোণায় কোথাও সে নিজেকে দায়ী করছে! সারোয়ার নির্জীব কিন্তু মনের প্রান্ত থেকে উৎফুল্ল হয়ে আছে সে। তার মতে যা হচ্ছে, বেশ হচ্ছে। শেহরীনার ঝুঁকে রাখা মুখ দেখে রাগ পেল তার। আলগোছে তাকে আঁকড়ে ধরে সবার নিরবতা কাটিয়ে উঠতে বলল,

“এটা তো শুভ খবর আঙ্কেল। আপনার উন্নয়নের ফলেই ভালো একটা দেশে অবস্থান করতে পারছেন। এটা তো দুঃখের বিষয় নয়। কায়েসাম ভাইয়ের লাইফও সেটেল হয়ে পড়বে। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন। অন্তত দেশের মত ঝড়ঝাপটা উন্নত দেশে অনুভব করবেন না।”

ইদরিব সাবেক এর মুখখানা উদাসীন হয়ে পড়ল। তিনি ম্লান কণ্ঠে বলেন,

“ঠিক বলেছো বাবা। তবুও মাতৃভূমি বলে কথা। বাবা-মায়ের কবর এখানে। তাই আমি এবং আমার স্ত্রী ভেবে রেখেছি বছরে একবার দেশে কবর জিয়ারত করতে আসব।”

সারোয়ার সাড়া দিলো। সকলের মাঝে পুনরায় হাসিখুশি ভাব ফুটে উঠল। তনুদি সবার জন্য খাবারের ব‌্যবস্থা করে নিলো।

___
দিন যায়, ক্ষণ যায়, বছর গড়িয়ে নতুন বছরের ও আগমন ঘটে যায়। আচমকা শীতের প্রকোপ বেড়ে গেল। এদিকে প্রায় একবছর হয়ে দুটো মাস পেরিয়ে গেল শেহরীনার বিবাহিত জীবনের। মানুষটার সঙ্গে তার সংসারের হাল সুখে দুঃখেই কাটছে। তার কোনো রূপ অভিযোগ নেই মানুষটার প্রতি। সে যে তার হয়ে পৃথিবীতে আছে এই যথেষ্ট!
এ মুহুর্তে ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে বিছানায় কম্বল জড়িয়ে আছে শেহরীনা। পরণে স্বামীর শার্ট বিহীন কিছু নেই। থাকবেও কেমনে! সারোয়ার কী গতরাতে ঘুমোতে দিয়েছিল তাকে! উহুম নিজেও ঘুমায়নি তাকেও ঘুমোতে দেয়নি। বেটা এক নাম্বারের বদ লোক! জন্মদিনের উপহার স্বরূপ শেহরীনা হাতঘড়ি এবং পাঞ্জাবি দিলো। কিন্তু বদলোক করল কী! উপহার হিসেবে গাঁয়ের সঙ্গে তাকেই জড়িয়ে নিলো।
মুখ ফুলিয়ে কম্বলের ভেতর গুটিসুটি মেরে শুয়ে রইল সে। সারোয়ার ন’গ্ন বুকে কোমর অব্দি পাতলা প্যান্ট পরিহিত অবস্থায় অঙ্গির সামনে কাঠ-কয়লা ভেঙ্গে রাখছে। উদ্দেশ্য আগুন জ্বালিয়ে রুমটা কে ঠাণ্ডা থেকে গরম করা। আগুন জ্বালানো হলে নিজ হাতে আগুনের ভাব ছড়িয়ে শেহরীনার নিকট এগিয়ে গেল।
কম্বলের ভেতর হাত ঢুকিয়ে অদেখার ভান করে গরম আভা লাগিয়ে দিলো শেহরীনার কোমরে। আরাম পেল সে। মাথার থেকে কম্বল ছড়িয়ে নিজ হাতে পুরুষেলী গরম হাত কে কোমড়ে বন্দিনী রূপে আগলে নিলো। সারোয়ার দুষ্টু হেসে জিজ্ঞেস করল।

“রাতে কী আদর ঠিকঠাক হয়নি! এমন আবেদনময়ী রুপ দেখাচ্ছো যে!”

