#প্রিয়জন (৪)
“তোরা এভাবে হাসছিস কেন?”
হুট করেই জাহিনের গলাটা শোনা গেল। এতে করে দুই বোন কেমন জড়োসড়ো হলো। ঠিক তার পরেই মেকি হাসি মিশিয়ে তিথি বলল,”কিছু না তো।”
“হ্যাঁ ভাইয়া। আমরা এমনি হাসছিলাম।”
একই সুরে বলল জুহি। এই দুই বোনকে বেশ ভালো করেই চেনা আছে জাহিনের। বংশের সবাই এদের দুজনকে দুষ্টু বলেই জানে। তাই এরা এমন হাসছে, এ কথা বিশ্বাস করার মতন না। জাহিন ভালো মতন দুজনকে পরখ করে নিল। তারপর এগিয়ে এসে দু বোনের ই চুল টেনে ধরল।
“আমার সাথে মিথ্যে বলা?”
“ভাইয়া ব্যথা পাই তো। সত্যিই এমনি হাসছিলাম।”
জুহি এমন ভাবে বলল কথাটা যেন কান্না করে দিবে। একই সুর ধরল তিথিও।
“আমরা কিছুই করি নি। বিশ্বাস না হলে ভাবিকে জিজ্ঞেস করো।”
হুরের দিকে অসহায় নয়নে তাকাল দু বোন ই। ও একটু আমতা আমতা করে বলল,”ব্যথা পাচ্ছে তো। ছেড়ে দেন।”
এ কথার পর ই হাত খানা আলগা করল জাহিন। ওমনি দু বোন পালিয়ে গেল। ওদের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে জাহিন বলল,”দুটোতেই দুষ্টু।”
হুর কিছু বলল না। সে ওঠে দাঁড়িয়ে ছিল। পুনরায় নিজের আসনে বসল। ওর ঠিক পাশটায় বসল জাহিন ও।
“আমি জানি, ওরা খুব দুষ্টু। তোমাকে জ্বালিয়ে?”
“না, জ্বালায় নি।”
দৃষ্টি নত রেখেই বলল হুর। জাহিন মাথা নাড়িয়ে বলল,”জ্বালায় নি, তবে কী বলছিল ওরা?”
এ প্রশ্নে মেয়েটির গলা কেমন শুকিয়ে এল। কীভাবে বলবে কথাটা। ও একটুখানি অস্বস্তির মধ্যে ডুবে গেল। তবে মিথ্যে বলতে পারল না।
“বলছিল, আপনি রোমান্টিক কী না।”
মেয়েটির নজর অন্যদিকে ঘুরানো। নতুবা এ কথা বলতে পারত না ও। জাহিন ভেতরে ভেতরে হাসল। কিছুটা কাছাকাছি হয়ে ধীর গলায় বলল,”তুমি কী বললে?”
হুরের বুকের ভেতর একটা আন্দোলন শুরু হয়েছে। মানুষটার উপস্থিতি অনুভব হচ্ছে। ও কেমন শিউরে ওঠল। জাহিন পুনরায় বলল,”কী হলো? বলো নি কিছু? তোমার বর খুব আনরোমান্টিক তাই না?”
