প্রিয়জন পর্ব-১৬

0
836

#প্রিয়জন (১৬)

জাহিনের সাথে একটু একটু করে হুরের ছোট্ট সংসারটা বেড়ে চলেছে। প্রয়োজনের অধিক জিনিস রয়েছে এই ফ্ল্যাটে। তাই নতুন করে কিছুই আনতে হয় নি। বরং সব কিছু বুঝে নিতে নিতেই কটা দিন পেরিয়ে গিয়েছিল। মাঝে মেয়েটিকে বাসার কাছাকাছি একটি ভার্সিটিতেও ভর্তি করিয়েছে জাহিন। তবে সময় হয় নি কোথাও ঘুরতে যাওয়ার। প্রচুর ব্যস্ততার মাঝে চলছে জীবন। সকালে ওঠে অফিসে যাওয়া। লাঞ্চের আগে কল দিয়ে খোঁজ নেওয়া। রাতে ফেরার আগে জিজ্ঞেস করা কিছু আনতে হবে কী না। এভাবেই চলছে তাদের সংসার। নতুন বিয়ে ওদের। স্বাভাবিক ভাবেই হুরের হৃদয়ে কিছু অভিযোগ আসার কথা। কিন্তু মেয়েটি কোনো প্রকার অভিযোগ করে না। বরং বাসাটাকে আপন করে নিয়ে, সারাটাদিন পার করে দেয় নিজের মতন করে। আজ ফিরতে আরো একটু লেট হলো। ডোর বেল বাজা মাত্রই দরজা খুলেছে হুর। জাহিনের দৃষ্টিতে শীতল ভাব।
“দুঃখিত, অনেকটা লেট হলো।”

সাধারণত আটটার মধ্যেই চলে আসে জাহিন। কিন্তু আজ তেমন কিছু হয় নি। ফিরতে ফিরতে দশটা বেজে গিয়েছে। মানুষটার জন্যই অপেক্ষা করছিল মেয়েটি। তবে চোখে, মুখে কোনো অভিযোগ নেই।

“সারাদিন কেমন কাটল?”

পরনের ব্লেজার খুলতে খুলতে শুধাল জাহিন। ছোট করে জবাব দিল হুর।

“ঠিক ঠাক।”

“একা, একা বোরিং লাগে না?”

“কিছুটা। তবে সমস্যা নেই।”

ব্লেজার খানা খাটের ওপর রেখে পেছন ফিরল জাহিন। অদূরে দাঁড়িয়ে মেয়েটি। সে কাছাকাছি হলো। বাহুতে হাত স্পর্শ করে বলল,”অভিযোগ আছে আমার ওপর?”

মানুষটার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল হুর। ও আসলে কি বলবে বুঝতে পারছে না।

“কোনো অভিযোগ থাকলে অবশ্যই বলবে। দ্বিধা রেখো না। জানো তো, দ্বিধায় সংসার নষ্ট হয়।”

সংসার নষ্টের কথা ওঠা মাত্রই মেয়েটির চোখে মুখে ভয় এসে ধরা দিল। সেটা বুঝে জাহিন বলল,”এত নরম কেন তুমি? আমার যে দু ঘন্টা লেট হলো। কেন লেট হলো, সেটা জানতে চাইবে না?”

সত্যিই তো। এই মানুষটা ওর স্বামী। তার প্রতিটা পদক্ষেপের খোঁজ নেওয়া ওর দায়িত্ব, অধিকার। তবে ও যে বলতে পারে না। হৃদয়টা ছটফট করে। জাহিন নিজ থেকেই বলে,”আমার এক ফিমেল জুনিয়রের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।”

কথা শেষে আড়চোখে তাকায় জাহিন। বোঝার চেষ্টা করে মেয়েটির মুখশ্রীর রং ব‍দল হয়েছে কী না। তবে ওকে অবাক করে দিয়ে নীরব থাকে মেয়েটি। জাহিন এবার হতাশ হয়। এই মেয়েটির হৃদয়ে আগ্রহ রয়েছে। তবে, মুখে সেটির প্রকাশ নেই। এই সংকোচ ভাঙা খুবই জরুরি। মনে হচ্ছে, মেয়েটিকে সব শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হবে।

জাহিন রাতের খাবার খেয়ে আসে নি। ও জানত, তাকে ছাড়া হুর ও খাবার খাবে না। তেমনটাই ঘটেছে। মেয়েটি দ্বিধার মাঝেই খাবার বেড়ে টেবিলে রাখল। তারপর অপেক্ষা করতে লাগল মানুষটার। জাহিন এল কিছু সময় পর। ফ্রেশ হয়ে এসেছে সে। চুল গুলো তোয়ালে দিয়ে মুছে নিলেও, কিছু পানি জমে রয়েছে। দেখতে সুন্দর লাগে।

“আপনি কি খাবার খাবেন?”

দ্বিধা ভেঙে শুধাল মেয়েটি। জাহিন হাতের দ্বারা চুল গুলো ঝেড়ে নেবার মতন করে বলল,”হ্যাঁ।”

“খেয়ে আসেন নি?”

“খেয়ে আসলে ভালো হতো?”

“তেমনটা বলতে চাই নি।”

“আচ্ছা। বোসো তুমি।”

নিজে বসতে বসতে মেয়েটিকে ও বলল জাহিন। তার ক্ষুধা লেগেছে। লাঞ্চের পর পুরো সময়টায় শুধুমাত্র এক কাপ কফিই খাওয়া হয়েছে। মেয়েটির রান্নার হাত ভালো। খাবারের ঘ্রাণে ম ম করছে চারপাশ।

“এই খাবার রেখে, বাইরে থেকে খেয়ে আসব কীভাবে বলো।”

প্লেটে খাবার তুলতে তুলতে কথাটা বলল জাহিন। হুরের ভেতরটায় শান্তির ছোঁয়া লাগল। অধরে এল মৃদু হাসি। তবে বরাবরের মতনই খুব একটা প্রকাশ করল না সে। দুজন মিলে খাবার খাওয়া শেষ করল। জাহিন যদিও কিছুটা ক্লান্ত, তবু ও ডাইনিং থেকে প্লেট সরিয়ে নিতে সাহায্য করল। এটা মানুষটার রোজকার অভ্যাস। একটি সুন্দর সংসার তৈরিতে, উভয় পক্ষকেই এগিয়ে আসতে হয়। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি যতটা বিনয় রাখে, সংসার ঠিক ততটাই সুখের হয়। জাহিন আর হুরের ছোট্ট সংসার খানাও সুন্দর হওয়ার পথে, একটু একটু করে এগিয়ে চলেছে।

চলবে…..
কলমে ~ #ফাতেমা_তুজ_নৌশি