শেহরীনা চুপটি করে গলা জড়িয়ে নিরব হাসে। সারোয়ার অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রইল। না তার ফাজিল স্ত্রী জবাব দিলো না। নিরবতা সম্মতির লক্ষণ ও ধরতে পারছে না। কেননা গতরাতে একটু বেশিই বেপরোয়া হয়ে পড়েছিল সে। মলিন কণ্ঠে আওড়ায়।

“তোমাকে আমি বেশি ব্যথা দেয় তাই না বউ!”

স্বামী কথায় হকচকিয়ে গেল শেহরীনা। সারোয়ার এর মলিন চেহারা দেখে থতমত কণ্ঠে বলে,’না না আমার তো ভালো লাগে।’
পরক্ষণে নিজের মুখ চেপে ধরল সে। সারোয়ার মিটিমিটি হাসছে। স্ত্রীর নাকে চুম্বন দিয়ে বলে,’শোকর করো রাতে শুধু চেপে ধরে ছিলাম। আসল কর্ম তো এখনো হয়নি।’
লাজুকতা নিয়েই স্বামীর বুকে মাথা ঠেকায় সে। গতরাত তাদের জন্য স্পেশাল ছিল বটে। দুবাইয়ের বিলাসবহুল ছাদে দাঁড়িয়ে তারা ফানুস ওড়ানো থেকে আরম্ভ করে পূর্ণিমার মস্ত ঘন কালো আকাশের চাঁদ এর আলো উপভোগ করেছে। তবে ঠাণ্ডায় বেশিক্ষণ টিকতে না পেরে রুমে এসেই ঘুম। কেননা সারা সকাল তারা জার্নি করে দুবাই এসেছে। হানিমুন ট্রিপ বলা চলে। বিয়ের একবছর পর যেয়ে তারা হানিমুনে এসেছে ভাবা যায়! শেহরীনার ভাবনার মাঝেই সারোয়ার টুপ করে ঠোঁট কামড়ে ছেড়ে দিলো। ‘আউচচচ’ শব্দ করে উঠল সে। স্বামীর বুকে মৃদু চাপড় মেরে শুয়ে পড়ল। এ দেখে সারোয়ার অবাক হলো। এখন বাজে সকাল আটটা। মেয়েটা এখন আবার শুয়ে পড়ল। এখন তো আর ঘুমালে চলে না। সে কম্বল টেনে বলে,

“এই কী ব্যাপার শুয়ে পড়েছো কেনো! ভুলে গেলে আজ সকালের নয়টায় বাস চলে আসবে। এখন আটটা বেজে গিয়েছে। নাস্তা করে রেডি হতে হবে। তোমার এমনিতে রেডি হতে একঘণ্টা লাগে। তখন বাস চলে গেলে আমি আর যাবো না। দরজা, জানালা বন্ধ করেই…।”

সারোয়ার তার কথা সম্পন্ন করতে পারল না। শেহরীনা ঝড়ের বেগে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। ভ্যাবাচ্যাকা খেল সারোয়ার। কী হলো এটা! সে রেগে ওয়াশরুমের দরজায় গিয়ে টোকা দিলো। শেহরীনার দমফাটা হাসি পাচ্ছে। মানুষটা কে কত সহজেই না বোকা বানাল সে! তার জানা আছে, সে যদি নিজ থেকে মুখে বলত, এখন ফ্রেশ হয়ে আসি! তবে তার একান্ত পুরুষ কখনো সুপুরুষ হয়ে থাকতো না। অবশ্য দুষ্টু পুরুষ এর পরিচয় বহন করতো‌।

“এই মেয়ে দরজা খুলো। আমরা না জামাই-বউ। জামাই বউয়ের একসাথে গোসল করা সুন্নত। দরজা খুলে দাও।”

“জ্বি খুলব পরে। আগে আমি গোসল সেরে নেই।”

“এই বউ প্লিজ! আমি ছাড়া তুমি তোমার ঐ পিঠ মেজে মজা পাবে না।”

“হয়ছে ঢং আপনার! গ্রামের মেয়েলোক আমরা। মায়ে ছোট থেকে ঝালফাড়া দিয়ে গাঁ মাজতে শিখিয়েছে। সো ইউ ডোন্ট ইন্টারফেয়ার প্লিজ!”

“ঝালফাড়া কী প্রথমবার শুনলাম!”