একটা লজ্জা এসে মেয়েটির গাল স্পর্শ করে গেল। ওর ওমন মুখশ্রী দেখে শব্দহীন হাসল জাহিন। এই সময়টা ওর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ও মন থেকে চায়, এই সুন্দর সময় টা দীর্ঘ হোক। কারো নজর না লাগুক।
রুমা তখনো অশান্তির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাহিরের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ছেলেটা কোথায় হারাল, কে জানে। ছেলে অন্যায় করে পালালেও, মায়ের মন কাঁদতেই থাকে। তিনি এক অসহ্য অনুভূতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ যন্ত্রণা কাউকে বলা ও যায় না। আবার সহন করা ও যায় না। অশান্তির এই মুহূর্তে স্বামীকে খুব মনে পড়ে ওনার। ওনি ছুটে আসেন নিজের কক্ষে। একটা চাপা কান্না আটকিয়ে, দেয়ালে টাঙানো স্বামীর বড়ো ছবিখানা নামিয়ে আনেন। ধুলো যদিও জমে নি, তবু হাত দিয়ে মুছে নেয়ার মতন করে বলেন,”এ কোন যন্ত্রণা এল। আমি কেমন করে সব সামাল দিব। আপনি দেখেন না, আমি কত বড়ো বিপদে। কিচ্ছু ভালো লাগে না আমার।”
বুকের ভেতরের যন্ত্রণাটা ধরে রাখতে ব্যর্থ হন তিনি। তাই তো দুটি চোখ বেয়ে ক্রমাগত অশ্রুর বর্ষণ হয়। তিনি কাঁদতে থাকেন। অনেকটা সময় কাঁদার পর, একজন এসে খবর দিয়ে যায়, মেয়ে’র বাড়ি থেকে লোক এসেছে। লোক বলতে, হুরের মা আর চাচা’রা। যারা এতদিন সম্পর্ক রাখার চেষ্টা না করলেও, হুরের বড়ো ঘরে বিয়ে হওয়াতে, দরদ একেবারেই উতলে পড়ার মতন, সমস্ত দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়ে নিয়েছেন।
অসুস্থ মা’কে দেখে হুরের বুকের ভেতরটা কান্নায় ভেঙে আসে। ও এগিয়ে এসে মা নামক মানুষটিকে জড়িয়ে ধরে। কেঁদে ফেলে শব্দ করে।
“এভাবে কাঁদলে আমার মেয়ের সাজ নষ্ট হয়ে যাবে তো। দেখি মা, আমার হুর, তাকা তো তুই।”
কাঁদতে কাঁদতে তাকায় হুর। এক অদ্ভুত রূপ খেলা করছে তার মুখশ্রীতে। কিছু মেয়ে থাকে, যারা কাঁদলেও সুন্দর লাগে। হুরের বিষয়টিও তেমন। মেয়েটি কাঁদলেও সুন্দর লাগে। দূর থেকে হুরের এই কান্নাভেজা মুখশ্রী দেখতে দেখতে হঠাৎ ই জাহিনের মনে হলো, এই কান্নাভেজা মুখটা সুন্দর লাগলেও, বুকের ভেতর কোথাও একটা দংশন ঘটাচ্ছে। ও নিজের কাছেই শপথ করল, নিজের সবটুকু দিয়ে, এই মেয়েটির জীবন থেকে,কান্নার দল গুলোকে একটু একটু করে মুছে দিবে। যাতে কোনো অশুভ ছায়া এসে, মেয়েটির চোখে জল না আনতে পারে।
কান্না করতে করতে হঠাৎ ই ভরাট, বুদ্ধিদীপ্ত, গালে চাপদাঁড়ি যুক্ত অপূর্ব সুন্দর মানুষটার দিকে নজর যায় হুরের। ও নাক টেনে কান্না থামায়। জাহিন এগিয়ে আসে। সালাম জানায়। লতিফার চোখে অশ্রু এসে যায়। তিনি হাত বাড়িয়ে ছেলেটার বাহু স্পর্শ করেন।
“বাবা, মেয়েটাকে দেখে রেখো।”
জাহিন শুরুতেই কিছু বলে না। ও বরং নজর ঘুরিয়ে হুরের দিকে চায়। কান্নার দমকে মেয়েটির হেঁচকির মতন ওঠে গিয়েছে। ছেলেটা অভিযোগের মতন করে বলে,”আন্টি, আপনার মেয়ে তো কান্নাকাটি শুরু করেছে। সবাই তো ভাববে আমার কাছে সুখে নেই। একদিনেই বোধহয় তিক্ত হয়ে গেছে।”
লতিফা মেয়ের দিকে নজর ফেরান। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। তিনি একটু শাসনের মতন করে বলেন,”তাই তো, বোকা মেয়েটা। কীভাবে কাঁদছে! তুমি একটু মানিয়ে নিও বাবা।”
জাহিন হাসে। হুরের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে,”কোনো চিন্তা করবেন না আন্টি। কবুল বলার সাথে সাথেই ও আমার দায়িত্ব হয়ে গিয়েছে। এই দায়িত্ব আমি মাথায় তুলে রাখব। অন্যকেউ কেন, ও চাইলেও এই দায়িত্ব থেকে আমি সরব না। কখনোই না।”
| পাঠক, আপনারা কী জানেন,আমার ৩ বই ও ১৫ টি ই-বই আছে। সব গুলোর ডিটেইলস কমেন্টে দিব। দেখে নিয়েন। |
চলবে…
কলমে ~ #ফাতেমা_তুজ_নৌশি