#প্রিয়জন (১৮)
বাড়ি ফিরেই বিস্মিত হয়ে গেল জাহিন। আকাশি রঙের শাড়িতে মেয়েটিকে ফুলের অনুরূপ সুন্দর দেখাচ্ছে। ওর নজর যেন সরতেই চাইল না। এতে করে বিব্রত হলো হুর। চোখের দৃষ্টি নামিয়ে ফেলছিল বার বার। সেটা দেখে জাহিনের অধরে হাসি আসে। ও দু পাশে মাথা কাত করিয়ে বলে,”আজ কিছু স্পেশাল নাকি?”
এ কথায় মেয়েটির ভ্রু কুঞ্চিত হলো। জাহিন ই বলল,”না মানে, এভাবে সেজেছ যে।”
এভাবে সেজেছ যে। মানে কি? মুহূর্তেই মেয়েটির কেমন মন খারাপ হলো। কোথাও একটা প্রশংসা আশা করেছিল সে। আশা ও ছিল। অথচ সব উলটে গেল। মানুষটা সেটা না করে মানুষটা কি না উপহাস করল!
“এমনি সেজেছি।”
কাঠ গলায় জবাব দিল হুর। কণ্ঠের অভিমান স্পষ্ট বুঝতে পারছিল জাহিন। তবে শুরুতেই অভিমান ভাঙানোর চেষ্টা করল না। ও বরং গায়ের কোর্ট খানা খুলে সোফায় রাখল। আড়চোখে চেয়ে বলল,”খাবার তৈরি?”
“দিচ্ছি।”
বলেই এগিয়ে গেল মেয়েটি। জাহিন আনমনেই হাসল। মেয়েটি খাবার পরিবেশন করল। তবে তার মন খারাপ তখনো গেল না। জাহিন হাত মুখ ধুঁয়ে এসে বসল টেবিলে। আয়োজন ভালো। প্রতিটা পদ থেকেই দারুণ ঘ্রাণ আসছে।
প্লেটে খাবার তুলে নিয়ে জাহিন বলল,”তুমি খাবে না?”
“ক্ষিধে নেই।”
“কেন?”
“এমনি।”
“অহ।”
তারপর কোনো কথা নেই। জাহিন খেতে শুরু করল। মানুষটার এমন বদল মেয়েটিকে নাড়িয়ে দিল। সব তো ঠিক ছিল। তবে কী হলো হুট করে? জাহিনের কি ভালো লাগে নি। হুরকে এই সাজে সুন্দর লাগছে না? নাকি অন্য কারণ। ওর ভেতরটা কেমন হু হু করে ওঠে। চোখ থেকে নেমে আসে জল। সেটা আড়াল করতে ওঠে যায় বাহানা দিয়ে। কক্ষে ফেরার পর কয়েক সেকেন্ড পেরিয়ে যায়। জাহিন এল না। হুর ভেবেছিল এসব বুঝি মজা। কিন্তু না। মানুষটা আজ কেমন যেন হয়ে গিয়েছে। ওর চোখ থেকে জল নেমে এল। তখনই চেনা কণ্ঠটা বলে ওঠল,”মেঝেতে যেন না পড়ে।”
মুখের কথায় কাজ হলো না। জল গড়িয়ে পড়ল ঠিক ই। অভিমানী কণ্ঠটা প্রথমবারের মতন অভিমান করে বলল,”পড়লে কী হবে?”
“কী হবে? সেটা তো বলে নয় বরং দেখাতে হবে।”
জাহিনের শক্তপোক্ত হাত খানা মেয়েটিকে টেনে নিল নিজ বাহুতে। হুরের হৃদয় ছটফট করে ওঠল। চোখের দৃষ্টি রইল নত।
“এই মেয়ে, চোখে পানি কেন আসে?”
ভীষণ প্রত্যাশা নিয়ে কোনো কিছু করার পর, বিপরীত প্রতিক্রিয়া এলে, মন ভেঙে যায়। হুরের মনটা আসলে ভেঙে গিয়েছে। জাহিন ওর থুতনি ধরে উঁচু করায়। এতে করে চোখের জল আরো স্পষ্ট হয়। সেটা অন্য হাতের সাহায্যে মুছে দিয়ে বলে,”এতদিনে, অভিমান হলো তবে?”
জবাব আসে না। জাহিন বুঝে অভিমান হয়েছে। এই অভিমানের দরকার আছে আসলে। অভিমান আসলে প্রিয়জনের সাথে করা যায়। জাহিন তো তার হৃদয়টা মেয়েটিকে দান করে দিয়েছে। তবে, তবে হুর কি দান করেছিল? বিশাল এক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল এখানটায়। যার সমাপ্তি ঘটল আজ। হুরের হৃদয়ে অভিমান জমেছে। অথার্ৎ জাহিনকে সে প্রিয়জন মানতে পেরেছে। এই অপেক্ষায় ছিল জাহিন। বিধাতা এতদিনে অপেক্ষার অবসান ঘটালেন। জাহিনের বাহু থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল হুর। তবে পারল না। পুরুষটি আরো বেশি শক্ত করে ধরল তাকে। এক হাতে নিজের বক্ষের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলল,”এমন সাজার পর, পাগল করে দিয়ে এখন পালাতে চাইছ কেন?”
“এমনিই সেজেছিলাম। কোনো কারণ নেই।”
“মিথ্যে, এমনি এমনি তো সাজো নি।”
“না। সত্যিই এমনিই সেজেছি।”
অভিমান ঠিকড়ে পড়ে যেন। জাহিন আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়। এতে করে মেয়েটির শ্বাস ভারী হয়ে যায়।
“আমার কাজ আছে।”
“আমার ও আছে।”
“তো ছাড়েন।”
“উহু। ছাড়ব না।”
“কেন?”
“কারণ, কাজটা তুমি ছাড়া হবে না।”
হুর কি বলবে বুঝতে পারে না। তবে এটা সত্য ভেতরে এক মিহি হাওয়া অনুভব করে সে। যেই হাওয়াটা সমস্ত শরীরে শিরশির এক অনুভূতি দিয়ে যাচ্ছে। জাহিনের পুরুষালি হাতের আঙুল গুলো ক্রমশই মেয়েটির ঠোঁটের কাছে এগিয়ে যাচ্ছে। যত আগাচ্ছে, হুরের হৃদয় ততই আন্দোলিত হচ্ছে।
“আই থিংঙ্ক তোমার চোখ বন্ধ করা উচিত। না হলে লজ্জা পাবে।”
এমনিতেই কেমন লজ্জা অনুভব হচ্ছিল। এ কথা বলে আরো বেশি লজ্জায় ফেলে দেয় পুরুষটি। মেয়েটির গাল ছেয়ে যায় রঙিন আভায়। ঠিক যেন অন্ধকার আকাশ ভেদ করে এক টুকরো লাল মিষ্টি আলো। সেই আলোকে পূর্ণতা দান করতে, একটি গাঢ় চুম্বন একে যায় পুরুষটি। জানান দেয় নিজের অস্তিত্বকে। নিজের প্রিয়জনকে।
চলবে…
কলমে ~ #ফাতেমা_তুজ_নৌশি