“ওহ আপনি শুনবেন কেমনে! আপনি বিলেতি বিলাই যে! বিলেতি বিলাইরা ঝালফাড়ার অর্থ বুঝতো না। আঞ্চলিক লোকদের মুখে এই ঝালফাড়া শব্দটা বেশি আসে। এমনিতে শুদ্ধ ভাষায় হচ্ছে গাছা। ব্যস আমার কথা শেষ আপনি চুপ মারেন হুউ।”

সারোয়ার ভেংচি কেটে বিছানায় বসে নাস্তা অর্ডার করল। এমনিতে তার মুখ হাত ধুয়ে কাপড় পরলে হবে! কেননা জার্নি করে এসেই সে গোসল সেরেছিল। তবে মেয়েটা ঘুমের ঠেলায় গোসল করার শক্তি পায়নি।
ডোরবেল হলো! নাস্তা আসায় সারোয়ার নাস্তা সাজানোর মাঝে মাথা মুছতে মুছতে বের হলো শেহরীনা। সারোয়ার স্নিগ্ধ নারী কে দেখে ‘মাশাআল্লাহ’ বলে উঠল। শেহরীনা কোমল হাসি উপহার দিলো। সারোয়ার তার ভাবনারয় বিভোর হতে পারল না। ফোন বিকট শব্দ করে বেজে উঠল। স্ক্রিনে বাবার নাম দেখে চট করে কল রিসিভ করল।

“কী-রে বাপ বেটা কে বাপে হানিমুনে পাঠিয়েছে। আর উনারি খবর নেই! তোরা পৌঁছে ছিলি ঠিকভাবে!”

“সরি বাবা আসলে এসে ক্লান্ত হয়ে গেছিলাম। হ্যাঁ আমরা আলহামদুলিল্লাহ ঠিকভাবেই পৌঁছে গেছিলাম। তোমাদের ফ্যামিল ট‌্যু্র কেমন চলছে!”

“একদম জাকানাকা। অনেক দিন পর যেয়ে দুই পরিবার একসাথে ঘুরতে এসেছি কক্সবাজার। এই যেনো অনেক আমাদের জন্য।”

“এনঞ্জয় বোথ অফ ইউ বাবা।”

“সেম টু ইউ মাই সান। আরেকটা কথা শেহরীনার সাথে মিলে ফারদিন এর হবু বউয়ের জন্য গহনা কিনে নিস। বউমাকে নাকি তোর মায়ের কত ভরি কিনতে হবে বলে দিয়েছে।”

“ঠিকাছে বাবা।”

“ওকে সান রাখছি। খেয়েদেয়ে সুখবর যেনো জলদি পায়। আল্লাহ হাফেজ।”

সারোয়ার মুচকি হেসে সালাম আদায় করে ফোন কাটল। কায়েসাম এর পরিবার দেশে নেই আজ দুটো মাস পেড়িয়ে গেছে। তিলোত্তমা প্রভাবে কায়েসাম ও দ্বিতীয়বার কাউকে মন দিলো। হয়ত শেহরীনা তার দীর্ঘ শ্বাস ছিল বিধেয় তনুদি কে আপন চিত্তে আগলে নিয়েছে। এই নিয়ে সারোয়ার এর মনে কায়েসাম এর প্রতি ক্ষীণ এক কৃতজ্ঞতা ফলন আছে। হঠাৎ বুকের উপর কারো কোমল হাতের ছোঁয়া পেয়ে সেই হাতের মালিক কে আঁকড়ে ধরে সোফায় বসে পড়ল তারা। সারোয়ার কে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগল শেহরীনা। সারোয়ার তার দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলে উঠল।

“তুমি খুব ভাগ্যবতী শেহরীনা। তুমি নিজেও জানো না কেউ তোমাকে ভালোবেসে কতটা ভয়ানক হয়ে ছিল। আমার চেয়েও ভয়ানক রূপ ছিল তার। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে তুমি তার না হয়ে, আমার হলে। এই জন্য আমি চির কৃতজ্ঞ সেই পুরুষের। তুমি আমার অধিকারে, আমার নামে লিখিত এই আল্লাহর কাছে লাখ শোকরিয়া।”

সারোয়ার খাচ্ছে আর দুষ্টুমি করছে। শেহরীনা মৃদু অভিনয়ের রাগ দেখাচ্ছে কিন্তু তৃপ্তি ভরে উপভোগ করছে।

অন্যত্রে, হোটেলের মত দেখতে কারুকাজ সম্পন্ন বিদেশি আভায় মোড়ানো বিলাসবহুল বাড়িটি নিজ ইনকামে বানিয়ে ছিলেন ইদরিব সাবেক। সেই বাড়িতে পাঁচটি রুম রয়েছে। বাবা-মার সঙ্গেই কায়েসাম তার স্ত্রী নিয়ে থাকে। কানাডার নামকরা ভার্সিটিতে কায়েসাম এর সঙ্গেই তনুদি মাস্টার্স করছে। কানাডার এখন সময় রাত ১:৩০ মিনিট। বিছানায় বিড়াল ছানার মত ঘুমিয়ে আছে তনুদি। স্ত্রীর ন’গ্ন বুকের উপর নিজের পরণের শার্ট পরিয়ে দিলো কায়েসাম। তনুদি ঘুমের ঘোরে থেকে কায়েসাম কে আঁকড়ে ধরে তার বুকের সঙ্গে লেপ্টে গেল। কায়েসাম তনুদির কাণ্ডে নিরব হাসল। তার চোখে ঘুম নেই। রাতটা বোধোদয় আজ নির্ঘুমে কাটবে তার। কেনোই না আজ তার আর তনুদির কাছাকাছি আসার রাত্রী ছিল। এ প্রথম তাদের কাছে আসা, মধুর রাত্রী কেটেছে তনুদির কাছে। তনুদির স্নিগ্ধ ঘুমন্ত চেহারার দিকে কয়েকপল তাকিয়ে থাকল কায়েসাম। মুখের মধ্যে লাল দুটো ব্রন দেখা যাচ্ছে। নিশ্চয় মেয়েটার মুখে ব্যথা আছে। মৃদু আঙ্গুলের চাপ দিলো। ‘উহ’ করে পুনরায় ঘুমিয়ে পড়ল তনুদি। কায়েসাম মেয়েটার কপালে চুম্বন দিলো। চোখ বুঁজে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল।

“এক ভয়ানক লোকের মনে ছিল প্রিয় নারী। কিন্তু সেই নারী কে বিসর্জন দিয়ে অপ্রিয় কাউকে প্রিয় বানিয়ে নিলাম। সংসারটা চলছে প্রিয়অপ্রিয়ের মিল বন্ধনে। প্রকৃতির নিয়ম প্রায় একই। যাদের আমরা চাইব তারা আমাদের নিয়তিতে রয়বে না, যাদের আমরা চাইব না তারা আমাদের নিয়তির সঙ্গে আমরণ থেকে যায়।”

কায়েসাম এর বন্ধ চোখের কোণ বেয়ে পুরনো ক্ষত এর চিহ্ন প্রমাণে এক ফুটো অশ্রুপাত হলো। যা তার কষ্ট করে মুছতে হয়নি। বালিশের কাভারের সঙ্গেই মিলিয়ে গেল। চোখের জল লুকানোর আসল হাতিয়ার হলোই বালিশ।

___
দুবাইয়ের বিশাল বড় মলের সামনে দাঁড়িয়ে শেহরীনা লাফালাফি করছে। স্বামীর সাথে এ প্রথম বিদেশের মাটিতে পা রাখার মত কপাল হয়েছে গ্রাম্য চঞ্চল মেয়েটির। সারোয়ার লোক সমাগমে স্ত্রী কে বারংবার চোখ রাঙিয়ে থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু তার স্ত্রী তো নাছোড়বান্দা মেয়ে। বয়সই বেড়েছে, এখনো সেই বাচ্চামি রয়ে গেছে তার।

“শুনেন না এখানের গহনা ঘাঁটির প্রাইজ তো অনেক বেশি হবে! আমি আমার ভবিষ্যৎ বাচ্চাদের জন্য ও সোনা কিনব। ঐ যে গলার চেইন ধরনের।”

“ওরে বাবা এখনো বাচ্চা আসল না। আর তুমি বাচ্চাদের জন্য চেইন কিনে নিচ্ছো।”

সারোয়ার এর কথায় পাত্তা না দিয়ে শেহরীনা বোরকা আগলে মলের ভেতর ঢুকে পড়ল। ভীষণ চমৎকার কারুকাজ এ সজ্জিত আরব আমিরাতের এ মলটি প্রশংসিত বহুল। সোনার দোকানে ঢুকে তারা ফারদিন এর হবু স্ত্রীর জন্য গহনা কিনে নিজেদের মত নিলো। সেখান থেকে বেরিয়ে কাপড়ের দোকানে ঢুকল। শেহরীনার চোখজোড়া ছানাবড়া হয়ে গেল। প্রতিটা ড্রেস ওয়েস্টার্ন লুকস, ম্যাক্সি, টপস, জিন্স, গাউন, ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনিং বোরকা রয়েছে। কিন্তু বাঙালি পোশাক আরব মলে পাওয়া দুষ্কর। শেহরীনার অবাকতা দেখে হাসল সারোয়ার। আরব আমিরাতে ওয়েস্টার্ন ড্রেস খুব কমন! সারোয়ার তাকে ধরে নিয়ে গেল গার্লস ক্লুথস এর ভেতরে। সেখানে পাকিস্তানি জর্জেট শাড়ি থেকে আরম্ভ করে পাকিস্তানি সিরিজ নায়িকাদের নানান সেলোয়ার কামিজ এর ছবি সমেত সেলাই বিহীন জামা সেট করে রাখা। এ দেখে ভীষণ খুশি হয়ে বলে,

“এখান থেকে আমার জন্য নেবো কিছু!”

স্ত্রীর সরল প্রশ্নে খুশি হলো সারোয়ার। স্বেচ্ছায় দুই-তিন প্যাকেট নিলো শেহরীনার জন্য, সেই সঙ্গে বাড়ির সবার জন্য। একটি পূর্ণ সেলাইয়ের শাড়ি কিনল শেহরীনার জন্য। যা তার অগোচরে নিয়েছে বলা চলে। শেহরীনার খিদে পেয়েছে তবে সংকোচে নতুন জায়গায় এসে বলতেও পারছে না। আশপাশ জুড়ে খালি দোকান চোখ পড়ছে তার। কোনো টং বা ফুসকার স্টল নেই। ধুর বোকা থাকবে কেমনে! দুবাই কী আর বাংলাদেশ নাকি! নিজের বোকা বুদ্ধিতে নিজেই ক্ষেপে গেল।
শেহরীনা কে বিড়বিড় করে এদিকওদিক তাকাতে দেখেই বুঝে গেল সারোয়ার। তার খিদে পেয়েছে কিন্তু মহারানী লজ্জায় বলছে না।
সেও নিরবে তার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলে,

“চলুন ম্যাম কেনাকাটা অনেক হলো এবারে একটু পেট ভরা যাক! তোমাকে আরব আমিরাতের সেরা খাবার খাওয়াব। যা খেলে একেবারে খাবারটার ফ্যান হয়ে যাবে। সচরাচর সেই খাবার দেশে পাওয়া যায় না। কারণ দেশটাই অনুন্নত। সেখানে হাই কোয়ালিটির প্রডাক্ট ইউজড করে না।”

“আপনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে অনেক লাজিজ খাবার হবে।”

‘আল বাইক মাহতাব’ নামের এক রেস্টুরেন্টে অন্যান্য দম্পতির মাঝে সারোয়ার একটা কোণার দেখে টেবিলে বসে গেল। শেহরীনা কে নেকাব এ আবদ্ধ থাকতে দেখে বলে,

“নেকাব খুলে নাও। এদিকটায় কেউ আসবে না। আরবে দম্পতির মাঝে কোনো ওয়েটার কাছে এসে অর্ডার নেয় না। যারটা তাদের কেই অর্ডার করে নিতে হয়। একটা টোকেন দেয় সেটা সিরিয়াল দেখে ডাকলে তখনি খাবার নিতে যেতে হয়।’

“বাবাগো এত ডিমান্ড বুঝি!”

“ফর লাভার্স কাপল।”
বলেই সারোয়ার চোখ টিপ মারল। সারোয়ার গিয়ে খাবার অর্ডার দিয়ে এলো। শেহরীনা এমবি দিয়ে দেশে নাসমা আর নাজমুর সাথে টুকটাক কথা বলতে লাগে। রূপালি বেগম ফোনে মেয়ের হাস্যোজ্জ্বল চেহারা দেখে প্রশান্তি অনুভব করছেন। কে জানত পোড়া কপালির ভাগ্যও একদিন বদলে যাবে! যেই কালোমুখী মেয়েকে সবাই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতো আজ সেই মেয়ের নখের যোগ্যও তারা কেউ নন। নাছির উদ্দিন বউ-বাচ্চাদের দেখে তৃপ্তি সহকারে শ্বাস ফেলেন। একসময় কত নিযার্তন না করেছিলেন তিনি! অতীত ভাবলে বুক ভারী হয় তখন নিজেকে শেষ করে দিতে মন চাই। এই গ্লানি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করেছেন স্বয়ং তার স্ত্রী রূপালি বেগম। যাক ভালোই তো আছেন তারা। এই যে, নোনা সাগরের বালুকাময় মাটিতে বসে জল স্রোতের আনন্দ উপভোগ করছেন।

“নেন মহারানী খাবার চলে এসেছে।”

ফোন রেখে দিলো শেহরীনা। সারোয়ার এর আনা ট্রেতে কয়েক পিচ চিকেন উইংস, সসেজ, টমেটো সস, এক প্যাকেট হলুদেটে ভাত, ভাজা তৈলাক্ত ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর সাথে লেগপিচ এর চিকেন দেখে ভেংচি কেটে বলে,

“সেই তো দেশি খাবার। যেমনে বলছিলেন যেনো অন্যরকম অদেখা খাবার হবে।”

“টেস্ট করে দেখো। একবার টেস্ট করা শুরু করলে গ্যারান্টি আমার ঠিক আবারো খেতে চাইবে যখন তখন।”

শেহরীনার ও ভাব এমন যেনো খাবার এর টেস্ট এক হবে সেখানে কী আর এমন! উইংস থেকে এক পিচ নিয়ে সসেজ দিয়ে মেখে মুখে পুরার পরই থমকে যায় সে। ধীরস্থির চর্বণ করতে লাগল। ঢোক গিলল মনে মনে বলে,’মাশাআল্লাহ এতটা লাজিজ হবে জানতাম না তো!’
জোরপূর্বক হেসে একে একে সারোয়ার খাওয়ার আগেই কয়েকটা খেয়ে নিলো সে একাই। সারোয়ার ফিক করে হেসে দিলো। শেহরীনা মুখ ফুলায়।

“কী বলে ছিলাম না তুমিই খেয়ে নেবে সবটা! দাঁড়াও আরেকটা জিনিস আনব এখন সেটা খাওয়ার পর দেখবে আরেকটা বার কিনে আনার জন্য অনুরোধ করবে।”

সারোয়ার উঠে গেল রিসেপশনের দিকে। শেহরীনা মন মত হলুদে ভাত মুখে পুরল। এও দেখি সেই সেরা স্বাদ! তার মনে হয়েছিল খিচুড়ি উহুম মোটেও খিচুড়ি নয় এটা। আরাবিয়ান ‘লাহাম’ বলে কথা। সারোয়ার এর মুখেই নামটা শুনেছে। সারোয়ার দু গ্লাস লাল-কমলা-সবুজ রঙ মিশ্রিত একটা জুস আনল। জুসটা দেখে ভ্রু কুঁচকে বলে,

“ইশ আমি তিতা জুস খেতে পারি না। এটা আমি খাবো না।”

“আরে বাবা টেস্ট করার আগেই কেনো তুমি ফট করে কথা বলো। টেস্ট করে দেখো না।”

সারোয়ার জোরপূর্বক খাওয়ালে শেহরীনা স্বাদ পেয়ে ছু মেরে গ্লাসটি নিয়ে স্বামীকে অদেখার ভান করে পান করে। সারোয়ার গালে হাত রেখে বলে,’এটাও ভালো লেগেছে নিশ্চয়!’
শেহরীনা বাচ্চাদের মত মাথা নাড়ল। অর্ধ গ্লাস পূর্ণ করে বলে,’পুরোই ফ্রুটস শরবত আর এতটা ঘন যেনো আমি একটা আইসক্রিম শরবত খাচ্ছি মত লেগেছে।’

তারা খাওয়ার মাঝেই খেয়াল করল। জানালার বাহিরে সহস্র গাড়ির ভেতর থাকা মানুষজন পতাকা উড়িয়ে চিৎকার করছে। শেহরীনা কৌতুহল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে।

“এসব কী হচ্ছে! দুবাইয়েও কী আন্দোলন হয় নাকি!”

“না এরা উল্লাস করতেছে তাদের দেশের ন্যাশনাল ডে তাই।”

“হোয়াট আজকে দুবাইয়ের ন্যাশনাল ডে। দুবাইয়ের ও বুঝি ন্যাশনাল ডে আছে!”

“আরে গবেট মেয়ে। খালি কী বাংলাদেশি বিজয় অর্জন করতে পারে। অন্য‌ দেশ বুঝি পরাধীন হয়ে শাসন সহ্য করে থাকছে! প্রতিটা দেশের নিজস্ব ন্যাশনাল ডে এবং ইতিহাস আছে। নিশ্চয় দুবাইয়ের ও ইতিহাস আছে।”

তারা খাওয়ার শেষে সবার গাড়ি লক্ষ করে এগোলো। দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা মিনারের সামনে আকাশে আতশবাজি ফুটানো হচ্ছে। সারোয়ার শেহরীনা কে দাঁড় করিয়ে বলে,

“ম্যাম স্মাইল প্লিজ! আপনার রাজা তার রাজরাণীর হাসির ছবি উঠিয়ে নিজেকে ধন্য করতে চাই। মে আই প্লিজ!”

সারোয়ার এর কথায় প্রাণঢালা হাসি দিলো শেহরীনা। যা মুহূর্তেই ক্যাপচার করে নেয় সারোয়ার। ভিন্ন ভিন্ন এঙ্গলে শেহরীনার সুন্দর অপরূপ ছবি উঠাল সে। পরক্ষণে তারা দম্পতির নিজস্ব কিছু ছবিও উঠায়। গান বাজছে চারপাশ জুড়ে। সারোয়ার সকলের অগোচরে শেহরীনার নেকাবের ভেতর মুখ এনে চট করে একটা চুমু খেয়ে ছাড়ল। লজ্জায় শেহরীনা মাথা নামিয়ে নিলো। হাসল সারোয়ার। হাতটা আঁকড়ে তারা এগিয়ে গেল তাদের হোটেলের দিকে।

রুমে শেহরীনা মুখ মুছে বের হতেই দেখল বিছানাটা সাদা ফুলের সজ্জিত করা হয়েছে। শিউরে উঠল সে। রুমের আলো নিভিয়ে মোম জ্বালানো হয়েছে। বিছানার পাশে চেয়ারে জর্জেট শাড়িটা চিরকুট সমেত ঝুলিয়ে রাখা। সে আলতো হাতে চিরকুটটা খুঁড়ে নিয়ে চোখের সামনে ধরল।

“মহারানী কী আজ তার রাজার জন্য সাজবে! ভারী সাজ একদম নয়। একটু কালো কাজল, একটু ভেজা আর রসালো ঠোঁটজোড়া, একজোড়া ছোট কানফুল। কানফুল দেখবে রেখেছি স্টোন সেট করা গোল্ড।”
এটুকু লিখার পর লজ্জার ইমেজ এঁকে লিখা,’ব্লাউজ না পরলেও হবে।’
শেহরীনা লজ্জায় হেসে উঠল।
সারোয়ার দরজা খুলে উঁকি দিলো রুমে। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর এসেছে। চেয়ার শূন্য দেখেই বুঝল শেহরীনা শাড়িটি পরেছে। সেও প্রস্তুতি নিয়ে কাতর হয়ে অপেক্ষা করছে। এ মুহুর্ত যেনো তাদের কাছে শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। হঠাৎ তার কানে বাজল ঝুনঝুনির শব্দ। এই শব্দটি মেয়ের জর্জেট শাড়িতে আটকানো ঝুমকার। সারোয়ার পেছন ফেরে। শেহরীনা হাত কচলাচ্ছে। ব্লাউজহীন মেয়েটাকে আবেদনময়ী নারী লাগছে। সারোয়ার প্রথমেই তার কপালে চুম্বন দিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,
“আজ কিন্তু খুব ব্যথা দেবো।”
শেহরীনা চট করে স্বামী কে জড়িয়ে ধরল। স্বামীর লাগামহীন কথা শুনে তার বুক ছাড়া লুকানোর স্থান আর নেই বটে। সারোয়ার ও সময় ব্যয় করল না। আজকের রাত দুবাইয়ের একরাত তাদের।

চলবে……